জ্বীন সমাচার

জ্বীন সমাচার

‘সুরা জ্বীন’ তেলাওয়াত করতে গিয়ে জ্বীন সংক্রান্ত মজার কয়েকটি ঘটনা মনে পরে গেল। আমার প্রথম চল্লিশ দিনের সফরের শেষ দিকে আমরা এক মসজিদে উঠামাত্রই মুয়াজ্জিন সাহেব এসে জামাতের সাথীদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন, আপনারা একটু সাবধান থাকবেন, এই মসজিদে মাঝেমধ্যে জ্বীনের উপদ্রব হয়। তিনি মসজিদের মিম্বরের সামনে কাউকে ঘুমাতে বারন করলেন।

রাতের বেলা নাকি ওখানে কয়েকজন আল্লাহওয়ালা জ্বীন এসে এবাদত বন্দেগি করেন। তাই ওখানে কেউ শুয়ে থাকলে তাদের ডিস্টার্ব হয়! যাইহোক, মুয়াজ্জিন সাহেবের বারন এবং সাথিদের নিষেধ সত্বেও চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ নামের অল্পবয়স্ক এক সাথী গোয়ার্তুমি করে মিম্বরের সামনেই ঘুমালো। সে নাকি দেখতে চায় জ্বীন তাকে কি করে! . তারপর? তারপর রাত বারটা সারে বারটার দিকে ধুপ ধাপ কয়েকটি শব্দ ও ওভার কিউরিয়াস আব্দুল্লাহ’র বিকট চিৎকার!

বাতি জালানোর পর দেখা গেল আব্দুল্লাহ বিছানা থেকে দুই তিন হাত দুরে চিত্পটাং হয়ে পরে আছে! পরদিন সকালে আসল ঘটনা জিজ্ঞ্যেস করে জানা গেল জ্ঞ্যান হারানোর আগে সে শুধু এতটুকুই বুঝতে পেরেছিল যে, কে নাকি তাকে উপর্যোপুরি কিল- ঘুসি মারছিল আর টেনে হিচড়ে মিম্বরের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল! সে নাকি হলফ করে বলতে পারবে, কোন মানুষের পক্ষে এত জোরে মারা সম্ভব না! এতো গেল প্রথম দিনের কাহিনি। সেদিন জ্বীন ভাইয়েরা প্রমান করে দিল যে তারা অহিংস নয়, সহিংস নীতিতে বিশ্বাসী! এখন বলি দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। এবার অবশ্য তারা হাল্কাপাতলা রস বোধের পরিচয় দিল।

দ্বিতীয় দিন রাতে আমরা সবাই লাইট অফ করে শুয়ে পরার একটু পরই কে যেন সুইচ টিপে একের পর এক সবগুল ফ্যান বন্ধ করে দিল! যেহেতু তখনো আমরা কেউই ঘুমাইনি, শুয়েছি মাত্র, তাই সাথে সাথে কয়েকজন সাথী মশারি থেকে বের হয়ে লাইট জালিয়ে দেখল কেউ নেই! সবাই যার যার মশারির ভেতর শুয়ে আছে! তারপর উনারা আবার সব ফ্যান ছেড়ে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলেন। দুই মিনিট পর আবারো সেই একই কান্ড! কে যেন এক সাথে সবগুল ফ্যান বন্ধ করে দিল!পরিষ্কার শুনতে পেলাম সুইচ অফ করার আওয়াজ!

পরপর তিন চার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল! শেষ মেশ আমির সাহেব বললেন, জ্বীন ভাইয়েরা যা করে করুক, আমরা আমাদের মত ঘুমিয়ে থাকি। কি আর করা, নিরুপায় হয়ে আমির সাহেবের কথা মত ঘুমানোর চেষ্টা করলাম! শেষ রাতে কারা যেন মসজিদের টিনের চালে ঠুস ঠাস করে ঢিল মারতে লাগলো! কি যন্ত্রনা! কল পাড়ে বসে অযু করার সময় জহির ভাইয়ের গায়ের উপর কোত্থেকে আস্ত এক নারিকেল উড়ে এসে পরল! অথচ আসে পাশে কোন নারিকেল গাছ ছিল না! ফজরের পর বয়ান করতে দাড়িয়ে আমাদের সবার প্রিয় জামিল ভাই চোখ বড় বড় করে উল্টো পাল্টা বকতে লাগলেন! কোন সন্দেহ নেই এটাও জ্বীন ভাইদের কারসাযি!

বুঝলাম, জ্বীনজাতির রসিকতাবোধ মানবজাতির চাইতে কোন অংশে কম নয়! বরং কিছুটা বেশি হলে হতে পারে! সব শেষে দেশ বিদেশ সফর করা অনেক পুরনো ও অভিজ্ঞ সাথী আব্দুল মান্নান চাচার কাছ থেকে শোনা একটা মজার ঘটনা বলে শেষ করছি। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে একবার এক জামাত লম্বা জার্নি করে গভীর রাতে নির্দিষ্ট মসজিদে পৌছার পর আমির সাহেব সাথীদেরকে বললেন, এখন যেহেতু অনেক রাত এবং সবাই অনেক ক্লান্ত,তাই এখন রান্না করে খাওয়া সম্ভব না। বাহির থেকে সবার জন্য খাবার কিনে আনতে কে রাজি আছে জানতে চাইলে দুই সাথী হাত তুললেন।

আমির সাহেব তাদেরকে খাবার আনতে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু তারা দুজন অস্বাভাবিক ভাবে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে কোর্মা পোলাউ টাইপের নানা রকম দামি দামি খাবার (এতো রাতে যেগুলো কোথাও পাওয়া যাওয়ার কথা না!) নিয়ে হাজির হওয়াতে আমির সাহেব খুব অবাক হলেন। বিস্মিত কন্ঠে জানতে চাইলেন,এত রাতে তারা এইসব খাবার দাবার কোত্থেকে যোগার করল! জবাবে তারা বলল, আমির সাহেব, আমরা দুজন আসলে মানুষ না, আমরা জ্বীন! আমির সাহেবের অবস্থাতো পুরাই খারাপ! তারপরও আল্লাহর রাস্তার আমির বলে কথা,চমকে গেলেও ঘাবড়ালেন না। সাহস করে বললেন, আপনারা যদি জ্বীনই হয়ে থাকেন তাহলে এই জামাতে কেন আসলেন?

আপনাদের কথা জানতে পারলে জামাতের অন্যান্য সাথীরা ভয় পাবেনা? জবাবে তারা কি উত্তর দিল শুনবেন? তারা আমির সাহেবকে অভয়(!) দিয়ে বলল, আমির সাহেব, চিন্তার কোন কারন নেই। আপনি ছাড়া জামাতের সবাইই জ্বীন!! বোঝেন অবস্থা! এইবারতো আমির সাহেবের আত্নারাম পুরাই খাচাছাড়া! অতঃপর রাত পোহানোর আগেই আমির সাহেব ওই এলাকা থেকে গায়েব! জান বাঁচানো ফরজ কিনা!

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত