রিয়াজ, আগামী পাঁচ দিন তোমার ছুটি।
— কেন স্যার….. আমার ছুটি কেন ….।
— এই কয়দিন অফিস বন্ধ থাকবে …. বাহির থেকে চোরাচালানে মাল আনা বন্ধ হয়ে গেছে ….বর্ডার থেকে এখন মাল নেওয়া অনেক কষ্টকর ….এই পাঁচ- ছয় দিন অফিস বন্ধ রাখতে হবে ….
5-6 দিন পর আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, তাই আজকে থেকে সবার এই 5 দিন অফিসে আসা লাগবে না। পাঁচ দিনের জন্য সবার ছুটি
((এই বলে স্যার অফিস থেকে বের হয়ে গেল….
ওহে ….আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি ….
আমি রিয়াজ, ঢাকা মিরপুরে থাকি।
দেশের বাড়ি হচ্ছে লক্ষ্মীপুরে।
একটু আগে তো দেখতেই পেলেন, 4-5 দিনের জন্য ছুটি দিয়েছে ….
এই পাঁচ দিন আর কি করার ….দেশের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার প্ল্যান করলাম।
পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রনিকে ফোন দিলাম))
— হ্যালো রনি ….আমি আজকে সন্ধ্যা দেশের বাড়িতে যাচ্ছি …. তুইও কি আমার সাথে চলবি ….?
— কি বলছিস ….
তুই কি আজকে সত্যি সত্যি যাচ্ছিস নাকি ….
— আজকে আমার অফিস বন্ধ দিছে ৫ দিনের জন্য ….তাই ভাবলাম বাড়ি থেকে ঘুরে আসি …. এখন যদি তুই চাস, তাহলে ৩জন মিলে দেশের বাড়িতে ঘুরে আসি চল।
— আরেকজন কে ….?
— কেন ….!! আমাদের রবি৷ ….
–ঠিক আছে ….আমিও অফিস থেকে 5 দিনের জন্য ছুটি নিয়ে নিচ্ছি …. কিন্তু সেটা ব্যাপার না, রবি কি যেতে পারবে ….?
–সেটা নিয়ে তুই চিন্তা করিস না ….আমি এখন ওর অফিসের দিকে রওনা হচ্ছি ….
আমি বললে রবি নাও আসতে পারে, সেজন্য তার বসের সাথে কথা বলেই তাকে নিয়ে আসব …. তুই এক কাজ কর,কাপড়-চোপড় নিয়ে সায়দাবাদ চলে আয় ….
–সায়দাবাদ এসে তুই আমাকে কোথায় খুঁজবি।
— ওভারব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে থাক, একবারে মাঝ বরাবর।
আমি রবি কে নিয়ে আসছি।
— ঠিক আছে ….তুই যেমন চাস।
((আমি সোজা রবির অফিসে গিয়ে হাজির হলাম।
রবি আমাকে দেখেই চমকে উঠলো। আমিই বললাম,))
–কিরে ….চমকানোর কিছু নেই…. আমি ভূত না ….মানুষ।
— তুই যে মানুষ সেটা তো আমিও জানি …. কিন্তু এখানে এখন এসেছিস কেন ….
–সেটা তোকে বলতে হবে নাকি ….ওয়েট।
(( রবির সাথে কথা না বাড়িয়ে আমি সোজা রবির বসের কাছে চলে গেলাম।
তারপর বললাম, আমি রনি দেশের বাড়িতে যাচ্ছি
পাঁচ দিনের জন্য।
আমাদের সাথে রবি কেউ যদি পাঁচ দিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয়, তাহলে ভালো হতো।
রবির বস আমাকে আগে থেকেই ভালো করে চিনে। সেজন্য আমার এক কথায় রাজী হয়ে গেছে।
এদিকে তাকিয়ে দেখি রবির মুখের মধ্যে যেন পদ্মা সেতুর ফুল ফুটেছে।
একেবারে দাঁত বত্রিশটা দেখিয়ে হাসছে।
অফিস থেকে রবির বাসায় গিয়ে, কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিলাম, আর আমি আসার সময় জামাকাপড় নিয়েই এসেছিলাম।
এরপর রবিকে নিয়ে সোজা সায়দাবাদ চলে এসেছি।
রনিকে ফোন দিলাম, ফোন ধরতেই বললাম))
— কিরে ….তুই কই ….
–তুই যেখানে বলেছিস, ওভারব্রিজের উপরে ….
— ওকে শুন, নিচে বাস কাউন্টারে চলে আয়। আমি টিকিট কেটে নিচ্ছি।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
((আর দেরি না করে টিকেট কেটে সোজা বাসে উঠে বসলাম…. সেখান থেকে কুমিল্লা আসতে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগে গেছে…. অবশ্যই এত সময় লাগত না …. দাউদকান্দির মধ্যে এসে বাস পাক্কা এক ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়েছিল জ্যাম এর মধ্যে ….সে জন্য এতটা দেরি হয়ে গেছে।
তবে কি করার, কুমিল্লা নেমে, সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার বাসে উঠে বসলাম।
সেখান থেকে চাটখিল আসতে আসতে আরও 2 ঘণ্টা লেগে গেছে।
ও হ্যাঁ ….বলা হয়নি।
চাটখিলের পাশে আমাদের বাড়ি …. চাটখিল বাজার থেকে আমাদের বাড়িতে আসতে মাত্র 30 থেকে 40 মিনিটের রাস্তা ….আমরা সবাই চাটখিল বাজার নেমে চারপাশ ভালো করে দেখছি ….একটা গাড়িও দেখা যাচ্ছে না ….
ঘড়িতে সময় এখন রাত ০১:৩৭ মিনিট…
একটা সিএনজি পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে নেই …. কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিনা ….শেষে না পেরে চাটখিল থাকা আমার একটা বন্ধুকে ফোন দিলাম।))
— হ্যালো রাফি …. কই তুই ….
— আমিতো ঘুমাচ্ছি ….এত রাতে ফোন দিয়েছিস ….?কোন সমস্যা হয়েছে ….?
— আমি চাটখিল বাজার এসে দাড়িয়ে আছি …. একটা গাড়ি ও দেখতে পাচ্ছি না …. তুই এক কাজ কর।
তোর বাইকটা নিয়ে জলদি চলে আয় ….আর শরীফ কে ফোন দিয়ে বল ওর বাইকটাও নিয়ে আসতে।
এখানে আমরা তিনজন আছি …. দুইটা বাইকে করে ঠিকমতো যেতে পারবো ….
((ফোন কেটে দেওয়ার 10 মিনিট পরে রাফি এবং শরিফ দুজনেই হাজির হয়ে গেছে।
আমি আর রবি শরিফের বাইকে উঠেছি।
রনি রাফি একটা বাইক এর মধ্যে।
চাটখিল থেকে মুন্সিরাস্তায় আসতে না আসতেই আমাদের গাড়িটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়
আমি সাথে সাথে বাইক থেকে নেমে পড়লাম। ভালো করে বাইক চেক করে দেখি,তেলের ⛽ টাংকি ফুল।
তাহলে বন্ধ হয়ে গেছে কেন।
তারপরও সবকিছু ভালোভাবে দেখছি।
নাহ …….. বাইকের তো কোন সমস্যা হয় নাই। তাহলে হঠাৎ মাঝ রাস্তায় এভাবে বন্ধ হয়ে যাবে কেন।
এত রাতে এখন কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না …. এই দিকে আমার ফোনের মধ্যেও তেমন বেশি চার্জ নাই। বাসের মধ্যে গান শুনতে শুনতে কখন শেষ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।
তখন শরিফ বলল))
— দোস্ত ….ওই যে পাশে একটা ছোট্ট বাড়ি দেখা যাচ্ছে …. আমরা বাইক দুটো বাড়ির সামনে রেখে আজকে রাত ওখানে থেকে যাই।
কালকে সকালে চাটখিল থেকে মিস্ত্রি এনে বাইক ঠিক করে ফেলব।
((যেই কথা সেই কাজ …. আমরা সবাই মিলে সে বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাহির থেকে দরজায় আমি নক করলাম।
“” ঠক ঠক ঠক ঠক “”
তখনই ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা উত্তর দিল ….))
— বাহিরে কে রে ….?
–দাদি আমরা …. বাসায় যাওয়ার সময় রাস্তায় হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে …. এখন একটু আশ্রয় দরকার …. আমাদের আজকে রাতটা আপনার বাসায় আশ্রয় দিলে একটু ভালো হতো ….কালকে সকাল ভোরে আমরা আবার চলে যাব ….
(( বৃদ্ধ মহিলা ভিতর থেকে আবার বলল))
–থাকতে পারবে তো ….?
