বাড়িটা ছয় তলা ।
আটবছর আগে রিমা নামের ভার্সিটি পড়ুয়া এক মেয়ে এই বাড়ির পাচঁতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতো । বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে এক রাতে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করে রিমা ।
তারপর কেটে গেছে আটটি বছর ।
সবাই হয়তো ভূলে গেছে সেই মেয়েটার কথা ।
**ঘটনা :-
এই মাসেই পাঁচতলার সেই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে তাসিন, রেজা, ফাহিম, সজীব আর রানা । ওরা সবাই একসাথেই পড়ে ।
বাড়িটার পরিবেশ একদম শান্ত । বাড়িটার পিছনে ছোট একটা বাগান আছে । ফ্ল্যাটটা দুই রুমের । এক রুমে তাসিন, রেজা ও ফাহিম অন্য রুমে সজীব আর রানা থাকে ।
তবে এই বাসায় আসার পর থেকে ওরা অদ্ভুত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে । এই যেমন গত দুই তিন দিন ধরে অসহ্য গরম পড়ছে ।
মানুষ সব অতিষ্ঠ গরমে । কিন্তু এই গরমেও রাতে ওদের ফ্ল্যাটে হাড়কাঁপুনি ঠান্ডা থাকে । তবে ফ্ল্যাট থেকে বের হলে শীতল অনুভূতিটা দূর হয়ে যায় ।
সেদিন রাতের কথা ।
রানা পড়ছে । বাকি সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে । হঠাৎ রানা শুনতে পেল বারান্দায় কোন একটা মেয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে । খুব অবাক হল রানা । এত রাতে বারান্দায় মেয়ে আসবে কিভাবে ? ও টিপটিপ পায়ে বারান্দায় এসে দেখলো কেউ নেই । শুধুমাত্র হালকা বাতাসে বারান্দার চেয়ারটা কাপঁছে ।
পরদিন রাত ।
সবাই ঘুমাচ্ছে ।
রাত তখন ৩ টা বাজে হয়তো । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল তাসিনের । চাঁদের আলো জানালা দিয়ে ওদের রুমে ঢুকছে । চোখ খুলতেই সেই আলোতে ও দেখলো একটা মেয়ে ওদের রুমের ফ্যানে ঝুলছে । শোঁয়া থেকে উঠে বসে পড়লো ও । তড়িঘড়ি করে রুমের লাইটটা অন করলো । আবার উপরের দিকে তাকিঁয়ে দেখলো ফ্যানটা স্থির হয়ে আছে । সেখানে কোন মেয়ে ঝুলছে না । ভয়ে ঘেমে গেছে তাসিন । দুঃস্বপ্ন ভেবে লাইট অফ করে ও আবার শুঁয়ে পড়লো ।
দুই দিন পরের কথা ।
সেদিন রাতে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিলো । ফাহিমের লেখালেখি করার অভ্যাস । তাই ও ল্যাম্প জ্বালিয়ে জানালার পাশে বসে লিখছিলো । হঠাৎ কে যেন দরজায় নক করলো । ও উঠে দরজা খুলে দেখলো দরজার সামনে কেউ নাই । একটু অবাক হল ফাহিম । ও যখন দরজা অফ করতে গেল তখন দেখলো সাদা কাপড় পড়া একটা মেয়ে ধীরে ধীরে সিড়িঁ বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে । ফাহিমও মেয়েটার পিছু পিছু গেল । মেয়েটা সিড়িঁ বেয়ে ছাদে উঠলো । ফাহিমও উঠলো । ছাদের এক কোণে গিয়ে দাড়াঁলো মেয়েটা । ফাহিম মেয়েটার দিকে এগোতে লাগলো । হঠাৎ মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেল । ফাহিম অনেক ভয় পেল । ও দৌঁড়ে সিড়ির কাছে চলে আসলো । এসে দেখলো সাদা কাপড় পড়া সেই মেয়েটা সিড়িঁতে বসে আছে । ভয়ে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল ও । চিৎকার শুনে বাকি সবাই ছুটে আসলো । ধরাধরি করে রুমে নিয়ে যাওয়া হল ওকে । রাতেই কাপুঁনি দিয়ে জ্বর আসলো ওর । সুস্থ হতে দুই তিন দিন সময় লাগলো ওর । সুস্থ হয়ে ও সবাইকে সেদিন রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বলল ।
রানা আর তাসিনও বলল ওদের অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা ।
সজীব বলল,”নিশ্চয়ই এই ফ্ল্যাটের কোন রহস্য আছে ।”
রেজা বলল,”দারোয়ান রহিম চাচা বাড়িতে গেছে ; কাল আসবে । উনি এই বাসায় অনেকদিন চাকরি ধরে করছেন । উনাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে ।”
পরদিন রাত ।
চাঁদ উঠেছে । তার আলোয় আলোকিত চারপাশটা ।
ব্যালকনিতে বসে তাসিন, রেজা, ফাহিম, সজীব আর রানা গান গাইছে । হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল । আশেপাশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ আছে শুধু ওদের ফ্ল্যাটেই নেই । রুমে এসে মোমবাতি জ্বালালো ওরা । হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলো রেজা । ওর দিকে তাকালো বাকিরা । ওর হাতে রক্ত । বিস্ফোরিত নেত্রে উপরে দিকে তাকিঁয়ে সবাই দেখলো একটা মেয়ে ফ্যানে ঝুলছে । চোখ দুটো খোলা । জিহ্বাটা বের করানো । গলা বেয়ে রক্ত পড়ছে আর সেই রক্ত টপটপ করে পড়ছে রেজার হাতে ।
ভয়ে কোনমতে সবাই দৌড়ে বাসার নিচে চলে আসলো । রহিম চাচা নিচে বসে ছিল ।
“কি হয়েছে তোমাদের ? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাদেরকে ?” ওদেরকে দেখে রহিম চাচা বলল ।
ভয়ার্ত কন্ঠে সবকিছু খুলে বলল ওরা ।
রহিম চাচা এক বোতল পানি এনে ওদেরকে বলল,”পানি খেয়ে শান্ত হয়ে এখানে বসো ।”
ওরা বসলে রহিম চাচা বলল,”এখন ফ্ল্যাটে গিয়ে ঐ মেয়েটার লাশ আর পাবে না । রেজার হাতেও পাবে না রক্ত ।”
রেজা হাতের দিকে তাকিঁয়ে দেখলো কিছুই নেই ওর হাতে ।
“রহস্যটা কি চাচা ? অবাক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো ও ।
“আজ থেকে আট বছর আগে এক মেয়ে ঐ ফ্ল্যাটে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলো । ঐ মেয়েটারই অতৃপ্ত আত্মা এখনও ফ্ল্যাটময় ঘুরে বেড়ায় । এখন রাত ১টা বাজে । বেশি ভয় পেলে তোমরা বাকি রাতটা এখানেই থেকে যাও । আমি বাহিরে থেকে আসছি ।” বের হয়ে গেল রহিম চাচা ।
পরদিন সকাল ।
ওরা সবাই বাড়িওয়ালার বাসায় গেল । ওরা আর এই ফ্ল্যাটে থাকবে না এটা বলতে । গিয়ে দেখলো বাড়িওয়ালা মন খারাপ করে বসে আছে ।
“কোন সমস্যা , আংকেল?” তাসিন জিজ্ঞাসা করলো ।
বাড়িওয়ালা বলল,”আমাদের বাসার সবচেয়ে পুরাতন দারোয়ান রহিম কাল রাতে বাড়ি থকে ফিরার পথে অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে । ওকে আমি আত্মীয়র মতই মনে করতাম ।”
কথাটা শুনে ওদের সবার বুক কেঁপে উঠলো । ওরা তো কাল রাতেই রহিম চাচার সাথে কথা বলেছিলো । ওরা কোনমতে ফ্ল্যাট ছাড়ার কথা বলেই দৌড়ে চলে আসলো ।
পরের মাসেই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিল ওরা ।
তালা মেরে দেওয়া হল ফ্ল্যাটটাতে ।
হয়তো এখনও রাতে রিমার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় ফ্ল্যাটময় । মাঝে মাঝে হয়তো চুপটি করে দাড়িঁয়ে থাকে ছাদের এক কোণায় । আর রহিম চাচা হয়তো রাতে এসে একবার ঘুরে যান তার প্রিয় বাসার গেইট থকে ।
সমাপ্ত….
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক