এক দূরসম্পর্কের মামার বাসায় বেড়াতে এসেছে শাহিন। আসার
সময় ভেবেছিলো, মামার এলাকায় সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখে
কয়েকটা দিন ভালোভাবেই কাটিয়ে দেবে। কিন্তু এখানে এসে
তার ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। এ কেমন এলাকা রে বাবা! ৪/৫
দিন হয়ে গেলো, একটা যুবতী মেয়েও চোখে পড়লোনা
তার।
.
.
গ্রামটি শহর থেকে অনেক দূরে, আশেপাশে আর কোনো
গ্রাম নেই। গ্রামের পশ্চিম দিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এমন
জায়গায়ও কেউ বেড়াতে আসে? শাহিন রীতিমতো বিরক্ত
হয়ে উঠে এই কয়েকদিনে। আশেপাশে কয়েকটা সুন্দরি
মেয়ে দেখা গেলে না হয় তার দিনগুলো এখানে
ভালোভাবেই কাটতো। কিন্তু এটা কেমন রসকষহীন এলাকা
শাহিনের ভাবনায় আসেনা। এরকম এলাকাও থাকে নাকি যেখানে
কোনো যুবতী মেয়ে নেই?
.
.
শাহিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, এই এলাকায় আর থাকবেনা। এই এলাকার
মানুষগুলোও কেমন যেন, কেউ ভালো করে কথা বলেনা,
সবসময় মনে হয় কোনো অস্বস্তিতে ভুগছে এরা। সুন্দরী
মেয়ে নেয়, মানা যেতে পারে, কিন্তু মানুষগুলো যদি একটু
সুন্দর করে কথা বলতো, একটু হাসিমুখে মিশতো, তাহলে না হয়
আরো কয়েকদিন থাকা যেতো এই এলাকায়।
.
.
শাহিন তার মামার সাথে বের হলো চলে যাওয়ার জন্য। একটা রিকশায়
উঠেছে দুজন। বাস স্টেশন এখান থেকে অনেক দূরে। রিকশা
নিয়েই যেতে হয় এই দূরের পথে। রিকশা ছাড়া অন্য কোনো
যানবাহন চলাচল করেনা এখানে।
.
.
আনমনে তাকিয়ে আছে শাহিন সামনের দিকে। মামা তাকে কতো
করে বললো, আরো কয়েকদিন থেকে যেতে, এই প্রথম
এসেছে সে। কিন্তু শাহীন রাজি না, এমন পানসে গ্রামে
থাকতে। এই প্রথম আসা, এবং এটাই শেষ।
.
.
এতক্ষণ শাহিনের পাশে রিকশায় বসে তার মামা কতো কিছু
বললো, শাহিন শুধু “হু-হা” করছিলো। হঠাৎ তার কী হলো,
রিকশাওয়ালাকে উত্তেজিত হয়ে রিকশা থামাতে বললো। রিকশা
থামার পর শাহিন রিকশা থেকে নেমে তার ব্যাগটা মামার কোলে
দিয়ে বললো:
–মামা, তুমি ফিরে যাও বাসায়, আমি যাবোনা…..”
মামা অবাক হয়ে বললো:
–মানে? হঠাৎ তোর কী হলো?”
শাহিন মৃদু একটা হাসি দিয়ে বললো:
–কিছু না মামা, আমি আরো কয়েকদিন থাকবো এখানে।”
.
.
মামা আর কিছু না বলে রিকশাটা ঘুরিয়ে চলে গেলো নিজের বাসার
দিকে। মামা চলে যাওয়ার পর শাহিন আশেপাশে তাকিয়ে
দেখলো, একটু আগে সে একটা সুন্দরি মেয়ে দেখেছে
একটা দোকানে, মেয়েটা হঠাৎ কোথায় গেলো? শাহিন
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো দোকানটিতে। তারপর
দোকান থেকে একটা “ক্লেমন” কিনে দুই ঢোক গিলে
দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো:
–মামা, এখানে একটু আগে একটা মেয়ে দেখেছিলাম, লম্বা
ফর্সা করে, মেয়েটা কোথায় গেলো বলতে পারবেন?”
দোকানদার রাস্তার ওপাশে একটা বিল্ডিং দেখিয়ে বললো:
–ঐ বাড়ির মেয়ে সে।”
শাহিন ক্লেমনের দামটা দোকানদারকে দিয়ে দিয়ে সামনের
বিল্ডিংটাতে গেলো। বাড়ির গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তার
কানে কয়েকজনের কান্নার শব্দ এলো। সাবধানে ভেতরে
ঢুকলো শাহিন। দেখলো, বাড়ির বাচ্চা-কাচ্চা, বুড়ো-বুড়ি সবাই মিলে
মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে। শাহিনকে
দেখে মধ্যবয়স্ক এক লোক জিজ্ঞেস করলো:
–কে বাবা তুমি?”
শাহিন জবাব দিলো:
–আমাকে আপনারা চিনবেননা। আমি এই এলাকায় প্রথমবারের
মতো বেড়াতে এসেছি। শফিক হায়দারকে চিনেন? উনি আমার
মামা। উনার বাসায় এসেছি।”
–ও তুমি শফিকের বাসায় এসেছো? কিন্তু বাবা, তুমি এখানে কী
মনে করে এলে?” মধ্যবয়স্ক লোকটা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস
করলো।
–আমি একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি আঙ্কেল। এই
এলাকায় আসার পর থেকে কোনো যুবতী মেয়ে আমার
চোখে পড়েনি। আজ আপনাদের এই মেয়েকে চোখে
পড়লো, বাট এখানে এসে দেখি সবাই ওকে ধরে কান্নাকাটি
করতেছেন। তার পাশে ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে, সে এই
এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই
এলাকায় যুবতী মেয়ে না থাকার পেছনে কোনো কারণ
আছে।”
মধ্যবয়স্ক লোকটা সামনে একটা সোফা দেখিয়ে শাহিনকে
বসতে বলে, নিজেও অপর একটা সোফায় বসলেন। তারপর
বললেন:
–বাবা, তোমার ধারণা-ই ঠিক। এই গ্রামটা একটা অভিশপ্ত গ্রাম। একটা
খারাপ শক্তির নজর পড়েছে এই গ্রামের উপর। প্রতি অমাবস্যা
এলে আমাদের বুকের ভেতর একটা তোলপাড় শুরু হয়ে যায়
কীভাবে আমরা আমাদের মেয়েকে বাঁচাবো। প্রতি অমাবস্যায়
একটা করে যুবতী মেয়ে উধাও হয়ে যায় এই গ্রাম থেকে।
পরদিন তার লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায় দূরের ঐ পাহাড়ে
একটা বাংলোতে। অনেক যুবতী মেয়ে এভাবে শেষ হয়ে
গেছে, আবার অনেক যুবতী মেয়ে এই ভয়ে চলে
গেছে এলাকা ছেড়ে। গ্রামটা এখন যুবতী মেয়ে শূন্য।
যুবতী মেয়ে বলতে শুধু আমাদের মেয়েটাই অবশিষ্ট
আছে এখন এলাকায়। কয়েকদিন পর অমাবস্যা রাত নামবে। তাই
আমাদের ভয় বেড়ে গেছে কীভাবে আমাদের
মেয়েকে বাঁচাবো। ওকে বাঁচানোর জন্যই আজ ওকে
দূরের শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।” এতোটুকু বলার পর লোকটা
থামলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ মুছে নিচের দিকে
তাকিয়ে রইলেন। শাহীন তখন বললো:
–আঙ্কেল, সবাই যদি এভাবে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়, কেউ
যদি এই রহস্য জানার চেষ্টা না করে, কেউ যদি এর সমাধান বের না
করে, তাহলে তো গ্রামটা আজীবন অভিশপ্ত হয়ে থাকবে।
–তুমি কী বলতে চাও বাবা?” লোকটা মাথা তুলে তাকালেন
শাহিনের দিকে। শাহিন বললো:
–আমি চাই আপনার মেয়ে কোথাও যাবেনা, এই গ্রামেই থাকবে।
আমিই এই রহস্য উন্মোচন করবো। বিশ্বাস রাখুন আমার উপর……
লোকটা শাহিনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আর মনে
মনে কি যেন ভাবলো..
অবশেষে লোকটা তার মেয়েকে আর কোথাও পাঠালেন না।
তিনি শাহীনের হাতটা ধরে বললেন আমার মেয়ের জীবন এখন
তোমার হাতে বাবা। এই গ্রামকে অভিশাপের হাত থেকে মুক্ত
কর।
শাহিন লোকটির চোখের দিকে তাকালো এবং বললো আংকেল
চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ের কিছু হতে দিবো না।
.
শাহিন লোকটিকে তো বলে দিলো যে তার মেয়ের কিছু
হতে দিবে না কিন্তু কিভাবে তার মেয়েকে বাঁচাবে, কিভাবে
গ্রামকে অভিশাপ মুক্ত করবে এই ভেবে ভেবে সে নিজেই
চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লো। শাহিন আর মামাবাড়িতে গেলো না।
সে ওই বাড়িতেই থেকে গেলো। রাতে সকলের খাওয়ার
পর্ব শেষে মেয়েটির সাথে পরিচিত হলো। মেয়েটির নাম
দিতু। বেশ খোলা মনের মেয়ে সে। দিতুর সাথে কথা বলতে
শাহিনের ভালোই লাগছিলো। সব সময় হেসে হেসে কথা
বলে মেয়েটা। দিতুর একটা পোষা কুকুর ছিলো। ওকে সবাই মিনি
বলে ডাকতো। দিতু শাহিনের সাথে মিনির বন্ধুক্ত করে দিলো।
দিতু বললো মিনি গ্রামের সবকিছু চেনে। ও তোমাকে সাহায্য
করবে। পরদিন সকালেই শাহিন গ্রাম ঘুরতে বের হলো। মিনি
শাহিনের সাথি হলো। তিনদিন ধরে সে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়
ঘুরলো, অনেক মানুষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু
শাহিন কারো কাছ থেকে এর কোন সমাধান পেল না। মানুষগুলো
কেমন যেন, কেউ ভালোকরে কথা বলতে চায় না। এই
তিনদিনে দিতুর সাথে শাহিনের ভালো খাতির হয়ে গিয়েছে।
কাল বাদে পরশু অমাবস্যা, কিভাবে সে দীতুকে বাঁচাবে ভেবে
ভেবে অবশেষে সে প্লানচেটের মাধ্যমে শুভ আত্নার কাছ
থেকে এর রহস্য বের করার সিদ্ধান্ত নিল।
.
.
শাহিনের মামা তান্ত্রিক বিদ্যা ভালো করেই রপ্ত করেছিলেন আর
শাহিন তার মামার কাছ থেকে প্লানচেটের সব কলা কৌশল
ভালোকরেই শিখে নিয়েছে। এর আগেও একবার সে
প্লানচেটের মাধ্যমে শুভ আত্না ডেকে তার সাহায্য
নিয়েছিলো তাই তার কোন অসুবিধা হবে না এ ব্যাপারে সে
নিশ্চিৎ। প্লানচেট করার জন্য সব সরঞ্জাম শাহিনের ব্যাগেই
ছিলো। কখন কোন কাজে লেগে যায় তাই সে এগুলো
সঙ্গেই রাখে। শাহিন দিতুকে তার পরিকল্পনা বললে দিতু শাহিনের
কথায় রাজি হয়ে যায়। বলে তোমার যা করার করো শুধু এই অভিশাপ
থেকে আমাদের গ্রামকে মুক্ত কর। তারা একটা পুরোনো
ভাঙ্গা স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার কুঠুরীতে আসে প্লানচ্যাট করার
জন্য। শাহিন প্লানচেটের বোর্ডের চারপাশে চারটা জ্বলন্ত
মোমবাতি আর সামনে একটা মাথার খুলি রাখলো। শাহিন, দিতু, আর
দিতুর মা, বাবা এই চারজন মিলে বোর্ডের চারপাশে বসে
বোর্ডের মাঝে লাভ আকৃতির সেফে হাত রাখলো। শাহিন
সবাইকে বলে দিলো যতকিছুই হোক এই জায়গা থেকে হাত
সরানো যাবে না। তখন মধ্য রাত। তারপর তারা আত্নাদের ডাকতে
শুরু করলো। শাহিন মন্ত্র পরে আর বলে আসো, শুভ আত্নারা
আসো।
একটু পরই খুব জোরে জোরে বাতাস বইতে শুরু করলো।
তারপর একটা নারীকন্ঠ বলে উঠলো আমাকে কেনো
ডেকেছিস?
শাহিন – কিছু জানার জন্য ডেকেছি।
আত্না- কি জানতে চাস বল।
শাহিন- এই গ্রামের সব যুবতি মেয়েগুলোকে কেনো প্রান
দিতে হচ্ছে? এর থেকে বাঁচার উপায় বল।
আত্না- সব বলবো। এই গ্রামকে অভিশাপমুক্ত করতে আমি
তোর সাহায্যও করবো কিন্তু তুই তো জানিস আমরা আত্নারা কিছু না
দিলে কারো সাহায্য করি না।
.
শাহিন- বল কি দিতে হবে?
.
আত্না- আমরা শুভ আত্না। তোদের উপকার ছারা কখনো অপকার
করবো না। বেশি কিছু না। শুধু দুইটা ছাগলের বাচ্চা দিতে হবে।
.
শাহিন- হ্যাঁ দিবো। এখন বল।
.
আত্না- তবে শোন। বহুবছর আগে
এই গ্রামের এক জমিদারের মেয়ে পালিয়ে তার প্রেমিককে
বিয়ে করে। জমিদার এই কলঙ্ক সহ্য করতে না পেরে সেই
যুবককে এবং নিজ মেয়েকেও শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ড দেন।
মৃত্যুর পরেও তিনি তাদের সান্তিতে থাকতে দেন নি। তাদের লাস
কবর না দিয়ে তিনি তান্ত্রিক ডেকে তন্ত্র মন্ত্র করে লাসদুটো
বাক্স বন্দি করে জমিদার বাড়ির একটা ঘরে রাখেন। এরফলে
তাদের আত্না মুক্তি পেল না। তারপর একসময় জমিদার অন্যদেশে
চলে যান। কিন্তু আজও ওই জমিদার বাড়ি থেকে ভয়ানক সব চিৎকার
শোনা যায়। এই চিৎকার করে জমিদারের মেয়েটা। কারন
জমিদারের মেয়ে তন্ত্রবিদ্যা জানতো। সে তন্ত্রসাধনা করে
আবার জীবিত হতে চাচ্ছিলো। তারপর একদিন কেউ একজন ওই
বাড়িতে গিয়ে সেই বাক্সটি খুলেছে। ঠিক তখনই মেয়েটা তার
তন্ত্রবিদ্যার দারা সেই মানুষটিকে মেরে নিজে মুক্ত হয়ে যায়।
পরে এক সুন্দরী মেয়ের শরীর সে বেঁছে নেয়। আর
তখন থেকে এই গ্রামের উপর অভিশাপ নেমে আসে। সে
এখন তার তন্ত্রবিদ্যা দারা তার প্রেমিককেও জীবিত করতে চায়।
আর এজন্য প্রতি অমাবস্যায় তার যুবতি মেয়ে চাই। যতদিন না সে তার
প্রেমিককে জীবিত করতে পারবে ততদিন এই গ্রামের কোন
মেয়েকে সে বাঁচতে দিবে না।
.
শাহিন- এই জামিদারের মেয়ের থেকে বাঁচার কি কোন উপায়
নেই?
.
শুভআত্না- উপায় আছে। আমি উপায় বলে দিচ্ছি।
.
শাহিন- বল তবে।
.
শুভ আত্না- পুরি অমাবস্যায় দুই প্রেমিক প্রেমিকার লাসদুটো
একসাথে পোরালে তবেই তাদের বিনাশ হবে। প্রতি নব্বই রছর
পর পর এই পুরি অমাবস্যা আসে আর পরশু সেই পুরি অমাবস্যা।
.
শাহিন- লাসদুটো আনবো কিভাবে?
.
শুভ আত্না- আমি তোকে সাহায্য করবো চিন্তা করিস না। প্রথমে
বাক্সের চাবিটা তোকে আনতে হবে।
.
শাহিন- চাবি কোথায় পাবো?
.
শুভ আত্না- এই গ্রামের এক পুকুরের পানির নিচে আছে বাক্স।
কাল বিকেলে সূর্য ডোবার আগে বাক্সের উপরের পানি লাল
বর্ণ ধারন করবে। তোকে পানি দেখেই চিনে নিতে হবে
পুকুরটি। তারপর..
.
শাহিন শুভ আত্নার কাছ থেকে সব জেনে নিল।
.
.
পরদিন দিতুকে আর খুজে পাওয়া গেলো না। দিতুকে না পেয়ে
শাহিন পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলো। বিকেলে যখন সূর্যটা
ডুববে প্রায় পোষাকুকুর মিনিকে নিয়ে তখন শাহিন একটার পর একটা
পুকুরঘাটে গেলো আর পুকুরের কোথাও পানির রং পরিবর্তন
হয়েছে কিনা তাই খুজতে লাগলো। লম্বা বড়ো বড়ো বাঁশ
ঝারের পাশে শাহিন এমন একটা পুকুর খুঁজে পেলো , যার ঠিক
মাধ্যভাগে পানির রং লাল বর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর কিছু না ভেবে
শাহিন পুকুরে লাফিয়ে পড়ে এক সাঁতারে পুকুরের মাঝখানে চলে
আসলো। তারপর ডুব দিয়ে ভেতরে শুধু রক্ত লাল ছারা আর কিছুই
দেখতে পেলো না। ডোবাডুবি করে সে পুকুরের
গভীরে চলে গেলো। সেখানে একটা মাঝারি আকারের বাক্স
পেলো। সেটা তুলে উপরে উঠতে যাবে তখনি কে যেন
তার মাথাটা রক্তলাল পানিতে চুবিয়ে ধরলো। কিছুতেই সে
বেরিয়ে আসতে পারছিলো না, তাকে অনবরত পানিতে ঠেসে
ধরছিলো কে যেনো। এদিকে অনেক্ষন হয়ে যাওয়ায়
শাহিনের নিঃশ্বাস শেষ হয়ে আসছিলো। হঠাৎ একটা হাত শাহিনের
মাথায় হালকা ছুয়ে দিলো তখন শাহিন অনুভব করলো তাকে আর
কেউ ঠেসে ধরছে না তারপর হাতটা শাহিনকে টেনে তুললো।
.
.
শাহিন বাক্সটা খুলে একটা চাবির গোছা পেল, তাতে বেশ বড়
মাপের তিনটা চাবি ছিলো। তারপর মিনির দেখানো রাস্তা দিয়ে শাহিন
জমিদার বাড়িতে চলে গেলো। ততক্ষনে সন্ধ্যে নেমে
এসেছে। জনমানবশূন্য রাস্তায় একা শাহিন কুকুরছানাটাকে সাথে
নিয়ে এগিয়ে চললো।
.
,,
অনেক পুরোনো বাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। বাড়ির সামনে
একটা লোক ময়লা ছেরা চাদর পরে দারিয়ে আছে। শাহিনকে
জমিদার বাড়িতে যেতে দেখে দৌরে এসে শাহিনের পথ রোধ
করে সামনে এসে দারাল। চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে
লোকটা শাহিনের দিকে তাকালো। বলতে লাগলো, যাস না। যদি
বাঁচতে চাস ওই বাড়িতে যাস না। ফিরে যা।
.
– নাহ্। দিতুকে বাঁচাতেই হবে, আমি ফিরে যাবো না, এই বলে শাহিন
লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলো। তারপর পেছনে
ফিরে দেখে কেউ নেই। লোকটা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
.
.
মিনি শাহিনের প্যান্ট টেনে জমিদার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ইশারা
করলো।
শাহিন বাড়িতে ঢুকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখতে
পারছিলো না। শাহিনের পেছনে ঝোলানো ব্যাগটা থেকে
সে একটা টর্চ লাইট বের করলো। মাকরাসার জাল দিয়ে পুরো
বাড়ি ঘেরা। দেখতে বেশ ভয়ানক। শুভ আত্নার নির্দেশ মতো
শাহিন সিরি দিয়ে উপরে চলে গেলো। এখানে অনেকগুলো
ঘর। শাহিনের মনে পড়ে গেলো শুভ আত্না বলেছিলো যে
ঘরে লাস রাখা আছে সে ঘরের দরজায় বিশেষ কিছু চিহ্ন থাকবে।
শাহিন একেবারে মাঝের ঘরের দরজায় খোদাই করে আঁকা
কঙ্কালের ছবি দেখে বুঝে নিল এটাই সেই ঘর। চাবি দিয়ে দরজা
খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই ভেতর থেকে ভাপসা একটা
বিশ্রি গন্ধ নাকে আসলো। সামনেই দুটো বড় বাক্স দেখলো।
মাকরসার জাল সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। চাবি দিয়ে প্রথম বাক্স
খুলে সে কিছু পেলো না। কারন এই বাক্সে ছিলো প্রেমিকে
আত্না। যেটা এখন জমিদারের মেয়ের কাছে আছে। দ্বিতীয়
বাক্সটি খুলতেই প্রচন্ড গতিতে ঝড় শুরু হলো। বাতাসে ঘরের
জিনিসগুলো লন্ডভন্ড হতে লাগল। এমন জোরে বজ্রপাতের
আওয়াজ হলো যেন পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পড়বে। শাহিন
সূরা ফাতিহা সহ যা যা সূরা মনে আসছিলো সবগুলো জোরে
জোরে পড়তে লাগলো। বাক্স খুলেই শাহিন শুভ আত্নার
নির্দেশ মতো তাড়াতাড়ি করে সূরা লেখা একটা বড়ো সাদাকাপড়
দয়ে লাসটা জরিয়ে নিলো। তারপর সেটা ব্যাগে ভরে
ফেললো। ব্যাগ নিয়ে শাহিন যেই উঠে দাড়িয়েছে সামনে
বিশ্রি চেহারার একটা বিশাল মানুষ দেখলো। তার গলায় একগুচ্ছ সাপ
জরানো। গালে কেটে যাওয়া দাগ যা দিয়ে রক্ত পরছিলো। সাদা
চোখের ভেতরে গাড় লাল চোখের মনি। মিনি ভয় পেয়ে
শাহিনের পেছনে লুকালো। শাহিন ব্যাগ থেকে আন্টির দেওয়া
দোয়া পড়া পানির বোতলটা বের করে কিছু পানি মানুষটার মুখে
ছিটিয়ে দিলো। তারপর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে
সে নিঃশ্বেস হয়ে গেলো।
.
.
শাহিন শুনতে পেলো দিতু চিৎকার করে বলছে আমাকে বাঁচাও
শাহিন। চিৎকার শুনতে পেয়ে পেছনে একটা আয়নায় দেখলো
দিতু বলছে..
.
দিতু – আমাকে বাঁচাও শাহিন। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ
আমাকে বাঁচাও।
.
শাহিন – ভয় পেও না আমি আসছি দিতু। কিন্তু তুমি কোথায়? আর আমি
কিভাবে সেখানে যাবো?
.
আয়নায় আর কিছুই দেখা গেলো না। শাহিন দৌরে জমিদার বাড়ি
থেকে বের হলো।
.
কিন্তু এখন দিতুর কাছে কিভাবে যাবে শাহিন? হঠাৎ দেখলো
পাশেই মিনি কি যেন দেখে ঘেউ ঘেউ করছে। এতক্ষন সে
শাহিনের সাথেই ছিলো। এটা ছিলো একটা কাটা হাত। মিনি হাতটার
সাথে খেলছিলো। শাহিন মিনির কাছে আসতেই হাতটা বলতে
লাগলো এসেছো শাহিন? আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা
করছিলাম। আমার পরিচয় পরে দিবো এখন চলো তোমাকে দিতুর
কাছে নিয়ে যাই।
.
.
কাঁটা হাতটা শাহিনকে রাস্তা দেখিয়ে দূর পাহাড়ে একটা বাংলোতে
আনলো। সেই বাংলোতে গিয়ে দেখলো দিতু অজ্ঞান হয়ে
পরে আছে আর তার সামনে একটা সুন্দরী মেয়ে জোরে
জোরে মন্ত্র পড়ছে আর দিতুর গায়ে পানি ছিটাচ্ছে। পাশেই
পরে আছে একটা লাস। এটাই জমিদারের মেয়ের সেই
প্রেমিকের লাস। জমিদারের মেয়ে মন্ত্র পড়তে এতটাই
ব্যস্ত যে শাহিনকে সে খেয়ালই করে নি। শাহিন এই সুযোগে
পাসের লাশটা টেনে বাহিরে আনলো। কিন্তু ততক্ষণে
জমিদারের মেয়ে সব জেনে গিয়েছে। সে শাহিনের পিছু পিছু
বাহিরে চলে আসে। শাহিন বাহিরে এসে দেখে আগুন আগে
থেকেই জ্বলানো আছে। শুভ আত্না তাকে সাহায্য করছে।
সে জ্বলন্ত আগুনে তার হাতের লাসটা ছুরে মারে। অমনি
জমিদারের মেয়ে তার আসল রুপ ধারন করে। ভয়ংকর ডাইনির
মতো তার চেহারা। জমিদারের মেয়ে বলতে থাকে এটা তুই ঠিক
করলি না। এই বলে সে শাহিনকে ধরতে আসে। শাহিনের ঘারের
ব্যাগে জমিদারের মেয়ের লাসটা ছিলো। সে ব্যাগটা খুলে
হাতে নিয়েছি অমনি জমিদারের মেয়ে ডাইনীটা শাহিনকে ধরে
ফেলেছে। এমন সময় মিনি কুকুরটা শাহিনের ব্যাগটা মুখে করে
টেনে নিয়ে গেলো আগুনের কাছে। ব্যাগটা পুরতে
থাকলো আগুনে আর জমিদারের মেয়ে ডাইনিটা চিৎকার করতে
করতে নিঃশেষ হয়ে গেলো।
.
দিতুর কথা মনে হতেই শাহিন দিতুর কাছে চলে গেলো। মুখে
পানি ছিটাতেই ওর জ্ঞান ফিরলো। দিতু শাহিনের বুকে আচরে
পড়লো। জরিয়ে ধরে বললো, আমাকে বাঁচাও। ও আমাকে
মেরে ফেলবে। শাহিন বললো আর কোন ভয় নেই।
ডাইনীটা মরে গিয়েছে। চলো বাড়ি ফিরে যাই।
.
এভাবেই গ্রামটা অভিশাপ মুক্ত হলো।
.
…………………………………….সমাপ্ত………………………………
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক