– জুবায়ের সাহেব বাড়িতে আছেন
– কে বলছেন
– জ্বী, আমি সদর হাসপাতাল থেকে এসেছি, একটা লাশ কাটার অর্ডার আসছে,শফিক সাহেব আমাকে পাঠিয়েছেন
– আচ্ছা যান, আমি আসছি
রাত প্রায় ১২ টার ওপরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান জনাব শফিক সাহেব তার পিএস কে পাঠিয়েছেন জুবায়ের সাহেবের বাড়িতে।জুবায়ের সাহেব একজন লাশ কাটারি।মৃত মানুষের লাশ কাটেন তিনি।এক তলা বিশিষ্ট ছোট দুই রমের বাড়িটিতে জুবায়ের সাহেব একাই বাস করেন।তার স্ত্রী,সন্তান কেউ নেই।
হাসপাতালে লাশ কেঁটে যত টাকা পাই তা দিয়ে পেঠ ভরে খেয়ে বাকি টাকা দিয়ে মদ কিনে নেন তিনি।সারা রাত রুমের মেঝেতে বসে বসে মদ খান আর কোনো একজন মহিলাকে গালাগাল দেন তিনি। প্রতিদিনের মতো আজকেও যখন মদ খেতে বসেছেন তখন লাশ কাটার অর্ডার আসছে। তিনি দ্রুত গায়ে একটা শার্ট ঝড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লেন সদর হাসপাতালের দিকে। কারণ লাশ কেঁটেই তার উপার্জন হয়।এটা দিয়ে তিনি আবার মদ কিনতে পারবেন। হাতে এক বোতল মদ নিয়ে খেতে খেতে সদর হাসপাতালে প্রবেশ করলেন তিনি। সরাসরি শফিক সাহেবের রুমে প্রবেশ তার। শফিক সাহেবের সাথে লাশ কাঁটা নিয়ে ধর কষাকষি চলছে।শফিক সাহেব একজন সরকারি লোক হয়েও লাশ কাঁটার টাকা থেকেও কিছু মেরে দেওয়ার জন্য জুবায়ের সাহেবের সাথে ধর কষাকষি করতেছেন। জুবায়ের সাহেব জানতে চাইলেন লাশটা কি পুরুষের নাকি মহিলার।শফিক সাহবে বললেন,
– একজন মহিলার
– কিভাবে মারা গেছে
– শুনেছি, স্বামীর সাথে ঝগড়া লেগে গলায় দঁড়ি দিয়ে ফাঁস লেগেছে
– ওহ আচ্ছা
জুবায়ের সাহেব মদ খেতে খেতে লাশ কাঁটার রুমের দিকে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ধরে আছে।চোখ গুলো যেন সামনের সব কিছু ঝাপসা দেখতেছে।তবুও তিনি লাশ কাঁটার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।কারণ তার যে টাকার দরকার।আবার যে এক বোতল মদ লাগবে।তা না হলে সারা রাত কিভাবে তিনি পার করবেন।মদের বোতল থেকে শেষ একটা চুমুক দিলেন।এক চুমুকে বোতল খালি করে হাত থেকে বোতলটা ফেলে লাশ কাঁটার রুমের দিকে এগুলেন।দরজাটা লাগিয়ে লাশের কাছে গিয়ে যখন তিনি লাশের মুখ থেকে সাদা কাপড় সরালেন, তখন তিনি বড় একটা শক খেলেন।মাথাটা ঘুরে গিয়ে পড়ে গেলেন পাশের দেয়ালের কাছে।পিঠটা দেয়ালের সাথে ঘেষে বসে আছেন তিনি। চোখ গুলো বড় বড় করে লাশটার দিকে তাকালেন।হ্যাঁ, তিনি লাশটাকে ঠিকি চিনলেন।
লাশটি আর অন্য কেউ নয়, জুবায়ের সাহেবের স্ত্রী তানিশা রহমানের।তানিশা রহমানকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।৪ বছর ৪ মাস তাদের ভালোবাসার পর বিয়ে হয়।খুব সুখে, আনন্দে দিন কাটছিলেন তাদের।বছর খানিক যাওয়ার পর তানিশা রহমানের মাঝে জুবায়ের সাহেব কিছু পরিবর্তন দেখতেছেন।সন্দেহ হয় কিছু কিছু।এই নিয়ে জুবায়ের সাহেব তানিশা রহমানের সাথে কথা বলতে গেলেই তাদের মাঝে তমুল ঝগড়া বেঁধে যায়।দিন যায়, মাস যায়, তানিশা রহমানের মাঝে পরিবর্তন ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।এত সুন্দর একটা সুখের সংসারে কিভাবে আগুন লেগে গেল সে চিন্তায় মগ্ন থাকেন জুবায়ের সাহেব। অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরেন তিনি।মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতেই তানিশা রহমান নানা কটু কথা বলেন।
জুবায়ের সাহেব একজন সৎ ব্যক্তি।তিনি কখনো সিগারেট হাতেই নেন নি।কিন্তু আজ তাকে মদ খেতে হচ্ছে।সিনেমায় দেখেছেন কষ্ট গুলো ভুলার জন্য, মনের যন্ত্রনা গুলো দূর করার জন্য মদ খাই। জুবায়ের সাহেবও তার মনের কষ্ট,যন্ত্রনা গুলো দূর করার জন্য মদ খান প্রতি রাত। তাকে অনেক ভালোবাসেন তানিশা রহমান।কিন্তু এদিকে তানিশা রহমানের ব্যবহার, চাল-চলন, কথা-বার্তা সবই ভিন্ন। জুবায়ের সাহেব নিজের স্ত্রীর সুখের জন্য বাচ্চা নেন নি।ভেবে ছিলেন দু’তিন বছর পরে বাচ্চা নিবেন।কিন্তু এখন তিনি ভিন্ন এক তানিশা রহমানকে দেখতেছেন। এতদিনের ভালোবাসা কোথাই হারিয়ে গেল।কোথাই হারিয়ে গেল সুখ,আনন্দ।জুবায় ের সাহেব যেন কিছুই ভাবতে পারেন না। ভাবতেই গেলেই চোখ দুটি থেকে অশ্রু ঝড়ে বাধাহীন।
একদিন অফিস থেকে এসে জুবায়ের সাহেব দেখেন তার স্ত্রী বাড়িতে নেই।সব গুলো রুমে খুঁজলেন,কোথাও পেলেন না।তার স্ত্রীর জন্য বসে আছেন।রাত ১০ টা অতিক্রম করতে লাগল।কিন্তু এখনো তার স্ত্রী তানিশা রহমানের আসার কোনো খবর নেই।রাত যখন ১১টা ছুইছুই তখন তানিশা রহমান আসলেন।অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলেন জুবায়ের সাহেব তার স্ত্রীর দিকে। কিছু বলার আগেই তিনি তার স্ত্রীকে ঠাসস বরে থাপ্পর মারলেন।হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন তানিশা রহমান।ঝগড়া শুরু হয়ে গেল তাদের মাঝে।তানিশা রহমান এক পর্যায়ে জুবায়ের সাহেব কে থাপ্পর মারলেন।জুবায়ের সাহেব হতবম্ব।তিনি যেন কিছুই বলতে পারতেছেন না।সময় যেন থেমে গেছে।ঘড়ির কাঁটা যেন ঘুরতেছে না। জুবায়ের সাহেব রেগে গিয়ে তানিশা রহমানকে বললেন,
– এখন ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে কেঁটে টুকরো টুকরো করতে
– সে ইচ্ছে কখনো পূরণ হবে না জুবায়ের,
আমি কালকে সকালেই চলে যাব তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে” এই কথা শুনে জুবায়ের সাহেব দাঁড়ানো থেকে বসে গেলেন।তানিশা রহমান পরকীয়া প্রেমে আসক্ত।তাই তো দিন দিন এমন খারাপ আচরন করতেন।সব কিছু খুলে বললেন তানিশা রহমান জুবায়ের সাহেব কে।জুবায়ের সাহেব এসব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। যেমনটা সন্দেহ করেছিলেন তিনি তেমনটাই হয়েছে। পরের দিন সকাল বেলা জুবায়ের সাহেবের হাতে ডিভোর্স পেপারটা দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন তানিশা রহমান।
সেই থেকে জুবায়ের সাহেব একা হয়ে গেলেন। আর দ্বিতীয় কোনো বিয়ে করেন নি। চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন তিনি।মদ খেয়ে মাতাল হয়ে প্রত্যেকদিন বাড়িতে ফিরেন তিনি।ধীরে ধীরে হয়ে গেলেন লাশ কাঁটারি।প্রতিনিয়ত লাশ কাঁটেন জুবায়ের সাহেব। দেয়ালের সাথে পিঠ ঘেষে এখনো বসে আছেন জুবায়ের সাহেব।তার স্ত্রী তানিশা রহমানের লাশ।তাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করলেন তানিশা রহমান। সেখানেও সুখ পেলেন না তানিশা রহমান। কারণ জুবায়ের সাহেবের মতো দ্বিতীয় আর কোনো ব্যক্তি নেই যিনি তানিশা রহমানকে ভালোবাসবে।তানিশা রহমান পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে জুবায়ের সাহেব কে ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের পিরিতে বসেও সুখ পেলেন না।
দুঃখে কষ্টে জীবন পার করে হঠাৎ একদিন গলায় দঁড়ি দিয়ে ফাঁস লেগে আত্মহত্যা করেন তানিশা রহমান।জুবায়ের সাহেব ঠোঁঠের কোণায় এক চিতলি হাসি এনে লাশ কাঁটার জন্য প্রস্তুতি হলেন।বার বার তার মনে পড়ছে সেই দিনের কথা।যেদিন তিনি বলেছিলেন, “ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে এখন কেঁটে টুকরো টুকরো করতে” ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,তা আজ সত্য হলো। জুবায়ের সাহেবের সেই কথাখানি আজ পূরণ হলো।নেশার জগতে থেকে লাশ কাঁটছেন তিনি, তার স্ত্রী, তানিশা রহমানকে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত একটা লাশকে….