নিরবতা আর রাহ্মসপুরীর রাজকন্যা

নিরবতা আর রাহ্মসপুরীর রাজকন্যা

ইরাবতী আর নিরবতা দুই বোন,আজ তাদের ১৬ বছর পুরন হয়েছে, আজ তাদের জন্মদিন,২ জন ২ জন অনেক ভালবাসে,

তারা বড় হয়েছে দায়মার কাছে, জন্মের সময় নাকি তাদের মা মারা যায়, কিন্তু এরকম একটা শুভ দিনে ঘটে যায় অঘটন ইরা

কে পাওয়া যাচ্ছে নাহ
ইরা আর নিরু ফুল তুলতে যায় তখন ইরা নিরুর থেকে দুরে চলে গিয়েছিল তারপর সারা বন দায়মা আর নিরু খুজেছে পাইনি
দায়মা বলল নিরু ইরা কে পাওয়া যাবে নাহ, ওর যে ১৬ বছর পূর্ন হয়েছে ও ফিরে গেছে ওর নিজ দেশে, ইরা রাহ্মসপুরীর রাজকন্যা

একদমে কথাগুলো শেষ করল দায়মা।নিরু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কি বলছ তুমি এসব দায় মা।
দায়মা বলল যা বলছি ঠিক রে মা,তুই হলে রামচন্দ্র পালের রাজকন্যা অনেক কষ্টে তোর মা তোকে এখানে দিয়ে গেছে আর রহ্মা করার

জন্য দেবতার কাছে থেকে ইরাবতী কে নিয়ে এসেছে যাতে তোদের মাঝে বন্ধুত্ব হয় আর তোকে যেনো মরতে না হয়। নিরু চোখ দিয়ে

অঝুরে অশ্রু পড়ে যাচ্ছে। দায়মা এসব কি বলে?? সব কি সত্যি।দায়মা বলল নিরু মা কাদিস নাহ তুই, তোকে ইরাবতীকে শেষ করতে

হবে নাহলে যে তোর সাথে পুরা রাজ্যকে শেষ হতে হবে। নিরু ঠুকরে কেদে উঠে বলে না দায়মা একথা আমাকে বলো না, ইরাকে আমি

কখনো মারতে পারবনা,নিজে মরতে পারি ওকে পারবনা।দায়মা বলল নিরু তোর বাচা মরার সাথে জরিয়ে আছে গোটা রাজ্যের বাচা মরা,

তোকে পারতেই হবে আর ইরাবতী এখন আর মানুষ না, ও রাহ্মসে পরিণত হয়েছে, ও তোর সাথে কাটানো সব মুহুর্ত ভুলে গেছে।নিরু মাথায়

অন্য কথা খেলছে আর না ভেবে দায়মাকে বলেই ফেলল দায়মা নিরু যদি সব মনে পড়ে আর মানুষ হয়ে যায় তাহলে কি আমরা সবাই বেচে

যাবো আর আমার নিরু কে পেয়ে যাবো । দায়মা উত্তরে বললেন তা আমি জানিনাহ কিন্তু একজন জানতে পারে তুই বরং তার কাছে যা মা।
ইরা শান্তির নিঃষাস ফেলে বলল কিভাবে যেতে হবে আমাকে বলে দাও। দায়মা নিরু কে বলল বন পেরিয়ে নদী পাবি সেই নদী পার করে পাবি

একটি ভয়ংকর জংগল সেখানে বাস করে এক জাঞ্জাজুলা ( প্রানীর নাম)তাকে মারতে পারলে সিবনা নামে এক পরি মুক্তি পাবে তার এক

অন্যায়ের কারনে মহারানি এই শাস্তি দিয়েছিলো তার কাছে জিজ্ঞেস করলে তোকে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবে, কিন্তু তাকে মারা এতো

সোজা নাহ। নিরু বলল যাবো আমি, যত কষ্টই হক পারতে হবে আমাকে, তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করবে। দায়মা চোখে অশ্রুজল নিয়ে

বলল শুধু আমি নাহ সবার দোয়া তোর সাথে রয়েছে।নিরু- হা দায়মা আমি আর দেরি করতে চায় নাহ এখনি বের হবো দায়মা- আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা।

নিরু তার তীর বর্শা আর ১টি চাকু নিয়ে চলল, বন পেরিয়ে সে নৌকা বানিয়ে নদী পার হলো এদিকে রাত হচ্ছে তার ভয় ভয় করছে কখনো

ইরাকে ছাড়া কোথাও যায়নি,ইরার জন্য কান্না আসছে বুক ভেংগে ১৬ টা বছর একসাথে থেকেছে হোক না সে রাহ্মসী তাতে কি, ভালবাসা তো

ছিলো ওর মাঝে।
নানা জীব জন্তু ডেকে চলেছে সাথে নিরুর ভয় বেড়ে চলেছে হঠাত তার পায়ের মাঝে কি যেন বিধলো ব্যাথায় কুকিয়ে উঠল নিরু, পায়ে কাটা

বিধেছে একটানে খুলে ফেলল কাটাটা,তারপরে আবার হাটা শুরু করলো, গভীর জংগল কখন আসে জন্তুটা কে জানে হঠাত তার সামনে

বিড়ালের মত করে লাফ দিয়ে কিছু আসলো, নিরু কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলোনাহ, ভয় পেয়েছে ভিষণ তখন তার শরীরকে শিহরিত করে

কানে কানে বলল চোখে মারো, চোখে মেরে বের করো, তবে তো পাবে সব প্রশ্নের উত্তর। নিরু আর কোন কিছুর অপেহ্মা না করে তীর ছোরলো

চোখের দিকে ২ টা চোখকে ছিদ্র করে দিলো। সাথে আলোর বিস্ফোরন হয়ে সামনে আসলো অপুরুপ সুন্দরি এক পরী
বলল ধন্যবাদ তুমায় মেয়ে, মুক্তি দিলে আমাকে, বল কি চাও তুমি।
নিরু-আমার একটু সাহাজ্য চাই গো।
পরী-কি সাহাজ্য বলো তুমি আমায়।
নিরু- ইরাবতী রাহ্মস রাজ্যের রাজকুমারীকে কিভাবে মানুষ করা যাবে আর কিভাবে ফিরবে তার সৃতি বলগো তুমি আমায়

(এক নিঃশাষ বলল কথাগুলো)
পরী- জানি আমি কিভাবে তা পারা যায় কিন্তু মেয়ে সে যে বড় কঠিন কাজ।(আতংকিত কন্ঠে)
নিরু- তুমি আমাকে বলে দেও আমি পারব
আমি ইরাবতীর জন্য সব করতে পারি।
পরী-শুনো তাহলে মেয়ে করতে হবে তুমাকে পরিমাণ নদীতে স্নান, তারপর সাধুবাবাকে ডেকে করতে হবে আগুন পাড় সাধনা, সাধনা করে

সফল হলে পাবে এক অস্ত্র সে অস্ত্র দিয়ে বোধ করতে হবে রাহ্মস রানীকে আর তারপর তার অশ্রু দিয়ে বানাবে পায়েস সেই পায়েস খাওয়াবে

ইরাবতীকে। তবেই সে ফিরে পাবে তার সৃতি এবং মানুষে পরিণিতি হবে। তুমি কি পারবে।
নিরু- পারবো।
পরী- এই নেও জাদুর কাঠি, তুমাকে পৌছে দিবে পরিমাণ নদীতে।
নিরু-অশেষ ধন্যবাদ।
নিরু জাদুর কাঠিকে বলতে লাগলো ও জাদুর কাঠি নিয়ে চলো আমাকে পরিমাণ নদীতে।কিছুহ্মনের জন্য কালো অন্ধকারে চারপাশ ঢেকে

গেলো ঝড়ো হাওয়া বইতে লাগলো নিরু পোছে গেলো, নিরু আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো নদীর পানির দিকে যখনি স্পর্স করলো হারিয়ে যাচ্ছে পানি,

উধাও হয়ে যাচ্ছে। কেনো এরকম হচ্ছে বুঝতে পারছে তখনি আবারো সেই শিহরিত করা বাতাস কানে কানে বলল করতে হবে তুমায় নদীর

দেবিকে খুশি তবেই পাবে এর চাবিকাঠি। দ্রুত নিরু জিজ্ঞেস করলো কিভাবে করবো।
আবার সেই চেনা সুরে বলে উঠল রক্ত দেও রক্ত আর অনুভব করতে পারলোনা বাতাস নিরু বুঝতে পারলো তার সাহায্যার্থে চলে গেছে।

কিন্তু সে রক্ত কোথায় পাবো আর কিছু না ভেবে চাকু নিয়ে একটানে হাতে টান মারলো, রক্ত পরতে থাকলো নদীর উপর তারপর

সে আরেকহাত পানিতে দিলো কিন্তু এবার আর পানি উধাও হলো নাহ। সে বুঝলো নদীর দেবী তার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে সে পানিতে নেমে

পরলো উঠে দেখলো তার হাতে কোন হ্মত নেয়। তারাতারি উঠে হাটা ধরলো আবার। সে ১ টি নির্জন জায়গা বেছে নিয়ে ডাকতে থাকলো

সাধুবাবাকে,রাতভর ডাকার পর।
– চোখ মেলে মা
-বাবা আপনি আমাকে সাহাজ্য করুন।
-আমি সব জানি মা, চিন্তা করোনা
তারপর চোখের ইশারায় আগুন জালিয়ে বলল যাও মা, দেও তুমার অগ্নিপরীক্ষা।
নিরু আর কিছু না ভেবে এগিয়ে চলছে ধীর পায়ে তার মনে নেই কোন ভয়, শুধু সে জানে তার ১ টার লহ্ম্য ইরাকে ফিরিয়ে আনা।

সে চোখ বন্ধ করে হেটে চলেছে শরীর পুড়ে যাচ্ছে,জলে যাচ্ছে যাক তাও সে আজ থামবে না। দীর্ঘ ১ ঘন্টা পর সে অনুভব করলো তার

কিছু হইনি তার তো মরে যাবার কথা তাহলে কি সে মরেনি, স্নান করার কারনে। সে চোখ মেলে দেখলো তার হাতে অস্ত্র, সে পেড়েছে।

এখন কোন সময় নষ্ট না করে ইরার কথা ভাবছে, বড্ড মনে পড়ছে, কোনদিন ওকে ছাড়া কোথাও থাকেনি ১ টা দিন না দেখে থাকতে

পারেনাহ আজ কতদিন হল সে রয়েছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে নিরুর, তার ভাগ্যে এমন কেন হলো ভালোই তো ছিলো। নিরু আর সময়

নষ্ট না করে জাদুর কাঠিকে বলল চলো রাহ্মস পরীতে নিয়ে আমায়, আবার সেই অন্ধকার ঝড়ো হাওয়া সে পৌছে গেলে রাহ্মস পড়িতে,

তাকে দেখে রাহ্মসরা হ্মেপে গেছে, নিরু অস্ত্র ব্যবহার করে করছে সব বধ, সব রাহ্মস শেষে ভয়ে তার কাছে কেউ আসছে নাহ।নিরু দেখতে

পেলো রাহ্মসীর পাশে বসে রয়েছে ইরাবতী। চোখ লাল করে তাকাচ্ছে তার দিকে,নিরু একনাগাড়ে চেয়েছিলো শুধু কতদিন পর দেখলো ইরাকে,

যখন দুজনে একসাথে ওকে মারতে এলো নিরু দেরি না করে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলো রাহ্মসী রানীকে ঢলে পরলে মাটিতে তারাতারি সে ধরলো

রাহ্মসীর চোখের সামনে ঘটিটা, চোখের জল পরছে, ভরে গেছে ঘটিটা কিন্তু এদিকে ইরাবতী আঘাত করছে ওকে তো কোনভাবে মারতে

পারবেনা ইরাবতী নিরুর হাত থেকে ঘটিটা নিয়ে উপড়ে ছুড়ে মারলো সব জল পড়ে গেলো ইরাবতী আর নিরুর মুখে। ইরাবতী জ্ঞান হারালো
নিরু ইরাবতী কে ধরে কান্না করতে লাগলো,আবার সেই বাতাস এসে বলল ঘটিতে যা আছে তাই দিয়ে রান্না করো পায়েস তারাতারি। নিরু দেরি

না করে ঘটি নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করলো পায়েস,এদিকে ইরাবতী জ্ঞান ফিরে খুজছে নিরুকে, সামনে এসে দাড়ালো নিরু এবার ইরাবতী

আক্রমণ করলো না সে বলল নিরু আমরা এখানে কেন এটা কই???নিরু খুশিতে জরিয়ে ধরলো কিন্তু তার পেটে এসে বিধিয়ে দিলো বিঃশাষের মুল্য,

নিরু মাটিতে লুটিয়ে পরলো, সে শুধু একটাকথায় ভাবতে থাকলো কি হবে এখন এ রাজ্যের। কি হবে?? নিরু ইরাকে বলল ইরা আমার শেষ ইচ্ছা রাখবি বোন।
-বল তুই তো মরেই যাবি বল রাখবো।
-তোর জন্য নিজে হাতে পায়েস বানিয়েছিলাম খাবি বোন।
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে।
ইরাবতী পায়েস টা খেয়ে হকচকিয়ে উঠলো চিৎকার দিয়ে কেদে বলল
কি হয়েছে তোর?? এই নিরু কথা বল
নিরু বলল ভালো থাকিস ইরা,, নিরু আজ খুশি সে তার রাজ্য রহ্মা করেছে সেই সাথে ইরাকে। মনের আনন্দে শেষ নিঃষাশ ত্যাগ করল নিরু।

আর ইরাবতী চিৎকার করে আকাশ বাতাশ এক করে বলেই চলেছে এই নিরু উঠ তুই উঠ।আমাকে একা রেখে যেতে পারিস নাহ।

……………………………………..সমাপ্ত……………………………….

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত