প্রায় 2 বছর আগেকার ঘটনা। ২০১৭ র জুলাই । আমার এককালের অভিন্নহৃদয় প্রিয় বন্ধু রবিন তার বাড়িতে একটা গেট টুগেদারে আমাকে নেমন্তন্ন করেছিল। আমাদের ডন বস্কো স্কুলের কয়েকজন বন্ধুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সৌমিক ও কৌশিক যমজ ভাইযুগল, রাজদীপ, অরিজিৎ । এ ছাড়া আরো তিন চারজন ছিল। বৌদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি কারণ এটা বেসিক্যালি ছেলেদের গেটু ছিল। রবিনের বাড়ি লেকটাউন , VIP রোড থেকে ঠিক ৩০ সেকেন্ডের হাঁটাপথ।
আমার বাড়ি সল্টলেকে , আমার বৌ গাড়ি করে আমাকে ড্রপ করে দিয়েছিলো। রাত ৮ টা নাগাদ গেছিলাম। প্রায় সবাই ততক্ষনে পৌঁছে গেছিলো, সবার সেই এক কথা, আশিস তুই কি করে হঠাৎ এরকম ভয়ঙ্কর মোটা হয়ে গেছিস ? একটা পার্সোনাল প্রব্লেমের কারণে আমি ২০০৮ সাল থেকে ব্যায়াম করা ছেড়ে দিই এবং আড়াই বছরে প্রায় ২৫ কিলো ওজন বেড়ে যায় আমার। এখন, মানে ২০১৯ এ অবশ্য ১৫ কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেছি গত ২ বছরে, যদিও এর সাথে ঘটনার কোনো রিলেশন নেই ।
যাই হোক, বেশ গল্প গুজব, অফুরন্ত ভদকা, বিয়ার, স্কচ ইত্যাদির ফোয়ারা চললো। রবিনের একটা নিজস্ব বার আছে। আমি যদিও শুধুই ভদকা খাই । দারুন দারুন সব স্টার্টার্স ছিল, তারপরে ডিনার। চিকেন পাকোড়া, ফিশ ফ্রাই , চিল্লি মাশরুম , ল্যাম্ব চপস ইত্যাদি। একেবারে পেট ঠুসে খেলাম। দেখতে দেখতে প্রায় রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেলো। বাকিরা প্ল্যান করলো যে স্টেই ব্যাক করে যাবে সেই রাতে রবিনের বাড়িতে এবং আড্ডা মারবে সারা রাত কিন্তু এককালে যদিও রাতের পর রাত কাটিয়েছিলাম রবিনের বাড়িতে , এখন আমি নিজের বাড়ি ছাড়া কোথাও ঘুমোতে পারি না। তাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অনেকেই অফার করলো আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেবে বলে কারণ রাত্রি বেলা যেতে আসতে মাত্র ১৫ মিনিট বা ২০ মিনিট লাগবে , কিন্তু আমি রাজি হলাম না। সবাইকে জানালাম যে জাস্ট VIP ফুটব্রিজ পার করলেই সল্টলেক এবং ওখান থেকে অটো বা বাস বা রিক্সা নিয়ে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবো।
বেরিয়ে দেখি খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে, ঘন ঘন মেঘের গর্জন আর আকাশে বিদ্যুতের ঝলক। বৃষ্টি আমার ভালো লাগে কিন্তু বজ্রপাতে ভয়ানক ভয়! ভাবলাম বন্ধুদের আমার বাড়িতে ড্রপ করে দেয়ার অফারটা নিলেই বেশ ভালো ছিল। যারা খুব রাতে সল্টলেকের ৪ নম্বর ফুট ব্রিজ ক্রস করেছেন, তারা জানবেন বেশ গা ছমছমে পরিবেশ ফুটব্রিজের। নিচ দিয়ে বয়ে গেছে সল্টলেকের খাল , যার আসে পাশে আজ থেকে ২৫ বছর আগে প্রায় খুন করে ফেলে দেয়া ডেড বডি পাওয়া যেত। খালের আসে পাশে ঘন জঙ্গল ছিল। অবশ্য গত ১৫ বছরে অনেক বদলে গেছে ফুটব্রিজের চেহারা।
খাল প্রায় পরিষ্কার করা হয় এখন, জঙ্গল সরিয়ে বানানো হয়েছে সুন্দর পার্ক কয়েকটা। তবুও একটা ভয় থেকেই যায়। আর অতৃপ্ত আত্মাদের ফুটব্রিজ এবং সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াবার প্রচুর গল্প প্রচলিত ছিল।তাড়াতাড়ি ফুটব্রিজ পার করে নিচে নামলাম। দেখি ফুটব্রিজ স্ট্যান্ডে কোনো রিকশা নেই। বৃষ্টি ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। মানে রিকশাওগুলো সব আছে, কিন্তু রিকশাওয়ালারা সব স্ট্যান্ডে রিকশা লক করে নিজের নিজের বাড়ি চলে গেছে। ফুট ব্রিজ থেকে বাসস্ট্যান্ড প্রায় ২০০ মিটারের হাঁটাপথ , তার মধ্যে এই বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া, এবং থেকে থেকে বজ্রপাত! রাস্তায় একটাও লোকজন নেই। একটু আশ্বস্ত হলাম যে কমপক্ষে গুন্ডা বদমাইশ থাকবে না এই আবহাওয়াতে ।
কেন জানি না, গা একটু ছমছম করছিলো। ভূতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু একটা অজানা ভয় চেপে বসেছিল। কেউ যেন আমার পিছু করছিলো। মনের ভুল নাকি জানি না, একটা পদশব্দ পাচ্ছিলাম মাঝে মাঝে।
কেউ যেন চটি পরে হাটছে! পেছন ঘুরে দেখলাম কয়েকবার, কেউ কোথাও নেই! ভাবলাম আমার মনের ভুল। ৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু রাস্তা পুরো নির্জন, একটাও বাস , অটো বা সাইকেল রিকশা কিছু নেই। দু একজন লোক ছিল, তারাও বোধয় বাড়ি ফিরছিলো, হনহন করে হেটে এদিক ওদিক মিলিয়ে যাচ্ছিলো। যদিও ১২ টা মতন বেজেছিল, তবুও সল্টলেকে এই সময় নিদেনপক্ষে একটা দুটো বেসরকারি বাস তো থাকে। এমনিতে আমি একদম নিজের বাড়ির স্টপ icici ব্যাংকেই নামি, কিন্তু আজকে বৈশাখী, বা করুণাময়ী বা ৮ নম্বর আইল্যান্ড এর অটো বা বাস পেলেও উঠে পড়বো ঠিক করলাম। বৌকে ফোন করে ডাকতে পারতাম , কিন্তু আমি চাই নি দুই বাচ্চাকে ছেড়ে আসুক আমায় নিতে। ছেলে ১৬ বছরের হলেও, আমার মেয়ের তখন মাত্র সাড়ে ছয় বছর বয়স।
হঠাৎ একটা অটো এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম ICICI ব্যাঙ্ক যাবে নাকি। অটোয়ালা ইশারা করে বসতে বললো। রেনকোট পড়া ছিল তার, অটোর পর্দা গুলো টানা। জিজ্ঞাসা করলাম কোনো অটো নেই কেন রাস্তায়, বৃষ্টি বাদল বলে ? সে মাথা নাড়ালো সম্মতি জানাতে। এরপরেই একটা ঘটনা ঘটলো, যার ফলে আমি বুঝতে পারলাম কিছু ভয়ঙ্কর ঘটতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি! যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তা জনমানবশূন্য , রাস্তার কুকুরগুলো ভয়ঙ্কর ভাবে তেড়ে আসছিলো আমাদের অটোর দিকে, কেন বুঝলাম না।
ওরা ঘেউ ঘেউ করে ঠিকই নির্জন রাস্তায় যানবাহন দেখলে, কিন্তু এরকম হিংস্রভাবে তেড়ে আসতে আগে দেখিনি। কয়েকজন পথচারী ভয়ার্ত ভাবে চেয়েছিলো আমাদের অটোর দিকে, কেউ কেউ মাটিতে পড়ে গিয়ে আর্তনাদ করছিলো! আমি খুবই ঘাবড়ে গেছিলাম এইসব দেখে ! অটোওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে উনি দেখলেন কি রাস্তার ধরে কিছু লোকজনের অদ্ভুত ব্যবহার ? অটোয়ালা কোনো উত্তর দিলো না। কি ছিল আমাদের অটোতে যা দেখে রাস্তার কুকুরগুলি হিংস্রভাবে তেড়ে আসছিলো ? কি দেখে গভীর রাতে নির্জন রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আতঙ্কে আর্তনাদ করছিলো ?!! হঠাৎ কেউ আমার কানে বলে উঠলো “নেমে যাও!”। বুঝলাম বেশি ড্রিংক করার ফলে এগুলো শুনছিলাম। মাঝে মাঝে অনুভব করছিলাম হিমেল হাওয়া! অটোর পর্দাগুলো টানা, হাওয়া কেন লাগছিলো বুঝলাম না।
এর পরে যা ঘটলো , সেটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটলো। প্রায় পৌঁছে গেছিলাম বাড়ির কাছাকাছি। ৮ নম্বর আইল্যান্ডে পৌঁছে গেছিলো অটো। এর পরেই আমার নামার স্টপ। তখনি আকাশে বিদ্যুতের ঝলক! তার সাথে ৮ নম্বর আইল্যান্ডের জোরালো আলোতে সব কিছু দিনের আলোর মতন পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলাম! অটোর আয়নাতে যাকে দেখলাম, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না! এযে খোকনদা! সেও আয়না দিয়ে আমার দিকে তাকালো। তার মুখে এক নিষ্ঠুর হাসি! আর চোখে হিংসা এবং প্রতিশোধের আগুন! তখনি সেই অতি পরিচিত গলাটা যেন আমার কানে আর্তনাদ করলো “আশিস পালা! অটো থেকে লাফ মার! এখুনি !” এবার চিনতে পারলাম সেই আওয়াজ ! এই গলার স্বর তো আমার মায়ের !
আগের বছর এক খুব নামকরা ডাক্তারের ভুল অপারেশনে মারা গেছিলেন একদম সুস্থ অবস্থায়। আমার ৪০ বছর বয়সেও আমাকে নিজের বাচ্চার মতন দেখতেন মা। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম , খোকনদা ! অটো দাঁড় করাও !! কিন্তু খোকনদা হেসে আরো গতি বাড়িয়ে দিলো অটোর। আমি কালবিলম্ব না করে লাফ দিলাম অটো থেকে! সজোরে পড়লাম রাস্তার ওপরে। খুব ব্যাথা লাগলো কিন্তু নিজের মাথা বাঁচিয়ে পড়েছিলাম। বোধয় ২০ সেকেন্ড শুয়ে ছিলাম ওই অবস্থায়। তারপরে এক ভয়ানক আওয়াজ শুনলাম। মুখ তুলে দেখি অটোটা গিয়ে একটা বাড়ির দেয়ালে ধাক্কা মেরেছে। দুমড়ে মুচড়ে গেছিলো অটোটা । আওয়াজ শুনে লোক বেরিয়ে এসেছিলো তাদের বাড়ি থেকে। একটি রিকশাওয়ালাও দৌড়ে গেছিলো যে এতো রাতেও আইসিআইসিআই স্টপের স্ট্যান্ডে ছিল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। রাস্তায় পড়ে গিয়ে কোমরে এবং দুই কনুইয়ে ভয়ানক ব্যাথা ছিল ।
কেটেও গেছিলো বেশ কয়েক জায়গায়। গিয়ে দেখি অটোটি একেবারেই শেষ, মানে সেটিকে আর সারাই করাও যাবে না। কিন্তু কোনো অটোচালক ছিল না অটোতে !! রিক্সাওয়ালা সবাইকে বলছিলো যে সে চাক্ষুষ দেখেছে ঘটনাটা। অটোটা চালকবিহীন অবস্থায় সোজা গিয়ে একটি বাড়ির দেয়ালে ধাক্কা মারে ভয়ানক গতিতে! যদিও কেউ বিশ্বাস করতে চাইছিলো না, কিন্তু অটোচালক কে না দেখায় আস্তে আস্তে অনেকেই সেই গল্প বিশ্বাস করলো শেষমেশ। যেইরকম ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়েছিল, তাতে অটোচালকের পালিয়ে যাবে দূরের কথা, দু পা হাঁটাও সম্ভব ছিল না তার পক্ষে !
খোকনদা খোকন ঢালী আমাদের ড্রাইভার ছিল সেই আমি যখন স্কুলে পড়া শেষ করে কলেজ শুরু করেছিলাম তখন থেকে, তখন পরিমল দা আমাদের ফ্যাক্টরির কাজ করতো । প্রায় ৭ বছর আমাদের গাড়ি চালাবার পরে নিজে অটো কিনে অটো চালানো শুরু করে, পার্টি পলিটিক্সও করতো, ৮ নম্বর ট্যাঙ্কার অটোস্ট্যান্ডের নেতাও হয়েছিল। তারপরে অনেক পারিবারিক ঝামেলাতে জড়িয়ে পরে নিজের শালার সাথে, বৌয়ের সাথে। একদিন পরিমলদা(আমাদের বহু পুরাতন কর্মচারী ) এসে খবর দেয় আমাদের যে খোকনদা অটো চালিয়ে নিজের বৌকে নিয়ে নিউটাউনের দিকে যাচ্ছিলো রাত্রিবেলা।
যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। ব্যাপারটা রহস্যজনক ছিল খুব, খোকনদার বডি পুরো ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কিন্তু অদ্ভুতভাবে তার বৌয়ের কোনো আঘাত লাগে নি। সেই সময় সম্পত্তি নিয়ে বৌয়ের সাথে এবং বৌয়ের পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল খোকনদার । আর নিউটউন এর দিকে অটো চালিয়ে কেনই বা যাবে সেটাও অদ্ভুত ছিল। তখন পেট্রোলে চলতো অটো, ফালতু খরচ কেনই বা করবে, আর সল্টলেকের কাছে কেষ্টপুর/নয়াপট্টি (খোকনদার বাড়ি ছিল নয়াপট্টি ) এলাকা থেকে ঐখানে কি কাজ ছিল ? অনেক প্রশ্ন উঠেছিল, অনেক জলঘোলা হয়েছিল, কেউ কেউ বলেছিলো খুন করা হয়েছিল খোকনদাকে সম্পত্তির জন্যে ।
যখন আমাদের গাড়ি চালাতো খোকনদা, খুবই উশৃঙ্খল জীবনযাপন করতো। অনেক কমপ্লেন এসেছিলো আমার মার কাছে খোকনদার নামে। এছাড়া বহু ক্ষেত্রে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। (কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে আমাদের ফ্যাক্টরিতে চুরি করতো লোহা লক্কর ইত্যাদি )। বহুবার ওয়ার্নিং দিয়েছিলো আমার মা , কিন্তু লাভ হয়নি। শেষমেশ খোকনদাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল মা। সেই থেকে আমি শুনেছিলাম এক চাপা রাগ ছিল আমার মায়ের প্রতি খোকনদার। যদিও আমার সাথে তার পরে বহুবার দেখা হয়েছিল, এবং হাসিমুখেই কথা বলেছিলো। তার মৃত্যুতে খুব দুঃখও পেয়েছিলাম আমি। আমার মা মারা যান ২০১৬ সালে ভুল চিকিৎসার কারণে, যা আগেই বলেছি। মা ধরাছোয়ার বাইরে চলে গেছিলো খোকনদার । তাই কি আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলো ?
শেষ কথা।
সেদিনের ঘটনার পরে পরিচিত কিছু লোক আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলো। এবং লোকের যা কাজ, ১০ হলে তাকে ১০০ করে দেখানো। আমার বাড়ির লোকেদের ওনারা বলেছিলেন আমার ভয়ানক চোট লেগেছে, যদিও কনুইয়ের কিছু জায়গায় গভীর ক্ষত ছাড়া তেমন কিছু হয় নি আমার। কিন্তু বাড়ির লোকেরা আমাকে সোজা শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে আমাকে হাজারখানা প্রশ্নবানে বিদ্ধ করলো। কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলো না, শুধু বললো এতো ড্রিংক করার জন্যে এইসব হ্যালুসিনেশন !
কি আর বলবো ? চুপ থাকলাম। সামনে বাবা, বৌ, ছেলে, মেয়ে, আমাদের দুই পরিচারিকা আর আমার রেস্টুরেন্টের দুই ডেলিভারি বয় যারা আমাদের সাথেই থাকতো কারণ তাদের নাগাল্যান্ড, মানে আমার বৌয়ের রাজ্য থেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু আমার চোখ তাদের দিকে ছিল না। ঠিক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল খোকনদা !! আর তার মুখে সেই মারাত্মক খুনি হাসি। ভাবটা এমন “আজকে বেঁচে গেছো আশিস , কিন্তু কতদিন বাঁচবে ?” আমি আমার হাত বাড়িয়ে খোকনদার দিকে দেখিয়ে বললাম সবাইকে “ওই দেখো! এখানেও এসে গেছে !” সবাই সেইদিকে তাকালো এবং তারপরে আমার দিকে খুব অবাক হয়ে তাকালো! বাবা ধমক দিলো “এর পরে এত্ত নেশা করলে বাড়িতে আসতে দেব না !”। কি করে বোঝাবো যে আমি নেশা খুবই কম করেছিলাম এবং ওখানে খোকনদা সত্যি দাঁড়িয়ে ছিল !
রিক্সাওয়ালা তো নেশা করেনি, সেও কি ভুল দেখেছে যে একটা খালি অটো খুব জোরে গিয়ে ধাক্কা মেরেছিলো দেয়ালে !! বাকি পাড়ার লোকেরা , মানে আমাদের BJ ব্লকের উল্টোদিকের পাড়ার, BK ব্লকের মানুষেরাও তো দুমড়ানো মোচড়ানো অটোটি দেখেছিলো এবং তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অটোয়ালার হদিশ পান নি ! এরা তো কেউ নেশা করে ছিল না ! খোকনদা তখনো ওদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার মুখের হাসিটা আবার দেখে একটা কথা ভেবে শিউরে উঠলাম। আমার বিপদ কেটে যায় নি, আসলে বিপদ তো সবেমাত্র শুরু হলো !