ভূতের চেয়েও ভয়ঙ্কর

ভূতের চেয়েও ভয়ঙ্কর

পেঁচ পাঁচুর ঠেকের সামনে দিয়ে যেতে দেখেই পাঁচু দৌড়ে এলো, কি ব্যাপার দাদা আমি কি কোন অপরাধ করেছি? এসব কি বলছিস ভাই? তাহলে আজকাল আর ঠেকে আসেন না কেন? ও এই কথা!ইয়ে মানে তোমার বৌদি হুমকি দিয়েছেন এখন থেকে মুখে গন্ধ পেলেই থানায় গিয়ে 498 ধারায় কেস করবে।

বলেন কি এতো ভারী অন্যায় কথা!আপনি আমার বারোমাসের কাস্টমার!আপনারা না আসলে আমাদের চলবে কিভাবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম সেই!এসব আগে জানলে কি ওই দিল্লিকা লাড্ডু খেতাম!কথায় বলে যো খায়া ও পস্তায়া যো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া সেই যে কোন বাবরের আমলে দোকান খুলেছিলাম প্রথম দিনের প্রথম কাস্টমার ছিলেন আপনি! পেঁচার মত বিরস বদনে উত্তর দিলাম সেতো বুঝলাম কিন্তু কি করব বল এতদিন তোর বৌদির মুখ ঝামটা সয়েও এসেছি কিন্তু এখন তো সোজা পুলিশে যাওয়ার ধমকি দিচ্ছে। এই বুড়ো বয়সে হাজতবাসের আতঙ্কে বাকি জীবনটা ও রসে বঞ্চিত হয়েই কাটাতে হবে। বলছিলাম কি পুজোর কটা দিনও কি নিরামিষ মুখে কাটাবেন দাদা?

ছলছল চোখে বললাম ওসব বলে আমায় আর দুঃখ দিসনা পাঁচু তোর বৌদি বলেছে মুখে গন্ধ পেলেই ঠিক আছে দাদা আপনি যান দেখি আপনার জন্য কি করতে পারি। দিনদুয়েক পর অফিস থেকে ফিরে বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখি পাঁচু আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই গদগদ মুখে বলল দাদা আপনার সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। কি সমস্যা? চলুন! চলুন আমার সাথে বলে আমার হাত ধরে হিরহির করে টানতে টানতে ঠেকে নিয়ে গেল। বললাম আরে আমাকে এখানে আনলি কেন?জানিসই তো চোখের সামনে ওসব দেখলে প্রানটা আমার হাকুপাকু করে! পাঁচু বলল তা প্রাণ যখন চাইছে দু পাত্তর মেরে দিন no চিন্তা do ফুর্তি!

কিন্তু তোর বৌদি গন্ধ পেলেই কথাটা শেষ করার আগেই পাঁচু এক পাত্তর পঁচাই পক করে গলধকরণ করে আমার মুখের সামনে হা করে বলল একবার শুঁকে দেখুন বিচ্ছিরি গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল!বললাম সর সর বিচ্ছিরি রকমের দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে! এবার পাঁচু পকেট থেকে একটা শিশি বের করে দু ফোঁটা তরল মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলে বলল এবার শুঁকে দেখুন তো? আশ্চর্য!পঁচাইয়ের গন্ধ যেন ভোজবাজির মত উবে গেছে! বললাম আরিবাস এটা কোথায় পেলি? হেঁ হেঁ করে শকুনের মত খানিক হেসে বলল দাদা এটা আপনার জন্য এই অধমের নবতম আবিস্কার! কচি পেয়ারার পাতা,মসুরির ডাল আর পুদিনহারার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আবিস্কার করেছি, নিন দু পাত্তর চড়িয়ে দু ফোঁটা মুখে নিয়ে কুলকুচি করে বাড়ি চলে যান। কিন্তু তোর বৌদি যদি ধরে ফেলে?

পাঁচু বল্লে বৌদি তো কোন ছাড় আচ্ছা আচ্ছা CBI অফিসাররাও টের পাবেনা। কাজে কাজেই লোভে লোভে দু পাত্তরের জায়গায় চার পাত্তর চড়িয়ে বাড়ি ফিরলাম। খানিক বাদেই গিন্নী কেমন সন্দেহজনক দৃষ্টিতে আমাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বললে কি ব্যাপার!আজ তোমাকে এতো খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেন? বুঝুন কান্ড!কিরম দারোগা টাইপের বউ জুটেছে আমার পোড়া কপালে!পতির খুশিতেও সন্দেহ প্রকাশ করছে! বললাম ও কিছু না। চোখ পাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠল সত্যি করে বল দেখি কি গিলেছ?

মনেমনে বললুম গিন্নি তুমি চলো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায় যতই সন্দেহ করোনা কেন গন্ধ কিছুতেই পাবেনা।বললাম তোমার দিব্বি কিছুই খাইনি!বিশ্বাস নাহয় গন্ধ শুঁকে দ্যাখো। তিনি গন্ধ শুঁকে হতাশ হলেন কাজে কাজেই উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে আমি বেকসুর খালাস! ইদানীং আমাকে খুশিখুশি দেখে দিনকে দিন গিন্নির মুখ যেন অমাবশ্যার চাঁদের মত অন্ধকার হয়ে থাকে!গিন্নির সন্দেহ ক্রমাগত বাড়তেই থাকল কিন্তু no গন্ধ কাজেই no case! ৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹souvik das আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি গিন্নি গোছগাছ করছে বললাম কোথাও যাচ্ছ নাকি?

বলল বড় মাসীর শরীরটা খারাপ খবর পাঠিয়েছে যাই একবার দেখে আসি। উফ্ফ সকাল সকাল সুসংবাদ!আনন্দে ডিগবাজি খেতে ইচ্ছে করলেও মনের ভাব লুকিয়ে মুখে দুঃখের কপট ভাব ফুটিয়ে বললাম সাত সকালে মন খারাপ করে দিলে গিন্নি! তুমি যাও সেরকম কিছু বুঝলে আমাকে খবর দিও। গিন্নি বললে আমি কাল বিকেলের মধ্যেই ফিরব। না না কাল ফিরতে হবেনা কাল ষষ্ঠী আমার অফিস আছে আমি বরং পরশু সপ্তমীর দিন সকালে গিয়ে মাসীকে একবার দেখে আসব আর তোমাকেও নিয়ে আসবো। গিন্নি বললে সেই ভালো।

গিন্নিকে রওয়ানা করিয়ে মনের আনন্দে প্রায় নাচতে নাচতে অফিস গেলাম,অফিস ফেরত পাঁচুর ঠেকে হাজির হাতেই পাঁচু দন্ত বিকশিত করে গ্লাসে পঁচাই ঢালতে যাচ্ছিল বারণ করলাম! নগদ পয়সায় দু বোতল পঁচাই বগলদাবা করে বাড়ি ফিরলাম!বহুদিন পর আজ বাড়িতেই হাতপা ছড়িয়ে জমিয়ে খাবো ফ্রিজ থেকে চিকেন বের করে সযত্নে চিকেন ফ্রাই বানিয়ে সুন্দরভাবে টেবিল সাজিয়ে বসে পড়লাম আহঃকি শান্তি!খেতে খেতে মনেহল এখন থেকে মাঝে মাঝেই বউকে কায়দা করে ভুজুং ভাজুং দিয়ে এদিক সেদিক চালান করতে হবে আর তাহলেই লুকোচুরি ছেড়ে বুক ফুলিয়ে পঁচাই খাওয়া যাবে।

আনন্দের চোটে দেড় বোতল সাঁটিয়ে রাত দেড়টা নাগাদ শুয়ে পড়লাম, অতিরিক্ত পানের ফলে ঘুম আসতে চাইছেনা,পেটটা কিরম যেন আইঢাই আইঢাই করছে!বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খেতে খেতে একটা সময় স্বপ্ন দেখতে লাগলাম প্রকান্ড একটা ফাঁকা বাড়িতে আমি একা চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার একনাগাড়ে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সাথে খেঁকশিয়ালের দল হুক্কাহুয়া রবে কচিৎ কদাচিৎ সঙ্গত করছে গা ছমছমে ভৌতিক পরিবেশে গলা শুকিয়ে কাঠ!উঠে একটু জল খাব সাহসে কুলচ্ছেনা হঠাৎ তালা খোলার শব্দের সাথে ক্যাঁচ করে বাইরের গেটটা খুলে গেল থপ থপ শব্দে পা ফেলে কে যেন আমার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে…..

ক্ক ক্ক কেঁ বলতে গিয়ে চোখ খুলে দেখি সবে ভোর হয় হয় আলো আঁধারী ভৌতিক পরিবেশে ভেদ করে এগিয়ে আসছে এক মহিলার আবয়ব!নির্ঘাৎ শাকচুন্নি হবে বাবাগো মুহূর্তে শরীর ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে উঠল ভয়ে আত্মারাম উড়ে যেতে চাইলে কোনমতে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে জোরে জোরে হনুমান চলিশা আওড়াতে গিয়ে ধ্যারিয়ে ফেল্লাম জয় হনুমানের পর কি যেন জ্ঞান গুন ইত্যাদি কি ছিল কিছুতেই মনে করতে পারলাম না ইতিমধ্যে সেই শাকচুন্নির পায়ের শব্দ আমার বিছানার কাছে এসে স্তব্ধ হল….

গায়ে ওই শাকচুন্নির হাতের শীতল স্পর্শ অনুভব করে পরিত্রানের উদ্দেশ্যে শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে পরিত্রাহি চিৎকার ছাড়লাম বাঁচাও! বাঁচাও!!শাকচুন্নি আমায় খেয়ে ফেল্লে হারামজাদা বুজরুক!তোমার বজ্জাতি হাতেনাতে ধরব বলে সাত সকালে ফিরে এলাম! লুকিয়ে লুকিয়ে ছাইপাশ গেলা!আবার আমার দিব্যি কাটা হয়েছিল মেরেচে!গলাটা যেন গিন্নির মত শোনাচ্ছে!শাকচুন্নির হাতে পড়লে হয়ত ভাগ্যক্রমে বাঁচার আশা ছিল কিন্তু গুনে গুনে হাজার বাইশটা খুন্তির বাড়ি তৎসহ অগুন্তি কিল ঘুঁষি খেয়ে সর্বাঙ্গে ব্যান্ডেজ বেঁধে এই উৎসবের মরশুমে গিন্নির কড়া নজরদারিতে গৃহবন্দী হয়ে রয়েছি।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত