গ্রামের নাম বালিগাদা, বর্ধমান জেলার এক রহস্যপুরী গ্রাম,কেউ এই গ্রামে বসবাস করা অনেক দুরের কথা চাষআবাদ করার সাহস কেউ পায়না তাই এই গ্রাম রীতিমত কালের বিবর্তনে জীন পরীর আখরা হয়ে গেছে,,বালিগাদা গ্রামের প্রধান ভয়েরচিহ্ন হল পুকুর,,পুকুর ভর্তি মাছ কিন্তু,মাছ হলে কি হবে মানুষ দুরের কথা সেই মাছ কোনো পাখি খায়না পুকুরের ব্যাঙকেও সাপ খেতে পারেনা।
একবার এক বেদে দল পুকুরের পারে বাসা বেধেছে যে ওরা মাছ গুলো ধরে নেবে একরাত্রি যাওয়ার পরে সেই বেদের দল মুখ শুকনো করে মাথা নিচু করে বালিগাদা গ্রামের বাতাসেও তাদের ঘ্রাণ পাওয়া যাবেনা। বালিগাদা গ্রামের ওই পার করিমগঞ্জ, তবে করিমগঞ্জ যাওয়ার জন্য অনেক পথ তবে বালিগাদা গ্রামের ওপর দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হয়।
করিমগঞ্জ এ চান মিয়ার বোনকে বিয়ে দিয়েছে কয়েকদিন আগে করিমগঞ্জ থেকে একজন এসে বলল তোমার বোন সাথি যথেষ্ট অসুস্থ,,, চান মিয়া এ কথা শুনে রীতিমত যাওয়ার প্রস্তুত নিলো। এখনো দুপুর হয়নি সকালের সুগন্ধি বাতাস নাকে লাগছে,তাই অনেক ভেবে চান মিয়া ভাবলেন যদি বালিগাদা গ্রামের ওপর দিয়ে যায় তাহলে করিমগঞ্জ সন্ধার অনেক আগেই পৌঁছানো যাবে, অন্য পথ ধরলে রাতের আধারে করিমগঞ্জ পৌছাবে। তাই চান মিয়া ভাবলেন দিনেদুপুরে জীন পরীর আছর কখনো হয়না,তাই রওনা দিলেন, বালিগাদা গ্রামের ঢোকার সময় পুকুরে চোখ পরতে দেখে পাস দিয়ে বক উড়ে যাচ্ছে কিন্তু পুকুর ভর্তি মাছের লাফালাফি করলেও বক সেদিকে গেলোনা, বালিগাদা গ্রামের মাঝখানে এলে হটাঠ মনে হলো কেও তার পিছু নিয়েছে কিছুদুর যাবার পর রীতিমত চমকে উঠলেন চান মিয়া, সামনে এক কৃষাণ দারিয়ে পথরোধ করলেন এবং বললেন এই ভরদুপুর বেলায় কোথায় যাচ্ছেন তাও আবার বালিদাগা গ্রামের ওপর দিয়ে? চান মিয়া বলল” একটু দরকারি কাজে যাচ্ছি আমার বোনের বাড়ি তার খুব অসুখ দেখতে যাচ্ছি”কৃষাণ বলল “দেখো বাপ এখন এই পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরো আর তোমার বোন সাথি এখন ভালোই আছে তাই বাড়ি যাও” চান মিয়া বলল”এতো পথ এত কষ্ট করে এসেছি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়।” কৃষাণ বিরক্ত নিয়ে বলল”হয় এই পথ ছাড়ো নয় অন্য পথ ধরো।
চান মিয়া তার কথা সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে বালিগাদা গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে করিমগঞ্জ গেলেন,যাওয়ার পথে বটতলা যাগায় উচু মোটা কালো কয়েকজনকে দেখলেন, কিন্তু সেগুলোর কোন দেহ ছিলোনা, এক ছায়ামূর্তি দেখাচ্ছিলো মাঝখান থেকে একজন বলে উঠলো”এই ছোকরা কোথায় যাও? তোমাকে কেও আটকায়নি পথে?” চান মিয়া বলল এক কৃষাণ আটকেছিলো আমি বললাম দিনেদুপুরে কি হবে’ এই বলে চান মিয়া চলে গেলো,,এমন ভাবে গেলো ঠিক বেয়াদবি ভাবে।
বিকালের আগেই করিমগঞ্জ পৌছে বোনের সাথে দেখা করলেন, বোনকে এইসব ঘটনা বললেন,,বোনটির অসুখ সেরে গেছে। সাথি কথাটি শুনে চমকে উঠলেন এবং বললেন” চান তুই কেনোই এভাবে এলি এখন যদি তোর কিছু একটা হয়,সাথে চান মিয়ার দুলাভাই করম আলী বলে উঠলেন এইটা তুমি কেন করতে গেলা ওরা কোন ক্ষতি করেনা কিন্তু ওদের কথা না শুনলে ওরা কি করে সেইটা এক ইতিহাস হয়ে থাকে।
রাত্রিবেলা চান মিয়ার বিরাট জ্বর আসে তাই ওর দুলাভাই এক গরুর গাড়ি এনে তাকে তার বাড়ি পৌছে দিয়াসে,
দিনের পর দিন চান মিয়ার স্বাস্থের অবনতি হতে থাকে প্রচুর রক্ত বমি করে, মাঝেমধ্যে সবার সামনে বলে উঠে আমাকে মাফ করে দাও আমাকে মাফ করে দাও। চান মিয়ার বাবা ধলা মিয়া গ্রামের বিখ্যাত সাধক মিলন সাধুকে নিয়ে আসেন,,মিলনের ঝাড়ফুঁক করে কিছুসময় পর্যন্ত কাজ করে, যেই মিলন সাধু খাল পার হয় তখন আবারো চান মিয়ার শরীর নেতিয়ে উঠে,,আবারো ধলা মিয়া যায় মিলন কে ডাকতে,,,এই ভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর মিলন চেঁচিয়ে বলে উঠলো এবার এমন টোটকা দিবো জীন তার শশুর বাড়ি ভুলে পালাবে, পুরো গ্রাম মেতে উঠেছে, মিলন আসলেন এবং এক বজ্র কবচ চান মিয়ার গলায় বেধে দিলেন,,যাওয়ার সময় বলে গেলেন এখন ভয় নেই অনেক যত্নে কবচ রাখবে। তারপর ১ মাস চান মিয়া স্বাভাবিক জীবন শুরু করলেন কেও দেখলে বুঝবেনা এই কি সেই চান মিয়া? চান মিয়ার কঠিন চিকিৎসা করে মিলন সারা গ্রাম সহ ১০ গ্রামে এক নামে চিনে মিলন মিলন।
তারপর একদিন মিলন বালিগাদা গ্রামের পাশ দিয়ে একা একা যাওয়ার সময় জ্বীন দের দল তাকে ঘেড়াও করে দলের বাদশা বলে উঠলেন দেখ মিলন ওই ছোকরা এর কবচ তুই খুলে নিয়ায় তোর কোন ক্ষতি না করতে পারলেও তোর একমাত্র ছেলে মঞ্জু এর কিন্তু জীবননাশ হবে ভেবে দেখ তোর সুনাম আগে নাকি ছেলে আগে?”
মিলন গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন আমার সুনাম আগে,তুই যা করার কর।”
জ্বীন এর বাদশা বলে উঠলেন তাও তোকে ভাবার জন্য ১ বার সুযোগ দিলাম,যা তুই তোর ছেলেকে একনজর দেখে আয়” মিলন দ্রুত তার ছেলের কাছে গেলে দেখে কেও তাকে চড় দিয়ে ঘাড় হাল্কা বাকা করে দিয়েছে,,২-৩ দিন মিলন ঝাড়ফুঁক দিয়ে মঞ্জুকে সুস্থ করলেন,,পরে রাত্রিবাস করার সময় মিলনের স্ত্রী দিপা বলে উঠলেন আজ ভোর সকালে গোছল করার সময় এক ছায়ামূর্তি আমার সামনে এসে বলে উঠল খালের ওই পার যে চান মিয়ার কবচ দিছিলা সেইটা খুলে আনার ব্যবস্থে করতে বলছে আরো বললেন চান মিয়াকে বালিগাদা গ্রামে ঢুকতে নিষেধ করলেও সে সেইটা অমান্য করেছে, আবার বেয়াদবি করেছে তাই জ্বীনরা তাকে শাস্তি দিতে চান,,তুমি যদি কবচ খুলে না ফেলো তাহলে ওরা মঞ্জু ও আমাকে ক্ষতি করবে। মিলন অনেক ভেবে দিপাকে বললেন ” আমি নিজের হাতে কবচ পরিয়ে দিয়েছিলাম এখন সেইটা আবার নেই কেমনে?” দিপা বলল নকল কবচ নিয়ে যাও বলবা ওইটার থেকে এইটার শক্তি বেশি”
পরদিন সকালে মিলন নকল কবচ নিয়ে চান মিয়ার সাথে দেখা করল,মিলন বলল” চান তুই তোর কবচ খুলে আমাকে দেতো” চান মিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেই অবাক দূর করার জন্য মিলন বলল নয়া কবচ নিয়ে আসছি এই টা তোর পুরা পরিবারবর্গ সুরক্ষিত রাখবে,” চান মিয়া অতি বিশ্বাসে আসল কবচ খুলে দিলেন।
খাল পার হওয়ার সময় এক ছায়ামূর্তি সামনে,মিলন এর বুঝতে বাকি রইলো না কে সে! ছায়া মুর্তি বলে উঠলেন” মিলন তুই এত বড় উপকার করলি যে তুই এর পরের থেকে যেকোনো জায়গায় আসর ছাড়াতে গেলে আমরা সরে যাব আজ থেকে পুরো সুরক্ষিত তোর পরিবার,,”মিলন অট্টহাসি হাসল।
খাল পার হওয়ার সময় লক্ষ করল চান মিয়ার বাসার উপর থেকে হটাঠ অনেক পাখি আতনকে উড়ে চলে গেলো।
বিকালে এক কবর খোরা হল সেই কবর টা চান মিয়ার,,,,,