–হ্যাঁ দাদি, কেন নয় ….অবশ্যই পারব ….
–ঠিক আছে
(( বৃদ্ধ মহিলা তখনি ভিতর থেকে হেঁটে হেঁটে আসছে.. হাটার আওয়াজ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
কিন্তু একটা জিনিস অনুভব করছিলাম।
বৃদ্ধ মহিলা যে হেঁটে হেঁটে আসছে, উনার পায়ের আওয়াজ টা কেমন যেন লোহার মতো। মনে হচ্ছে
কোন রোবট মাটির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বৃদ্ধ মহিলা ভিতর থেকে যখনই দরজাটা খুলল, আমি বৃদ্ধ মহিলার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছি।
উনার চুলগুলো সাদা সাদা, কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে উনার চুল দিয়ে মুখ ঢাকা।
আমাদেরকে স্পষ্ট ভাবে মুখ দেখাচ্ছেন না।
যাই হোক তাতে আমাদের কি।
আমাদের যেটা দরকার, আমরা সেটা পেয়েছি।
এর বেশি আমাদের কিছু দরকার নেই।
সবাই মিলে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ করার পরে দেখি বৃদ্ধ মহিলা একটা খাটে শুয়ে আছে।
অন্য খাটে আমি রনি রবি শরীফ রাফি, আমরা পাঁচজন মিলে একটা খাটের মধ্যে শুয়ে পড়েছি।
বৃদ্ধ মহিলার বাসার ভিতরে কোন রুম নেই।
পুরো বাসার মধ্যে একটা রুম।
একটা রুমের মধ্যেই উত্তর সাইডে, একটা খাটের মধ্যে বুড়ি শুয়ে আছে এবং দক্ষিণ পাশে আমরা পাঁচজন একটা খাটের মধ্যে শুয়ে আছি।
আমি বুড়ির মুখ বরাবর চোখ রেখে শুয়েছি। কালকে সকালে গ্রামে যাব।
কেমন যেন লাগছে। সবাইকে আবার দেখতে পাবো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো লেগে আসলো।
হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেয়েছি আমি 👹
সাথে সাথে চোখ মেলে দেখি বৃদ্ধ মহিলাটি খাটের উপর নেই।
আমি বিচানা থেকে উঠে বৃদ্ধ মহিলাকে ভালোভাবে খুজছিলাম।
অবশ্যই ওনাকে আমার খোঁজ এর কারণ আছে।
সেটা হচ্ছে, আমি বাসায় ঢুকার পর থেকেই, উনাকে কেমন যেন সন্দেহ লাগতে লাগল।
আমার কেনো যেনো মনে হতে লাগলো উনি সুবিধার না।
যে কোন সময় আমাদের কিছু করতে পারে। হয়তো কোন সাইকো উনি।দেখতে তো তেমনি দেখা যাচ্ছে।
যদি কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদেরকে আঘাত করে ….?
এই একটা সন্দেহ আমার মনের ভেতর প্রথম থেকেই ছিল।
এখন হঠাৎ করে উনাকে দেখতে না পেয়ে আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।
এইটাই উনাকে খোঁজার কারণ।
রুমের মধ্যে তেমন আলো নেই,, চাঁদের আলোয় জানালা ভেদ করে কিছু আলো রুমের ভিতরে প্রবেশ করেছে ….সেই আলোতে কোনরকম শুধু রুমটাই বুঝা যাচ্ছে।
রুমের মধ্যে কিছু আছে নাকি নেই, সেটা স্পষ্ট বুঝা কঠিন। পকেট থেকে মোবাইল ফ্লাশ লাইট জ্বালানোর জন্য ….যখনি পাওয়ার অন করেছি ….সাথে সাথে আবার মোবাইল অফ হয়ে গেছে ….সম্ভবত যে 2-3 শতাংশ চার্জ ছিল ….সেগুলো অটোমেটিক চলে গেছে…. এরপর দরজার দিকে খেয়াল করতেই দেখি,
দরজাটা ভেতর থেকে খোলা।
তার মানে বৃদ্ধ মহিলা বাহিরে গেছে ….আমি দরজাটা খুলে যখনি বাইরে তাকালাম, তখনি একটু বিস্ময় হয়ে গেছি।
সেই বুড়ি ওনার বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে কোথাও যেন হেঁটে যাচ্ছে ….এদিকে আমি দৌড়ে গিয়ে সবাইকে ডাক দিলাম।
সবাই আমার ডাকে লাফিয়ে উঠলো…. আমি তাদেরকে চুপ করতে বলতেই সবাই চুপ হয়ে গেছে। তাদেরকে বুড়ির ব্যাপারটা বললাম…. ওরাও আমার কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে যায় ….সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, বুড়ি এত রাতে কোথায় যাচ্ছে, আমরা সেটা দেখতে চাই।
আমরা পাঁচজন মিলে বুড়ির পেছনে লাগলাম।
চাঁদের আলোয় বুড়ি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে।
আমরা অনেক দূর থেকে ফলো করে করে আরেকটু সামনে যাচ্ছি।
এর মধ্যে আর একটু কনফিউজ হয়েছি আমি।
দেখলাম যে বুড়ির সামনে দুইটা লাইট জ্বলছে। মানে দুইটা আলোর ব্যবস্থা আছে।
কিন্তু এই আলাদা আলো আসছে কোথা থেকে।
যাই হোক, সেটা আমরা বুড়ির সামনে গেলেই দেখতে পাব।
তারপর আমরা যেটা দেখলাম ….সেটা দেখার আগে যদি আমরা জানতাম এরকম কিছু দেখব …. তাহলে কখনোই আসতামনা….
বুড়ি বরাবর একটা কবরস্থানের গেট খুলে কবরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করে ফেলল ….
এত রাতে কবরের মধ্যে প্রবেশ করার কারণ কি ….নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন ঘাপলা অবশ্যই আছে ….
আমরা পাঁচজন আবার হেঁটে হেঁটে কবরস্থানের দেওয়ালের ওপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি। কবরস্থানের দেওয়ালের বাইরে আমরা,শুধুমাত্র চোখ দুটো দেওয়ালের উপরে রেখে দেখছি, কি করছে সে বৃদ্ধা মহিলা।
বুড়ি একটা কবরের সামনে এসে তার হাতটা শাড়ির আঁচল থেকে বের করলো।
আমরা যেন জ্ঞান হারাতে যাচ্ছিলাম, হাতের একটা নখ যেন কোন তলোয়ারের মত।এত বড় নখ এর আগে কখনো দেখিনি।
নখ গুলো দিয়ে একটা কবরের ওপরে বুড়ি জোরে জোরে আছড় কাটতে লাগল। নখ দিয়ে
মাটি তুলতে তুলতে ওই স্থানটির 70% মাটি তুলে ফেলেছে।
আমরা বাহিরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি, বুড়ি আসলে কি করতে চাচ্ছে।
দেখলাম বুড়ি তার নখ দিয়ে কবর খুড়ে ভেতর থেকে কাফনের কাপড় সহ একটি লাশ কবর স্থানের উপরে রাখলো।
এরপর ধীরে ধীরে সেই বুড়ি লাশটির কাপড় ছিড়ে ফেলল নখ দিয়ে।
এরপর যা করলো, সেটা দেখার জন্য আমারা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
মহিলা ওর মুখ থেকে চুলগুলো সরাতেই আমরা বাহির থেকে চমকে উঠেছি।
চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বুড়ির পুরো মুখের মধ্যে মাংস নেই।
এমনি মানুষের মত কথা বলতে পারে, কিন্তু মুখের মধ্যে কোন মাংস নেই, এইটা দেখেই আমরা ভয় পেয়ে যাই।
আরো আশ্চর্য করে দিয়ে যা করলো, সেটা হচ্ছে লাশের পাশে এসে বুড়ির হাত দিয়ে লাশের একটি হাত ধরে টান দিয়ে ছিড়ে পেলে।
এরপর কবরস্থানের সামনে বসেই লাশের হাতটি খেতে লাগল।
এদিকে আমার বমি করে দেওয়ার অবস্থায় চলে এসেছে।
আরো ভালো করে খেয়াল করে দেখি, ওর সামনে যে দুটো লাইট জ্বলছিল, আসলো সেগুলো লাইট না, সেগুলো হচ্ছে বুড়ির চোখ।
চোখ দুটিই জ্বলজ্বল করছে।
রাতের বেলা বিড়াল কিংবা কুকুরের চোখ যেমন করে জ্বলে, সেইরকম বুড়ির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।
আমরা আর এগুলো দেখতে না পেরে ওই জায়গা থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এক দৌড়ে বাসার দিকে রওনা হয়ে গেলাম।
বুড়ির বাসায় এসে আবার আমরা চমকে উঠেছি।
যখনই দরজা খুললাম, দেখলাম যে বৃদ্ধ মহিলা বাসার ভিতরে বসে আছে।
চুল গুলো মুখের মধ্যে রেখে খাটের পাশে বসে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম))
— কি দাদু …. এখনো ঘুমাননি ….?
— কিভাবে ঘুমাবো ….আমার খিদে পেয়েছিল ….
— ও ভালো হয়েছে ….দাদি, আমরা বাসায় যাচ্ছি …. আজকে এখানে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।
–এত তাড়া কেন বাচ্চারা ….!!আর একটু অপেক্ষা করো ….?
— না দাদি, আমাদের হাতে তেমন সময় নেই।
(( বাসার ভিতরে ঢুকে আমাদের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নিলাম।
বাড়ি থেকে যখনই বাহির হব, তখন দেখলাম আকাশটা কেমন যেন মেঘলা মেঘলা হয়ে গেছে।
জোরে জোরে বিজলী চমকাচ্ছে। আমাদের বাহির হওয়া ঠিক হবে ….?
তবে যাই হোক, অন্তত এই পিশাচ ভূতের হাতে মরতে চাই না।
বাহির আসতেই বৃষ্টি শুরু হল।
বাইক বুড়ির বাড়ির সামনে রেখে দিয়েছি, বেচে থাকলে সকালে এসে নিয়ে যাবো এই ভেবে।
এরপর আমরা হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে বাসায় এসে পৌঁছলাম। রাত তখন ৪ টা বেজে গেছে। দরজা খুলেই আম্মি বলল))
–কিরে ….তোরা এভাবে এসেছিস কেন …. কোন গাড়ির মিলে নাই নাকি ….?
–পেয়েছি ….কিন্তু রাস্তার মধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছিল …. সেজন্য আনতে পারেনি ….।
–কি বলছিস, কোথায় হয়েছে এমন।
–ওই যে মুন্সী রাস্তার মধ্যে আসার সাথে সাথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ….এরপর সেখান থেকে একটু সামনে এসে একটা বাসা দেখতে পেলাম …. সেই বাড়িতে রাত কাটিয়েছি ….জানো আম্মি…? আমাদের সাথে সেখানে একটা ঘটনা ঘটেছে।
((আমার কথা আটকে দিয়ে আম্মু আবার বলল))
— কোথায় রাত কাটিয়েছিস…?
— মুন্সিরাস্তার সামনে যে বাড়ি আছে, সেখানে।
— কিন্তু কিভাবে সেই বাড়িতে প্রবেশ করেছিস ….?
(( কেমন হতভম্ব হয়ে আম্মি জিজ্ঞেস করতেছে))
— কিভাবে আবার,একজন বৃদ্ধ মহিলা এসে আমাদের দরজা খুলে দিয়েছেন। বৃদ্ধ মহিলার সাথে আমরা…
(( কথা শেষ না হতেই, সাথে সাথেই আম্মু বেহুশ হয়ে পড়েছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে আম্মিকে ধরাধরি করে ভিতরে নিয়ে গেলাম।
কিছুক্ষন পর আম্মির হুস পিরে আসে।এতক্ষনে আমাদের বাসায় মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে।
অবশেষে আমরা জানতে পারলাম, আমরা যে বাড়িতে রাত কাটিয়েছিলাম।
সে বাড়িতে কোন মানুষ থাকে না তিন বছর ধরে।
ওই বাড়িতে একজন বৃদ্ধ মহিলা ছিলো, কিছু ডাকাতরা বৃদ্ধ মহিলাকে মেরে বাড়ি থেকে সব টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।
সে তিন বছর আগে এই মহিলাটি মারা গেছে। এখন এই মহিলার আত্মা কবরস্থান থেকে লাশ তুলে খায়। অনেকে বলে, আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
তারপরের দিন এলাকার কিছু কবিরাজসহ গিয়ে ওই বাড়িটি ভেঙে ফেলা দেওয়া হয়। এবং বিভিন্ন তাবিজ দিয়ে সেই জায়গা বন্ধ করা হয়।
এরপর থেকে আর কখনো সেই পিশাচ বুড়িকে ওই জায়গায় দেখা যায়নি। এমন কথা আর শুনা যায়নি, যে কখনো কবরস্থান থেকে লাশ চুরি হয়েছে।
********** সমাপ্ত *********