কেউ জানেনা (রহস্য গল্প)

কেউ জানেনা (রহস্য গল্প)

পাড়া গাঁয়ের একটা রাস্তার ধারে বসে আছি। আমার পাশে ছগির মুন্সি নামক এক মানব বসে আছে। শীতকাল হওয়াতে আমরা শীতে জড়সড় হয়ে বসে আছি। ছগির মুন্সি মহা উৎসাহে বিড়ি টানছে। তার ভাষ্য মতে বিড়ি নাকি শীতনাশী। আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। বিভিন্ন জিনিসে আসক্ত ব্যাক্তিদের একটা অদ্ভুত অভ্যাস হচ্ছে এরা যে জিনিসে আসক্ত তারা মনে করে সেই জিনিসটা সর্ব রোগের মহাঔষধ।এই ধরেন,আপনি যদি কোন গাঁজাখোরকে বলেন আমার পায়খানা হচ্ছেনা,আমার কোষ্ঠ কাঠিন্য। সাথে সাথে সে বলবে নিয়ম করে তিন বেলা গাঁজা খান সেরে যাবে। আরেকজন যদি এসে বলে আমার হার্টের সমস্যা। তাকে হয়তো দেওয়া হবে ৬ বেলা গাঁজা সেবনের বিধি।

রাত ১টার মত বাজে। পাড়াগাঁ বলে আরো বেশি রাত মনে হচ্ছে। দূরে কুয়াশার কারণে না বোঝা গেলও আমি জানি রাস্তার ২ পাশে অনেক দূর পর্যন্ত ক্ষেত। বামের ক্ষেতের পর আছে “আলিগো বাগিচা” বলে এক বিশাল জঙ্গল। আমাদের থেকেও হাত দশেক দূরে একটা বিরাট শিমুল তুলার গাছ।
-এই তুলা গাছ নিয়ে একটা ভূতের কাহিনী শুনবেন??? পাশ থেকে বলল ছগির।
-বল।
-আজ থেকে অনেকদিন আগে আমার আব্বা এক রাতে এই গাছের নিচ দিয়ে বাড়ি ফিরতেছিলো। ২০/২৫ বছর আগে তো আর এত ঘর বাড়ি ছিলো না!! উনি যখন ফিরছিলো তখন রাতের ১০ কি ১১টা। কিন্তু তখনকার দিনে এটা নিশুতি রাত। এই গাছের নিচে আসার পরে আব্বা দেখে লম্বা দাড়িওলা, জুব্বা পরা এক লোক এই গাছের মগ ডাল থেকে নিচে নামছে। অনেকটা ডাব গাছ থেকে মানুষ যেভাবে নামে সেভাবে!
আমি কাঁটায় ভরা শিমুল গাছটার দিকে তাকালাম। কিছুটা ভয় লাগা শুরু হল।

আমি এই গায়ে বেড়াতে এসেছি। মেঘনা নদীর কাছাকাছি একটা জায়গা। বেশির ভাগ মানুষের পেশা মৎস্য শিকার মানে জেলে। ছগিরও একজন জেলে। তাকে সর্বক্ষন আমার সাথে ফিক্সট করে দেওয়া হয়েছে । আমাকে সে এলাকা দেখাবে কাম দেখে শুনে রাখবে। গ্রামের পাশেই মেঘনা নদী। নদীতে একটা বিখ্যাত চর আছে। নাম বজলুর চর। সেই চরে জোয়ারের সময় পানি উঠে যায়। তাই সেখানের ঘর গুলো লম্বা বাঁশের উপর। অনেকটা মাচান ঘরের মত। গরু-মহিষও থাকে মাচানের উপর।
কাল সকালে আমি বজলুর চর দেখতে রওনা হব। সাথে থাকবে ছগির।
মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত কবির নাম ছগির। কিন্তু আমার পাশের ছগিরের সাথে কবি শাহ মুহাম্মদ ছগিরের কোন মিল নেই। আমার পাশের ছগির ইউসুফ-জুলেখা লিখে না, সে শুধু বিড়ি ফুঁকে। তার প্রধান খাদ্যের তালিকায় আছে বিড়ি।

কিছুক্ষণ পর আমি ছগিরকে বলল, আচ্চা! আপনি তো নদীতে মাছ ধরেন। তো, কোন দিন কি ভুত-টুত কিছু দেখছেন??
ছগির এবার তার নিজের জীবনের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করলো। আমাকে বলল, আপনি শহুরে মানুষ, শিক্ষিত। আপনি নিশ্চয় এই কাহিনীর কোন দারুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন।
কোন এক বর্ষাকালের কথা। ছগিরের বয়স তখন ১৫ কি ষোল। মাছ ধরার জন্য তারা সাধারণত বিকেলের দিকে নৌকা নিয়ে রওনা হয়। মাছ ধরে ফিরতে ফিরতে অনেক সময় মধ্যরাত হয়ে যায়। সেদিন সে আর তার এক জেলে বন্ধু যার নাম মতলব মাছ ধরতে রওনা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর বৃষ্টি হচ্ছিলো। মাছও উঠতেছিলো বেশ।অনেকটা অস্বাভাবিক পরিমানে মাছ পেলো তারা। এত বেশি মাছ তাদের জন্মেও কেউ পেতে শুনেনি তারা। মাছ ধরতে ধরতে তারা কখন যে গভীর নদীতে চলে গেলো সেটা তাদের খেয়াল ছিলো না। নদীর এই স্থানে সচরাচর জেলেরা মাছ ধরতে আসেনা। রাত প্রায় শেষের দিকে।

এমন সময় তারা দেখলো আকাশে এক আলোর কুণ্ডলী। সেই কুণ্ডলী নেমে গেছে সোজা নদীর পানির ভিতরে। ফলে ঘুর্নিঝড়ের মত একটা অবস্থা হল, কিন্তু সেই কুণ্ডলী স্থির হয়েই রইলো। কিছুক্ষণ পর তারা দেখলো সেই কুণ্ডলীর ভিতরে আকাশ থেকে অনেক গুলো বিকটদর্শন প্রানি নামছে। মানুষের মত কিন্তু মুখে হাতির মত শুঁড় আছে। চারপাশের নদীর পানি শান্ত। প্রায় অনেকক্ষণ ছিলো সেই আলোর কুণ্ডলী। প্রাণী গুলোর মধ্যে অনেক সুন্দর এক মহিলাও ছিলো। অসাধারণ সুন্দর।দেখে মনে হল সে তাদের রানি। প্রানী গুলোর গায়ে কোন পোশাক ছিলো না। তারপর যখন ভোর হয়ে এলো, তখন আলোর সেই কুণ্ডলী বন্ধ হয়ে গেলো। প্রাণী গুলো ধীরেধীরে আবার আকাশে উঠে গেলো।
পরে তারা গ্রামে এসে বয়স্ক কিছু জেলেকে ব্যাপারটা জানায়। তাদের মধ্যে আক্কাস মাঝি বলে আশিউদ্ধ এক বৃদ্ধ জেলে তাদের নদীর সে স্থানে আর মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য উপদেশ দেয়। যারাই সীমাহীন সাহস নিয়ে ২য় বার কুণ্ডলীর কাছাকাছি গিয়েছিলো তারাই আর নাকি জীবনেও ফিরে আসেনি।

বেশ কিছুদিন পরে ছগিরের বন্ধু মতলবকে গ্রামে আর পাওয়া যায়নি অনেক খোঁজা খুঁজি করেও। মতলব হারিয়ে গেছে তা সে আজ থেকে ১৫ বছর আগে। কেউ জানেনা সে কোথায়!! অনেকে নাকি শেষ দেখেছে মধ্য রাতে মতলব একটা নৌকা নিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে।
-সত্যি আর মতলব ফিরে আসেনি??
-বিড়ি আরেকটিতে আগুন ধরাতে ধরাতে ছগির বলল সত্যি। কাল আপনেরে মতলবদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। এখন চলেন বাড়ি যাই। রাত তো কম হলনা!!!

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত