শত শত বছর ধরে চলছে নৌগড়ের আর বিজয়নগরের দুশমনি। দুই রাজ্যের কেউ একে অন্যের রাজ্যে যাওয়া নিষিদ্ধ। একদিন বিজয়নগরের গর্ভবতী রানী অসম্ভব পীড়ায় ভুগে। দাসীরা জানান দেই, এই অবস্থায় রানী সন্তান জন্ম দিলে তিনি মারা যাবেন।এ শুনে রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমন সময় এক যাদুকরী বুড়ির আগমন ঘটে। এই বুড়ি রাজদরবারের এক দাসীকে কিছু ঔষধ দেই। তা রানীকে খাইয়ে দেওয়া হলে, রানী সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারে। এজন্য রাজা খুশী হয়ে বুড়িকে সম্মানিত পদান্বয়ী করেন। বুড়ি নিজ মতলবে সে ঔষধ রানীকে খাইয়ে ছিল যাতে তার আগত সন্তানকে ব্যবহার করে সে রুপবতী হতে পারে। সে ইচ্ছাকৃত ভাবে রাজকুমারের সুরক্ষার দায়িত্ব নেই। রাতের আধারে কেউ না দেখে মত রাজকুমারের শরীরে কেমন এক যাদু করে তার থেকে শক্তি আহরণ করে বৃদ্ধা নিজে রুপবতী হত।সে এরপর থেকে দিনের বেলায় রাজ্যে থাকত না। রানীর একমাত্র সন্তানের নাম রাখা হয় বীরচন্দ্র। সে ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে, সাথে তার শক্তিও। সে কম বয়সেই অসীম শক্তির অধিকারী হতে থাকে, তার কানের পাশে হতে থাকে এক অদ্ভুত চিহ্ন।
১০ বছর পর…..
নৌগড়ের রাজারও একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়। নাম রাখা হয় তার চন্দ্রিকা। চন্দ্রিকা ও বীরচন্দ্র বেড়ে উঠতে থাকে। চন্দ্রিকা ১৮ বছরে পড়তে না পড়তেই তার সৌন্দর্যের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে দেখতে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ ছুটে আসে। অনেক বড় বড় রাজ্য থেকে তার জন্য বিবাহের প্রস্তাব আশে। কিন্তু চন্দ্রিকা এমন একজন জীবনসঙ্গি চাই, যে তার মনকে ভালোবাসবে। কিন্তু চন্দ্রিকা আজ পর্যন্ত এমন কাউকে পেল না। সে একদম সাধারণ মেয়েদের মতই থাকতে পছন্দ করে, তার পোশাক পরিচ্ছদও অতি সাধারণ। চন্দ্রিকা প্রায়ই তার রাজ্যের বান্ধবীর সাথে থাকে, ঘোরাফেরা করে। এদিকে বীরচন্দ্র মাত্র ২৮ বছর বয়সেই তার অসীম শক্তির কারণে তার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।বলের দিক থেকে তাকে কেউ হারাতে পারে না।এমন বলবান পুরুষ একদিন চন্দ্রিকার সৌন্দর্যের সম্বন্ধে জানতে পাই। তার কাছেও চন্দ্রিকাকে দেখার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু সে তো তার শত্রুদের রাজ্যের রাজকুমারী। বীরচন্দ্রকে কেউ সেখানে যেতে দিবে না। তাই সে কাউকে না বলে তার ঘোড়া নিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে নৌগড় রাজ্যের উদ্দেশ্যে। কেউ তাকে না চেনার জন্য সাধারণ মানুষের পোশাক পড়ে। রাজ্যের প্রবেশপথে সামান্য একটি জঙ্গল পড়ে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশে চলে আসে, পাশেই একটা ঝর্ণা। সেখানে কিছু মেয়ে হাসাহাসী করছে, মজা করছে। বীরচন্দ্র ঘোড়া থেকে নেমে ঘোড়াকে লুকিয়ে সামনে এগিয়ে যাই, তাদের মধ্যে এক মেয়েকে দেখে সে অবাক হয়ে যাই.. অনেক রুপবতী মেয়েটি। গাছের ঝুপের আড়াল থেকে মেয়েটিকে বীরচন্দ্র কিছুক্ষণ দেখে থাকে। তখন তার কাছে রাজকুমারীকে দেখার স্বাদ মিটে যাই।তার মন এই মেয়েটির দিকেই ধাউধাউ করে। এখনো মেয়েটিকে দেখে আছে, কিন্তু সে জানে না এটিই এই রাজ্যের রাজকুমারী চন্দ্রিকা। সে চন্দ্রিকাকে কোনো এক সাধারণ দাসী ভেবে বসল। একটু পর চন্দ্রিকা তার সামনে আসে, চন্দ্রিকা বীরচন্দ্রের কাছে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে, বীরচন্দ্র মিথ্যা বলে যে, সে একটা সাধারণ মানুষ। চন্দ্রিকাও তাকে মিথ্যা পরিচয় দেই।
এরপর থেকে দুজনেরই প্রায় দেখা হত।এদিকে বিজয়নগরে বীরচন্দ্রকে সকলে খুঁজতে থাকে। বৃদ্ধা চিন্তিত হয়ে পড়ে।
বীরচন্দ্র এসেছিল রাজকুমারীকে নিতে, কিন্ত সে কোনো এক দাসীর(চন্দ্রিকা)প্রেমে পড়ে যাই। বীরচন্দ্র একটা দাসীকে ভালোবেসেছে তাতে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এদিকে চন্দ্রিকাও তাকে ভালবেসে ফেলে, সে যেমন জীবনসঙ্গি চেয়েছিল বীরচন্দ্র ঠিক তেমনই।
একদিন চন্দ্রিকা ভাবে, বীরচন্দ্রকে তার মনের কথা বলে দিবে, সাথে তার পরিচয়ও দিয়ে দিবে। বীরচন্দ্রেরও একই মনোভাবনা। দুজনই একে অপরকে কথাটা বলতে যাই। বীরচন্দ্র আগে বলে যে, সে বিজয়নগরের রাজকুমার বীরচন্দ্র। এই শুনে চন্দ্রিকার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হল না। ভালোবাসার কথাটাও তার বলা হলনা। সে বীরচন্দ্রকে কিছু না বলেই চলে যাই। বীরচন্দ্র দুই একদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু চন্দ্রিকা আসে না। তাই সে রাজ্যের ভেতরের অংশে যাওয়ার পরিকল্পনা করল। রাজ্যের প্রধান অংশে যেতেই সে চন্দ্রিকাকে তার বান্ধবীদের সাথে দেখে, গিয়ে তার হাত ধরে এমন সময় চন্দ্রিকার পেছনের দুজন সৈনিক এসে বীরচন্দ্রকে মারতে থাকে। আর সে চন্দ্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকল, চন্দ্রিকা তাকে মার খেতে কেমনে সহ্য করছে হয়ত এটাই ভাবছে। বীরচন্দ্র তার পরিচয় লুকানোর জন্য পালিয়ে গেল। সেই রাতে চন্দ্রিকা তার ঘরে আসে। কিন্তু বীরচন্দ্র তার দিকে একটুও তাকায় না। চন্দ্রিকা তার পাশে নীরব বসে থাকে। হঠাৎ বীরচন্দ্র বলা শুরু করল-
–একটা রাজকুমারের একটা দাসীকে ভালোবাসা কি অপরাধ? আমি আপনার কাছে পরিচয় লুকিয়েছিলাম আপনি কেমন তা জানার জন্য। তাই বলে কি এত রাগ করতে হয়?আর আমি তো আপনাকে অনেক আগেই বলেছিলাম আমি বিজয়নগর থেকে আসছি। আর ঐ সৈনিকগুলো কারা? আমাকে মারল কেন?
–এইটাই তো সমস্যা আপনি কোনো সাধারণ দাসীকে ভালোবাসেন নি।
–মানে কি?
–আমিই এই রাজ্যের রাজকুমারী চন্দ্রিকা। যদি কোনো সাধারণ দাসী হতাম তাহলে আপনার সাথে খুশী খুশীই চলে যেতাম।
–তো এখন আমার সাথে গেলে সমস্যা কি?
–আমার মা নেই। বাবা আমাকে এই রাজ্যের রানী করতে চান। আমি আমার রাজ্য ছেড়ে যেতে পারব না। আপনি আমাকে ভুলে যান।
এই বলে চন্দ্রিকা মুখ নিচে করে ফেলে।
–না, আমি আপনাকে ভুলতে পারব না। আমি এই রাজ্যে আপনার সাথেই জীবন কাটাবো হোক সেটা একটা সাধারণ মানুষ হয়ে।
একথা শুনে চন্দ্রিকা অনেক খুশী হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। তারা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাই।
কয়েক মাস পর ........
চন্দ্রিকা একটা মেয়ে সন্তানের মা হয়। রাজ্যের চারিদিকে একথা ছড়িয়ে পড়ায় সে বীরচন্দ্রকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করে। এমন সময় যাদুকর বৃদ্ধা বীরচন্দ্রকে খুঁজতে খুঁজতে এই রাজ্যে চলে আসে। সে আড়ালে থেকে বিয়ের আয়োজন সব দেখে, আর এও জেনে ফেলে এটা বীরচন্দ্রের বিয়ে। তাই সে কিছু একটা পরিকল্পনা করে।
বিয়ের দিন চন্দ্রিকার কাছে একটা চিঠি আসে বীরচন্দ্রের। তাতে চন্দ্রিকাকে জঙ্গলে আসতে বলা হল। চন্দ্রিকা সেখানে খুশীমনে গিয়ে বীরচন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় বীরচন্দ্র শয়তানি হাসি দিয়ে একটা খঞ্জর বের করে চন্দ্রিকার পেটে ঢুকিয়ে দেই। চন্দ্রিকা শব্দহীন হয়ে কিছুক্ষণ বীরচন্দ্রকে দেখে থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাটিতে পড়ে যাই।
২৭ বছর পরে ......
চন্দ্রিকা চোখ খুলে। সামনে দেখতে পাই দুটা কালো কাপড় পড়া মেয়ে, তাদের ঠোট আর নাক দেখা যাচ্ছে, বাকিসব কালো কাপড়ে ডাকা। চন্দ্রিকা তার শরীরের দিকে নজর দিলে দেখতে পাই তাকে সবমাত্র রক্ত দিয়ে গোসল করানো হয়েছে। সে কিছু না বুঝে চিল্লাতে থাকে। একটু পর মেয়েগুলো তাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসে। সেখানে একজন দুইজন না কালো কাপড় পড়া অনেক মানুষ। না মানুষ না, ভ্যাম্পায়ার। সেখানের কিছু কিছু…ভ্যাম্পায়ারের মত দাত বের করিয়ে হাসছে। পাশে ইয়া বড় একটা রক্তের ট্যাংক। তা দেখে চন্দ্রিকার জিবেজল আসে। সে গিয়ে রক্তের ট্যাংকে মুখ ডুবিয়ে প্রাণভরে রক্ত পান করতে থাকে যেমন আজ কত বছর ধরে সে ক্ষুধার্ত। রক্ত তার কতই না স্বাদ লাগছে! পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কে যেন বলে উঠে,– অনামিকা,তোমাকে ভ্যাম্পায়ারের রাজ্যে স্বাগতম।
চন্দ্রিকা, মুখ তুলে অবশিষ্ট লেগে থাকা রক্ত মুছে পেছনে ফিরল। সামনে কালো ভ্যাম্পায়ারের পোষাক পড়া এক মহিলা। চন্দ্রিকা চিৎকার করে বলল-
–আমার নাম চন্দ্রিকা। আর এসব কি হচ্ছে, আমি এ কোন জায়গায় এলাম? আপনারা কে?
–সবই তুমি আসতে আসতে জানতে পাবে। এখন তুমি কোনো সাধারণ মানুষ নও তুমি এখন একটা ভ্যাম্পায়ার। এখন থেকে তোমার এক নতুন পরিচয় হবে, তুমি হবে আজকে থেকে অনামিকা।
–এ আমাকে কেমন জীবন দিলেন আপনি? আমি বাঁচতে চাই না। বাচার শখ মিটে গেছে। আমি যেই মৃত্যুর জগতে ছিলাম সেখানে আমাকে আবার পাটিয়ে দেন।
–না, তোমাকে পাঠানোর জন্য আমি তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানাই নি। আমার এই সৌন্দর্যটা দেখছ? এটা তোমার কারণে প্রাপ্তি। তোমার মাধ্যমেই এটা আমি ফিরে ফেলাম।এই রাজ্যের সকল শক্তি আমার কাছে ছিল বিধায় আমি যত তত বৃদ্ধা হয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু শক্তি তোমাকে ভ্যাম্পায়ার বানানোর পর দিয়ে নিজে এত রুপসী হলাম। দেখ। হাহাহা…বলেই অট্টহাসি দিল মহিলা।
–ছিঃ নিজে রুপবতী হওয়ার জন্যে আমাকে ব্যবহার করছ!! ছিঃ আমি এখনই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবো আমায়। তোকে তোর মতলবে কামিয়াব হতে দিব না।
–অনামিকা? তুমি কেমন মা? তোমার মেয়েটার প্রতি একটুও মায়া নেই। তাকে তুমি ফিরে পেতে চাওনা?
এই শুনার পর চন্দ্রিকা থমকে দাড়ায়। তার মেয়েটার কথা তো একবারও মনে পড়ে নি।
–আমার মেয়ে কোথায়?
–আমি জানি না। পৃথিবীতে থাকলেই তো তার কাছে পৌছতে পারবে। এখন তুমিই ভালো বুঝ..নিজের মেয়েকে খুঁজবে নাকি নিজেকে ধ্বংস করবে।
–আমার মেয়ে এখন কোথায়! কেমন আছে সে! নাহ, আমি ওকে একবার না দেখে যাব না। ঠিক আছে, তুমি যত ইচ্ছা খুশী মানিয়ে নাও। আমি আমার মেয়েকে না পাওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকব।
–ঠিক আছে, তাই হবে।
–তবে তুমি আমার মেয়ের সম্বন্ধে কি করে জান?
–তুমি আমার শক্তি এখনো দেখছ কোথায়! এসব বাদ দাও। চলো আমার সাথে।
এই বলে মহিলা তাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। অনেক বড় একটা বাড়ি নির্জন পরিবেশে। ভেতরে ঢুকতেই চন্দ্রিকাকে মহিলা তার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। সেও ভ্যাম্পায়ার। মহিলা বলে-
–আজকে থেকে তুমি এখানে থাকবে। তুমি আমাকে বোন বলে ডাকতে পার। আর হ্যা আমার নাম প্রসূদা। আজকে থেকে তুমি তোমার নতুন পরিচয় নিয়ে বাচবে। আগের সব কথা ভুলে যাও। নতুন জীবন শুরু কর। তোমার নাম এখন থেকে অনামিকা।
এই বলে প্রসূদা অনামিকাকে রুমে ঢুকিয়ে চলে যাই। অনামিকা পুরনো স্মৃতির কথা ভেবে ভেবে অনেক কাদে। সে এমন কি অপরাধ করেছিল যে, তার ভালোবাসার মানুষই তাকে বদ করল! সে মনে মনে ভাবে.. না আমার ভেঙ্গে পড়লে চলবে না আমার মেয়েকে খুঁজে বের করতে হবে। ও কেমন আছে দেখতে হবে।
এরপর দিন কাটতে থাকে। এর মধ্যে অনামিকা পুরোপুরি ভ্যাম্পায়ারদের মত হয়ে যাই। নিজেকে সে এখন আগের চন্দ্রিকা ভাবে না। সে জানে তার মধ্যে রয়েছে এখন অশুর শক্তি, বাতাসের আগে দৌড়ার ক্ষমতা, মানুষের মন পড়ে ফেলার ক্ষমতা আরো অনেক কিছু। সে এখন একটু একটু বাইরে যাই, জগৎ দেখে। একদিন সে একটা বাগান দিয়ে হাটার সময় সামনে একটা ছেলেকে দেখতে পাই। তার রক্তের গন্ধ যেন অনামিকার নাক পর্যন্ত আসছে, ব্যাস, তাকে শিকার করার পরিকল্পনা করে।বিদ্যুৎগতিতে দুই কদমেই একটা গাছে উঠে যাই। গাছ থেকে এক লাফ দিয়ে ছেলেটার গায়ের উপর পড়ে, ছেলেটা মাটিতে পড়ে যাই। অমনিতেই অনামিকা তার দুপাশের ভ্যাম্পায়ারের মত দাত বের করে ছেলেটার ঘাড়ে কামড় বসাতে যাবে অমনিতেই সে খেয়াল করে ছেলেটার কানের পাশে কেমন এক দাগ, বীরচন্দ্রের কানের পাশে যেমন দাগ ছিল হুবহু তেমন। অনামিকা তার দাত গুলো ঢুকিয়ে ছেলেটার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করে। অমনিতেই সে অবাক হয়ে যাই। এ তো বীরচন্দ্র। এখন ছেলেটাও মুখ তুলে অনামিকার দিকে দেখে, কেমন অপূর্ব মেয়েটা। এমন মেয়ে হয়ত সে আগে কখনো দেখে নি। এদিকে অনামিকার কাছে তার পুরনো ভালোবাসার কথা জেগে উঠে সে আলতো করে তার মুখ স্পর্শ করাই তার মুখে। ছেলেটা চোখ বন্ধ করে ফেলে। একটু পর ছেলেটার গা হালকা মনে হলে সে চোখ খুলতেই দেখে তার সামনে কেউ নেই..বরং দূরদূরান্ত পর্যন্ত কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তবে সে কি ভ্রমে ছিল??
এদিকে অনামিকা রুমে এসে হাপাতে থাকে…সে যাকে দেখল সে তো বীরচন্দ্রের মত ছিল..তবে ছেলেটার মন পড়ার পর তাকে বীরচন্দ্র মনে হয়নি কেন! তবে সেই দাগ, সেই চেহারা কিন্তু মন আলাদা এমন কেমনে সম্ভব!! সে আমাকে চিনল না তো!! হাজারো প্রশ্ন তার মনে।
কিছু দিন পর…..
অনামিকাকে প্রসূদা একটি কলেজে নিয়ে ভর্তি করে দেই। এক তো হাই প্রোফাইল উপর থেকে এমন সুন্দরি মেয়ে দেখে সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকে দেখে তাকে। তার হাটার স্টাইল আগের মতই রাজকীয় রয়ে গেল। সে ক্যান্টিনে বসতেই আবার সেই ছেলেকে দেখে। এরপর ছেলেটি না দেখে মত অনামিকা ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যাই। কিন্তু কিভাবে যেন ছেলেটা অনামিকাকে পেয়ে যাই। অনামিকার কাছে এসে বলে;-
–হ্যালো ম্যাডাম।
–(চুপ..!)
–আপনি এভাবে আমাকে দেখে পালান কেন! আসলে আমি আপনাকে চিনি না, জানি না তবে আপনার প্রতি কেমন এক ভাবনার জন্ম নিছে। সেদিনের পররর…
–(থামিয়ে)শুনেন, সেদিন যা হয়েছিল সবই ভুলে যান। আমি আপনাকে অন্য কেউ ভেবে ভাবনাই ডুবে গেছিলাম….
–আমাকে কে ভাবছেন.. আই ডন্ট কেয়ার। তবে সেদিন থেকে শুধুই আপনার কথা ভাবছি। ভালো লাগা কাজ করছে আপনার প্রতি।
অনামিকা ছেলেটাকে অনেক কিছু বুঝাল। কিন্তু সে বুঝতে চাই না।ছেলেটার সাথে পরিচয় হয়। নাম তার অভ্র। গরীব পরিবারের একটা ছেলে। এটা বীরচন্দ্র না তাই অনামিকা তাকে রীতিমত ইগনোর করে যাই।আর তাকে দেখলে মনে এক ধরণের ঘৃণারও জন্ম হয়,বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাই। কিন্তু অভ্র.. তার পিছু ছাড়তে রাজি নই। তাকে সে ভালোবেসে ফেলছে। কিন্তু সে জানে না অনামিকা একটি ভ্যাম্পায়ার। এদিকে অনামিকা তার মেয়েকে অনেক খুঁজে কিন্তু পাইনা। কেমনে পাবে!! তার মেয়ে তো জীবন্ত নেই। তার সাথে সাথে তার মেয়েকেও মেরে ফেলা হয়েছিল কিন্তু একথা অনামিকা জানে না। সে ধীরেধীরে বীরচন্দ্র রুপী অভ্রকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু তাকে বুঝতে দেই না। কারণ ও একটা সাধারণ মানুষ, ভ্যাম্পায়ারের সাথে তার মিলন অসম্ভব। একদিন অভ্র এসে অনামিকাকে এতই বিরক্ত করে যে, অনামিকা নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে তাকে তাপ্পর দিয়ে দেই। অভ্র আর কিছু না বলেই চলে যাই। অনামিকা তার ভুল বুঝতে পেরে তাকে খুঁজে। দুই তিনদিন পার হয়ে যাই। তারপর দিন সে কলেজে গেলে অভ্রকে দেখতে পাই। অভ্র তাকে পাত্তা না দিয়েই চলে যাচ্ছে, অনামিকা খেয়াল করল একটা ব্রেকফেল করা গাড়ি অভ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাকে চিৎকার করে বলল কিন্তু অভ্র তা কর্ণপাত করল না। গাড়ি অভ্রকে ছুঁইছুঁই এমন সময় অনামিকা চোখের পলকে ছায়ার মত দৌড়ে গাড়িকে আটকিয়ে ফেলে..অভ্র পড়ে যাই। অনামিকা আরেকহাতে তাকে ধরে বাহুতে নিয়ে আসে… গাড়ির চাকাগুলো এখনো ঘুরছে। তারা একে অপরের দিকে অপলক চেয়ে আছে। অভ্র বিশ্বাস করতে পারছে না অনামিকার কাছে এত শক্তি এল কোথা থেকে। আশেপাশে ভীর জমতে শুরু করলে অনামিকা কেউ না দেখে মত সরে পড়ে। কলেজের দুই এক মাস্তান অনামিকার প্রেমে মত্ত ছিল।তারা অভ্রকে অনামিকার সাথে দেখে ক্ষেপে যাই। রাতপ্রহরে অভ্র যখন রাস্তা দিয়ে হাটে ঐ মাস্তান ছেলেগুলো কিছু লাঠি নিয়ে ঘেরাও করে।অভ্র একাই একশজনকে শেষ করে দিবে এমন ছেলে কিন্তু এখন তার মন খারাপ কারো সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ইচ্ছা নেই। সেখান থেকে একজন এসে অভ্রকে মারতে যাবে এমন সময় অভ্র চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনেক্ষণ পরও অভ্রের কিছু হল না। চোখ খুললে দেখতে পাই ছেলেটার লাঠি অনামিকা ধরে আছে। বজ্রনয়নে তার দিকে দেখে আছে। একটু পর অনামিকা একেক করে সবাইকে মারতে লাগল। কিন্তু সে তার আসল শক্তি দেখাচ্ছে না। একটা ছেলে অনামিকার গায়ে হাত দিতেই অভ্র ক্ষেপে যাই। তারপর সে ওদের এই না সেইই ধুলাই করে। তারপর তারা পালিয়ে যাই। অভ্র সামান্য ব্যাথা পাইছে, অনামিকা সেখানে হাত লাগাতে গেলেই তার হাত দূরে সড়িয়ে চলে যাই। অনামিকা…অভ্র, অভ্র করে চিল্লাতে থাকে। সে পেছনে ফিরে তাকায় না। এদিকে এসবের দর্শক হিসেবে আরেকজন উপস্থিত থাকে ‘প্রসূদা’। তার কাছে এখন ভয় জাগে ছেলেটা যদি অনামিকাকে তার কাছ থেকে দূর করে ফেলে তাহলে তার সৌন্দর্য যেকোনো সময় বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনামিকার মধ্যে প্রসূদার যে খারাপ শক্তি আছে তা কোনোভাবে উন্মুক্ত হয়ে গেলে সে তো শেষ। এজন্য সে অনামিকাকে বাসা থেকে বের হতে দেইনা। সে অভ্রকে এক পলক দেখার জন্য ব্যকুল। সে হঠাৎ তার মস্তিষ্কে খবর পাই কে যেন অভ্রকে মারছে। অভ্রর আশেপাশের জায়গাগুলো দেখছে এটি সেই বাগান যেখানে ওদের প্রথম দেখা। অনামিকা জানালা দিয়ে বের হয়ে গাছ বেয়ে বেয়ে সেখানে গিয়ে পৌছে। এরা সেই আগের গুন্ডা। আজকে তাদের শ্বাস নিয়েই ছাড়বে সে। অভ্রকে মারার কারণে সে বেহুশ হয়ে যাই। অনামিকা তার কাজ শেষ করে অভ্রকে কোলে করে ওর রুমে নিয়ে আসে। তাকে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডেজ করে দিয়ে তাকে অপলক দেখে থাকে। তার বুকে গিয়ে মাথা রেখে কাদতে থাকে। একটু পর অভ্রের হুশ ফিরে। অনামিকা উঠে বসে, কান্না মুছে। অভ্র বলে-
–আমি যে তোমাকে বিরক্ত করি এটা তো তোমার পছন্দ না। তুমি তো আমাকে ভালোওবাস না তবে এভাবে আমাকে প্রতিটা বিপদ থেকে বাঁচাও কেন, আমার জন্য এত চিন্তা কেন তোমার!
অনামিকা তার কপালে হাত বুলিয়ে দেই আর বলে..
–জান,আমি আগে যাকে ভালোবাসতাম তুমি একদম তার মতই। তোমাকে দেখলে ওনার কথায় মনে পড়ে। মনে পড়ে যাই, তার সেই ধোকার কথা। একবার সে বললে হত, আমি তার জীবন থেকে চলে যেতাম কিন্তু এভাবে বিদায় করাবে আমাকে তা জানতাম না।
–মানে? কি করেছে সে?
–নাহ কিছু না। তুমি রেস্ট কর।
অভ্র অনামিকার হাত ধরিয়ে বসায়।
–তোমার চোখে আমি আমার জন্য কোথাও না কোথাও ভালোবাসা দেখি। আর তাছাড়া আমি তার মত ধোঁকা দিব না তোমাকে। আই লাভ ইউ সো মাচ।
এই শুনার পর অনামিকা কেঁদে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
পরদিন বাগানে গুন্ডাগুলোর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যাই।অনামিকা আর অভ্র একে অপরকে ভালোবেসে যাই।অভ্র ২৮ বছরে পড়তেই একদিন রাতে হঠাৎ অনেক খারাপ একটা স্বপ্ন দেখতে পাই- অনামিকার সাথে তার বিয়ের দিন, অনামিকা তাকে জড়িয়ে ধরলে সে অনামিকার পেটে চুরি ঢুকিয়ে তাকে খুন করে। অভ্র তখন এক শয়তানী হাসি হাসে।
পরপর সে একই স্বপ্ন প্রতিরাতে দেখে।তার ভয় হতে শুরু করে। তার মনে পড়ে অনামিকা বলছিল,,,সে আগে যাকে ভালোবাসত সে তার মতই ছিল, সে নাকি তাকে ধোকা দিয়েছিল।আমিও স্বপ্নে ওকে ভালোবাসার নাটক করে খুন করি। এসব কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে না পেরে একটা পন্ডিতের কাছে যাই। পন্ডিত কিছুক্ষণ তার মাথায় হাত রেখে ধ্যান করে বলে, অভ্র হল বীরচন্দ্রের পুর্নজন্ম। বীরচন্দ্রের অপূর্ণ কাজ পূরণ করার জন্যই সে জন্ম নিয়েছে অভ্র হিসেবে। বীরচন্দ্রের সাথে অনেক বড় অপরাধ হয়েছিল। ২৮ বছর আগে সে আত্মহত্যা করেছিল। এরপর সে আবার জন্ম নেই অভ্র হিসেবে। তুমিই বীরচন্দ্র। যে মকসূদকে ঘিরে জন্ম নিয়েছ যাও সে মকসুদ পূরণ কর। অন্যথায়, তোমার এই স্বপ্ন দেখা বন্ধ হবে না।
অভ্র বুঝতে পাই। বীরচন্দ্র আর অভ্র দুজন একজনই। তার মানে তার আগের জন্মের ভালোবাসা অনামিকা।
–কিন্তু তাকে তো আমি স্বপ্নে মেরে ফেলছিলাম। আর স্বপ্নটা কি পুরাই সত্যি?? না হতে পারে না।আমি ওকে অনেক ভালবাসি।নিশ্চয় আগের জন্মেও অতটা ভালবাসতাম। আর অনামিকা আমাকে ভুল ভাবছে যে আমি ওকে ধোকা দিছি। জানি না কি হয়ছিল সেদিন।আমার জানতেই হবে। অনামিকাই জানবে এসব। এসব ভেবে অভ্র অনামিকার কাছে ছুটে যায়।
এমনিতে জানালা দিয়ে ডুকে সে অনামিকার সাথে দেখা করে। আজও সে জানালার সামনে এসে দাঁড়াল।অনামিকা তার কাছে আসে..
তাকে অভ্র বলে-
–অনামিকা, আমি তোমার সেই বীরচন্দ্র। আমি আবার ফিরে আসছি অভ্র রুপে তোমাকে আবার ভালোবাসতে। আগের জন্মে যেদিন আমাদের বিয়ে ছিল সেদিন আমি তোমাকে হয়ত মারতে চেয়েছিলাম। এসব কি সত্য?
এসব কথা শুনে অনামিকা ক্ষেপে যাই। রাগে ফুঁসতে থাকে। যাকে সে এত্ত ঘৃণা করে সেই অভ্র!!সে বলে-
–কেনো!! আপনি কেন আমাকে মারতে চেয়েছিলেন আপনি জানেন না??…
এই বলে অনামিকা অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে জানালা থেকে ফেলে দেই। জানালা বন্ধ করে দেই। অভ্র পাতার ঝুপের উপর পড়ার কারণে ব্যথা একটু কম পাই। তবে অনামিকার প্রতি তার কোন অভিমান নেই। সে তাকে আগের জন্মে ধোকা দিয়েছিল..এজন্য ওর রাগ করাটা স্বাভাবিক। অভ্র প্রায়ই আসত ঐ জায়গায় অনামিকাকে একটু দেখতে,তার সাথে কথা বলতে। কিন্তু সে ঘর থেকে বের হয়না। একদিন বের হলে অভ্র তার সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু অনামিকা পারতেছিল না যে, তাকে মেরে তার মনের জ্বালা মিটাতে। কিন্তু তা পারে না। যতটুকু সে বীরচন্দ্রকে ঘৃণা করে ঠিক ততটুকুই অভ্রকে ভালোবাসে। অবশেষে অনামিকা বলল –
–কি চান আপনি,,?? আমাকে আবার মারতে আসছেন নাকি? ঠিক আছে এইবারও মেরে ফেলেন। এমনিতেও আমার বিশ্বাসঘাত করে আমার মনকে অনেক আগেই মেরে ফেলছেন।
–এসব কি বলছ অনামিকা!? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে মারতে চাইব কেন!
অনামিকা উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছে,,অভ্র তার হাত ধরে ফেলে। অনামিকা চোখেজল নিয়ে জোরে জোরে বলে-
–ভালোবাসেন নি তাই তো মেরে ফেলছিলেন।
–মানে?
–এতবার আমার হাত ধরেন, আমার হাতটা লাশের হাতের মত ঠান্ডা মনে হয় না? আমি তো ২৮ বছর আগেই মরে গেছি। এই যে শরীর দেখছেন আমার, এটা মৃতশরীর। যার মধ্যে চলাচল করছে একটা ভ্যাম্পায়ারের রক্ত। আমি এখন একটা ভ্যাম্পায়ার।
এই বলেই অনামিকা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তার ভয়ঙ্কর দুটা দাত বের করে, চোখ রক্তিম করে ফেলে..মুহূর্তেই তাকে ভ্যাম্পায়ার দেখায়। অভ্র সামান্য ভয় পেয়ে যাই। অনামিকা স্বাভাবিক হয়ে তার হাত ছাড়িয়ে চলে যায়। অভ্র কিছুদিন অস্বাভাবিক জীবন কাটাই। তবুও সে অনামিকাকে ভালোবাসে। তাকে দূর হতে দিতে চাই না।এদিকে অনামিকা হতাশ হয়ে পরে। এক বছর ধরে তার মেয়েকে খুঁজছে কিন্তু এখনো তাকে খুঁজে পাচ্ছে না এদিকে সে অভ্রকে তার সত্যি দেখিয়ে দিছে সে হয়ত আর আসবে না। তার বেচে থাকার আর কোনো কারণই বেচে নেই।তাই সে নিজেকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে। প্রসূদার রুমে গিয়ে লুকিয়ে ভ্যাম্পায়ারের বইটা নেই।সে একবার প্রসূদার মুখে শুনছিল, এখানে ভ্যাম্পায়ারদের যাবতীয় সবকিছুই লিখা আছে।সে তা খুলতে যাবে অমনিতেই প্রসূদা এসে তা কেড়ে নেই।আর বলে-
–তুই কি ভাবছিস! তোকে আমি এত সহজে যেতে দিব?? আমি এই রুপ পাওয়ার জন্য আজ ৩০০ বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছি। ২৮ বছর আগেও তুই এভাবে আমার পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলিস…আজ আবার!! না আমি এমন হতে দিব না।
–আজ আবার মানে? -অনামিকা
প্রসূদা এক অট্টহাসি দিয়ে বলে-
–তুই কি মনে করছিস…তোর মেয়ে এখনো জীবিত আছে?? না তাকে আমি অনেক আগেই খতম করে দিছি। ২৮ বছর আগেই। হা হা হা।তুই যখন বলেছিস ‘আমি আমার মেয়েকে খুঁজার জন্য পৃথিবীতে থাকব’ সত্যি বলতে তখন আমার অনেক হাসি পাইছিল। যে মেয়ে পৃথিবীতেই নেই তাকে নাকি খুঁজবি। হাহাহা।
হ্যা ২৮ বছর আগেও তুই আমার রুপ ক্ষয়ের কারণ ছিলিস। আমি বীরচন্দ্রকে আমার হৃদপিন্ডের টুকরো দিয়ে জন্মাতে দিছিলাম। তার মধ্যে ছিল আমার অর্ধেক হ্রদপিন্ড। তার শরীরে যাদু করেই রুপবতী হতাম। একটা বৃদ্ধা ভ্যাম্পায়ার থেকে রুপবতী হতাম। কিন্তু তুই ওর জীবনে এসে শেষ করে দিছিস। ওকে আমি রাজ্য থেকে বের হতে দিতাম না। আর তোর কারণেই সে রাজ্য ছেড়েছিল। সেদিন অনেক ভয় পাইছি। তাকে যদি না পাই আমার হ্রদপিন্ড অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তারপর আমি তোর রাজ্যে গেলাম। তোদের বিয়ের আয়োজন দেখে আমার রক্তে আগুন জ্বলছিল। আমি ভেবে ফেলছি তোদের আমি আলাদা করেই ছাড়ব। এমন সময় বীরচন্দ্র আমাকে দেখে ফেলে আর বলে…”আরে দাদি,, আপনি এখানে!! জানেন আজকে আমার বিয়ে, আমার ভালোবাসার সাথে। আমি অনেক খুশী আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য আমার আপন কেউ একজন তো থাকবে।দাদি আসেন ওর সাথে আপনাকে দেখা করায়”এমন বলে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে আমি বীরচন্দ্রকে আমার চোখাচোখি করে বস করলাম। ওর হাতে তোর জন্য চিঠি লিখে পাঠালাম। আমার নির্দেশ মত বীরচন্দ্র তোকে মেরেছিল। কিন্তু আমার বাজিটাই পাল্টে গেল। বীরচন্দ্র তোকে মারার পর বসমুক্ত হলে তোকে সে নিজ হাতে মারছে দেখে নিজেও আত্মহত্যা করে ফেলে। আমার যেতে দেরি হয়ে যাই। আমি কিছুই করতে পারলাম না। তোদের বাচ্চার কথা মনে পড়তেই আমি ছুটে যাই সেখানে তাকে মেরে ফেলি কারণ সে বীরচন্দ্রের মেয়ে। আমি আসতে আসতে বীরচন্দ্রের লাশ গায়েব হয়ে যাই। তোর লাশ পেয়ে তোকে এখানে নিয়ে আসি।২৮ বছর যপ করে তোর মধ্যে আমার খারাপ কিছু শক্তি ডুকালাম রুপবতী হওয়ার জন্য। ভাগ্য ভালো ছিল তোর শরীরে প্রবেশ করছে। নাইলে আমি আজ পর্যন্ত কতই না মানুষ মারছি। তোর বংশের, বীরচন্দ্রের বংশের কেউ বেচে নেই এখন, কেউ বেচে নেই কিন্তু শুনছিলাম বীরচন্দ্রের মায়ের আরেকটা ছেলে হয়েছিল। কোন একটা দাসীকে দিয়ে বীরচন্দ্রের মা ছেলেটাকে পলাতক করাই। সে যে কোথায় গেছে জানতে পারিনি। সেদিন যখন তুই অভ্র নামের ছেলেটার জন্য লড়েছিলিস,,, সেদিন বীরচন্দ্র রুপী অভ্রকে নিয়ে ধ্যান করছিলাম। সেদিনই জানতে পেলাম বীরচন্দ্রের মায়ের আরেকটা সন্তান বীরচন্দ্রেরই পুনর্জন্ম। ২৮ বছর আগে তুই আমার রাস্তার কাটা ছিলিস আর এখন এই অভ্র। কিন্তু আমি অভ্রকেও মেরে ফেললাম সেদিনের গুন্ডাগুলো দিয়ে। হা হা হা
–তার মানে এসবের পেছনে তুই ছিলিস!! আর আমি!!আমি তো এতদিন অভ্রকেই দোষারোপ করে আসছিলাম। তুই আগের জন্মে ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করেছিস ঠিক কিন্তু এইবার পারবি না। যতক্ষণ আমি আছি, ততক্ষণ আমার অভ্রকে কাউকে চুইতেও দিব না। তুই কি ভাবছিস? তুই ওকে মেরে ফেলছিস? না,,যতক্ষণ আমি আছি, ততক্ষণ ওকে কিছুই হতে দিব না। তুই আমার ভালোবাসার সাথে যা করেছিস,তার প্রতিশোধ তো নিবই। এই অনামিকার প্রতিশোধ এখন দেখ…
–অভ্র বেচে আছে!! সমস্যা নেই, আবার মারবো তাকে। সে তো সামান্য একটা মানুষ মাত্র।হাহাহা.. এমন বলেই প্রসূদা কিছু ভ্যাম্পায়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এদিকে কিছু ভ্যাম্পায়ার অনামিকাকে বেধে ফেলে। কিন্তু বেশিক্ষণ বেধে রাখতে পারে না। কারণ তার মধ্যে কিছু খারাপ শক্তিও থাকায় তার শক্তি অনেক গুণ বেশি। সে অন্যান্য ভ্যাম্পায়ারদের খতম করে দেই। বের হতে যাবে তখন অভ্র আসে।
— অনামিকা, আমি তোমাকেই সত্যিই অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি ভ্যাম্পায়ার হলেও আমার কিছু যাই আসে না। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলছি।
অভ্র হঠাৎ ফ্লোরে পড়ে থাকা ভ্যাম্পায়ারদের দেখে বলে..
–এরা কারা?
–আপনাকে পরে সব বলব। এখান থেকে চলেন এখন।
–কিন্তু কোথায়?
অনামিকা অভ্রকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার বাসায় যায় পরিবাবসহ তাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। অনেক দূরে চলে আসে তারা। অভ্র আবার বলল-
–অনামিকা এসব কেন?অনামিকা, আমি তোমাকে ঐ জনমে কেন মেরেছি জানি না। তবে এই জনমে তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি প্লিজ আমাকে নিজ থেকে দূর হতে দিয়ো না নাহলে আমি মরে যাব..-এমন বলতেই অনামিকা তার মুখে হাত দিয়ে তাকে চুপ করাই। সে বলে…
–সবই আমার ভুল ছিল। আমিই আপনাকে ভুল বুঝছি। আমাকে আপনি মাফ করে দেন। আপনাকে আগেও অনেক ভালোবাসতাম। এখনো অনেক ভালোবাসি।..- এই বলে সে অভ্রের কপালে চুমু খাই…
রাতে গভীর ঘুমে অভ্র হঠাৎ কেঁপে উঠল। তার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। তার মাথা ধরে আছে, যেমন অনেক ব্যাথা করতেছে। তার কাছে ধীরে ধীরে অতীতের কথা মনে পড়তে থাকে। তার আগের জন্মের কথা, কিভাবে চন্দ্রিকার সাথে তার দেখা হয়, কীভাবে তারা একে অপরকে ভালোবাসত, কিভাবে সে চন্দ্রিকাকে মেরে ছিল..সবই তার মনে পড়ে যাই।
পরদিন সে অনামিকাকে এসে জড়িয়ে ধরে। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে…
–আসলে..দাদি..আমার একটা দাদি ছিল। ওনি এসব করছে। ওনি আমাকে বস করিয়ে আপনাকে মারিয়েছিল।আগে জানতাম না ওনি এতটা খারাপ। অনামিকা আমাদের মেয়ে? ও এখন কই?..
একথা শুনে অনামিকা মাথা নিচু করে ফেলে।
–কি হল, কিছু বলেন। আমাদের মেয়ে কই?
–অভ্র, আপনার সেই দাদি ওকে মেরে ফেলছে সেদিনই।
–কিইইইহ….
এমন বলে অভ্র নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে পড়ে যাই। আর কাদতে থাকে। অনামিকা তাকে সান্তনা দেই।
–অভ্র, আমি প্রসূদাকে শাস্তি দিবই। এসবের প্রতিশোধ তার কাছ থেকে নিবই। ছাড়বো না ওকে আমি। এই বলে দুজনই কাঁদতে থাকে।
–জানেন,,আমি যখন আত্মহত্যা করেছিলাম আমার রুহটা জীবন্ত রয়ে গেল। আমি একটা অদৃশ্য আত্মা হয়ে গেলাম। আমি আমার শরীরকে পুঁতে দিয়ে আসলাম। আপনার কাছে এসে দেখি আপনি গায়েব। আপনাকে অনেক খুজছিলাম।আমি রাজ্যের একটা দাসীকে খবর করলাম আমার রাজ্যে গিয়ে সবাইকে সাবধান হতে বলতে। সে ছুটে যাই। একটু পর আমার গা জ্বলতে থাকে। মুহূর্তেই আমি ভষম হয়ে যাই।…
–(থামিয়ে) কারণ আপনি অভ্ররুপে অন্যদিকে জন্ম নিয়েছিলেন।
–মানে?
–মানে আমাদের মৃত্যুর পর আপনার মায়ের আরেকটা সন্তান হয়, আপনিই সেই সন্তান,আপনার আগের জন্মের মা আপনাকে একটার দাসীর কাছে সপিয়ে দেই, এরপর আপনি এখানে এসে পৌছান। এসব প্রসূদা নিজের মুখেই বলছে। শুনেন, একটা ভ্যাম্পায়ারের বই আছে তার কাছে, আমরা ওটা হাসিল করতে পারলে, ওকে শেষ করতে পারব। সে সবাইকে মেরে ফেলছে। তার বাচার অধিকার নেই।
–কিন্তু সে এসব কেন করেছে?
–রুপবতী হওয়ার জন্য। সে প্রথমে আপনাকে ব্যবহার করে। আপনার মধ্যে তার হ্রদপিন্ডের অর্ধেক প্রবেশ করিয়ে। আপনার ভেতরের শক্তি যদি কোনোরুপ বেরিয়ে যাই তাইলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি তার পথের কাটা ছিলাম বিধায় আমাকে মারিয়েছিল।
–আগের জনমে আমি আমার মায়ের কাছে শুনেছিলাম…ওনি কি একটা ঔষধ দিয়ে আমার মাকে বাঁচিয়েছিলেন। তার মানে তখনই সে তার হ্রদপিন্ডের অর্ধেক আমার শরীরে প্রবেশ করাই।
–হুম, হয়ত।
এরপর অভ্র আর অনামিকার জীবন সুখে সুখে কাটতে থাকে। অভ্রের ছোট বোনের বিয়ে হয়। তার আপন বোন না হলেও তাকে সে অনেক ভালোবাসে। সে তাকে বিদায় দিয়ে কাদে। অনামিকা এসে তার চোখের পানি মুছে দেই। সে অনামিকার সাথে ভেতরে চলে আসে। অনামিকা বলে-
–অভ্র, আপনি একটা সাধারণ মানব আর আমি একটা ভ্যাম্পায়ার। আমাদের এভাবে সাথে থাকা কি ঠিক!অভ্র আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত।
অভ্র তাকে চুপ করিয়ে বলে..
–এ ধরণের কথা একদমই বলবেন না। আমরা আজীবন সাথে থাকব।
এমন বলে অভ্র অনামিকাকে কোলে নিয়ে রুমে যাই।+++
তারা একসাথে ঘুমানোর পর রাতে কারো চিৎকারে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। তারা তড়িগড়ি করে বেরিয়ে পড়ে। অভ্র সুরক্ষার জন্য একটা ছুরি নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে প্রসূদা আর কয়েকটা ভ্যাম্পায়ার তাদের পরিবারকে আটক করে বেধে রাখছে। সে অনামিকাকে হুমকি দেই.. সে যদি নিজেকে হস্তান্তর না করে তাহলে অভ্রসহ তার পরিবারকে মেরে ফেলবে। অনামিকা উপায়ন্তর না দেখে তার দিকে পা বাড়াই কারণ প্রসূদা অনেক শক্তিশালী সে অভ্রকে বা তার পরিবারকে কিছু করে ফেলবে। অভ্র অনামিকাকে অনেক নিষেদ করে। প্রসূদা অনামিকাকে ধরে ফেলে। এমনভাবে ধরে যাতে সে ছুটতে না পাই। প্রসূদা ভ্যাম্পায়ারদের আদেশ দেই-
–অভ্র আর তার পরিবারের সকলকে মিটিয়ে দাও। প্রসূদার পথে যে একবার বাধা দেই তাকে সে ছাড়ে না। রক্ত চুষে ফেল এদের।
এই শুনার পর অনামিকা চিল্লাতে থাকে। এদিকে তারা অভ্রকেও ধরে আটকিয়ে রাখে। কেউ কিছুই করতে পারছে না। অভ্রের মায়ের দিকে একটা ভ্যাম্পায়ার পা বাড়াই। অভ্র আর অনামিকা চিল্লাতে থাকে। অভ্রের হঠাৎ মাথায় এল- আগের জনমে তার মধ্যে প্রসূদার অর্ধেক হ্রদপিন্ড ছিল। সে মরে যাওয়ার পর প্রসূদা ধ্বংস হয়নি কেন!!তার মানে এই অংশ তার শরীরে না আত্মাই ছিল। আর বীরচন্দ্রের আত্মা এখনো আমার মধ্যে জীবন্ত। তার মানে আমি আমাকে শেষ করলে প্রসূদা ধ্বংস হয়ে যাবে। ওকে ধ্বংস করার জন্যই হয়ত আমার পুনর্জনম। আমার মকসূদ পূরণ হলে আমার আত্মাও মুক্তি পেয়ে যাবে। প্রসূদা আর ফিরে আসবে না।-এই ভেবে অভ্র অনামিকা আর তার পরিবারকে একনজর দেখে নিল। তার হাত ভ্যাম্পায়ার থেকে ছুড়িয়ে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে নিজেকে খনন করে। এই দেখে অনামিকা আর তার পরিবার অভ্র.. করে চিৎকার দেয়। অভ্র নিস্তেজ হয়ে পড়ে..মৃদুস্বরে অনামিকা…বলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অনামিকা কান্নায় ভেঙ্গে পরে। এদিকে প্রসূদা চিৎকার করতে করতে মাটিতে পড়ে কাতরাই। কিন্তু তার জান বের হচ্ছে না। অনামিকা তার হাত ছাড়িয়ে গিয়ে অভ্রের শরীরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। বাকি ভ্যাম্পায়ার দাঁড়িয়ে এসব দেখতে থাকল। একজন বলে উঠল..অনামিকা এই খারাপ আত্মাকে শেষ করে দাও, আজ শত শত বছর ধরে সে মানুষ বদ করে তার ভ্যাম্পায়ারের রাজ্য বানাইছে।আমাদের গোলাম বানিয়ে রাখছে। এই দুষ্ট আত্মার গোলাম হতে চাইনা। শেষ করে দাও একে। বাকিরাও তার সাথে মত দিল। হঠাৎ কোত্থেকে যেন প্রসূদার স্বামী আসে আর বলে একে পুরোপুরি ধ্বংস করতে হবে। সে আমাকে মিথ্যা প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে মেরেছে,,আমার মত শত শত নির্দোষের উপর অত্যাচার করেছে। একে ধ্বংস হতেই হবে।এর ভেতরের শক্তি এখনো জীবিত তাই সে ধ্বংস হচ্ছে না। তাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার একটাই উপায়,,তা হচ্ছে ভ্যাম্পায়ারের কিতাব।
এই বলে তিনি ভ্যাম্পায়ারের বইটা বের করলেন। আর বললেন এখানে একটা মন্ত্র আছে যা পড়লে প্রসূদার শরীরের শক্তি মন্ত্র পাঠকের শরীরে প্রবেশ করবে এতে করে প্রসূদা পুরোপুরি ধ্বংস হবে। কিন্তু এতে পাঠকের জানও যেতে পারে। এটা আমিই পড়ব।
অনামিকা তাকে বাধা দিয়ে মৃদুকন্ঠে বলল..–না, আপনি এ কাজ করবেন না। আপনার এ পৃথিবীতে অনেকেই আছে তাদের ছেড়ে আপনি যায়েন না। আমার এখন পৃথিবীতে কেউ নেই। বাচার কোনো নীড় নেই। আমিই পড়ব এই মন্ত্র। সে আমার ভালোবাসাকে দুই দুইবার মারছে। আমি এর প্রতিশোধ নিবই।-এমন বলে অনামিকা বইটার সেই মন্ত্র পড়তে লাগল। প্রসূদার ছটপটানো বেড়ে যাচ্ছে। তার থেকে সাদা সাদা কিরণ এসে অনামিকার মাঝে ঢুকছে। ঢুকা শেষ হলে প্রসূদা এক সময় জোড়ে একটা আর্তনাদ করে।তার শরীর ছাই হয়ে যাই। আর তার আত্মা ধোয়া হয়ে বাতাসে মিলে যাই। অনামিকার মধ্যে সব শক্তি ঢুকে গেল কিন্তু তার কিছু হল না। কারণ সে আগেও অনেক শক্তিশালী ছিল। তার ভেতরের শক্তি তাকে রক্ষা করছে।
পরিবেশটা অভিশাপমুক্ত হল। সবাই জয়ের ধ্বনিতে মন খুলে হাসে। সবাই অনামিকাকে তাদের নতুন সর্দার হিসেবে ঘোষিত করে।একটু পর সবাই ধীরে ধীরে চলে যাই। অনামিকা অভ্রকে জড়িয়ে ধরে কাদে। দুঃখ সহ্যের বাইরে হওয়াই সে আকাশের পানে তাকিয়ে ‘বীরচন্দ্র’ বলে এক জোড়ে আর্তনাদ করে। কোনো প্রতিধ্বনি ফিরে আসে না। আওয়াজটা বাতাসের সাথেই মিলে যাই।…
(সমাপ্ত…!)