মাংসাহারী জ্বীন শিশু

– জালাল একটা দোকানে কাজ করে, যার জন্য বেশিরভাগ সময় বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। কখনো , তো এমন ও হয়! বাসায়, আসতে পারেনা, দোকানেই থাকতে হয়। যেদিন বাসায় আসতে পারেনা সেইদিন বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেয়!

আজকে সকালে, বের হওয়ার সময় – জালালের পিচ্চি বাবুটা বলে দিয়েছে -আব্বু আমার জন্য চিপস নিয়ে আসবা। জালাল ও বললো আচ্ছা, “মামুনি নিয়ে আসবো! এটা বলে বাসা থেকে বের হয়। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখে অনেক কাষ্টমার – সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত জিনিসপত্র বিক্রি করলো। যখন সন্ধ্যা হলো – তখন কাষ্টমার আরো বেশি বেশি আসতে শুরু করলো। বাসায় গেলে জালাল কে, ১০ টার আগে যেতে হবে কেননা তার বাসা দোকান থেকে অনেক দূরে আর যাওয়ার রাস্তা অনেক ভয়ানক! তাই সে তাড়াতাড়ি কাষ্টমার বিদায় করতে লাগলো – তাড়াহুড়ো করতে করতে, “১১:২৫ বেজে যায়! সে চিন্তা করলো, এখন বাসায় গেলে রাস্তায় অনেক রকমের সমস্যায় পড়তে পারে – আবার হঠাৎ মনে পরলো তার পিচ্চি মেয়েটা চিপস নিয়ে যেতে বলছিলো, তখন সে ঠিক করলো বাসায় যাবে। দোকান বন্ধ করে ৫ টা চিপস নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো – রাত তখন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে! রাস্তা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছেনা।

চারদিকে ঝিঝি পোকার ডাক! মাঝে মাঝে ভেসে আসছে শেয়ালের খেও খেও শব্দ। এগুলো শুনে জালাল আস্তে আস্তে ভয় পাওয়া শুরু করলো। যেতে যেতে মনে হলো – তার পিছনে কেউ আছে! যার পায়ের জুতার ঠক “ঠক শব্দ হচ্ছে! জালাল তখনি পিছনে তাকালো ” কিন্তু নাহ কাউকে দেখলো না সে। তখনি হঠাৎ মনে পড়লো, সামনের রাস্তার সেই ভয়ঙ্কর সেতুটার কথা আর বাসার একটু সামনে সেই বটগাছটার কথা। “জালালের শরীর স্তব্ধ হয়ে গেলো! আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিলো সেই সেঁতুটার দিকে – তখন মনে পড়লো লোক মুখে প্রচলিত সেই ভয়ানক ঘটনার কথা।

একদিন তারই মতো একটা লোক অনেক রাত করে বাসায় যাচ্ছিলো – যখন সেঁতু পযর্ন্ত যায়। তখন হঠাৎ সেঁতুর নিচ থেকে ভেসে আসে একটা বাচ্চা শিশুর কান্না। সে ভয় পেয়ে যায় – ভাবে এতো রাতে বাচ্চা কোথা থেকে আসবে? সেটাও আবার সেঁতুর নিচে? এটা ভেবে সে চলে যেতে লাগলো। তখনি সেই বাচ্চাটি মাঁয়াবি কান্না শুরু , করলো যা শুনে সেই লোকটি যেতে পারলোনা। তখন সেঁতুর নিচে ছিলো শুকনো! সে এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো বাচ্চাটার দিকে – যতই সামনে যাচ্ছে, লোকটি যেনো ততই জড়িয়ে পড়ছে সেই মাঁয়াবী কান্নার ফাঁদে। আস্তে আস্তে পৌঁছে গেলো সেই বাচ্চাটির কাছে।

গিয়ে দেখলো সত্যিই একটা ছোট বাচ্চা বয়স ৩-৪ মাস হবে! পড়ে আছে মাঁটিতে , লোকটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে উপরে উঠে আসলো – তারপর কার বাচ্চা জানার জন্য বাচ্চাটাকে কাঁধে করে নিয়ে আশপাশের সব বাড়িতে গিয়ে বললো, এই বাচ্চা কার? কাউকে পেলনা যে জানে বাচ্চাটা কার। তখন সে ভাবলো বাচ্চাটি যেখানে ছিলো সেখানেই নিয়ে দিয়ে আসবে! তারপর গেলো সেই সেঁতুর উপর তখন সে অনূভুত করলো তার পিঠে অনেক ব্যাথা করছে! বাচ্চাটি ও তখন কাদছিলোনা! সে বাচ্চাটিকে কাঁধ থেকে নামালো আর দেখে চমকে গেলো – বাচ্চাটির মুখে অনেক রক্ত লেগে আছে আর দেখলো তার হাতে লোকটির কাঁধের কিছু অংশ যা বাচ্চাটি খাচ্ছে। এটা দেখে লোকটি চিৎকার দিবে তখনি লোকটির গাড়ে কামড় দিলো * তারপর দিন লোকটির লাঁশ সেঁতুটার নিচে পায় ” কিন্তু এটা দেখে সবাই অবাক হয় যে লোকটার শরীরে মুখের কিছু মাংস ছাড়া আর কোন মাংস নাই শুধু হাড়!! সেইদিনের সেই কথাগুলো মনে পড়ে জালাল, ভয়ে কাপতে লাগলো -আর দেখলো সেই সেঁতুটার কাছে চলে আসছে!

ভয়ে, ভয়ে সে সেঁতুতে পা রাখলো – আর সাথে সাথেই যেনো সেঁতুটা একটু নড়ে উঠলো! জালালের ভয়টা বেড়ে গেলো , সে দ্রুত পালালো, যখন মাঝ সেঁতুতে আসলো তখনি দেখলো, _ একটা কালো বিড়াল তার পাশ কেটে চলে গেলো, সে অবাক হলো কেননা _ বিড়ালকে সে উঠতে দেখেনি আগে তাহলে হঠাৎ করে কোথা থেকে আসলো? প্রশ্নটার কোন উওর খুজে পেলনা সে! তারপর ভয়ে ভয়ে সেঁতু অতিক্রম করে অনেকটা খুশি হয়ে গেলো! “জালাল – কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ থাকলোনা, সামনে বটগাছ দেখে! তবুও সাহস করে এগিয়ে যেতে লাগলো – যখনি বটগাছটা অতিক্রম করবে, তখনি বটগাছে কিছু একটা শব্দ শুনলো ” জালাল – ভয়ে ভয়ে, তাকালো আর দেখলো যে দুইটা লাল আগুনের মতো চোখ তার দিকে চেয়ে আছে! যখনি সে দৌড়াতে যাবে তখনি সেই চোখটা কীভাবে যেনো, একটা হাত নিয়ে এসে জালাল কে গাছের উপরে তুলতে লাগলো,!

জালাল ভয়ে, চিৎকার করতে লাগলো – আর মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো , তখনি হাতটা জালাল কে ছেড়ে দিলো আর জালাল, মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। তার দুইদিন পড় তার চোখ খুললো আর দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে! যখনি বের হতে যাবে দেখলো তার পা নেই! অবাক হয়ে বউকে ঢাকলো আর কেদে কেদে বললো আমার পা? তার বউ , বললো তোমাকে সেই রাতে একটা হুজুর আসার সময় সেঁতুর উপরে দেখে আর দেখে তোমার পায়ে ছোট একটা বাচ্চা বসে বসে মাংস খাচ্ছিলো! হুজুর কে দেখেই সেটা ছায়ায় মিলিয়ে যায়! সেইদিন সেই হুজুরের জন্যই তুমি বেঁচে গেছো বলেই কেঁদে দিলো জালালের বউ।

– সেদিনের পর থেকে জালালকে পা ছাড়া জীবন নিয়েই থাকতে হয়।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত