মৃত্যর শেষ দুয়ার

মৃত্যর শেষ দুয়ার

মাকসুদা আর সজীবের বিয়ের ১ মাস পার হয়ে গেল।একে অপরকে ভালোবেসে তারা এই বিয়ের বাধনে আবদ্ধ হয়।তারাই জানে যে এই বিয়ে নিয়ে কত ঝামেলা আর ঝর তাদের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে।একসময় তাদের বিয়ে আদৌ হবে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহে ছিল।তবে এখন পুরানো স্মৃতি মনে না করাটাই ভালো হবে।সজীব আর মাকসুদা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা কোথায়ও ঘুরতে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।সজীব অফিস থেকে ১৫ দিনের ছুটি আবেদন করল।যেহেতু সজীব অপ্রয়োজন এ কখনও ছুটি চায় না তাই অফিসের বস ছুটি আনন্দের সাথে দিয়ে দিলো আর তাদের থাকার জন্য সুন্দর এক বাংলোর ব্যাবস্থাও করে দিলেন।বাংলোটা পুরান দেখতে হলেও বেশ সাজানো গোছানো পরিবেশ আর চারপাশের গাছ,বাগান,সারিবদ্ধভাবে ফুলের গাছ দেখে মনে হচ্ছে কোন রাজাদের বাড়িতে এসেছে তারা।তবে এটা যেহেতু মহল না আর ততটাও পুরানো নয় সেজন্য তারা এ বিষয়টাকে নিয়ে আর এগুলো না।যেদিন তারা বাংলোতে প্রবেশ করবে তার কিছুদিন আগেই বাংলোটিকে ভালোকরে পরিষ্কার এর ব্যাবস্থা করা হয়।এখানে পরিবেশটা সুন্দর হলেও নিরিবিলি পরিবেশ একরকম।প্রায় ১ কিলোমিটার পথ যাবার পর দোকার আর বাড়িঘরের মুখ দেখা যায় এর পিছনে তেমন কোন ঘর বাড়ি নেই।তারা সকল প্রকার সরঞ্জামাদি নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করে।মাকসুদা বাংলোতে প্রবেশ করেই ঘর গোছাতে ব্যাস্ত।এ মেয়েকে নিয়ে যে কি করবে সেই চিন্তা করতে করতে সজীব টিভি দেখতে চলে গেল পাশের রুমে।বাংলোটা কিছুটা বড় আর দোতলা বিশিষ্ট।উপরে ছাদ রয়েছে আর ৬-৭ টা কামরা রয়েছে।ওরা এক রুমেই থাকবে তাই এত বড় বাড়ি কেন দিয়েছে সেই চিন্তা করতে লাগল।সম্প্রতি সজিব জানতে পারে বাড়ির মালিক এই বাড়টা অনেক কমে ভাড়া দিয়েছে বলে তার বস আর দিতীয় কোন বাড়ি দেখে নি।তাই তো বলি যে কিপ্টুসের পকেট দিয়ে কেমনে এত বড় বাড়ি ভাড়া নিবার মত টাকা বের হলো।তাও সে ভালোমনে করেই তাকে ১৫ দিনের ছুটি আর সাথে এই বাংলোতে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।এরকম সুযোগ অন্য কেউ দেয় না বলে একদিকে বসের শুকরিয়া আদায় করে নিল মনে মনে।মাকসুদা পুরা ঘর গুছিয়ে নিবার পর ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে এবং রুমে গিয়ে সুয়ে পরল।ততক্ষনে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে ফলে সজীব ও আর দেরি না করে সেও সুয়ে পরল।

ঘরিতে তখন ১ টা বাজে হটাত করেই মাকসুদার ঘুম ভেংগে গেল।এমন তো হবার কথা না।কারন মাকসুদা একবার ঘুমালে মরার মতন শুধু ঘুমাতে থাকে আর তাকে উঠানোর মত সাধ্যি কারোর নেই।ঘুম ভেংগে যাবার পর আর তার ঘুম আসছিল না তাই উপায় না পেয়ে পায়চারী করতে লাগল।এদিকে সজীবের দিকে অনবরত চেয়ে আছে তার মায়াবী চেহারার দিকে।কিছু সময় পর মাকসুদা ছাদে চলে গেল আর আর চুপটি করে দারিয়ে রইল।এমনিতেই সে অন্ধকার ভয় পায় তাও আজ যেন এই অন্ধকার কে অনেক আপন মনে হচ্ছে তার।চারিদিকে অন্ধকার নিজ হাত পর্যন্ত দেখা যায় না ওসময়ে একটি নির্দিষ্ট জিনিসের দিকে এক নজরে চেয়ে রয়েছে মাকসুদা।জিনিসটি একটা ঘুরি।অন্ধকারের মাঝেও জিনিসটির অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছিল।হটাত মাকসুদা সেই ঘুরিটিকে নিয়ে পাশে থাকা সুতার রিলে বাধা শুরু করে দিল।আশেপাশে কেউ নেই এই ফাকে তার ঘুরি উরানোর শখ যেগে উঠল মনের ভিতর।চারপাশে কোন বাতাস নেই একদম নিস্তব্দ পরিবেশ।হটাত দমকা বাতাসস বইতে শুরু করল আর সেই বাতাসে ঘুড়ি টা আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে দিল।ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেটা উঠতে লাগল।আর এমন ভাবে উঠছে যেন কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।মাকসুদা এক দৃষ্টিতে ঘুরির দিকে চেয়ে আছে আর বিজয়ী হাসি দিচ্ছে।এদিকে সজিব এর ঘুম ভেংগে গেল হটাত।পাশে মাকসুদার উপস্থিতি না পাওয়ায় হটাত ই বুকের মধ্যো মোচর দিয়ে উঠল।কোথায় যেতে পারে এই দুশ্চিন্তায় এদিক ওদিকে খুজে না পেয়ে অবশেষে ছাদে গেল।ওখানে গিয়ে সে দেখতে পেল কোন এক মেয়ে ভয়ানক মুখ নিয়ে দারিয়ে আছে আর ঘুড়ি উরাচ্ছে।তবে একটা নয় আকাশে সহস্র ঘুরির সাথে পাল্লা দিচ্ছে এ যেন ঘুরির মেলা।মেয়েটাকে অন্ধকার এর কারনে দেখা যাচ্ছিল না তবে মেয়েটার মাথায় কোন চুল ছিল না।হটাত ই মানবী টি সজিবের কাছে আসতে লাগল।তবে একি তার পা তো একটা আরেকটা অর্ধেক কাটা।মনে হয় কেউ কেবল কেটেছে বলে মনে হচ্ছে।সকল সাহস একত্রিত করে সজিব সেই মানবী টির মাথায় সজোরে আঘাত করে।ঢলে অজ্ঞ্যান হয়ে মাটিতে পরে যায়।ভয়ে ভয়ে পকেটে রাখা মিনি টর্চ বের করে তবে তার চেহারার দিকে টর্চের আলো মারতেই চোখে পরে যে এটা আর কেউ না।তারই মাকসুদাপ্রচন্ড ভয়ে সজিব কাপতে থাকে যে কি হচ্ছে এসব তার সাথে।তবে কিছুক্ষনের মধ্যো আজান দিয়ে দেয় এবং আবছা আলো আসতে থাকে।সেই আলো পড়ায় সজিব খুজতে থাকে যে মাকসুদার কিছু হলো কিনা।তবে তার শরীর আগের অবস্থাতেই ছিল।তবে সে যে তার পা কাটা দেখেছিল সেটা কি তাহলে নিছক মনের ভুল।আর কিছু না ভেবে মাকসুদাকে কোলে করে নিয়ে রুমে সুইয়ে দেয়।একটু আগের ঘটনা সে সম্পূর্ন রুপে ভুলে যাবার চেষ্টা করে।তবে হঠাৎ তার খেয়াল হয় যেহেতু সজীব মাঝরাত্রে উঠেছিল তবে এত তাড়াতাড়ি ভোর হলো কিভাবে,আর তার বউ ই বা এত রাত্রে কি করছিল।ঘুম ভাংগার পর সজীব আর এ বিষয় নিয়ে কথা বলল না।অহেতুক দুশ্চিন্তা দিয়েই বা কি করবে এমনিতেও বেচারি কাল থেকে পরিশ্রম করতে করতে অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ড়েছে।সজিব সকাল সকাল বাইরে চলে গেল হাল্কা সতেজ হতে আর প্রায় ১ কিলোমিটার পথ যাবার পরে একটা চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিল।কয়েকজন লোক সে জায়গায় বসে গল্প করছিল এরই ফাকে সজিব ও তাদের সাথে গল্প করা শুরু করে দেয়।এক পর্যায়ে এক মুরব্বী চাচা তাদের বাসস্থান সম্পর্কে জানতে চান।তবে ওই বাংলোর নাম শুনে তারা কিছুটা চমকে ওঠে
–কি হয়েছে চাচা।হটাত মনে হলো অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছেন
–শোন বাবা।তুমি যেই ঘরে থাক ওই ঘরটি অনেক দিন থেকে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছিলো।বাড়ির মালিক বাড়টি বিক্রি করার চেষ্টা করছে তবুও পারছে না।আর কিভাবেই বা পারবে।এই ঘরটি অভিশপ্ত যে ভুলেও এ বাড়িতে বসবাস করবে সেই মরবে।
–আরে না চাচা এগুলা আপনি কি বলছেন হুম।এগুলা এই যুগে চলে না চাচা।এগুলা ভুল তথ্য কিছু মনে করেন না আবার!
–জানি তুমি শিক্ষিত এক ছেলে এগুলা বিশ্বাস করবে না।তবে পরে বিপদে পরলে আমায় স্মরন করবে।

ব্যাপার টা তখন সেভাবে উড়িয়ে দেওয়াও ঠিক হয়নি।সত্যি সেদিন কিছু একটা জিনিস সজীবের চোখে পড়েছিল তবে সঠিক না হওয়ায় ব্যাপারটা অনেকটা চেপে যায় সজীব।এগুলা বিশ্বাস করা ছেলেমানুষি হবে আর এগুলা বাস্তব নয় সব মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র।নিজেকে কোনরকম বুঝ দিয়ে রাতের খাবার সেরে বিছানায় চলে যায় ঘুমাতে।মাকসুদা ঘুমিয়ে পরলেও সজিবের চোখে ঘুম নেই।চোখ বন্ধ করে সুয়ে থাকলেও ঘুম না পড়ার চেষ্টায় ব্যাস্ত।আজ যেভাবে হোক কাল রাতের ঘটনার রহস্য বের করতেই হবে।ভাবতে ভাবতে হটাত চোখ টা লেগে আসে তবে কোন কিছুর স্পর্শ পেয়ে যেগে উঠে।না পাশে মাকসুদাই সুয়ে আসে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১ টা বাজে অর্থাৎ আগের সেই সময়।কিছুটা শান্তি পায় মনে এবং ঘুমাতে চলে যায়।তবে কিছুতেই ঘুম আসছিল না সজিবের হয়তবা আচমকা ঘুম ভেংগে যাবার কারনেই এমনটা হচ্ছে।কিছুক্ষন পর সজীব মাকসুদার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।ভিজা ভিজা লাগছিল তার কাছে।যাইহোক এভাবে কিছুক্ষন মাথায় হাত বুলানোর পর ঘুম ঘুম আসতে থাকে।তবে এরই মধ্যো আচমকা কোন মেয়ে কন্ঠের চিৎকার শুনতে পারে সজিব।এ ডাক তো মাকসুদারই।পাশে ফিরতেই দেখে মাকসুদা নেই অথচ ১ মিনিট আগেই ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।ওতোসব ভাবার সময় নেই এখন সজীবের কাছে।সোজা গিয়ে জানালা হতে নিচে তাকায় তবে এখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়।জোরে জোরে সজীব মাকসুদার নাম ডাকতে থাকে তবুও কোন সাড়া পায় না।আশেপাশে কোন ঝি ঝি পোকার ডাক পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না যেখানে এই কিছুক্ষন আগেই এত চিৎকারের শব্দ হচ্ছিল।সজীব বাইরে যাবে এরই মাঝে খেয়াল করে তার হাতে রক্ত ভরা।একটু আগে মাকসুদার মাথায় যে পানির স্পর্শ পেয়েছিল সেটা কি তাহলে…..না এমনটা কিছুতেই হতে পারে না।তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে পরে সজিব মাকসুদার খোজে।নিচে এসে দেখে মাকসুদা অনবরত জংগলের দিকে হেটেই চলে।অন্ধকারে স্পষ্ট না দেখা গেলেও বোঝা যাচ্ছিল যে এটা ওই হবে।তার নাম অনবরত ডাকতে লাগল তবুও থামছিল না।পিছু করতে করতে একসময় এক সুড়ঙ্গ মতন কিছুতে এসে পরল।মজার ব্যাপার সজীব যতই মাকসুদার নিকটে যায় ততই সে দূরে যেতে থাকে।একসময় সজীব মাকসুদাকে হারিয়ে ফেলে।আশেপাশে অনেক খোজার চেষ্টা করেও পায় না।সজীব খেয়াল করে সে এমন এক যায়গায় এসে পরেছে যেখানে নিজের হাতের আংগুল ও দেখা যায় না।দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এখন এখান থেকে বের হবে কিভাবে যেহেতু অনেক গভীরে ঢুকে পড়েছে ছ।আর মাকসুদাই বা কোথায় গেল?গভীর চিন্তায় পরে গেল সজীব,,,!আচমকা সজিবের মনে হাল্কা ভয় জন্মাতে থাকে।চারপাশে অন্ধকার অনেক।যেহেতু অজানা গুহায় হারিয়ে গিয়েছে ফলে দিনের আলোও হয়ত তার কপালে নেই।অন্ধকারে বাচার জন্য প্রানপনে এদিকে ওদিকে ছুটতে থাকে সজিব।তবে সে মাকসুদাকেও খুজতে থাকে যেহেতু সেও এখানে এসে হারিয়ে গিয়েছে।তাকে ছাড়া কিছুতেই ফিরবে না সজিব।হাটতে হাটতে হটাত তার মনে হতে লাগল যে সে এই যায়গায় প্রথমেও এসেছিল আর একটি সুরংগ মত দেখেছিল।তবে বাইরে থেকে দেখে তার যতটুকু মনে পরে অনেক ছোট হবার কথা সুরংগটির।তবে এখন তো পথ খুজেও পাওয়া যাচ্ছে না।এমন মনে হচ্ছে যেন অচেনা দুয়ার ভেদ করে অন্য জগতে সে চলে এসেছে।চারপাশে ঘন অন্ধকারে মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুদ শব্দ শুনা যাচ্ছে।সেগুলা ভুতের শব্দ মনে না হলেও বুকে বার বার আঘাত দিতে থাকে।হটাত সজিব থমকে দারায়।তার মনে হতে থাকে পিছন থেকে কোন খস খস আওয়াজ তার দিকে এগিয়ে আসছে।সজিবের কপাল দিয়ে অনবরত ঘাম ঝরতে থাকে।খস খস শব্দটা সজিবের ঠিক ১ হাত পিছনে এসে থেমে যায়।মনে মনে যা সুরা মুখস্ত সব পরতে থাকে সজিব।হটাত আচমকা কিছু না ভেবেই দৌর দেয় সে আর একটা কিছুতে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়।পাগলের মত চিল্লাতে থাকে আর সে বুঝতে পারে যে আজ তার জীবনের শেষ দিন।এ সময়েও তার বার বার মাকসুদার চিন্তা হতে লাগল।এরই মধ্যো সজিবের চোখ আটকালো লাল কিছু জিনিস দেখে।দুটা চোখ মত দেখতে কিছুটা আগুনের মত জ্বলতে দেখা যাচ্ছে তার থেকে ঠিক কিছুটা সামনেই।হটাত করেই চারপাশ দিয়ে অট্টঠাসির শব্দ শুনা গেল।এ যেন সহস্র লোক এক ভাবে হেসে চলেছে।সজিব নিজেকে বোঝানোর ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকল তবে কিছুতেই পারছিল না।লাল দুইটা চোখ তার কাছে এসে ডাক দিল।এরপর সজিব জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলল।তবে জ্ঞ্যান হারানোর আগ মুহুর্তে সজিবের কানে কিছু আর্তনাদ এর শব্দ ও কটমট আওয়াজ পৌছাল।

জ্ঞ্যান ফিরে উঠতেই দেখল চারপাশে অনেক আলো দেখা যাচ্ছে।সুরংগটার উপর দিকটা খোলা বিধায় আলো এসে পরছে ভিতরে।রাত্রের কথাগুলা মাথায় আসাতেই সজিব বাইরে দৌর দিল।বাইরে এসে কিছুটা সময় জিরিয়ে নিল তবে দেখতে পেল সাড়া শরীর রক্তে ভরা।কিছুটা ভয় পেয়ে আবার সে যায়গায় ফেরত চলে গেল মাকসুদাকে খোজার উদ্দেশ্য।কিছুদুর যেতেই তার সন্ধান পেয়ে গেল।মাকসুদাকে কোলে করে নিয়ে বাইরে চলে আসল তবে খেয়াল করল মাকসুদার সারা শরীরে রক্ত বটেই মুখেও রক্ত দেখা যাচ্ছে।সবার থেকে নজর লুকিয়ে তারা বাংলোতে ফিরে গেল।কাপর পালটে নিল যাতে কেউ সন্দেহ না করে তবে আজকের ঘটনাটা মোটেও ফেলে দিবার মতন না।আজ তো প্রায় মাকসুদাকে হারিয়ে ফেলেছিল সজিব।নাহ আর না কালকেই চলে যাবে এ বাড়ি ছেরে।মাকসুদা উঠে নাস্তা বানাতে চলে গেল আর সজিব ও তাকে কিছু বুঝতে দিল না
–এই শুনো
–পরে আগে নাস্তা টি তৈরি করে নেই
–হুম করবে তবে শুন এখন।আচ্ছা কাল রাত্রে কি হয়েছিল তোমার কিছুই কি মনে আছে
–কি মনে থাকবে হুম
–মানে রাত ১ টার পরে তুমি কি কোথাও গিয়েছিলে ওয়াশরুম বা এমনি কোথাও
–নাতো।আর এমন প্রশ্ন করলে কেন।রাত্রে জান তো হাজার ঘটনা হলেও আমি উঠি না
–ও আচ্ছা তাই।হাহা কেমন লাগল তোমার।মজা করছিলাম কথা না বলে যাবে কোথায় শুনি
–হুম এবার সরেন।ফাজিল কোথাকার
–আরেকটা কথা ছিল
–না এবার আর সময় নেই
–আমরা আজই চলে যাচ্ছি এ বাড়ি ছেরে
–আজ মানে।কেন কি হয়েছে
সজিব মাকসুদাকে অন্য একটা কথা বুঝিয়ে তাকে ব্যাগ গোছাতে বলে দিল যে সন্ধার আগেই রওনা দিবে এখান থেকে।দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বেচারির মুখ মলিন হয়ে গেছে তবে এত কিছু দেখার সময় নেই।

খাবার শেষে সব কিছু গুছিয়ে রাখে তারা।বিকালের দিক পর্জন্ত সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে তাদের কাছে তবে বাইরে আসতেই মাকসুদা কিছুক্ষন পর গান গাওয়া শুরু করল আচমকা ভাবেই।বাগানে আসার পর এমন মনে হলো যেন কেউ তাদের অনবরত দেখছে।এরই মাঝে মাকসুদা থেমে দারাল আর পিছনের দিকে ইশারা করে বলতে লাগল “ও ডাকছে।”
সজিব পিছনে তাকিয়ে কিছু না দেখতে পেয়ে আবার হাটতে থাকে তবে মাকসুদা কিছুতেই যেতে চাচ্ছিল না।এক পর্যায়ে সজিব মাকসুদার হাত ধরে টানতে থাকে।তবে মজার ব্যাপার যতই মাকসুদাকে টানতে থাকে সজিব ততই পিছে সরতে থাকে।এমন মনে হয় যেন মাকসুদাই তাকে টানছে।এভাবে কিছুক্ষন যুদ্ধের পর আচমকা দরজা বন্দ হয়ে যায় আর চিতকার আসতে থাকে “যা যা আমাদের থেকে দূরে চলে যা।না কাছে আসবি না।তুই ধোকা দিয়েছিস এবার তোকে মরতে হবে।”কিছুক্ষন পর কান্নার শব্দ টের পাওয়া যায় ছেলে কন্ঠের।হটাত সামনে দেখে মাকসুদা হাসছে আর তার মুখ থেকে পানির মত রক্ত বেয়ে চলেছে।হটাত ই মাকসুদার চেতনা ফিরে এল।চারপাশের পরিস্থিতি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিল।সজিবের পা দুটা অসাড় হতে শুরু করল যেন পা দুটাই কোন প্রান ই নেই।এরই মাঝে কোথা থেকে দুটি রক্তহীন ফ্যাকাশে হাত মাকসুদাকে টানতে থাকল।আশেপাশে চিতকার চেঁচামেচি তে পরিবেশ টা আরো ভয়ানক হতে শুরু করে দিয়েছে।একপর্যায় মাকসুদাকে টানতে টানতে বাড়ির দরজা থেকে বাইরে নিয়ে গেল।মুহুর্তেই পরিবেশ টা নিরব হয়ে গেল আর এমন পরিবেশে মনেই হবে না যেন একটু আগে কিছু একটা ঘটেছে।সজিব তার পায়ে শক্তি ফিরে পেয়েছে।দেরি না করেই বাড়ির মেইন দরজা পার হয়ে দেখতে পেল আশেপাশে কোন মানুষের নাম এমনকি চিহ্ন নেই।যেভাবে মাকসুদার শরীর হতে রক্তক্ষরণ হয়েছে তাতে মনে হয় তার বেচে থাকার আশা না করাই ভাল।তবে সজিব মনে প্রানে বিশ্বাস করতে থাকে যে তার মাকসুর কিছুই হয় নি,হতে পারেও না।সজিব হটাত করেই দোটয়ানায় পরে যায়।বাসায় গিয়ে সবার সাথে আলোচনা করবে নাকি এখানে থেকে একাই কোন উপায় বের করবে মাকসুকে বাচানোর।সবার সাথে আলোচনা করলে কেউ হয়ত তার কথা বিশ্বাস নাও করতে পারে।আর এদিকে মাকসুদার গায়েব হবার রহস্য এই ঘরেই লুকিয়ে আছে যেটা ছেরে যাবার জন্য মন সাই দিচ্ছে না।কাউকে বলা না গেলেও সজিব তার কাছের বন্ধু নুর ইসলামকে বাংলোতে আসার জন্য বলল।নুর ইসলাম পৌছানো মাত্রই তাকে সকল ঘটনার খুলে বলল।নুর ইসলাম এই বিষয় টা আরো গভীর ভাবে চিন্তা শুরু করে দিল।
–আচ্ছা সজিব তুমি বললে যে প্রথম বার তাকে ছাদে ঘুরি উরাতে দেখেছিল তাইত?
–হুম আর সে কি ভয়ানক চেহারা।আর আর……
–হুম বুঝলাম।তবে গোটা বিষয় টাকে গভীর ভাবে চিন্তা করেও কোন উপায় বার হচ্ছে না তবে….
–না না এরকম কর না বন্ধু।মাকসুদাকে ছাড়া আমি
–বাচতে পারবে না তাইত।যাইহোক বাদ দাও আগে আমার কথাগুলা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনো।তুমি যেই তথ্য গুলা আমায় দিয়েছ এতে মনে হয় যে এই বাড়িটাতেই বিশাল কোন সমস্যা আছে।তবে মাকসুদার কাছে পৌছাতে গেলে প্রথমে আমাদের এই বাড়ির রহস্য টাকে খুজে বের করতে হবে।আমি নিশ্চিত এই বাংলোতেই কোন না কোন গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে।আর তুমি তো জানই রহস্য উন্মোচন করাই হলো আমার মুখ্য শখ

নুর ইসলাম আর সজিব মিলে তার বসের কাছে চলে গেল আর ওখান থেকে তারা বাংলোর মালিকের ঠিকানাটা পেয়ে গেল।নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে যা দেখল সেটা বিশ্বাস করার মত নয়।কিছু জমির মধ্যো একটা ছোট ঘর দেখা গেল যেখানে আশেপাশে শুধু ময়লা আর আবর্জনায় পরিপুর্ন।দেখে কেউ বলতেই পারবে না ইনিই এত বড় বাংলোর মালিক।সজিব ঠিকানা টা অনবরত মিলানোর চেষ্টা করল।পরক্ষনে কিছু না ভেবেই তারা ভিতরে প্রবেশ করল।বাড়ির মালিক একজন বয়স্ক মহিলা যার বয়স ৬৫-৭০ হবে।মুখে বয়সের ছাপ আর দুর্বল শরীর নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলেন তিনি।বয়স্ক মহিলাটির নাম মাহামুদা মিনি।তাকে সবাই সেসময় মিনি নামেই ডাকত।কিছু কথাবার্তা বলার পর নুর ইসলাম বলতে লাগল
–আচ্ছা কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জানতে পারি আমরা
–জ্বি অবশ্যই বলো
–জ্বি আসলে প্রথমত আপনার এত সুন্দর বাংলো থাকতে আপনি এই ছোট ঘরে থাকেন কেন এটা জানার আগ্রহ ধিরে ধিরে বেরেই চলেছে
–আগ্রহ জিনিশ টি অনেক খারাপ।কখনও এটি তোমায় মৃত্যর দুয়ারে নিয়ে যেতে পারে
–হুম আপনি কি আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন।যদি করে থাকেন তাহলে বাচ্চাদের কে গল্প শুনানোর মতন না বলাই যুক্তিকর হবে
–হাহা বয়স হয়েছে আমার অনেক।আসলে ওই বাসা টি অনেক কষ্ট করে কিনেছিলাম আমি নিজের সর্বশেষ পুজি দিয়ে।বাড়িটির নির্মান কাজ শেষ হবার পর কয়েক বছর বাংলোতে অনেক ভালোই চলছিল।তবে ছেলের কর্মরত যায়গা হতে ট্রান্সফার হবার নোটিশ আসায় ঘর ছেরে দেই আর ওখানে ভাড়া দেই।তবে কি থেকে যে কি হয়ে গেলো ফিরে এসে শুনি দুটি খুন হবার ঘটনা।তারপর থেকে বাড়িটিতে কেউ থাকতে রাজি হল না আর ওখানেই আমার ছেলে……..
–জ্বি বলুন কি হয়েছে আপনার ছেলের?
নুর ইসলাম অনেক জোরাজোরি করতে লাগল তবে মহিলাটি কিছু বলতে রাজি নয়।কি হয়েছে তার ছেলের আর সে এমন কি লুকাচ্ছে।তারা ভেবেছিল এখানে এসে কিছুটা হলেও রহস্যভেদ করতে সক্ষম হবে তবে এখানে রহস্য ক্রমসয়ে বারতে লাগল।আর ককোন কথা না বাড়িয়ে তারা বাংলোর দিকে এগুতে থাকে

–যা হয়েছে এই বাংলোতেই হয়েছে।যদি আমার আন্দাজ ঠিক হয় তাইলে এই খানেই অনেক প্রমান আর তথ্য আমরা পেতে পারি পুরা বাংলো খুজা শুরু করে দিল তারা।যা কিছু সামনে পাওয়া গেল সব কিছুই একত্রিত করে এনে এক যায়গায় রাখা হলো।কিছু ঘুরি পাওয়া গেল যাতে জমে থাকা কিছু লালচে বর্নের দাগ পাওয়া গেল।সেখানে একটি ডাইরি পাওয়া গেল।সজিব আরো কিছু ঘাটলে থাকল তবে নুর ইসলাম ডাইরিটি পরতে লাগল।অস্পষ্ট লেখায় কিছুটা পেজ পরতে থাকে সে।এই আশায় যে এখান থেকেই কিছুটা রহস্য উদঘাটন করা যায় কিনা।
নুর ইসলাম ডাইরির পাতা গুলা খুব খেয়াল করে পরতে লাগল।পরতে পরতে তার চোখ বড় হয়ে গেল।পরে যা বুঝতে পারল তার সারাংশ নিন্মরুপ জুয়েল আর হাসান সম্পর্কে ভাই হয়।এটা আলাদা ব্যাপার তাদের মধ্যো কোন রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও তারা একে অন্যোর জন্য নিকট নিজ ভাইয়ের চেয়েও বেশি কিছু ছিল।ছোটবেলায় তাদের মা তাদেরকে অনাথাশ্রম এ দিয়ে গায়েব হয়ে যায়।ওরা বাবা মায়ের ভালোবাসা না পেলেও তারা একে অপরকে প্রচুর ভালোবাসে।একে অপরের কাছেই একমাত্রে প্রিয়জন আর তাদের জীবনে অন্য কেউ নেই।তবে তারা প্রচুর পরিমানে মেয়েদের ঘৃনা করত।তারা ওয়াদা দিয়েছিল যে লাইফে যে কোন পরিস্থিতি তেই হোক বিয়ে বা কোন প্রকার রিলেশন এ যাবে না।হুম ভালই চলছিল তাদের জীবন তবে হটাত এক ভাই হাসানের জীবনে চলে এল এক রুপবতী মেয়ে।মেয়েটি অনেক মেধাবী ছিল আর যতদুর হাসানের জানামতে খুব পরিষ্কার মন ছিল তার।অনেক সুন্দর করে হাসানের সাথে কথা বলত।শত অপমান সহ্য করেও উর্মি নামের সেই মেয়েটি তাকে মনে প্রানে ভালোবেসে গিয়েছে।হাসান এক তরফা আর কতটা ঘৃনা করবে।বলা যায় এক পাশে ভালোবাসা বেশি হয়ে পরলে অন্য দিকে কিছু না কিছু হলেও ইফেক্ট পরে।হাসানের ক্ষেত্র টারও কোন ব্যাতিক্রম ঘটল না।একসময় হাসানের ও উর্মিকে ভালোলাগতে লাগল।এটা প্রেম কিনা সেটা জানে না সে তবে প্রেমের গল্পের মতন যেহেতু নায়িকা আসলে চারপাশ নিস্তব্দ হয় না কিংবা বুকে কোন চিন চিন ব্যাথা অনুভব হয় না তাইলে হয়তবা এটা মনেরই ভুল।তবে উর্মি কে না দেখতে পেলে হাসানের কাছে দিনটা অসম্পুর্ন মনে হতে থাকে।একসময় উর্মি তাকে প্রোপোজ করে যেন হাসান উর্মিকে বিয়ে করে।হাসান কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায়।

যেহেতু দুই ভাইয়ের রোজগার মাশাল্লাহ অনেক ভালো তাই হাসানের মনে হলো যে উর্মিকে সে ভালো ভাবেই রাখতে পারবে।তবে জুয়েল,ও তো এসব ব্যাপারে কিছুই জানে না।মনে মনে হাসানের অনেক ভয় হতে লাগল যে ব্যাপারটাকে কিভাবে নিবে।যেহেতু মেয়েদের ব্যাপারে কসম রয়েছে আগেই আর এত কিছু হয়ে গেল জুয়েল এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।হয়ত বা অনেক অনেক রাগ হবে,হয়ত ২ দিন কথা বলবে না,হয়ত এই দুই দিন চোখের পানি আর মন উদাস করে কাটাতে হবে হাসানের তবুও এর পর থেকে ঠিকই আগের মত হয়ে যাবে।এ ব্যাপারে বিশ্বাস আছে।তবে ঘরে যাবার সময় অনেক ভয় হতে থাকে হাসানের।প্রথমে একাই যায় ঘরে আর গিয়ে দেখে খাবার টেবিলে জুয়েল তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।ঘরিতে তাকিয়ে দেখে রাত ১১ টা বাজে।খাইছে এবার।

–কোথায় ছিলে ভাইয়া?জান কতটা ভয় লাগছিল আমার।কি হইছে খুলে বলো নইলে এত দেরিতে তাও কোন ফোন ছাড়া লেট করার মানুষ তো তুমি নও
–আসলে আজ একটা কাজ করলাম(হকচকিয়ে বলল ব্যাপারটা)
–কি কাজ ভাইয়া।আর তোমাকে এতটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন।প্লিজ খুলে বলো ভয় হচ্ছে
উর্মি!ডাক দিবার কিছুক্ষন পর এক অপ্সরার আগমন ঘটল।নীল শাড়িতে তাকে দেখতে কোন হিন্দি ছিনেমার নায়িকাদের মত লাগছিল
–উনি কে ভাইয়া
–উনি আসলে তোমার ভাবি
–মানে ১০০০ ভোল্টের শর্ট খেল কথাটা শুনে।নিজ কানে বিশ্বাস করতে পারছিল না গোটা ব্যাপারটা।যে নাড়ী নিজ স্বার্থে জন্মের পর ছেলেকে এতিমখানায় দিয়ে আসতে পারে তারা হাজার হলেও ভালোবাসা কি সেটা বুঝে না।মেয়েরা স্বার্থপর অনেক অনেক স্বার্থপর।তারা শুধু জিত তে জানে,নিজের স্বার্থ অর্জনের জন্য যেকোন কিছু করতে পারে আর সেই নাড়ী কেই তার ভাইয়া ঘরে তুলে আনল
–কি হয়েছে কি ভাবছ এত।আরে না ভাইয়া তুমি যা ভেবেছ সেটা নয়।আসলে আমাদের সকল ধারনাই ভুল ছিল।সত্যি বলছি ভাইয়া উর্মির মন কতটা নরম সেটা একমাত্র আমিই জানি।ও জীবনেও কারো ক্ষতি হোক এটা চায় না।ও শুধুমাত্র আমাকে ভালোবাসে আর অন্য কিচ্ছু না।জানো ভাইয়া এই মেয়ের সাথে কথা না বললে আমি বুঝতেই পারতাম নে মেয়েরা কতটা কোমল হয়।ওরা মন প্রান উজার করে ভালোবাসতে পারে।হ্যা এটা মানছি যে আমাদের মা স্বার্থপর ছিল তবে বাকি রা কি অন্যায় করেছে ভাইয়া।ওদের ও তো একটা মন আছে আর ওরা যদি স্বার্থপর হত তাহলে প্রিয় মানুষের জন্য নিজের শেষ সুখ টাকে বিসর্জন দিতে পারত না।ওরা………….
একভাবে কথা গুলা বলেই চলেছে হাসান।জুয়েল কথাগুলা মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকল আর মনে মনে ভাবতে থাকল যে আজ কোথা থেকে কি ঘটে গেল।এরকম কিছু তো ঘটার কথা ছিল না তবে কেন এমনটা হল।কেনই বা,,,,,,,,,অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলার উত্তর সে পাবে না।আর যেই প্রশ্নের কোন উত্তর হয় না সেগুলা না ভাবাই ভালো।বাইরে দিয়ে ব্যাপার টা কে স্বাভাবিক ভাবার ভান করে থাকলেও ভেতরে ভেতরে অনেক টাই ভেংগে পরতে থাকে সে।একসময় খেয়াল করল হাসান আর আগের মত তাকে সময় দেয় না,ভালোবাসে না,আগের মত কেয়ার নেই।মোটকথা সব ভালোবাসা উর্মিকে দিয়ে দিয়েছে হাসান।সামান্য কিছু অংশ নিয়ে খুশি থাকতে না পারায় একদিন তাদের মাঝে তুমুল ঝগরা বাধে।শেষমেশ হাসান উর্মিকে নিয়ে এই বাংলোতে এসে উঠে।জুয়েল কিছুতেই এ ব্যাপারটাকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।যে ভাইয়া তাকে ছাড়া ৩ ঘন্টা থাকতে পারত না সে আজ ৩ দিন কোন খোজ পর্জন্ত নেয় না।মনে মনে অনেক রাগ হতে থাকে উর্মির উপর।কিছু না কিছু তো করতেই হবে এই ব্যাপারে তবে ঠিক কি করে ফিরে পাওয়া যাবে আগের ভাইয়াকে এই চিন্তায় পরে থাকে জুয়েল।জুয়েল কিছু ভেবে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেল।রাগে দুখে দিন কাটতে থাকল তার।এর মধ্যো তার ভাই একবারও খোজ নিতে এল না।এদিকে উর্মি আর হাসানের জীবন টা অনেক সুখের হতে লাগল দিনে দিনে।হাসান উর্মিকে ছাড়া এক মুহুর্ত যেন থাকতে পারছিল না।হাসান প্রতিদিন উর্মির জন্য বিভিন্ন প্রকারের গিফট নিয়ে আসত।আর উর্মি হাসানের কপালে একটি করে চুমু একে দিতে।এভাবেই চলছিল তাদের হাশি খুশি পরিবার।এভাবে কয়েকমাস পার হয়ে গেল। একদিন উর্মি রাস্তা পার হবার সময় পথ আটকিয়ে ধরল জুয়েল।তার কিছুদুর হাসান দারিয়ে ছিল।হাসানকে দেখে তাদের কাছে আসতে থাকল হাসান এদিকে উর্মি আর জুয়েলের মধ্যো কথাকাটাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছে
–প্লিজ তোমারা বাড়ি ফিরে এস
–তোমার ভাই আর আমি বেশ সুখেই আছি।দয়া করে আমাদের মাঝখানে না আসাই ভাল
–এ তুমি কি বলছ ভাবি।ভাইয়া তো আমার পৃথিবী।আলাদা থাকার তো কোন প্রশ্নই উঠে না
–সেই পৃথিবীর বাসিন্দা এখন একমাত্র আমি
এরই মাঝে হাসান চলে আসে আর উর্মি বলে উঠে
–তোমার ভাই আমায় আজে বাজে অনেক কথা শুনাচ্ছে।আমি নাকি তোমায় ফাসিয়েছি আরো অনেক কিছু বলেছে(কাদো কাদো কন্ঠে)
এরপর আর কি হবার তাদের মাঝে ভুল বোঝাবোঝি টা অনেক গুন বেড়ে গেল।তবে এবার শুধু হাসান নয় জুয়েল ও ঠিক করল জীবনে ওই অমানুষ টার মুখ পর্যন্ত দেখবে না।এভাবে যাবার পর উর্মি হটাত ই হাসান কে বলল
–জোর করে সকল ঝগরা ভুলে গিয়ে ওকে এখানে ডেকে নিয়ে এস যেহেতু সামনে ঘুড়ি প্রতিযোগীতা।তোমারা দুই ভাই তো আবার ঘুড়ি খেলার পাগল।দেখবে ঠিকই সকল অভিমান ভুলে গিয়ে চলে আসবে এখানে
হাসান ও যেহেতু তার ভাই জুয়েলকে অনেক মিস করছিল ফলে এই কথাটায় সে রাজি হয়ে গেল।বাসায় জুয়েল যাবার পর দুই ভাইয়ের মিল হয়ে গেল আর তারা ভালই ছিল একসাথেই।দুই ভাই আর হাসানের বউ এই ছোট পরিবার ভালই চলতে থাকে

ডাইরিতা থেকে ঠিক এতটুকুই জানা গেল তবে এখনও গোটা রহস্য এর কিছুই জানা গেল না।এর পরে এমন কি হতে পারে যার কারনে তারা এসব করছে।সজিব বলেছিল দরজার ওখানে সকল ঘটনাটা ঘটেছে অর্থাৎ ওখানেই হয়তবা কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে।তবে যেহেতু এটা কোন মানুষের কাজ নয় ফলে অনুবিক্ষন যন্ত্র দ্বারা দরজার পরিক্ষা করেও কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না।কোন উপায় না পেয়ে নুর ইসলাম চলে গেলেন সেই চাচার কাছে জিনি বলেছিলেন এই বাংলোর বিপদের কথা
অনেক কষ্ট করে সেই চাচার বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে হাটা শুরু করে দিল তারা।উদ্দেশ্য সেই ভুতুরে চাচা।বলা বাহুল্য কারন চাচার বাড়িটা দেখতেও বেশ ভুতুরে ভুতুরে মনে হচ্ছে।কয়েক টা ডাক দিতেই ভিতর থেকে কর্কট কন্ঠে সেই চাচা আগমন করলেন হাতে একটি লম্বা লাঠি নিয়ে।কিছুটা বোধ হয় চিনতে পেরেছে আর বাকিটুকু পরিচয় দিবার পর চিনতে পেরে গেল সজিবকে
–আচ্ছা চাচা ওই বাংলো সম্পর্কে যেন কিছু বলছিলেন আপনি
–হুম বলছিলাম।আর এটাও জানতাম কোন না কোন একদিন তোমাদের আমার কাছে আসতেই হত
–কিভাবে জানতেন চাচা (কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে)
–এই বাড়িটার রহস্য আমার সবই জানা।এই বাড়িতে যে যাবে সেই ওই মৃত্যর দুয়ারের মোকাবেলায় মারা যাবে।কেউ ওই দুয়ারের সামনে টিকতে পারবে না
–দুয়ার বলতে দরজা তবে চাচা কি মেইন গেটের দরজাটির কথা বলছেন।কেন কি আছে ওই দরজাটাতে।এমন কি রহস্য রয়েছে ওখানে।কি কারনে ওরা………
–তোমার বউ কে নিয়ে গিয়েছে তো!
–হ্যা তবে আপনি কিভাবে জানেন
–আমি জানি কারন ওরা মেয়ে মানুষ একদম সহ্য করতে পারে না।শেষ করে দিবে সবাইকে।কেউ বাচতে পারবে না কেউ না
–কেন মেয়েদের প্রতি ওদের এত ঘৃনা কেন।আমরা বাংলোতে একটি ডাইরি পেয়েছি ওতে তো…….(যা যা লেখা ছিল সেগুলা পুনরায় চাচাকে বললেন)
–তোমরা যেটুকু জান সেটাই যথেষ্ট নয়।আসলে সেদিন যা হয়েছে তার জন্যই ওরা দুই ভাই এতটা ঘৃনা করে মেয়েদের।বলা বাহুল্য সমাজে বা গোত্রে কেউ একজন অন্যায় করলে পুরা সমাজ তার শাস্তি পায় না।তবে তারা এই ব্যাপারটা কে মেনে নেই নি
–কেন!উর্মির ভালোবাসা প্রমান করে দিয়েছিল যে মেয়েরা স্বার্থপর নয়।আর তাদের মধ্যো তো সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছিল তো এসব কেন
–আমি আগেই বলেছি তোমাদের জ্ঞ্যান সীমিত

ওদিন রাত্রে উর্মি তার আসল চেহারা দেখিয়ে দিল।দুই ভাইকে গুন্ডা দিয়ে খুন করিয়ে সকল সম্পত্তি আত্যস্বাদ করে নিল।উর্মি হাসানকে ভালোবাসার জালে বেধেছিল এই উদ্দেশ্য যেন গোটা সম্পত্তি তারা পেয়ে যায়।উর্মি সাধারন কোন মেয়ে নয় ওইসময়ের নামকরা ডাকাত দলের সদস্য ছিল সে।যারা কোন শিশুর উপরেও দয়া করত না।মরার আগে দুই ভাই পরস্পরকে জরিয়ে ধরে উর্মিকে একটা কথাই বলেছিল
“মেয়েদের ঘৃনা করি”
তার কিছুদিন পর থেকেই আচমকা উর্মি আর তার বাকি দলবলকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না।তবে তার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওই বাংলোতে যারা থেকেছে তাদের মধ্যো কোন মেয়ে মানুষই জীবন্ত ফিরে আসে নি
সজিব চরম হতাশার স্বিকার হয় আর প্রচন্ড আকারে ভেংগে পরে আর বলে
–কোন উপায় কি নেই।তাহলে কি আমার মাকসুদাকে আর ফিরে পাব না।আর আমায় কেউ…….
–উপায় আছে
সজিব আর নুর ইসলাম দুজনেই চাচার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে
–কি সেই উপায়–শোন তাহলে!
(নুর ইসলাম আর সজিব মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগল)
মৃত্যর এই খেলায় দুয়ার ই এখন উপায়।তোমরা অনেক টাই সঠিক ছিলে তবে পুরাটা নয়।শোনা যায় জুয়েল আর হাসান মরে যাবার পরে তাদের লাশ কে মেইন গেটের পাশে খাড়াভাবে পুতে রাখা হয়।কোনভাবে ওদের রুহ গুলো অন্য এক জগতের বা অন্য অজানা কিছুর রহস্য পেয়ে যায়।এই গেটের মাধ্যমেই দুই স্থান বা যাই হোক সেটি একত্রিত হয়ে আছে।এ দরজা ভেদ করেই তুমি মাকসুদার সন্ধান পেতে পার।তবে সাবধান এই রাস্তা টা তোমাকে এমন একটি জগতে নিয়ে যাবে যেখানে কোন জীবিত ব্যাক্তি পাবে না,অন্ধকার আচ্ছন্ন যায়গা যেখানে শয়তানদের বাসস্থান।বেচে নাও ফিরতে পার
–মাকসুদাকে ছাড়া এমনিতেও মরার মত হয়ে আছি চাচা।আপনি জানেন না মাকসুদাকে আমি কতটা ভালোবাসি।ওকে হারানোর ভয় যে আমায় তিলে তিলে মৃত্যর দিকে নিয়ে যাচ্ছে
–বুঝেছি তবে আমি এতে কোন সাহাজ্য করতে পারব না
–অন্য কোন সাহায্য লাগবে না আপনি শুধু আমাদের ওই যায়গায় পৌছানোর রাস্তাটুকু দেখিয়ে দিন বাকিটুকু ইনশাল্লাহ আমরাই গুছিয়ে নিব
–আচ্ছা যখন মৃত্যর দুয়ারে যাবাই তাহলে আর দেড়ি কিসের।আজ রাত ১২ টার দিকে তৈরি থেক আমি তোমাদের কাছে চলে আসব
–জ্বি আমরা তৈরি থাকব রহিম চাচা
বাসায় এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিল তবে ১০ মিনিটের জন্য মাত্র।এরই মাঝে কেয়ার ফোন এল
–মাকসুদা কই দোস্ত।ওরে একটু দেতো <3
–দোস্ত ও তো এখানে নেই একটু দূরে গেছে
–কি।তোদের হানিমুনে ও দূরে কোথায় গেল
–মামার বাড়ি গেছে দোস্ত
–মিথ্যা বলিস কেন দোস্ত।কত দিন ওর সাথে কথা হয় না।তোদের হানিমুন বলে এতদিন চুপ ছিলাম তবে না কোন ফোন না কোন ম্যাসেজ।ভুলেই গেছিস আমায়।কই প্রথম বার যেদিন দেখেছিলি ওইদিন তো আমাকে অনেক বার ফোন দিছিলিস ওইদিন লজ্জা ছিল আজ কই হুম।বাদ দে তুই ফোন দেনা শুধুমাত্র ২ মিনিটের জন্য কথা বলব তারপরে আর জালাব না
–কসম দোস্ত ও বাসায় নেই
–ওকে বায় ভালো থাকিস তোরা।মনে পরলে ফোন দিস
টুট টুট টুট

কেয়া মাকসুদার বেস্ট ফ্রেন্ড।সুখে দুখে নিজ বোনের মত একে অন্যোর পাশে থাকে।কেউ কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না।সেই কেয়াকে কিভাবে জানাবে মাকসুদার এই ভয়ানক পরিস্থিতির কথা।তবে আজ মাকসুদাকে যেভাবেই হোক কোন ক্ষতি হবার আগে উদ্ধার করতে হবে।হটাত সজিব নুর ইসলামকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিবার কথা বলে বাড়ি হতে চলে গেল।প্রায় ঘন্টাখানিক পর সজিব ফিরে এল আর টর্চলাইট সহ অন্যান্য সরঞ্জাম দুই ব্যাগে ভরতে লাগল।সজিব বুলেট ভর্তি দুইটা পিস্তল নিয়ে এল যদি এটার কোন সময় প্রয়োজন পরে এই ভেবে।ব্যাগের মধ্যো কাংখিত সরঞ্জাম নিয়ে তারা রেডি হয়ে বসে রইল।সজিবের চেহারা অনেকটা ফ্যাকাসে লাগছিল।বেচারার কষ্ট দেখে নুর ইসলাম বৃথা শান্তনা দিতে লাগল।এসময় রহিম চাচা কলিং বেল টিপলেন।সবাই মিলে বাইরে চলে এলাম।চাচার কথামত সেই ডাইরিটা আর তাদের ব্যাবহারকৃত কিছু কাপড় নিয়ে এলাম।ওই জিনিসগুলা নিয়ে চাচা পুরা ওঝা স্টাইলে কি সব কর্মকাণ্ড করতে লাগল।তবে ওটা দেখা জরুরি নয় আপাতত সজিব এই চিন্তায় ব্যাস্ত ওখানে যাবার পর কিভাবে ছাড়িয়ে আনা যায় মাকসুদাকে।হটাত করেই জোরে বাতাস বইতে শুরু করে দিল এবং দরজা বিকট এক শব্দে খুলে গেল।খুব খেয়াল করে ওরা দরজাটার ওপাশে তাকিয়ে রইল কারন এখন দরজার ওপাশে রোজকার দেখা সেই সুপারি গাছ টা নেই,নেই কোন পুকুর বা নেই কোন গাছ।সম্পুর্ন প্রাণহীন এক পরিবেশ যেটা দেখলে শরীর হীন হয়ে যায়।সর্বোচ্চ সাহস আর দোয়া কালাম পরে ওরা দুজন ভিতরের দিকে ধিরে ধিরে অগ্রসর হতে থাকে।এভাবে করতে করতে একসময় তারা পুরাপুরি ভাবেই ভিতরে ঢুকে যায়।হটাত করে দেখতে পায় পিছনে কোন দরজা নেই অর্থাৎ চাচা দরজাটি বন্দ করে দিয়েছেন

অন্ধকার চারিদিকে ছেয়ে গেলেও কেমন অদ্ভুদ এক রঙ ধারন করেছে।চারিদিকের পরিবেশ টা কেমন যেন সজিবের নিকট চেনা চেনা লাগতে লাগল।কিছুদুর যাবার পর সজিব খেয়াল করল এই সেই যায়গা যেখানে মাকসুদাকে খুজতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল।এই সেই সুরংগ যেখানে তার মৃত্যর সাথে কঠোর মোকাবেলা করতে হয়েছিল।তাহলে সেদিন রাতে তারা এই দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিল।হুম আস্তে আস্তে কিছুটা রহস্যের উদঘাতন হল।নুর ইসলাম আর সজিব হাটছে।হেটেই চলেছে উদ্দেশ্যহীন পথে এক বুক ভয় নিয়ে।কারন এই অচেনা যায়গায় তারা সম্পুর্ন রুপে একা।যে কোন সময় যেকোন দিক থেকে কোন অঘটন চলে আসতে কতক্ষন।এখানে কোন মানুষ নেই আছে কিছু শয়তান আর অতৃপ্ত রুহ।কিভাবে এর মোকাবিলা সম্ভব সেটাই তাদেরকে ভাবিয়ে তুলছিল।কিছুদুর যাবার পর তারা বসে পরল এক পাশে।হটাত ই শুরু হল ঘটনা।চারপাশ থেকে বিপুল চিতকার আর হইচই হচ্ছিল।এমন মনে হচ্ছিল যেন জেলেদের জালে অনেক মাছ উঠেছে।ভয়ে দুজন গুটি গুটি করে হাটতে লাগল।একসময় দেখা গেল অটঠাসি থেমে কারোর কান্নার শব্দ ভেসে আসছে তবে কোন চেনা সুর।আরে এটা তো মাকসুদার গলা।হটাত ই তাদের ৩ হাত পিছন থেকে কে বা কারা বাঘের মত গর্জন দিয়ে বলে উঠল “পালিয়ে যাবি কই”।
কোন কিছু না ভেবেই তারা দুজনে প্রানপনে ছুটে চলল দিশাহারা পথে।তারা কতটা জোরে ছুটছিল সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারছিল না।হটাত তারা লক্ষ করল যে সামনে আলো দেখা যাচ্ছে।ওখানে দ্রুত যেতেই দেখে তারা তাদের সামনে চলে এসেছে।ঘরিতে তখন ১২ টা বাজে।মাকসুদা আর সজিবের মা বাবা সবাই সজিবকে বাসায় নিয়ে গেল।মাকসুদাকে দেখে সজিব জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।সবাই অবাক হয়ে দেখছিল এই দৃশ্য টা
–আরে আরে কর কি
–তুমি কিভাবে ফিরে এলে।কেমনেই বা এলে আর নুর ইসলাম কই
–ফিরে এলাম মানে।আর নুর ইসলাম তো ঢাকায় আছে
–মানে।সেতো
সজিব কিছু বলেই দ্রুত নুর ইসলামকে ফোন দিল।সেও ঢাকায় থাকার কথাটাকে সামর্থন করল।সজিবের মাথায় তখন কিছুই ঢুকছিল না।তবে পরিবারের সবার ব্যাবহারই আজব ছিল।মাকসুদা কিছুক্ষন পর বলল
–কই গো কিছুদিন পরে আমাদের হানিমুনে যাবার কথাটা মনে আছে নাকি তাও ভুলে গেছ
সজিব কিছু না বলেই নিজ রুমে চলে এল তবে সবার রুমে এসে এক দৃষ্টিতে তাকানোর ফলে রুম লক করে বসে পড়ল।সজিব বার বার ভাবছে যে তার সাথে এগুলা কি হচ্ছে।হানিমুনে তো তারা এসেছিল তবে মাকসুদা আবার কিসের কথা বলছে আর সেই বা কখন এলকোন বিষয় সজিবের বোধহম্য হচ্ছিল না।কিছুক্ষন সুয়ে থাকার পর হটাত দরজায় সব্দ হয়
ঠক ঠক ঠক ঠক
–কে,,,,,কে ওখানে?
……..
–কে মাকসুদা?মা?
………
–কি হল কোন সাড়া শব্দ নেই কেন?
সজিব কিছুক্ষন পর বিছানা ছেড়ে উঠে বসল।দরজার নিকটে পৌছে দরজা খুলতেই দেখে সেই বাংলোতে ঢুকে পরেছে।হটাত ভয়ে পেয়ে দরজাটা বন্দ করে দেয় সজিব।কি মনে করে দরজাটা আবার খুলে আর দদেখতে পায়,,,,,,,,,,সে অন্য কোন গ্রহে চলে এসেছে।অর্থাৎ দরজার অপারে সব অন্য রকম লাগছে।ভয়ে দরজা টা বন্দ করে দিয়ে খাটে এসে সুয়ে পরে।ভয়ে সজিবের কপাল থেকে অনাবরত ঘাম ঝরতে থাকে।সুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে তার দু চোখ মিশে যায় বুঝতেই পারে না।হটাত করেই দরজায় প্রচন্ড আঘাতের শব্দে ঘুম ভেংগে যায়।ভয়ে একপাশে বসে থাকে ছোট পিচ্চিদের মত করে।তবে কিছুক্ষনের মধ্যো শুনতে পায়
–দরজাটি খুলবে নাকি ভেংগে ফেলব?
আওয়াজ টা তো মাকসুদার বলে মনে হচ্ছে।হুম মাকসুদাই হবে।আস্তে আস্তে দরজার নিকটে গিয়ে দরজার ফাক থেকে মাকসুদাকে দেখতে পেয়ে শান্তির এক নিশ্বাস ছাড়ে সজিব।সাথে সাথেই দরজাটা খুলে জরিয়ে ধরে মাকসুদাকে তবে মাকসুদার শরীর ঠান্ডা ঠান্ডা মনে হচ্ছিল
–এই কি করছ ছেরে দাও
এই কথাটা বলে মাকসুদা এক টানে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।সজিব কিছুটা ব্যাথা পায় তবে ব্যাপারটা চেপে যায়।এত শক্তি কিভাবে পেল মাকসুদা।যাইহোক কিছুনা ভেবেই খেতে চলে গেল সজিব
খাবার টেবিলে মা বাবা আর বাকি সবাই সজিবের দিকে তাকিয়ে রইল।সজিব কিছু জিজ্ঞাসা করায় উত্তর না দিয়ে তারা খাওয়া শুরু করে দিল।ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুদ লাগল তার কাছে কারন কোন সদস্যই তার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলছে না যেখানে সজিব বাসায় এলে তারা কান মাথা নষ্ট করে দিত।তবে আজ……কিছুত সমস্যা এখানে
নাস্তা করেই সজিব কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে।রাস্তায় যাবার সময় খেয়াল করল কিছু সুন্দরী মেয়ে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সজিবের মনটা নেচে উঠছিল তবে তাদের চোখে দিকে চোখ পরায় কিছুটা থমকে গেল।ভয়াংকর লাল চোখ নিয়ে তার দিকে দেখছে।কিছুটা বিব্রত হয়ে বাসে উঠে বসল উদ্দেশ্য সেই পুরান বাংলো।সজিব বাসে উঠে বসে আছে আর হেডফোনে গান শুনছে।বাসের জানাল সব বন্ধ।পরিবেশ টা অদ্ভুদ লাগছিল তার কাছে যেখানে বাসের অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে ছিল।ভালকরে চুল আছরিয়ে আয়নায় নিজের ভুল খুজতে ব্যাস্ত।এরই মাঝে তার মনে হতে লাগল যেন বাসের কোন ওজন নাই।যেন এটি বাতাসে ভাসছে।কেন তার এরকম মনে হচ্ছে,কি হচ্ছে এমন তার সাথে।হটাত বাসে কিরকম শব্দ হয়ে উঠল আর সবাই এক এক করে বাস হতে নামতে লাগল।সবার দেখাদেখি সজিব নামল নিচে আর দেখতে পেল সে তার কাংখিত যায়গায় পৌছে গিয়েছে।অবাক করার ব্যাপার হল এখানে পৌঁছাতে অন্তত ২ ঘন্টা সময় লাগে যেখানে আজ তার কাছে ৩০ মিনিটের কম সময় মনে হলো।

রোড দিয়ে হাটছে আর চিন্তা করছে এখানে জলদি পৌছানোর কথা।এখানে এসে সজিবের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।চারিদিকে শুধু জমি দেখা যাচ্ছে কোন বাড়ি দেখা যাচ্ছে না।আশেপাশে সবার কাছ থেকে বাংলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সবাই অস্বিকার যাচ্ছে।হতাশ হয়ে বাসার দিকে ফিরে আসে।দিনে আর তেমন কারো সাথে কথা হয় না তবে রাত্রে দেখতে পেল এক ছোট বাচ্চা তাদের বাসায় খেলছে।কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই শুয়ে পরে।রাত গভীর থেকে গভীরতম হতে থাকে তবে সেই বাংলোর গায়েব হওয়া আর বাংলোতে ঘটে যাবার কাহিনী বার বার মস্থিস্ক কে আঘাত দিতে থাকে।তারমানে বাংলোতে যাবার সমস্ত কাহিনী কি স্বপ্ন ছিল।না এটা তো কোনমতেই হতে পারে না যেখানে স্বপ্ন দেখার পর বোঝা যায় যে কোনটা স্বপ্ন ছিল আর কোনটা বাস্তব।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে হটাত করেই এক পিচ্চি ছেলে চিল্লাপাল্লায় ভয়ে উঠে পরে।উঠে দেখে সেই ছেলেটি তবে হাল্কা চিনা চিনা লাগছে।আগে ততটা খেয়াল করে দেখা হয় নি এবার আবছা আলোয় ছেলেটির চেহারাটা কেমন চেনা চেনা মনে হতে লাগল।পিচ্চি ছেলেটি কাছে এল
–আচ্ছা বাবু তোমার নাম কি?
–আমার নাম সজিব।আংকেল আপনার নাম কি?
–ওহ তাই।বেশ মজার তো।জানো আমার নাম ও সজিব
বেশ কিছুক্ষন কথা বলল তারা তবে সজিব খেয়াল করল পিচ্চিটার গলা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।কি ভেবে সজিব পিচ্চিটার দিকে টর্চের আলো মারল।এবার চেহারাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।তবে সজিব তা দেখল তাতে বেশ খানিকটা অবাক হতে লাগল।এই পিচ্চিটা হুবহু সজিবের ছোটকালের মত দেখতে।আচমকা চমকে উঠল সে।হটাত ই পিচ্চিটা ভিষন কান্না শুরু করে দিল।কেমন যেন পিচ্চিটার উপর আস্তে আস্তে করে প্রচন্ড ভয় জন্মাতে লাগল।পিচ্চিটা ক্রমশ সজিবের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল অদ্ভুদ এক হাসি ছিল।সজিবের ভয়ে সারা শরীর কাপতে থাকে।হটাত করেই পিচ্চিটা সামনে থাকা ছুড়ি নিয়ে সজিবের দিকে এগোতে থাকে।কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে পিচ্চিটা ছুড়ি দিয়ে নিজের আংগুল কেটে ফেলে।রক্তের ফোটা বের হতে থাকে সেখান থেকে।খানিক পরে ছুরি দিয়ে নিজের চোখ খুচিয়ে খুচিয়ে বের করে ফেলে।এসব দেখার পর সজিব আর সহ্য করতে না পেরে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে তবে গেট নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।চারিদিকে অটঠাসির শব্দ।ভয় আরো বারে তার নিজ পরিবারকে দেখে।এ পরিবার যেন আর আগের পরিবার নয়।এরা প্রত্যোকে যেন রক্ত চোষা পিশাচ।সবাই ধিরে ধিরে সজিবের দিকে আসতে থাকে আর প্রত্যোকের মুখে খুশির উল্লাদ দেখা যায়।সজিব বুঝতে পারে যে আজকে তার শেষ দিন।একসময় চোখের সামনে এসব না দেখার চেষ্টায় নিজ চোখ দুটি বন্দ করে ফেলে।কিছু সময় পর কারো ডাকে চোখ খুলে।এ তো নুর ইসলামের ডাক তবে সে কোথায়।কিছুদুর চোখ যাবার পর নুর ইসলাম কে দেখা যায়।এক দৌরে তার কাছে এসে পৌছায়
–এখানে কি করে তুমি।তোমার তো ঢাকায় থাকার কথা
–সব বলছি আগে এই দরজার ভিতরে আস জলদি
সজিব দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করে আর ঢুকা মাত্রই আগের সেই পুরানো বাংলোতে নিজেকে ফিরে পায়
–এসব কি হচ্ছে দোস্ত।আর এখানেই এলাম কিভাবে আমি।মামা সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।তুমি সময়মত না এলে আমার পরিবারের লোকেরাই হয়ত আমায় মেরে ফেলত।কিছুই মাথায় আসছে না আর আজকাল অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখছি।জানো মামা স্বপ্নে দেখেছি আমার মাকসুদাকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে আর…….
–শান্ত হও আগে আমার কথাটা পুরাপুরি শোন।এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব।আর হ্যা এতক্ষন যা যা হয়েছে এগুলার কোনটাই বাস্তব ছিল না।শয়তানেরা তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল
সজিব অবাক দৃষ্টিতে নুর ইসলামের দিকে চেয়ে রইল–আমি জানি তোমার মনে এখন অনেক প্রশ্ন উকি মারছে তবে এখন না একটু পরে সব বুঝাচ্ছি তবে এখন আমি যা বলব সেগুলা করবে ঠিক আছে!
সজিব হ্যা সুচক ইশারা করল আর তারা দুজনে অজানা পথে হাটা শুরু করে দিল।অজানা শুধু সজিবের কাছে আর কোথায় যাচ্ছে এটা শুধু নুর ইসলাম ই বলতে পারবে।কিছুদুর হাটার পর তারা অজানা এক যায়গায় এসে পরল।চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।হটাত করে নুর ইসলাম মাটি খুরা শুরু করে দিল।এমনিতেও সজিব অনেক ঘটনার স্বীকার ফলে তার ভয় দ্বিগুন বেড়ে গেল।নুর ইসলাম ও আসল কিনা সেটা নিয়েই হয়ত সব সন্দেহ সজিবের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।তবে সে সজিবকে আশ্বাস দিল আর কিছু প্রমান ও দেখাল যে সে মানুষ।তবে সজিব পাগলের মত শুরু করে দিল
–তুমি কে সতি করে বলো(কাপা কাপা কন্ঠে)
–দোস্ত আমি জানি তুমি এই সময় অনেক চিন্তায় আছ।কিছুক্ষন পরে সব বুঝতে পারবে
–না না আমি কিছু বুঝি না।তোমায় আমি ছাড়ব না।আমার মাকসুদা কই বল।(হাতে গাছের একটি বড় ডাল নিয়ে)
–আচ্ছা তুমি শান্ত হয়ে বস।তোমায় সব বুঝাচ্ছি
রহিম চাচার কথা মত আমরা সেদিনকে দরজার অপাশে গেছিলাম।কাংখিত ঘটনার আমরা যখন পালাচ্ছিলাম ওরা তোমাকে দ্বিতীয় দরজার মধ্যো ঠেলে ফেলে দেয় আর আমি ওখানেই পরে থাকি।কিছু শব্দ পেয়ে আমি একযায়গায় লুকিয়ে থাকি।তবে হটাত দেখি মাথা থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে যেখানে মাথায় কোন চোট পাই নি।হটাত উপরে তাকিয়ে দেখি এক মহিলা আমার দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে আর তার সমস্ত মুখ থেকে অনবরত রক্ত পরছে।এর পর আমি জীবন বাচাতে প্রানপনে দৌরাতে শুরু করেছিলাম।জানিনা কত দূর গিয়েছিলাম আর কোথায় গিয়েছিলাম তবে একসময় পায়ে কিছু একটা জিনিসের টান অনুভব করি।পরে বুঝতে পারি যে ওটা শিকল ছিল।ওরা টানতে টানতে আমায় এক যায়গায় নিয়ে যায়।সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমি ওখানে মাকসুদাকে দেখতে পেয়েছি
–কি বল।সত্যি,,,,ওর কিছু হয় নি তো।কেমন আছে আমার মাকসুদা হুম
–জানিনা তবে এটা বলতে পারি যে বেচে আছে,,,,,,তবে
–তবে কি?কি হুম
–এই আমাবশ্যার আগ পর্জন্ত।তারপর ওরা তাকে মেরে ফেলবে
–কেন মারবে,,,কি ক্ষতি করেছে আমার মাকসুদা?
–কিছু ক্ষতি করে নি।জানো তো ওরা দুই ভাই মেয়েদেরকে সহ্য করতে পারে না।আর আমরা যেখানে গিয়েছিলাম ওটা শয়তান দের দুনিয়া।সমস্ত খারাপ আত্তা দের বাস স্থান ওখানে।ওই বাসস্থানে প্রবেশ করতে বা বের হতে মৃত্যর দুয়ারের প্রয়োজন।প্রত্যোক আমাবশ্যার রাত্রে দুজন মেয়েকে জবাই করে সেই রক্ত দিয়ে মৃত্যর দরজাকে উন্মুক্ত করে দেয়।ওই দরজার দুটা প্রান্ত আছে।প্রথম টা ওই বাংলোর দরজার সাথে মিশে গিয়েছে যেহেতু দুই ভাইয়ের লাশ ওখানে দাফন করা হয়েছিল আর দ্বিতীয় টা সঠিক জানি না।তবে ওরা তোমার মস্তিস্ক নিয়ে খেলছিল আমাদের আলাদা হবার পর।আসলে তুমি ওই দুনিয়ায় ছিলে তবে বুঝতে দেয় নি ওরা।মৃত্য আর বাস্তবের মাঝের ওই পথের বাসিন্দা হবার কারনে ওরা তোমায় ভ্রমের মধ্যো রেখেছিল যাতে আমাবস্যা হবার আগ পর্জন্ত তুমি কিছু বুঝতে না পার।যাইহোক মাকসুদার কাছে পৌছানোর রাস্তা আমি পেয়ে গিয়েছি তুমি শুধু আমার সাহাজ্য কর।

ওরা দুজনেই মাটি খোরা শুরু করে দিল।কিছুদুর যাবার পর একটি লাশ দেখতে পেল।তবে নুর ইসলাম বলল যেন লাশটির মুখ ঢেকে উপরে তোলা হয়।আর কোন কথা না বলেই সেই লাশ টিকে মাটি থেকে তারা বের করল।এক প্রকার বোটকা গন্ধ নাকে এল সজিবের।লাশটি বেশ তরতাজা ছিল তবে লাশটি দেখে যে কারোরই রুহু কেপে উঠবে।সজিব লাশটি দ্রুত রাখতে গিয়ে এর মুখ থেকে কাপড় টা বেশ খানিক সরে গেল।লাশের দিকে চোখ পরায় সজিবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।সমস্ত ভয় নিয়ে নুর ইসলামের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল।কারন লাশটি আর কারোর নয়,,,,সয়ং নুর ইসলামের।চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না।সজিব কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
–ভয় পেও না দোস্ত।আসলে আমি তোমায় সমস্ত ব্যপার বলি নি।কিভাবেই বলতাম বলো।সেদিনকে ওরা আমার সামনে মাকসুদাকে প্রচন্ড আকারে আঘাত করতে থাকে তবে আমাবস্যার আগে না মমারার আদেশ পাওয়ায় চুপ হয়ে যায়।এক সময় আমি কোনমতে ওখান থেকে বের হয়ে মাকসুদাকে নিয়ে পালিয়ে যাই।হয়ত এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।তখন মনেই ছিল না এই যায়গা থেকে বের হবার রাস্তা আমার কাছে নেই।এই কারনে ওরা মাকসুদার উপর অনেক নির্যাতন করে।আর আমায় ধরে নিয়ে যায় আর বেধে ফেলে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা আমার হাত টেনে ছিরে ফেলে।তারপর পায়ে অনবরত আঘাত করতে থাকে।হাড্ডি ভাংগার স্পষ্ট আওয়াজ পাই আমি।যন্ত্রনায় ছটফট করছিলাম তাও ওরা ছারে নি।ওরা আমার চোখ আংগুল দিয়ে তুলে নেয়।পাশে শিয়ালের মতন চিল্লানোর শব্দ শোনা যাচ্ছিল।সেদিনকে ওরা আমাকে পশুর মত করে মেরে ফেলে।দোস্ত সেই যন্ত্রনার প্রতিটা কষ্ট এখনও আমি পেয়েই চলেছি।আমি এখন মৃত তবে চাইনা মাকসুদাও আমার মত ভয়ানক যন্ত্রনা সহ্য করুক।
সজিব কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।তবে তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল।তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আজ লাশ হয়ে গেছে।এটার জন্য সজিব নিজেকেই দায়ী মনে করতে থাকল।কেনই বা নুর ইসলামকে ডাকল আর কেনই বা তার পরিবারের কাছ থেকে তাকে দূরে বিপদজনক যায়গায় সাথে নিয়ে গেল।নুর ইসলাম তাকে সাথে নিয়ে রহিম চাচার বাসায় চলে এল।
–সজিব!রহিম চাচাও কোন মানুষ নয় তিনিও শয়তান।তিনি আমাদের ইচ্ছাকৃত ভাবেই মৃত্যর দরজার সন্ধান দিয়েছে যাতে করে বাংলোর রহস্য গোপন থাকে।আজ আমি রহিম চাচাকে ছাড়ব না।কারন শয়তানের শক্তি থেকে অশরীরী দের শক্তি অনেক বেশি থাকে। হটাত করেই দেখা যায় একটি বাঘ এদিকেই আসছে।এই এলাকায় তো কোন বাঘ থাকার কথা নয় তবে,,,,,,,,কিছু বোঝার আগেই নুর ইসলাম বাঘের সাথে লড়াই করতে লাগল।তবে কিছুতেই তার শক্তির সাথে না পেরে বাঘটির আকার পালটে গেল।এটি ৭ ফুটের এক অবয়বে পরিনত হতে লাগল।ক্রমশ নুর ইসলাম তার দিকে এগিয়ে গিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করতে লাগল।একসময় সেই জিনিস টি পরাস্থ হয়ে গেল।
–রহিম চাচা না।ওঠ শয়তান তোর সময় শেষ।যদি তোর রুহ এই দুনিয়ায় টিকিয়ে রাখতে চাস তাহলে সেই দরজাটি আবার খোল।
শয়তানটি অনেক দুর্বল হয়ে পরল।নুর ইসলামের কথায় শয়তানটি বাংলোতে এসে দরজা খুলে দিল।দরজা খোলা মাত্রই নুর ইসলাম শয়তানটির উপর ভয়ানক হামলা করে মেরে ফেলল অথবা গায়েব মত কিছু করল যা সজিব বুঝতে পারছিল না।তবে আজ তাদের দুজনই সমান সাহস নিয়ে সামনে এগুতে লাগল।যে করেই হোক মাকসুদাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।আর দ্বিতীয় যেটা কাজ সেটা হল এই মৃত্যর দুয়ারকে চিরতরে নিশ্বেস করে ফেলা।
নুর ইসলাম আর সজিব দরজার ভিতরে প্রবেশ করল।আগের মত একই যায়গা,একই অন্ধকার আর একই অটঠাসির শব্দ।তবে এবার নুর ইসলামের চিতকারে আস্তে আস্তে সকল কোলাহল বন্ধ হয়ে গেল।সজিব ও নুর ইসলামের এই ভয়ানক চিতকার শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।তবে এখন সজিবের মনে অনেক সাহস রয়েছে কারন নুর ইসলামে তার পাশে রয়েছে।তারা সবযায়গায় খুজতে থাকে তবে চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।একমাত্র নুর ইসলামই দেখতে পারছিল যে চারপাশের দৃশ্য।একসময় হাটতে হাটতে ওরা এক পাহাড়ের নিকটে চলে আসে।সজিব আপাতত চুপ থাকে কারন এখন ওর হয়ত এখানে কোন বিশেষ প্রয়োজন নেই।শুধুমাত্র মাকসুদাকে খোজার প্রচেষ্টা।এরই মাঝে পুরান সেই খস খস শব্দ শুনতে পায় তারা।কিছুদুর নজর পরার পর দেখতে পায় এক অদ্ভুদ জিনিস মত দেখতে মাটি থেকে কি যেন তুলে খাচ্ছে।কাছে যাবার পর যা দেখে সেটা সজিব কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না।জিনিস টি সজিবের হাত কেটে আংগুল খাচ্ছিল আর সারা মুখে রক্তের ছিটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।এরই মাঝে নুর ইসলাম বলে উঠল।
–দোস্ত কিছুই চিন্তা কর না।এটা তোমার মাকসুদা নয়।ওরা সরাসরি আমার কাছে না আসতে পেরে তোমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।সামনে চলো এর আগে দেরি হয়ে যায়।
কিছুক্ষনের মধ্যোই আমাবস্যা শুরু হবে আর এর মধ্যোই মাকসুদাকে বাচাতে হবে নয়ত অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।তারা বিষয়টাকে এরিয়ে সোজা চলতে থাকে।হটাত করে সজিব পিছে ফিরে দেখে যে ওখানেই কেউ নেই।তার মানে নুর ইসলাম ঠিক কথাই বলেছিল এটা শুধু তাদের সাহস কে বিনাশ করার জন্য ছিল।তারা দুজন হাসান আর জুয়েলের সন্ধানে ব্যাস্ত যেহেতু তারাই এই মৃত্যর জগতের প্রথম রহস্য ছিল।তাদের পেলে নিশ্চই কিছু না কিছু হাতে আসবে।তবে আসল দুনিয়ার মত এখানে জেরা আর প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে তাদেরকে পাওয়া যাবে না।তাদের সন্ধান ওদের দলের সদস্যরাই দিতে পারবে।তবে কিভাবে তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করা যায় এ চিন্তায় মহা ব্যাস্ত হয়ে পরে দুজনই।
–আচ্ছা দোস্ত তুমি একটা কাজ কর।তুমি আমায় অতি রুপসী এক মেয়ে বানিয়ে দেও তাহলে এখানের সব ভুতেরা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য
–আরে তুমি কি পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি।ওরা মানুষ নয় যে মেয়েদের দেখলে সব সত্যি বলা শুরু করে দিবে।ওরা হচ্ছে এখানের বাসিন্দা আর গোলাম।শেষ করে দিলেও ওরা কোন তথ্য দিতে রাজি হবেনা।
–তাহলে এখন কি করা যায়(সজিবের মুখে মাকসুদা হারানোর ভয় দেখা যাচ্ছিল)
–আরে দোস্ত ভাবার সময় তো দিবে।শুধু মাকসুদার কথাই তো ভেবে চললে কই আমি যে মারা গিয়েছি সেটার তো কোন কথা বললে না।
–তুমি মারা গিয়েছ এই ব্যাপারে আমি অনেক ব্যাথা পেয়েছি।বিশ্বাস কর দোস্ত আমি এখনও মেনে নিতে পারছিনা তুমি এই পৃথিবীতে আর নেই।আমি…..
–চুপ থাক এসব নাটক অন্য কোথাও দেখিও।আমি জানি তুমি এই মুহুর্তে শুধুমাত্র মাকসুদাকে নিয়েই ভাবছ আমার কথা নয়।
–হুম সেটা ঠিক তবে……
নুর ইসলাম সজিবের কথাটা কে পরিপুর্ন হতে দিল না এর আগেই আক্রমণ শুরু করে দিল।প্রচন্ড শক্তিতে মারতে থাকল সজিবকে।
–আসলে হাসান আর জুয়েলের চিন্তা ধারা গুলাই ঠিক।আসলেই মেয়েদের কারনে আজকালের ছেলেরা আসল ভালোবাসাকেই ভুলে যায়।আসলেই তারা থেকে পাষান হয়ে ওঠে।
–নুর ইসলাম অনবরত সজিবকে মারতে থাকে।এদিকে সজিবের নাক মুখ থেকে গল গল করে রক্ত বের হতে থাকে।একসময় নুর ইসলাম বলে ওঠে।
–দোস্ত তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।তুমি আমার ভাই আমার সব কিছু।যদি তোমার হাতেই আমার মৃত্য লেখা থাকে তাহলে আমার কোন আফসোস নেই তবে আমার মাকসুদা যে আমায় বড্ড ভালোবাসে।তাকে তুমি বাচিও।
এই কথাটা শোনার পর নুর ইসলামের রাগ দ্বিগুন বেরে যায়।আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে সজিবকে তবে হটাত করেই থেমে যায়।

তার চেতনা শক্তি কাজ করা শুরু করে আর বোঝার চেষ্টা করে যে সে এতক্ষন ঠিক কি করছিল।আসলে নুর ইসলাম ও শয়তানের উদ্দেশ্য উতসর্গ করা এক রুহু এজন্য এখানে এসে তার মধ্যো খারাপ প্রবনতা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিল।যদি তাড়াতাড়ি কিছু একটা করা না যায় হয়ত নুর ইসলাম পুরাপুরি ভাবেই ওদের মত হয়ে যাবে।তাই অন্য কিছু চিন্তা না করেই মৃত্যর দরজা দ্বারা তাকে আসল দুনিয়ায় নিয়ে পৌছানোর চেষ্টা করে তবে অপারে আসতেই তার শরীর এ প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়।কিছু না ভেবেই আবার এ জগতে ফিরে আসে।অর্থাৎ কেউ হয়ত তার লাশ কবরে দাফন করেছে।এই অবস্থায় ওই দুনিয়ায়া ফিরে গেলে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।কি আর করার সজিবকে এক পাশে রেখে মাকসুদার উদ্দেশ্য রওনা দিল।আজ তাদের কাউকেই ছাড়বে না সজিব।তাদের কারনে আজ সে তার ভাই থেকে বেশি কারোর গায়ে হাত দিয়েছে এমনকি অনেক রক্ত ও ঝরিয়েছে।সর্ব শক্তি দিয়ে নুর ইসলাম চারিদিকে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে বেড়ায়।চারিদিকে সেই যায়গার সন্ধান করতে করতে একসময় পেয়েও যায়।তবে সরাসরি কাছে না গিয়ে দূরে এক কোনায় দারিয়ে থাকে এবং মাকসুদাকে খুজতে থাকে।আগে মাকসুদার নিরাপত্তা বদলা তো পরেও নেওয়া যাবে।খুজতে খুজতে একসময় নজর পরে মাকসুদার উপর।তবে তার দিকে চোখ পরতেই আতকে ওঠে।কি অবস্থা করেছে ওরা বেচারির।এর বদলা নিতেই হবে।প্রচন্ড গর্জন দিয়ে তেরে আসে তাদের কাছে আর সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলতে থাকে।তবে আসল শয়তান টার চোখে কোন ভয় দেখতে পায় না সজিব।সবাইকে শেষ করার পর আসল শয়তানের কাছে আসতেই নুর ইসলামের দম বন্দ হওয়া শুরু করে দেয়।
–তুই কি ভেবেছিস সাধারন একজন আমাকে মারবে।আরে তোর রুহু তো সেদিনই এ দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতাম তবে তখন বুঝি নি তোর মাথায় দেয়া কাল যাদু কাজে আসবে না।এখানে যেই আসে আমি সবাই বশে নেই তবে তোকে পারি নি।এখন শেষ হবি তুই।
এরই মাঝে কোথা থেকে সজিব এসে সামনে দারায় আর শয়তানের দিকে তাক করে চারপাশের জিনিস ছুরে মারতে থাকে।শয়তান টা ক্রমশ হাসতে থাকে তবে একসময় শয়তানটার শরীর এসিডে দগ্ধ হবার মত পোড়া শুরু করে দেয়।আসলে সজিব হাতের কাছে অন্য কিছু না পেয়ে ছোটবেলায় পড়া আল্লাহর নামের দোয়ার লকেট ছুড়ে মেরেছিল।এই জগতে আল্লাহর নাম সবচেয়ে ভয়ানক আর সবাই এটিকে ঘৃনা করে।যতক্ষনে শয়তানটি লকেট শরীর থেকে সরিয়ে ফেলে তার আগেই নুর ইসলাম এক আছরে তাকে শেষ করে ফেলল।তারা তখনই মাকসুদাকে নিয়ে দরজার ওপারে চলে গেল যেহেতু নুর ইসলাম নিজেই দরজা খুলতে পারে।ওরা ওপাশে যেতেই নুর ইসলাম বলল।
–আমি ওপারে যাবার আগে কিছু কথা আছে।
–হুম বল(সবার মুখেই হাসি)
–পুরানো বাংলোটার দরজার নিচে কিছু হার গোর রয়েছে ওগুলা দাফন করে দিবে আর দ্বিতীয় দরজা যেটা বাংলোর মালিক মাহামুদা মিনির ঘরে সেই ঘরের পিছে একটি লাশ দাফন করা ওটিরও পুনরায়য় জানাজা করে দাফন করবে তাহলেই দুই দুনিয়ার মাঝের এই সিড়ি চিরতরে গায়েব হয়ে যাবে।
–হুম আচ্ছা করব এবার আস।
–বিদায় বন্ধু
নুর ইসলাম দুয়ারের কিনারা পার করতেই মাটির মাঝেই গায়েব হয়ে গেল।মাকসুদা আর সজিব চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না।নুর ইসলামের কথামত জানাজা করা হল এবং কিছুদিনের মধ্যোই দেখা গেল বাংলোটার দরজা পালটে গিয়েছে অর্থাৎ আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।
সজিবের একটা কন্যা সন্তান হয়েছে।তবে এখনও সজিব মাঝে মাঝে বাংলোতে যায় আর মনে মনে বলে।
“নুরু তুমি কোথায়”

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত