পৈতৃক ভিটা

পৈতৃক ভিটা

মধুমতী নদীর ওপরেই সেকালের প্রকাণ্ড কোঠাবাড়ীটা। রাধামােহন নদীর দিকের বারান্দাতে বসে একটা বই হাতে নিয়ে পড়বার চেষ্টা করল বটে, কিন্তু বইএ মন বসাতে পারলে না। কেমন সুন্দর ছােট্ট গ্রাম্য নদীটি, ওপারে বাঁশবন, আমবন—বহুকালের ফলের বাগান যেন প্রাচীন অরণ্যে পরিণত হয়েছে। একা এতবড় বাড়ীতে থাকতে বেশ লাগে।

খুব নির্জন, পড়াশুনা করবার পক্ষে কিংবা লেখাটেখার পক্ষে বেশ জায়গাটি। তাদেরই পৈতৃক বসতবাটী বটে, তবে কতকাল ধরে তাদের কেউ এখানে আসেনি, কেউ বাস করেনি। রাধামােহনের বাবা শ্যামাকান্ত চক্রবর্তী তাঁর বাল্যবয়সে এ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। মেদিনীপুরে তাঁর মামার বাড়ী। সেখান থেকে লেখাপড়া শিখে মেদিনীপুরে ওকালতি করে বিস্তর অর্থ উপার্জন করেন এবং সেখানে বড় বাড়ীঘর তৈরী করেন। স্বগ্রামে যে একেবারেই আসেননি তা নয়, তবে সে দু-একবারের জন্যে। এসে বেশি দিন থাকেনওনি। অতবড় পয়সাওয়ালা উকিল, থাকলে তাঁর চলত না।

গ্রামের বাড়ীতে জ্ঞাতি-ভাইরা এতদিন ছিল, তারা সম্প্রতি এখান থেকে উঠে গিয়ে অন্যত্র বাস করছে, কারণ গ্রামে বসে থাকলে আর সংসার চলবার কোন উপায় হয় না। যা কিছু জমিজমা আছে, না দেখলে থাকে না। বাড়ীটারও একটা ব্যবস্থা করতে হয়। নইলে বাড়ীঘর সব নষ্ট হয়ে যাবে। রাধামােহন নিজে গত বৎসর ওকালতি পাশ করে পরলােকগত পিতৃদেবের পসারেবসেছে। এবার দেশের চিঠি পেয়ে পুজোর ছুটিতে একাই গ্রামে এসেছে বাড়ীঘর এবংজায়গা-জমির একটা বিলি-ব্যবস্থা করতে। পাশের বাড়ীর বৃদ্ধ ভৈরব বাড়জ্যে দুদিন খুব দেখাশুনা করছেন। তিনি জোর করে তাঁর বাড়ীতে রাধামােহনকে নিয়ে গিয়ে কদিন খাইয়েছেন। নইলে রাধামােহন নিজেই রেধে খাবে পৈতৃক ভিটেতে, এই ঠিক করেই এসেছিল। ভৈরব বাঁড়ুজ্যের বড় ছেলে কেষ্ট এসে বললে—দাদা, চা খাবেন, আসুন।

—তুই নিয়ে আয় এখানে কেষ্ট। বেশ লাগছে সন্ধ্যে বেলাটা নদীর ধারে।
—আনব? সেই ভাল, যা।

গ্রামের সবাই অবিশ্যি আত্মীয়তা করেছে, ভালবেসেছে। বহু লােকেরা বলেছে—আহা তুমি শ্যামাকান্ত দা’র ছেলে, কেন হাত পুড়িয়ে রেধে খেতে যাবে। আমরা তাে মরিনি এখনও। এস আমাদের বাড়ী। রাধামােহন সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ। কেষ্ট চা দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেল। তার পর রাধামােহন আবার একলা। অন্ধকার রাত্রি, মধুমতীর জলে তারা ভরা আকাশের ছায়া পড়েছে। রাধামােহন বসে বসে ভাবছে, এই এতবড় বাড়িটা তার ঠাকুরদাদা তৈরি করেছিলেন কেন এখানে? সেকালের পুলিশের দারােগা ছিলেন তিনি। অনেক পয়সা রােজগার করেছেন বটে কিন্তু বৈষয়িক বুদ্ধি ছিল না সেকালের লােকের। এই বনজঙ্গলে-ভরা গ্রামে কেউ পয়সা খরচ করে বাড়ী করে? কি কাজে আসছে এখন?

আচ্ছা সুরকির কলওয়ালারা বাড়ীটা যদি নেয়? তাহলে পুরনাে ইটের দরে বাড়ীটা বিক্রি করা যায়। খুট করে কিসের শব্দ শােনা গেল। রাধামােহন দেখলে, একটি দশ এগার বছরের টকটকে ফর্সা মেয়ে ঘরের দাওয়ার আড়াল থেকে, উকি মারছে। ঘরের মধ্যে হ্যারিকেন জলছে, বারান্দাতে সামান্য আলাে এসে পড়েছে, সুতরাং একেবারে অন্ধকারে সে বসে নেই। ভৈরব বাঁড়ুজ্যে একবার ছেলে পাঠায়, একবার মেয়ে পাঠায়, লােকটা খুব যত্ন করছে বটে। ও বললে—কি খুকি, ভাত হয়েছে বুঝি? একটু পরে মেয়েটি সংকোচের সঙ্গে বাইরে এসে দাঁড়ায়। রাধামােহন বললে তােমার নাম কি?

-লক্ষী । বেশ নাম। পড়?

—উহ।

—গান জান?

– উহু ।

রাধামােহন হেসে বললে—তবে তাে মুশকিল দেখছি, বিয়ের বাজারে তুমি যে বিপদে পড়বে। রান্না? বালিকা ঘাড় নেড়ে জানায় সে জানে।

—ওই একটা গুণ রয়েছে তােমার। কি কি রান্না জান?

-সব।

—সব? বাঃ বেশ খুকি তুমি। বস। বালিকা সলজ্জ ভাবে ঘাড় নেড়ে বললে—না, বসব না।

-কেন? কাজ আছে ?

-না।

—তবে বস।

-না আমি যাই। তুমি খেয়ে এস।

– যাচ্ছি। ভাত হয়েছে?

—তােমার খুব খিদে পেয়েছে—না? যাও খেয়ে এস।

রাধামােহন কি একটা বলতে গিয়ে পেছন ফিরে দেখলে খুকি কখন চলে গিয়েছে। সে একটু, পরে বাঁড়ুজ্যে-বাড়ী খেতে গেল। ভৈরব বাড়জ্যে বললেন—এস বাবাজি, এস। রান্নাও হয়ে এল প্রায়। রাধামােহন বললে—হাঁ, আপনার মেয়ে ডাকতে গিয়েছিল যে- খাওয়া-দাওয়া করে রাধামােহন চলে এল। একা নির্জন বাড়ীতে তার বেশ লাগে।

তার পূজ্যপাদ পিতৃপুরুষেরা যেন অদৃশ্য চরণে এখানে বিচরণ করেন। এই বাড়ীতে তার পিতামহ বাল্যকালে খেলে বেড়িয়েছেন। তার পিতামহী নব বধূ রূপে প্রথম এসে দুধে-আলতায় পা রেখে দাঁড়িয়েছেন এ-বাড়ীর প্রাঙ্গণে। অজি তারা বিদেশে গিয়ে বড় বাড়ী ফেদে বাস করছে, দেশকে ভুলেছে। গভীর রাত্রে ঘুমের ঘােরে সব পূর্বপুরুষেরা যেন এসে অনুযােগ করেন—কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলে ? কি করেছিলাম আমরা? পরদিন সকালে উঠে সে নিজের জমিজমা নিয়ে ব্যস্ত রইল, সারাদিন কাটল সে- ভাবে। রাত্রে বারান্দাতে বসেছে, আবার সেই খুকিটি এসে দরজার আড়ালে দাঁড়াল। প্রথমটা রাধামােহন টের পায়নি—বড় লাজুক মেয়ে, নিঃশব্দচরণে কখন এসে যে দাঁড়ায় ! রাধামােহন বললেও খুকি ?

