গ্রামের এক বিশাল মাঠ

গ্রামের এক বিশাল মাঠ

আমাদের বাসাটা গ্রামের এক বিশাল মাঠের পাশেই।

আমাদের সাথে থাকতো আমার এক কাকা আর তার পরিবার। মাঠটা অনেক বড় বিধায় আসে পাশে তেমন কোনও বাড়িঘর ছিল না।

মাঠের ঠিক মাঝখানটায় একটা বড় বট গাছ ছিল। মাঝেমাঝে বাইরে থেকে এসে কিছু ব্যাবসায়ী সেখানে অস্থায়ী দোকান গড়ত।

তখন আমাদের জন্য খুব খারাপ হতো। কারণআমরা তখন সেই গাছের নিচে খেলতে পারতাম না।

ওহ, বলা হয় নি। গাছটা ছিল আমাদের খেলাধুলার এক প্রধান জায়গা। স্কুল থেকে দৌড়ে এসেই সেই গাছের নিচে চলে যেতাম।

বয়স তখন ১৪-১৫ হবে। মাঠের নিচ থেকে টিম বানানো হতো, এরপর মাঠে নেমে ক্রিকেট।

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস লাগলে বসে জিরিয়ে নিতাম।

সেবার এক বৃদ্ধ বয়স্ক লোক শহর থেকে আশ্চর্য রঙের এক পানীয় নিয়ে আমাদের গ্রামে ব্যাবসা করতে আসলো।

তার ব্যাবসার মন্ত্র ছিল এমন, “এই পানি পান করিলে শরীরে বল অটুট থাকিবে। সাথে আসিবে নতুন উদ্যম।”

সেই পানিতে কি ছিল তা আমি জানি না। তবে অল্প কয়েকদিনেই তার নামডাক ছড়িয়ে পড়লো।

দূরের গ্রাম থেকে মানুষ এসে জড় হতে লাগলো পানির জন্য। এদিকে আমরা পড়লাম বিপাকে।

মাঠের মধ্যে যেন একটা মেলা বসে গিয়েছিলো। আমাদের খেলাধুলা চাঙ্গে উঠলো।

আমাদের গ্রুপের দলনেতা ছিলেন শিহাব ভাই। তিনি আমাদের ডেকে বললেন, এভাবে চলতে দেয়া যায় না।

কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।

আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনও এক রাতে গিয়ে উনারসব কিছু চুরি করে নিয়ে আসবো।

বিশ্বাস করুন, সেই কাজ আমাদের টাকার লোভে ছিল না। ছিল নিজেদের স্বাধীনতা,আর খেলার মাঠটা ফিরে পাবার জন্য।

রাতে অনেকেই থাকতে পারবে না। তাই শুধুমাত্র যারা থাকতে পারবে তাদেরকেই ডাকা হল।

সিদ্ধান্ত হল, সবাই ঘুমিয়ে যাবারপর আমরা যাবো এবং ………

যেহেতু লোকটি রাত্রিতে তার দোকানেই থাকে তাই দরকার হয় তাকে ভয় দেখিয়ে হলেও আজকেই কাজ সাধন করবো।

রাত ১০ টার কিছু সময় পড়ে আমরা বের হলাম।

সবার বাড়ি মাঠ থেকে একটু দূরে হওয়ায় তারা আমার বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিলো।

চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা। যারা গ্রামে কখনো থাকেন নি তাদের বলে রাখি, বেশিরভাগ গ্রামই রাত ৮টার পরে নিরব হয়ে যায়।

সেখানে আমাদের গ্রামকে তো অজ-পাড়াগাঁ বলা যায়।

যাই হোক, আমরা সংখ্যায় ৫ জন ছিলাম। যথারীতি শিহাব ভাই আমাদের লিড দিচ্ছিলেন।

আমরা অনেকদুর থেকেই দেখতে পেলাম, মাঠের মধ্যখানের সেই দোকানদারের ঘর থেকে মোমবাতির আলোর মতো কিছু জ্বলছে।

ভাবলাম, একামানুষ, ভয় পায় তাই হয়তো মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘুমায়।

লোকটি একটি তাবুর মধ্যে দোকান দিয়েছিলো। সেই তাবুতেই রাতের বেলা থাকতো।

আমরা তাবুর কাছে পৌঁছাতেই একটা অদ্ভুত গুনগুন আওয়াজ পেলাম। আওয়াজটা অনেকটা সুর করে কোনও কিছু পড়ার মতো।

আমাদের চমকে দিয়ে একটা বিড়াল হটাত করে ডেকে উঠলো। আমি আরেকটু হলে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলছিলাম।

সময় মতো আমার বন্ধু নাফিস আমার মুখচেপে ধরায় রক্ষা পাই।

আমাদের আরও ভয় পাইয়ে দিয়ে একটা কালো কুচকুচে বেরাল আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে এলো।

মিথ্যে বলবো না, কিন্তু আমার জীবনে আমি কোনও বিড়ালের চোখ এমন সাদা হতে দেখিনি।

ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। মণির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ঠিকতখনই একটু বাতাসে সেই তাবুর দরজা হিসেবে ব্যাবহার করা কাপড়টা একটু নড়ে গেলো।

সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টিঘুরে গেলো সেই দিকে।

ভিতরে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।

দেখলাম ঘরের মাঝেএকটা চক্র কেটে একজন মাঝবয়সী লোক বসে আছে।

লোকটার চোখ বন্ধ এবং একমনে বিড়বিড় করে কি যেনও পড়ছে।

তারসামনে একটা কাঁচের বাতি, সেই বাটিতে রক্তের মতো কোনও তরল পদার্থ।

ঠিক সামনেই মেঝেতে একটা শিয়াল, একটা কালো বিড়াল, এবং একটা ছোট বাচ্চার লাশ।

লোকটা মনে হয় আমাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে নি, তাই তখনোএক মনে বিড়বিড় করছিলো।

শিহাব ভাই, আমাদের সকলকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করে থাকতে বললেন।

বলতে ভুলে গেছি, আমাদের গ্রামে আশা সেই লোকের সাথে এই লোকের চেহারার অসম্ভব মিল ছিল।

যেনও যুবক বয়সের ঐ লোকটাই এখন আমাদের সামনে বসে আছে।

আমরা দম বন্ধ করে দেখছিলাম কি ঘটে। এমন সময় লোকটা আমাদের অবাক করে দিয়ে নড়ে উঠলো।

চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই একটা হাত বাড়িয়ে বিড়ালের লাশটা নিলো।

নিয়ে মুখের সামনে এনে কি যেনও আবারো বিড়বিড় করলো।

তারপর দাঁত দিয়ে বড় করে কামড় বসাল।

লোকটি যখন হা করলো, তখন মোমবাতির আলোয় দেখতে পেলাম সেই দাঁতে তাজা রক্ত লেগে আছে।

(বলা হয়নি, পুরো ঘরে লোকটাকে ঘিরে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালানো ছিল)

গলার মধ্য দিয়ে বমি ঠেলে বের হতে চাচ্ছিল। শিহাব ভাইয়ের দিকে তাকালাম।

উনাকে দেখেও সুবিধার মনে হল না।

কিছু বলতে যাবো তার আগেই লোকটি বিড়ালের বিচ্ছিন দেহটা পাশে নামিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে শিশুর লাশটা নিলো।
এরপর আমাদের ভয়ের মাত্রা তুঙ্গে উঠিয়ে কামড় বশিয়ে দিলো সেই শিশুটার পায়ে।

আর সহ্য করতে পারলাম না। আমার পাশেই ছিল হাবিবুর। ও এই দৃশ্য দেখেই চিৎকার করে পিছনে দৌড় মারল।

সাথে সাথে লোকটা চোখ মেলল। সেই চোখের বর্ণনা দেয়ার মতো কোনও ভাষা আমার জানা নেই।

অনেকেই হয়তো রক্তচক্ষুর কথাশুনেছেন, কিন্তু আমি সেদিনই প্রথম চাক্ষুষ দেখলাম ব্যাপারটা।

লোকটার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য জমে গেলাম জায়গায়।

এমন সময় শিহাব ভাই আমাকে হাতে ধরে, প্রায় টেনে নিয়ে দৌড় দিলেন।

পেছন থেকে লোকটার তারা করার আওয়াজ শুনতে পেলাম।

কিন্তু বাসা বেশি দূরে না থাকায় নিরাপদেই বাসায় আসলাম।

অবশেষেঃ সেদিন সকালে হটাত সবাই দেখে মাঠের মধ্য থেকে দোকানটি হাওয়া হয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, যারা সেই লোকের দেয়াপানীয় খেয়েছিল তাদের প্রত্যেকে অসুস্থ হয়ে পরে।
রক্তবমি করে মারা যায় কয়েকজন।
আমরা যারা সেদিন গিয়েছিলাম রাতে, তাদের মাঝে ২ জন ভয়ঙ্কর অসুখে পরে মারা যায়।

আর আমি? আমি একটা স্বপ্ন তখন থেকেই দেখি, যে লোকটা আমাকে তারা করছে।

একপর্যায়ে লোকটা আমাকে ধরে ফেলে এবং আমার হাতে কামড় দিয়ে শিরা ছিঁড়ে ফেলে।

ঐ সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই স্বপ্নটি আমি নিয়মিত দেখি।..!!!!

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত