১)
রাত ০২:৪৮ মিনিট,
মাসুদ রানা এবং রিয়াজ ভূতের বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে। ভূতের বাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথে বাহিরে অনেক বড় একটা অশরীর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এইটা দেখে মাসুদ রানা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রিয়াজ মাসুদ রানাকে, কোলে তুলে আবার বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়।একটা রুমের মধ্যে চলে অবস্থান করে, দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিয়ে চুপটি মেরে বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে, কেন এসেছি এ বাড়িতে।
পাঠকগণ, কি? কিছুই বুঝতে পারছেন না..? জানতে হলে, ফিরে যেতে হবে আরও তিন মাস আগের ঘটনায়। রিয়াজ এবং মাসুদ রানা গায়ে গা মিলানো বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই তারা একসাথে বড় হয়েছে। গ্রামে একসাথে পড়াশোনা শেষ করে তারা। এরপর একই জায়গায় চাকরি নিয়েছে দুইজন।
২ জনেই থাকার জন্য জায়গা পায়নি বলে, শহরের পাশে একটা বাড়ি খুঁজে নেয়। বাড়িটি সাভারের পাশে। রিয়াজ এবং মাসুদ রানা, তাদের গ্রামের বাড়ি রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর। চাকরিতে জয়েন করার জন্যই তারা ঢাকায় এসেছে। তারা যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে, সেই বাড়িটা সম্পর্কে কিছু ধারনা করে নিয়েছে আগে থেকে। অনেকে বলে, এ বাড়িতে নাকি যারা আসে, তারা একমাসের বেশি থাকতে পারে না। এর মধ্যেই তাদের সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে। এবং তারা বাড়িটি ত্যাগ করে চলে যায়।
আমি আর মাসুদ রানা এসবে বিশ্বাসী না। ভুত-প্রেত বলতে কিছুই নেই। সবকিছুই মন গড়ানো কথা। যদিও গ্রামের ছেলে আমরা,তবুও এসব কখনো বিশ্বাস করিনি।বলতে গেলে এমন কোন ঘটনা আমাদের সাথে ঘঠেনি।মজার বিষয় হচ্ছে ২জনই আবার ভূতের গল্প লিখতে পছন্দ করি।তবে সবসময়ই মনে করি,এসব শুধু গল্পতেই মানায়,বাস্তবে না।তাই দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা এই বাড়িতে থাকব। তাছাড়া বাড়ি ভাড়া ও আমাদের থেকে কম নেওয়া হয়েছে। এডভান্স দিতে হয়নি। বাড়ি ওয়ালা বলেছে, যদি আমরা এই বাড়িতে থাকতে পারি, তাহলে মাসিক ভাড়া দিলেই হবে। এছাড়া অ্যাডভান্স আমাদের থেকে কোন টাকা নিবে না।
আমরা জিজ্ঞেস করাতে, বাড়ি ওয়ালা আমাদেরকে উত্তর দিয়েছে, “এডভান্স টাকা নেওয়ার পর হয়তো তোমরা এই বাড়িতে থাকতে পারবা না। সেজন্য তোমাদের থেকে আমি এডভান্স কোন ভাড়া নিচ্ছি না”
উনার কথা শুনে আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হল। যাক, কম ভাড়ায় একটা বাড়িতো পেয়েছি। তার উপর আমাদের থেকে এডভান্স ও নেয়নি।এরপর দুজন মিলে বাড়িটিতে প্রথম যেদিন উঠেছি, দেখলাম পুরো বাড়িটি এলোমেলো। তবে কি? এতে ভাবার মত কিছুই নেই।বাড়িতে মানুষ নেই,এলোমেলো থাকতেই পারে,স্বাভাবিক। আমি এবং মাসুদ রানা মিলে, বাড়িটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছি। বাড়িটির আশেপাশে কোন ঘর নেই, বাড়ির দুই পাশে জঙ্গল ভর্তি হলেও, সামনে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো বাগান। বাগানের সামনে বাড়ির গেট এবং তার পরে মেইনরোড।
বাড়িটা হচ্ছে দুই তলা, নিচে ড্রয়িং রুম, রান্নাঘর এবং পাশে দুইটা রুম। আর উপরে দুইটা বাথরুম, দুইটা রুম, আর এক সাইট বেলকনি।যেখানে দু’জন মিলে রাতে আড্ডা দিতে পারব ভালো। ভালই হয়েছে, আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। প্রথমদিন দুজন মিলে, বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানোর পর, একই সাথে দুজন অফিসে চলে গেছি। সারাদিন কাজ করার পর, আমি এবং মাসুদ রানা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
অফিসে যাওয়ার সময় বাড়িতে লাইট জ্বালিয়ে যায়নি। সেজন্য পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে। বাড়ির সামনে গিয়ে, চাবি দিয়ে তালাটা খুললাম, দরজা খোলার সাথে সাথে ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত রকমের গন্ধ পেলাম আমি। আমার সাথে মাসুদ রানাও গন্ধটি পেয়েছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল “”বাড়িতে এইটা কিসের গন্ধ, আমরা ছাড়া কি বাড়ি ওয়ালা এ বাড়িতে আসে নাকি””
আমি বললাম “”বাড়ির চাবি তো শুধুমাত্র আমাদের কাছেই আছে, বাড়ি ওয়ালা নিজের কাছে রাখেনি। হয়তো কোথাও কোন ইঁদুর মারা গেছে, সেজন্য গন্ধ বের হয়েছে। যাই হোক, আমরা খুঁজে বের করে পরিষ্কার করে ফেলব। “”
আমি এবং মাসুদ রানা বাড়িতে প্রবেশ করলাম। আজকে প্রথম দিন, নিজের হাতে রান্না করবো না, তাই আসার সময় বাহির থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এসেছি। দুজনে রুমে গিয়ে, ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। এখন সেই গন্ধটি আর পাচ্ছিনা।তো আরকি,মাথা না ঘামিয়ে আমি মাসুদ রানাকে বললাম “”বাড়িটি নেওয়ার আগে সবাই যেভাবে ভয় দেখিয়েছে, আমিতো ভেবেছি অন্য কিছু হবে, কিন্তু বাড়িটিতে তো আমার বেশ ভালই লাগছে “”
এরপর মাসুদ রানা বলল “”তোর কথা কি বলব, আমার তো মনে হয় তোর চেয়ে আমার আরো বেশিই ভালো লাগছে।””
আমি বললা,””ভালো লাগারই কথা, তোর তো আবার একা থাকতে ভালো লাগে। এদিকে এত বড় একটা ফাঁকা বাড়িতে আমরা দুজন আছি। ভাবতেও আমার নাগিন ডান্স নিতে মন চাচ্ছে। “”
মাসুদ রানা বলল,যাইহোক কথা না বাড়িয়ে এখন খেয়ে নে।
আমি এবং মাসুদ রানা দুজনেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। পরিবেশটা খুবই সুন্দর। শীতল বাতাসটি যেন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে, রাতে ব্যালকনিতে বসে সিগারেট খেতে খেতে, গাড়ি দেখাও অন্য রকম আলাদা একটা মজা। মাসুদ রানা সিগারেট দুইটা খেয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আমাকে বলল “”আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি যাচ্ছি… তুই ঘুমাবি না?
আমি বললাম,””হ্যাঁ, আমিও ঘুমাব.. তুই গিয়ে ঘুমা। আমি আর কিছুক্ষণ বসি, ভালই তো লাগছে “”
মাসুদ রানা আমার কথা শুনে রুমের মধ্যে চলে গেলো। আমি ব্যালকনিতে বসে 7 নাম্বার সিগারেট ধরালাম। সিগারেট খেতে খেতে মনে পড়লো, ফেসবুকে তো আমার কিছু পাঠকগণ ভূতের গল্প করার জন্য রিকুয়েস্ট করেছে। তো মনে মনে ভাবলাম, একটা ভূতের গল্প লিখেই ফেলি। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে মন থেকে বানিয়ে বানিয়ে ভ্যাম্পায়ারের একটা গল্প লিখলাম। নাম দিয়েছি *রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার *
গল্পটি অর্ধেক লেখা অবস্থায় কখন আমার চোখ দুটো লেগে আসে, আমি বুঝতেও পারিনি। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো।
চোখটা মেলে দেখি, পরিবেশটা পুরো নিস্তেজ হয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি ও চলাচল করছেনা। এদিকে বাড়িতে কারেন্ট নেই।
ওওও, এইজন্য বুঝি বাড়িওয়ালা ভাড়া একটু কম নিয়েছে। শহরের পাশে তো কারেন্ট ঠিক মত থাকেনা। যাইহোক, এক দিক দিয়ে অসুবিধা হলেও, অন্যদিকে সুবিধা তো আছে। তাই অসুবিধার দিকে না থাকিয়ে সুবিধা গুলো ভাবলাম। আমি চেয়ার থেকে উঠে দেখি চোখ ঘুম জড়িয়ে আসছে। এবার ঘুমোতে যাওয়া যাক। গল্প যেটুকু লিখেছি, বাকিটুকু কাল লিখে ফেলব। চেয়ার থেকে যখনই আমি উঠবো, ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, রাস্তার মধ্যে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। ভাবলাম, এত রাতে রাস্তায় একটা মেয়ে, তাও আবার একা? বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হল আমার কাছে।
মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করে আমি উপর তলা থেকে নিচে চলে আসলাম। এরপর দরজাটা খুলে বাড়ির বাহিরে চলে আসি। সেখানে আমার যাওয়ার উদ্দেশ্য হল মেয়েটি হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে, সেজন্য রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি যদি উনাকে কোন উপকার করতে পারি, তাহলে তো ভালই হয়। বাড়ির সামনে গিয়ে গেট টা খুললাম, দেখলাম মেয়েটি রাস্তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গেটের বাইরে না গিয়ে ভিতর থেকে বললাম “”এই যে… এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন, কোন সমস্যা হলো নাতো?””
মেয়েটি কোন কথা না বলে সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম”” এক্সকিউজ মি, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, আপনার যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে আমাকে বলতে পারেন… আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি কিনা দেখব। এইবার মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাতেই আমার শরীর যেন বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল। কি আজব ব্যাপার, আবহাওয়া হঠাৎ করে এরকম ঠান্ডা হয়ে গেছে কেন।
মেয়েটি আমার বরাবর এসে আমাকে বলল, “”প্রথমবার বলেছেন, অবশ্য জানেন আমি আপনার কথা শুনেছি। তারপরেও আপনাকে কোন জবাব দিইনি, এর পরেও কেন আবার জিজ্ঞেস করেছেন।””
মেয়েটির এমন অদ্ভুত কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম উপকারের নাম চড়।
আমি বললাম।
“”ও ঠিক আছে, ক্ষমা করে দিন, আমি বুঝতে পারিনি। আসলে ভাবলাম আপনার হয়তো কোন বিপদ হয়েছে, সেজন্য এসেছিলাম। যাইহোক, ভালো থাকবেন।”
যখন আমি গেট বন্ধ করতে যাব, তখন মেয়েটি আমাকে বলল “”আপনাকে আমি পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করব কিভাবে “”
থেমে গিয়ে আমি আবার বললাম,
“”কেন, আমাকে দেখতে কি আপনার অন্যরকম মনে হয়?””
মেয়েটি বলল,
“” না, তেমনটি না.. আমি সত্যিই বিপদে আছি। কিন্তু আপনার কাছে বললে যে আমি আরো বিপদে পড়বো না, তার তো কোন গ্যারান্টি নেই।
আমি বললাম,
“” একবার বলেই দেখুন?
উনি বলল
“”আসলে আমি আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি.. বাড়িতে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু আমি আর একজনকে পছন্দ করি। সে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে এনে, নিজেই আর আসেনি। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, সেজন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন যদি আমি বাড়িতে ফিরে যাই, তাহলে সবাই আমাকে মেরে ফেলবে। বাড়িতে যেতে হলে আমাকে আরো এক সপ্তাহ পরে যেতে হবে। এই এক সপ্তাহ কোথায় থাকব, সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
মেয়েটির কথা শুনে গলার পানি গিললাম। এখন যদি উনাকে বাড়িতে নিয়ে তুলি, তাহলে মাসুদ রানা আমাকে অন্য কিছু ভাববে। আচ্ছা তার কথা না হয় বাদ দিলাম, আশেপাশের লোক আমাকে খারাপ বলতে পারে। আর যদি বাড়িওয়ালা জানে, তাহলে তো তিনজনকেই বাড়ি থেকে বের করবে। কিন্তু এদিকে মেয়েটির বিপদ। তাই তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য বললাম,
“” বাড়িতে আমি এবং আমার এক বন্ধু থাকি। একটা মেয়ে মানুষকে যদি এখানে আমরা জায়গায় দি, তাহলে লোকমুখে ভালো শোনাবেনা। তো আপনি যদি আমাদের সাথে থাকতে চান, তাহলে একটু কষ্ট করতে হবে।””
উনি বলল,
“”কি কষ্ট?
আমি বললাম,
“”আজকে রাতটা আপনাকে বাইরের গোডাউনে থাকতে হবে.. কালকে আমি অফিসে যাওয়ার সময় আপনাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব।
উনি বলল,
“”ঠিক আছে, আমার কোন আপত্তি নেই। “”
এরপর আমি মেয়েটিকে গোডাউনে নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি ছোট একটা খাট এবং একটা লেপ আছে। মেয়েটিকে বললাম,
“” আজকের রাতটি এখানে কাটিয়ে দিন। কালকে সকালে দেখছি কি করা যায়। “”
মেয়েটিকে গোডাউনে রেখে আমি বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। এরপর ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে, দুই পা সামনে আসতেই পিছন থেকে একটি শব্দ পেলাম। পিছনে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেছি, আমি এইমাত্র ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে ছিলাম, এইটা আবার খুলল কিভাবে।
যাই হোক, হয়তো ঘুমের তালে আমার মাথা ঠিক নেই।
হয়তো ভুল দেখেছি।
আমি আবার এসে দরজাটা লাগিয়ে যখন পিছনে ফিরে চলে আসতে যাবো, ঠিক তখনই আবার শব্দ। এবার আমি কিছুটা হলেও ভয় পেয়ে যাই। তারপর আবার পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি বরাবরের মতো দরজাটা আবার খোলা। আমি আবার গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এবার দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে পিছন দিকে আসছি। দেখলাম, নাহ, এবার দরজা খোলেনি।এরপর উপর তলায় নিজের রুমে চলে আসলাম। বিছানায় উঠে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা মাসুদ রানার চিৎকার-চেঁচামেচি।
“”কিরে, আর কত বেলা করে ঘুমাবি… অফিসে যাবিনা..?””
আমি বললাম,
“”ওহ, সকাল হয়ে গেছে বুঝতেও পারেনি। যাই হোক, তুই ফ্রেস হয়ে এসেছিস? ”
মাসুদ রানা বলল,
“”হ্যাঁ, আমি তো ফ্রেশ হয়ে কখন রেডি হয়ে আছি… তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি বললাম,
“”এক কাজ কর, আমার আসতে একটু দেরি হবে.. তুই অফিসে চলে যা, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
“”ঠিক আছে “”
মাসুদ রানা আমাকে বিদায় দিয়ে অফিসের দিকে চলে গেছে। আমি বিছানা থেকে উঠার সময় অনুভব করলাম শরীরটা কেমন একটা ব্যথা হয়ে গেছে। মাথাটা চিনচিন করছে। কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এরপর ভাবলাম, বাহিরে গেলে ওষুধ নিয়ে নেব, কোনরকম বিছানা থেকে আমি উঠে দাঁড়ালাম। তখনই নিচ থেকে মাসুদ রানার জোরে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। মাসুদ রানার
চিৎকারের সাথে সাথে আমি শরীর ব্যথা নিয়ে নিজের রুম থেকে বাইর হয়ে আসলাম।
২)
মাসুদ রানা আমাকে বিদায় দিয়ে অফিসের দিকে চলে গেছে। আমি বিছানা থেকে উঠার সময় অনুভব করলাম শরীরটা কেমন একটা ব্যথা হয়ে গেছে। মাথাটা চিনচিন করছে। কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এরপর ভাবলাম, বাহিরে গেলে ওষুধ নিয়ে নেব, কোনরকম বিছানা থেকে আমি উঠে দাঁড়ালাম। তখনই নিচ থেকে মাসুদ রানার জোরে একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। মাসুদ রানার
চিৎকারের সাথে সাথে আমি শরীর ব্যথা নিয়ে নিজের রুম থেকে বাইর হয়ে আসলাম।
নিচ তলায় আমরা যে গুলো গুছিয়ে রেখে ছিলাম, সব গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।
এরকম অবস্থা দেখে মাসুদ রানা চিৎকার মারে, আমি নিচে নেমে মাসুদ রানা কে বললাম।
“” এটা কিভাবে সম্ভব, বাড়িতে কি রাতে চোর ডাকাত ঢুকে ছিল নাকি..?
(মাসুদ রানা আমার প্রশ্ন শুনে বলল,)
“”আমার তো সেটাই মনে হচ্ছেনা, আর চোর ডাকাত ঢুকলে, টিভি, কম্পিউটার, আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে যেত। কিন্তু সেরকম কিছুই তো করেনি। বাড়িতে এসে সব গুলো এলোমেলো করে দিতে যাবে কেন তারা..? “”
(আমি বললাম,)
–সেই প্রশ্ন তো আমার মাথায় ও ঘুরপাক খাচ্ছে, এরকম কেন হলো..?
( ২জনেই চিন্তিত হয়ে গেলাম। তখন আমার মনে পড়ল কাল রাতের সেই মেয়েটির কথা। তাকে তো আমি গোডাউনে রেখে এসেছি। কিন্তু এইটা মাসুদ রানাকে বলা যাবে না। আমি তাকে বললাম,)
–দোস্ত, তুই অফিসে চলে যা.. আমি কিছুক্ষণ পর আসছি। আর বাড়িতে যেগুলো অগোছালো, আমি সেগুলো গুছিয়ে দেবো। তুই অফিসে চলে যা।
(মাসুদ রানা আমার কথা শুনে বলল,)
–ঠিক আছে, তুই তাহলে সব গুলো ঠিক করে আয়। আমি অফিসে চলে যাচ্ছি।
(মাসুদ রানা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল, মাসুদ রানা বের হওয়ার পিছনেই আমি দৌড়ে গেলাম গোডাউনে। গিয়ে দেখি যে মেয়েটিকে আমি রাতে গোডাউনে ঘুমোতে দিয়েছিলাম, সেই মেয়েটি সেখানে নেই। একটু বিস্মিত হয়ে গেলাম আমি। এইটা কি হলো?
আমার কাছে সাহায্য চাইল, আমি সাহায্য করলাম, অথচ কখন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে একটা বার বলার ও প্রয়োজনবোধ করেনি..?
যাইহোক, আমার যতটুকু করার আমি তো করেছি। চলে গেছে ভালো হয়েছে, প্যারা থেকে বেচেছি। এরপর আমি নিজের বাড়িতে ঢুকে দেখি সবগুলো আবার গুছিয়ে রাখা। এমন অদ্ভুত কান্ড দেখে আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে, এটা কিভাবে সম্ভব, আমি 2 মিনিট আগে এগুলো এলোমেলো দেখেছি, এখন সব গুলো আবারো ঠিক হয়ে গেছে। রাতে তো কোন মদ খাইনি, তাহলে সব গুলো এভাবে মাতাল মাতাল দেখছি কেন। কি হচ্ছে আমার সাথে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি মাসুদ রানা কে ফোন দিলাম। মাসুদ রানা গাড়ির মধ্যে আছে, আশেপাশে গাড়ির শব্দে কথা ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না। মাসুদ রানা জোরে জোরে বলল)
— কিরে, বের হয়েছিস?
(আমি বললাম)
-+আচ্ছা তুই যাবার সময় কি সব গুলো এলোমেলো দেখেছিস?
(মাসুদ রানা বলল)
–তুই কি পাগল হয়ে গেছিস, তোর সামনেই তো সব গুলো এলোমেলো দেখিয়েছি, এক্ষুনি সব ভুলে গেলি? কি হয়েছে তোর?
(আমি বললাম)
— না কিছু না, এমনি জিজ্ঞেস করেছি। আমি অফিসে আসছি।
( এ বলে ফোনটা রেখে আমি বাথরুমে গেলাম। মাথার মধ্যে একটু চিন্তা চিন্তা ভাব। এটা কিভাবে সম্ভব। ধ্যাত্তেরিকা, কি ভাবছি আমি।অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা শুধুমাত্র গল্পে মানায়, বাস্তবে না। আমি ফ্রেশ হয়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। যাওয়ার সময় ডাক্তারের দোকান থেকে নিজের শরীর ব্যথা এবং জ্বরের ওষুধ নিয়ে নিলাম। এরপর অফিসে গিয়ে মাসুদ রানা কাজ করতেছে।)
–কিরে,এত দেরি কেন
–একটু দেরি হয়ে গেছে, ওষুধ কিনে ছিলাম..
(যাই হোক, দুজন মিলে অফিসের কাজ শেষ করে আবারো বাসার দিকে রওনা হচ্ছি।গাড়িতে দুজন একসাথে বসা। আমি মাসুদ রানাকে সব কথা খুলে বলবো ভাবছি। কিন্তু বলছি না, কারণ মাসুদ রানা নিজে আমাকে পাগল বলবে, অথবা আমাকে বলবে। কাল রাতে হয়তো আমি কোন নেশা করেছি। নিজেকে মাতাল পরিচয় দেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। সেজন্য আর কিছু বলিনি আমি। বাসায় গিয়ে সব গুলো গুছিয়ে থাকতে দেখে মাসুদ রানা বলল)
— আরে বাহ.. বাড়ি তো খুব সুন্দর সাজিয়েছিস।
(তার কথার কোন জবাব না দিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি। এসে বললাম)
— আজকে কি রান্না করা যায়?
(মাসুদ রানা বলল)
–কি আর করবি। ভাত এবং মাছ রান্না করি, আর আমরা দুজনেই তো নিরামিষ খাই না। সেজন্য অন্য কিছু রান্না করার দরকার নেই।
(দুজন মিলে রান্না বান্না শেষ করে খাওয়ার পর্বটা শেষ করলাম। এরপর আগের দিনের মতো আবারও দুজন ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছি, আর গল্প করছি।
মাসুদ রানা বরাবরের মতো আবারো বললো)
–আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি গেলাম। তুই চলে আয়।
(মাসুদ রানা রুমে চলে গেছে, আমি এবার 14 নাম্বার সিগারেট ধরালাম.. আজকে একটু চিন্তিত আমি। সেজন্য সিগারেটটা হয়তো খাওয়া বেশি হচ্ছে। সিগারেট খেতে খেতে ভাবলাম, কালকে তো রক্ত চোষা ভ্যাম্পায়ার গল্পটি অর্ধেক লিখেছি, আজকে বাকি অর্ধেক লিখে ফেলি। ফোনটা হাতে নিয়ে আমি গল্প লিখছি। তখন অনুভব করলাম আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম হয়তো মাসুদ রানা আবার এসেছে, এমনিতেই কারেন্ট নেই। হয়তো ঘুম পাচ্ছে না। পিছনে তাকাতেই দেখি কেউ নেই। মনে মনে খটকা লেগে গেলো আমার।আমি কিছুক্ষণ আগে অনুভব করছিলাম পিছনে কেউ ছিল। কারো নিঃশ্বাসের শব্দ, কারো দাঁড়িয়ে থাকার অনুভব। কারো গায়ের গন্ধ, আমি কিছুক্ষণ আগে স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম।
এটা মনের ভুল হতে পারে না, কারণ আমি 100% শিওর এরকম অদ্ভুত ঘটনা আমার সাথে ঘটতেছে।
ভাবতেও পারছিনা, যেগুলোতে আমি কোনদিন বিশ্বাসী না, সেগুলি আমার সাথে হচ্ছে কেন? যাইহোক আমি আবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে গল্প লেখায় মন দিলাম। তখন আবার আমার মনে হল, কেউ আমার পিছনে এবার সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে। এবার আমার মনে হতেই আমি ধপাস করে পিছনে তাকিয়ে দেখি, কালকের সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই আমি। এত রাতে, এই মেয়ে, এখানে আসবে? এইটা কিভাবে সম্ভব। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমি ভয় পাচ্ছিনা। আমি ভয় পাচ্ছি, কারন মেয়েটি আমার কোন ক্ষতি করতে আসেনি তো? আর বাড়িতে ঢুকবে কিভাবে, ঢুকতে হলে দরজা দিয়ে ঢুকতে হয়। দরজা ভেঙে আসতে হবে। তার মানে এই মেয়ে কালকে দরজা ভেঙ্গে সব গুলো ভেঙ্গে চুরে চলে গেছে? আর আজকে এসেছে আমাকে কিছু করার জন্য? তখন মেয়েটি আমাকে বলল)
— আপনি যেটা ভাবছেন সেরকম কিছু না, কালকে আমি আপনার ঘর এলোমেলো করে নি। আজকে আপনাকে কিছু করতেও আসেনি।
(মেয়েটির কথা শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম, কি আশ্চর্য, আমার মনের কথা মেয়েটি বুঝলো কিভাবে? তখন মেয়েটা আবার বলল)
-আপনার মনের কথা আমি বুঝতে পারি। সেই শক্তিটুকু আমার আছে।
(এবার আমি আরো বেশ অবাক হয়ে গেছি। আমি চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে মেয়েটির সামনে গেলাম। তারপর বললাম)
— কে তুমি, আর এভাবে আমাকে বারবার চমকে দিচ্ছ কেন।
( মেয়েটি বলল)
–আপনারা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
— বাড়ি ছেড়ে চলে যাব মানে? এটা আমরা ভাড়া নিয়েছি। বাড়িটা এখন আমাদের। আপনি আমাদের এই বাড়ি থেকে চলে যাবার জন্য, বলার কে?
( মেয়েটি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল)
–আপনাকে আমি বলেছি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান, না হয় দুজনকেই মেরে ফেলবো।
( এইটা বলে মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে গেল, একটা সাদা ধোঁয়ায়। এমন অবস্থা দেখে আমি সাথে সাথে সেখানে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি)
–কিরে ওঠ,কাল সারা রাত এখানে কাটিয়ে দিয়েছিস নাকি।
( মাসুদ রানার চেঁচামেচিতে আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। এবার মাসুদ রানা আমাকে বলল)
—কি হয়েছে, ভয় পেয়েছিস কেন। আর রুমের মধ্যে না গিয়ে এখানে নিচে ঘুমাচ্ছিস কেন।
(এরপর আমি আর থাকতে পারলাম না, সত্য ঘটনা সবগুলো বলে ফেললাম। মাসুদ রানা আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে যেন লুটেপুটে পড়ছে। সে আমাকে বলল)
— তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?? ভুত-প্রেত বলতে কিছুই নেই। আর তুই যেটা দেখেছিস,সেটা তো পুরাই অস্বাভাবিক হা হা হা। একজন মানুষ হঠাৎ করে কিভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। দেখ রিয়াজ, আজ রাতে হয়ত ভূতের গল্প লিখতে লিখতে তুই কোন স্বপ্ন দেখেছিস। আর এখানে ঘুমিয়ে পড়েছিস। এখন কথা না বাড়িয়ে অফিসে চল। কাল একবার দেরি করে গিয়েছিস।
( মাসুদ রানার মুখে, আমার কথার কোন দাম পাত্তা কিছুই পেলাম না। পাবো কিভাবে, ওর মত তো আমিও বিশ্বাস করতাম না। তো তাকে আর কি বুঝাবো, নিজের ভেতর নিজেই রেখে দিলাম কথাগুলো। আমিও ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম। সারাদিন অফিসে একটুও মন বসেছেনা। শুধু আমাকে ভাবাচ্ছে, কাল রাতের ঘটনাটি। কিভাবে কি হয়ে গেল। তখন আমার একটু চিন্তা হলো, এতরাতে, একা একটি মেয়েকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা, তারপর সকালবেলা মেয়েটির চলে যাওয়া, কোন ধন্যবাদ না দিয়ে। আবার বাড়িতে সব গুলো এলোমেলো করে দেওয়া, একটা মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। তার ওপর আমাদের বাড়িতে ঢুকলো কিভাবে, দরজা তো বন্ধ ছিল। এসব গুলোর সাথে অদৃশ্য হওয়ার ব্যাপারটা বরাবর মিলে যাচ্ছে। মেয়েটা কি কোন ভুত-প্রেত?
যাই হোক, আজ রাতে আমি একটা তথ্য বের করবোই। আমি আর মাসুদ রানা, দুজনে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়ীতে ভুতের গল্প লিখতে লিখতে এখন আমার সাথে অস্বাভাবিক কিছু কাহিনী ঘটে যাচ্ছে। এগুলো কি মনের ভুল, নাকি সত্যি। জানিনা।
আমি বরাবরের মত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবারো ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম দুজনেই।
আজকে মাসুদ রানাকে বললাম)
–তুই আজকে রাত ১টায় ঘুমাস। আমি এখন রুমে চলে যাচ্ছি।
( মাসুদ রানা বলল)
— কেন,?
(আমি বললাম)
–আমি যে কথাগুলো তোকে সকালে বলেছি, সেগুলো সত্য নাকি মিথ্যা, সেটা তুই বুঝতে পারবি। যদি রাত ১টা পর্যন্ত এখানে থাকিস।
( মাসুদ রানা আমার কথা শুনে আবারো জোরে হাসতে লাগল। এরপর বলল)
–তুই সত্যি পাগল হয়ে গেছিস, যাইহোক আমি এখানে ১টা না, রাত তিনটা পর্যন্ত আছি। যা তুই, রুমে চলে যা। দেখি আজকে, কোন ভুতের মা এসে আমার সাথে দেখা করে।
—ঠিক আছে, তুই থাক.. ঠেলা বুঝবি রাতে।
( আমি রুমের দিকে চলে আসলাম। তারপর বিছানায় শুয়ে কম্বলটা মুখের উপর দিয়ে ভাবতেছি।
বন্ধু, তোকে পাগল বলতে যাচ্ছি। প্রস্তুত থাকিস। এইটা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ মাঝ রাতে কেউ আমার কম্বল ধরে টানাটানি করছে।)
৩)
( আমি রুমের দিকে চলে আসলাম। তারপর বিছানায় শুয়ে কম্বলটা মুখের উপর দিয়ে ভাবতেছি।
বন্ধু, তোকে পাগল বলতে যাচ্ছি। প্রস্তুত থাকিস। এইটা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ মাঝ রাতে কেউ আমার কম্বল ধরে টানাটানি করছে।)
কম্বলের টানাটানিতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। এরপর কম্বলের ভিতরেই মনে মনে ভাবছি।
এই ভূত কি শুধু আমার পিছু নিয়েছে নাকি। মাসুদ রানাকে ব্যালকনিতে রেখে আসলাম, তাকে কিছু না করে বরাবর আমার কাছে চলে এসেছে? ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। আমি কম্বলটা আরো শক্ত করে ধরেছি। এরপরও যেন কম্বলটি টেনে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কোন রকমই কম্বল ছাড়ছিনা।আজকে যা হবার হবে,কম্বল তো ঢেকেই রাখবো।
এমন সময়, আরো জোরে ধরে টান দিলো। কম্বলটা আমার মুখ থেকে সরা মাত্রই আমি জোরে চিৎকার দিলাম। আমার চিৎকারে সঙ্গে, সামনে মাসুদ রানাও জোরে একটা চিৎকার মারলো। ওকে দেখে আমি বললাম।)
আমি– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন,ভয় পেয়েছিস নাকি।
মাসুদ রানা– আরে ভয় না, আমি আজকে তোর সাথে ঘুমাবো।
আমি– কেন কি হয়েছে, তোর ভূতের মা কি তোর সাথে দেখা করেছে?
মাসুদ রানা– ফাইজলামি ভাল্লাগেনা, আমি তোর সাথে ঘুমাবো।
আমি– কি হয়েছে সেটা তো বলবি…
মাসুদ রানা–একটা মেয়ে এসেছে..
আমি– তারপর তোকে বলেছে, এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। তাই না?
মাসুদ রানা–আরে না,
আমি—তাহলে কি?
মাসুদ রানা–একটা মেয়ে দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।কিন্তু মেয়েটি তাকিয়েই ছিলো।পরে আমি বললাম “” তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ কি, বাড়িতে ঢুকলেন কিভাবে।””
কিন্তু মেয়েটি কোন কথা বলেনা। আমি মোবাইলে ফ্লাশ লাইট অন করে যখনই ব্যালকনি থেকে নিছে লাইট মারলাম। অবাক ব্যপার, সেখানে কেউ নেই।
আমি— ও আচ্ছা, তুই ভয় পেয়ে গেছিস। আর আমার সাথে যে মেয়েটির ফুটবল খেলা হলো, সেটা আমি তোকে বললাম, তাও তুই আমার কথা বিশ্বাস করলিনা। যাইহোক এখন আমার সাথে ঘুমা। কালকে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলবো।
( এই বাড়িওয়ালা হচ্ছে সব নস্টের মূল। আমরা এসেছিলাম বাসা খোজার জন্য ঠিকই।কিন্তু উনাকে চিনিওনা।হটাৎ রাস্তায় আমাদের বলল,এই বাড়িটিতে থাকার জন্য। ভাড়া ও কম বলেছে।আবার এডভান্স নিবেনা।এমন সুজোগ হাত ছাড়া করিনি আর।তাই এই বাড়িতে থাকা।
সকালে উঠে সোজা বাড়িওয়ালার কাছে যাবো,কিন্তু তার আগেই দেখি উনি বাড়ির সামনের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে। আমরা উনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
আমি– অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে আমাদের সাথে।এর রহস্য কি?
(আমাদের প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে উনি উল্টো প্রশ্ন করে বসলেন)
বাড়িওয়ালা — আপনারা কি এই বাড়িতে থাকবেন, নাকি চলে যাবেন।
আমি– দেখুন, আমরা বাড়িটা ছাড়ার জন্য এখানে আসিনি। এখানে আমরা থাকতে এসেছি।তাও ১ম আপনিই জোর করেছিলেন। কিন্তু আমাদের জানা তো দরকার, বাড়িতে আসলে এগুলো কি হচ্ছে।
বাড়িওয়ালা — কেন, আপনাদের সাথে কি হয়েছে?
আমি — কি হয়নি সেটা বলুন, একটি মেয়ে আমাদেরকে গত দুদিন ধরে জ্বালাচ্ছে। কখনো আমাদের বাড়ি এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে, কখনও আমার সামনে এসে আমাকে বলছে, বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। আবার কখনো আমাদের কাছে আসতে চাচ্ছে। আবার কখনো বাড়ির নিচ থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকছে। এগুলোর মানে কি। মেয়েটি কে…?
(আমাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, বাড়িওয়ালা বলছে)
বাড়িওয়ালা — আপনাদের যদি মন চায়, তাহলে বাড়িতে থাকুন। আর যদি মন না চায়, তাহলে চলে যান।
(বাড়িওয়ালার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে, আমাদের একটু সন্দেহ হল। এসব কিছুর পিছনে কি বাড়িওলা নেই তো?? এরপর আমরা বাড়িওয়ালাকে অনেক শক্ত করে জিজ্ঞেস করছি)
মাসুদ রানা —-আপনি আমাদেরকে বলুন, এ বাড়িতে কি হচ্ছে, না হলে আমরা থানায় কমপ্লেন করব। বাড়িতে যেকোন একটা কিছু আছে, যেটা আপনি বলতে চাচ্ছেন না। এ বাড়িতে কি কারও খুন হয়েছিল?
বাড়িওয়ালা — আপনার এসব কি বলছেন.. খুন হতে যাবে কেন।
(এবার আমি বাড়িওয়ালাকে বললাম)
আমি– দেখুন? আমরা দুজনেই অফিসে চাকরি করি ঠিকই, কিন্তু মূলত আমরা গল্প লেখক। আর আমরা ২জনই সবসময় ভূতের গল্প লিখি। রহস্যময় কোন কিছু নিয়েই আমাদের লেখালেখি। বাড়িতে যেসব ঘটছে, এর পিছনে একটা রহস্য আছে। সেই রহস্য বের করতে চাই। যদি আপনি আমাদেরকে হেল্প করেন, তাহলে আমাদের সেটা বের করতে সহজ হবে। আর যদি আমাদেরকে হেল্প না করেন, তাহলে আমরা রহস্য বের করে ছাড়বো ঠিকই, কিন্তু এদিকে আপনার বিপদ হতে পারে। সেজন্য ভালোর ভালোই বলুন, বাড়িতে কি হচ্ছে এসব? এসব হওয়ার কারণ কি?
(আমাদের এমন ধমক শুনে বাড়িওয়ালা বলতে বাধ্য, তারপর তিনি বললেন)
বাড়িওয়ালা –আরো 30 বছর আগের কথা, এ বাড়িটা আমার না, এ বাড়িটি ছিল আরিফ সাহেবের।
আরিফ সাহেবের একটি মাত্র মেয়ে নুসরাত এবং উনার স্ত্রীকে নিয়ে এ বাড়িতে থাকতেন। উনার বাড়ি নির্মাণ করার পর আমাকে এই বাড়িতে কাজের ছেলে হিসেবে রেখে ছিল। তখন আমার বয়স 19 থেকে 20 বছর।
আমি– হুম তারপর?
বাড়িওয়ালা — আসলে স্যার হয়েছে কি? ঠিকঠাক ভাবেই সবার দিন চলছিল। আমি তাদের বাড়িতে কাজের ছেলে হিসেবে থাকতাম। বাড়িতে সবগুলো কাজকর্ম করতাম।আবার তেমন কাজ করা হতো না আমার, আরিফ সাহেবের স্ত্রী আমাকে শুধু তার টুকটাক কাজের জন্য রেখেছিল। আর কিছুনা।এভাবে তিন বছর যাওয়ার পর আমি একদিন বাজারে গেলাম বাজার করতে। তারপর এসে দেখি নুসরাত ম্যাডাম, আরিফ সাহেব এবং উনার স্ত্রী তিন জনেই ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। উনাদের এমন অবস্থা দেখে আমার হাত থেকে বাজারে ব্যাগ পড়ে যায়।
মাসুদ রানা— আচ্ছা? মেয়েটি তাহলে নুসরাত?
আমি– হ্যাঁ, সেটাই তো দেখছি। আব্দুল্লাহ সাহেব,বলুন তারপর কি হয়েছে?
বাড়িওয়ালা— এরপর,
৪)
বাড়িওয়ালা — আসলে স্যার হয়েছে কি? ঠিকঠাক ভাবেই সবার দিন চলছিল। আমি তাদের বাড়িতে কাজের ছেলে হিসেবে থাকতাম। বাড়িতে সবগুলো কাজকর্ম করতাম।আবার তেমন কাজ করা হতো না আমার, আরিফ সাহেবের স্ত্রী আমাকে শুধু তার টুকটাক কাজের জন্য রেখেছিল। আর কিছুনা।এভাবে তিন বছর যাওয়ার পর আমি একদিন বাজারে গেলাম বাজার করতে। তারপর এসে দেখি নুসরাত ম্যাডাম, আরিফ সাহেব এবং উনার স্ত্রী তিন জনেই ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। উনাদের এমন অবস্থা দেখে আমার হাত থেকে বাজারে ব্যাগ পড়ে যায়।
মাসুদ রানা— আচ্ছা? মেয়েটি তাহলে নুসরাত?
আমি– হ্যাঁ, সেটাই তো দেখছি। আব্দুল্লাহ সাহেব,বলুন তারপর কি হয়েছে?
বাড়িওয়ালা— এরপর,
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল, জোরে একটা চিৎকার দিয়ে পুরো বাড়ি আমি লোকজোড় করে ফেলেছি। মানুষজন এসে তাদেরকে এমন অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তাদের তো কোন অশান্তি ছিল না। খুব শান্তি ভাবে তারা জীবন-যাপন করছিল। তাহলে হঠাৎ এভাবে আত্মহত্যা করার কারণ কি। এর রহস্য আমিও খুঁজে পাইনি।
মাসুদ রানা— তারপর কি হয়েছে।
বাড়িওয়ালা — পরে তাদেরকে কবর দেওয়া হয়। এরপরে বাড়িতে তো আর কেউ থাকেনি।বাড়ির কাগজপত্র চেক করে দেখে, সবগুলো আমার নামে করে দেওয়া।
আমি— ওওও আচ্ছা…? তারমানে তাদের আপনিই মেরেছেন?
বাড়িওয়ালা — আমিও বুঝতে পারিনি, সবগুলো আমার নামে কেন করে দিয়েছিল। এমন ঘটনা দেখে আপনাদের মতো অনেকে ভাবেছে, তাদেরকে আমিই মেরেছি। সবগুলো জায়গা সম্পত্তি দখল করার জন্য। কিন্তু বিশ্বাস করুন, তাদেরকে আমি নিজের মানুষ বলে মনে করতাম। আমি কেন তাদের সাথে এরকম করবো।
আমি– দেখুন…? আপনিই যদি তাদের না মেরে থাকেন,তবে তারা মরবে কেন।সুখেই তো ছিলো তারা। বেকুপ বানাচ্ছেন আমাদের?
বাড়িওয়ালা — আরে পুরো কথা তো শুনুন।
মাসুদ রানা—- কি বলবি তুই,তাদের তুইই মেরেছিস।তোকে তো আমি..
(বলেই মাসুদ বাড়িওয়ালাকে মারতে যাচ্ছিলো।তখন আমি মাসুদকে থামিয়ে বললাম)
আমি– কি করছিস,উনাকে আগে বলতে দে।হুম বলুন আপনি।
(বাড়িওয়ালা একটু থেমে বলল)
বাড়িওয়ালা — এর কিছুদিন পর আরিফ সাহেবের রুমের মধ্যে একটি চিঠি পাওয়া যায়। সে চিঠিতে লেখা ছিল, আমরা আত্মহত্যা করছি, এতে আমাদের কারো উপর কোন অভিযোগ নেই। এই বাড়িতে যত জায়গা সম্পত্তি, সবগুলো আব্দুল্লাহর নামে আমরা করে দিয়ে গেলাম। সেখানে আব্দুল্লাহকে কিও দোষারোপ বলে মনে করবেন না।
আমি– তারপর…?
বাড়িওয়ালা — ওই চিঠিটা দেখে, আমার উপর থেকে সকল দোষ চলে যায়। আমি নিজেও বুঝতে পারেনি, তারা আমার নামে এসব কেন লিখে গিয়েছিল।
(তখন বাড়িওয়ালা পকেট থেকে একটি কাগজ বের করে বলল)
বাড়িওয়ালা — এই যে দেখুন।
(বাড়িওয়ালা আমাদের হাতে চিঠিটা দিয়ে দেখালেন, সত্যিই,উনি এই চিঠিটা লিখেছিলেন। এরপর আমি জিজ্ঞেস করলাম।))
আমি– আপনাদের সাথে কিছুদিন ধরে কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছিল নাকি? যার কারণে তারা আত্মহত্যা করেছে বলে আপনার মনে হয়?
বাড়িওয়ালা —না, সেরকম টা কিছুতো আমি কখনো দেখিনি.. তারা সব সময় খুশিতে ছিলেন। তাদের একটি মাত্র মেয়েকে নিয়ে তারা সব সময় হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকতেন।
আমি– আচ্ছা, নুসরাত এর বয়স কত ছিল?
বাড়িওয়ালা— তার বয়স ছিল 17..
মাসুদ রানা– আর তখন আপনার বয়স কত ছিল।
বাড়িওয়ালা— তখন আমার বয়স ছিল চব্বিশ বছর।
আমি– আচ্ছা বুঝতে পেরেছি, আপনি এখন যেতে পারেন। বাকিটা আমরা দেখছি।
(বাড়িওয়ালা অনেকদিন পর, পুরনো স্মৃতি মনে করে। এতে মন খারাপ করে ফেলেন উনি।উনার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে বুঝতে পারছি। যাইহোক, বাড়িওয়ালার উপর আর কোনো চাপ না দিয়ে, রহস্য আমরা বের করব। এরপর আমরা বাড়িতে গেলাম। গিয়ে আবারো প্রথম দিনের মতো একি কাণ্ড!! পুরো বাড়ি এলোমেলো করা। প্রথম দিন আমরা শুধু দেখেছি নিচের তলায় সব গুলো এলোমেলো করা ছিল, আজকে দেখি পুরো বাড়ি এলোমেলো করা। আমাদের গ্যাসের চুলা উল্টো করে রাখা, সোফা ফেলে দেওয়া, টিভি চিত করে রাখা। সিড়ি পুরো পাতা দিয়ে ভরা। নিজেদের রুমে গিয়ে দেখি, আমার রুম যেরকম সাজানো ছিল, সে রকম একটুও নেই। আলমারির জায়গায় ড্রেসিং টেবিল,আর ড্রেসিং টেবিলের জায়গায় আলমারি। আমার যত ছবি দেওয়ালে ছিল, সব গুলো মাটিতে পড়া।
এরকম অবস্থা দেখে আমাদের মনে একটু খটকা লাগলো। ওরা হয়তো আমাদের কিছু বলতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের আত্মাকে স্মরণ করব কিভাবে। এরপর মাসুদ রানা বলল)
মাসুদ রানা– আচ্ছা শুন।সবকিছু অফিস থেকে এসে দেখব। এখন অফিসের সময় হয়ে গেছে, অফিসে চল। বাড়ি আমরা এসে ঠিক করবো।
আমি– ওকে চল
(২ জনই অফিসে চলে গেলাম, সকাল বেলা কিছু খেলাম না, এরপর দুপুরে বাইরে খেলাম,রাতের খাবার ও বাহির থেকে নিয়ে আসলাম। মাসুদ রানা বলল)
মাসুদ রানা– বাড়ি পরিস্কার করি চল।
আমি– গুছিয়ে লাভ কি, এক ঘণ্টা পর যদি আবার এলোমেলো হয়ে যায়? আগে আমরা এর রহস্য বের করি। চল খাবার খেয়ে নি।
(খাবার খেয়ে দুজন মিলে ব্যালকনিতে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছি। এমন সময় দেখলাম, বাড়ির সামনে যে গাছ, সেই গাছের মধ্যে কেউ ঝুলছে। দেখতে পুরুষ মনে হলো।উনার পা উপরের দিকে এবং মাথা নিচের দিকে রেখে ঝলছে। আবার আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।এমন অদ্ভুত হাসি দেখে, আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছিনা।মনে হলো উনিই আরিফ সাহেব। নুসরাতের বাবা। এদিকে আমরা কি করবো।উল্টো শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে যায়। । কিছু বুঝতে না পারে, সেই লাশের দিকেই তাকিয়ে আছি।দেখছি কি হয়। এরপর যা খেয়াল করলাম, লাশটি যেভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে, তার ঠিক পার্শ্ববর্তী ডালে আর একজন মহিলা ঝুলে আছে।
একই রকম সেম ভাবে।পা উপরের দিকে দিয়ে, আর মাথা নিচের দিকে। ঠিক আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমরা এ অবস্থা দেখে কী আর রহস্য বের করব, মাসুদ রানা জ্ঞান হারানোর অবস্থা। এমন সময়, আমাদের সামনের টেবিল থেকে ১টা কাচের গ্লাস নিচে পড়ে যায়। ক্লাসের শব্দে আমাদের ঘোর ভাঙ্গে। দুজনই লাফ দিয়ে উঠি।তখনি পিছনে কিছুর শব্দ।
পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নুসরাত দাঁড়িয়ে আছে। আমি নুসরতকে বসা থেকেই জিজ্ঞাসা করলাম)
আমি– এসব করছো কেনো আমাদের সাথে। আমরা তোমাদের কি ক্ষতি করেছি।
(নুসরাত আমাদেরকে বলল)
নুসরাত — আমি আপনাদেরকে বলেছি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। তারপরও কেন আপনারা এ বাড়িতে আছেন।
(এবার আমি রেগে গিয়ে)
আমি— আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব..? আচ্ছা,তার কারন কি? কারন তো বলবা আমাদেরকে।
নুসরাত — তার কারণ হচ্ছে, আপনারা এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমরাই বাড়িতে থাকতে পারছি না।
আমি– কেন, আমরা তো আপনাদের কোন ডিস্টার্ব করছি না। আপনারা আপনাদের মত থাকুন, আমরা আমাদের মতো থাকি। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন? আপনারা সবাই মরে গেছেন, তাহলে এখনো কেন এ বাড়িটা জড়িয়ে আছেন। আপনারা চলে যাচ্ছেন না কেন? আপনাদের কবর তো জানাজা পড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের আত্মা কেন এখনো এই বাড়িতে ঘুরাঘুরি করে।
(আমার এই প্রশ্নের সাথে সাথে নুসরাতের চোখ দিয়ে জল পড়ে যায়।এমন অবস্থা দেখে আমাদের মনেও মায়া হল। এমন দুঃখের সময় আবার চোখ রাঙ্গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে)
নুসরাত — তোদেরকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছি। যদি না যাস, তাহলে সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলবো। এটাই সত্যি।
(এবার আমিও রেগে ফ্লোর থেকে দাঁড়িয়ে বললাম)
আমি– মারবে আমাদেরকে? মারো মারো? এই যে আমি তোমার সামনে, আমাকে মারো?
কি দিয়ে মারবে আমাকে, হাত দিয়ে মারবে? গলা টিপে মারবে? নাকি এখান থেকে নিচে ফেলে দিয়ে মারবে।কিন্তু তার আগে আমার প্রশ্ন, এই বাড়িতে কি হয়েছিল 30 বছর আগে তোমাদের সাথে। কেন তোমরা এই বাড়িতে রয়েছো। এর কারণ কি? আমরা রহস্য খুঁজে বের করতে চাই..! আমরা তোমাদেরকে মুক্তি দিতে চাই! দয়া করে বলুন।
(আমার এমন এক নাগাড়ের কথা শুনে, নুসরাত আমার গালে একটা চড় মারে। সেই চড়ের সাথে সাথে আমি আবার ফ্লোরে পড়ে যাই। নিচে পড়ে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি নুসরাত সেখানে নেই। পরিবেশ আবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি সেই গাছের মধ্যে আরিফ সাহেব এবং উনার স্ত্রী, দুজনের একজনও নেই। কিছুই বুঝতে পারছি না। এসব হচ্ছেটা কি।
এরপর মাসুদের দিকে তাকিয়ে দেখি মাসুদ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম)
আমি– কিরে, তোর আবার কি হলো।
মাসুদ রানা — তুই ভূতের সঙ্গে এভাবে গরম দিয়ে কথা বলেছিস? এটা দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না! কি হয়েছে তোর। যদি সত্যি সত্যি নুসরাত তোকে মেরে ফেলতো?
আমি— সেটা তো আমি জানি না, আমার এখন লক্ষ্য হচ্ছে রহস্য বের করা। এতদিন নিজের গল্পের রহস্য তৈরি করে, রহস্য বের করেছি। এবার আমি নিজের বাস্তব জীবনের রহস্য বের করতে চাই।
৫)
এরপর মাসুদের দিকে তাকিয়ে দেখি মাসুদ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম)
আমি– কিরে, তোর আবার কি হলো।
মাসুদ রানা –তুই ভূতের সঙ্গে এভাবে গরম দিয়ে কথা বলেছিস? এটা দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না! কি হয়েছে তোর। যদি সত্যি সত্যি নুসরাত তোকে মেরে ফেলতো?
আমি— সেটা তো আমি জানি না, আমার এখন লক্ষ্য হচ্ছে রহস্য বের করা। এতদিন নিজের গল্পের রহস্য তৈরি করে, রহস্য বের করেছি। এবার আমি নিজের বাস্তব জীবনের রহস্য বের করতে চাই।
মাসুদ রানা– তোকে নিয়ে আর পারা গেল না। যাইহোক, তারা যে এখন চলে গেছে, আবার মনে হয় কালকে রাতে আসবে।
আমি– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ, একটু পরে ফজর আজান হবে। সেজন্য হয়তো চলে গেছে। আমরা কালকের অপেক্ষায় থাকি। তুই গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমা। আমি এখানে বসে বসে সিগারেট খাই। ভালো লাগছে না কিছু।
মাসুদ রানা– আমারও খুবই ঘুম পেয়েছে, কিন্তু যে অবস্থা দেখলাম। কিছুক্ষণ আগে ঘুম চোখ থেকে পালিয়ে গেছে।
আমি– গিয়ে চোখ বন্ধ করে থাক। ঘুম চলে আসবে। আর তারা আমাদেরকে কিছুই করবে না। কারণ আমরা তাদের কোন ক্ষতি করছি না, তাদের উপকার করার জন্য আমরা এখানে রয়েছি।সেটা তারা ভাল করেই বুঝেছে। গিয়ে ঘুমা।
(আমার কথা শুনে মাসুদ রানা বসা থেকে উঠে তার রুমে চলে গেল। যাওয়ার পরে আমি ব্যালকনিতে বসে সিগারেট খেতে যাব, কিন্তু আমি আগুন ধরাতে পারছি না। সাথে সাথেই ঘাড়ের মধ্যে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি নুসরাতের হাত আমার ঘাড়ে।
ঘাড় পুরো ঠান্ডা বরফের মত হয়ে গেছে। সব সময় আমি গল্প লিখতাম, অশরীরী আশেপাশে যখন থাকে, তখন শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এখন আমি বাস্তবে ফিল করতে পারছি, আমি যেন কোন বরফের দেশে বরফের নিচে অবস্থান করছি,মনে হচ্ছে আমার উপর থেকে নিচ সবগুলো বরফ দিয়ে ঢাকা। আমি ভেতরে খালি গায়ে।
তখন আমার যতটা ঠান্ডা লাগার কথা, ঠিক ততটাই ঠান্ডা লাগছে। ঠান্ডায় আমার হাত পা গুলো অবশ হয়ে গেছে। দাঁড়াতে পারছিলাম না আমি। যেভাবে তাকিয়ে ছিলাম, ঠিক সে ভাবে তাকিয়ে আছি। এমন পরিবেশে নুসরাত আমাকে বলতে লাগল।)
নুসরাতের আত্মা — আমাদের ব্যাপারে কোনো রহস্য আপনার জানতে হবে না। আপনারা দয়া করে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তাতেই আপনাদের মঙ্গল হবে।
(এটা বলে নুসরাতের আত্মা আমার ঘাড় থেকে হাতটা সরালো। সাথে সাথে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমি আবার চেয়ার থেকে উঠে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম)
— আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। তোমার মনে নেই? প্রথম দিন আমি তোমাকে উপকার করতে গিয়েছিলাম? তখন তো দেখে ছিলে। আমি মানুষটা কি রকম। আমি খারাপ না। আবার ভালো যে সেটাও বলছিনা।তবে আমি খারাপ কিছু করার উদ্দেশ্যে কখনো করিনা।
সেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা। তুমি আমাকে দেখেছিলে আমি তোমার সাথে কি রকম ব্যবহার করেছিলাম। মানুষের মুখে খারাপ বদনাম হবে বলে, তোমাকে গোডাউনে রেখেছি। তোমার বিপদ দেখে তোমাকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছি। সব মিলিয়ে আমাকে কি তোমার খারাপ মানুষ মনে হয়?
নুসরাতের আত্মা — দেখুন ভালো খারাপের কথা না। আমি আপনাকে বলছি, আপনি আমাদের সম্পর্কে কোনো রহস্য জানার চেষ্টা করবেন না। এটাই করবেন।
আমি — কেন? আমি তোমাদের সম্পর্কে কোনো রহস্য জানতে পারবো না কেন? তার মানে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ.. তোমার মরার সাথে কি আমার কোন সম্পর্ক ছিল?
নুসরাতের আত্মা — আমার ঘটনাটা অনেক খারাপ। আমাদের মৃত্যু হয়েছে অনেক খারাপ ভাবে।
আমি– ঠিক বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলো।
–আমার আব্বুর সাথে, আব্বুর একজন ব্যবসায়ীক পার্টনার আমাদের বাসায় প্রতিদিন আসতেন। উনি আব্বুর সাথে ব্যবসায়ীক কথাবার্তা বলতে প্রতিদিন। তবে আমার ঠিক সুবিধার ঠেকছিলো না।উনি আম্মুর দিকে খারাপ নজরে দেখতেন,এইটা আমি বুঝতাম। একদিন ওই ব্যবসায়ী রাতের বেলা আমাদের বাসায় চলে আসে। উনার সাথে আরো পাচ-ছয় জন লোক এসেছিল। আব্বু বলল “কিরে, এত রাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিস কোনো, কিছু হয়েছে? তখন তিনি বললেন” কিছু এখনো হয়নি, এখন হবে।
এরপর উনি আমার আব্বুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। আব্বু ড্রইং রুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। লোকটি আমার আম্মুর সাথে জোরাজুরি করে অনেক খারাপ কিছু করে ফেলেছে। আম্মুকে সোফার মধ্যে রেখে লোকটি আমার আম্মুকে ধর্ষণ করেছে। আমি দেখে যখন ছুটে যাই।তখন উনার সাথে আসা সেই 5-6 জন লোক আমাকেও সোফার মধ্যে রেখে ধর্ষণ করেছিলো। তারা আমাদেরকে নির্মমভাবে সারারাত ধর্ষণ করে। আমাদের চিৎকার কেও শুনতে পারছিলোনা। কারন আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। উনারা পশুর মতো আমাদের দেহ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় সারারাত। আমাদের ধর্ষণের পর ওরা আব্বুকে বলল,
“এতক্ষণ যা হয়েছে, সবগুলো ভিডিও করা আছে। যদি থানায় মামলা করিস বা আমাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ তুলিস। তাহলে সবগুলো ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবো।
এটা বলে উনারা চলে যায়, আমাদের শরীরে কোন শক্তি নেই। আমি আর আম্মু সোফা থেকে উঠতে পারছিলাম না। আমি কোন রকম সোফা থেকে ঊঠে আব্বুর হাত পা খুলেছি। আব্বু আমাকে এবং আমার আম্মুকে ধরে অনেক কান্নাকাটি করে।
আমি– তারপর…?
নুসরাতের আত্মা — এরপর কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না আব্বু। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছি। আমরা যদি এর বিরুদ্ধে কোন কিছু করতে চাই, তাহলে তারা সবগুলো ভিডিও ইন্টারনেটে ছাড়ায় দেবে। আর যদি আমরা বেঁচে থাকি, তাহলে তারা আমাদেরকে প্রতিদিনই ভিডিও গুলো নিয়ে ব্ল্যাকমেল করবে। এদিকে সকাল হয়ে গেছে। সারা রাত তারা আমাদেরকে পশুর মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে।আমাদের পুরো শরীর অবশ। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। বাহিরে আমাদের কাজের ছেলে আব্দুল্লাহ এসেছিল। এরপর আব্বু দরজাটা খুলে তাকে বাজারের একটা ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিল, বললো বাজার থেকে বাজার করে নিয়ে আসতে। আবদুল্লাহ গিয়েছে বাজার করতে।আব্বু আমাদের বলে আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আব্বুর কথায় আমরা সম্মতি দিলাম।আমাদের জীবনে যা ছিল, সব গেছে। সে জন্য বেঁচে না থেকে আমরা তিনজনই আত্মহত্যা করে ফেললাম। ভাবলাম আমাদের পোস্টমর্ডান হলে সে ধর্ষণকারীদের তারা ধরে ফেলতে পারবে। আমরা কিছু লিখে ও যায়নি এই কারনে, কারন মৃত্যুর পরও আমাদের যেন কোন বদনাম না হয় সেজন্য।
আব্বু আমাদের সাথে কি হয়েছিল সে রকম কিছু লেখেনি। পোস্টমর্ডান করে ভিতরে ভিতরে পুলিশ তদন্ত করে তাদের ধরে ফেলবে ভেবেছিলাম। আব্বু তার জায়গা- সম্পত্তি আব্দুল্লাহ এর নামে করে দিয়ে গেছে। এদিকে আমাদের মৃত্যুর পর, যে আমাদের ধর্ষণ করেছিল। তারা এসেছে। অনেক নামকরা তারা। সেজন্য আমাদের আর পোস্টমর্ডান করতে দেয়নি। সোজা কবর দিয়ে আসে। কিন্তু আমরা আমাদের বিচার পাইনি। সে জন্য আমরা এখনো এই বাড়ি ছেড়ে যাইনি।
(নুসরাতের কথা শুনে আমার বুক ফেটে কান্না বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। ওর কথাগুলো শুনে আমার এমন মনে হচ্ছে, যেন আমার আপনজন কারো সাথে এরকম কিছু হয়েছে। সত্যিই,অনেক নিশংস ভাবে মৃত্যু হয়েছে। তারপর আমি ওকে বললাম)
আমি– তাদেরকে তুমি ছিনো?
নুসরাতের আত্মা — তাদের বাড়ির ঠিকানাটা আমার জানা আছে।
আমি– ঠিক আছে, তাদের শাস্তি আমরা দিব। তবুও তোমাদেরকে আমি মুক্তি দিয়ে যাব।
(নুসরাত আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা আত্মা। ওর শরীরের স্পর্শে আমার ভয় করছিল ঠিকই, একদিকে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল সেটা ঠিক। কিন্তু মেয়েটির সাথে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে, এটা ভেবে আমার কোন দ্বিধা হলো না। মেয়েটাকে আমিও জড়িয়ে ধরলাম। জড়িয়ে ধরা অবস্থায় নুসরাত অদৃশ্য হয়ে গেছে। কান্না ভেজা চোখ আমার এখনো লাল হয়ে আছে। কি করব আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপর দেখলাম ফজর আজান হয়ে গেছে। এদিকে আমি বসে বসে সিগারেট খাচ্ছি। এমন সময় মাসুদ রানা এসে আমাকে বলল।)
মাসুদ রানা— কিরে রিয়াজ, পরে কি ঘুমাসনি?
আমি– না। এখন ঘুমিয়ে কি করব। আজকে অফিসে যাবিনা?
মাসুদ রানা— তুই ভুলে গেছিস?শুক্রবার আজ। আজকে অফিস বন্ধ।
আমি– ওহ,ভুলে গেছিলাম। শুন,অনেক কথা আছে।
মাসুদ রানা— কি কথা।
আমি– আমি সব রহস্য জানতে পেরেছি।
মাসুদ রানা— কিভাবে।
(তারপর আমি একের পর এক সব ঘটনা খুলে বললাম। আমার কথা শুনে মাসুদ রানা নিজেও কেঁদে ফেলছে। এমন কান্না করছে, যেন তার বউ মারা গেছে।)
আমি– এমনভাবে কান্না করছিস কেন।
মাসুদ রানা— কান্না করব না? একটি মেয়ে ও তার মা একসাথে 4-5 জন পুরুষ এর হাতে ধর্ষণ হয়েছে। তার উপর একজন বাবা, নিজের মেয়ে এবং স্ত্রীকে কিভাবে ধর্ষণ করে দেখেছে।কতটুকু কষ্ট পেয়েছে, সেটা তো আমি বুঝতেছি।
আমি–যাইহোক, এখন আমাদের সেই পাঁচজন লোকদের খুঁজে বের করতে হবে। এড্রেসটা আমাকে নুসরাত দিবে বলেছে। কিন্তু তার আগেই আজান হয়ে গেছে। সে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মাসুদ রানা— কিন্তু রিয়াজ। তাদেরকে খুঁজে তুই কি করবি।
আমি– দেখি না, কি করা যায়।
মাসুদ রানা— আচ্ছা ঠিক আছে, চল আজকে কোথাও ঘুরতে চাই। ওদের খুজবো ঠিক আছে, তুই ও তো বলছিস তোর মন ভাল না।
আমি– তাহলে চল।
(দুজনে ফ্রেশ হয়ে একটা দোকানে সকালের নাস্তা খেলাম। বাহিরে আড্ডা দিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখি বাড়িওয়ালা ফুলগাছে পানি দিচ্ছে।এরপর বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করাতেই বাড়িওয়ালা বললো”)
বাড়িওয়ালা — বাড়িতে তো কোন 5 জন ব্যক্তি ছিলোনা। আসতেও কখনো দেখেনি।
আমি–আচ্ছা কোন ব্যবসায়ী আসতো?
বাড়িওয়ালা — না, এই বাড়িতে তো আমি কখনো নিচের তলা থেকে উপরে উঠতে পারেনি। আরিফ সাহেব উপরে থাকতেন।তাই কাওকে দেখিনি।
আমি– তার মানে কি আপনি শুধু নিচের তলায় ছিলেন?
বাড়িওয়ালা — হ্যাঁ, আমি কখনো উপরতলায় উঠেনি। ওগুলো নুসরাতের আম্মু কাজ করত। আর নিচে যেগুলো, সেগুলো আমাকে নিয়ে করতো।
আর অন্য কোন লোক তো সেই বাড়িতে কোন দিন ঢোকেনি।
আমি– ঠিক আছে, আপনার কথা যেহেতু এইটা। তাহলে আমি দেখছি কি করা যায়।
(আমরা আবার বাড়িতে চলে আসলাম। নুসরাতের কথার সঙ্গে বাড়িওয়ালার কথার কোন মিল নেই। এখন কি করবো, এত রহস্য? সারাদিন দুজনে এসব নিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে, চিন্তা ভাবনা করতে করতে কখন সময় চলে গেছে বুঝে উঠতে পারেনি। যেই সন্ধ্যা নেমে এসেছে, আমি একা ব্যালকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছি। মাসুদ রানা বাজারে গেছে বাজার করে নিয়ে আসতে। এমন সময় একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল। বাতাস আমাকে ছুঁয়ে গেছে, বুঝতে পেরেছি নুসরাত উপস্থিত হবে। তারপর আমি বললাম)
–এত করে কি হবে, সামনে এসো।
(তখন আমার সামনে ভাসমান হলো নুসরাত। আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম)
আমি– বাড়িওয়ালা যে বলল, বাড়িতে কেউ আসতো না?
নুসরাতের আত্মা — সে ব্যাপারে আমি তোমাকে আর কিছু বলতে পারব না। তুমি যতোটুকু চেয়েছো, ততটুকুই আমি তোমাকে বলেছি।
আচ্ছা, চলনা, আমরা কোথাও ঘুরতে যাই?
(নুসরাতের মুখে এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ভুতেরা আবার ঘুরতে যায়? নুসরাত আবার আমাকে বলল)
নুসরাতের আত্মা — আমি ভূত ঠিক আছে, কিন্তু তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি– ও তাই নাকি!! ( ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। ওর কথা মতো চলতে আমার খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে তার সাথে আমার অনেক অনেক দিন থেকে সম্পর্ক। এটা কোন মায়াজালে ফেসেছি আমি।)
নুসরাতের আত্মা — হুম, সত্যি কথা বলতে, তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
আমি– কিন্তু তুমি তো ভূত। তোমাকে তো আমি নিজের করে পাব না।
নুসরাতের আত্মা — একটা রাস্তা আছে। আমাদের মিলন হওয়ার।
আমি–কোন রাস্তা..
নুসরাতের আত্মা — এদিকে আসো।
(নুসরাত আমাকে আসতে বলে সামনে এগুতে লাগলো। আমি ওর পিছন পিছন যাচ্ছি। তারপর হঠাৎ দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল)
নুসরাতের আত্মা — আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো? তুমি আমার সাথে যেতে চাও?
(ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমি যেন আরো মাতাল হয়ে গেছি। তার চোখের চাহনি আমাকে যেন পাগল করে দিচ্ছে। আমি বললাম)
আমি— হুম,আমি চাই, তোমার সাথে যেতে চাই।
নুসরাতের আত্মা — তাহলে এক্ষুনি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে মরে যাও। সঙ্গে সঙ্গে তুমি আমার সাথে যেতে পারবে।
(কিভাবে যেনো খুব ভালোবেসে ফেলেছি নুসরাতকে আমি। তার কথা যেন আমার ফেলতে মন চাচ্ছে না। আমার মন বারবার সায় দিচ্ছে, তার কথামতো আমি এখান থেকে লাফ দিয়ে মারা যাবো। তারপর তো আমি তাকে পাবই।আমিও ছাদের কিনারায় গিয়ে দাড়ালাম লাফ দেওয়ার জন্য।অনূভূতিটা খুব যেনো মনের বিরুদ্ধে কাজ করছে।তবে শুধু ভাবাচ্ছে, আমি মরলেই তাকে পাবো।এরপর আমি চোখ বন্ধ করে ছাদ থেকে লাফ মারতে প্রস্তুত হলাম)
যখনই আমি লাফ দিব, ঠিক তখনই মাসুদ রানা দৌড়ে এসে, আমাকে ঝাপটে ধরে ছাদে পড়ে গেলো।)
মাসুদ রানা —রিয়াজ…? কি করতে যাচ্ছিস?
(এমন সময় আমার ঘোর ভাঙলো, আরে….? আমি মরতে যাচ্ছিলাম?
মাসুদ রানা আমাকে বলল)
মাসুদ রানা —তারাতারি আমরা এই বাড়ি থেকে পালাই। এখানে অনেক বিপদ।
(এমন সময় নুসরাত আমাদের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে বলল)
নুসরাতের আত্মা — তোদেরকে তো আমি ছাড়বো না… আরেকটু হলেই তো রিয়াজকে আমি মেরে ফেলতাম।
আমি— তুমি এসব কি করতে চাচ্ছ নুসরাত? আমরা তোমার উপকার করার জন্য চিন্তা করেছি। আর তুমি আমাদের মারতে চাও…?
নুসরাতের আত্মা — সত্যি বলতে রিয়াজ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেদিন থেকে তুমি এই বাড়িতে এসেছো।এখন আমি কোন ভাবেই তোমাকে এ বাড়ি ছেড়ে যেতে দিব না। তোমাকে সারা জীবন আমার কাছে রেখে দিব। এদিকে আসো? আজ, এক্ষুনি, আত্মহত্যা করো। তোমাকে যে আমার সাথে যেতে হবে।
( নুসরাতের কথা শুনে আমি বুঝে গেছি.. এই নুসরাত তার জীবন সঙ্গী করার জন্য আমাকে ডাকছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাসুদ রানা কে বললাম)
আমি— দোস্ত………. পালা…………
রাত ০২:৪৮ মিনিট,
মাসুদ রানা এবং রিয়াজ ভূতের বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে। ভূতের বাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথে বাহিরে অনেক বড় একটা অশরীর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এইটা দেখে মাসুদ রানা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রিয়াজ মাসুদ রানাকে, কোলে তুলে আবার বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়।একটা রুমের মধ্যে গিয়ে অবস্থান করে, দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিয়ে চুপটি মেরে বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে, কেন এসেছি এ বাড়িতে।
( পাঠকগণ, এইটাই ছিলো ৩ মাস আগের ঘঠনা। এর পর যা হয়েছে।,
হঠাৎ কেউ কান্না স্বরে দরজার ওপাশ থেকে বলতে লাগল।
“” রিয়াজ, দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেও না। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। “”
আমি অনেকটা ভয় পেয়ে যাই।এদিকে আমার সাথে মাসুদ রানা জ্ঞানহারা অবস্থা। কি থেকে কি করব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তখনই মনে পড়লো, আমার গল্পে আমি সব সময় লিখতাম, আগুন ভূতেরা ভয় পায়। আমি সাথে সাথে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালাম। এরপর সিগারেট হাতে নিয়ে দরজা খুললাম। খুলে দেখি নুসরাত আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এখন সে অনেক লম্বা।পুরো সিলিংটাকে ছুয়ে যাচ্ছে। এরপর শুধু আমাকে বলল
“” সিগারেটটা ফেলে দাও রিয়াজ, ওটা দেখলেই আমার ভয় করে “”
আমি নুসরাতকে বললাম,
“”আমি এক শর্ত আছে,তারপর তোর সাথে প্রেম করতে রাজি। “”
নুসরাতের আত্মা বলল,
“”কি শর্ত “”
আমি বললাম,
“”তুই এ বাড়িতে কি করছিস। পুরো সত্য ঘটনাটা আমাকে বল। আমি বুঝতে পারছি সেদিন তুই কিছু লুকিয়েছিস।এখন বল সব।””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“”ঠিক আছে বলছি, প্রথম থেকে তুমি যেভাবে জেনেছো, সবগুলো কথাই সত্যি। তবে আমাদেরকে ধর্ষণ করার লোকটি অন্য কেউ ছিল না, সে ছিল আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ তার দুজন সঙ্গীকে নিয়ে এসেছিল। আমাদের সাথে যা যা হয়েছিল, সবগুলো আব্দুল্লাহ করেছে। সে আমাদের এমন ভিডিও বানিয়ে আব্বুকে বলেছে, যদি তার নামে সম্পত্তি না করি, সে ভিডিওটি সবাইকে মেসেজ করে দিবে। তারপর আব্বু বাধ্য হয়ে করে দেয়। এরপর আমাদের হাতে আর কিছুই করার ছিলোনা। সেজন্য আমরা আত্মহত্যা করি। “”
আমি বললাম,
“”কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছিলে কেন?””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“”কারন তোমাকে যদি সত্যটা বলতাম, তুমি আব্দুল্লাহ কে মারতে যেতে। তারপর তুমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। আমি তোমাকে হারাতে চাইনি। সেজন্য আমি মিথ্যাটা বলেছিলাম।””
আমি বললাম,
“” তো আমি এখন আব্দুল্লাহকে ছাড়বো নাকি।মেরেই দিবো””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“” তুমি কি ছাড়বে না, আব্দুল্লাহকে তো আমরা অনেক আগেই মেরে দিয়েছি। “”
আমি,
“”কি বলছো কি এসব, তাহলে আজ আমাদের সামনে কথা বলেছে যে, সে কে””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“”সে আব্দুল্লাহ এর আত্মা, আমাদের কথা শুনে সে এসব কাজ করেছে। তাকে মারার পর আমরা আমাদের বসে রেখে দিয়েছি।””
আমি বললাম,
“” এখানকার সবাই কি জানে? বাড়িওয়ালা যে মারা গেছে?””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“” হ্যাঁ সবাই জানে, বাড়িওয়ালা মারা গেছে””
আমি বললাম,
“” সবাই তো আমাদেরকে বলেছে এ বাড়িতে না থাকার জন্য, বাড়িওয়ালার কথা বলিনি কেন””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“”এখানে অনেক আগ থেকেই মানুষ আসতো।কিন্তু আমরা থাকতে দিতাম না।সবাই নিজের ইচ্ছামত থেকেছে… আমাদের ইচ্ছায় গিয়েছে।শুধুমাত্র তোমরা আসার সাথে সাথে আব্দুল্লাহ বাড়িওয়ালা সেজে তোমাদের সাথে কথা বলেছিলো।””
আমি,
“” তার মানে তোমার প্রথম থেকে লক্ষ্য ছিল আমার উপর?””
নুসরাতের আত্মা বলল,
“” হ্যাঁ ছিল””
আমি,
“”এখন আমরা চলে যাচ্ছি। আমাদের কেউ আটকাতে পারবেনা'”
নুসরাতের আত্মা বলল,
“” সেটা তো কোন ভাবেই হবে না। আমার সাথে নিয়ে যাবো তোমাকে””
( সেই মুহুর্তে আমার হাতের মধ্যে হঠাৎ আগুন লেগে গেছে।বুঝেছি সিগারেট শেষ। আবার একটা সিগারেট বের করতে যাব, ঠিক তখনই নুসরাত আমাকে আঘাত করে। ওর আঘাতে আমি ডিগবাজি খেয়ে পেছনে চার হাত উল্টিয়ে পড়ি।আবার দাঁড়াতেই নুসরাত আমার দিকে একটা চেয়ার নিক্ষেপ করে, আমি ওটার থেকে বাঁচার জন্য এক লাফ দিয়ে, দরজা ভেঙ্গে মাসুদ রানার সামনে গিয়ে পড়লাম। গিয়ে দেখি মাসুদ রানা আমার হাতে একটা সিগারেট দিয়ে বললো,
“” জলদি ধরা “”
মাসুদ রানার হাত থেকে আমি সিগারেটটা নিয়ে ধরিয়ে ফেললাম। সাথে সাথে পরিবেশ আবার ঠান্ডা। এদিকে নুসরাত অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছে, আমি আর মাসুদ রানা তাড়াতাড়ি সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবার পর,
সোজা মসজিদে গিয়ে একজন ইমামের সাথে কথা বলেছি।
ইমাম সাহেব আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসে, ইমাম সাহেব বাড়িতে আসতেই পুরো বাড়িটির পরিবেশ পাল্টে যায়। বাড়ির ভিতরে যেন যুদ্ধ লেগে গেছে। আর এপাশ থেকে ওপাশে সবগুলো ছড়িয়ে ছিটকে মারছে। এমন অবস্থা হয়ে গেছে যেন বাড়ির ভিতরে আমাদের প্রবেশ করা নিষেধ করা।
তার পরেও হুজুর গলা থেকে একটা তাবিজ নিয়ে সামনের দিকে ধরল এবং উপস্থিত হল নুরসাত, আরিফ সাহেব, আরিফ সাহেবের স্ত্রী এবং আব্দুল্লাহ। তারপর ইমাম সাহেব বলল)
ইমাম সাহেব — এই বাড়িটি এখন কার দখলে।
নুসরাতের আত্মা — কিছুদিন পর এইটা সরকারে নিয়ে যাবে।
ইমাম সাহেব– কাগজপত্র সবগুলো কোথায়,…
আরিফ সাহেব — উপরের তলায়, রিয়াজ যে রুমে থাকে সেই রুমের খাটের নিচে।
ইমাম সাহেব — তোমরা এই বাড়ি ত্যাগ করো।
তারা সবাই বলল একসাথে— আমাদের সাথে রিয়াজ যেতে হবে।
( ওদের কথা শুনে আমার ১নাম্বার ধরে গেছে। মনে মনে ভাবছি,আমাকে তো জনি সিং এর মতো লাগেনা।তাও কেন আমার পিছুই লাগলো।
এরপর তাদের উদ্দেশ্য করে বললাম)
আমি — তোরা আমার মধ্যে কি দেখছিস রে? যে আমাকে নিতেই হবে? ( এরপর ইমাম সাহেব কে বললাম)
আমি– হুজুর, এদেরকে তাড়াতাড়ি বোতলের ভিতর ঢোকান। না হলে এরা এমনি এমনি আমাদেরকে ছাড়বে না।
(তারপর ইমাম সাহেব বললো)
ইমাম সাহেব — কি,বোতলে ঢোকাবো?
ওরা বলল—- না, না, আমরা চলে যাচ্ছি।
ইমাম সাহেব — তোরা গিয়ে আবার আসবি না, তার কোনো নিশ্চিত আছে?
আরিফ সাহেব —- আমরা আর আসবো না।
ইমাম সাহেব — তোদের কোন বিশ্বাস নেই..
(বলে তিনি একটি বোতল বের করে, কিছু সূরা পাঠ করতে লাগলো। আর তারা হাউমাউ করে চিৎকার করতে করতে সে বোতলের ভিতরে ঢুকে গেছে ধোয়া হয়ে। পুরো বাড়িটি এখন নিস্তেজ হয়ে গেছে। না আছে কোন শব্দ, না আছে কোন বাতাস, আর না আছে ভূতেদের আক্রমণ। ইমাম সাহেব আমার হাতে বোতলটি ধরিয়ে দিয়ে বলল)
ইমাম সাহেব— একটু পর ফজরের আজান হয়ে যাবে। বোতলটি নদীতে ফেলে দিয়ে এসো।
(ইমাম সাহেবের কথা শুনে এবার আমরা একটু স্থির হলাম। যাই হোক, অন্তত ভূতের হাত থেকে তো বেচেছি। ফজরের আজান হয়ে গেছে, আমি এবং মাসুদ রানা গিয়ে নামাজ আদায় করে, বোতলটি হাতে নিলাম। সকালের সূর্য উঠেছে খুব সুন্দর করে। মনে হচ্ছে আমার জীবনের নতুন একটা দিন এইটা। নদীর সামনে গিয়ে বোতলটা জোরে নিক্ষেপ করলাম পানিতে। ডুবে যায় সকল আত্মা। আমি এবং মাসুদ রানা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গান গাইতে গাইতে আসছি। গানটি…….
দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা,
বনবাসে যা….,,,
তোদের দেখলে জ্বলে আগুন,
জ্বলে আমাদের গাঁ }
এই গানটি বলতে বলতে আমরা বাসার দিকে চলে এসেছি। এরপর (রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার) গল্পটি শেষ দিয়ে, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ফেসবুকে লিখে দিলাম। এই প্রথম ফেসবুকে গল্প লিখতে লিখতে আমার জীবনে একটা ভয়ানক ভৌতিক ঘটনা ঘটে গেছে। তবে সত্য কথা বলতে কি জানেন….?
নুসরাত কে আমি সত্যি সত্যি ভালোবেসে ছিলাম। এখনো তার জন্য বুকের বাম দিকটা চিনচিন করে ওঠে। হয়তো মিলন হয়নি,কারণ সে হচ্ছে অন্য জগতের, আর আমি এই জগতের। কখনো কখনো মনের কিছু ইচ্ছে অসম্পূর্ণ থাকে,যখন খুব করে কিছু চাওয়া হয়। এখানে আমার বাধা ছিলো অন্য জগতের সাথে মিলতে চেয়েছি বলে।আর বাস্তব জীবনে বাধা ঘঠে,বিভিন্ন ঘঠনা নিয়ে।এটাই নিয়তি…)
সমাপ্ত