অনেক দিন পর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে রিক। তার গ্রামের বাড়ি চট্রগ্রাম। সে ঢাকার এক প্রাইভেট কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। একমাত্র মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তবে তার মা থাকেন গ্রামে। রিকের যখন ৮ বছর বয়স তখন তার বাবা পরলোক গমন করেন। খুব কষ্ট করে তার মা তাকে বড় করেছেন।
রাত ১২ঃ০০ টা। বাসের টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষা করছে রিক বাসের জন্য। এখনও বাস কাউন্টারে প্রবেশ করে নি। টিকিট কাউন্টারে তেমন লোকজন নেই, তাছাড়াও এতো রাতে কেই বা থাকবে!! সে চেয়েছিল দিন থাকতেই বেরিয়ে পড়বে বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু অফিসের কাজের জন্য আর হল না। মেজাজ তার চরমে উঠে গেছে। মনে মনে নিজেকে অনেক বকাঝকা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে তার বাস চলে এলো। কাউন্টারের লোক রিককে বাস দেখিয়ে দিল। রিক বাসের সামনে যেতেই একটু দাঁড়িয়ে পড়লো। তার চোখ গেল বাসের নামের দিকে, সে একটু অবাক হল। কারণ, বাসটির নাম ছিল একটু অদ্ভুত রকমের। নামটি ছিল (নিঁঝুম এক্সপ্রেস)।
এরপর রিক কিছু একটা ভাবতে লাগলো। তার মনে হচ্ছিলো যে, সে এই বাসটিকে আগে কোথাও দেখেছে। কেমন যেন পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। যাই হোক, আর কিছু না ভেবে সে সেই বাসে উঠে পড়লো। বাসে উঠে সে দেখতে পেল খুব অন্ধকার, তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না শুধু যাত্রীদের ছায়া ছাড়া। তার কেমন জানি মনে হতে লাগলো যে, সবাই তার দিকে লক্ষ্য করে তাকিয়ে আছে। আর কিছু না ভেবে সে তার সিটে গিয়ে বসলো। কিন্তু একি তার সিট ভেজা কেন?? মনে হচ্ছে কেউ পুরো সিটটা ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। এরপর সে তার সিটে বসে পড়লো। এরই মধ্যে সে আবার খেয়াল করলো যে, বাসের সব যাত্রী তার দিকে লক্ষ্য করে তাকিয়ে আছে। সাত-পাঁচ না ভেবে সে তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়লো। বাস চলতে শুরু করলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১ ঘন্টা পর রিকের ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু একি!! তার সমস্ত শরীর ভিজে গেল কি করে।
মনে হচ্ছে এখনই সে পানি থেকে উঠে এলো। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না, সব কেমন জানি গুলিয়ে যেত লাগলো। সে আরো ঝটকানি খেল যখন সে দেখতে পেল বাসের সব যাত্রীর একই অবস্থা। কি হচ্ছে তার সাথে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। বাসটা কেমন অদ্ভুদ। এইসব চিন্তাভাবনা করতে করতে আবার সে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় ২ ঘন্টা পড় তার ঘুম ভেঙে যায়। বাস তখন যাত্রা পথে ঠিকভাবেই চলছিল। হঠাৎ তার চোখ যায় বাসের সেই যাত্রীদের উপর, এরপর সে যা দেখতে পেল তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একি দেখছে সে?? সে দেখছে যে, বাসের সব যাত্রীর শরীর বয়ে পানির ঢেউ এলিয়ে পড়ছে। যেন মনে হচ্ছে তাদের শরীর থেকে চামড়া খুলে খুলে যাচ্ছে। এবং সেই সব যাত্রীরা রিকের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভয়ে রিকের গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
সে নড়াচড়াও করতে পারছে না, মনে হয় কেউ তার শরীর বশ করে নিয়েছে। এরই মধ্যে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল, সে আগের চেয়ে আরো বেশি চমকে গেল। প্রথমবার বাসটিকে দেখার পর কেমন যেন পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছিল তার কাছে। কারণ, সেই বাসটি ছিল নিঁঝুম এক্সপ্রেস, যা গত দু মাস আগে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে চট্রগ্রাম যাওয়ার পথে দূর্ঘটনা হয় এবং বাসটি নদীতে পড়ে যায়। এই খবরটি পত্রিকায় বেরিয়ে ছিল অবশ্য, রিক খুব ভাল করেই খবরটা পড়েছিল। এরই মধ্যে রিক এসব কথা মনে করার পর ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে ভাবছে কি করে সম্ভব এটা!! এটা হতে পারে না। কিন্তু চোখের সামনে ঘটনা ঘটলে বিশ্বাস না করে তো আর কিছু করার নেই।
এরপর রিক এসব আর সহ্য না করতে পেরে তার সিটেই জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফেরার পর রিক নিজেকে চট্রগামের বাসস্ট্যান্ডে আবিষ্কার করলো, যেটা তার গন্তব্য স্থান ছিল। তার আশেপাশে অনেক লোকজন ভীর জমিয়ে রেখেছে। কিন্তু রিকের মাথায় কয়েকটি প্রশ্ন জমাট বাধলো, সে বাস থেকে কখনই বা নামলো?!! আর গত রাতে তার সাথে এসব কি ঘটেছিল?!! কেনই বা ঘটেছিল?!! কিন্তু আজ পর্যন্ত রিক সেসব ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পায় নি। এই ঘটনার পর থেকে রিক আর কখনও রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় নি।