আধাঁর রাতের সত্য কাহিনী

আধাঁর রাতের সত্য কাহিনী

আজথেকে বহু বছর আগের কথা । তা প্রায় ৪০ বছর তো হবেই। আমার বয়েস ৯ ; ১০ হবে। তখন আমরা কোরাপুট জেলার ‘মাছকুন্ড’
বলে উডিশ্যার এক জায়গা তে কিছুদিন ছিলাম। উডিশ্যার ‘জয়পুর’ থেকে প্রায় ৪০ কি মি দক্ষিণে ।  টানা পাহাড়ের ওপর ঘাট রাস্তা। তখন দিনে একটা বাস চলত । বাবার সঙ্গে আমরা জিপে যেতাম মাছকুন্ড ।

খুব ভয় করতো জখন কিনা জিপটা পাহাড়ের গা ঘেঁসে চলত ।আন্ধ্র প্রদেশের গোদাভরি নদীর এক শাখা নদী মাছকুন্ড নদী । এই নদী হঠাৎ দিগ পরিবর্তন করে জল প্রপাতে পরিণত হয় নাম “ডুডুমা জলপ্রপাত” ।

চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এক মনরম জায়গা ।শান্ত পরিবেশ । জলপ্রপাতের গুরু গম্ভীর গর্জনে কম্পিত পরিবেশ । এখানে ১৯৫৫ সালে তৈরি হয় জলাপুট ড্যাম । ‘জলা’ মানে জল ‘পুট’ মানে ঘর অর্থাৎ জলের ভাণ্ডার । এইখানে তৈরি হয় মাছকুন্ড হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্ট , আন্ধ্র এবং উডিশ্যার মিলিত উদ্যমে ।

৩৪.২৭৩ টি এম সি জলকে জলপ্রপাত থেকে ১৫ কিমি টানেল দিয়ে ১২০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ১৯৫৫ সালে। এখন অবশ্য এই প্রজেক্ট পুরন হয়ে গিয়েছে যার নব-কলেবরের প্রয়োজন । সেটা । ১৯৫৮ র কথা ভাবুন তখন ওই জায়গা কিরকম ছিল ?

গভীর জঙ্গলে ভরা নির্জন পরিবেশ । সভ্যতার কোন চিহ্ন বর্ণ ছিলোনা । কিছু আদিম অধিবাসী এবং কিছু সরকারি বাবু । কেউ তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন কেউ একা।  কিছু তেলেগু , উড়িয়া এবং আমরা একমাত্র বাঙ্গালী পরিবার । অবশ্য আমরা ছুটি কাটাতে যেতাম ওখানে কারন আমার পিতৃদেব ওখানকার একজন অফিসার ছিলেন ।

আমাদের পড়াশুনোর জন্য তিনি একাকীত্ব বেছে প্রসঙ্গে আসি। সেই ১৯৫৫ সালের আগে ওই জলাপুটে আসেন কিছু জার্মান ইঞ্জিনিয়ার ।
তাদের জন্য সার্কিট হাউস তৈরি হয়েছিল যাতে কোন অসুবিধে না হয় । আজ সেই সার্কিট হাউসের কথা বলি । জার্মান সাহেবরা ঘর দোর ছেডে এই বিদেশ বিভুঁইতে এসে আমাদের দেশের ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে আসেন , কিন্তু তার ই মধ্যে ঘটে কিছু অঘটন ।  ওই নির্জন বনানীতে এক সুন্দরি তেলেগু মহিলা ছিলেন নাম , জি.পূর্ণিমা । তিনি কোন এক কর্মচারীর কন্যা । যেমন দেখতে ঠিক সেরকম গান গাইতেন মহিলা ।

আর জার্মান সাহেবের নাম আলেকজান্ডার পল । সুধু পল সাহেব বলেই ওনাকে ডাকতেন সবাই। বয়েসটা অল্প ।  পল সাহেব যেমন সুন্দর দেখতে ছিলেন সেইরকম অমায়িক ব্যাবহার ছিল ওনার। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসতেন।  খুব ভালো টেনিস খেলতেন এবং পিয়ানো বাজাতেন। প্রসঙ্গত পল সাহেব ওই পূর্ণিমাদের বাডী যেতেন গান শুনতে ।

অভিভূত হয়ে গান শুনতেন পল সাহেব আর সেই গান পিয়ানোতে বাজাতেন সার্কিট হাউসে ।  সেই সঙ্গীতের মূর্ছনায় দু জনের মধ্যে কোথায় কখন প্রেম সৃষ্টি হয় কেউ বুঝে উঠতে পারেনি কখন।

এটাই মুল সুত্র । এর পর চলে চুপি চুপি দেখা আর প্রেমের আদান প্রদান । বোধ হয় ওই একটাই চিত্ত বিনোদনের উপায় ।  তখন ওখানে না ছিল বায়স্কোপ না ছিল এখনকার মতন টিভি , ভিডিও, ক্রিকেট ফুট বল খেলা ইত্যাদি। তাই দুই হৃদয়ের মিলন ঘটে অজান্তে । ক্রমে পূর্ণিমা অন্তঃসত্ত্বা হন । এর মধ্যে পল সাহেব পূর্ণিমাকে প্রায় স্ত্রীর দরজা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব রাখেন তার বাবার কাছে ।

কিন্তু সমাজের ভয়ে তার বাবা গর রাজি হন ফিরিঙ্গীর হাথে কন্যা সম্প্রদান করতে । রক্ষণশীল সমাজে তা গ্রহণিয় নয় । বিশেষ করে সে যুগে ।
পল সাহেব ব্যথিত হন । এর মধ্যে কিছু দিন কেটে জায় । ওদের দেখা সাক্ষাৎ বন্দ । সে দিন ছিল পৌষ পূর্ণিমা । পূর্ণিমা চুপি চুপি সার্কিট হাউসে জায় কিন্তু দেখে পল সাহেব নেই ।তাকে না জানিয়ে পল সাহেব চলে জান । সে কান্নায় ভেঙ্গে পডে ।

ওখানেই আত্মহত্যা করে গলায় দডি দিয়ে। সকালে সবাই দেখে চকিত হন। এ হেন জায়গায় এরকমটি কেউ আশা করে নি। পুলিশ আসে ।
বডি পোষ্ট মর্টম হয় । পল সাহেব এই ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে ফিরে জান ভিজয়নাগরম হয়ে মান্দ্রাজ । ওখানথেকে দেশে পাডি দেন।

সেই সার্কিট হাউসে এর পর আর কোন সাহেব থাকেননি কারন পূর্ণিমা , ঠিক পূর্ণিমার দিন রাতে বেরুত খোলা চুলে । ওই নির্জন পরিবেশে কার বাবা সার্কিট হাউসে থাকবে ? আজও পূর্ণিমার অতৃপ্ত আত্মা পল সাহেবের অপেক্ষায় । মৃদু সঙ্গীতের ঝংকার শোনা জায় আর শোনা জায় পূর্ণিমার হাঁসি কান্নার শব্দ ।  পল সাহেব কি জানেন পূর্ণিমার কি হল ?আজ ও ওই সার্কিট হাউসে কেউ একলা থাকেনা । আর পূর্ণিমার দিন বন্দ থাকে সার্কিট হাউসের দরজা।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত