ভুত বা ভউতিক বিষয় কোনটিতেই আমার বিশ্বাস নেই।নিজের সাহসের উপর যথেষ্ট আস্তা আছে বলেই অপিরিচিত এলাকার এই ভৌতিক পরিবেশে থাকতে রাজি হয়েছি।যে বাড়িটাতে আমি আছি,শেটাকে ঘিরে বেশ মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে।এসব গল্প শুনতে বেশ মজাই লাগে। আমার কলিগরা আমার কাছ থেকে ওঁই বাড়ি শম্পরকে নতুন কোন গল্প শনার জন্য মাঝে মাঝে আগ্রহ দেখাতেন।তাদের ধারনা আমি লজ্জায় এ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিনা।এ বাড়িতে অনেকেই থাকার দুঃসাহস দেখিয়েছে।কিন্তু কেউ নাকি টিকতে পতিক্তে।বাড়িওয়ালাএখানে থাকেনা।বারিতি ২/৩ বছর পরিতেক্ত ছিল।বাড়িওয়ালা কিছুতেই ভারা দিতে রাজি হচ্ছিলনা।আমি এক প্রকার জোরপূর্বক ভাড়া নিলাম।বিরাট বড় বাড়ি।বাড়িটার বাইরের পরিবেশ দেখলেই গা ছম ছম করে।বাড়ির দক্ষিন দিকে বড় বাশঝার,উত্তর দিকে বেশ বড়সড় একটা পুকুর।পুকুরটার পানি খুবি পরিশকার।গরমের শময়।তাই বেছে বেছে দক্ষিন দিকের রুমটাই থাকার জন্য থিক করলাম।
আমাকে শব সময় সাহায্য করার জন্য গ্রামের এক্তা সাহসী ছেলেকে কাছে রাখতাম।১৭ বছর ছেলেটার নাম কাদের।সুঠাম দেহ।কন কাজেই অনিহা নেই।সারাদিন কাজ করলেও ক্লান্তি তার শরীরে ভর করতে পারেনা।ও আমার পাশের রুমতাতে থাকে।৫-৭ দিন বেশ নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিলাম।প্রথম অস্বাভাবিক ঘটনার কথা বলছি।সেদিন শিওন্ধা ৭টার দিকে।এসে জামা কাপড় ছেড়ে বেসিনে গেলাম চোখে মুখে পানি দিতে।পানি ছেরে আয়নাতে তাকাতেই মনে হল একটা আলোর রেখা পিছন থেকে সরে গেল।পিছনে তাকিয়ে কিছুই পেলাম্না।ভাবলাম দেখার ভুল।কিন্তু কিছিক্ষন পর একি ঘটনা আবার ঘটল।আলোটা এক দেয়ালের থেকে গিএ অন্য দেয়ালে গিয়ে মিলিয়ে গেলো।যেহেতু এতা ছিল আমার দেখা প্রথম অস্বাভাবিক ঘটনা তাই কেমন জানি একটা শিহরন অনুভব করলামতকাদের একটু পরেই বাজার থেকে আসলো।দুজন মিলে রান্নার কাজটা সেরে খাওয়া দাওয়া করতে ১০ টা বেজে গেলো।খাওয়া শেষ করেই ও ঘুমাতে গেলো।আমি শুয়ে শুয়ে সন্ধ্যার পিছনের কারন সন্ধান করছি।এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো।
আমার খাট টা উত্তর দক্ষিন ভাবে সেট করায় দক্ষিন দিকে পা দিএ শুয়ে আছি।কারেন্ত যাওয়ায় বাইরে থেকে চাঁদের আলো দক্ষিন দিকের জানালা দিয়ে ভিতরে এসে একটা অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশটা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।বাঁশ বাগানের আলর ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম নিজেও জানিনা।আমার একটা অভ্যাস হল শত গরমের মধ্যেও ঘুমানর সময় হাটু পর্যন্ত কাথা টেনে ঘুমানো।ঘুমের এক পর্যায়ে টের পেলাম পায়ের উপর কাথা নেই,সরে গেছে।কাথাটা হাঁটু পর্যন্ত টেনে আবারো চোখ বুঝলাম।কিছুক্ষণ পর মনে হলো কাথাটা আস্তে আস্তে পা থেকে সরে যাচ্ছে।শরিরের ক্লান্তির জন্য চোখ খুলতে ইচ্ছে হলনা।ভাব্লাম মনের ভুল।কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হল কাথাটা দ্রুত সরে জাচ্ছে।ধরফর করে উঠে বসতেই জানালায় চোখ গেলো।
মনে হল একটা ছায়া দ্রুত সরে গেলো।কাথার একটা অংশ জানালার মধ্যে ঢুকে আছে।হ্যাঁচকা তানে কাথাটা ভিতরে নিয়ে নিলাম।সাথে সাথে বাশ বাগানের ভিতর থেকে খিল খিল হাসির শব্দ ভেসে এলো।মেরুদন্ডের উপর দিয়ে একটি ঠাণ্ডা স্রত বয়ে গেলো।সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে আমি মারা জাচ্ছি।অসাড় দেহ নিয়ে আমি জানালার দিকে তাকিয়ে আছি।এ সময় দূরে বাশবাগানের মধ্যে একটা স্পষ্ট নারী ছায়ায় সরে যেতে দেখলাম।হারিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে সে আমার দিকে এক ঝলক তাকাল।তার চাহনিতে যেন ক্রোধ ফুটে উঠেছে।আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা এই মুহূর্তে আমার করনীয় কি।অনেক্ষন যাবত চুপচাপ বসার পর এক্তু নড়েচড়ে বসলাম।ঠিক তখনি দেখলাম পাসের চেয়ারে ঘটে চলা অপার্থিব এক ঘটনা।চেয়ারটা মেঝের ১ ইঞ্চি উপর দিয়ে ভেসে ভেসে নড়াচড়া করছে।একটা ছন্দে চেয়ারটা ঘুরছে।হঠাৎ করে চেয়ারটা ফুট দুয়েক উপরে উঠে গেলো এবং চেয়ারটার পিছনে থাকা অদৃশ্য কেউ চেয়ারটাকে সশব্দে মাটিতে ছুড়ে দিল।গলা থেকে একটা ভয়াল আর্তচিতকার বেরিয়ে এল।
সাথে সাথে পাশের রুম থেকে কাদের ছুটে এলো।কি হইছে ভাইয়া,খারাপ স্বপ্ন দেখছেন?আমি কোন কথা বলতে পারছিনা। কোনরকমে বললাম পানি।পানি খাওয়ার পর কারেন্ট চলে এলো।( পানিটা একটু আগে খাইলেই পারতেন,কারেন্ট টা আরো আগেই আয়া পরতো কাদের রুমে চলে গেল।জানালা বন্ধ করে বাতি জালিয়ে দিয়ে সারারাত মিউজিক শুনলাম।বিষয় টা জানতে পারলে কলিগদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যাবে।এটা ভেবে আমি কাউকে কিছু বললাম না,এমনকি কাদেরকেও না।বিকেলে বাসায় ফিরে যতক্ষণ সম্ভব কাদেরের সাথে থাকার চেষ্টা করলাম।রাত ১১ টার দিকে কাদের শুতে গেলো।আজ জানালা বন্ধ রাখলাম এবং সারারাত বাতি জ্বালিয়ে রাখলাম। সে রাতে তেমন কিছু ঘটলনা।তবে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম।পরের দিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে যথারীতি বেসিনে হাত মুখ ধুতে গেলাম।ট্যপ ছারলাম কিন্তু পানি পরছেনা।ভাবলাম পানি নেই।কাদেরকে মোটর টা ছারতে বলব ঠিক তখনি ফুল স্পীডে পানি পরতে লাগলো।পানিতে হাত দিতেই পানি পরা বন্ধ হয়ে গেলো।ট্যাপ বন্ধ করে যখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই কোথা থেকে এক ঝাপটা পানি এসে পুরো শরীর ভিজিয়ে দিল।
আমি দ্রুত রুমে চলে গেলাম।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসল।কাদের কে ডেকে একটু কথা বলায় ভয়টা হালকা কমলো।রাত ১১ টার দিকে কাদের ঘুমাতে যাওয়ার পর আমারো হালকা তন্দ্রা আসল।একটি অদ্ভুত শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মনে হল কেউ নুপুর পায়ে হাঁটছে।প্রায় ১ ঘণ্টা জেগে শব্দটি আবারো শোনার চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোন শব্দ শুনলাম না।এবার ঘুমানর চেষ্টা করব ঠিক তখনি স্পষ্ট শুনলাম আমার মাথার কাছ থেকে একটা নুপুরের শব্দ পায়ের পাশ দিয়ে জানলা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলো।সারা রাতে আর কিছুই ঘটেনি।তবে সেই অদ্ভুত স্বপ্নটি আজও দেখলাম।৬-৭টি রাত পার হয়ে গেলো।রাত গুলোতে আমি মাঝে মাঝে গভীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাইছি।তবে প্রতি রাতেই এই অদ্ভুত স্বপ্নটি দেখেছি।স্বপ্নটি ছিল এরকমঃবাড়িটার সামনে শতশত লোক।সবার চোখে মুখে আতংক।বাড়িওয়ালার চোখ অশ্রুসিক্ত।সে সবাইকে কিছু একটা বলছে।
তবে আজ রাতের সপ্নতার কথা মনে হলেই গা শিউরে উঠে। অস্থিরতা বেরে যাচ্ছে। আজ দেখলাম বারিতার সামনে শত শত লোক। সবার চখে মুখে আতঙ্ক। বাড়িওওলা অশ্রুসিক্ত চখে বলছে আমি ওকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইনি। ও আমার কথা শোনেনি। এখানে আসার পর এত কিছু হল অথচ আমাকে কিছুই জানায় নি। সবাই দুটি কাফনে মোরা লাশকে ঘিরে দারিয়ে আছে।কারো কারো মুখে বেশ কয়েকবার সুইসাইট কথাটি শুনলাম।সবচেয়ে স্পষ্ট যে কথা টা শুনলাম সেটা হল আমাবস্যা।কেউ কেউ বলছে আমাবস্যা রাতে এ বারিতে এমনি হয়।সপ্নটা দেখে আমার অন্তরাত্মা কেপে উঠলো।কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জর হয়েছে।
থারমমিটারে ১০৪ ডিগ্রি সো করল।অসুস্থ শরির নীয়েই অফিসে গেলাম।কন কাজেই মন বসাতে পারলাম না,থেকে থেকে শুধু আমাবস্যার রাতের কথা মনে আসছে।আমার এক ঘনিস্ট কলিক কে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা ভাই, আমাবস্যার রাত কি বলতে পার ?কেন ভূত ধরবা নাকি বলে হাসতে হাসতে চলে গেল।বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি কাদের বাজার করে ফিরেছে।আমি জামা কাপড় ছেরে ওর কাছে গিয়ে বসলাম।ওকে জিজ্ঞেস করলাম,আচ্ছা এই বারিতে কি ঘটেছিল জান ?এখানে একটা বড় ফ্যামিলি থাক্ত।রাতুল সাহেব তার স্ত্রি,২ ছেলে ও তার এক মেয়ে।ওভাব অনটন সবসময় লেগেই থাকতো।মেয়েটা কলেজে পুরত,টাকার অভাবে বেতন দিতে পারতোনা।
সংসারে সারাদিন অশান্তি লেগেই থাকতো।তারপর এক রাতে সবাই এক সাথে সুইসাইট করল।বাবা মা আর মেয়েটা গলায় দড়ি দিল।আর ছেলে দুটোকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল।কাহিনীটা এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো কাদের।পতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকালো আমার দিকে।ভয়ে চাদরটা জরে আকড়ে ধরে আছি।কাপা কাপা কণ্ঠে বললাম, তোমার ভয় করেনা ? না । কখনো কিছু দেখেছো ? হুম দেখেছি। কি দেখেছো ? পায়ের ছাপ।প্রায় প্রতিদিনি অসংখ্য ছোট বাচ্চার পায়ের ছাপ দেখি । আর ?? কান্নার শব্দ শুনতাম।বাচ্চার কান্নার শব্দ। আচ্ছা, আমাবস্যা রাতে অনেক কিছু ঘটে তাইনা ?? হুম। আমাদেরতো মেরেও ফেলতে পারে তাইনা ?? হুম। আর একটা কথা খুব সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম আমাবস্যা কবে? এ প্রশ্নে অ কিছুটা চমকে উথল।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল জানিনা।
সারে ১০ টার দিকে শুয়ে পরলাম।বাহিরে একটা ডাহুক পাখি ঘন ঘন ডাকছে।১১ টার দিকে কারেন্ট চলে গেল।উঠে মোমবাতিটা জালিয়ে শুয়ে পরলাম।চখে ঘুমঘুম ভাব ঠিক তখনি মনে হল আমার মাথার কাছে কেউ ফিস ফিস করে কথা বলছে।আমি নড়েচড়ে উঠলাম। এ সময় দেখি ফ্যানের পাখাগুলো জোরে জোরে কাপছে।ঠিক এমন সময় পাশের রুম থেকে কাদেরের ভয়াল চিৎকার শুনে আমিও চিৎকার করতে করতে ওর রুমের দিকে ছুটে গেলাম।গিয়ে দেখি অ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর ওর কানের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমাকে দেখা মাত্র আমার পা জড়িয়ে ধরে বলল আমাকে বাচান,ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।শক্ত কিছু দিয়ে ওকে আঘাত করার চিনহ দেখলাম।ওকে আমার রুমের নিয়ে এসে ওর ক্ষত জায়গাটা গামছা দিয়ে বেধে দিলাম।দুজন পাশাপাশি বসে আছি।কারো মুখে কোন কথা নেই।পাশে টেবিলে রাখা মোমবাতি টা জ্বলছে।হঠাৎ করে দরজার পাস দিয়ে স্পষ্ট নুপুরের শব্দ শনা গেল।মনে হল কেউ নুপুর পায়ে দৌরে গেল।
ও আমার আর কাছে সরে এলো।সাথে সাথে পাশের ঘরের আয়নাটা সশব্দে ভেঙ্গে পরল।আবার নুপুরের শব্দটা সোনা জাচ্ছে। শব্দটা আমার দরজা পর্যন্ত এসে থেমে গেল।এখন মনে হচ্ছে শব্দটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।ঝুম ঝুম ঝুম, হালকা বাতাশে মোমবাতিটা নিভে গেল।অন্ধকারে একছত্র আধিপত্ত কায়েম করল।অন্ধকারের বুক চিরে শব্দটা আবার এদিকেই আসছে।কাদের আমাকে জড়িয়ে ধরল।কিছু না বুঝতে দিয়েই কাদের গগন বিদারি চিৎকার দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।মোবাইলের আলো জ্বেলে কাদেরের পিছন দৌড়াতে শুরু করলাম।হঠাৎ কিচু একটা তে বেধে পরে গিয়ে জ্ঞান হারালাম।যখন জ্ঞান ফিরল দেখি তখনও মোবাইলের আলো জ্বলছে।চারদিকে গাড়ো অন্ধকার।একটি ভেজা ফ্লোরে আমি পরে আছি।দুরবল শরিরটাকে কোন রকম টেনে তুললাম।
টর্চের আলতে দেখি ফ্লোরটা একদম রক্তে ভিজে আছে।কপালে প্রচন্ড বেথা। ধীরে ধীরে কাদেরের রুমে ঢুকলাম।ঢুকে এক বীভৎস দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে এলাম।কি মনে করে ঐ ঘরে আবারো ঢুকলাম।ভয়ের থেকে মনের টান কেই বেশি গুরত্ত দিয়েছিলাম হয়ত। দেখি ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে দেহটা।চখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে পরেছে।জিহবাটা ইঞ্চি তিনেক বাহিরে বেরিয়ে আছে।আমাকে বলছে চলে যাও এখান থেকে।আজি আমাবশ্যার রাত।অনুভূতিহীন চোখে দেখলাম মোবাইল ইচক্রিনে ব্যাটারি লো সাট ডাউন।আবার অন্ধকার নেমে এল।অন্ধকারের বুক চিরে আবারো সেই নুপুরের শব্দ কানে ভেসে আসলো….