তখন গভীর রাত।সময়টা ছিল মাঘ মাস।তাই চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা।গ্রামের সব মানুষ তখন ঘুমিয়ে।
শুধু একজন মানুষ এখনো জেগে আছে।আর তিনি হচ্ছে রফিক সাহেব।রফিক সাহেব একজন স্থানীয় নাট্য লেখক।
এলাকার বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুষ্ঠা
নের জন্য তিনি মঞ্চ নাটক লিখে থাকে।কিছুদিন পরে এলাকায় একটি বড় ধরনের সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।
আর সে অনুষ্ঠানের নাটক লেখার দ্বায়িত্ব পড়েছে রফিক সাহেবের উপরে।তাই তিনি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে নাটক
লেখার কাজে ব্যস্ত থাকে।কিন্তু আজকে রাতে লেখা-লেখির কাজে তার কিছুতে মন বসছে না।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত
তখন ঠিক তিনটা বাজে।এমন সময় মনে হল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাকে বাহিরে যেতে হবে।তাই তিনি ঘর থেকে বের হলেন।
বাহিরে তখন কনকনে শীত।ভরা পূনিমার মাঝে কুয়াশার সাদা রেখা দেখা যাচ্ছে।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কাজ শেষ করে রফিক
সাহেব চিন্তা করলেন বাহিরে একটু হাটা-চলা করলে মনটা হয়তো ভাল হতে পারে।তাই তিনি হাটতে হাটতে রাস্তার দিকে চলে গেলেন।
চারদিক তখন সুনসান নিরবতা।কোন জনমানুষের সাড়া শব্দ নেই।আশেপাশে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ।আর মাঝে মাঝে বহু দূর থেকে
খেক শিয়ালের ডাক তার কানে ভেসে আসছে।কিছুটা সময় হাটা-হাটি করার পরে চিন্তা করলেন এতো রাতে বাহিরে থাকা ঠিক হবেনা
তাই তিনি ঘরে ফিরার সিদ্ধান্ত নিলেন।
এমন সময় তিনি লক্ষ্য করলেন দূর থেকে কিছু মানুষ এদিকে আসছে।এতো রাতে এই পথে মানুষ চলা-চল করতে দেখে তিনি কিছুটা
অভাক হলেন।কাছে আসতেই রফিক সাহেব দেখে তারা সংখ্যায় চারজন এবং তাদের কাঁধে ছিল সাদা কাপড়ে মোড়ান একটি লাশ।
লাশের গায়ে জড়ানো সাদা কাপড়টি ছিল বেশ ময়লাযুক্ত।আর লোক গুলোর গায়ে ছিল লম্বা সাদা জুব্বা এবং মুখে ছিল লম্বা দাঁড়ি।
চোখ দুটি ছিল খুবি ছোট।যেন গর্তের ভেতর ঢুকানো।আর তাদের শরীর থেকে কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে।
রফিক সাহেব তাদের সালাম দিয়ে জিগাস করলেন “অপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
তাদের মধ্য থেকে একজন উত্তর দিল “লাশটি দাফন করতে।”
রফিক সাহেব এবার জিগাস করলেন “এতো রাতে কেন?তাছাড়া আপনারা যে দিক থেকে এসেছেন সে দিকেও তো একটি গোরস্তান ছিল?”
তাদের মধ্য থেকে একজন তখন আবার উত্তর দিল “এটা বেওয়ারিশ লাশ আত্ময় সজনের কোন খুঁজ পাওয়া যায়নি।
তাই এই রাত্রি বেলায় দাফন করা হচ্ছে।”
এই কথা শুনে রফিক সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেল।লাশটির জন্য তার কেমন একটা মায়া হতে লাগলো।
রফিক সাহেব তখন জানতে চাইলো লাশের জানাজার নামাজ হয়েছে।
উত্তরে তারা বলে “না হয়নি।”
রফিক সাহেব তখন মনে মনে ভাবতে লাগে আজকে রাতে যেহেতু তার লেখা লেখির কাজে মন বসছে না,তাই লাশটির জানাজার
নামাজে শরিক হলে ভাল হবে।আর সেখান থেকে এসে তিনি ঘুমাতে যাতে।তাই তিনি আর কোন কথা না বাড়িয়ে তাদের পিছু পিছু হাটতে শুরু করেনে।
কিছুটা পথ হাটার পরে রফিক সাহেব খেয়াল করলেন তারা গোরস্তানের দিকে না গিয়ে উল্টা পথ ধরে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে।
তিনি তখন তাদের ডেকে বলে আপনরা তো উল্টা পথে যাচ্ছেন ঐদিকে তো কোন গোরস্তান নাই।তাদের পক্ষ থেকে তখন উত্তর দিল ”
এটা বেওয়ারিশ লাশ।ব্যাক্তি মালিকানা কোন গোরস্তানে দাফন করতে দেবেনা।তাই জঙ্গলের পাশে ছোট্ট একটা সরকারি খাশ জমি আছে
সেখানে দাফন করা হবে।”
এক সময় তারা গিয়ে ঐ জায়গায় উপস্থিত হলেন।সেখানে গিয়ে দেখলেন আগে থেকে চার- পাঁচ জন লোক সেখানে অবস্থান করছে।
তাদের গায়ে ও ছিল লম্বা সাদা জুব্বা।রফিক সাহেবকে দেখে তারা সবাই তার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাত্ জঙ্গলের ভেতর থেকে রফিক সাহেব ঘোড়া টগবট টগবগ আওয়াজ শুনতে ফেলেন।তিনি বুঝতে পারলেন ঘোড়ায় চড়ে কেউ
একজন এদিকে আসছে।এমন সময় ঘোড়া চড়ে একজন লোক এসে উপস্থিত হলেন।লোকটা ছিল উপস্থিত সবার চেয়ে লম্বা।
উচ্চতা প্রায় ৮ ফুটের উপরে।চেহারা ফর্সা মুখে লম্বা দাঁড়ি।রফিক সাহেব তখন একজন কে জিগাসা করলো উনি কে?
লোকটি উত্তর দিল উনি আমাদের সবার মুরব্বী।
একটু পরে ঘোড়ায় চড়ে আসা লোকটি আস্তে আস্তে করে লাশটির কাছে যেতে লাগলেন।তার পরে হঠাত্ করে তিন লাশেটির ডান
হাতটা ধরে জোরে এক টান দিলেন।সাথে সাথে হাতটা ছিঁড়ে চলে আসে।এমন সময় বাকিরা গিয়ে লাশটির হাত-পা ও মাথা ছিঁড়তে শুরু করলেন।
আর যে যার মত করে খেতে লাগলেন।সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য।এই দৃশ্য দেখে রফিক সাহেবের সমস্থ শরীর শিউরে উঠে।
তিনি মুখ দিয়ে শব্দ করতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না।এমন সময় আর কোন উপায় না দেখে তিনি গ্রামের দিকে দৌড় দিলেন।দৌড়াতে
দৌড়াতে এক সময় মনে হল শরীলের সব শক্তি তার শেষ হয়ে এসেছ।বাড়ির সামনে এসে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে গেল।
হুশ আসার পরে রফিক সাহেব দেখেন তিনি ঘরের ভেতর বিছানায় শুয়ে আছে।আর তার চারপাশে ঘিরে আছে গ্রামের অনেক মানুষ।