পুষ্করিনী

পুষ্করিনী

অভি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুকুরটার দিকে। ওখানে কেউ নামে না। পুকুরটার নাকি দুর্নাম আছে। সে অনেকবার নামতে চেয়েছে।কিন্তু তার বাবার কড়া নিষেধাজ্ঞার সাথে ও পেরে উঠেনি।আজ বাবার অফিস থেকে অাসতে একটু দেরি হবে।বাড়ির চাকর নিতাই ওর খেয়াল রাখে।ওর খাওয়া-দাওয়া,স্কুলে যাওয়া,টিফিন দেওয়া, স্নান করা ইত্যাদির দায়িত্ব নিতাই এর ওপর পরেছে।মোহনবাবু তাকে সতর্ক করে বলেছিলেন অভি যেন বাড়ির পাশের পুকুরটার ধারে কাছেও কোনোভাবে যেতে না পারে।আর সেই কারনেই নিতাই পাছে অভি  পুকুরে কোনক্রমে গিয়ে পড়ে তাই সর্বদা তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়।তবে আজ একটু ব্যতিক্রম হয়েছে নিতাই অভির  জন্য রাতের খাবার তৈরি করে ডাইনিং রুমে রেখে বাগানের ফুলগাছে পানি দিতে গিয়েছে।অভি সোফায় বসে অঙ্ক কষছিল।নিতাইয়ের অনুপস্থিতি টের পেয়ে সে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল পুকুরে যাওয়ার জন্য।সে বাড়ির বাইরে বের হয়েছে। এবং পা টিপে টিপে একদম আস্তে আস্তে পুকুরের দিকে চলেছে যাতে নিতাই টের না পায়।একসয় সে থমকে দাঁড়াল।সে পুকুরের মাঝে দেখতে পেল তার মায়ের মতো একজন মেয়েমানুষ তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। আর বলছে,” আয় আয়, আমার সোনামনিক আমার কাছে ফিরে আয়।তোকে ছাড়া আমি যে অনেক কষ্টে আছি।”

প্রায় সাথে সাথেই অভি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।সে বুঝতে পারল ইনিই কার মা।পুষ্করিনী। ছবিতে যেরকম দেখেছিল ঠিক সেরকম। বাবার রুমে টাঙানো রয়েছে তার মা পুষ্করিনীর বড় একখানা বাঁধানো ছবি।ফর্সা টুকটুকে গায়ের  রং।মাথায় আংশিক  ঘোমটা।কপালে  লাল টিপ।সিঁঁথিতে ঘন করে  লেপ্টে দেওয়া সিঁদুর।মুখ নয় যেন পদ্মফুল। গোলাপের পাঁপড়ির মত ঠোঁট।টানা টানা চোখ।স্বর্নালঙ্কার যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে সে দেহে। মুখে স্মিত হাসি যেন ঝরে পড়ছে তার একমাত্র স্নেহের সন্তানের জন্য।সত্যিই সে রূপের কোনো তুলনা হয় না।

অভি অনেকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে পুষ্করিনীর দিকে তাকিয়ে থাকল।এরপর সস্মোহিতের মতো তার মায়ের দিকে এগোতে শুরু করল।

ওদিকে নিতাইয়ের খেয়াল হলো অভির কথা ।বাগান পরিচর্যার ব্যস্ততার কারণে সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল তার কথা।সে দ্রুতপদে বাড়িতে প্রবেশ করল এবং বারান্দার সোফায় দেখল অভি নেই।দুরুদুরু বুকে ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখে একই অবস্থা।এরপর তার আর বুঝতে বাকি রইল না কি ঘটেছে।সে দ্রুত  বাড়ির বাইরে বের হলো।ছুটতে লাগল পুকুরের দিকে।ততক্ষণে অভি প্রায় পুকুরের কিনারে এসে পড়েছে।নিতাই এসে পড়তেই  সে পুকুরে প্রায় হাঁটুজল পর্যন্ত নেমে গেল।হঠাৎ নিতাই থমকে দাঁড়াল পুকুরের মাঝে চোখ রেখে। অবাক চোখে দেখল পুকুরের মাঝে অর্ধডোবা অবস্থায় পুষ্করিনী। তার দু চোখে যেন আগুন ঝরছে।মুখের সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্য উবে গিয়ে পরিনত হয়েছে ভয়ংকর পিশাচিনীতে।নিতাই বুঝতে পারল তাকে কি করতে হবে।সে তৎক্ষনাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল পুকুরে। অভি ততক্ষণে পুকুরের মাঝখানে চলে গিয়েছে।নিতাই সাঁতরে পুকুরের মাঝে  যেতেই অভি তাঁকে ধাক্কা দিল।সে খানিকটা পিছিয়ে গেল।কিন্তুু তাকে পারতেই হবে। আর  একটু হলেই সব শেষ।অভি আর কোনও দিনও ফিরে আসতে পারবে  না। নিতাই মোহনবাবুকে কথা দিয়েছিল তার সমস্ত দিয়ে সে অভিকে আগলে রাখবে।এরপর কোনমতে অভির পেছনে গিয়ে তাকে ধরতে চেষ্টা করল।অভির গায়ে যেন আসুরিক শক্তি ভর করেছে।কিন্তু সে তার মনকে দৃঢ় করে কোনোমতে অভিকে আটকে রাখল যাতে সে পানিতে তলিয়ে না যায়।কিন্তু পরক্ষণেই যা দেখল আতংকে তার বুক হিম হয়ে গেল।পুষ্করিনী এগিয়ে আসছে।দু  চোখে আগুনের হল্কা যেন তাকে গ্রাস করতে মুখিয়ে আছে।আর নিতাই প্রাণপণ চেষ্টা করছে অভিকে আটকে রাখতে।

হঠাৎ নিতাইয়ের মাথা ঘুরতে শুরু করল। পানিতেই অজ্ঞান হয়ে গেল।

তিন দিন পর নিতাই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করল। তার পাশের বেডে অভি শুয়ে আছে। অভির পাশে মোহনবাবু। হঠাৎ নিতাইয়ের আবার মাথা ঘুরতে  শুরু করল।

এর পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত।নিতাই সুস্থ হওয়ার পর মোহনবাবু অভিকে নিয়ে একটি আলাদা ফ্ল্যাটে উঠেন।কিন্তু আজও নিতাইয়ের মনে তোলপাড় শুরু হয় ঐ বিভীষিকাময় রাতের কথা স্মরণ হলে।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত