-আপনি ভূত-প্রেত বিশ্বাস করেন।
 -না।
 -করা উচিত।
 -কেন।
 -কারণ,আপনার বাসায় ভূত আছে।
 -হা হা হা।
 -হাসছেন কেন?
 -হাসবো না,তো কী করবো।আমার বাসায় ভূত আছে আর আমি জানি না।
 -আপনি এই বাসায় উঠেছেন কয়দিন হলো।
 -১বছর ৯মাস।
 -বাড়ীওয়ালা বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় এই বাসা সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলেনি।
 -না।
 -হুমমম, তাহলে তো আপনার জানার কথা না।
 -কী জানার কথা না।
 -আপনার আগে এখানে আরো দুই পরিবার বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। কিন্তু কেউই ১মাসের বেশি এখানে থাকতে পারেনি।
 -এর সাথে ভূত-প্রেতের সম্পর্ক কী।
 -সেটা জানতে হলে আপনাকে একটা গল্প শুনতে হবে।সময় হবে আপনার হাতে?
 -অবশ্যই। আপনি বলুন।
গল্পটা আজ থেকে তিন বছর আগের। তখন নতুন চাকরি পেয়েছি।ঢাকায় বাসা পাওয়া যে কী কষ্ট হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। এরকম ঘুরতে ঘুরতে এই কুলসুম মঞ্জিলের সন্ধান পেলাম।বাসার নিচতলায় আমি থাকতাম আর দ্বিতীয়তলায় বাড়িওয়ালা রশিদ আহমদ আর উনার স্ত্রী নাসিমা বেগম থাকতেন।মাঝেমধ্যেই নাসিমা বেগম আমার সাথে দেখা করতে আসতেন।আমি উনাকে বড় বোনের মতো দেখতাম।আমার মনেহয় বাড়িওয়ালা নাসিমা আপাকে আমার সাথে দেখা করা পছন্দ করতেন না।
 একদিনের ঘটনা বলি,রশিদ আহমেদ একটা জরুরী কাজে বাইরে গিয়েছিলেন।কাজের মেয়েটি খবর দিলো নাসিমা আপার খুব জ্বর।আমি কোনোকিছু না ভেবেই সিঁড়ি ভেঙে উপরে ছুটলাম।
 জ্বর ছিলো,খুব বেশি জ্বর।আমি কাজের মেয়েটিকে ডাক্তারকে ফোন দেওয়ার কথা বলে নাসিমা আপার পাশে বসলাম।হাতটা উনার কপালে রাখলাম।এই সময় রশিদ আহমেদ ঘরে ঢুকল।
 তার দুইমাস পর নাসিমা আপার একটা মেয়ে হলো।নাসিমা আপা আর বাড়িওয়ালার খুব শখ ছিলো একটা মেয়ের।কিন্তু খুশি হতে পারলো না কেউ।বাড়িওয়ালার চেহারা সবসময় আবলুস কাঠের মতো থাকতো। বছর ঘুরতেই মেয়েটা মারা গেলো।শুনেছি দোতলার জানালা থেকে পড়ে গিয়েছিল।
-আপনি তখন কোথায় ছিলেন। জানতে চাইলাম আমি।
 -দুবাই।অফিসের জরুরী কাজে আমাকে দুবাই পাঠানো হয়েছিল।
 -তারপর কী হলো।
 -তারপর আর কী হবে।আমি বাসাটা ছেড়ে অফিসের কাছেই নতুন একটা বাসা নিলাম।
 -আপনার কী মনে হয় এটা একটা মার্ডার কেস।
 -মনে হওয়ার কী আছে। এটাতো পানির মতো পরিষ্কার।মজার ব্যাপার হলো বাড়িওয়ালা আজ পর্যন্ত একবারও মেয়ের কবর দেখতে যায়নি।
 -পুলিশকে জানাননি কেন।
 -এখানেই তো সমস্যা। আমি যখন পুলিশকে জানাতে যাই মেয়েটা আমার পা ধরে থামানোর চেষ্টা করে।
 -কোন মেয়েটা।
 -বাড়িওয়ালার সেই মেয়েটা।
 -মরা মেয়েটা।
 -হ্যা।
 -অসম্ভব।
 -আমি যখন নতুন বাসায় চলে আসি,আমার সাথে সাথে মেয়েটাও চলে আসে।
 -অসম্ভব।
 -দিনের বেলা যখন বাসায় কেউ থাকে না তখন এখানে এসে খেলাধুলা করে।সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আবার ফিরে আসে।
 -আপনাকে পুলিশের কাছে যেতে বাধা দেয় কেন।
 -ওর বিশ্বাস,মামলা হলে বাবার জেল হবে।তখন মাকে দেখার মতো আর কেউ থাকবে না।
 -ও যদি এই বাসায় আসে,তাহলে আমি টের পাইনি কেন।
 -আপনার হাতের তাবিজের কারণে। আপনি বাসায় থাকলে মেয়েটা প্রবেশ করতে পারেনি।
 -বাম হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মায়ের দেয়া তাবিজটা।ছোটবেলায় খারাপ জ্বীনের নজর থেকে বাঁচার জন্য কোনো এক সাধু বাবার কাছ থেকে তাবিজটা এনেছিলেন।মনেমনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেলো।
 -আপনার বিশ্বাস না হলে আমি ওকে আপনার সামনে হাজির করতে পারি।
 -কীভাবে।
 -আপনার হাতের তাবিজ খুলে রাখতে হবে।
 -তাবিজ খুলে সামনের টেবিলে রেখে বললাম, ডাকুন এবার।
ব্যালকনির বাতি জ্বালালো লোকটা।তারপর বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাকে যেন ডাকলো।
 সময় দাঁড়িয়ে গেল স্তব্ধ হয়ে।
 সিড়ি বেয়ে একটা ছায়া একজোড়া কচি পায়ে এগিয়ে আসছে।
 
  
 Loading...
Loading...












