আব্বা WAPDA তে চাকুরী করতেন। সেই জন্য ওনার পোস্টিং হতো কয়েক বছর পর পর দেশের বিভিন্ন শহরে।
আমি তখন ক্লাস ৯ এ পরি। এবার আব্বা বগুড়া তে পোস্টিং পেয়েছেন। নতুন স্কুল, নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু সব কিছুই এলো
মেলো। গোছাতে সময় লাগবে। স্কুলটা কিন্তু WAPDA এর ভেতর ছিলনা, আমাদের যেতে হতো প্রায় ১ KM হেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর স্কুল এ।
স্কুল এর বন্ধুরা বলতো তোমাদের কলোনিতে ভূত আছে। আমিও এসবে বিশ্বাস করতাম ।
রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় তাই বড় ভাইকে ধরে ঘুমাতাম। সেদিন যে খাটে শুয়েছি পা বরাবর অনেক বড় জানালা।
গরম বেশি থাকাতে জানালাটা
খুলেই ঘুমিয়েছি দুভাই। আমার বড় ভাই সব সময় আমাকে ঘুমানোর আগে দোয়া পরিয়ে ঘুম পারাত, কিন্তু সেদিন আমি দোয়া না পরেই ঘুমিয়ে গেছি।
মাঝ রাত্রে স্বপ্নে দেখলাম এক সাদা কাপড়
পড়া বুড়ি পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। তার হাসি দেখে পিলে চমকে যাওয়ার মত অবস্থা সেই ঘুমের মধ্যেই।
স্বপ্নের মধ্যেই দেখলাম মা আমাকে তুলে
ছুঁড়ে দিল ঐ বুড়ির দিকে আর বুড়িটা আমাকে নিয়ে চলে যাওয়া মুহূর্তে মা আমাকে আবার ছিনিয়ে নিচ্ছে ঐ বুড়ির কাছ থেকে। মা আমাকে শক্ত
করে ধরে আছে আর বুড়িটা মায়ের কাছে
থেকে আবার আমাকে নিয়ে নেয়ার জন্য হাত বাড়াচ্ছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে মা আমাকে আবার তার কাছে ছুঁড়ে দিল
এবং বুড়িটি আমাকে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আবার মা আমাকে ছিনিয়ে নিল তার
কাছ থেকে। এভাবে চলল কিসুক্ষন এবং আমি জোরে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। বাসার সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো আমাকে নিয়ে,
আমি জানালা থেকে দূরে সরে আসার অনেক চেষ্টা করতে লাগলাম, মা যখন আসলো তখন তাকে এমন জোরে ধরেছি যে আমাকে ছুটানর
জন্য আব্বা আর ভাই দুই জন শক্তিশালী মানুশ এর প্রয়োজন হয়েছিল। আর আমি বারবার বলছিলাম আমাকে দিয়ে দিওনা ঐ বুড়ির কাছে।
মা আমাকে
আয়াতুল কুরসি পরে বুকে ফুঁক দিলেন এবং ঐ রাত্রের জন্য আমরা সবাই এক ঘরে ঘুমালাম। কারন জানলাম যে বড় ভাইও ভয়
পেয়েছেন আমার চিৎকারে।পরের দিন মসজিদের হুজুর কয়েক আয়াত পরে বুকে ফুঁ দিলেন আমার জন্য।
এর পর থেকে প্রায় রাত্রেই গোঙাতাম আর ঘুম ভেঙ্গে যেত ভাই এরডাকে। এত গেল স্বপ্নে দেখা সাদা বুড়ি। এই বুড়িকে আমি বাস্তবে দেখেছি ৬ বছর পর।
আসছি শেই ঘটনায়। আল্লাহ্ বলেছেন, “অয়ামা খালাক্তুল জিন্নাহ অয়াল ইনসা ইল্লা
লিয়াবুদুন”—“আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি” মানুষের মদ্ধে যেমন ভালো খারাপ আছে তেমনি ওদের মদ্ধে ও
ভালো খারাপ আছে। মানুষ এক
প্রজাতি হয়ে যেমন অন্য প্রজাতির ক্ষতি করে তেমনি জিনরাও অন্য প্রজাতির (মানুষ সহ) ক্ষতি করে।
তাই খারাপ জীন আছে এটা বিশ্বাস করলে দোষের কিছু হবেনা। আর ভুতের কথা বলছেন?
এরাও জীন, কেও ভালো আবার কেউবা খারাপ।
ভুত শব্দটা আমরা আমাদের কথিত বাংলা ভাষায় ব্যাবহার করে থাকি।
আমি তখন ক্লাস এইট এ পড়ি। গ্রামে নতুন বাড়ি কেনা হয়েছে মুনশিগঞ্জের শ্রীনগর থানার হাঁসারা গ্রামে। ভাই চলে গেছেন বিদেশে
চাকরির খাতিরে তাই বাড়ির বড় ছেলে বলতে আমি।
জিবনে কখনো গ্রামে থাকিনি নানির বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ছাড়া, তার উপর ইলেক্ট্রিসিটি অথবা ভাল রাস্তাঘাট
ছিলনা ঐ সময়। ভুতের ভয়ের চাইতে বিষাক্ত শাপের ভয় বেশি ছিল ঐ বয়সে। বাড়ির পাশেই একটা মাঝারি ধরনের বট
গাছ, তার পর বড় বড় কতগুলো দিঘি, এগুলর বা দিকে আছে একটা অনেক বড় খালি বাড়ি। বাড়িটাতে অনেক বড় বড় আম গাছ আর করই গাছ।
সামনে আসে
একটা ভয়ঙ্কর রকমের ভাঙ্গা জমিদার বাড়ি নাম সেনের বাড়ি, অনেক বড় এলাকা জুড়ে ছিল এই বাড়িটি। হাজার রকমের বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা।
ভেতরে ঢুকলে সূর্যের আলো চোখে
পরেনা। তার ২০০ গজ দুরেই আমাদের স্কুল। মুনশিগঞ্জের সবচেয়ে পুরনো স্কুল। বাজারে যাওয়ার সময় আমি এই দিক দিয়ে না
যাওয়ার চেষ্টা করতাম আর যদি জেতাম তবে মানুষ থাকত। অন্য দিক
দিয়ে বাজারে গেলে সোজা রাস্তা। বর্ষার সময় এই রাস্তাটা দুবে যেত তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এই রাস্তা দিয়ে প্রাইভেট পরতে যেতে হত
বিকাল বেলায় সেই ভাঙ্গা বাড়ির সামনে দিয়ে আর ফিরতে হত সন্ধ্যার সময় কখনো কখনো রাত ১০ টার পর।এখন বর্ষাকাল তাই আমাকে
বিকাল বেলায় কাজের ছেলে করিম নৌকায় করে স্যারদের এলাকায় দিয়ে গেল। জায়গাটার নাম পালের
বাড়ি। করিম বয়সে আমার চাইতে বছর ২ এর ছোট হবে, দুজনেই নৌকা বাইতে খুব পছন্দ করতাম, তাই আমাকে হেটে যেতে হলনা।
ও বাড়িতে চলে গেল আর আমি গেলাম স্যার এর বাসায় পরতে।
পরালেখায় মোটামুটি ছিলাম তাই ক্লাস ৮ এর বৃত্তির জন্য খুব প্রস্তুতি চলছিল। পরতে পরতে রাত সাড়ে ১০ টা বেজে গেল।
স্যার বলল যেতে পারবি বাড়িতে না দিয়ে আসতে হবে?
প্রেস্টিজে লেগে গেল যদি ও ভয় পাচ্ছিলাম,
বললাম স্যার কি যে বলেন না। কাল দেখা হবে স্কুলে বলে আমায় যেতে বললেন। আমার হাতে একটা কলমের সাইজ
এর মত একটা টর্চ ভাই পাঠিয়েছে বিদেশ থেকে। কিন্তু এটার একটা সমস্যা হল ৫ থেকে ৬ সেকেন্ড পর বন্ধ করতে হয় কিচুক্ষনের জন্য।
যেহেতু করিম
আসবেনা এত রাতে তাই আমাকে হেটে যেতে হবে সেই ভাঙ্গা বাড়ি দিয়ে।আয়াতুল কুরসি পরে বুক এ ফুঁ দিয়ে হাটা শুরু করলাম।
মহাসড়ক দিয়ে ১৫
মিনিট হাটার পর ডানদিকে বাক নিতে যাওয়ার সময় আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালাম কারন সামনে দেখি
একলোক যাচ্ছেন আমার রাস্তা বরাবর। তার পিছু নিলাম। ৩ মিনিট পর সেই ভাঙ্গা সেনের বাড়ি। আমি এটাকে এড়িয়ে অন্য দিক দিয়ে
গেলে আমাদের
স্কুল দিয়ে যেতে পারি কিন্তু গেলাম না কারন আমার সাথে ঐ ব্যাক্তি আছেন। মজার ব্যাপার হল এতক্ষনের জন্য আমি একবার ও তাকে
কিছু জিজ্ঞেস করিনি উনি কেমন আছেন বা কোথা থেকে এলেন। আর তাছাড়া এলাকায় নতুন বলে
অনেকে আমাকে ঠিক মত চিনেও না, আমিও অনেক কম চিনি। চুপচাপ তাকে ফলো করে সেনের বাড়ি যেটা এখন শবাই বলে সেনের বাগে ঢুঁকে গেলাম।
কিছুদুর যাওয়ার পর ঐ ব্যাক্তি আমার সামনে থেকে একটু দূরে কোথায় গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমার পেন্সিল টর্চ দিয়ে খোঁজার চেষ্টা বৃথা কারন উনি কথাও নেই। ডাকলাম কিন্তু অনেক বাদুড়ের শব্দ ফিরে এল। টর্চটা জালিয়ে আর বন্ধ করলাম না।
দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে বাড়ি পার হয়ে এলাম এবং সামনে গ্রাম্য পোষ্টঅফিস। সেখান থেকে একটা বাঁশের পুল প্রায় দেড়শ গজের মত
লম্বা হবে ওপাড়ের এক বন্ধুর বাড়ি আলামিন দের বাড়িতে
সংযুক্ত। আমাকে বাড়ি পৌছতে হলে এ পুল বা সাকো পার হতেই হবে। আয়াতুল কুরসি পরছি আর আল্লাহ, আল্লাহ্ করছি। সাঁকোর মাঝ খানে
এসে হঠাত আমার চোখ যায় ডান দিকে সেই খালি বাড়িটার
দিকে। আমার জান বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্তা। দেখলাম একটা অনেক বড় আম গাছের নিচে সেই সাদা বুড়িটা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে
নাচানাচি করছে আর আমাকে ডাকছে হাত দিয়ে ওখানে যেতে। তার হাসি দেখেত আমার হার্টবিট
আর বেড়ে গেল। আমি এখন না পারি আলামিনদের বাড়ি যেতে না পারি সেনের ভাঙ্গা বাড়ি পথ দিয়ে স্যার এর বাসায় ফিরে যেতে। অগত্যা আল্লাহ নাম
করে সাঁকো শক্ত করে ধরে পাড়ি দিচ্ছি খুব
সাবধানে। তারাতারি যেতে পারছিনা কারন একেত ভয় তার উপর গ্রামের সাঁকোতে নতুন নতুন চরার অভিজ্ঞতা। যতই আলামিন্দের বাড়ির
কাছে যাচ্ছি বুড়ির গলার শব্দ শুন্তে পাচ্ছি। কি? আমায় চিনতে পারছিস?
আমি এসেছিলাম তোকে নিতে, তোর মা দেয় নি। আজ কে আটকাবে?
তার চেহারা দেখতে আমাদের বুড়ো নানি
দাদিদের মতই দেখতে। কিন্তু লম্বায় প্রায় ২০ ফুট এর মত হবে। বুড়ির তামশা মনে হয় আর বেড়ে গেল। এখন চাঁদের আলোয় তাকে আর
পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বুড়ি নাচছে আর আমাকে হাতছানি
দিয়ে ডাকছে। আমাকে বলছে তোকে আজ এই গাছের নিচে পুঁতে রাখব। আমি চার কুল পরে বুকে ফুঁ দিয়ে ওর দিকেও তাক করে ফুঁ দিলাম।
এখন আমি আলামিন্দের বাড়ির নামায় এসে পরেছি। আমি দৌড় দিলাম না। তাকিয়েই ছিলাম ঐ বুড়ির দিকে। হঠাত সেই বুড়িটা নিরুদ্দেশ হয়ে গেল।
আর দেখতে
পেলাম না। আমি আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রউনা হলাম। দিঘি পার হয়ে বট গাছ আসল। আমি আগে থেকেই করিমকে ডাকলাম নৌকা নিয়ে
আমাকে নিয়ে যেতে বট গাছের কাছ থেকে। করিম ঘুমিয়ে পরেছিল। গ্রামের সবাই ঘুমে। মা করিমকে ডাকছে উঠোন থেকে আমি শুনতে পাচ্ছি বট
গাছের ওখানে দারিয়ে থেকে। বট গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাওয়ার মত অবস্থা। আমি মাকে
জোরে বললাম আমার ভয় লাগে করিম কে তারতারি পাঠাও। মা বলল, “ভয় পাবিনা আমি দারিয়ে আছি এই
পারে” করিম ঘুম থেকে উঠলো ঠিকই কিন্তু ওর ও ভয় লাগে। ও আগে নিশ্চিত হয়ে নিল আমার নাম
ধরে ডেকে যে এটা আমি কিনা। মা চলে গেল তার ঘরে আর করিম আশ্ছে নৌকা নিয়ে কচুরি পানা সরিয়ে আছতে আছতে।
গাছ থেকে ফিশ ফিশ শব্দ করে কে যেন বলল তোর মা তোকে অনেক কিছু শিখিয়েছে বেচে গেলি আজ।
বাড়ি আসলাম মাকে কিছু বললাম না। পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখব কি সেটা। স্কুল ছুটির পর বাড়িতে ফেরার সময় সেই গাছটির দিকে তাকালাম। কিছুই
দেখলাম না। দেখার কথাও না। কারন আমার সাথে স্কুল বন্ধুরাও ছিল। আমাকে প্রাইভেট পড়ার ছলে এই যন্ত্রণা আর দুর্ভগ আর ৩ দিন সইতে হয়েছিল,
তারপর এই বুড়িকে আর দেখিনি। দরুদ, কোরানের আয়াত আর নতুন আয়ত্ত করা সাহস আমাকে শিখিয়েছিল ঐ রকম পরিবেশে কিভাবে চলতে
হয়। এখন আমি ইউকে তে থাকি। আমার বাসার পাশের কবরস্থান। এখানে ও আমি অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিশ দেখি সেটা নাহয় আরেকদিন বলব?
ভালো থাকবেন। যে যে ধর্মই পালন করেননা কেন। সৃষ্টিকর্তাকে সব সময় মনে রাখবেন। উনি আপনাকে, আমাকে সবসময় রক্ষা করবেন।