ভূতের বাড়ি

ভূতের বাড়ি

সন্ধ্যা থেকেই দিবা নিজের ঘরে বিছানায় বসে বই পড়ছে। মা বাবা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছেন। রাত প্রায় ১০ টা। এমন সময় ওর চোখ দুটি যেন বন্ধ হয়ে এল। তাই সে বই এক পাশে রেখে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পরে ওর মনে হল কে যেন ঘরে প্রবেস করেছে, তাই সে উঠে বসল, আর দেখল একি??? একটা আস্ত কঙ্কাল বিছানার চারিপাশে ঘুরে ঘুরে নাচ করছে। দিবার ভয়ে কথা আটকে গেল। চিৎকার করার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলল। সে এমন ভাবে কাঁপতে থাকল যেন বরফ রাজ্যের মধ্যে কেউ ওকে জোর করে বসিয়ে রেখেছে। আর এমন ভাবে ঘামছে যেন সাহারা মরুভূমিতে গ্রীষ্মের দুপুর নেমে এসেছে। হঠাৎ ওর মনে হল সে কথা বলার ক্ষমতা ফেরে পেয়েছে। তাই সে চোখ বন্ধ করে দাভাই,,,,,,,,,,,,,,,, বলে চিৎকার করে উঠল। তারপর আবার কথা আটকে গেল। মেয়ের কথা শুনে ছুটে এলেন মা বাবা।কতক্ষণে ভুত হাওয়াই মিলিয়ে গেছে।
মা বাবা জিজ্ঞাসা করলেন ওকে কি হয়েছে? কি হয়েছে? চিৎকার করলে কেন আম্মু?
কিন্তু তার মুখ থেকে কোন কথা বেরল না। দেবও দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করল,’কি হয়েছে এভাবে আমায় ডাকলি কেন?
ভাইকে দেখে দৌড়ে গিয়ে ভাইকে জড়িৈ ধরল আর কাঁদতে কাঁদতে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু ওর কথা কেউ বিশ্বাস করল না। বলল, দিবা তুমি সবসময় হরর ফিল্ম দেখ সেই কারনে ভূতের স্বপ্ন দেখেছ। বিশ্বাস করল শুধু দেব।মা বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে সে বলল,শোন তোর কথা বিশ্বাস করুক বা না করুক আমি করি।
সেদিন বাসার সামনে এক্সিডেন্ট করে একটা লোক মারা গেল না, সম্ভবত এটা তারই আত্মা। একটু সাবধানে থাকিস। আর আবার যদি আসে তাহলে রাম না জপ করবি। আর র আমায় ডাকবি।
তার কয়েক দিন পরে মামা আর মামাতো বোন প্রিয়া মনি বেড়াতে এল। তারা মুসলিম। দেবের বাবা হিন্দু আর মা মুসলিম। প্রিয়া মনি দিবার চেয়ে দুই বছরের ছোট। কিন্তু ছোট হলে হবে কি সে ভিষণ সাহসীনি। রাতের বেলায় সে দিবার সাথে ঘুমালো। গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমে অচেতন তখন কারও পায়ের ধম ধম শব্দে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই দেখল দিবা চাদরের নাচে থেকে বিড়বিড় করে রাম নাম জপ করছে।
প্রিয়া মনি বলল, দিভাই এখনো ঘুমাও নি।বিড় বিড় করে কি বলছ?
সাথে সাথে দিবা ওর মুখ চেপে ধরল, “চোপ চোপ ঘরের ভেতর ভূ,,,,,,,,,,,,,,,,ত, রাম রাম রাম,,,,,,,,। প্রিয়া তাকিয়ে দেখল সত্যিই তো একটা কঙ্কাল ঘরের ভেতর নেচে বেরাচ্ছে। সে খুব এক্সাইটেড হল।
তারপর দিবা বলল কয়েক দিন আগেও এই ভুতটা আমার ঘরে এসেছিল। প্রিয়াও ফিস ফিস করে বলল, কি যে বল দিভাই ভূত বলে কিছু হয় নাকি।
ভূত বলে কিছু হয় না তো এটা কি??? রাম রাম রাম,,,,,,,,।
প্রিয়া বলল, যদি ভূত হবে তাহলে তুমি যেভাবে রাম নাম জ্বপ করছ ভূতের কি ক্ষমতা আছে এরপরেও এখানে দাড়িয়ে থাকে? দিবা চিৎকার করে দাভাই কে ডাকতে যাচ্ছিল কিন্তু প্রিয়া মনি ওর মুখ চেপে ধরল আর বলল, এত কাছে থেকে ভূত দেখার সৌভাগ্য এর আগে কখনও হয়নি। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি তখন ছাড়ব কেন।
প্রিয়া মনি ভাবল এটা চোর হবে। তাই বিছানা থেকে উঠে বুকে হাত রেখে বলল, ভূত আমার পুত পেত্নী আমার ঝিঁ বুকে আছে হযরত আলী তুই করবি আমার কি??? এই বলে ভূতের দিকে এগিয়ে গেল।
ভুত অবস্থা খারাপ দেখে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইল কিন্তু তার আগেই প্রিয়া মনি তাকে জাপটে ধরল।আর চোর চোর বলে চিৎকার করতে শুরু করল। দিবা আরও জোরে রাম রাম বলতে শুরু করল।
ভূত ওকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। প্রিয়া মনি চিৎকার করে বলল, এটা ভূত নয় এটা চোর, দাভাই কে ডাক আঙ্কেলকে ডাক, এদিকে আস আমি একা ধরে রাখতে পারছি না।
কিন্তু কে শোনে কার কথা সে শুধুই রাম রাম বলেই চলেছে। ততক্ষণে সবাই এসে হাজির। বাবা ছুটে এল লাঠি হাতে আর মামা বেরিয়ে এল পিস্তল নিয়ে। ভূত দেখল অবস্থা আরও খারাপ। এখন পালাতে গেলেই হয় বাবার লাঠির বাড়ি নয় মামার পিস্তলেরর গুলি খেতে হবে। তাই সে হাল ছেড়ে দিল। সবাইকে দেখে দিবাও দৌড়ে এল। এলনা শুধু দাভাই। যেটাকে দিবা ভূত ভাবছিল সেটা আসলে ভূত নয় একটি মানুষ। সে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত একটি পোশাক পড়ে আছে। যার সামনে ও পেছনে সাদা রঙ্গের কঙ্কালেরর চিত্র আঁকানো আছে। তাই রাতের আধারে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল একটা কঙ্কাল। সবাই চারদিক থেকে ওকে ঘিরে ধরল।
প্রিয়া ওর মুখের মুখোশটা খুলেই চমকে উঠল।
আর বলল, দাভাই তুমি?????
মা বলে উঠল, খোকা তুমি এই পোশাক পরে এখানে কি করছ?
দিবার আর বুঝতে বাকি রইল না যে সেই রাতেও ওর দাভাই এই পোশাক পরেই ওকে ভয় দেখিয়ে ছিল।
দেব ভেবেছিল সে রাতে যেভাবে সেইভাবেই আজকেও দুই বোনকে ভয় দেখাবে। কিন্তু তা আর হল না। সে শুধু একটা কথাই বলল,মরে যায় মরে যায়, একি মেয়েলা ভূত দেখেও ভয় পায় না বরং জাপটে ধরে।
এই কারনেই বলেছিলা ম ভূত আমার পুত পেত্নী আমান ঝিঁ, বুকে আছে হযরত আলী তুই করবি আমার কি?????

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত