আমরা তিন জন।
আমার দুই বন্ধু ফয়সাল আর মাহি এবং আমি নূর। আমরা ৩ জনই ঢাকা থাকি। আমরা প্রাই আমাদের আড্ডায় ভৌতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। তবে এই পর্যন্তই শেষ। কখনো ভূত দেখার চেষ্টা করি নি। আমরা ৩ জনই এবার HSC পরিক্ষা দিয়ে অবসর।
তো একদিন ফয়সাল আর মাহি একবার আমাদের পাড়ার চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো। এমন সময় আমি গিয়ে উপস্থিত হই। গিয়ে দেখি তারা ভূত নিয়েই আলোচনা করছে। আমি বল্লাম,
– কিরে তোরা ইদানীং এতো ভুত নিয়ে আলোচনা করছ কেন? (আমি)
– আর বলিস না, মাহি একটা ভূতের প্রেমে পড়ছে আর আমি তাকে পরামর্শ দিচ্ছি কিভাবে ও ভুতটাকে পটাবে। (ফয়সাল)
– ধুর, মজা নিস নাতো। শুন নূর তোকে বলি আমার মামার বাড়ি শিমুল নগরে। কাল মায়ের সাথে এ কথায় সে কথায় জানতে পারি সেখানে একটা অনেক পুরান বাড়ি আছে। সেই রাজার আমলের। আমিও দেখেছি বাড়িটা। কিন্তু কাল মা বলেছে সেখানে নাকি ভুত থাকে। কোনো এক রাণীর ভুত। সেই বাড়িতে যে একবার পা রেখেছে কখনো বেঁচে ফিরতে পারে নি। ঐ গ্রামের মিন্টু মিঞাও নাকি গিয়েছিলো ভুত দেখবে বলে। পরে ওনার লাশ নদীতে পাওয়া যায়। সারা শরীর নাকি নীল ছিলো। তাই আমি ভাবছি আমরাও গিয়ে যদি একবার ট্রাই করি। যদি ভুত থাকে তাহলে দেখা হয়ে যাবে আর না থাকলে অন্য মানুষদের মিথ্যা ভয়টাও কেটে যাবে। কি বলিস? (মাহি)
– তোর মাথা খারাপ হইছে নাকি? দেখলি না তোর মা বলল কেউ কখনো সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারে নি। আমি নাই ভাই এসবে। (আমি)
– হে হে এসব ফালতু, আমিও নাই এসবে। (ফয়সাল)
– আরে আমরা সবাই সব ঠিক করেই যাবো। আমাদের সুরক্ষা নিয়েই তো যাবো। তাছাড়া সবাই এখন অবসর একদিক দিয়ে ঘুরাও হয়ে যাবে। আর ওখানে গিয়ে যদি দেখি বেশি ভয়ঙ্কর অবস্থা তাহলে না হয় আর এসব ভুত টুত দেখতে যাবো না। আমাদের গ্রামটাই ঘুরে আসবো। কি বলিস? (মাহি)
– হে এটা মন্দ হবে না। (ফয়সাল)
– আচ্ছা তুই সব আজ রাতে প্লেন করে রাখিস কাল সব শুনবো। তার পর না হয় দেখি কবে যাওয়া যায়। এখন আমি যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বায় বায় গাইজ। (আমি)
– ওকে।
পরের দিন সকালে নাস্তা করছি আর তখনই ফয়সালের কল।
– কিরে কই তুই? (ফয়সাল)
– খাই। (আমি)
– কারে খাস রাক্ষসী? (ফয়সাল)
– তোরে খাই। তোরা কই? (আমি)
– আমি পুকুরপাড়ে বসে আছি মাহি আসে নাই এখনো। তুইও নাই। (ফয়সাল)
– আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি। তুই মাহিকে কল কর। এখন বায়। (আমি)
– আচ্ছা। বায়। (ফয়সাল)
নাস্তা খেয়ে গেলাম পুকুরপাড়ে। গিয়ে দেখি ফয়সাল এখনো একা বসে আছে।
– কিরে মাহি আসে নাই?(আমি)
– না। (ফয়সাল)
এমন সময় মাহির ডাক। আমাদের কাছে এসে বল্ল ওর সব প্লেন করা হয়ে গেছে।
– বলে ফেল চটপট। (ফয়সাল)
মাহি বলতে শুরু করলো।
– শুন আমরা কাল রওনা দিবো শিমুল নগর। যেতে যেতে বিকাল হবে। গিয়ে সে দিনটা মামার বাড়িতে বিশ্রাম করে পরের দিন বের হয়ে যাবো নাস্তা খেয়ে। তার পর গ্রামের সবার থেকে ওই বাড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার পর আমারা যাবো ওই বাড়িতে। (মাহি)
– দেখ বেশি ভয়ঙ্কর কিছু হলে কিন্তু আমি যাবো না। (ফয়সাল)
– আচ্ছা তাহলে আমিও যাবো না। (মাহি)
– আমাদের সুরক্ষা নিয়ে কি ভাবলি? (আমি)
– তোরা সব দোয়া মুখস্থ করে নিস যেগুলা পড়লে ভুত আর ধারে কাছেও আসবে না। বিশেষ করে আয়তুল কুসরি। (মাহি)
– হে বুঝলাম তোর আজাইরা প্লেন। (আমি)
– ওকে তাহলে কাল সকাল ১0 টায় বাস স্টেশনে চলে আসিস জামা কাপড় আর তোদের যা যা লাগে সব নিয়ে। (মাহি)
– আচ্ছা। আর বিকালে আসিস চায়ের দোকানে আড্ডা দিবো। (আমি)
এরপর সবাই যার যার মতো চলে গেলাম।
পরের দিন সকালে সবাই সবার মতো করে তৈরি হয়ে বাস স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। সবাই ভালোই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। ফয়সাল তার DSLR নিয়ে এসেছে। তার পর ৩ জনই বাসে উঠে পড়লাম। বাসের লম্বা জার্নি শেষে শিমুলনগরে গিয়ে পৌঁছালাম 3 টার দিকে।
– উফ রোদের কি তেজ। জ্বলে গেলাম। (আমি)
শিমুলনগর স্টেশন থেকে মাহির মামার বাড়ি যেতে 30 মিনিট সময় লাগে আর ভেনে করে যেতে হয়। তো আমরা একটা ভেন নিলাম। তিন জনই উঠে গেলাম। সবাই কথা বলছি। ফয়সাল তার DSLR দিয়ে আসপাশের ছবি তুলছিলো। যাওয়ার পথেই ওই বাড়িটা পরে।
– দেখ তোরা এটাই সেই বাড়ি। (মাহি)
– ওয়াও! কয়েকটা ছবি তুলে নেই। (ফয়সাল)
আমি বাড়িটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলাম। বাড়িটা দেখতেই ভুতুড়ে। ভেন চালক হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
– কি বাড়িটায় যাবেন নাকি? (চালক)
– হে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। যাওয়াটা কি উচিৎ হবে? (ফয়সাল)
– ভুলেও এই বোকামি করবেন না। গেলেই মরন। এ পর্যন্ত যতো লোক এই বাড়িতে গেছে কেউ ফিরা আসতে পারে নাই। ২-৩ দিন পরে সবার মৃত দেহ পাওয়া গেছে। (চালক)
আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। মাহি চালকের সাথে মজা করে বলল:-
– মামা আমি মারা গেলে আমার লাশটা এই বাড়ির ভিতরই কবর দিয়েন তারপর আমিও এই বাড়িতে ভুত হয়ে ঘুরবো। (মাহি)
কথা বলতে বলতে আমরা মামার বাড়ি পৌঁছে গেলাম। ঘরে ডুকতেই দেখি মাহির মামা। সবাই সালাম দিলাম। মাহি আগে থেকেই বলে রেখেছিল আমরা যে যাবো। তাই তারা সব ঠিক করে রাখছে। আমাদের সাথে কুশোল বিনিময় করে আমাদের রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো। সন্ধ্যায় সবাইকে ডাকা হলো নিচে যাওয়ার জন্য।
আমরা নিচে গেলাম সন্ধ্যার নাস্তা করার জন্য। মাহির মামি অনেক সুন্দর সুন্দর পিঠে বানিয়েছে। আমরা খেতে খেতে কথা বলছি।
– মামা আপনাদের এখানে আসার পথে যে পুরান বাড়িটা পড়ে ওইটার কাহিনীটা কি? (ফয়সাল)
– ওই বাড়ি নিয়ে তোমাদের কৌতুহল না দেখালেও হবে। (মামা)
-না মানে, ভেন চালকটা ওই বাড়ি নিয়ে অনেক কথা বলছিলে। ঐখানে নাকি ভুত থাকে। (আমি)
– বলো না মামা। প্লিজ। (মাহি)
– ওই বাড়িটা অনেক পুরানো একটা বাড়ি। আমাদের দাদারা ওই বাড়িকে রাজবাড়ি বলতেন। সেই বাড়িতে আগে রাজারা থাকতো। আমার দাদার মুখে শুনা ওই রাজা নাকি অনেক ভালো ছিলেন। রাজার নাম সৌরব রাজা। আর তার ছিলো বেহিসাবি টাকা পয়সা। তিনি সবার উপকারই করতেন। কিন্তু রাজার রাগ ছিলো অসম্ভব। একবার রাগ উঠলে কেউ তাকে থামাতে পারে না। তো রাজার একদিন বিয়ে হলো। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। রাণীমাও নাকি অনেক ভালো এবং গুণো বতি ছিলো। একবার রাণী প্রাসাদের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এমন সময় ঐ বাগানেরই এক প্রহরি এসে রাণীর পায়ে পড়ে কাদতে লাগলেন। রাণী তাকে শ্রদ্ধার সহীত টেনে উঠালেন। প্রহরী রাণীকে বলল রাণীমা আমার খুবই খারাপ অবস্থা। আপনি যদি আমায় কিছু টাকা কড়ি দিয়ে সাহায্য করেন তাহলে খুবই খুশি হই। রাণী প্রহরির হাত ধরে বললেন “ভাই তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত তাড়াছা তুমি এই রাজ্যের একজন সদস্য। তোমাকে সাহায্য করা তো আমার পরম কর্তব্য। তো এমন সময় রাজা তাদের দেখে ফেলে এবং তাদের নামে খারাপ মন্তব্য করে তাদের রাজ দরবারে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বিচার হয়। রাণী ও প্রহরি হাজার বার সত্য প্রকাশ করলেও রাজা তা মানে নি। রাজা তাদের ২ জনকেই মৃত্যু দন্ড দেয়। পরের দিন পুরা রাজ্যের মানুষের সামনে এই রাজ প্রাসাদের ছাদে তাদের দুজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। রাণী সকলের কাছে অনেক সাহায্য চাইলেও কেউ সাহায্য করলো না। তাদের মেরে ফেলা হলো। তার পর রাণীকে এই প্রসাদের বাগানেই মাটি দেওয়া হয় আর প্রহরিকে তার বাড়িতে। (মামা)
– তার পর কি হলো মামা? (আমি)
– তারপর থেকেই শুরু হয় মৃত্যুর খেলা। এক এক করে রাজ প্রাসাদের সবাই মরতে থাকে। রাজা ভয় পেয়ে গেলো। কোনো তান্ত্রিক বা হুজুরও এই মৃত্যুর খেলা বন্ধ করতে পারে নি। সবার মৃত্যু হয়। একদিন রাজাও চলে যায়। রাজাকে প্রসাদের ছাদে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কারোর আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কার কাজ।
তখন থেকেই এই বাড়িটা বন্ধ। কেউ যায় না সেথায়। তবে অনেকেই রাণীকে দেখবে বলে গায়েছিল কিন্তু তাদেরও মৃত লাশ পাওয়া গেলো।
তবে হে, তোমরা কিন্তু ভুলেও ওই বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। (মামা)
– না মামা কখনোই না। (মাহি)
আমি আর ফয়সাল মাহির দিকে তাকিয়ে আছি। সালা এমন অভিনয় করলো মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টাতে পারে না। আমরা আরো অনেক গল্প করি। তার পর রাতে ঘুমাতে চলে যাই। পরের দিন উঠে নাস্তা করে ৩ জনই বেরিয়ে পড়ি গ্রাম ঘুরতে। মাহি বল্লো এখানে তার এক বন্ধু আছে নাম শাওন। তার সাথে কথা বলা যাক এই ব্যাপারে। সে আমাদের সাহায্য করতে পারে। যেই ভাবা সেই কাজ। শাওনের বাড়ি যাওয়ার পর শাওনকে বাড়িতেই পেলাম। শাওনের সাথে মাহি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলো। তার পর শাওনের মা আমাদের মুড়ি আর গুড় দিলো খাওয়ার জন্য। আমরা খেতে খেতে রাজবাড়ি নিয়ে আলাপ করা শুরু করলাম।
– আমরা ওই পরানো রাজবাড়িতে যাবো বলে ঠিক করেছি। তুই যাবি আমাদের সাথে? (মাহি)
– তোদের মাথা ঠিক আছে তো? ভুল করেও ঐ বাড়িতে যাওয়া তো দূর তাকাবিও না। ওই বাড়িতে যে একবার গেছে আর কখনো ফিরে আসে নি। (শাওন)
– আমাদেরও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। কাল ঐ বাড়ির কাহিনীটা শুনে আমি আর নূর দুজনেই অনেক ভয় পেয়ে গেছি। কিন্তু এই মাহির যে কি হল। (ফয়সাল)
– দেখ, ভয়ের পরেই জয় হয়। (মাহি)
– আচ্ছা চল। ঘুরেই আসি। (আমি)
– ঠিক আছে তাইলে আমিও রাজি। (ফয়সাল)
– কি তুমিও যাবে নাকি শাওন? (আমি)
– না না, এই কচি বয়সে জীবন হারাতে চাই না। তোমরাই যাও। ( শাওন)
– আচ্চারে চলি এখন। খোদা হাফেজ। ( মাহি)
আমরা আবার মামার বাড়ি চলে আসলাম। দুপুরে খাবার খেয়ে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মাহি মামাকে বল্লো আমরা আজ রাতে শাওনদের বাড়িতে থাকবো তাই মামা কিছু বল্লেন না। তবে কেনো জানি বলেন দিলেন ভুলেও যেন রাজবাড়িতে না যাই। আমরা যাবো না বলে চলে আসলাম।
আমরা ৩ জনই রাজ বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কে জানি আমাদের ডাকছে মনে হচ্ছে। আমি বল্লাম কিরে না গেলেই নয়?
– ধুর ভিতুর ডিম। [মাহি আর ফয়সাল এক সাথে বলে উঠলো]
আমরা মেইন গেইট টা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
– বাড়িটার সামনে দাঁড়া তোরা, আমি ছবি তুলি। ( ফয়সাল)
তারপর আমরা পর পর অনেক গুলো ছবি তুল্লাম।
– চল এবার ঘরে ডুকা যাক। (আমি)
আমরা ঘরে ডুকে দেখি পুরাই ভুতুড়ে অবস্থা। মাকরসার জাল, কেমন একটা বাজে গন্ধ। আমরা আসার সময় অনেক গুলো মোম, দেয়াশলাই আর চার্জ লাইট নিয়ে আসি। রাতের খাবার ও হোটেল থেকে কিনে আনি। আমরা আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকি। উপরের দিকে একটা সিড়ি উঠে গেছে। দুইপাশে অনেকগুলো ঘর। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সব ঘর। সব থেকে বড় রুমটা মাহি আর ফয়সাল নিলো থাকার জন্য। তার পাশের রুমটা আমার জন্য।সব রুমেই প্রায় একটা করে কারু কাজ করা বড় খাট আর এক সেট সোফা। কিছু কিছু রুমে কয়টা আলমারিও আছে। বিকালে পুরা বাড়িটা ঘুরা শুরু করলাম। অস্বাভাবিক কিছুই ছিলো না বাড়িতে। তাই আমার আর ফয়সালের বিশ্বাস হয়ে গেছিলো এগুলো ফাউল। তাই আমাদের মনেও কোনো ভয় ছিলো না আর। সন্ধ্যায় সাথে করে নেওয়া খাবার খেলাম। তারপর জুটিয়ে গল্প। হঠাৎ বাতাসে ঘরের জানালা খুলে গেলো। যেহেতু বাতাসে জানালা খুলেছে তাই সেদিকে বেশি নজর দিলাম না। তারপর ঘুমাবার সময় হলে ফয়সাল আর মাহি তাদের রুমে আর আমি আমার রুমে গিয়ে শুলাম। খুব ক্লান্তই লাগছে। তাই মোবাইলে গান লাগালাম। কিছুক্ষণ পরেই মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলো। ধরে দেখি চর্জ শেষ।
– একি এইমাত্রই তো ৫৫% চার্জ ছিলো। (আমি)
একটু ভয় করলো। তবুও লাইটটা অন করে ঘুমিয়ে পরি। হঠাৎ দড়জায় খট,খট শব্দ। চোখ খুলে দেখি ঘর অন্ধকার। তাড়া তাড়ি লাইট খুঁজতে লাগলাম। লাইট পেয়ে লাইট অন করে দড়জা খুল্লাম। কেউকে দেখতে না পেয়ে ভাবলাম ফয়সাল আর মাহি বুঝি আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তাই ওদের ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি ওরা গল্প করছে।
– দেখ ফাইজলামি করস কেন? তোরা কি ভাবচছ আমার দড়জায় নক করে চলে আসলে আমি ভয় পাবো? (আমি)
– কিহ? কই আমরা তোর দরজায় নক করলাম? (ফয়সাল)
– তোরা করস নাই নক? (আমি)
– কই নাতো। (ফয়সাল)
চিন্তায় পড়ে গেলাম।
– তোর যদি একা শুতে ভয় করে তাহলে এই রুমে শুতে পারস। একটা বড় সোফা তো আছেই। (ফয়সাল)
ভেবে দেখলাম এটাই ঠিক হবে। তাই আমি সোফায় আর ওরা খাটে। আমরা সবাই তখন ঘুমাচ্ছি। এমন সময় একটা বিকট আওয়াজ হলো। মনে হচ্ছে আর একটু জোরে হলেই কান ফেটে যেতো। আমরা ৩ জনই ঘুম থেকে উঠে গেলাম। সবাই ভয়ে শেষ। পুরো ঘরটা ধোঁয়া ধোঁয়া লাগছে। এমন সময় চার্জ লাইট টাও নিভে গেলো। ফয়সাল সেটাকে বার বার বাড়ি দিয়ে জ্বালাতে চাইলেও সেটা জ্বলে নি। তাই ফয়সাল তার পাশে রাখা আরেকটা টর্চ লাইট খুঁজতে লাগলো। এমন সময় মাহি মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো আর ধুম করে একটা আওয়াজ হলো। ফয়সাল লাইট টা তাড়াতাড়ি জ্বালালো। আমরা দেখলাম মাহি মাটিতে পড়ে গেছে আর মাথায় হাত।
কেউ নাকি ওর চুল ধরে টান মেরে মাটিতে ফেলে দিছে। মাথা আলুর মতো ফুলে গেছে। আমি বল্লাম আওয়াটা নিচ থেকে এসেছে।
– চল গিয়ে দেখে আসি কাহিনীটা কি? (মাহি)
আমি একটা টর্চ আর ফয়সাল একটা টর্চ নিয়ে আমরা ৩জন নিচের দিকে নামা শুরু করলাম। ৩ জনই ভয়ে গুটিয়ে আছি।
– সামনে কি এটা? মানুষের মতো? (আমি)
– কে ওখানে? কে ওটা? ( মাহি)
ফয়সাল টর্চ মারলো ওইদিকে। আর তার পর আমরা যা দেখলাম তা কখনো ভুলার মতো না। লাল শাড়ি পড়া এক মহিলা। চুল গুলো সব সাদা। জিব্বাহ বাহিরে। মুখের মধ্যে পচে-গলে যাওয়া মাংশ। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ। এটাই সেই রাণীমা। যাকে ফাঁসিতে দেওয়া হয়। এটা দেখে মাহি দৌড় দিতে গিয়ে আমার সাথে ধাক্কা লাগে।
– ফয়সাল মাহির শরীর এতো ঠান্ডা কেনো? (আমি)
– কি বলস? (ফয়সাল)
আমি আবার ওই মহিলার দিকে লাইট মারতেই দেখি ওই মহিলা নেই।
ফিছনে ফিরে দেখি মাহি নেই।
– ভয় পেয়ে দৌড় দিলো দেখলিনা? নিশ্চিত রুমে চলে গেছে। চল রুমে গিয়ে দেখি। (ফয়সাল)
আমরা রুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ ফয়সালের গায়ে কিছু একটা পড়ে। ফয়সাল লাফ দিয়ে উঠে। আমি আলো মারতেই দেখি রাণীমা ফয়সালের কাধে পিছন থেকে ওনার মাথা দিয়ে আছে। জিব্বাহ বাহির অবস্থায় বলতে লাগলো:- মরবি তোরা, তোদের মেরে তবেই আমি বিশ্রাম নেবো। দিয়ে যা তোদের প্রাণ আমায় দিয়ে যা।
সমস্ত ঘর কেপে উঠলো। মহিলাটা ফয়সালের হাত ধরে টানছে। কিন্তু তখনো তার চোখ বন্ধ। হঠাৎ করে চোখের পাতা খোলে আর সাথে সাথে ভিতর থেকে রক্ত পরা শুরু। আমি ফয়সালকে কোনো মতে ছাড়িয়ে তাড়িতাড়ি রুমের দিকে দৌড়ে যাই। কিন্তু মাহিকে গিয়ে পেলাম না। হঠাৎ আমি দেখলাম মাহি মাটিতে পড়ে আছে। আমি মাহিকে ডাকতে গিয়ে দেখি মাহির মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। ঠিক সেই যায়গা দিয়ে যেখানে মাহি ব্যাথা পেয়েছে। আমি মাহিকে ডাকতে লাগলাম। ফয়সাল এসে মাহিকে চেক করে বলে মাহি আর নেই। আমি আর ফয়সালের তখন মরা মরা অবস্থা। তখনই আমি বুঝলাম মাহির শরীর কেনো ঠান্ডা ছিল। মাহি অনেক আগেই মারা গেছে। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম কিছু একটা আমার শরীরে হাত বোলাচ্ছে। আমি ভয়ে ফয়সালের দিকে তাকালাম দেখি ফয়সাল চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– কিরে কি হইছে তোর? (আমি)
– পিছনে তাকা। (ফয়সাল)
পিছনে তাকানোর সাথে সাথে দেখলাম সেই মহিলা। এবার তাকে টর্চ দিয়ে দেখা লাগে নি। তার শরীর আগুন লাল। আমরা ভয়ে দৌড়াতে লাগলাম। ভয়ে সব সূরা ভুলে গেছি। মুখ দিয়ে কিছু আসছে না। আমরা দৌড়ে নিচে নামি আর দেখি মাহি নিচে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে প্রাণ যায় অবস্থা।
– কিরে আমায় ছেড়ে পালাচ্ছিস? আমরা তো সব কাজ এক সাথে করতাম তাহলে মরনে কেনো আমায় একা ফেলে দিলি। তোদের ও আমার সাথে যেতে হবে। হাঁ হাঁ হাঁ ( মাহি)
আমি ফয়সালের হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলাম। বল্লাম ফয়সাল ভয় পেলে মরতে হবে। তুই সব ব্যাগ গুলা গুছিয়ে নে। আমি রুমের দরজা অফ করে দিলাম। ফয়সাল ব্যাগ গুছাতে লাগলো। বাহিরে সব ভেঙ্গে ফেলছে কেউ একজন।
হঠাৎ বাড়ি কেপে উঠলো। আমি আমার ব্যাগ থেকে ছোট একটা দোয়ার বই বের করে আয়তাল কুসরি পড়তে থাকি। রাজবাড়িটা তখনো থরথর করে কাপছে। হঠাৎ সব শান্ত হয়ে যায়। ফয়সাল তার ব্যাগ আর মাহির ব্যাগ নিলো আর আমি আমার ব্যাগ নিলাম। এবার দোয়া পড়তে পড়তে দরজা খুললাম। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে সদর দরজা খুলতে গেলে সেটা আর খুলে না। ফয়সালকে বললাম ধাক্কা দিতে কিন্তু তবুও খুললো না। আমিও চেষ্টা করলাম তবুও খুললো না। এবার আর পারছি না। ক্লান্ত আমরা।
– আমি কি তোদের সাহায্য করতে পারি? (মাহি)
এ বলে মাহি আমার পা ধরে টেনে নিয়ে গেলো সিঁড়ির কাছে। মহিলাটা ফয়সালের গলা ধরে উপরে ছুড়ে দিলো।
– মাহি আমাদের ছেড়ে দে মাহি। (আমি)
মাহি আমার চুল টেনে ধরে আছে আমি কোনো মতেই ছুটতে পারছি না।
মহিলাটা ফয়সালের মাথাটা যেই গলা থেকে আলাদা করতে যাবে অমনি ফজরের আযান দিলো। মহিলাটা চিৎকার করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেলো আর মাহি আমায় ছেড়ে দিলো এবং আমার থেকে দুরে যেতে লাগলো।
– পালা তোরা পালা! চলে যা ( মাহি)
আমি আর ফয়সাল মাহির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি। মাহি চলে যাচ্ছে। আমি গিয়ে সদর দরজা খুললাম। দেখি মাহির মামা ও আরো অনেক লোক বাহিরে দাড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে মামা এসে বল্লো মাহি কই?
– মাহি নেই মামা! মাহি নেই। (ফয়সাল)
আমি আমার জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরার পর দেখি আমি মামার বাড়ি। পাশে ফয়সাল। মামি ও আছে মামি কান্না করছে। আমাকে ফয়সাল ধরে উঠালো। আমি ফয়সালের দিকে তাকিয়ে কেদে দিলাম। ফয়সালও কান্না করছে। কিছুক্ষণ পর মাহির মা এলো। মাহির মাকে আমরা সবটা বল্লাম। মাহির মা আমাদের সাথে আর কোনো কথা বললেন না। সবার চোখে পানি। আমরা ৩ টায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসার সময় মামাকে বলি,
– মামা আপনি কিভাবে জানলেন আমরা ওই বাড়িতে? (আমি)
– রাতে আমি শাওনদের বাড়ি কল করি তোমরা ঠিক ঠাক আছো কিনা বা খাবার খেয়েছো কিনা জানার জন্য। কিন্তু শাওন বল্লো তোমরা সেখানে নেই। তখন আমার আর বুঝার বাকি রইলো না কিছুই। আমি সবাইকে নিয়ে রাজবাড়িতে চলে যাই। কিন্তু হাজার চেষ্টার পরেও কিছুই করতে পারলাম না। ( মামা)
আমরা সবাইকে বিদায় দিয়ে ভেনে উঠে পড়ি। মাহির মা আমাদের সাথে এলেন না। আমরা থাকতে চাইলে আন্টি আমাদের অপমান জনক কথা বলে বের করে দেয়। এটাই স্বাভাবিক।
আসার পথে আবার বাড়িটা সামনে পড়ে। ফয়সাল আর আমি দুজনেই বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। মাহি বলেছিল সে মারা গেলে তাকে যাতে ওই বাড়িতেই রেখে আসে। সে এখন ওই বাড়িতেই।
– মাহি তুই ভালো থাক। আমাদের ক্ষমা করে দিস আমরা তোকে বাঁচাতে পারি নি।-
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক