অশরীরী নিবাসের কাহিনি

অশরীরী নিবাসের কাহিনি

চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ছােটমামা বললেন, বুঝলি বুলি, আমেদাবাদীদের রক্তে রক্তে ব্যবসা। সব কিছু নিয়েই ব্যবসা ফাঁদে ওরা। এমনকি ভূত নিয়েও। ভূত নিয়ে ব্যবসা? সে আবার কী? অবাক হয়ে প্রশ্ন করি আমি। কেন, তােদের আমি রমেশ মাডিয়ার গল্পটা বলিনি? তাে! তাহলে শােন। কিন্তু তার আগে আরাে এক কাপ চা নিয়ে আয় দেখি রান্নাঘর থেকে মার গলা শােনা গেল, একটু অপেক্ষা কর বীরু। আমার রান্না হয়ে এল বলে।

তারপর আমিও গিয়ে শুনব গল্পটা। চা আনছি। আমেদাবাদ থেকে কী একটা কাজে ছােটমামা এসেছেন কলকাতায়। রাত্রে আমাদের বাড়ি খাবেন, আমরাও যথারীতি ওঁকে ঘিরে ধরেছি গল্প শুনব বলে। বাবা সুদ্ধ। খানিকবাদে মাও এসে যােগ দিলেন। আরেক পেয়ালা চা ছােটমামার হাতে দিয়ে বললেন, এবার আরম্ভ কর। শীতের রাত। অনেকদিন বাদে হঠাৎ লােডশেডিং হয়েছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। যে ঘরে আমরা বসেছি সেখানে একটা লণ্ঠন টিমটিম করে জ্বলছে। আমার ছােটভাই পিন্টু আবার একটু ভয়কাতুরে। ও আমার গা ঘেঁষে বসল। ছােটমামা গল্প শুরু করলেন- রমেশ মাডিয়া বেশ বড় ঘরের ছেলে। ওর বাবার কাপড়ের হােলসেল ব্যবসা ছিল। উনি মারা যাওয়ার পর পৈতৃক ব্যবসা রমেশ আর তার দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়েছে। কিন্তু পৈতৃক ব্যবসা ছাড়াও প্রত্যেক ভাই-ই নিজেরা অন্য কোনাে ব্যবসা করত। রমেশও।

ভাইয়ের মধ্যে ও সবচেয়ে চালাক-চতুর-ব্যবসাবুদ্ধিও প্রচুর। তবে একটা দোষ ছিল ওর। কোনাে ব্যবসাই একটানা বেশিদিন করতে ভালাে লাগত না ওর। যথেষ্ট লাভ হওয়া সত্ত্বেও। কিছুদিন যদি স্ন্যাক্স বার চালাল তাে তারপর খুলে বসল ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া দেবার ব্যবসা। কিছুদিন পর সেটা গুটিয়ে হয়তাে খুলেবসল একটা টাইপিং শেখানাের স্কুল। একদিন এসে রমেশ বলল, বীরুভাই, টাইপিং স্কুলের ব্যবসা আমার আর ভালাে লাগছে না। নতুন একটা কিছু করব ভাবছি। বললাম, বেশ তাে, তবে নতুন ব্যবসার উদ্বোধনের নেমন্তন্নটা পাই যেন। বুঝলি বুলি, রমেশ যে কোনাে ব্যবসা শুরু করার আগে ঘটাপটা করে পুজো করবে, আত্মীয়- বন্ধুদের নেমন্তন্ন করে হয় কোল্ড ড্রিংকস কিংবা আইসক্রিম খাওয়াবে। রমেশের সঙ্গে পরিচয় হবার পর ওর তিন-তিনটে ব্যবসার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইসক্রিম খেয়ে এসেছি।

এর কয়েকদিন পর হঠাৎ বেলা চারটে নাগাদ রমেশের ফোন এল, বীরুভাই, তৈরি থেকো, আধঘণ্টার ভেতর তােমাকে নিতে আসছি। হাতে তখন তেমন কিছু কাজ ছিল না, তাই রমেশ আসতেই রওনা হলাম ওর স্কুটারের পেছনেবসে। নতুন কেনা স্কুটার সোঁ সোঁ করে ছুটে চলল। আমার আবার এভাবে স্কুটারের পেছনে বসে যেতে বেশ অস্বস্তি হয়। শক্ত করে রমেশের কোমর জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলাম, কোথায় যাচ্ছি আমরা? আমি একটা বাড়ি কিনেছি। সেটা দেখাতে চাই তােমাকে। স্কুটার ততক্ষণে পুরােনাে শহরের দিকে বাঁক নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, সবাই আজকাল বাড়ি কেনে সবরমতী নদীর ওপারে নতুন শহরে। আর তুমি বাড়ি কিনলে এই পুরােনাে ঘিঞ্জি এলাকায় ?বাস করার জন্য বাড়ি কিনেছি নাকি? কিনেছি ব্যবসার জন্যে। তাছাড়া ও জায়গাটা ঘিঞ্জি নয় মােটেই। দেখলেই বুঝতে পারবে।

গােটা কয়েক আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হয়ে একটা সরু গলিতে পৌছলাম আমরা। লােকজন প্রায় নেই-ই সেখানে। গলির দু’ধারের বাড়িগুলাে জরাজীর্ণ, মনে হয় এখুনি ভেঙে পড়বে। আরাে একটু এগিয়ে যেতেই পেলাম আমেদাবাদের বিখ্যাত সিঁড়ি কুয়াে—দাদাহারিণী ভাও। কয়েকশাে বছরের পুরােনাে এই সিঁড়ি কুয়াের দেয়ালে নানা কারুকার্য। অনেক বিদেশি টুরিস্ট আসে দেখতে। সিঁড়ি কুয়াে ছাড়িয়ে আরাে খানিকটা গিয়ে স্কুটার থামাল রমেশ। বলল, এসে গেছি আমরা। অবাক হয়ে দেখলাম ডানদিকে আঙিনাওলা বেশ বড় একটা বাড়ি। অতি জরাজীর্ণ। দেয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বার হয়ে গেছে। ছাতের কার্নিশ ভেঙে পড়েছে জায়গায় জায়গায়। আঙিনায় ঢুকলাম আমরা। সামনের বারান্দার কাঠের থামগুলােও পড়ােপড়াে।

বাড়ির মেন দরজাটা মােটা কাঠের—কিছু কারুকার্য করা। একটু ধাক্কা দিতেই কঁাচ করে খুলে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে নাকে এল চামচিকের গন্ধ।আমি রমেশকে বললাম, এই বাড়িতে কী বিজনেস করবে তুমি? দেখে তাে এটাকে ভূতের বাড়ি বলে মনে হচ্ছে। রমেশ উল্লসিত স্বরে বলল, মনে হচ্ছে তাে? সেই জন্যই তাে কিনেছি।বুঝতে পারলাম না ব্যাপারটা। বলছি শােন। মাস দুয়েক আগে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় একটা লেখা পড়েছিলাম, ইংল্যান্ডের হানাবাড়িগুলাের ওপর। তাতে বলা হয়েছে যে ইয়ােরােপিয়ান ও আমেরিকান টুরিস্টদের আজকাল পুরােনাে গির্জা, প্রাসাদ বা দুর্গ একঘেয়ে লাগছে। ওরা চাইছে নতুন কিছু, নতুন উত্তেজনা। তাই দলে দলে লাইন লাগাচ্ছে পুরােনাে ভূতুড়ে বাড়ি দেখতে আর একটা ভৌতিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে।

তা আমি ভাবছি, আমাদের দেশেও না কেন, দেশি-বিদেশি টুরিস্টদের একটু ভৌতিক অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করি? বিনে পয়সায় নয় অবশ্য; টিকেট কিনে ঢুকতে হবে। একটু সন্দেহমাখা স্বরে বললাম, রমেশ, বিলেত-আমেরিকার লােকেরা হয় হুজুগে। ভূত নিয়ে নাচানাচি করতে পারে ওরা। কিন্তু আমাদের দেশের লােকেরা তাে সেরকম নয়। পয়সা খরচ করে টিকিট কিনে ভূত দেখতে নাও আসতে পারে কেউ। ঠিকমতাে বিজ্ঞাপন দিতে পারলে কেন আসবে না? ইংরেজ-আমেরিকানরা আসছে এটা শুনলেই এ শহরের হঠাৎ বড়লােক হওয়ার দল পিলপিল করে আসবে। তাছাড়া আজকাল ইন্টারন্যাশন্যাল টুরিজিমের ওপর জোর দিচ্ছে সবাই। বিদেশিরা তাে আসবেই। কিন্তু ভৌতিক অভিজ্ঞতাটা হবে কী করে? বাড়িতে কি সত্যি সত্যি ভূত আছে?

দেখ বীরুভাই, ওসব ভূত-টুতে আমি বিশ্বাস করি না। তবে ভৌতিক অভিজ্ঞতা দেওয়া এমন কিছু একটা কঠিন কাজ নয়। বাড়িটা তাে দেখলেই। জনাকয়েক অ্যাসিস্ট্যান্ট, একটা টেপ-রেকর্ডার, খানকয়েক টেপ, গােটাকয়েক টুনি বা আর একটা কঙ্কাল জোগাড় করলেই যথেষ্ট। দিন দশেকের মধ্যেই সব বন্দোবস্ত করে ফেলব আমি। কিন্তু তােমার অ্যাসিস্ট্যান্টরা যদি ব্যাপারটা পাবলিকের কাছে ফাঁস করে দেয় ? তা করবে না ওরা। ওদের বেতন ছাড়াও টিকেট সেলের ওপর কমিশন দেব যে! ঠিক বারােদিন পর রমেশ মাডিয়ার ফোন এল আমার কাছে। বীরুভাই, আমার অশরীরী নিবাস তৈরি। কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গণেশ পুজো হবে সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। অশরীরী নিবাসের দরজা দর্শকদের জন্য ভােলা হবে রাত আটটায়। একজন উপমন্ত্রী আসবেন ফিতে কাটতে। এসাে কিন্তু।

বড় ব্যস্ত আছি, তাই নিজে যেতে পারলাম না। বললাম, ভূতের বাড়ির উদ্বোধন করছ গণেশ পুজো করে! লােকমুখে খবর পেলেও চলে যেতাম ঠিক। আসব নিশ্চয়ই। পরদিন সকালে খবরের কাগজ খুলতেই বড়বড় হরফে লেখা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল—ভূতের সঙ্গে মােলাকাত করতে চান? তাহলে আসুন অশরীরী নিবাসে। রাত আটটা থেকে সাড়ে দশটা। টিকিট মাথা পিছু দশ টাকা। এরপর অশরীরী নিবাসের ঠিকানা ও পৌছুবার হদিস। অফিসে সেদিন কাজের উপলক্ষে দু’চার জনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। শুনলাম সবাই বিজ্ঞাপনটা দেখেছে। সবার মনেই এক প্রশ্ন—ব্যাপারখানা কী। সবাই ভাবছে একবার গিয়ে দেখতে হবে। শেষ মুহূর্তে একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। একখানা অটো-রিকশা নিয়ে যখন সেখানে পৌছলাম তখন প্রায় সাড়ে সাতটা।

দেখলাম আঙিনায় বেশ ক’খানা স্কুটার, সাইকেল ও খান পাঁচেক মােটরগাড়ি। তার মধ্যে একখানায় সরকারি লেবেল আঁটা। মনে হল মন্ত্রীমশাই এসে গেছেন, কারণ আশেপাশে জনা তিনেক বন্দুকধারী গার্ড ঘােরাফেরা করছে। গেটের কাছেই পর পর দু’খানা তাবু গাড়া। একটা তাবুতে, পুজো হয়েছে, অন্য তাঁবুতে টিকিট কাউন্টার। গণেশকে একটা নমস্কার ঠুকে বেরিয়ে আসতেই একজন কেশর-পেস্তা আইসক্রিমের কাপ হাতে ধরিয়ে দিল। চারদিকে চেয়ে দেখলাম প্রায় সবার হাতেই আইসক্রিমের কাপ। রমেশের বন্দোবস্ত বেশ ভালােই। বলতে ভুলে গেছি—দুটো তাবুতেই ইলেকট্রিকের টেম্পােরারি কানেকশন ছিল। কিন্তু অশরীরী নিবাস একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার।একটু দূরে দাঁড়িয়ে রমেশ একজন বেঁটে মােটা লােকের সঙ্গে কথা বলছিল। সঙ্গের লেজুড় ও বন্দুকধারী গার্ডদের দেখে বুঝলাম ইনিই উপমন্ত্রী হবেন।

আমি কাছে যেতেই রমেশ বলে উঠল, যাক, শেষ পর্যন্ত আসতে পারলে তাহলে! বীরুভাই, ইনিই আমাদের নগর-পরিকল্পনার উপমন্ত্রী গিরিশ পটেল। মন্ত্রীমশাই একটু উসখুস করে বললেন, রমেশভাই কত দেরি রমেশ ওর রেডিয়াম-ডায়ালওলা হাতঘড়ি দেখে বলল, আর ঠিক দশ মিনিট স্যার। পুরুতমশাই বলেছেন ঠিক আটটায় সবচেয়ে শুভ মুহূর্ত। তারপর সমবেত জনতার দিকে তাকিয়ে রমেশ বলল, দশ মিনিট পর ফিতেকাটা হবে। এরপর দশ দশজনের একেকটা দলকে ভেতরে নিয়ে যাবে আমাদের গাইড। তবে আপনারা সঙ্গে কোনাে আলাে রাখবেন না। টর্চ থাকলে কাউন্টারে জমা দেবেন। টিকেট কেটে নিন সবাই। আর হ্যা, প্রথম দলে থাকবেন মন্ত্রীমশাই, তার সেক্রেটারি আর গার্ডরা—তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, আর থাকবে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ও উৎসাহদাতা বীরুভাই।

বুঝলি বুলি, বেশ হাসি পেল আমার। আমি আবার ওকে উৎসাহ দিলাম কবে? তবে ভূমিকা যখন একটা দিয়েছে তখন তা পালন করতে হবে। তাই গম্ভীর মুখে এদিকে-ওদিকে তাকাতে লাগলাম, যেন দুনিয়ার সবাইকে উৎসাহ দেবার জন্য তৈরি হয়েই আছি। টিকিট কাটার জন্য হুড়ােহুড়ি পড়ে গেল। রমেশ কিন্তু আমাকে টিকিট কাউন্টারে যেতে দিল না। বলল, তুমি আমার গেস্ট, তুমি আবার টিকিট কাটবে কী? আটটা বাজতেই মন্ত্রীসহ সবাই তাঁবুর আলাের সীমানা ছাড়িয়ে অশরীরী নিবাসের অন্ধকারে এসে দাঁড়ালাম। গাইডের হাতে টর্চ। ওটা জ্বালালে দেখলাম পড়ােপড়াে দুটো কাঠের থামে বাঁধা একটা লাল ফিতে। রমেশ একটা ছােট কচি মন্ত্রীমশাইকে দিল আর উনিও খচ করে ফিতেটা কেটে দিলেন।

তখুনি শােনা গেল তীক্ষ শিসের মতাে একটা আওয়াজ। অশরীরী নিবাসের দরজাটাও আপনা থেকেই কঁাচ করে খুলে গেল। একটা দমকা ঠান্ডা হাওয়া এসে গায়ে লাগল। নাকে এল বাদুড় আর চামচিকের গন্ধ। যদিও জানতাম সমস্ত ব্যাপারটাই সাজানাে—ভেতরে থাকা রমেশের কোনাে সহকারী হয়তাে শিস দিয়েছে ও দরজা খুলে দিয়েছে তবুও গাটা কেমন ছমছম করে উঠল। এই সময় উপমন্ত্রী হঠাৎ বলে বসলেন, রমেশভাই, একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট ছিল, ভুলেই গিয়েছিলাম। আমাকে তাে এক্ষুনি যেতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা? আরেকদিন হবে’খন, বলে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে তাড়াহুড়াে করে বেরিয়ে গেলেন মন্ত্রীমশাই।

অন্যদের কান বাঁচিয়ে রমেশ আমাকে ফিসফিস করে বলল, মন্ত্রীমশাই ভয় পেয়েছেন। বুঝলে তাে? এরপর আমাকে নিয়ে দশজন দর্শকের একটা দল তৈরি হল। গাইডকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অশরীরী নিবাসে ঢুকলাম। বলাবাহুল্য দর্শকদের কারুর হাতেই কোনাে টর্চ ছিল না। গাইডের হাতে একটা টর্চ আছে বটে তবে আলাে মােটেই জোরালাে নয়। ভেতরে ঢুকেই গাইডটি গম্ভীর গলায় বলল, এই বাড়িটা ছিল সুলতান মামুদ বেগড়ার দরবারের একজন বড় ওমরাহের। আপনারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা ছিল ওঁর জলসাঘর। এই বলে মিটমিটে টর্চের আলােটা একবার চারদিকে ঘুরিয়েই নিভিয়ে দিল। মনে হল অন্ধকার যেন আরাে বেড়ে গেল তাতে। সেই ঘন অন্ধকার ভেদ করে ভেসে এল তবলার চটি, আর ঘুঙুরের আওয়াজ। শােনা গেল কাচের গেলাসের ঠুনঠুন। আমাদের দলে তিনজন ভদ্রমহিলাও ছিলেন। ওঁরা তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, এ ঘরটা তাে হয়ে গেল। এরপর কী আছে দেখলে হত না?

গাইড বলল, চলুন, ওমরাহের শােবার ঘরে নিয়ে যাই আপনাদের। শােবার ঘরে যাবার আগে একটা টানা বারান্দা পার হতে হয়। আমরা বারান্দায় পা দিতেই। শুনতে পেলাম ভারী পায়ের আওয়াজ। গাইড বললে, এই ওমরাহের অনেক শত্রু ছিল তাে! তাই ওঁর শােবার ঘরের সামনে সান্ত্রীরা পাহারা দিত। তাদেরই পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন আপনারা। অন্য দর্শকদের কী প্রতিক্রিয়া হল জানি না, কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম সব কিছুই টেপ-রেকর্ডারের কারসাজি। ওমরাহের শােবার ঘরে ঢুকে ফের টর্চ জালাল গাইড। মাঝারি ধরনের ঘর, দেখবার মতাে কিছু নেই। কিন্তু টর্চ নেভাতেই দেখা গেল দেয়ালের গায়ে দুটো চোখ, তার থেকে লাল আলাে বেরুচ্ছে। টর্চটা ফের জ্বালল গাইড, সঙ্গে সঙ্গে লাল চোখ দুটো মিলিয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর টর্চটা নেভাতেই ফের দেখা গেল লাল চোখ।

আমি যদিও বুঝে নিয়েছিলাম ওটা টুনি বাল্বের কারসাজি—দলের অন্য সবাই উসখুস করে বলে উঠলেন, এটাও তাে দেখা হল। এরপর গাইড বলে চলল, এই অশরীরী নিবাসের প্রতিটি ইটে লুকিয়ে আছে অতৃপ্ত আত্মার কান্না ওর কথা শেষ হয়েছে কি হয়নি, হঠাৎ কোথায় যেন কে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। অশরীরী নিবাসের দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে সে শব্দ ছড়িয়ে পড়ল সারা বাড়িতে। দলের সকলে চঞ্চল হয়ে উঠলেন। গাইড ঘর থেকে বেরুবার আগেই কয়েকজন বাড়ির বাইরে যাবার জন্য নাচঘরের দিকে পা বাড়াতেই গাইড বলে উঠল, এখনই বাইরে যাচ্ছেন কেন? আপনাদের তাে আসল জায়গাটাই দেখানাে হয়নি। সেটা কোনটা? প্রশ্ন করলেন একজন। এ বাড়ির পেছন দিকে একটা ছােট ঘর আছে। বাঁদির ঘর। শােনা যায় ওমরাহের এক বাঁদি ওখানে আত্মহত্যা করেছিল। বাঁদির সেই ঘরটিই এই অশরীরী নিবাসের প্রধান আকর্ষণ।

মনে হল দলের অনেকেই এই আসল জায়গাটা দেখতে তত উৎসুক নন। দেরি হয়ে যাচ্ছে, এতক্ষণ লাগবে ভাবিনি—ইত্যাদি মন্তব্য কানে এল। গাইড কিন্তু সেসব মন্তব্যে কান না দিয়ে এগিয়ে চলল। অগত্যা আমরাও চললাম পিছু পিছু। আরাে গােটাকয়েক ঘর ও টানা বারান্দা পার হয়ে আমরা এসে বাঁদির ঘরের সামনে দাঁড়ালাম। চারদিকে কেমন একটা দমবন্ধ ভাব। সম্ভবত ঘরটা খুবই ছােট আর তাতে কোনাে জানালা নেই, এজন্য। আমরা ঘরে পা দিয়েই চমকে উঠলাম। বিকট হা-হা-হা শব্দের হাসি গায়ের রক্ত হিম করে। দিল। পুরাে ব্যাপারটাই সাজানাে এটা জানা সত্ত্বেও আমার গায়েও কাটা দিয়ে উঠল।

দলের ভদ্রমহিলাদের মধ্যে, একজন ভয়ার্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন, আলাে জ্বালান শিগগির। গাইড সঙ্গে সঙ্গে আলাে জালাল বটে, কিন্তু না জ্বাললেই বােধহয় ভালাে ছিল। কারণ টর্চের সেই টিমটিমে আলােয় আমরা দেখলাম ওপরের বরগা থেকে ঝুলে আছে একটা কঙ্কাল—বিনা হাওয়াতেই অল্প অল্প দুলছে। হাসির আওয়াজ তখনাে শােনা যাচ্ছিল। এবার মনে হল কঙ্কালটাই যেন হাসছে। চক্ষুলজ্জার বালাই না রেখে দলের প্রায় সবাই ‘ওরে মা রে, বাবা রে’ বলে দরজার দিকে দৌড় লাগালেন। আমিও ওঁদের অনুসরণ করলাম। পেছনে গাইডটি বলতে লাগল, ভয় পাবেন আপনারা, অশরীরী নিবাসের আত্মারা কারুর ক্ষতি করে না কখনাে। কিন্তু কে শােনে ওর কথা! বাইরে এসে দেখি আরেকদল যাবার জন্য তৈরি। আমাদের দেখে তাঁরা জিগ্যেস করতে লাগলেন, কী, কেমন দেখলেন, দশ টাকা উসুল হবে তাে? বুঝলি বলি, যারা একটু আগেই ‘মা রে বাবা রে’ বলে দৌড় লাগিয়েছিলেন তারাই খোলা আকাশের নীচে অন্য লােকজনের সঙ্গ পেয়ে বলতে লাগলেন, নিশ্চয়। একটা ওয়ান্ডারফুল এক্সপিরিয়েন্স।

দ্বিতীয় দলে ছিল একজন মুখফোড় ছােকরা। প্রশ্ন করল, ভয় করেনি আপনাদের? আমাদের দলের একজন মােটাসােটা ভদ্রলোেক ভারিক্কী গলায় বললেন, জীবনে সব অভিজ্ঞতাই হওয়া দরকার, বুঝলে হে ছােকরা! ভয়ের অভিজ্ঞতাও। আমাকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে রমেশ জিগ্যেস করল, কী রকম দেখলে বীরুভাই ? তােমার বন্দোবস্ত চমৎকার। সহকারীরাও পারফেক্ট। সব জেনে শুনেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। বিজনেস তােমার ভালােই চলবে মনে হচ্ছে। তবে বেশি ভয় পাইয়ে দিও না, তাহলে দর্শক কমে যেতে পারে। রমেশ বলল, কঙ্কালের হাসির কথা বলছ নিশ্চয়। ভলুমটা একটু কম করে দিতে বলব। বুঝলি বুলি, রমেশ মাডিয়ার অশরীরী নিবাসের ব্যবসা বেশ ভালােই চলতে লাগল। দেখা কমই হত ওর সঙ্গে কারণ দিনের বেলা ও ব্যস্ত থাকত পৈতৃক ব্যবসায় আর সন্ধের পর অশরীরী নিবাসে।

তবে ফোনে কথা হত প্রায়ই। কাগজে প্রথম দিকে বেশ ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিলেও মাসখানেক পর লক্ষ করলাম বিজ্ঞাপন আর দেওয়া হচ্ছে না। একদিন ফোনে ওকে জিগ্যেস করায় ও বলল, বিজ্ঞাপন ছাড়াই যা লােক হচ্ছে সামাল দিতে পারছি না। তাই বিজ্ঞাপন দিয়ে আর পয়সা খরচ করছি না। রমেশ আমাকে আরেকদিন অশরীরী নিবাসে যেতে বলে জানাল, কয়েকটা নতুন জিনিস টেপ করেছি বীরুভাই। মানে ভয়েরও একটা রকমফের করতে হবে তাে? হ্যা, কঙ্কালের ঘরে এখন হাসির বদলে দিচ্ছি বুকফাটা কান্না। কিছুদিন পর বদলে দেব অবশ্য।

সেই সময়ে কতকগুলাে অর্ডারের ব্যাপারে আমাকে আমেদাবাদের বাইরে যেতে হয়েছিল বেশ কিছুদিনের জন্য। কলকাতাতেও একবার এসেছিলাম, তােদের মনে আছে বােধহয়। আমেদাবাদ ফিরেও ব্যস্ত থাকলাম আরাে কিছুদিন। এসবের জন্য অশরীরী নিবাসে আমার যাওয়া হয়নি। রমেশের খোজও নিতে পারিনি। ঠিক মনে নেই মাস চার-পাঁচ বােধহয় এভাবেই কেটেছিল। কাজের বােঝা একটু কমলে ভাবছি রমেশকে একদিন ফোন করি—এমন সময় ও-ই ফোন করল আমার অফিসে। বীরুভাই, অশরীরী নিবাসের বিজনেস তুলে দিলাম। সে কি, তুলে দিলে কেন? লাভ হচ্ছিল না? তা নয়, লাভ বেশ ভালােই হচ্ছিল। তবে আমার খাটুনি যাচ্ছিল খুব। দিনের বেলা কাপড়ের ব্যবসা আবার সন্ধে থেকে রাত দশটা অবধি অশরীরী নিবাসে। ছুটিছাটাও নেই, কারণ ছুটির দিনেই ভূতের বাড়িতে লােক হয় বেশি। তাছাড়া নতুন আরেকটা বিজনেসের আইডিয়া মাথায় এসেছে।

বুঝলাম খাটুনি-ফাটুনি বাজে কথা। এক বিজনেস বেশিদিন করতেই পারে না রমেশ। জিগ্যেস করলাম, অতবড় বাড়িটা কিনলে, এখন বিজনেস বন্ধ করে দিলে ক্ষতি হবে না তােমার ? আরে না-না। কম্পাউন্ডসুষ্ঠু বাড়িটা এক বিল্ডারের কাছে বিক্রি করেছি—বেশ মােটা লাভে। পুরােনাে বাড়িটা ভেঙে ওখানে ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করবে ও। হ্যা, যেজন্য তােমাকে ফোন করছি। আজ সারা দিনে আমার লােকজন সব সাজ-সরঞ্জাম সরিয়ে নেবে। বিকেল নাগাদ আমি গিয়ে তালা লাগিয়ে আসব। তুমি আসবে আমার সঙ্গে? বিজনেসের শুরুটা তােমার সঙ্গে হয়েছিল, শেষটাও হয় তােমার সঙ্গেই হােক। আমি এসে নিয়ে যাব তােমাকে।

ঠিক আছে, আমি তৈরি থাকব, বললাম আমি। রমেশ এল বিকেল সাড়ে ছ’টার পর। অশরীরী নিবাসে পেঁৗছতে পৌছতে প্রায় সাতটা বাজল। তবে জানিস তাে বুলি, পশ্চিম ভারতে সূর্য ডােবে দেরিতে। তাই সন্ধে সাতটা বাজলেও অন্ধকার হয়নি। আমরা গিয়ে দেখি রমেশের লােকজন সব মালপত্র একটা অ্যামবাসাড়ার গাড়িতে ওঠাচ্ছে। একটা লম্বা কার্ডবাের্ডের বাক্স কোথায় ঢােকাবে ভেবে পাচ্ছিল না লােকগুলাে। রমেশ ওটাকে গাড়ির মাথায় ক্যারিয়ারে নিতে বলল, তারপর আমায় জানাল, এটা সেই কঙ্কালটা। এটা দিয়ে কী করবে এখন? যার কাছ থেকে কিনেছিলাম তাকেই বেচে দেব, সামান্য লােকসানে অবশ্য। তারপর রমেশ ওর সহকারীদের জিগ্যেস করল, সব জিনিস মনে করে এনেছ তাে? ক্যাসেট, টেপ-রেকর্ডার হা।

ঠিক আছে। তােমরা রওনা হয়ে যাও। জিনিসগুলাে আমার বাংলােতে পৌঁছে দিও। আমি আর বীরুভাই তালা-টালা লাগিয়ে ফিরব। হ্যা, টর্চটা দিয়ে যাও। গাড়িটা চলে গেলে পর আমরা দুজনে ধীরে-সুস্থে অশরীরী নিবাসের বাড়িটার দিকে চললাম। মেন দরজায় তালা লাগাতে গিয়েও থেমে গেল রমেশ। বলল, চল, না হয় ভেতরটা একবার দেখেই আসি। ভূতকে ‘বাই বাই করা যাবে, কী বল। দরজাটা রমেশ ঠেলে খুলতে যাবে এমন সময় ওটা আপনা থেকেই ক্যাচ করে খুলে গেল। রমেশ বলল, দ্যাখাে, হাওয়ার কাণ্ড। অমন মােটা দরজাও খুলে গেল। বুঝলি বুলি, আমি কিন্তু কোনাে হাওয়ার অস্তিত্ব টের পাইনি। তবে কথা না বাড়িয়ে বললাম, চল, ভেতরে যাওয়া যাক।

প্রথমেই সেই বড় হলঘরটা। বললাম, এটাকেই তাে তােমরা জলসাঘর বলতে, না? আমরা বলতাম মানে? রমেশ প্রতিবাদের স্বরে বলল, এই অশরীরী নিবাসের ইতিহাস জোগাড় করতে আমাকে কত পুরােনাে পুঁথিপত্র ঘাঁটতে হয়েছে জানাে! প্রায় রিসার্চের মতাে। এ বাড়িটা সত্যিই সুলতান মামুদ বেগড়ার একজন ওমরাহের ছিল। এটা সত্যিই ওনার জলসাঘর। ওপরের ভাঙা ঝাড়লণ্ঠন দেখলেই তা বুঝতে পারবে। এই বলে টর্চটা একবার ওপরের দিকে ঘােরাতেই দেখলাম রমেশের কথাই ঠিক। তাছাড়া, রমেশ ফের শুরু করল, এই ওমরাহের একজন বাদি সত্যি সত্যিই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ভৌতিক ব্যাপারটা আমার বানানাে হতে পারে, ইতিহাসটা নয়। শােবার ঘরে যাবার টানা বারান্দায় এলাম আমরা। জানিস বুলি, আমার যেন মনে হল আমাদের দুজনের জুতাের শব্দ ছাড়াও আরাে একজোড়া জুতাের আওয়াজ শােনা যাচ্ছে। তবে ওটা আমার মনের ভুলও হতে পারে।

শােবার ঘরে ঢুকতেই দেখি দুটো টুনি বাম্বের লাল আলাে জ্বলছে আর নিভছে। রমেশ বিরক্ত হয়ে বলল, নাঃ, আজকাল কাউকে কোনাে কাজের ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হবার জো নেই। বারে বারে বলেছি সব বাহু খুলে নিয়ে যেতে, তাও ফেলে গেছে! বললাম, খালি বাল্ব নয়, কানেকশন তার, সুইচ এসবও রয়ে গেছে নিশ্চয়। রমেশ বলল, একটু টর্চটা দেখাও তাে বীরুভাই। বাল্ব দুটো খুলে নিই। কিন্তু অবাক কাণ্ড! টর্চ জ্বালিয়েও কোথাও টুনি বারে দেখা পেলাম না। ঘরের দেওয়ালে প্লাস্টার থাকায় এখান-ওখান থেকে ইট খসে পড়ে ফোকর তৈরি হয়েছে গােটা কয়েক। হয়তাে বাল্বগুলাে ওখানেই কোথাও লুকানাে। রমেশ বলল, অত খোঁজার সময় নেই। যেতে দাও, দুটো টুনি বাই তাে।

আবার আমরা এলাম বারান্দায়। এবারও আমার মনে হল আমাদের দুজনের জুতাের আওয়াজ ছাড়াও তৃতীয় এক জোড়া জুতোের আওয়াজ শােনা যাচ্ছে। হঠাৎ গা-টা কেমন ছমছম করে উঠল। রমেশকে বললাম, দেখা তাে হল, চল এখন বাইরে গিয়ে মেন দরজায় তালা দিয়ে দিই। রমেশ শুনল না, বলল, কঙ্কালের ঘরটা শেষমেশ একবার দেখে যাই চল। কে জানে হতভাগারা ওখানেও কিছু রেখে গেছে কিনা। টর্চ জ্বালিয়েই চলছিলাম আমরা, তবু আমার গা-ছমছমানি ভাবটা গেল না। বরঞ্চ কঙ্কালের ঘরের দিকে যত এগুতে লাগলাম ততই বাড়তে লাগল। রমেশও বুঝতে পারলাম—কেমন চুপ মেরে গেছে। তবে ও-ও কি অস্বাভাবিক কিছু উপলব্ধি করেছে!

কঙ্কালের ঘরের দরজায় এসে রমেশ টর্চের আলাে ভেতরে ফেলতে নিজের অজান্তেই চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। ঘরে ঝুলন্ত একটা কঙ্কাল—আগের মতােই অল্প অল্প দুলছে। রমেশ বলল, আমাদের কঙ্কালটা তাে বাক্সবন্দী করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম, এটা আবার কোথা থেকে এল? তবে কি অশরীরী নিবাসে সত্যি ভূত আছে? শেষের দিকে গলাটা কেঁপে গেল একটু। ওর কথা শেষ হতে না হতেই কান-ফাটানাে হাসির শব্দ—হা-হা-হা! এত জোরে যা কোনাে টেপ-রেকর্ডারের ফুল ভলমেও সম্ভব নয়। সেই হাসি যেন আমাদের তাড়া করে এল। আমরাও পড়িমরি করে দৌড় লাগালাম। এবার স্পষ্ট শুনলাম আমাদের জুতাের আওয়াজের পেছনে আরেক জোড়া জুতাের আওয়াজ ছুটে আসছে।

হলঘরে পৌছে প্রায় একলাফে বাইরে বারান্দায় চলে এলাম আমরা। রমেশ জোরে টেনে দরজাটা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিল। তারপর স্কুটারে উঠে বসতেই জোরে চালিয়ে দিল স্কুটারটা। ছােটমামা থামলেন। পিন্টু চিচি করে বলল, অশরীরী নিবাসে তাহলে সত্যি সত্যি ভূত ছিল ছােটমামা? ছােটমামা একটু বিরক্তির সুরে বললেন, কতদিন বলেছি অত প্রশ্ন করলে গল্প বলতে পারব না আমি। ঠিক তখুনি ঘরের আলােগুলাে দপ করে জ্বলে উঠল। ছােটমামা মাকে বললেন, কই ছােড়দি, খাবার দেবে নাকি? খিদে পেয়ে গেছে।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত