ভূতের পেত্নী

ভূতের পেত্নী

তার সাথে যখন আমার প্রেম হয় তখন ও কি দেখে আমার প্রেমে পড়েছিলো জানিনা ৷ আমি তেমন সুন্দর না দেখতে ৷ এরপর সম্পর্ক যত গড়ায় সে আকার ইঙ্গিতে বোঝায় আমার ফিটনেস ঠিক করতে হবে ৷ আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি সে মশকরার ছলে হলেও আমাকে বোঝাতো তার চিকন মেয়ে পছন্দ ৷ কোনো মেয়ের চেহারা খারাপ হলেও বলতো মেয়েটা সুন্দর ৷ যদি বলতাম কি বলো কি দেখে মনে হলো? ও বলতো দেখো স্লিম অনেক ৷ তখন বুঝতাম কি বোঝাতে চাইছে ৷ কিন্তু কখনো সরাসরি বলেনি ৷ সম্পর্কে অনেক ঝামেলা থেকেও আমরা শক্ত ছিলাম ৷ ছেলেটা ভালোবাসতো আমাকে এটা সত্যি ৷ এরপর বিয়ের সময় এসে পরলো যখন ও আমাকে তখন সরাসরি বলে দিলো দেখো একটু ব্যায়াম করো সাস্থ্যটা একটু যেনো কমে ৷ আমার বাসা থেকে দেখতে যাবে বুঝতেছোনা একটু সেরকম হতে হবে ৷

সেদিন বুঝলাম ওর পছন্দটা কিছুই না স্লিম হওয়াটা জরুরী ৷ তা না হলে তো ওকে মানুষ বলবে হাতী বউ এনেছিস ৷ যাহোক শুরু করাল ব্যায়াম ডায়েট ৷ কমলামও একটু কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে গেলো অনেক ৷ তবুও স্রং থাকার চেষ্টা করতাম ৷ তারপরো আমি খুব ফর্সা না এটা নিয়েও সবার একটু সমস্যা হলেও বিয়েটা হলো ৷
এরপর কিছুদিন ডায়েট মানলেও পরে আর মানা হচ্ছিলোনা সংসারের কাজ সবমিলিয়ে ব্যায়াম ডায়েটের সময় ছিলোনা ৷ হয়তো চেষ্টা করলে পারতাম আমিও চেষ্টা করিনি কারণ দুর্বল হয়ে যায় শরীর ৷ আবার মোটা হয়ে গেলাম ৷ জামাই আমাকে উঠতে বসতে বলতেই থাকতো হাতীর মত শরীর ৷ একদিন দেখি বাড়ির লোক ও আমাকে নিয়ে হাসছো আমাকে নাকি ট্যাবলেটের মতোন লাগে ৷ আমাকে দেখেই সবার কথা বন্ধ হয়ে গেলো ৷ জামাই আমার খুব উপভোগ করছিলো এসব ৷

দিন দিন আমি যেনো তার কাছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আস্ত হাতীই হয়ো যাচ্ছিলাম ৷ আমারদিকে ভালো করে তাকিয়েও দেখতো না ৷ আমার কোন অভাব ছিলোনা ৷ সে কখনো কোন ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে ঝগড়াও করতোনা কিন্তু সে আমাকে যাস্ট রিসপন্সেবলটি থেকে হয়তো তার সাথে রেখেছিলো ৷ আমার দোষ একটাই আমাকে আকর্ষনীয় লাগেনা মোটা বলে ৷ একদিন তার জন্য সেজেছিলাম তার প্রথম কথা ছিলো শাড়ীটায় মানাচ্ছেনা আরো বস্তার মতো লাগছে ৷ মেনে নিয়েছিলাম সেদিনও ৷

কিছুদিন হলো জামাই আমার খুব বউ ভক্ত হয়ে গেছে ৷ সেলফি তোলে আমার সাথে প্রশংশা করে ৷ কারণ একমাস হলো আমি অনেক শুকিয়ে গেছি ৷ এখন আমি যাই করি তার তাই ভালো লাগে সুন্দর লাগে ৷ মনে মনে অনেক খুশী হতাম যাক পেরেছি তাহলে ৷ দিন গড়ায় ফিটনেস একদন স্লীম ৷ কিন্তু আমি যে অনেক অসুস্থ বোধ করি এটা তাকে বুঝতে দেইনা কারণ এতদিন পর সে আমাকে চোখে হারায় এটা আমি বজায় রাখবোই ৷একদিন হঠাৎ করেই এত অসুস্থ হলাম সুস্থ থাকার নাটকটা করতে পারলাম না ৷

হসপিটালে যাওয়ার পর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলো ৷ এরপর মেডিসিন দিয়ে ছেড়ে দিলো ৷ কিন্তু আমি একেবারেই দুর্বল ৷ ও আমাকে বললো বুঝেছি চিকন হতে ডায়েট করেছো তাই এত খারাপ অবস্থা ৷ আর করতে হবেনা হইসে অনেক ৷ এরপর আবারো অনেক অসুস্থ হলাম ৷ ডাক্তারকে ও বললো দেখেন ডায়েট করে কি অবস্থা করেছে ৷ ডাক্তার আমাকে বললো কতদিন হলো ডায়েট করছেন আর খাবার ম্যানু কি কি খান?

আমি বললাম আমি তো ডায়েট করিনা স্যার ৷ বরং আমার খেতেই ইচ্ছে করেনা একাই এভাবে ওজন কমেছে ৷ ডাক্তার শুনে বললেন আর কোন প্রবলেম ফেস করেছেন? বললাম হ্যাঁ জ্বর আসতো আবার কিছুক্ষন পরেই ঠিক হতো আর অনেক দুর্বল মাথা ঘোরে ৷ ডাক্তার বললেন এতদিনে ডাক্তার দেখিয়েছেন? বললাম না দেখাইনি ৷ উনি আবার কিছু টেস্ট দিলেন রিপোর্ট দেখার সময় আমার হাজবেন্ডকে ডাকলেন ৷ জামাই আমার বিষন্ন মুখে বের হলো ৷ বাসায় গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে সে ৷ জিগেস করলাম কি হয়েছে তোমার? আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না ৷

জানলাম আমার কোলন ক্যান্সার ৷ কোথায় যেনো পরেছিলাম ডায়েট ছাড়া ওজন কমে যাওয়া কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ৷ আজ বুঝলাম কেন এভাবে শুকাচ্ছিলাম ৷
সে আমাকে বড় বড় ডাক্তার দেখালো কিন্তু আমার সময় শেষ ৷  একদিন তাকে ডেকে বললাম এরপর স্লিম ফিগার কাউকে বিয়ে করবে ৷ সে অঝরে কাঁদছে বলছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা হও তবুও আমার তোমাকেই লাগবে ৷ প্লীজ আমাকে ছেড়ে যেও না ৷  বুঝলাম ছেলেটা আসলেই ভালোবাসে আমাকে ৷ কিন্তু তাকে ভালোবাসবার জন্য সময়টা যে আমার নেই ……..

এপর্যন্তই লেখা ছিলো নীরার ডায়েরীতে ৷ তার ১৫ দিন পরেই নীরা চলে যায় সাজ্জাদকে ছেড়ে ৷ আজ সাড়ে পাঁচ বছর পর সাজ্জাদ লেখাটি পরছে ৷ অঝোড়ে কাঁদছে সে হয়তো দোষটা তারই হয়তো না পুরোটাই তারই দোষ, নীরা অসুস্থ থাকলেও বুঝতে দিতোনা কারণ সে সাজ্জাদের ভালোবাসা চায় ৷ যদি সাজ্জাদ মোটা মোটা না করতো হয়তো এসব হাইড থাকতোনা চিকিৎসা করলে নীরা ভালো হয়ে যেতো ৷ কিন্তু সুযোগটাই যে হলোনা ৷ কিছু ভুল সাজ্জাদের কাছ থেকে সারা জীবনের জন্য আলাদা করে দিলে নীরাকে ৷

সমাপ্ত ৷

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত