ড্রাকুলা

অধরার ল্যাবে এসে সবদিক বেশ ভালো করে নজর দিচ্ছি। কারন আমাদের খুজে বের করতে হবে অধরার রেখে যাওয়া ডায়েরি। ডায়েরিটা যে ঠিক কোথায় সেটা খুজে পেতে বেশ মুশকিলই হচ্ছে। খুজে খুজে যখন ক্লান্ত। তখন ঠিক চোখটা আটকে গেল পরিষ্কার,বেশ রংচং স্বচ্ছ কালো রং এর ক্যামেরা। আমি কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাটাকে দেখছি। কি এক অগ্যাত আকর্ষন যেন আমাকে মোহিত করছে। নির্বাক হয়ে চেয়ে আছি। কেমন যেন হিপ্নোটাইজ হতে চলেছি।

– হেই নিল,হোয়্যাট হ্যাপেন্ড?

আমি ডেভিডের কথায় চমকে উঠি। কোনো এক অজানা ঘোরের মধ্যে ডুবতে গিয়েছিলাম। এই জিনিষটা যে এত আকর্ষনীয় হতে পারে না জানি তার মধ্যে আর কি আছে। আমি আস্তে করে বললাম..

– লুক এট দিচ ডেভিড। এদিকে তাকাও।
– কি ওটা? চকচক করছে কালো রং হওয়া সত্তেও?

ডেভিড কিছুক্ষন সেদিকে তাকাল। সেও মনে হয় জমে যাচ্ছে। আমি সোজা হেটে ক্যামেরার কাছে গেলাম। একদম নতুন রং,চকচক করছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব একটা ব্যাবহার হয়নি। মনে হচ্ছে কয়েকদিন আগে কেনা হয়েছে। আমি হাতে নিয়ে ডেভিডের সামনে গেলাম।

– নিল, এসেছি ডায়েরি খুজতে ক্যামেরা না। এসব ছোট খাটো ব্যাপার এড়িয়ে ডায়েরি খোজার দিকে মন দাও।
– ১৯৬৭। ডি.কে. আর।

আমার কথা শুনে ডেভিড রাগি চোখে তাকায়। কারন সে ডায়েরি খোজার চেষ্টা করছে আর আমি ক্যামেরা নিয়ে পড়ে আছি। বাট সে পাল্টা প্রশ্ন করলো..

– এগুলো কি?
– অবাক হচ্ছি ডেভিড। এটা ভাবছিলাম কয়েকদিনের কেনা। কিন্তু না। ক্যামেরার বয়স আজ ৫১ বছর?
– কিহহ? আর ইউ জোকিং ইয়ার?
– নাহ ডেভিড। এই দেখো।

ডেভিড আমার হাত থেকে ক্যামেরাটা নিল। আমি ক্যামেরার দিকেই তাকিয়ে আছি। কি সুন্দরই না লাগছে ক্যামেরাটা। চোখ সরানো যাচ্ছে না। কি যেন এক আকর্ষনে বারবার সেটা ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। তখনি আমার মায়ের একটি কথা মনে পড়ে,তিনি সবসময় বলতেন, “নিল যে জিনিষের বা বস্তুর উপর বেশি আকর্ষনীয়তা থাকে বুঝে নিবি সে বস্তুর মাঝে কোনো এক বড় রকমের রহস্যতা লুকিয়ে আছে ”

– ১৯৬৭, ডি,কে,আর। মানে ডি,কে রবার্টসন। (ডেভিড)
– মানে? হু ইজ হি?
– কাম অন নিল,

পড়াশোনা কি করোনি জীবনে নাকি? ইংলিশ বিজ্ঞানী ডি, কে রবার্টসন। তিনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন। কোনো এক অসাধারন ভাবে তিনি মারা যান। বহু আবিষ্কার লন্ডনের গ্রেট মিউজিয়ামে আছে। বাট এটা কেনো এখানে? আর এতই বা কেনো এত আকর্ষন?

– ইয়েস মনে পড়েছে। রবার্টশন কে ছিলেন।

আর হতে পারে অধরা ওনার ফ্যান। তাই হয়ত ওনার আবিষ্কার কাছে রেখে দিয়েছিন। আমাকে দাও তো। আর মনে হচ্ছে না ডায়রিটা এখানে আছে। চলো অধরার মায়ের সাথে কথা বলে চলে যাওয়া যাক। আমি আর ডেভিড চলে আসলাম। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখি আনটি মোনালিসা+অধরার ছবিটা দেখছে গভীর ভাবে। সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই আমি থেমে গেলাম। ডেভিড বললো..

– থামলে কেনো?
– ডেভিড দরজার পাশে যেখান থেকে মোনালিসার ছবিটা পেড়ে এনেছি সেখানে চোখ দাও।
– কি আছে?
– ভালো করে দেখো ডেভিড।
– কিছুই দেখার নেই। সাধারন একটি দেয়াল।
– হিহিহিহি,,ডেভিড, আমরা যা দেখি তা হয় না,আবার আমরা যা দেখি না তাই হয়। ভালো করে দেখো, দেয়ালের গায়ে চারটা দাগ। সব দেয়াল পরিষ্কার ভাবে প্লাস্টার করা, রংটানা। বাট ওখানে দেখো কালো দুটি দাগ।

– তো? (ডেভিড)
– তো, মনে আছে ডেভিড,

আমরা যখন প্যারিস শহরে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। তখন একটি হৈ চৈ ময় খবর ছড়ায়। প্যারিসের এক ধনী ব্যক্তির একটি মণি হারিয়ে যায়। ঠিক হারায় না। একটি সুত্রের সাহায্যে তা বের করতে হয়। বাট তিনি তা ভুৃলে যান। আর পত্রিকাতে লিখে দেন যে বুদ্ধি দিয়ে তার মণিটা খুজে দিতে পারবে তাকে পুরস্কার করা হবে?

– হুমম মনে আছে। সেদিন আমরা গিয়েছিলাম। আর ওনার ডায়েরিতে ধাধা লেখা বুঝে বের করে দিয়েছিলাম।
– তবে মণিটা কোথায় পেয়েছিলাম মনে আছে?
– একটি দেয়ালের কোঠরে। যেটা ও মাই গড। তার মানে এটা স্বাভাবিক কোনো দাগ না? এখানেও কিছু আছে?
– হুমম মি. ডেভিড।

আর কোনো কথা বলিনি। মণিটা ঠিক এরকাম দেয়ালের কোঠরে ছিলো। আমি অধরার ছবি বরাবর যেয়ে সেই দাঁগের উপর টোকা দিতেই ঢপ ঢপ করে আওয়াজ হল। বুঝলাম ফাকা একটি জায়গায়। আরো কয়েকবার জোরে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। আর তার মধ্যে নীল মোলাটে মোড়ানো একটি মোটা ডায়েরি।

– আনটি এইযে ডায়েরি।
– কিহহ? এটার মধ্যেই ছিল?
– জ্বি আনটি।
– কিন্তু আমি রোজ ছবিটা পরিষ্কার করে রেখে দেয় কিন্তু কখনই তো সেরকম কিছু চোখে পড়ে না। সত্যিই বাবা আজ তোমার না হলে যে কতটা টেনশনে থাকতাম। এবার আমার মেয়েকে পাবো তো?
– হয়ত পাবো। আনটি আমরা তাহলে ডায়েরিটা নিয়ে যায়? আর সাথে এই ক্যামেরাটা কি নিতে পারি?
– হুমম ডায়েরিটা নাও। কিন্তু ক্যামেরা? অধরার খুব প্রিয় একটি ক্যামেরা। রোজ সে পরিষ্কার করে ওর ল্যাবেই রেখে দিত। মাঝে মাঝে ব্যবহার করতো দেখতাম। তবে ব্যবহারের থেকে যত্ন করতো বেশি। ও এখন নেই তুমি রাখতে পারো।

– ধন্যবাদ আনটি। তবে আমিও যত্ন নিবো। আজ আসি? আর এই কার্ড রাখুন কোনো দরকারে আমাকে কল দিবেন।

আনটি আমাদের খেয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শুনিনি। কারন এখন আর সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই। কোনো রহস্য উদঘাটনের প্রথম সুত্র কাছে চলে এসেছে। এখন সেটার মধ্যে যে ঠিক কি আছে তা খুজে বের করে অধরার মাঝে অধরা হারিয়ে গেছে কিনা তা বের করতে হবে।

– আচ্ছা নিল তুমি কেনো ক্যামেরাটা নিয়ে আসলে?(ডেভিড)
– জানিনা, কিসের একটা আকর্ষন ক্যামেরাটাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না তাই।

দুজনে কথা বলতে বলতে বাড়ির মেইন গেটে চলে আসলাম। দারোয়ান জমির মিয়ার সামনে আসতেই সে উঠে দাঁড়াল। আমাকে দেখে সে বললো..

– স্যার আপনি কিভাবে জানলেন আমি সকালে দাঁত ব্রাশ করি নাই?
– হিহিহি,তোমার চোখের দুই কোণে এখনো সকালের নোংরা লেগে আছে। তাই আরকি।

জমির মিয়া হলদে দাঁতগুলো বের করে হেসে দিল। আমরা চলেই আসছিলাম। ঠিক তখনি জমির মিয়া হেসে হেসে বললো..

– স্যার আমাকে একটা ছবি তুৃলে দিবেন?
– তুলবে? আচ্ছা ওকে ঠিক করে দাড়াও।

আমি জমিরের একটি ছবি তুললাম অধরার ক্যামেরা দিয়ে। এন্টিক ক্যামেরা। বহু পূরোনো একটি ক্যামেরা। আমি আর ডেভিড বাড়িতে চলে আসলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে আমি আমার সাইন্টিফিক পরিক্ষা ঘরে ঢুকলাম।

– নিল এটা দেখো?

ডেভিডের কথায় সে দিকে তাকালাম। দেখলাম কালো রং এর বাদুড়টি কেমন লালচে রং হয়ে একদম ছোট হয়ে গিয়েছে। আরো বেশ অবাক হলাম বাঁদুড়টির ঠিক গলার পাশে দুটি দাঁগ।

– নিল, বুঝতে পারছো দাগ টা কিসের?
– কামড়ের?
– ইয়েস ব্রো। কাপড়ের দাগ।
– কিহহহ? তবে কি এটা মানুৃষ ছিল? হোয়্যাট দা হেল..তিব্বতের সেই ড্রাকুলার এখানে? (আমি)

আমি আর ডেভিড অবাক চোখে বাঁদুড়টার দিকে তাকিয়ে আছি। কোনো এক কাহিনী তো আছে। কি করবো? একসাথে দুটো রহস্য। অধরা নিখোজ, আর ভ্যামপাইয়ার বাঁদুড়ের এভাবে উদয় হল। জানিনা কি মনে হল বাঁদুড়ের ডি,এন,এ পরিক্ষা করেই আমরা দুজনেই অবাক। আমাদের সন্দেহই ঠিক।

– ও মাই গড নিল, এটা তো আসলেই কোনো বাঁদুড় না।
– হুমম ডেভিড, এটা মানুষ। তবে তাকে ভ্যামপাইয়ার কামড় দিয়েছে। ওহ নো বাংলাদেশে রক্তচোষা? কোন ড্রাকুলারের হাতে পড়তে চলেছি আমরা?
– জানিনা, তবে আমাদের সবকিছু ভাবতে হবে। খুজতে হবে, বেরও করতে হবে। এখন চলো দুজনে মিলে ডায়েরিটা পড়া যাক।

সেদিন সারারাত আমরা অধরার ডায়েরি পড়ে কাটিয়ে দিয়েছি। তেমন কিছুই নেই। কখন কোন সময় কি আবিষ্কার করবে সেসব আগে থেকেই সে লিখে রাখতো। তবে শেষের দিকে কয়েক পৃষ্টা পড়তে যেয়ে অবাক হয়।

সেখানে লেখা, “আমি জানি আমি একজন আবিষ্কারক। আমার মাথায় আবিস্কারের নেশা সবসময় ঘোরে। তবে এবার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবো একটি নতুন কিছু আবিস্কার করে। জানিনা সেটা ঠিক হবে কিনা। তবে তার জন্য আমাকে যেতে হবে নির্জনে কোনো এক ফাকা জায়গাতে। হতে পারে সাহারা মরুভুমি,হতে পারে বাংলাদেশের বান্দরবন এলাকাতে। হতে পারে ভারতের আসামের কোনো এক নির্জনে। বা কোনো গোহাতে আমাকে যেতে। তবে ঠিক করেছি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতে গুহাতে যাবো নতুন কিছু করতে। প্রকৃতি সাহায্য করবে” আর কিছু লেখা নেই। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি। বিকট শব্দে মোবাইলটা বেজে উঠল। আমি ধড়ফড় করে উঠলাম। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।

– হ্যালো? (আমি)
– নিল আমি অধরার মা। কন্ঠে তার উৎকন্ঠা ফুটে উঠেছে। আমি চুপ করেই বসে আছি মোবাইল কানে রেখে। উনি তাড়াতাড়ি বললো..
– নিল একটা খারাপ খবর আছে?
– জি আনটি।
– আমার বাড়ির দারোয়ান জমিয় মারা গিয়েছে। বিভৎসভাবে বাড়ির পাশের রাস্তার কাছে তার লাশ পাওয়া গেছে।
– কিহ??? কিভাবে?
– জানিনা বাবা, তোমার আসো প্লীজ

আমি আর ডেভিব একটু পরই বের হলাম। অধরাদের বাড়ির সামনে আসতেই পুলিশ,আরো কিছু লোকজন ঘিরে রেখেছে সব। আমরা সেখানে যেতেই ইংলিশ ম্যানকে দেখে সবাই আমাদের দিকেই চেয়ে আছে। ভিড় ঠেলে আমরা উক্ত জায়গাতে গেলাম। জমিরের লাশ দেখেই গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল। কি বিভৎসভাবে সে পড়ে আছে। চোখে মুখে যেন কিসে এসে খাবলে মাংস তুলে নিয়েছে। কি সাংঘাতিক দেখতে।

– নিল, এটা কি রকমের মার্ডার? (ডেভিড)
– জানিনা তো। মনে হয় বহুদিনের রাগ মনের আশ মিটিয়ে তাকে মেরেছে।
– কাল তো ঠিকই ছিল হঠাৎ এভাবে কেনো সে মারা যাবে?

প্রশ্নগুলো নিয়ে মাথায় অনেক টেনশন চলে এসেছে। অধরার নিখোজ, ড্রাকুলারের উৎপত্তি আবার জমির মিয়ার এরাকম অস্বাভাবিক মৃত্যু। কি হচ্ছে কি এসব? সব যেন গোলমেলে লাগছে। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে আসলাম। আনটির সাথে দেখা করে বাড়িতে আসতে বিকেল হয়ে গিয়েছে। গেটের কাছে আসতেই ডেভিড বললো..

– বিড়াল পুষো নাকি তুমি নিল?
– নাহ তো,কেনো?
– তাহলে এটা কার বিড়াল? আসা অবদি তোমার বাড়ির গেটের কাছে থাকে সবসময় দেখি। কি সুন্দর দেখতে।দেখো।
– ওহ এটা? এটা তো আমাদের বাড়ির পাশের বাড়ির এক দাদুর বিড়াল। ছোট থেকেই এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়ায়।
– ওহ,নিল একটা ছবি তোলো তো।
– ফোনে তুলবো না। ক্যামেরা থাকতে আবার কিসের ফোনের ক্যামেরা?

ওকে কোলে নিয়ো দাঁড়াও আমি ক্যামেরা নিয়ে আসছি। আমি ডেভিড কে কথাটি বলেই বাড়ির মধ্যে চলে আসি। দৌড়ে এসে ক্যামেরা হাতে নিয়ে আবার বাইরে বের হলাম। যেয়ে দেখি ডেভিড বিড়ালটিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

– ডেভিড,রেডি?
– ইয়েস। তোলো তাড়াতাড়ি।
– ওকে দাঁড়াও তাহলে। ওহ তোমাদের যা লাগছে না। অনেক কিউটি।
– আহ তোলো না তাড়াতাড়ি।
– ওকে ওকে, রেডি এই তু…
– আহহ দাঁড়াও

আমি ক্যামেরার বাটনে চাপ দিতে যাবো তখনি ডেভিড ছোট্ট করে একটি রাগত দৃষ্টি দিয়ে চিৎকার করে আমার দিকে তাকাল। আমি ওর দিকে তাকাতেই বলল..

– ধ্যাত, অসহ্য। এমন বিড়াল দেখি নাই। যখনি তাকে নিয়ে ছবিটা তুলতে গেছি তখনি হিসু করে দিল। ধুরর, ওর ছবি তুমি একাই তোলো। না হয় তুমি দাঁড়াও আমি তুলে দিচ্ছি। (ডেভিড)

– আরে না না, আমি তুলবো না। আমার এসব প্রানী ধরলে কেমন সুড়সুড়ি লাগে। এর থেকে তুমি ভিতরে যেয়ে ড্রেস চেন্জ করো। আমি ওর ছবি তুলি।

আমার কথা শুনে ডেভিড বিড়ালটিকে নামিয়ে চলে যায়। আমি তখনি ছবি তুলে নিই। বেশ লাগছে দেখতে ক্যামেরাতে। এত সুন্দর ছবি উঠছে দেখলেই মনের মধ্যে ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা চলে আসছে। ছবি তুলে আমিও ভিতরে চলে গেলাম। আর বিড়ালটি সেখানেই রয়ে গেল। “নিল, বুঝতে পারছি না কিভাবে কি শুরু করবো। অধরাকে খুজবো নাকি ড্রাকুলার খুজবো?” রাতের খাবার খেয়ে দুজনে ব্যালকনিতে বসে আছি। তখনি ডেভিড কথাটি বললো। প্রথমে যা ভাবছিলাম এই অধরার কেসটাকে নিয়ে এখর তার সাথে আরো একটি কেস জুটে গেছে। তার উপর অজানা এক আতংক। জমিরকে ওভাবে মারা, আবার ড্রাকুলার আসছে। তাও আবার মানুষ। কি যে হবে দেশে বুঝতে পারছি না। মানুষ কি তবে আরো ভ্যামপাইয়ার হয়ে যাবে?

– কথা বলছো না যে? (ডেভিড)
– নাহ মানে ভাবছি।
– ভেবে আর কি হবে?

কাল থেকে আমরা অধরাকে খুজতে বের হবো। তোমাদের দেশে গোহা আছে এমন সব জায়গাতে আমাদের খোজ চালাতে হবে। এখানে যদি না পায় তবে আরো বহুদুর খুজতে হবে। ডেভিডের কথা শুনে মনটা কেমন যেন করে উঠল। কারন অধরাকে দেখি না। খুব ভালো লাগত মেয়েটাকে। দেখতে গোলগাল চেহারা। সাইন্টিস্ট হয়েও কোনো প্রকার গোমড়া হয়ে কথা বলতো না। হাসিখুশি দেখতে। প্রথম দেখাতেই মনের অনুভুতিগুলো কেমন নেড়ে চেড়ে উঠত। আর সেই অধরাকে আমি খুজে বের করতে পারবো না সেটা কি হয়?

– হুমম ডেভিড। কাল এটাই করতে হবে। অধরাকে আগে খুজতে হবে তারপর বাঁদুড় রহস্য তারপর জমিরের মৃত্যুর কারন কি। সব সব খুজে বের করতেই হবে।

– হুমম চলো এখন ঘুমায় পড়ি। না হলে আবার সেদিনের মত বাঁদুড় আসবে।

ডেভিড হেসে হেসে কথাটি বললো। ডেভিডের হাসি দেখলে আমার ভয় করে। কেমন যেন বিদঘুটে,দেখলে মনে হয় ডেভিড কি আসলেই জীবত প্রানী? কিন্তু ওর চালচলন তা প্রকাশ করে না। স্বাভাবিক হয়ে কথা বললেও হাসিটা যেন প্যারালাল থেকে আসছে মনে হয়। কতবার বলেছি এভাবে না হাসতে। কিন্তু সে হাসবেই।

– তুমি যাও আমি পরে যাচ্ছি। আর ভয় নেই আমি এবার বাঁদুড় দেখলে তোমাকেই ডাকবো। গুড নাইট।

আমি কথা শেষ করে দিয়ে ইজি চেয়ারে বসলাম বেশ আয়েশ করে। ডেভিড আর কিছু না বলে সোজা হেটে রুমে চলে যায়। আমি অরনির ডায়েরি পড়তে লাগলাম। কখন যে অনেক রাত হল বুঝিনি। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল আবারে কালকের মত করে। আমি কাঁচ নামিয়ে দিলাম। আমার একতলা বাড়ি থেকে পাশের সেই দাদুর দুইতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়। দুই তলার কোণার রুমে থাকেন দাদু। রোজ ঘরের বাতি জ্বালিয়ে বই পড়েন গভীর রাত অবদি। আমি সে দিকে চেয়ে আছি। হঠাৎ খ্যাক খ্যাক শব্দ শুনলাম। দাদু তার রুমের জানলার পর্দা তুলে বাইরে তাকাল। তখনও শব্দটা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কে যেন বেশ চিৎকার করছে। মানুষের চিৎকার না। তবে দাদু দেখার চেষ্টা করছে যে কোথায় হচ্ছে এমন। তারপর তিনি পর্দা নামিয়ে চলে গেলেন। তার কিছুক্ষন পর চিৎকারও থেমে গেল। আমি কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকালাম। সেরাকম কিছু চোখে পড়েনি।

“ও আমার মিও তোর এটা কি হল? কে মারলো তোকে এভাবে?” কথাটি শুনেই চমকে উঠি। এটা পাশের বাসার দাদুর গলা। জোরে জোরে তিনি কথা বলছেন। কিন্ত কেনো? আর মিও? মানে দাদুর বিড়ালের নাম মিও। ওর আবার কি হল? কে মারলো? আমি বিড়ালটিকে খুব আদর করতাম তাই তাড়াতাড়ি বের হলাম দাদুর বাড়ির দিকে। দাদুর বাড়িতে যখন ঢুকলাম দেখি ওনার গেটের পাশে মিও পড়ে আছে। দাদু কান্না করেই দিয়েছে। আমাকে দেখেই দাদু বললো..

– নিল তুই বল মিও কি করো বাড়িতে যেয়ে খাবার চুরি করে? কত ভালো স্বভাবের ও। সারাক্ষণ তোর বাড়ি আর আমার বাড়িতে আসা যাওয়া করে। কিন্তু দেখ সেই সন্ধ্যা থেকে এসে আমি ডাকার পরও আমার কাছে না এসে বাইরে ছিল। আর দেখ কে তাকে মেরে ফেলেছে।

আমি দাদুর কথা শুনে কিছুই বললাম না। কারন ততক্ষনে আমার সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে। মিও এর মৃত দেহটা দেখে আমার যেন চোখের পলকও পড়ছে না। কারন মিও ও ঠিক সেই জমিরের মত করে মরে পড়ে আছে। চোখে মুখে সারা গায়ে মাংস খুবলে নেয়া। হৃতপিন্ড থেকে তাদের হৃতপিন্ড বের করে নেয়া। কি বিভৎস দেখতে লাগছে মিও কে। কিন্তু কেনো? এটা কি করে সম্ভব? জমিরকে না হয় মারছে হয়ত কোনো কারন থাকবে তবে মিও কে কেনো মারবে? কি কারন থাকবে? আর দুজনেরই মৃত্যু সেম। কি কারন হবে? কি রহস্য হবে? নাহ মাথাটা গোলাচ্ছে। আমি আর দাঁড়ালাম না সোজা চলে আসলাম।

ড্রয়িং রুমে এসে সোফাতে বসলাম। সারা শরীর আমার ঘেমে গেছে। ড্রয়িং রুমের এক পাশে একটি কাঁচের টেবিল টিভি রাখা। টিভির দিকে চোখ যেতেই সেই টেবিলে রাখা ক্যামেরার দিকে চোখ গেল। শিরদাঁড়া বেঁয়ে যেন মনে হল শীতল কিছু চলে যাচ্ছে। হাত পা কাঁপতে লাগল। কারন জানিনা কেনো মনে হচ্ছে ঐ দুটো মৃত্যুর কারন এই ক্যামেরাতে তোলা ছবি। সুত্র থেকে বলা যাচ্ছে জমিরকে আমি ছবি তোলার পর তার ঠিক রাত তিনটা বাজার সময় সে মারা যায়। কাল রাতে মিও এর চিৎকার শুনেছি ঠিক একটা গভীর সময়ে। যা হিসাব করলে দেখা যায় রাত তিনটা। তবে কি ক্যামেরাটি কোনো সাধারন ক্যামেরা নয়? ইটস এ কিলার ওয়ে? না না আমার পরিক্ষা করতে হবে। ক্যামেরাটি নিয়ে আমি বাইরে বের হলাম দৌড়ে।

এ এলাকাতে আমার একজন শত্র আছে। শত্র বলতে সবার শত্রু। যে কিনা নিচ জাতের লোকদের অপমান করে। কষ্ট দেয়। বিক্ষুক দেখলে পেটায়। আমি দৌড়ে ওনার বাড়ির পাশে আসলাম। লোকটির নাম রমেজ। রমেজ এ সময় বাজারে যাবে ওর বাড়ির পাশের গলি দিয়ে । আমি সেই গলির ঠিক মুখের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর দেখলাম রমেজ আসছে। আমি গলির একটু ভিতরে ঢুকলাম। কেউ নেই। উনি আসতেই আমি ছবি তুলে নিলাম। কি নিখুত ছবি। কোনো খুত নেই,যেন সৌন্দর্য সব এই ছবিতে ঢেলে দেয়া হয়েছে।

– কি ব্যাপার নিল, তুমি আমাকে না বলে ছবি নিলে কেনো?
– রমেজ ভাই চিন্তা করবেন না। আপনাকে ছবিতে বেশ মানাচ্ছে। আসলে নতুন ক্যামেরা কিনেছি তো তাই ভাবলাম আপনার একটা ছবি তোলা যাক।
– ওহ, ঠিক আছে যাও তোমার কাজে যাও।

আমার কাজ শেষ। আমি সোজা চলে আসলাম নিজের বাড়িতে ডেভিড কে ডাকলাম। ওকে এ ব্যাপারে কোনো কথা বললাম না এখন। সময় আসুক তাকে সব জানাবো। এখন কেবল অপেক্ষার পালা। আজ না হয় একটু বাড়িতেই থাকি। যদি আমার ধারনা সত্যি হয় তবে এই ক্যামেরা আমার লাগবেই। রেখে দিতে হবেই হবে।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত