মধ্য রাতে

মধ্য রাতে

ঘুটঘুটে অন্ধকার অমাবস্যার রাত। দুহাত দূরত্বের কাউকে ও যেন দেখাযাচ্ছে না।

খুব দ্রুত গতিতে পথ চলছে অনিক,সাথে মোবাইলের মৃদু টর্চের আলো।হঠাৎ শন শন করে একটু কেমন গরমবাতাস যেন অনিকের গায়েলেগে গেল। কিছুক্ষণের জন্য সে একটুথেমে জিনিস টা কী তা বুঝারচেষ্টা করছিল। না, কোন কিছুর আরহদিস মিললো না। তাই সে আবারহাঁটা শুরু করলো তার নতুন মেসেরদিকে।

দুদিন হলো অনিক এ মেসে উঠেছে।যাইহোক মেসে ফিরলো অনিক।যথারীতি সে তার পড়া শেষ করেখেয়ে এসে ঘুমাতে গেল।ঘুমে যখনই তার চোখটা বুঝে এলোঠিক তখনই সে একটা চাপা আর্তনাদশুনতে পেল। আবার কখনো ফুঁপিয়েফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পাচ্ছে।

অনিক ঘড়িতে সময় দেখলো, সময় তখনমধ্য রাত। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলোঘরের ফ্যানটি থেকে কেমন যেন মটমট আওয়াজ আসছে, মনে হচ্ছে তারউপরে এখনই পরে যাবে। লাফ দিয়েবিছানা থেকে নেমে গেল অনিক ।

হঠাৎ তার চোখ গেল দরজার দিকে,দেখলো রুমের দরজা খোলা, সেভাবলো হয়তো ঘুমের ঘোরে সেদরজা লাগাতে ভুলে গেছে। অনিকদরজা লাগিয়ে যেই পাশ ফিরলোতখনই দেখলো প্রায় তার বয়সি একছেলে তার বিছানায় বসে আছে।

অনিক ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা

করলো –

-কে তুমি? এ মধ্যরাতে এখানে

কিভাবে এলে?

– আমি নিরব। আসলে আমি আগে এ

রুমেই থাকতাম। একটা দরকারে

তোমার কাছে এসেছি।

– বলো, কি দরকার?

– আসলে আমি একটা গোপন কথাজানি, তা তোমাকে জানাতেচাই এবং তোমার থেকে কিছুসাহায্য চাই।- আচ্ছা, বলো।

– এ মেসে একটি ছেলে থাকতো,সে ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্রছিল। তাকে সব টিচারেরা খুব পছন্দকরতো এবং সে সবসময় টপ রেজাল্টকরতো। কিন্তু তার বন্ধুরা সবাইতাকে খুব হিংসা করতো। তার জন্যইতার বন্ধুরা কখনোই টপ রেজাল্টকরতে পারতো না। তাই ছেলেটিরবন্ধুরা একদিন প্ল্যান করে এই মেসেএসে ছেলেটাকে খুন করে তারলাশটাকে তোমার খাটের নিচেমাটি খুড়ে পুতে রাখে।তারপরছেলেটির পরিবার থেকে পুলিশিকেস হলেও পুলিশেরা ছেলেটিরলাশ কোথাও না পেয়ে নিঁখোজহিসাবে কেস ফাইল করে।

– এটা কতদিন আগের ঘটনা?- এই তো মাস খানেক হলো। তুমিপুলিশে খবর দিয়ে লাশটি উদ্ধারেরচেষ্টা করো এবং ছেলেটিরবন্ধুদের ধরিয়ে দাও।আর আমি এখন যাচ্ছি।

অনিক দরজা খুলে দিল। দেখতেদেখতেই চোখের পলকেই অনেক দূূরেমিলিয়ে গেল নিরব। পরেরদিনঅনিক পুলিশে খবর দিল এবং লাশখুঁজার চেষ্টা করার জন্য অনুরোধকরলো।

পুলিশের লোকেরা অনিকের রুমেরবেডের নিচে মাটি খুড়ে পঁচা গলাকিছু মাংস সহ একটি কঙ্কাল উদ্ধারকরে। অনিক লাশটার দিকেতাকাতেই পারছিল না, তবেলাশের সাথে একটি ছেড়া শার্টছিল। এই শার্টটি অনিকের খুবপরিচিত লাগলো। তার মনে হলোযে, সে যেন কোথায় এ শার্টটিদেখেছে।তাছাড়া অনিক শুনলোযে, মৃত্যু ছেলেটির নাম ও নিরব।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেল,ছেলেটির বন্ধুরা প্রায় সবাই ধরাপড়লো।

অনিক সেই মেস থেকে অন্য মেসেচলে গেছে। আর কোন সমস্যা হয়নিতার সাথে।

আজ রাতেও যথারীতি পড়া ওখাবার শেষ করে ঘুমাতে গেলঅনিক।মধ্য রাতে আবার হঠাৎ ধপাস করেদরজা খুলে যাওয়ার শব্দে ঘুমভেঙ্গে গেল অনিকের। তাকিয়েদেখে সেই ছেলেটি যে কিছুদিনআগে এমনি এক মধ্য রাতে এসেছিল।

– তুমি আবার?- তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এলাম।তোমার ঋন শোধ করার মতন না- না, ধন্যবাদ পাওয়ার মত কিছুকরিনি।

অনিক এবার নিশ্চিত হলো, এছেলের পড়নে যে শার্ট , একিরকমশার্ট ছিল যেই পঁচা গলা লাশটিরসাথে। তাহলে কি এই সেই ছেলে!!

আকস্মিকভাবে অনিকের চোখপড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়,সেখানে তার প্রতিচ্ছবি আছেকিন্তু নিরবের কোন প্রতিচ্ছবিআসছে না। অনিক আবার নিরবেরদিকে সরাসরি তাকালো দেখলোঅনিক ঠিকই অাছে। কিন্তু আয়নায়কেন আসছে না?? তবে কি সে ঐছেলেটিরই আত্না????

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত