“কি সুন্দর লাল রঙে রঙিত কৃষ্ণচূড়া ফুল। আমি ফুল গাছের নিচে দাঁড়ালাম। আমার ছায়া সঙ্গিনী মনে হল যেন আমার কাধে হাত রাখল। আমি কেঁপে উঠলাম। সে কি কোমলতায় পরিপূর্ণ সেই স্পর্শ। কি মাদকতাময় ছোঁয়া। যেন আমাকে উন্মাদ করে তুলেছে। আমি তাকে দেখতে পারছি না। কিন্তু যেন মনে হচ্ছে সে আমার দিকে চেয়ে আছে। মুচকি হাসি দিচ্ছে। তার শরীরে উষ্ণতা আমাকে যেন টানছে তার দিকে। একটি কালো ছায়া জ্যোৎস্নার রাতে আমার সামনে যেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তার মাঝে আমি বিলিন হবো নিজের দেহ ত্যাগ করে। সব ভুলে আমি তখনি নিজের পেটে হাতে থাকা ছুরিটা মেরে দিলাম ক্রিং ক্রিং ক্রিং আমি ফোনের রিংটোনে চমকে উঠলাম।
ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারটাতে বেশ মজিয়ে বসে মোমের আলোতে সত্যজিৎ রায়ের লেখা “ছায়ামূর্তি” গল্পটি বেশ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। গল্পের একদম শেষ সমাপ্তিতে এসে পৌছেছি তখনি যেন ফোনটা তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। মেজাজটা ভীষন বিগড়ে গেল। প্রথমত এখন রাত ১২ টা পার হয়ে গিয়েছে। তার উপর গল্পটা থেকে মনোযোগ সরে গিয়েছে, আর তার থেকে বেশি বিরক্তে যেন ফোনটা বেজে উঠল। এসব ভাবতে ভাবতে আরো একবার রিং বেজে উঠল। বেশ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ফোনের কাছে হেটে যাচ্ছি আর ভাবছি। ফোন যে কেন আবিষ্কার করেছিল? এত বিকট শব্দ কেনো দিতে হবে? তাড়াতাড়ি ল্যান্ড লাইন ফোনটি বিছানার পাশে রাখা টেবিলে কাছে যেয়ে ধরলাম। তখনি ওপাশ থেকে হাফানোর শব্দ শুনতে পেলাম। আমি কর্কশ গলাতে বললাম..
– কে? এত রাতে ফোন করে জ্বালাতন করেন? অসহ্য। ওপাশ থেকে কোনো গলার শব্দ ভেসে আসে না। তবে স্পষ্ট শুনতে পারছি কে যেন হাফাচ্ছে। আমি আবার হেড়ে গলায় বললাম..
– ধুর ফাজলামো পাইছেন নাকি? কথা বলেন না ফোন দিয়ে? ব্যাপারটা কি?
– দাদা…
চমকে উঠি গলা শুনে। ওপাশ থেকে আমার বোন সুমিত্রা ফোন দিয়েছে। অবাক হয়েছি এত রাতে ফোন দেয়ার জন্য। নিজের মাঝে আর কর্কশতা নেই। কিসের একটা চিন্তা যেন মাথাতে ঘুরপাক খেতে লাগল। আমি শান্ত গলাতে বললাম..
– সুমিত্রা তুই এতরাতে?
– হুমম। দাদা বাবা খুব অসুস্থ। বাবার হার্টের সমস্যাটা শুরু হয়েছে। বারবার তোকে দেখতে চাচ্ছে। তুই আই দাদা।
কথাগুলো শুনে কেমন যেন অস্হিরতা চলে আসলো মনে। আমি তাড়াতাড়ি গলায় বললাম..
– আচ্ছা আসছি। বাবাকে দেখে রাখ।
– অনেক রাত হয়েছে তো দাদা।
– তাতে কি? ভগবানের নাম নিয়ে বের হবো।
আর কিছু বললুম না। সবে কলকাতায় অফিসে চাকরি পেলুম। এখনো নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। নতুন চাকরি তার উপর কামায় এসব ভাবতে ভাবতে স্যুট,কোর্ট,টাই,জুতো পরে বেরিয়ে গেলাম হাতে ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে। রাত তখন ১ টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি। বাড়ির দারোয়ানকে সব বুঝিয়ে দিয়ে ভগবানের নাম করতে করতে বেরিয়ে পড়লুম। রাস্তাটা কেমন যেন ফাকা। হাটার গতি বাড়ালাম। উদ্দেশ্য শেয়ালদাহ ট্রাম ষ্টেশন। এতরাতে কোনো রিকশা পাবো না জানি। তাই নিজের মত করে হাটছি। স্টেশনে পৌছাতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট। একা হাটছি। আকাশটা হটাৎ যেন চমকে উঠল। আমি আকাশের দিকে চাইলাম। দেখি পুবের আকাশে কালো মেঘ ঘনিভুত হয়েছে। শেষের দিকে সাদা মেঘ। বাতাস বইতে লাগল হাল্কা ঠান্ডা বাতাস। বুঝলাম কালো মেঘ চলে গেলেই বৃষ্টি অবধারিত। হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলাম। মা দূর্গার নাম নিতেই কানে ভেসে এল..
– নিল চ্যাটার্জি। আমি চমকে উঠলুম। এত রাতে এই পরিবেশে কোনো কাক পক্ষি নেই। কিন্তু কে যেন আমার নাম ধরে ডাকলো। আমি একটু শিওরে উঠে চারিদিকে তাকালাম। নাহ সেরকম তো কাউকেই দেখলাম না। তখনি আকাশ আবার ডেকে উঠল। আমি পা চালালাম। কয়েক মিনিট হাটতেই আবারো শুনলাম..
– বিমলের ছেলে নিল চ্যাটার্জি।
আমি স্পষ্ট ডাক শুনতে পেলাম। এবার ডান পাশের রাস্তার একটি দেবদারু গাছের নিচে কোনো এক অবয়ব বসে আছে। গা টা চমকে উঠল। বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে স্পষ্ট দেখলাম একটি সাদা রঙের শাড়ি পরা একটি ৬০ থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা মহিলা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কি ফ্যাকাশে মুখ, দেখতে আমার হরিহর জেঠুর (পাড়াত) বউ স্বরস্বতি জেঠিমার মত । ভয়ে গা টা যেন কেঁপে উঠল কারন তিনি আমার নাম ও বাবার নামও জানেন। তখনি শুরু হল টিপ টিপ বৃষ্টি। আমি ভয়ে ভয়ে পা চালাতে লাগলাম। আবারো মিন মিনে গলায় বললো..
– শোন এদিকে শোন। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে গেলাম। ভয়ে আমার পা যেন অসর হয়ে গেল। আমি কোনোরকমে হেটে তার কাছে গেলাম। আমাকে কাছে পেয়ে বলল..
– এত রাত্তিরে বের হওয়া ঠিক হয়নি।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাকে আমি চিনিনা অথচ চেনা চেনা লাগছে। আর বড় কথা তিনি আমার আর বাবার নামও জানেন। এ দিকে বিদ্যুৎ ও ঠিকভাবে চমকাচ্ছে না। কাছে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। শেয়ালদাহ স্টেশনের লাষ্ট ট্রেন রাত দেড়টাই। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম..
– কে আপনি? আমার দরকার তাই বের হয়েছি। আপনি আপনার কাজ করুন। আমি আমার কাজ করি। আর নাম জানেন কি করে শুনি? দাঁড়িয়ে রইলাম জবাব শুনবো বলে। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলার মুখে কোনো কোনো কথা নেই। তাড়া থাকায় বিরক্তি নিয়ে চলে আসতে যাবো। তখনি উনি হেসে দেয়। কি বিশ্রী রকমের শব্দে হাসি। হাসিটা শুনে যেন গা টা জ্বলে যাচ্ছে। হাসি হাসি মুখে তিনি বললেন..
– এটা ধর, আর চল আমার সাথে। উনি একটি সাদা কাপড় দিয়ে আমাকে ওনার সাথে যেতে বললেন। মেজাজটা গেল বিগড়ে। আমি ওনার হাত বাড়ানোর দিকে তাকিয়ে বললাম..
