হারমনিয়াম

রাহির বিয়ে হয়েছে বোসু বাড়িতে এই দিন দশেক হল। বিরাট বনেদি বাড়ি দেখলে মনে হয় কোনো রাজ প্রাসাদ,যেমন মজবুত খিলান তেমন সুন্দর আসবাবপত্র। নিখুঁত সূক্ষ হাতের কাজ পালঙ্ক থেকে দরজা পর্যন্ত, কি নেই এই বাড়িতে ! সব সুবিধা আছে কিন্তু মানুষ বলতে শাশুড়ি মা, রাহির বর প্রবাল,মানদাদি আর দুজন চাকর। এত বড় বাড়িতে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে , কেমন যেন ভুতের বাড়ির মত। রাহির তাই মাঝে মাঝে বেশ ভয় করে। আজ সকাল থেকে শাশুড়িমা ছুটোছুটি করছেন ওনার ছোটো বনের বাড়ি যাবেন সন্ধ্যার সময় তিনি নাকি খুব অসুস্থ ,প্রবাল ,মানদাদিও যাবে তাই থাকতে না পেরে রাহি প্রবালকে বলল যে তার একা থাকতে ভয় করে। এ কথা যখন রাহি বলে তখন সে দেখেনি তার শাশুড়ি সরলাবালা কখন যেন দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ।

রাহির মুখে ভয়ের কথা শুনে সরলাবালা ঝাঁজিয়ে উঠল, ” কিসের ভয় শুনি? আদিখেতা হচ্ছে না স্বামীর মাথা চিবুনু হচ্ছে ? এই জন্য তোকে বলেছিলুম খোকা শহরবাজারের মেয়ে আনিসনে,ওরা আর কিছু পারুক বা না পারুক ঢঙটা ভালোই জানে ,কিকরে স্বামীকে হাতের মুঠোয় নিতে হয় সেটাও রপ্ত করা থাকে এদের। রাহি এমন একটা কথার জন্য প্রস্তুত ছিলনা সে বারবার প্রবালের মুখের দিকে দেখতে লাগল আর ঠোঁট ফুলাতে লাগল কিন্তু প্রবাল কোনো কথা না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাহির মনে ব্যাপারটা জোরেই লাগল,এ কেমন স্বামী ! একটা কথাও বলতে নেই? সে তো জানে রাহিদের এত বড় বাড়ি নয় জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থেকে অভ্যাস এইভাবে একা থাকার তার অভ্যাস নেই। বিয়ের আগেই তো সে প্রবালকে জানিয়ে ছিল,প্রবাল বলেছিল আমিতো আছি। রাহি মনে মনে ভাবল এই তার নমুনা! ঘটকের দেখাতেই বিয়ে ওদের তবে কিছুটা প্রেমজো বিবাহ। প্রথম যেদিন প্রবাল রাহিকে দেখতে যায় সেদিন ই জানিয়ে এসেছিল সে রাহিকেই বিয়ে করছে। তারপর রাহির বাড়ি থেকে রাহির কলেজের নাম জেনে নিয়ে একদিন দেখা করে, তারপর আর কি ,তারপর চুটিয়ে প্রেম।

কিন্তু রাহি মনে মনে ক্ষুব্ধ প্রবালের এই আচরনে তাই সে মনে মনে ঠিক করল আজ রাতে প্রবালকে কিছুতেই খাটে জায়গা দেবেনা থাক পড়ে সোফায়। কত ধানে কত চাল তখন বুঝবে। এমন সব ভাবছে হঠাৎ সরলাবালা এসে ঝাঁঝিয়ে বলল তোমার স্বয়ংবর সভা ভেঙেছে ? যদি ভেঙেছে তবে নিচে এসো আমরা বেরুচ্চি।এমন সময় মানদাদি এসে বলল আহ্ খুড়িমা বলি কি হচ্ছে এসব? নতুন বৌটাকে দিলেতো ভয় দেখিয়ে? রাহির মানদাদির মমতা মাখা কথায় কান্না পেয়ে গেল আজ অবধি তাকে এত মুখ ঝামটা কখনো খেতে হয়নি এই দশদিনে শাশুড়ির থেকে যা খেয়েছে। মানদাদি সব সময় রাহিকে আগলে রাখার চেষ্টা করে। মানদা হল এ বাড়ির মেয়ের ই মত শোনা যায় মানদা যখন পাঁচ বছরের তখন সরলাবালার শশুরের হাত ধরে এ বাড়িতে নিয়ে আসে। যেদিন প্রথম মানদাকে সরলাবালার শশুর এ বাড়ির গন্ডিতে এনে সরলার হাতে দেয় সেদিন সরলাকে বলেই দিয়েছিলেন উমাপতি, মানদাকে যেন এ বাড়ির মেয়েই ভাবা হয় তার যেন অনাদর না হয়। আসলে মানদা ছিল অনাথ । উমাপতি একদিন এক গ্ৰামে কাজে গেছিলেন সেখানে হঠাৎ মানদা এসে উমাপতির হাত ধরে বলে তোমার বাড়িতে আমাকে একটু নিয়ে যাবে গো? আমি কতদিন মা দেখিনি আমি মা দেখবো। কথাটা শুনে উমাপতি চমকে উঠেছিল তারপর খোঁজ চালিয়ে জানতে পারে ছয়মাস হল বাজ পড়ে মানদার বাবা-মা দুজনেই মাঠে কাজ করতে গিয়ে মারা যায় । সেই থেকে মানদা সকাল বিকাল মা খুঁজে বেড়ায় যখন মাকে পায়না তখন কাঁদতে কাঁদতে কারো বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়ে। উমাপতি বুকে তুলে নিয়েছিল মানদাকে শিশুটার কথা শুনে বড় লেগেছিল বুকে উমাপতির। উমাপতির আজ আর নেই তবে তার কথা আজ ও মেনে চলে সবাই এ বাড়িতে বিষেশ করে সরলা। কি যেন অমঘ টান মানদার প্রতি ওর , মানদা বড় হতেই নিজে হাতে বিয়েও দিয়েছিল সরলা কিন্তু বিধিবাম মাস ঘুরতেনা ঘুরতেই মানদা বিধবা হয় । বিধবা হবার পর লজ্জায় এ বাড়িতে ফিরে আসেনি মানদা , শশুবাড়ির অত্যাচার সহ্য করেই পড়েছিল কিন্তু সরলা যে মানদার সব খবর রাখত সেটা মাদনা জানতনা। একদিন সরলা হঠাৎ করেই মানদার শশুরবাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। তখনি হুকুম দেয় তুই এখুনি গাড়িতে গিয়ে বসবি , এই কথা বলেই নাকি সরলাবালা জ্বলন্ত উনুনে বসানো তরকারির কড়াই লাথি মেরে ফেলে উনুন ভেঙে মানদার হাত ধরে নিয়ে গট গট করে বেরিয়ে এসেছিল, আগেরদিন যে ভাসুর মানদাকে চড় মেরেছিল সেও ভয়ে কুঁকড়ে গেছিল সরলার রুদ্র মূর্তি দেখে। সেই থেকে আবার ও এ বাড়ির আর একটি পোক্ত থাম হয়েই রেয়েগেছে মানদা। এই ঘটনা গুলো প্রবালের মুখে শোনা রাহির। কেন জানানেই রাহির খুব আপন হয়ে উঠল মানদাদি। যাক সবাই চলে যাবার পর রাহি ওপরে উঠে এসে শরৎরচনাবলী নিয়ে খাটের ওপর উপুড় হল। কিন্তু মনে বসছে না তার সত্যিই তার বেশ ভয় ভয় করছে তাই সে ভাবল ভয় কাটাতে তার একা একাই এই বাড়িটা ঘোরা উচিৎ নাহলে আরো কত মুখ ঝামটা খেতে হবে কে জানে। এই ভেবে রাহি এ ঘর ও ঘর ,বারান্দা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখল একটা ছোট্টো মত ঘর, দরজাটা ভেজানো থাকলেও একটু ফাঁক রেয়ে গেছে , রাহি আসতে আসতে গিয়ে সে ঘরে ঢুকল। আশ্চর্য ঘরের ভেতর কেউ নেই একটা সিঙ্গেল বিছানায় ধবধবে সাদা চাদর পাতা আর খাটের এক পাশে একটা হারমনিয়াম রাখা, দরজার পাশে একটা চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই ঘরের ভেতর । রাহির বহুদিনের ইচ্ছে ছিল গান শেখার কিন্তু পড়াশোনা করে সময় হয়ে ওঠেনি তার গান শেখা। রাহি খাটের ওপর গিয়ে বসে হারমনিয়ামটা কাছে টেনে নিয়ে বাজাতে শুরু করল কিন্তু যেহেতু সে শেখেনি তাই উলটো পালটা বাজাতে থাকল আর তার সাথে বেসুরো গান করতে লাগল। এমন সময় কে যেন রাগে চিৎকার করে বলে উঠল, বলি ওরে খানকি মাগী থাম থাম আমার কান দুটো গেল,মেলেচ্ছ্যো মাগী কোথাকার বলি মা বাপি কি কিচ্ছুটি শেকাইনি? ছুঁড়ি এই জন্য ঐ মাগী(সরলাবালা) তোকে দেখতে পারেনা। কথাগুলো একনাগারে বলে যিনি ঘরে ঢুকলেন রাহি তাকে কোনোদিন দেখেনি তাই সে অবাক হয়ে দেখল , উফ্ কি সুন্দর দুধে আলতা রং, সারা মাথা ধবধব করছে সাদা  চুল ,ঠোট দুটো লাল টুকটুকে রাঙা পানের রঙ দিয়ে কি সুন্দর অদ্ভুত জর্দার গন্ধে ঘরটা ভরে উঠল। রাহি অবাক হয়ে দেখছে দেখে মহিলা কাছে এসে বলল মাগীর চোখ দেখো যেন গিলে খাবে বলি আমার হারমনিয়াম নিয়ে ষাঁড়ের মত চিল্লিয়ে ভর সন্ধ্যায় বাড়ি মাথায় তুলতে কে বলেছিল তোকে? তোর এত সাহস মাগী , তুই আমার হারমোনিয়ামকে অপমান করিস ! চুলের মুটি ধরে ঘর থেকে বেরকরে দিতে ইচ্ছা করছে নেহাত তুই খোকার বৌ তাই । নাহলে এখুনি দিতাম তোকে দূরছাই করে‌। রাহি আসতে আসতে উঠে দাঁড়িয়ে মানে বোঝার চেষ্টা করল এবং প্রবালকে খোকা সম্বোধন করায় সে বুঝল ইনি এ বাড়ির তেমন কেউই হন ।

রাহি তাই ঝুঁকে পড়ে প্রণাম করতে গেল,মহিলা দশ হাত দূরে সরে গিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল করিস কী তুই? সন্ধ্যাবেলায় ঠাকুর প্রনাম কর ,এই বলে মুখ বেঁকিয়ে বলল ঢঙ্ যত্তসব। বলি আমার জিনিসে তুই হাত কেন দিলি বল? রাহি বলল আচ্ছা সে নাহয় আমি বলব কিন্তু আমিতো আপনাকে ঠিক চিনলাম না আমার বিয়েতেও তো আপনাকে দেখিনি! আর এতদিন এ বাড়িতে আছি কই আপনাকে তো দেখিনা? বৃদ্ধ মুখ ভেঙচে বলল আ…মোলযা মর মর মাগী মর বলি চোখের মাথা কি খেয়েছিস? দেখছিসনা আমি বিধবা? বিধবাদের শুভ কাজে যেতে নেই সেটাও জানিসনা? রাহি বলল না জানিনা , আপনি বিধবা তাতে আপনার দোষ কোথায় ? আপনার আগে পরিচয় আপনি একজন মানুষ এবং আপনার ও সব অধিকার আছে যা কেড়ে নেবার অধিকার কারো নেই স্বয়ং ঈশ্বরের ও নয়। বৃদ্ধা গুলি গুলি চোখ করে বলল ওমা মেয়ে বলে কী! বুয়েচি এই জন্য বৌ তোকে দেখতে পারেনা এই জন্য শহুরে মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া নিয়ে এত হুজুতি। রাহি অবাক হয়ে বলল মানে? বৃদ্ধা বলল বৌ তো খোকার শহুরে মেয়ে পছন্দ নিয়ে খুব রেগে ছিল খোকার ওপর তবে আমাদের খোকা খুব একগুঁয়ে বাপু একটু কথা শোনেনি মায়ের তোকেই শেষে বিয়ে করল খোকা। রাহি অবাক হয়ে গেল , তারমানে সরলাবালার এই বিয়েতে আপত্তি ছিল! প্রবালের জেদের কাছে হার মেনে এই বিয়েতে রাজি হয়? আশ্চর্য ! প্রবাল এতবড় কথাটা বেমালুম চেপে গেল! কেন তাকে বললনা? রাহি ভাবল আজ আসুক সে বাড়ি আজ অনেক কিছু নিয়ে তার প্রবালের সাথে বসবে। রাহি বৃদ্ধাকে বলল সবতো বুঝলাম কিন্তু এখনো যে আপনার পরিচয়টা পাওয়া হলনা? বৃদ্ধা বলল আমি প্রসন্না তোর পিসিশাশুড়ি খোকার পিসি আমি। রাহি বলল কি অদ্ভুত আপনাদের বাড়ি ,আপনার কথা কেউ আমাকে একবারো বলেনি। বৃদ্ধা তখন দুঃখিয়ে খাটে বসে বলল, বলবে কেন ঐ মাগীতো আমাকে সহ্য করতে পারেনা , রাহি বুঝল বৃদ্ধার ইঙ্গিতটা সরলাবালার দিকে । রাহি বলল কিন্তু মানদাদি,আপনার খোকা কেউতো বলেনি আমাকে? বৃদ্ধ বলল এ বাড়িতে তাকে কেউ পছন্দ করেনা সে তার মনের মানুষ নিজে পছন্দ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিল তাই। হঠাৎ বৃদ্ধা রাহিকে বললেন তুই গান  ভালোবাসিস ? রাহি ঘাড় নেড়ে সায় দিল। বদ্ধা জিজ্ঞাসা করল গান শেখেনি কেন রাহি ? রাহি জানালো পড়াশোনা করে সময় হয়ে উঠত না তাই।বৃদ্ধা মুখ ভেটকে বললেন মেলেচ্ছো মাগী মেমসাহেবদের মত বই পড়তে শিখেছে,বেরো আমার ঘর থেকে। রাহি কথাটা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে একটুও মন খারাপ লাগল না উলটে মানুষটাকে বেশ ভালো লাগল। রাহি চৌকাট ডিঙাতে যাবে এমন সময় বৃদ্ধা বললেন তুই গান শিখবি? রাহি অবাক হয়ে বলল কে শেখাবে পিসিমা ? বৃদ্ধা রাহিকে বলল কি বলে ডাকলি আমাকে ? রাহি থতমত খেয়ে বলল পিসিমা , আপনি তো ওর পিসি হন তাহলে তো আমার ও পিসি । বৃদ্ধা মৃদু মৃদু হেসে বলল শোন তোকে আমি গান শেখাবো কিন্তু একটা শর্ত আছে । রাহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বৃদ্ধার মুখের দিকে দেখতে লাগল,বৃদ্ধা বলল তুই যে আমাকে চিনিস,আমাদের যে কথা হয়,আমি যে গান শেখাবো এ কথা কারোকে বলবি না। বৌ যদি শোনে তবে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে এমনকি খোকার জীবন থেকেও। শেষের কথাটা শুনে রাহি আঁৎকে উঠল সে কথা দিল এ বাড়িতে সে কারোকে বলবে না তার পিসিমার সাথে ভাব হয়েছে। এরপর ছ’মাস কেটে গেল রাহির এই বাড়িতে, দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে রাহি চুপি চুপি চারতলা যায় পিসিমার কাছে গান শিখতে , পিসিমা কখন যেন চারতলায় হারমনিয়ামটা নিয়ে গেছে যাতে রাহিকে গান শেখাবার সময় যেন কেউ না টেরপায় যে রাহি আর পিসিমা কথা বলে। রাহির পিসিমাকে ভীষন ভালো লাগে ভারি মিষ্টি মানুষ , রাহির কতবার মনে হয়েছে পিসিমা যখন গালি দেয় তখন পিসিমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে । একদিন রাহি গেছিল প্রসন্নাকে জড়িয়ে ধরতে ,কিন্তু প্রসন্না লাফ দিয়ে সরে গিয়ে বলল খবদার ছুঁড়ি আমাকে ছুঁবিনা আমি সাত্বিক বিধবা ,তুমি ভাতারের সোহাগ খেয়ে ঐ গায়ে আমাকে ছুঁতে আসো? রাহি প্রতিবাদ করেছিল যে সে স্নান করে এসছে কিন্তু কে কার কথা শোনে প্রসন্না খিস্তির বন্য বইয়ে দিতে লাগল, আর যত খিস্তি দেয় রাহি ততো মুখে কাপড় গুঁজে  হেসে লুটোপুটি খায়। বেশ ভালোই চলছিল রাহির দিনগুলো। শাশুড়ির মুখ ঝামটা আর গায়ে লাগে না , প্রবালের অদম্য ভালোবাসা,মানদাদির স্নেহ আর পিসিমার আদোরে ভরা গালাগালি খেয়ে ।

হঠাৎ একদিন রাহির শরীর খারাপ করল সারাটা দিন শুধু বমি করেছে অথচ কিছুই সে খায়নি তেমন কিন্তু একটুক্ষন পর পর ই তার বমি আসছে সেদিন সকাল থেকে শাশুড়ি রাহির মাথার কাছে বসে,একবার মাথায় হাত বোলায় একবার চোখেমুখে জল দিয়ে দেয় । রাহি এই প্রথম শাশুড়ির এই রূপটা দেখল আর অবাক হল । মনে মনে ভাবল মানুষটার ওপরটা শক্ত ভেতরটা আসলে নরম। দুপুরের দিকে সবার ই একটু চোখ লেগে গেছিল হঠাৎ রাহির ঘুম ভাঙল দরজার কাড়ায় কারো হাত লাগার শব্দে। রাহি তাকিয়ে দেখল পিসিমা দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে । রাহি আস্তে করে রাহির বুকের ওপর থেকে সরলাবালার হাতটা সরিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে প্রসন্নাকে বলল একি পিসিমা আপনি এখানে কেন ? আপনি ই তো বলেন মা রাগ করবে জানলে ,এখুনি রণক্ষত্র বেঁধে যাবে তো। প্রসন্না বলল তোকে দেখতে এসেছিলুম শুনলাম তোর নাকি শরীর খারাপ, রাহি জিজ্ঞেস করল কে বলেছে ? পিসিমা জানালেন দুপুরে নাকি মানদাদি ভাত দিতে গিয়ে বলে এসেছে। রাহি বলল এখন ভালো আছি পিসিমা আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে যান। প্রসন্না বলল মাগী বিয়ের জল শুকালো না আর পেটে বাঁধিয়ে বসলি? রাহি অবাক হয়ে বলল মানে? প্রসন্না বলল মাগীর ঢঙ দেখো , স্বামী সোহাগ খেয়ে পেটে একটা বাঁধিয়ে এখন আমাকে জিজ্ঞাসা করছে “মানে”, বলি আর কত ঢঙ দেখাবি ছুঁড়ি? রাহি লজ্জা পেয়ে বলে উঠল যাহ্ পিসিমা আপনি সত্যিই একটা যা তা। প্রসন্না গোল গোল চোখ করে বলল ওমা..দেখো দেখো শহুরে মেয়েও লজ্জা পায়। রাহি বলল শহর হোক বা গ্ৰাম পিসিমা সব মেয়ে সেম হয়। প্রসন্না বলল “সেম” মানে? রাহি বলল ওটা ইংরেজি ভাষা ওটার মানে হল “এক/একরকম”। প্রসন্না যাবার সময় বলে গেল “মেলেচ্ছ্যো মাগী”। কথাটা শুনে রাহি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। সন্ধ্যাবেলায় প্রবাল বাড়ি এসে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধাল, রাহির এমন অবস্থা যখন কেন কেউ ডাক্তার ডাকেনি। মানদা জানালো তাদের ডাক্তার দেশের বাইরে গেছে তাই তারা প্রবালের অপেক্ষায় ছিল তবে ঘরোয়া টোটকায় রাহি এখন সুস্থ। প্রবাল রাগে গজগজ করতে করতে ডাক্তার ডাকতে গেল। রাহি খাটের ওপর শুয়ে আছে এমন সময় রাহি শুনল তাকে কে যেন বলছে, কি ভাগ্যি করে এসেছিলিরে তুই তাই এমন স্বামী পেয়েছিস। রাহি কথাটা শুনে পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল পিসিমা দাঁড়িয়ে। রাহি উঠে বসে বলল এই কথাটা আপনার একদম ঠিক নয় পিসিমা আপনাদের খোকার ও ভাগ্য ভালো যে সে এমন বৌ পেয়েছে ,এ কথা বলে রাহি হেসে উঠল কিন্তু সে দেখল পিসিমা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে । রাহি বলল কী হয়েছে পিসিমা? পিসিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল সবাই তোর মত ভাগ্য পায়নারে ছোটোবৌ। এই প্রথম রাহি এমন একটা ডাক শুনল পিসিমার মুখে সে তাড়াতাড়ি উঠে ভালো করে বসে জিজ্ঞাসা করল প্রসন্নাকে কিছু হয়েছে নাকি, কেউ ওর আর রাহির ভাবের কথা জেনে গেছে নাকি । প্রসন্না বলল নারে তা নয়, জানিস ছোটোবৌ আমার খুব স্বপ্ন ছিল আমি মা হবো,আমার পেটের ভেতরে আমার ভালোবাসার মানুষটার ভালোবাসা নড়েচড়ে বড় হবে।একদিন সে আমাকে মা বলে ডাকবে। রাহি কোনোদিন প্রসন্নার এইদিকটা দেখেনি তার খুব অপ্রস্তুত লাগছিল। সে আস্তে করে প্রসন্নাকে বলল পিসেমশায়ের কী হয়েছিল পিসিমা? আপনার বিয়ের কত দিনের মাথায় পিসেমশায় মারাযান? প্রসন্না মাথা নায়ে কিছুক্ষন বসে থেকে বলল চুপ কর মাগী এখন তোর পেটে আমাদের বংশ এখন মরা মরা করবি নাতো একদম। রাহি বুঝল পিসিমা দুঃখটা ভাগ করতে চাইছে না তাই সে চুপ করে গেল। হঠাৎ প্রসন্না বড় বড় চোখ করে বলল হ্যাঁরে মাগী তোর স্বামী যখন তোকে সোহাগ করে তখন তোর কেমন মনে হয়? মনে হয় যে তুই স্বর্গসুখ পেলি? রাহি এমন খোলামেলা কথা বলতে অভ্যস্ত নয় যার ফলে রাহি অবাক হয়ে আমতা আমতা করতে থাকল। এমন সময় নিচ থেকে প্রবালের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল প্রসন্না বলল ঐ চলে এসছে হারামজাদা, মাগীকে একটু চোখের আড়াল হতে দেয়না,দুটো মনের গল্প করব তার উপায় নেই। এই বলে প্রসন্না মুখ ভেটকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর প্রবাল ডাক্তার নিয়ে ওপরে এল ডাক্তার চেকাপ করে বলে গেল ভয়ের কিছু নেই প্রথম প্রেগনেন্সি তাই এমনটা হচ্ছে। প্রেগনেন্সির কথা শুনে বাড়ি শুদ্ধ সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠল, রাহি মনে মনে অবাক হল পিসিমার অভিজ্ঞতা দেখে । সে আন্দাজে ধরতে পেরেছিল রাহি প্রেগনেন্ট! এরপর শুরু হল সকাল- সন্ধ্যা সেবা যত্ন, একবার শাশুড়ি আসে তো একবার মানদাদি।তার ভেতরেই লুকিয়ে চলে পিসিমার সাথে রাহির আড্ডা। একদিন বিকেলে সরলাবালা খাটে বসে মানদার সাথে গল্প করছে আর মানদা নিচে বসে সুপুরি কেটে কৌটাতে ভরছে এমন সময় রান্না ঘরে ঝমঝম করে বাসন পড়ে যাওয়ার শব্দ। মানদা ছুটে গিয়ে দেখল ঝিকে সরিয়ে দিয়ে রাহি পায়েস বানাচ্ছে। মানদা এই দেখে খুব বকাঝকা দিয়ে রাহিকে সরলাবালার ঘরে নিয়ে গেল নালিশ করতে। কিন্তু কি অদ্ভুত সরলা বকা না দিয়ে ওকে খাটে বসতে বলল আর মানদাকে বলল পায়েস করে নিয়ে এসে রাহিকে দিতে। মানদা পায়েস করে এনে রাহিকে দিল খেতে ,রাহির সেদিন পায়েস খাবার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল তাই সে যে শশুরবাড়িতে আছে সব ভুলে চেটেপুটে শাশুড়ির সামনে বসেই খেতে শুরু করে দিল। রাহির খাওয়া দেখে মানদা আর সরলাবালা মুখ টিপে হাসতে লাগল কিন্তু রাহির সেদিকে হুঁশ নেই। অবশেষে খাওয়া শেষ করে রাহি আপন মনে হাত ধুতে উঠে যাবার সময় গুনগুন করে গান করতে লাগল। হঠাৎ বাজখাঁই গলায় সরলাবালা চিৎকার করে উঠল রাহির নাম ধরে, রাহি চমকে পেছন ঘুরে যেই তাকাল।
অমনি দেখল শাশুড়ি রুদ্র মূর্তি আর মানদাদি ফ্যাকাসে মুখে রাহির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরলা রাহিকে বলল তুমি গান জানো? রাহি ঢোক গিলে বলল একটু আধটু। সরলা বলল এখুনি তুমি যে গানটা গাইলে সেটা কোথায় শিখেছো সত্যি কথা বলবে। সরলার কথায় এমন কিছু ছিল যার জন্য রাহি মিথ্যে বলতে না পেরে বলল পিসিমা শিখিয়েছেন। মানদা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল রাহির মুখে কথাটা শুনে। সরলা কাঁপতে কাঁপতে এসে রাহির হাত ধরে জিজ্ঞাসা করল তুমি কি বললে? কার কাছে শিখেছো? রাহি বলল দেখুন মা আমি সব জানি আপনি পিসিমাকে পছন্দ করেননা কিন্তু আমিতো এ বাড়ির বৌ উনিতো আমার ও শাশুড়ি হন আমি তাকে কিকরে অপমান করি? আর উনিতো ভীষণ ভালো মানুষ অপছন্দ কেন করব বলুনতো! সরলা বলল ও কী কী বলেছে তোমাদের প্রথম দেখার থেকে সব বলো আমাকে। রাহি সমস্ত সত্যিটা বলল আর মনে মনে ভাবল আর পিসিমা একা নেই এখন সে পিসিমার হয়ে ফাইট করবে সবার সঙ্গে,কেন সবাই এমন ভালো মানুষটার সাথে এমন করে! সরলা সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষন ভাবল তারপর বলল চলত মানদা আমার সাথে দেখি । সরলা আর মানদার পিছু পিছু রাহিও যেতে গেল কিন্তু সরলা বলল তুমি ভরা পোয়াতি তুমি ওদিকে আর যাবেনা,মানদা বৌমার দায়িত্ব আজ থেকে তোর। মানদা মাথা নেড়ে হনহনিয়ে সরলার সাথে চলে গেল পিসিমার ঘরের দিকে। রাহি ভাবল ইস্ একটু বোকামির জন্য ধরাপড়ে গেল আবার ভাবল কেন সে লুকাবে ঠিক ই হয়েছে সবাই জেনে গেছে যে সে পিসিমার সাথে কথা বলে। এমন সময় পিসিমা জানলার কাছে এসে বলল মাগী তোকে এত করে বল্লু ওদের বলিসনা সেই তুই বলেদিলি ? তোর বড্ডো বাড় বেড়েছে দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা। এই বলে পিসিমা চলে গেল। সরলা হঠাৎ ঘরে ঢুকে বলল বৌমা তুমি চলো আমাদের সাথে। রাহি পিসিমার ঘরে গিয়ে দেখল কোথাও কেউ নেই এবার রাহি বলল হয়ত বাগানের দিকে বা অন্য কোথাও গেছে। সরলা রাহির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের ঘরে বসিয়ে একটা পুরানো আ্যলবাম বেরকরে বলল এখান থেকে পিসিমার ফটোখান বারকরো দেখি। রাহির বেশি খুঁজতে হলনা প্রথম পাতাতেই পিসিমা প্রসন্নাদেবীর ছবি,সেটা খুলে শাশুড়ির হাতে দিল সরলা শান্ত হয়ে বসে রাহিকে দেখতে লাগল কিছুক্ষন তারপর ধীরে ধীরে বলল আমি যা বলব তুমি শান্ত ভাবে শুনবে উত্তেজিত হবেনা তাতে বাচ্চার ক্ষতি হবে। রাহি ঘাড় নেড়ে বলল ঠিক আছে। এবার সরলাবালা বলতে শুরু করল..সরলা যখন এ বাড়িতে বিয়ে করে আসে তখন সরলা আর প্রসন্না এক বয়সি যার ফল হল সরলা আর প্রসন্না সই হয়ে উঠল,কেউ কারোকে ছেড়ে থাকেনা তবে প্রসন্না বরাবর ছিল অন্যরকম সময়ের সাথে নয় আগে চলতে চাইত। তার সব থেকে প্রিয় যদি কিছু ছিল সেটা হল তার গান আর তার হারমনিয়াম। সরলার শশুর এই গানবাজনা মোটে পছন্দ করতেন না কিন্তু মেয়ে লুকিয়ে অন্যের বাড়ি গিয়ে গান করবে তাই বাধ্য হয় হারমনিয়ামটা কিনেদেন। প্রসন্না ছিল খুব গুনি সে নিজেই গান বাঁধত আর গাইত অন্যের গান সে কোনোদিন গাইত না। খুব অহঙ্কার ও ছিল এটা নিয়ে তার কিন্তু মুশকিল হল এই গ্ৰামের পাশের গ্ৰামে একটি ছেলে ছিল সুশীল সে শহরে থেকে পড়াশোনা করত। সে মাঝে মাঝে সরলার শশুরের কাছে বিভিন্ন কাজের জন্য দরকারে আসত । এই আসা যাওয়ার পথেই কখন প্রসন্নার সাথে পরিচয় এবং প্রেম। এরপর সরলার শশুর যখন জানতে পারে সে এই বিয়ে দেবেনা বলে জানিয়ে দেয় তখন একদিন রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি প্রসন্না ঐ ছেলেটির হাত ধরে পালিয়ে যায়। সরলার শশুর জানত সুশীল প্রসন্নাকে সম্পত্তির লোভে ফাঁসিয়েছিল তাই প্রসন্না চলে যেতেই সরলার শশুর রাতারাতি উকিল দিয়ে  উইল পালটে মেয়েকে বেদখল করে। তখনকার সময় মেয়ে পালানো বিরাট লজ্জা তাই শশুর আর খোঁজ নেয়নি প্রসন্নার। এদিকে প্রসন্নার শশুরবাড়ি বিয়ের পরদিন ই এই দলিলের কথা জানতে পারে সেইদিন ই রাতে প্রসন্নাকে সুশীল গলা টিপে মেরে ঝুলিয়ে দেয় । তারপর সবাইকে বলে যে ওর বাবা ওকে কিছু দেয়নি বলে ও অপমানে আত্মহত্যা করেছে। তারপর কেস হয় কিন্তু সুশীল পালিয়ে যায় আর কেউ কোনোদিন দেখতে পায়নি সুশীলকে এই পর্যন্ত বলে সরলা থামে। রাহিতো শুনে অবাক এতদিন যার সাথে সময় কাটিয়েছে,হাসি মজা করেছে,এমনকি মাছ ভাত,আচার সব নিয়ে ভাগ করে খেয়েছে সে আর কেউ নয় অশরীরী আত্মা! রাহি বিশ্বাস করতে পারছেনা এটা কিকরে সম্ভব! রাহি ভাবল এই জন্য মানুষটা মা হবার কথা বলত স্বামীর ভালোবাসার কথা বলত অর্থাৎ সে এই দিকটা তো পায়নি । রাহির ভয় নয় দুঃখ হল খুব। তারপর আর প্রসন্নাকে রাহি দেখেনি। একদিন সন্ধ্যাবেলায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রাহি হঠাৎ সেই চেনা জর্দার গন্ধ ,রাহি পেছন ঘুরে এদিক ওদিক দেখতে গিয়ে থামের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে রাহির চিন্ত অসুবিধা হল না। ভয় পেল রাহি কিন্তু বুঝতে দিলনা। প্রসন্না ফিসফিস করে বলল ভয় পেলি ছোটোবৌ? রাহি নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলল “না পিসিমা”। প্রসন্না বলল তুইতো এখন সব ই জেনে গেছিস তোর কাছে আর লুকিয়ে কি লাভ। রাহি বলল একটা কথা বলবেন পিসিমা? প্রসন্না বলল কি কথা ? রাহি বলল আপনি এতদিনেও মুক্তি পাননি কেন? কিছু অপূর্ণ রেয়েগেছে কি আপনার? প্রসন্না বলল ঐ বড় মাগীটার জন্যই তো আমার এত জ্বালা ঐ মাগী মুক্তি দিলে তবেতো মুক্তি পাবো। রাহি অবাক হয়ে বলল কেন মা কি করেছেন পিসিমা? এমন সময় রাহি আর একটি ছায়া মূর্তি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল কে ওখানে? সরলা এগিয়ে এসে বলল তুমি কার সাথে কথা বলছ বৌমা? রাহি নির্দ্বিধায় উত্তর দিল পিসিমা। সরলা চমকে উঠে বলল কোথায় সে ! কি বলছে সে? আমি কেন তাকে দেখতে পাইনা? রাহি বলল পিসিমাকে মুক্তি দিন মা ,সে মুক্তি চায়। সরলা বলল আমি মুক্তি কিকরে দেবো? রাহি প্রসন্নার দিকে দেখল প্রসন্না বলল ওরে মনে যে পাপবোধ আছে সেটা থেকে ও মুক্তি পেলেই আমিও মুক্তি পাবো। রাহি সরলাকে সে কথা বলায় সরলা অস্বীকার করল যে তার মনে কোনো পাপবোধ নেই। এমন সময় দুম করে প্রসন্না সরলার সামনে এসে বলল মাগী বুড়ো হয়ে মরতে চলল তবু মিথ্যা বলার স্বভাব গেলনা। সরলা এইবার প্রসন্নাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেল। প্রসন্নাকে দেখে সরলা প্রায় পড়ে যায় যায় অবস্থা।  রাহি তাকে কোনমতে সামলে নিল। সরলা বলল বেশ বল আমাকে কি করতে হবে? প্রসন্না বলল তুই নিজেকে ক্ষমা কর বৌ না হলে আমি যে মুক্তি পাচ্ছিনা।সরলা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল, প্রসন্না বলল এতে তোর কোনো দোষ নেই সই সব ই আমার পোড়া কপালরে দোষ। সরলা বলল না সব আমার দোষ সেদিন যদি তোমাকে আমি পালিয়ে যেতে সাহায্য না করতাম তাহল আজ তুমি বেঁচে…আর বলতে পারল না সরলা কাঁদতে শুরু করল। প্রসন্না বলল বোকা মেয়ে ওটা আমার ভাগ্যে ছিল তুইতো নিমিত্ত মাত্র কেন মিছে নিজেকে দোষী ভাবিস! প্রসন্না বলল আমাকে খেতেদে বৌ তোর হাতে কতদিন খাইনি তাড়াতাড়ি খেতে দে আমার মুক্তির সময় চলে এসেছে। সরলা তাড়াতাড়ি প্রসন্নার ঘরে আসন পেতে খাবার ব্যাবস্থা করতে নিচে গেল প্রসন্না ধীরে ধীরে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল রাহি দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে কেঁদে ফেলল। একটু পরে সরলা খাবার থালা নিয়ে প্রসন্নার ঘরে ঢুকল ,রাহি বলল মা আমি যাবো? সরলা বলল এসো। যেন কতদিন খায়নি এত পরিপৃপ্তি করে চেটেপুটে খেয়ে রাহিকে বলল চিন্তা করিসনা ছোটোবৌ আমি আবার আসছি, কথাটা বলতে বলতে কেমন ধোঁয়ার আকার নিল প্রসন্না তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। হঠাৎ রাহি চিৎকার করে উঠল প্রসব যন্ত্রনায় । সবাই সঙ্গে সঙ্গে রাহিকে নার্সিংহোমে নিয়ে গেল , কিছুক্ষণ পর ডাক্তার জানিয়ে গেল মেয়ে হেয়েছে। মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে দেখা করতে যেতে পারে সবাই। সরলা আর প্রবাল ঢুকল দেখল রাহি বাচ্চাটাকে চুমু খাচ্ছে সরলাকে দেখেই তার হাতে দিল রাহি। সরলা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল হুবহু প্রসন্না কি আশ্চর্য মিল যেন ফটোকপি। রাহি বলল কথা রেখেছে , এসেছে সে। সরলা মাথা নাড়ছে। প্রবাল কিছু বুঝলনা বলে সে বলল আনন্দে কি দুজনেই পাগল হয়ে গেলে ? কি ভুলভাল বোকছো ! রাহি আর সরলা চুপ , আজ দুজনের চোখে জল অথচ মুখে আনন্দের হাসি।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত