চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে একটা মাদ্রাসা(নাম প্রকাশ করা যাবে না) ছিল এক সময়।ওই মাদ্রাসাটা অনেক জনপ্রিয় ছিল কারণ সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের খুব যত্ন সহকারে পড়ানো হত। ঘটনাটি ঘটে ২০০৪-০৫ সালের দিকে। সেটা ওখানকার হিফজখানা নিয়ে।
হিফজখানা হলো যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা কুরআন মুখস্ত করার চর্চা করে..তাই তাদের আলাদা একটা টাইম সিডিউল আছে..যা মেনে চলতে বাধ্য হয় তারা। রাত ৩ টার দিকে উঠে কোরআন পড়তে বসবে একেবারে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত।তারপর নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ঘুম থেকে উঠবে সকাল ৮ টায়।এরপর যোহরের আগ পর্যন্ত মানে ১২ টা পর্যন্ত পড়বে।তারপর যোহরের নামাজ পড়ে খেয়েদেয়ে ১ ঘন্টা কোরআন পড়ে তারপর ঘুমাবে একেবারে আসর পর্যন্ত।এরপর বিকেলে খেলাধুলা করে মাগরিব পড়ে পড়তে বসা এবং এশার পর খেয়েদেয়ে ১০ টা পর্যন্ত পড়ে তারপর ঘুমুতে যাওয়া। এই ছিল তাদের দৈনন্দিন চক্র..ওখানে অবশ্য অতিরিক্ত কিছু ছাত্র হাফেজ ছিল যারা ছিল এতিম।
তো আমার ভাই পড়ার সুবাধে আমার মাঝে মাঝে ওই মাদ্রাসায় যাওয়া হত।ওখানকার পরিবেশ আমার খুব ভাল লাগতো কারণ আমি স্কুলে পড়তাম আর এটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা একটা জগৎ। আমি ছোট থেকেই এমন যে জ্বীনদের প্রসঙ্গে গল্প করতে আমার খুব ভালো লাগতো।মাদ্রাসা বন্ধে আমার ছোট ভাই বাসায় এলে তার কাছ থেকে এসব গল্প আমি শুনতে চাইতাম..শুনে বেশ ভয়ও পেতাম আবার।
ঠিক তেমনই একটা গল্প নিম্নোক্তঃ একদিন হেফজ খানায় রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর এক ছাত্র দেখতে পেল যে, হিফজখানার একজন ছাত্র ফিসফিস করে কোরআন পড়ছে।ওই ছেলেটা যেখানে বসে কোরআন পড়ছিল তার মাথার উপরে একটা লাইট জ্বেলেই সে পড়ছিল, এতে করে ওই যে ছেলেটা ঘুমের ট্রাই করছিল তাতে তার খানিক সমস্যা হচ্ছিল। যে ছেলেটা কোরআন পড়ছিল সে ছিল আসাদ আর আসাদ ছিল এতিম ছেলে।ওই ছেলেটা আসাদকে লাইট নিভিয়ে দিতে বললো।আসাদ বলেছিল যে কিছুক্ষণ পর সে পড়া শেষ করেই লাইট নিভিয়ে দেবে। তো এভাবে কিছুক্ষণ যাবার পর, যে ছেলেটার ঘুম আসছিল না সে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছিল।কাঁথার ভিতর দিয়ে অল্প করে ফাঁক করে আসাদের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।
আসাদ কুরআন পড়া শেষ করে বাতিটা না নিভিয়েই শুয়ে পড়লো।তার শোয়ার স্থান থেকে বাতির সুইচের নূন্যতম দূরত্ব ৩০ ফিটের কম হবে না।অর্থাৎ আসাদকে উঠে গিয়েই বাতিটা নিভিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আসাদকে বাতি নিভানোর জন্য বলে উঠার আগেই ছেলেটা দেখতে পেল, আসাদ বিছানায় শুয়ে শুয়েই বাতির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।আর হাতটি সরু এবং লম্বা হয়ে গিয়ে সে বাতির সুইচ স্পর্শ করলো এবং বাতিটা নিভিয়ে দিল। ওই ছেলেটা তখন ভয়েই আধমরা হয়ে গেল।কী করবে বা কাকে বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।তবে এটা বুঝে নিল আসাদ নামের ছেলেটা একটা মানুষরূপী জ্বীন। সে আসাদের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি বরং কারো সাথেই সে এটা শেয়ার করে নি।তবে এরপর থেকে ছেলেটা সব সময় আসাদকে চোখে চোখে রাখতো। আরেকদিনের ঘটনা,
আসাদ আরেকদিন গভীর রাত পর্যন্ত পড়ছিল..তখন রাত প্রায় ২ টার কাছাকাছি ছিল।ওই ছেলেটার হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সাথে সাথে কেন যেন আসাদের বিছানার দিকে চোখ যায়। সেখানে দেখতে পায় আসাদের বিছানায় একটা সাপ আর সেটা কোরআন শরীফ একমনে পড়ে যাচ্ছিল যেন। এই ঘটনাটা সেই ছেলেটা নিতে পারে নি। চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে যায় সে ছেলেটা।
তার হুঁশ ফেরার পর সবার মাঝে আসাদকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু আসাদ ছিল না সেখানে।ছেলেটা তার সাথীদের এবং বড় হুজুরকে এই ঘটনা দুটির বর্ণনা দেয়। জবাবে হুজুর বলেছিল, আমি জানতাম আসাদ একজন জ্বীন ছিল।ভালো জ্বীন।কখনো তোমাদের ক্ষতি সে করতো না আমায় এমন কথা দিয়েছিল।তাই তোমাদের মাঝে যেন ভয়ের উদ্রেক না হয় এই কথাটা আমি চেপে গিয়েছিলাম।
হুজুরের কথাটি সবাই একমনে বিশ্বাস করেছিল। কারণ সেদিনের পর থেকে আসাদকে আর কখনোই সেই মাদ্রাসায় দেখা যায় নি। তবে ছাত্ররা এই ভেবে অবাক হয় যে, আসাদকে তারা মানুষ বলেই মনে করতো। এবং আসাদের আচার-আচরণ তাদের কারো মাঝে কখনোই বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়নি।