হঠাৎ করে আজ কেন যেন ভয় লাগছে! কোন কারণ ছাড়াই ভয় লাগছে। উঠানে বসে ফোন চাপছিলাম। তখন মাথার উপরে গাছের দিকে চোখ যেতেই একটা আলো দেখতে পেলাম। পরক্ষণেই আলো নিভে গেছে। বারবার আলো জ্বলছে আর নিভছে।
একবার মনে হল, কেউ হয়তো ভয় দেখানোর জন্য এমন করছে। কিন্তু এই মধ্যরাতে গ্রামের কারোরই জেগে থাকার কথা না। সন্ধ্যা হলেই সবাই খেয়ে দেয়ে বিছানায় গিয়ে মরার মতো ঘুমায়। বেশিরভাগ পরিবার দশটার মধ্যে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাবে। কিছু লোক বেশি সজাগ থাকবে, কিন্তু রাত বারোটার পর সম্ভব না। তাহলে এতো রাতে কে লাইট ধরেছে! এসব ভাবতে ভাবতেই শরীরের লোম সব দাঁড়িয়ে গেলো। শরীর একটা কাপুনি দিয়ে উঠলো। ভয়ে আর বাইরে থাকতে পারলাম না রুমে চলে গেলাম।
এমনিতে অন্য দিন গুলোতে একটুও ভয় পাই না। রাত একটা-দুইটা পর্যন্ত বাইরে বসে ফেসবুক চালাই। আজকে আরো পুরো বাড়ি খালি, বাড়ির সবাই আত্নীয় বাড়ি গেছে। এখন আফসোস হচ্ছে তখন নিয়ে যেতে চাইলো কেন যে গেলাম না! আজকের রাত ভয়ে ভয়ে কাটাতে হবে। মানুষের মনে একবার কোন কিছুর ভয় ঢুকে গেলে সেই ভয় থেকে বের হওয়া মুশকিল।
রুমে আসার সাথে সাথে লাইট কয়েকবার জ্বললো আর নিভে গেলো। তারপর হুট করে এনার্জি লাইটটা বোম ব্রাস্ট হওয়ার মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। “আল্লাহ গো!” বলে চিৎকার করে উঠলাম।
আশেপাশে একশো মিটারের মধ্যে কোন বাড়ি নেই। কেউ শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসবে তারও কোন উপায় নেই। ভয়ে আমার হাটু কাপছে। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পাঠ করছি, এথেকেই একটু সাহস পাচ্ছি। ফোনের লাইট জ্বালিয়ে লাইট ব্রাস্ট হওয়ার কারণ খোঁজে বের করার চেষ্টা করালম। দেখি বিদ্যুৎ চলে গেছে। গরম কাঁচের উপর ঠান্ডা পানির ফোটা পড়লে এমন ভাবে ব্রাস্ট হয়। কুয়াশার পানির ফোটার জন্যে, নাকি বিদুৎ চলে যাওয়ার জন্যে লাইট এমন ভাবে ব্রাস্ট হয়েছে কিছুই বুঝতে পারলাম না।
তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে কাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কাথার নিচে গিয়েও ভয় যেন কমছে না। পুরো বাড়ি অন্ধকার একমাত্র আমার ফোনের আলোই সম্বল,ফোনের চার্জও ফুরিয়ে এলো। এতোদিন পরে শহর থেকে গ্রামে আসছি এখন যদি এতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটে তাহলে তো আর গ্রামে আসাই হবে না। প্রায় সাতদিন হলো আসছি এতোদিন কিছুই হলো না আজকে হঠাৎ করে এমন হচ্ছে কেন!! একটু আগেও ভূত এফএম শুনলাম তখনও এতো ভয় লাগেনি। এখন ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। এই বুঝি খাটের নিচ থেকে হাত বাড়িয়ে আমার পা টেনে ধরে!এই বুঝি কেউ আমার উপর লাফিরে পরে!
খেয়াল করলাম টিনের চালে কেউ যেনো হাটছে। হাটার শব্দ আস্তে-ধীরে বেড়েই চলেছে। আমি কাথার নিচে গুটি মেরে শুয়ে আছি। একদিকে ফোনের চার্জ দ্রুত কমছে অন্যদিকে টিনের চালে কেউ হাটছে। “বাঁচাও” বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে ভয়ে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কোন শব্দ করতে পারছি না।
হঠাৎ কঠের দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। এক মুহুর্তের জন্য ভাবলাম ভুতে কি নক করে ঘরে ঢুকে? মন থেকে উওর এলো ভুতপ্রেত কেউই না। সম্ভবত কেউ আসছে। এতো রাত্রে কে হতে পারে?বিছানা থেকে পা নামাতেই ভয় করছে, দরজা খুলতে যেতে যাবো কিভাবে! আবার দরজা ঠকঠক করায় অনেক সাহস করে উঠলাম। বড় করে শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। নিশ্বাস বন্ধ করে একপা দু’পা করে দরজার দিকে এগোচ্ছি,দরজার কাছে যেতেই বুকের সাহস সাইকেলের চাকার হাওয়ার মতো বেরিয়ে গেলো।
দরজায় অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও দরজার খুললাম না। বাইরে কোন কোন শব্দ হচ্ছে কিনা বুঝার চেষ্টা করছি। তারপরেই আবার দরজায় ঠকঠক শব্দ। কিছু না ভেবে দরজা খুললাম। দরজার সামনে কেউ নেই, আশেপাশে দেখার সাহস হারিয়েছি। অনেক আগেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তবু আরেকটু সাহস করে দরজা থেকে মাথা বের করে ডানদিকে তাকালাম। ওপাশে কেউ নেই বা দিকে ঘুরতেই চমকে উঠলাম। একটা কঙ্কাল অদ্ভুত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ভয়ে দরজা থেকে পরে গেলাম মাটিতে। তারপর আমার চারদিকের অন্ধকার পরিপূর্ণতা পেতে থাকলো, একসময় সব অন্ধকার।
সকাল এগারোটা দিকে আব্বু এসে আমার উপরে পানি ছিটিয়ে সজাগ করলেন। তখন বুঝতে পারলাম আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম। আব্বু জিজ্ঞেস করলেন,“ ঘরের মধ্যে নরম বিছানা থাকতে তুই উঠানে ঘুমাস কেন?” আব্বুর প্রশ্নের আমার কাছে কোন উত্তর নেই। যদি বলি ভয়ে জ্ঞান হরিয়েছিলাম তাহলে সবাই হাসি-তামাসা করবে। তার থেকে ভালো কিছু না বলি। তখন হঠাৎ আমার ফোনের কথা মনে পড়লো। কিন্তু ফোন নাই। শুধু ফোন না, ঘরের টিভি,ফ্রিজ আরো যতো দামি আসবাবপত্র ছিলো কিছুই নাই।
কপালে হাত দিয়ে উঠানেই বসে রইলাম। শালার চোরে ভুতের ভয় দেখিয়ে সব নিয়ে গেছে।বাড়ির সবাই আমার কাছে হাজার প্রশ্ন ছুড়ে মারলো,আমি কিছুর উত্তর বানিয়ে দিলাম। বাকি উত্তর সবাই যার-যার নিজের মতো বুঝে নিলো।











