প্রত্যেক মেয়ের জীবনে একটি কাঙ্ক্ষিত রাত থাকে, আজ আমার জীবনের সেই রাতটি উপস্থিত।
অঢেল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার রাহিন শিকদারের বধু হয়ে এসেছি আমি। বাবার বন্ধুর ছেলে । তাদের ইচ্ছাতেই বিয়েটা হয়েছে । আমার কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই । আমি ছেলেটাকে দেখেনি। তবে প্রত্যেক মেয়েই তার কল্পনায় একটি ছবি এঁকে রাখে যে, তার মনের মানুষটি কেমন হবে।
,
অনেক সময় হল একা একা বসে আছি । চতুর্দিকে কেমন যেন থমথমে নিরবতা । মাথার উপরে ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে। তবু আমার শরীর ঘামে জবজবে।
ভাবি আর বোনেরা অনেক আগেই চলে গেছে রাহিনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে। বিয়ে বাড়ি হিসেবে খুব কমই হৈচৈ লক্ষ্য করলাম ।
,
রাত ১:৪৫ বাজে । এখনো ওর কোন খোঁজ নেই। আমার শরীরটা খুবই খারাপ লাগছে । একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হত।
এসব ভাবতে ভাবতেই ওর আসার শব্দ শোনা গেলো। সে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে কেমন একটা বোটকা দুর্গন্ধ পেলাম। মনে হচ্ছে, কোথাও যেন মাংস পঁচে গেছে। এই গন্ধটা আমার খুব পরিচিত। কিন্তু এখন কেন যেন মনে পড়ছেনা। সে যত কাছে এগিয়ে আসছে গন্ধটা ততই তীব্র হচ্ছে।
,
হ্যাঁ! মনে পড়েছে, এই গন্ধটা আমি আরেকবার পেয়েছিলাম। তখন আমার বয়স সাত। রাতে আম কুড়াতে গিয়ে আম গাছের নীচে একটা মৃত পঁচা লাশ দেখেছিলাম। সেই লাশের থেকে এই দুর্গন্ধটা আসছিলো। পরদিন সকালে গিয়ে লাশটা আর পাওয়া যায়নি। সবাই আমাকে অবিশ্বাস করেছিলো। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই লাশের মুখাবয়ব।
আমার বয়স যখন নয়। তখন তেঁতুল গাছ থেকে কে যেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো, তখনো পেয়েছিলাম এই দুর্গন্ধটা। আজ এত বছর পর আবার কেন এটা ফিরে এসেছে? নাকি আমার মনের ভুল। মানুষটি আমার পাশে এসে বসল । ঝাঁকড়া চুল। চেহারায় বিষণ্ণতা, হাঁটার ভঙ্গি রোবট টাইপ।
_ কেমন আছ তুমি?
_ভাল
_ তুমি এত ঘামছ কেন? এটা বলে সে আমার শরীর ছুঁয়ে দেখলো।
_ আমি কেঁপে উঠলাম। একদম বরফশীতল হাত। শুনেছি মৃত মানুষের শরীর এমন ঠাণ্ডা হয়।
ছি: আমি এসব কী ভাবছি। সে আমার স্বামী। লোকটা আমার ভাবনা জেনে ফেললে কী লজ্জায় পড়তে হত। _ছোটবেলায় কী তোমার আম কুড়ানোর শখ ছিলো?
আমি চমকে উঠলাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো আমগাছের নীচে পড়ে থাকা সেই লাশটার চোখের মত। সে বাতি বন্ধ করে দিলো। এখন ঘরটায় কবরের অন্ধকার। লোকটার কণ্ঠ থেকে কেমন ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরুচ্ছে। কুরবানির গরু জবাই করার পর যেমন আওয়াজ বের হয়। পঁচা মাংসের দুর্গন্ধে আমার বমি আসার উপক্রম।
লোকটা আমার গলায় হাত দিলো। আমি নি:শ্বাস নিতে পারছিনা। গলা দিয়ে চিৎকারও বের হচ্ছেনা। এমন সময় কারো পায়ের আওয়াজ শোনা গেলো। আমি জ্ঞান হারালাম।
,
জ্ঞান ফিরলো একটি কোমল হাতের ছোঁয়া পেয়ে।
_কী ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
_হুম
_লাইট বন্ধ করে বসে আছ কেন? অনেক দেরি করে ফেললাম । কিছু মনে করো না।
_ আমি কিছু মনে করিনি।
_এত ঘামছ কেন? ঘোমটাটা সরাও। তোমার গায়ে বাতাস লাগছেনা। এটা বলে সে নিজেই ঘোমটা সরিয়ে দিলো।
আমার লজ্জা লাগছে। মানুষটা কত সুন্দর করে কথা বলে। চোখ দুটোও খুব সুন্দর। ছুঁয়ে দেখবো নাকি? থাক.. _আপনি খাওয়া দাওয়া করেছেন? জিজ্ঞাসা করেই জিহবায় কামড় দিলাম। আপনি করে কেন বললাম? একবার আপনি শুরু করলে তুমি তে নামা খুব কঠিন। আমার প্ল্যান ছিলো বিয়ের প্রথম রাত থেকেই তুমি করে বলবো।
,
রাহিন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার ঘুম আসছেনা। একটু আগে আমি কি তাহলে ভয়ংকর কোন দু:স্বপ্ন দেখেছি? কে জানে?
হঠাৎ মনে হলো ঘরের মাঝে কেউ পায়চারি করছে। পঁচা মাংসের দুর্গন্ধটাও ফিরে এসেছে। আমি রাহিনের আরো কাছে এগিয়ে গেলাম। গন্ধটা তীব্র হচ্ছে। রাহিনকে আমি শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে আছি। হঠাৎ আজান হলো, দুর্গন্ধটাও নিমিষেই গায়েব। আমি রাহিনের বুকে মাথা রেখে দুয়া করলাম। হে আল্লাহ! আমার প্রাণের স্বামীকে তুমি সকল অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করো।
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক