প্রেতাত্মা

প্রেতাত্মা

আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগের ঘটনা। তখন আমি ক্লাস নাইন এ পড়ি।

আমার নানু আমার আন্টির বিয়ের দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে নিয়ে তার আত্মীয়ের বাসায় যান।

কিন্তু আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য আমার আম্মু আমাকে নিষেধ করে।

কিন্তু আমি নানু সাথে যাওয়ার জন্য আম্মুকে খুব অনুরোধ করি। তবুও আম্মু রাজি হয় না।

আম্মু বলে,“তুমি সেখানে যেতে পারবে না।”আমি তাকে প্রশ্ন করি কেন পারব না।

সে আমাকে কোন কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।

আমি পরে আমার আন্টিকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সে আমাকে কারনটি বলে।

আন্টি বলল,“বাসাটিতে প্রেতাত্মা আছে। সেই বাসার বড় ছেলের  ৩ বউ আত্মহত্যা করেছে।

সে তার বউদের উপর অমানবিক নির্যাতন করতো।

১ম বউ মারা যাওয়ার পর সে ২য় বিয়ে করে,তারপর ৩য়। ৩য় বউ মারা যাওয়ার পর সে নিজেও দূর্ঘটনায় মারা যায়।

অনেকে বলে তার স্ত্রীদের প্রেতাত্মারা তাকে হত্যা করে।” আন্টির এসব অবাস্তব কথা আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।

আমি তাকে বলি,“এসব কুসংস্কারে তুমি বিশ্বাস কর?।”আমি ছেলেবেলা থেকে খুব নির্ভীক আর যুক্তিবাদী ছিলাম।

আমি আন্টিকে বললাম,“সাইন্স এর যুগে এসব কুসংস্কারের কোন ভিত্তি নেই।”

আমাকে সে বলল,“এমন অনেক জিনিস আছে যার কোন ব্যাখ্যা নেই সাইন্সের কাছে।”

আমি বললাম,“আমি এসবে বিশ্বাস করিনা,তুমি করলে কর। কিন্তু আমাকে এসব বলো না।”

আন্টি বলল,“তুই হয়েছিস তোর বাবার মত,আধুনিক যুগের যুক্তিবাদী রোবট।”

আমি বললাম,“হা হা হা। এতদিন পর বুঝলে?”

আমি আমার বাবাকে যেয়ে সবকিছু বললাম। আমার বাবা আমার আম্মুকে বলল, সিথিকে যেতে দাও।

তোমাদের কুসংস্কার তার মাথায় ঢুকিয়ো না।” আম্মু আমাদের যুক্তিদের সাথে না পেরে বলল,“আচ্ছা,ঠিক আছে যাও।”

আমি আর নানু যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম।”আমি যখন সেখানে পৌছলাম দেখলাম,পুরাতন আমলের বিশাল দ্বি-তলা ভবন।

প্রত্যেকটা রুম অনেক বড়, বিশাল জানালা। ভাবতে খুবই অবাক লাগল যে এত বড় বাড়িতে মাত্র ৩ জন মানুষ থাকে।

একটি ৭০ বছরের বয়স্ক মহিলা, একটি দারোয়ান ও একটি বুয়া। বয়স্ক মহিলাটি আমার নানুর বোন।

সেই সম্পর্কে তিনি আমার নানু হন।আমি নানুকে বললাম,“এত বড় বাড়িতে আপনি একাকী কিভাবে থাকেন, নানু?

আপনার খারাপ লাগে না?” নানু বলল,“আমার এখানে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে।

তাছাড়া নামায রোযা করে কখন সময় চলে যায় বোঝাই যায় না।”

আমার নানু আর তার বোন অনেক্ষণ ধরে আলাপ করছিল। আমি নানুকে বললাম,“ আমি বাসাটা ঘুরে দেখতে চাই।”

নানু বলল, “একা যেয়ো না, কাজের বুয়াকে নিয়ে যাও।”আমি বুয়াকে নিয়ে বাসাটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

বাসাটা খুব বড়। দেয়ালে পুরাতন আমলের কারুকার্য,দরজা-জানালাও বেশ কারুকার্যময়।

আমি সামনের দিকের বিশাল বাগানও ঘুরে দেখলাম।বাগানে অনেক রকমের গাছ ছিল।

এত সুন্দর বাগান আমি কখনও দেখিনি। সবচেয়ে মন কাড়ল আমার পেয়ারা গাছে বড় বড় বড় পেয়ারা দেখে।

তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম দেখে যে সব গাছের আশপাশ খুব পরিষ্কার কিন্তু পেয়ারা গাছের নিচে অনেক পেয়ারা পড়ে আছে।

পেয়ারা পারতে আমি অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু সবগুলো পেয়ারা আমার নাগালের বাইরে ছিল।

তাই আমি একটি চেয়ার খোঁজা শুরু করলাম। তাই আমি বুয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,“চেয়ার আছে?”

বুয়া বলল,“আপা, ছাদে আছে।আমি এনে দেই।” আমি বললাম,“তুমি যাও,আমি নিয়ে নিবো।

আমি সিড়ি দিয়ে ছাদে যাচ্ছিলাম তখন আমার মনে হল আমার পিছনে যেন কেউ আছে।

পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। তবুও আমার মনে হতে লাগল কেউ যেন আমার পিছনে আছে।

তখন আমি ভাবলাম হয়ত আমার মনের ভুল…….

এই ভেবে আমি যখন উপরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম একটি গর্ত যা দিয়ে সিড়ির নিচে দেখা যাচ্ছিল।

সেদিকেই তাকাতেই দেখলাম জ্বলন্ত দুটি সবুজ চোখ আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

যা দেখে আমি পিছনে সরে গেলাম। তারপর ভাবলাম আমি ভুল দেখেছি।

এই ভেবে আমি আবার গর্তের দিকে তাকালাম, তাকিয়ে দেখলাম সেখানে কিছুই নেই।

তখন আমি মনে মনে বললাম, হয়ত আন্টির মুখে ঘটনা শুনার পর আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।

তাই আমি নিজেকে অভয় দিয়ে ছাদে থেকে চেয়ার নিয়ে আসলাম। তারপর চেয়ারটি পেয়ারা গাছের নিচে নিয়ে আসলাম।

তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আমি তাই দ্রুত চেয়ারে দাড়িয়ে পেয়ারা পারার চেষ্টা করলাম।

তবুও পেয়ারা আমার নাগালের একটু বাহিরে ছিল। অবশেষে প্রচুর চেষ্টা করার পর আমার হাতে একটি পেয়ারা আসল।

আমি যখনই পেয়ারা পারতে লাগলাম তখন আমি গাছের ডাল থেকে আমার হাত সরাতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।

মনে হল কেউ যেন আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।

আমি আমার হাত ছাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করছিলাম……..

তখন আমি দেখলাম পেয়ারা গাছের ডালে সাদা সারি পড়া একটি মহিলা গলায় ওড়না পেচিঁয়ে ঝুলে আছে।

এবং সে তার হাত দিয়ে আমার হাতটিকে শক্ত করে ধরে রেখেছে আর আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আমি যখন নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলাম না…….

তখন মনে মনে ভাবলাম পেয়ারার লোভ আর আম্মুর নিষেধ না মানার জন্য আজকে আমাকে হয়ত খুব বড় মূল্য দিতে হবে।

প্রচন্ড হাত ব্যথায় যখন আমি নিস্তেজ হয়ে পড়েছি তখন চারদিক থেকে মাগরিবের আযান দেয়া শুরু হল।

ঠিক তখন সেই প্রেতাত্মাটি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে তখন……..

আমি দেখতে পাই আমার পাশে আমার আম্মু,আব্বু,আন্টি সবাই আছে আর আমার আম্মু কান্না করছে।

তখন আমি আমার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলি আজকের পর থেকে আমি কখনই তাকে অমান্য করব না।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত