রাত ১১ টা বাজে আয়ান এখনো বাসায় ফেরেনি, আমার কেমন যেন আজ অন্য দিনের তুলনায় খুব বেশিই ভয় করতেছে।বাসায় আমি আর শাশুড়ি দুজন মহিলা মানুষ এত বড় একটা বাসায় একা।আমার শাশুড়ি তো অসুস্থ নিজের পায়ে উঠে দাড়াঁতে ও পারেন না। এমন অবস্থায় যদি আমার কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে ও শাশুড়ি মা কিছু করতে পারবেন না।ওনার সেই ক্ষমতা নেই, আয়ানকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছেনা,আজ আসুক ও বাসায় তখন বুঝাবো,কতদিন বলেছি বাসায় ফিরতে যেন দেরি না করে।কিন্তু ও তবুও মাঝে মাঝে কেন যে এত দেরি করে।
নাকে কিছু একটা পোরার গন্ধ আসছে এই যা আমি চুলায় কিছু বসিয়ে আসিনি তো?? উফ আজকাল বড্ড বেশি ভুলে যাই আমি, দৌড়েঁ গেলাম রান্নাঘরে, একি এই গরম পানির পাতিল খালি হয়ে পুরে গেলো কি ভাবে? আমার সম্পূর্ণ মনে আছে পাতিলে পানি গলা পর্যন্ত ভরা ছিলো, তাহলে ১০ মিনিটে পানি শেষ হয়ে পাতিল পুরলো কি করে? এত অবিশ্বাস্য ঘটনা,জলদি করে পাতিল চুলা থেকে নামিয়ে আগুন নিভিয়ে দিলাম,হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমাকে আরাল থেকে দেখছেকিন্তু চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম কোথাও কেউ নেই।অথচ আমার মন মানতে চাইছেনা, কেমন জানি একটা অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে।
এমন সময় শাশুড়ির ঘর থেকে কিছু একটা পরার শব্দ ভেসে আসলো,এগিয়ে গেলাম দেখতে ঘরে গিয়ে দেখি সব ঠিক আছে কিন্তু শাশুড়ির মুখে কেমন একটা ভয়,আমি ওনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মা কি হয়েছে? উনি তো কথা বলতে পারছেন না একটু আগেই তো ওনার সাথে কথা বলে গেলাম হঠাৎ শাশুড়ি মায়ের কি হলো।শাশুড়ি মা ইশারায় বুঝালেন ওনার গাল দেখতে ওনার গাল দেখে তো আমি আতংকিত হয়ে উঠিপুরো পাচঁ আঙুলের ছাপ পরে আছে ওনার গালের উপরএটা কোনো মানুষের হাতের ছাপ হতে পারেনা কারন এত বড় হাত কোনো মানুষের থাকেনা।
শাশুড়ি মায়ের এমন অবস্থা দেখে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারলাম এখানে কেনো কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে।
বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে কেউ শাওয়ার ছেড়ে গুনগুনিয়ে গোসল করছেএমন আওয়াজ আসছে। মনে অনেক ভয় দেখার সাহস হচ্ছেনা কিন্তু এভাবে বসে থাকলে ও তো চলবেনা।ধীর পায়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম তখনো পুরো পরিষ্কার শব্দ ভেসে আসছিলো আল্লাহ আল্লাহ করে দরজাটা খুলে ফেললাম, দরজা খোলার পর দেখি কেউ নেই, একটা বড় শান্তির নিশ্বাস নিলাম। উফ আবার রান্নাঘরে জিনিষ পত্র ভাঙার শব্দ হচ্ছে এবার তো আরো বেশি ভয় হচ্ছে,আরো একবার সাহস করে রান্নাঘরে এগিয়ে গেলাম তখন কারেন্ট চলে গেলো।
সাথে আকাশে ও বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো ১ মিনিট আগে ও দেখেছি আকাশে চাদঁ দেখা যায় এমন পরিষ্কার আকাশ ছিলোএই অল্প সময়ে এত মেঘ জমাট হয়ে গেলো তার উপর এমন একটা সময় কারেন্ট ও চলে গেলো কেমন একটা জঘন্য অনুভূতি লাগছে।এখন লাইট কোথায় পাবো, আর মোমবাতি কোথায় রেখেছি ঠিক মনে ও নেই, হাতে মোবাইল ছিলো মোবাইলের টর্চ জ্বালালাম অল্প আলোতে কিছু দেখতে পেলাম না ৫ সেকেন্ড পর মোবাইলের টর্চ ও নিভে গেলো। সারাদিন চার্জ দেয়ার পরে ও চার্জ শেষ হয়ে গেলো। অনুমান করে করে শাশুড়ি মায়ের ঘরে যেতে চাইলামতখন কে যেন আমার হাত চেপে ধরলো।
আমি চিৎকার করে উঠলাম হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছি। অন্ধকারে কাওকে দেখা ও যাচ্ছেনা বিদ্যুৎ এর আলো মাঝে মাঝে ২/৩ সেকেন্ডের জন্যে আলো দিয়ে যাচ্ছে,। তবে অদ্ভুত বিষয় হলো যে হাতটা আমার হাত চেপে ধরেছে আমি কেন সেই হাতকে ধরতে পারছিলাম না।ভয়ে গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে ধীর ধীর গলায় অনেক কষ্ট করে আয়ানকে ডাকছি আয়ান ও আসার কোনো খবর নেই।কিছুক্ষণ জোরাজোরি করার পরে সেই হাতটা নিজে থেকে আমার হাত ছেড়ে দিলো। তখন একবার জোরে বিদ্যুৎ চমকালো সেই বিদ্যুৎ এর আলোয় দেখতে পেলাম এক লোক যার পুরো চেহারা ঝলসে পরছে এমন মনে হচ্ছে সদ্য কেউ লোকটার চেহারায় এসিড নিক্ষেপ করেছেকিন্তু লোকটার মুখে একটা জঘন্যতম পৈশাচিক হাসি ফুটে আছে।
বিদ্যুৎ এর আলো নিভে গেলো মুহূর্তেই সাথে ওই লোকটা ও উধাও হয়ে গেলো। কারেন্ট চলে আসছে দরজায়,কলিংবেল বাজছে মনে হয় আয়ান চলে আসছে। দরজা খুলে আয়ানকে দেখে কলিজা শান্ত হয়েছিলোজড়িয়ে ধরে এক নাগারে অনেক গুলো কিল গুষি দিলাম ওকে,আয়ান শুধুই মুচকি হাসছে এমনিতে কিছুই বলছেনাতারপর দুজনে সোফায় বসে বিশ্রাম নেবো মনে পরলো শাশুড়ি মায়ের কথা আমি সব খুলে বললাম আয়ানকে, আয়ান তখনো কিছু বলছেনাএমন সময় আবার দরজায় কলিংবেল দরজা খুলতে যাবো আয়ান আমার হাত ধরে রাখছে ছাড়তে চাইছেনা হাত চেপে আছে জোরে।
মনে পরলো একটু আগে যে কারেন্ট ছিলোনা তখন যে আমার হাত চেপে ধরছিলো এখনো সেরকমই লাগছে আর আয়ানের হাত এত্ত ঠান্ডা হলো কি করে। আয়ানকে অনেক বলে বুঝিয়ে তারপর গেলাম দরজা খুলতে দরজার ওপাশ থেকে আয়ান আমায় জড়িয়ে ধরে স্যরি বলতে লাগলো দেরি করে আসার জন্যে কিন্তু আমি তো Shocked,এই মাত্র না আয়ানকে সোফায় বসা রেখে আসলাম তাহলে দরজার বাইরে থেকে কি করে আসলো আয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি দরজার বাইরে গেলে কি করে? এখন না ওই ঘরে ছিলে?
আয়ান হাহাহা করে হেসে উঠে ও ভাবছে আমি মজা করছি তারপর আয়ান এমন করে হাসায় আর ওকে কিছু বলার মুড ছিলোনা আয়ান জিজ্ঞেস করলো মা কি করছেন চলো মায়ের ঘরে যাই, আমি আয়ান দুজনে মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি মা তো পুরোপুরি ঠিক, তাহলে কতক্ষণ আগে যা ঘটলো ওগুলো কি ছিলো? মনে হলো কোনো এক শিতল বাতাশ বয়ে গেলো পাশ দিয়ে মৃধু সুঁরে কে যেনন বলে গেলো আজ তো বেচেঁ গেলে।