—ভাত হয়েছে নাকি?

—আজ দেরী হবে। মাংস রান্না হচ্ছে তােমার জন্যে।

—সত্যি? তবে তাে আজ ‘ফীস্ট’ এর ব্যবস্থা। ও, তুমি কি ‘ফীস্ট’ বুঝতে পারলে না? ভােজ’ যাকে বলে। কি বল ? খুকি হেসে চুপ করে রইল। বেশ মেয়েটি! বেশি কথা বলে না, শান্ত সলজ্জ ব্যবহার। রাধামােহন বললে—তােমার মামার বাড়ী কোথায় কি ?

—ভুলে গিয়েছি।

—ভুলে গিয়েছি কি রকম? সেখানে যাও না ? খুকি ঘাড় নেড়ে বললে—না। রাধামােহনের হাসি পেলে খুকির কথায়। বেশ নিঃসংকোচ ভাব ওর। খুকি আবার বললে—তুমি একা এসেছ কেন ? রাধামােহন হাসতে হাসতে বললে—কেন বল তাে?

—বৌঝিদের নিয়ে এস। এত বড় বাড়ী পড়ে আছে। আমােদ করুক।

-তােমার তাই ইচ্ছে কি?

-খু-উ-ব। আমি তাে তাই চাই।

–কেন?

—কতকাল এ বাড়ী এমনই পড়ে আছে না! কেউ পিদিম দেয় না।

এ কথাটা ওর মুখ থেকে শুনে রাধামােহনের আশ্চর্য লাগল। এতটুকু মেয়ের মুখে এমন কথা! পাকা গিন্নীর মত। ও কৌতুকের সঙ্গে বললে–তােমার তাতে খারাপ লাগে নাকি কি ?

-না, লাগে না! তােমরা সবাই এস, বাড়ীতে শাঁক বাজুক, সন্ধের পিদিম দেওয়া হোক। কথা শেষ করেই সে ব্যস্ত ভাবে বললে তােমার খুব খিদে পেয়েছে, না? বড্ড রাত হয়ে গেল।

-না না, এমন আর বেশি রাত কি।

—তােমার আবার সকালে খাওয়া অব্যেস,

—তুমি কি করে জানলে খুকি ?

অস্ফট হাসির স্বর মাত্র শোনা গেল, কোন উত্তর এল না। একটু, পরে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে খুকি বললে—ভাল লাগে, বড় ভাল লাগে। রাধামােহন ওর দিকে চেয়ে বললে—কি ভাল লাগে খুকি ?

—এই তুমি আজ এসেছ। কেউ তো কখনও আসে না এ বাড়ীতে। তুমি যাও, মাংস রান্না হয়ে গিয়েছে।

—হয়ে গিয়েছে! তুমি কি করে জানলে?

খুকি হেসে বললে—আমি জানি যে! যাও তুমি। দাঁড়াও, আমি মুখটা ধুয়ে আসি। এক সঙ্গে যাব। মুখ ধুয়ে এসে কিন্তু রাধামােহন খুকিকে আর দেখতে পেলে না। চঞ্চল মন ছেলেমানুষের, আগেই চলে গিয়েছে। বেশ খুকিটি, কেমন পাকা পাকা কথা বললে। হাসতে হাসতে প্রাণ যায়।

ভৈরব বাঁড়ুজ্যে ওকে দেখে বললে—এস এস বাবাজি। এই তােমায় ডাকতে পাঠাচ্ছিলাম। আজ একটু, রাত বেশি হয়ে গেল, একট, মাংস নেওয়া হল আজ। বলি রােজ রােজ ডাল ভাত ওর খেতে পারে না। আমার বাড়ী আজ দুদিন খাচ্ছে, সে আমার ভাগ্যি। নইলে ওদের অভাব কি। তাই আজ, রাধামােহন সলজ্জ ভাবে বললে—না না, সে কি কথা! যা জুটবে তাই খাব। পর ভাবেন নাকি কাকা? আমি তাে বাড়ীর ছেলে। পরদিনও আবার খুকি সন্ধ্যার সময় এসে হাজির। রাধামােহন বললে—এস খুকি তােমার কথাই ভাবছিলাম। খুকি হেসে বললে—আমার কথা?

—সত্যি তােমার কথা! কি ছেলেমানুষী ভাবে ঘাড় দুলিয়ে বললে—কেন, আমি জানি।

—তুমি জান
–জানি। কিন্তু বলব না।

রাধামােহন আজ খানিকটা সন্দেশ আনিয়ে রেখেছে, খুকিকে দেবে বলে। অবিশ্যি আনিয়েছিল হরি নন্দীর চাকর অমূল্যকে দিয়ে, ইসলামকাটির বাজার থেকে। ইসলাম- কাটির সন্দেশ এ অঞ্চলে বিখ্যাত। অমুল্য দেখা যাচ্ছে গল্প করে বেড়িয়েছে। রাধা- মােহন মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠল অমলার উপর। খুকিকে হঠাৎ খুশি করে দেবে সন্দেশ হাতে দিয়ে ভেবেছিল। সেটা আর হল কই। তবু ও রাধামােহন বললেন, তুমি জান না খুকি। কি বল তাে? খুকি মৃদু, মৃদু, হেসে বললে—জানি আমি।

ওর হাসির মধ্যে এমন একটা বিজ্ঞতা আছে যে রাধামােহন আর কোন প্রশ্ন করলে না এ নিয়ে। ও জানে। ওর মৃদু, হাসির মধ্যে দিয়েই সে কথা বােঝা গেল। অমলটা আচ্ছা তাে! পাড়াগাঁয়ের লােকের পেটে কোন কথা থাকে না! খুকি আবদারের সুরে বললে—কই, দাও আমাকে সন্দেশ ? রাধামােহন ব্যস্ত হয়ে ওকে সন্দেশ দিতে গেল, কিন্তু ওকে আর সেখানে দেখা গেল না। চঞ্চলা বালিকা, কখন হঠাৎ চলে গিয়েছে। ওর ধরন বড় আশ্চর্য রকমের ! আহারের সময় ভৈরব বাঁড়ুজ্যের বাড়ীতে ও সন্দেশটা নিয়েই গেল! বললে-খুকি বড় লাজুক, তখন চলে এল, ওকে একটু, এই ভৈরব বাড়জ্যে হেসে বললে-খুকি বুঝি তোমার কাছে গিয়েছিল ?

—রােজই যায়। গল্প-সল্প করে।

-তাই নাকি?

—হ্যাঁ, ও একট, লাজুক বটে। খুব ছেলেমানুষ তাে!

পর দিন সন্ধ্যায় খুকি আবার নিদিষ্ট স্থানটিতে এসে দাঁড়াল বারান্দাতে। রাধামােহন বললে—কাল অমন করে চলে গেলে কেন তুমি ? আমি ভারি রাগ করেছিলাম কিন্তু। খুকি হেসে চুপ করে রইল। খেয়েছিলে সন্দেশ ? বা রে, যখন তুমি বললে, ওই তাে আমার খাওয়া হলে গেল। পরক্ষণেই সে যেন স্নেহের সুরে বললে—তুমি এই এসেছ,  আমার কত ভাল লাগছে! বাড়ীতে পিদিম জ্বলছে। একা একা ভাল লাগে ?

—শহরে যাবে ? চল আমার সঙ্গে। চল—

—আমার এখানেই ভাল। ওসব আমার ভাল লাগে বুঝি?

-বাঃ, কত টকি-ছবি, কত খাবার-দাবার।

—হোক গে। আমার তাতে কি? তুমি আবার আসবে বল।

–আসব নিশ্চয়ই। কেন আসব না।

—এতদিন তাে আসনি। ভিটেতে সন্ধ্যের সময় পিদিম জ্বলেনি তো? আচ্ছা আসি আজ। তুমি তাে মঙ্গলবারে যাবে? রাধামােহন একট, আশ্চর্য হল। মঙ্গলবারে সে যাবে, বলেছিল ভৈরব বাড়জ্যেকে। ভৈরব কাল আবার বাড়ীতে গল্প করেছে!

তার পর দু দিন রাধামােহন বৈষয়িক কাজে অন্য গ্রামে গিয়ে রইল। সােমবার অনেক রাত্রে নৌকা যােগে স্বগ্রামে ফিরল বটে, কিন্তু ভৈরব বাঁড়ুজ্যের বাড়ীর কারও সঙ্গে অত রাত্রে আর দেখা করলে না। ঘরে চিড়ে ছিল, তাই খেয়ে রাত কাটালে। পরদিন সে যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছে, ভৈরব এসে বললে—বাবাজি, কাল কত রাত্রে এলে? খেলে কোথায়? আমাদের ডাকা তােমার উচিত ছিল। তুমি তাে ঘরের ছেলে। এত লজ্জা কর কেন? ছিঃ- রাধামােহন বললে—আপনার খুকিটিকে একবার ডেকে দিন না ? বেশ বেশ। এখুনি ডাকছি—দাঁড়াও। একটু, পরে একটি আট বছরের কালাে-মত মেয়ের হাত ধরে ভৈরব বাড়জ্যে সেখানে নিয়ে এলেন। রাধামােহন বললে—এ খুকি তাে নয়, এর দিদি। ভৈরব বাঁড়ুজ্যে বললেন—এর দিদির তাে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে তাে বশরবাড়ী আছে। তুমি তাকে দেখনি।

—তবে আপনার বাড়ীর অন্য কোন মেয়ে,

—আমার বাড়িতে বাবাজি আর কোন মেয়ে নেই। তবে অন্য কোন মেয়ে  কিন্তু না, আর কোন মেয়ে এ-পাড়ায় নেই ও বয়সের। দু-ঘর তাে মােটে ব্রাহ্মণের বাস। বয়স কত? রাধামােহনের হঠাৎ মনে পড়ে গেল, বললে–ওর নাম বলেছিল লক্ষী।

–লক্ষী? সে আবার কে? কই, ও-নামের মেয়ে এ গ্রামেই নেই। তােমার শুনতে টুনতে ভুল হয়ে থাকবে বাবাজি।

—শুনতে ভুল হতে পারে নামটা, কিন্তু সে খুকীটি কে ? সে তাে আর ভুল হবে না।

-কই বাবাজি, বুঝতে তাে পারলাম না। ও-বয়সের ও-নামের মেয়ে আমাদের পাড়ায় কেউ নেই ঠিকই।

রাধামােহন চিন্তিত মনে বিদায় নিলে। আশ্চর্য ব্যাপার, খুকিই বা আর দেখা করতে এল না কেন? স্বগ্রাম থেকে ফেরবার দু বছর পরে রাধামােহন তার পিসির বাড়ী গিয়েছে জব্বলপুরে। সেখানে পুরনাে ফটো-অ্যালবাম খুলে দেখতে দেখতে একটি মেয়ের ফটো চোখে পড়ল। এই মেয়েটিকে সে যেন কোথায় দেখেছে! ঠিক মনে পড়ল না। পিসিমাকে ডেকে ফটোটা দেখাতে তিনি বললেন—একে তুই দেখবি কোথায় ! ও তাে আমার ছােট বােন। তাের ছােট পিসি। বার বছর বয়সে মারা যায়, তখন তুই কোথায় ? তাের মার বিয়েই হয়নি। আমরা তখন সব আমাদের গাঁয়ের বাড়ীতেই থাকি।

তারপর পিসিমা যেন কতকটা আপন মনেই বললেন—আহা, একটু, একটু, মনে হয় ওকে। বেশ দেখতে ছিল। সে আজ চল্লিশ বছরের কথা। তার পর তাের বাবাও দেশ ছেড়ে মেদিনীপুরে চলে এল। দেশের বাড়ীতে যাওয়াই হয়নি। বিয়ের পর আমি একবার মােটে গিয়েছিলাম, সেও আজ বিশ বছর আগের কথা। রাধামােহন অবাক হয়ে চেয়ে রইল অ্যালবাম খানা হাতে করে। হঠাৎ মনে পড়তে বললে—কি নাম ছিল ছােট পিসিমার ? পিসিমা উত্তর দিলেন—লক্ষী।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত