একবার আমরা সপরিবারে পুত্র কন্যাসহ দার্জিলিং এর তিনচুলে(৫০০০ফুট) গিয়েছিলাম।প্রচন্ড ঠান্ডা।
আমরা একটা কমদামি লজে আশ্রয় নিলাম।তিনচুলে ও ছোটোমাঙ্গোয়ার মধ্যবর্তি পথ বেশ বিপজ্জনক।ছোটা মাঙ্গোয়ারা দৃশ্য মোহিত করে দেয় মন।একদিকে দার্জিলিং, কালিম্পং অন্যদিকে সিকিম।শালিক পাখি আর কমলালেবুর বাগান চোখে পড়ার মত। সকালবেলার কুয়াশা কাটতেই বেলা বারোটা বেজে যায়। আমি কোনোদিন ভগবানের অস্ত্বিত্বে বিশ্বাস করতাম না। সবাই আমাকে নাস্তিক বলেই জানতো। কিন্তু ভগবান না থাকলে তো, ভূতেরও অস্তিত্ব নেই। এই তিনচুলে এসে সে বিশ্বাস আমার ভঙ্গ হয়েছিলো।বলছি সে ঘটনা। বিশ্বাস নাও করতে পারেন।
আমি আর আমার এক বন্ধুর পরিবার এখানে লজে আছি। পোশাক আরও প্রয়োজন ছিলো। ঠান্ডা যে এত বেড়ে যাবে এই ধারণাটা ছিলো না। একদিন আমি আর আমার বন্ধুটি রাতে ঘুরতে বেড়িয়ে দেখি এক স্কন্ধকাটা লোক আমাদের আগে আগে চলেছে। বন্ধুটি ভয়ে বু বু করছে। আমি বললাম, চুপ। ভয় পাস না। কেউ হয়তো আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। আমি কথাটা বলামাত্র পুরো শরীরটা লোকটা পাহাড়ের উপর থেকে নিচে ভাসিয়ে দিলো। লোকটা নিচে পড়ছে। প্রায় কয়েক হাজার ফুট নিচে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম লোকটা লাফিয়ে পড়লো নির্দ্বিধায়। দেখে আমাদের পিলে চমকে উঠলো। বন্ধুটি বললো, চল লজে ফিরে যাই। আমিও বললাম,সেই ভালো। আর ঘোরার শখ নেই।
তারপর লজের দিকে পা বাড়ালাম। ও মা, হঠাৎ ধূমকেতুর মত স্কন্ধকাটা আবার আগে আগে চলতে লাগলো।বন্ধু বললো,এখনি তো লাফিয়ে নিচে পড়লো। আবার কি করে উপরে এলো। আমি বললাম,ওরা সব পারে। উড়তেও পারে। বন্ধুটি বললো,ওরা মানে , ওরা কে? আমি বললাম, বোঝো না কেন? ওরা হলো অশরীরী। আমরা যাকে ভূত বলি। ভীত বন্ধুটি অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমি চিৎকার করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে লোক জড়ো হলো। আমাদের গাইড বললো আপনি রাতে বেড়িয়েছেন? ভালো। রাত এগারোটার পর আপনাদের বেরোতে বারণ করেছিলাম। আমার কথা শুনলেন না। এখন চলুন লজে যাই। মাথায় জল দিলে বন্ধুটি জ্ঞান ফিরে পেলো। আমরা সানাই লজে, সবাই এক ঘরে বসলাম। সকলে আমাদের ঘটনা শুনে ভয় পেলো। গাইড বললো,ভয় পাবেন না। আজ পর্যন্ত কোনো লোকের ক্ষতি হয় নি। শুনুন এই ভূতের একটি মর্মান্তিক ঘটনা আছে।
একবার নব দম্পতি বেড়াতে এসেছিলো। মধুচন্দ্রিমা, বিয়ের পরে আনন্দ ভ্রমণ। আর তাদের সঙ্গে এসেছিলো ছেলেটার বন্ধু। বেশ চলছিলো আনন্দের ফোয়ারা। কিন্তু বাদ সাধলো এক বিকেলের ঘটনা। বর ছেলেটি, চা আনতে গেছে সামনের দোকানে। একটু দেরী হয়েছে। চল্লিশ মিনিটের মত। তারপর ফিরে এসে দেখে, তার বৌ, বন্ধুর সঙ্গে বিছানায় মধুচন্দ্রিমায় রত। আর বন্ধুট বলে চলেছে বিয়ের আগের সম্পর্কের কথা। বর ছুটে গিয়ে নিজের বৌকে ধরে মারতে মারতে দরজার বাইরে বের করে দেয়। তারপর নিজে দরজা বন্ধ করে বন্ধুর সঙ্গে অনেকক্ষণ বাগ বিতন্ডা করে। মারামারও চলে। তারপর সেইদিন রাতে প্রেমিক বন্ধুটি তার প্রতিদ্বন্ধি বন্ধুটিকে চিরতরে সরিয়ে দিলো। আমি বললাম,কি ভাবে?
গাইড বললো,মাথা কেটে দিয়েছিলো , তারপর বডিটা পাহাড় থেকে ছুড়ে ফেলে পালিয়ে গেছিলো দুজনেই। আজ পর্যন্ত পুলিশ তাদের খোঁজ পায় নি। তারপর থেকে প্রতি রাতে এই লজে কেউ এলেই গলাকাটা অই ভূতটি দেখে নেয় কে এসেছে তার লজে। একবার এক নব দম্পতীর সঙ্গে এক বন্ধু এসেছিলো। বন্ধুটির দেহ পরের দিন পাওয়া গেলো পাহাড়ের নিচে মৃত অবস্থায়। তারপর থেকে লজের মালিক, পরিবার ও তার সন্তান থাকলে তবেই ভাড়া দেয়। আপনার বন্ধুটিকে দেখে হয়তো মারার পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু আপনার বন্ধুর স্ত্রীও কন্যা থাকায় রক্ষা পেলেন । পরিবার সঙ্গে থাকলে কোনো ক্ষতি হয় না।হয় নি আজ পর্যন্ত।