– ধুরর মশাই, আমার সময় নেই। থাকেন তো আপনি। কথাটি বলে আমি জোরে হেটে চলে আসলাম। পিছন থেকে বিদঘুটে এক হাসির শব্দ আমার কানে এলো। বৃষ্টি যেন আরো একটু বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ চমকানির আলোতে হাটতে লাগলাম। তখনি বিদঘুটে হাসির সাথে গম্ভীর গলায় বললেন..
– আজ তুই বেঁচে গেলি। কিন্তু পথে তোর আরো বিপদ। যাহ…
কথাটি শুনে আমার মেজাজটাও গেল খারাপ হয়ে। কিন্তু কিছু বললাম না। রাম নাম যপ করতে করতে দাঁত কামড়ে স্টেশনের দিকে এগুতে লাগলাম। যখন হাটছি তখন যেন মনে হচ্ছে আমার পিছনে আরো কেউ একজন যেন হাটছে। আমি হাটা থামাতেই যেন ঐ হাটাটাও থেমে যাচ্ছে।
এভাবেই হেটে চলে আসলাম স্টেশনে। প্লাটফর্ম এর কোনায় এসে দাড়াতেই ঝুম করে বৃষ্টি শুরু হল। ক্যাচিও ঘড়ির আলো জ্বেলে দেখলাম রাত ১ টা ১০ বাজে। শুরু হয়ে গেল প্রবল বৃষ্টি। সারা প্লাটফর্ম জুড়ে কেবল বৃষ্টিহীন নিরাবতা। কোনো জনমানব নেই। স্টেশনের বড় খাম্বাতে কেবল একটি আলো জ্বলছে। আর তাতে দেখা যাচ্ছে একটি কালো রং এর কুকুর শুয়ে আছে কাচুমাচু হয়ে। স্টেশন মাষ্টার এর ঘরের দিকটা যেন আরো অন্ধকার। সে যাকগে। বাবার কথা মনে পড়াতে বুকটা কেমন যেন করে উঠল।
মা নেই, ছোট থেকে বাবা আমার আর সুমিত্রাকে বড় করেছে। বাবার অসুস্থতার খবর শুনে আমি না যেয়ে পারি? তা সে যতই ঝড় বৃষ্টি হোক না কেনো। একটি বেঞ্চে বসে বাবার কথা ভাবছি। তখনি চিকন গলায় শুনতে পেলাম কে যেন দম নিয়ে উহ.উহু..উহু.. করে কান্না করছে। আমি কান্নার শব্দ শুনে সে দিকে তাকালাম। আমার থেকে বেশ অনেকখানি দুরে এক কোনাতে বসে মাথাটা নিচু করে কে যেন কান্না করছে। কাউকে চিনি না। নবধক্যপুর হতে কলকাতাতে চাকরির জন্য আসতে হয়েছে। তাই সেভাবে কাউকে জানিনা। আমি তখনও বসে মহাদেব, মহাকালী,বৃষ্ণু দেবের নাম যপতে লাগলাম। এবার কান্নার সুর যেন আরো তীক্ষ্ণ হল। আরো চিকন হয়ে অনেক কষ্ট নিয়ে যেন কান্না করতে লাগল।আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভয়ে যেন আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল। কাঁপা কাঁপা গলাতে দুর থেকেই দাঁড়িয়ে বললাম…
– কে..কে কে ওখানে? এভাকে কে কান্না করে?
সেদিক থেকে কোনো শব্দ ভেসে আসছে না। ভয়ে যেন আমি স্থীর হয়ে গেলাম। সারা প্লাটফর্ম এ আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর আছে অপরিচিত ঐ কান্নারত মেয়েটি। তখনি জোরে গর্জন করে আকাশ ডেকে উঠল। স্বশব্দে যেন কানের তালা লেগে গেল। অনেক সাদা আলো বৃষ্টির অন্ধকার পরিবেশে জমা হয়ে আবার নিভে গেল। বুঝলাম কাছে কোথাও বাজ পড়েছে। আমি তখনি ঐ আলোর জ্বলকানিতে দেখলাম একটি লাল সাদা রং এর বেনারসি শাড়ি পরে মেয়েটি ঘাপটি মেরে বসে মুখটা শাড়ির বড় একটা আঁচলে ঢেকে রেখে কান্না করছে। এমন পোশাক দেখে আমি ভড়কে গেলাম। বিয়ে থেকে মেয়েটি পালিয়ে আসেনি তো? হয়ত এত রাতে আমার মত একটা ছেলেকে দেখে বা বৃষ্টির কারনে ভয় পেয়ে কান্না করছে। আমি স্বাভাবিক হলাম। আস্তে হেটে মেয়েটির কাছে গেলাম। আমি তার থেকে দুইহাত দুরে দাঁড়িয়ে বললাম..
– কে. কে আপনি?
– এভাবে এখানে বসে কেনো কাঁদছেন?
– ভগবানের দোহায় কথা বলুন।
মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। কোনো কথা বলছে না। কান্নাটাও থেমে গেছে। সারা স্টেশন একদম ফাকা। হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম সময়টা দেখবো বলে কিন্তু সেটা কোনো রকম কাজই করছে না। কপাল ঘামছে আমার। কুকুরটি কেমন করুন শুরে কান্না করতে লাগল। আমি চমকে উঠি। কেমন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। আমি বললাম..
– কথা বলেন না কেনো? কে আপনি?
– লক্ষী ভারী একটা কন্ঠ। কন্ঠ শুনেই আমি যেন কেমন অনুভুতি শুন্য হয়ে পড়তে বসলাম। লম্বা ঘোমটাতে মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। আমি সরে আসছি মেয়েটি আরো সরে আসতে লাগল।
– ল—ল—লক্ষী জ্বি, আপনি এখানে কেনো? কোনো কথা নেই। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আমি ভয়ে যেন বোবা হতে যাচ্ছি এমন মনে হল। আমি তোতলাতে লাগলাম। সে বলল..
– আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
– মানে? (কথাটি শুনে যেন আরো দম বন্ধ হল)
– আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
আমি কথাটি শুনে হা হয়ে গেলাম। আমার সারা পা যেন জমে গেছে। কাপতে লাগল। মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার বাম হাত ধরল। হাত ধরে টেনে সে রেল পাতের কাছে নিয়ে যেতে লাগল। আমি যেন ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। কি যেন শক্তি আমাকে টানতে লাগল সেদিকে। আমিও জোর দিদে লাগলাম। তখনি সেই হাত আমাকে আরো শক্ত করে ধরল। আমার সারা শরীর যেন শিউরে উঠেছে। এ যেন কোনো হাত না। যেন কোনো বরফগলা টুকরো। কি শীতল, ঠান্ডা হাত। এক মুহুর্তের জন্য আমার প্রানটা যেন উড়ে গেছে। আমার সমস্থ শরীর কাঁপতে লাগল। আমি আমার ডান হাত দিয়ে মেয়েটির ডান হাত ধরে হাত সরাতে লাগলাম। তখনি যেন মনে হল, এটা কোনো সাধারন হাত না, যেন কোনো লোমশ কোনো জন্তুর গায়ে হাত দিয়েছি। মাথাটা তখনি যেন ভো ভো করে উঠল। ঘেমে একাকার আমি।
– মেয়েটি বললো..
– আমাকে না বিয়ে করে হাত ছাড়াতে পারবেন না
– আ–আ–আমি তো চিনিনা আ—আপনাকে। আমাকে ছেড়ে দিন।
কথাটি বলার সাথে সাথেই মেয়েটি তার লম্বা ঘোমটা সরালো মুখ থেকে। তখনি আবারো বিকট শব্দ হল। প্রকৃতিতে আবারো বাজ এর শব্দ নেমে এসেছে। সাথে চমকানির প্রকট আলো। আমি মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে থাকাতে যখন সে ঘোমটা তুললো তখন যা দেখলাম। তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি। আমি দেখলাম মেয়েটির মুখের ডান পাশে থেতলে গেছে। সেখান থেকে টপ টপ করে তাজা রক্ত বের হচ্ছে। আর যেন বিদঘুটে গন্ধ। কি বিশ্রী সেই মুখ। ডান চোখের মনিটা বের হয়ে নিচে পড়ে গেল। সাদা হয়ে গেল চোখটি। কান যেন মাথার মাংসের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমি জোরে রাম বলে চিৎকার দিয়ে ঙ্গান হারায়। আর কিছু মনে নেই আমার। সকাল হল, চোখ মেলতেই দেখি আমি স্টেশনের ঠিক রেললাইনের উপর পড়ে আছি মাথা আর পা আড়াআড়ি করে। মানে যদি কোনো ট্রেন আসতো আমি দু ভাগ হয়ে যেতাম। উঠে বসতেই শুনলাম.
– এই এই ঙ্গান ফিরেছে লোকটার। ধর ধর। কে লোকটা,পাগল নাকি? সারারাত কি এভাবে এখানেই ছিল? কথাগুলো আশে পাশের কয়েকজন লোক বলছে। আমি উঠে দাঁড়াতেই স্টেশন মাষ্টার এসে আমাকে ধরল। খানিক কথা শোনাল। তারপর তার ঘরে নিয়ে গেল। ব্যাগটা সেখানে রাখা। ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল ৬টা বাজে। তারমানে সারারাত এখানে ছিলাম।
– নাম কি?
– আঙ্গে নিল চ্যাটার্জি।
– তা মরতে আসছিলে বুঝি?
– নাহ।
– তবে? আমি স্টেশন মাষ্টারকে কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বলি। তিনি গম্ভীর হয়ে সবটা শোনে। তারপর বললো..
– আপনিও তাহলে লক্ষীকে দেখলেন?
– মানে?
– আর বলবেন না।
১০ মাস আগে লক্ষী নামের একটি মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসে রাতে তার প্রমিকের কাছে চলে যাবে বলে। লক্ষী যখন পালিয়ে আসে তখন তার পিছনে পিছনে তার পরিবারের লোকজনও আসে। স্টেশনের একদম কাছে আসতেই সে পা ফসকে আছাড় খেয়ে পড়ে রেল লাইনের পাতের উপর। যেখানে আপনি শুয়ে ছিলেন। আর আপনার ব্যাগ আমার দরজার কাছেই পড়ে ছিল। এরপর থেকে তাকে নাকি অনেকমানুষ এখানে দেখতে পায়। আপনিও দেখেছেন। কথাগুলো শুনে কেমন যেন হালকা লাগছে। তখনি বাবার কথা মনে পড়ে গেল। আমি স্টেশন মাষ্টারকে বললাম..
– কাকাবাবু আমাকে একটা কল করার সুযোগ করে দিতে পারবেন?
– হুমম আসুন আমার ফোন থেকে কল দিবেন না হয়। আমি ওনার ল্যান্ড ফোন থেকে বাড়িতে কল দিতেই একটু পর সুমিত্রা ফোন ধরল..
– এই সুমিত্রা বাবা কেমন আছে?
– বাবা তো ভালোই আছে। আর তুই এভাবে হাফাচ্ছিস কেনো? কি হয়েছে দাদা?
– আমি সঠিক সময়ে আসতে পারিনি রে। বাবা সত্যি ভালো আছে তো?
– মানে কি দাদা, তুই সঠিক সময়ে আসিস নাই মানে কোথায়?
– বাড়িতে।
– কেনো?
– কাল রাতেই তো তুই বলেছিলি বাবার বুকের ব্যাথা বেড়েছে চলে আই।
– আমি? পাগল হয়েছিস? আমি তোকে কখন বললাম?
আমি তো কাল রাতে বাড়িতেই ছিলাম না। মাসির বাড়িতে গিয়েছিলাম। আজ ভোরেই তো স্বরস্বতি জেঠিমা মারা গিয়েছে। তাই তার খবর শুনেই তো আসলাম। কি হয়েছে দাদা? কি বলছিস এসব? হ্যালো, দাদা…তুই ঠিক আছিস তো? এ দাদা আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেল। তাহলে কাল রাতে বুড়িটাকে দেখেছিলাম সে কি তবে জেঠিমা? আর কাল রাতে আমার সাথে কি হয়েছিল তবে? আর কিছু মনে করতে পারছি না। আমি মনে হয় আবারো ঙ্গান হারাবো।