বাইরে বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গেছে, কারেন্ট চলে গেল আর এমন সময়ই হঠাৎ দরজায় কেউ নক করল একরাশ বিরক্তি নিয়ে সত্যব্রত টর্চ জ্বালিয়ে দরজা খুলতে গেলো। অফিস থেকে ফিরে সবে আগামী গল্পের প্লট নিয়ে বসেছে, হতচ্ছাড়া কারেন্টটা চলে গেলো। আবার এই ঝড় বৃষ্টির রাতে কে এলো জ্বালাতে কে জানে? নতুন উঠে এসেছে এই পাড়ায়। জায়গাটা শহরের বাইরে হলেও অফিসের কাছে বলেই এই সিদ্ধান্ত। দরজা খুলে দেখে সিক্তবসনা এক তরুণী দরজায় দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে। বাইরে অঝোর ধারে বৃষ্টি পড়ছে।
সত্যব্রত: কি ব্যাপার? কোনো দরকার আছে?
তরুণী: আমি আসলে এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই জোরে বৃষ্টি নামলো, ছাতা নিয়ে বেরোইনি, পুরো ভিজে গেছি। যদি একটু বসতে পারি খুব ভালো হয়। বৃষ্টিটা কমলেই বেরিয়ে যাবো।
সত্যব্রত না বলতে গিয়েও ভাবলো, এই অবস্থায় একটা মেয়েকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ হবে না। তাও একটা অদ্ভুত খটকা লাগছিলো; পাড়ায় আরও বাড়ি ছিলো, সব ছেড়ে ওর কাছেই কেনো সাহায্য চাইলো? যাকগে যা, বিপদের সময় সাহায্য করাটাই উচিৎ।
সত্যব্রত: আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বসুন। আমি তোয়ালে দিচ্ছি, মাথাটা অন্তত মুছে নিন। বুঝতেই পারছেন, একা থাকি।
তরুণী: অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি সত্যিই সহৃদয় ব্যক্তি।
মেয়েটি মাথা মুছতে মুছতে শান্তনু কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আনলো। বৃষ্টিতে ভিজে মেয়েটার মুখ পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মোমবাতির আলোয় একটু ভয়ানক ই লাগছিলো, কিন্তু শান্তনু অত আমল দিলো না। টেবিলের ওপর মোমবাতি গুলো নামিয়ে রেখে সে চেয়ারে বসে।
ত: আপনার কি ডায়েরী লেখার অভ্যাস আছে নাকি?
স: না না। ওইসব অভ্যাস নেই। আসলে একটু লেখালেখি করি আরকি, কিন্তু ভৌতিক উপন্যাস। সময় কেটে যায় আর মনও হালকা থাকে।
ত: বেশ ভালো তো। আমিও ভুতের গল্প দারুন ভালোবাসি। তা আজকে এই বৃষ্টির দিনেই তো ভুতের গল্প ভালো জমে। আমি একটা গল্প বলি তারপর আপনার থেকেও একটা গল্প শুনবো।
স: আইডিয়া মন্দ নয়। হয়ে যাক।
ত: আচ্ছা আমিই শুরু করছি। বেশ কিছুদিন আগেকার কথা। এই বাড়িতে একজন ভদ্রলোক থাকতেন। এরকমই এক বৃষ্টির রাতে এক মহিলা আশ্রয় নিতে এসেছিলেন এই বাড়িতে। বাড়ির মালিক ভীষণ মদ্যপ ছিলো। মেয়েটিকে আশ্রয় দেওয়ার নাম করে তাকে রেপ করেছিল। তারপর তাকে খুন করে এই বাড়িতেই নাকি লুকিয়ে রাখে। আজ পর্যন্ত লাশের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। তবে শুনেছি আজও বৃষ্টির রাতে মেয়েটি আসে নিজের আততায়ী কে খুঁজতে।
স: বেশ ভয়ানক তো। শুনেই কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আবার এই বাড়িতেই হয়েছে। রাতে শুতে পারলে হয়।
ত: বাহ্ ! আপনি ভূতে ভয় পান নাকি?
স: ভয় কেনো পাবো ! তাহলে তো আমি এতক্ষণে আপনাকেই ভুত ভেবে বসে থাকতাম। যা গল্প দিলেন। হা হা হা হা তরুণী একটু মৃয়মান হয়ে বলে, ” আমি তো এমনই গল্প বলছিলাম “।
স: সে ঠিক আছে। আপনার গল্প তো শুনলাম। এবার আমারটা বলি। দেখুন মজা পাবেন এটায়। এই আবহাওয়ায় বৃষ্টির দিনের গল্পই বলবো। এই বলে শান্তনু তার গল্প শুরু করলো।
স: আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। ঘোর বর্ষা। সন্ধ্যাবেলায় প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। শান্তনু অফিস থেকে ফিরে গল্পের খাতা নিয়ে বসেছে। পরের গল্পের প্লট নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। এমন সময় কারেন্ট টা দুম করে চলে গেলো। আর একইসাথে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ। আবার এই ঝড় বৃষ্টির রাতে কে এলো জ্বালাতে কে জানে? নতুন উঠে এসেছে এই পাড়ায়। জায়গাটা শহরের বাইরে হলেও অফিসের কাছে বলেই এই সিদ্ধান্ত। দরজা খুলে দেখে সিক্তবসনা এক তরুণী দরজায় দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে। বাইরে অঝোর ধারে বৃষ্টি পড়ছে। শান্তনু জিজ্ঞেস করে, ” কি ব্যাপার? কোনো দরকার আছে? “।
মেয়েটি বলে, ” আমি আসলে এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই জোরে বৃষ্টি নামলো, ছাতা নিয়ে বেরোইনি, পুরো ভিজে গেছি। যদি একটু বসতে পারি খুব ভালো হয়। বৃষ্টিটা কমলেই বেরিয়ে যাবো “। মোমবাতির আলোতেও অসাধারণ সুন্দরী লাগছিলো। কথায় কথায় মেয়েটি আর শান্তনুর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বৃষ্টির রাত, লাস্যময়ী নারী শান্তনুর সংযমের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিলো। এমন সময় দরজায় আবার করাঘাত। মেয়েটিকে ভিতরে যেতে বলে দরজা খুলতেই একদল গুন্ডা মতো লোক জোর করে ঘরে ঢুকে আসে। ওদের মধ্যে নেতা গোছের লোকটা বলে ” এটা ভদ্রলোকের পাড়া। মেয়ে নিয়ে এখানে নোংরামি করা যাবেনা “। শান্তনু পুরো আকাশ থেকে পরে। এমন সময় মেয়েটি ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে।
কিন্তু একি হাল করেছে নিজের সে; উস্কো খুস্কো চুল, আলগা করে জড়ানো শাড়িটা কোনরকমে লজ্জা রক্ষা করছে, আঁচলের কাছটা ছিঁড়ে গেছে। মেয়েটি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, ” বাঁচান আমাকে। এই শয়তানটা জোর করে আমাকে ভোগ করার চেষ্টা করছিলো “। শান্তনু বিদ্যুৎপৃষ্টের মতো ছিটকে এসে মেয়েটিকে ঝাঁকাতে থাকে, ” কি বলছো এসব তুমি? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম? “। মেয়েটি ফুঁপিয়ে চলেছে। নেতা লোকটা শান্তনু কে একধারে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আস্তে করে বললো, ” শুনুন মশাই, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এরকম সুন্দরী দেখলে সকলেরই একটু চরিত্রস্খলন হয়। যেটা এখন জরুরী সেটা হলো ঘটনাটাকে চাপা দিতে হবে। মেয়েটার মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। আপনাকে খালি কিছু মালকড়ি খসাতে হবে, বাকি আমি দেখে নেবো “।
এবার পুরো ব্যাপারটাই শান্তনুর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। পুরো ঘটনাটা ই সাজানো, তাকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করার জন্য। সে চিৎকার করে ওঠে , ” সব তোমাদের চক্রান্ত। এক পয়সাও দেবোনা তোমাদেরকে। যাও বেরিয়ে যাও এই মুহূর্তে “। গুন্ডাগুলো মেয়েটিকে নিয়ে বেরিয়ে যায় কিন্তু যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায় যে কালকেই এলাকার সবাইকে জানাবে ওরা আর এখন যাচ্ছে থানায় রেপ কেসের এফ. আই. আর করতে। খুবই ভয় পেয়ে গেছিলো শান্তনু। লজ্জায়, অপমানে কুঁকড়ে উঠেছিলো মন। সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা সময় লাগেনি। পরের দিন সকালে শান্তনুর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় ওই পাশের ঘর থেকে।
ত: বাহ্। গল্পটা বেশ ভালো, কিন্তু গল্পে ভুত কই?
স: ও আপনি বুঝি খেয়াল করেন নি? তা ভুত ছাড়াই গল্পটা হোক না। যাইহোক বাইরে বৃষ্টি ধরে এসেছে। আপনি চাইলে রওনা দিতে পারেন।
ত: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আর সন্ধ্যাটা দুর্দান্ত কাটলো। আসি তাহলে?
স: আরে আলাপটাই হলো না তো !
ত: এই দেখুন। কি লজ্জার কথা। নমস্কার, আমি শ্রাবণী।
স: নমস্কার! আমার নাম শ্রী সত্যব্রত রায় চৌধুরী। মা ডাকতেন শান্তনু বলে। আসলে অপঘাতে মরেছিলাম তো, মুক্তি পাইনি। এই বাড়িতেই ঘুরে বেড়াই। আমি আসি এবার।
ধীরে ধীরে সত্যব্রত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। শ্রাবণীর এরপরে আর কিছু মনে নেই। পরের দিন ওর জ্ঞান ফেরার পর ও দেখে একটা পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে ও শুয়ে রয়েছে। একটা সামান্য মজা যে এরকম ভয়ঙ্কর আকার নেবে ও ভাবতেও পারেনি। ওর বয়ফ্রেন্ড শ্বাশ্বতর এক পুরনো বন্ধু কিছুদিন আগে এই পাড়ায় ভাড়া আসে। ওরা মিলে প্ল্যান করে বন্ধুটিকে ভয় দেখানোর। কিন্তু রাতে ওই ঝড় বৃষ্টিতে ও ভুল করে এই বাড়িটায় চলে আসে। তাতেই সব বিপত্তি। যাইহোক ভূতটা নেহাৎ ভালোমানুষ তাই, নইলে ভূতকে ভুতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাতো।