খঞ্জরের রক্ত

খঞ্জরের রক্ত

তান্ত্রিকরা সাধারণত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে বা পুন্ন্য কাজ করে কিন্তু সৈয়দপুর গ্রামে এক লোভী

তান্ত্রিক ছিল যে কিনা সবসময় নিজস্বার্থ নিয়ে ভাবত। তার যাদুবিদ্যা, মন্ত্রবিদ্যা সব খারাপ কাজে লাগাত।

সৈয়দপুরে এক মায়াবী জঙ্গল আছে,, যার আসেপাশে কেউ যায় না। অথবা যে যায় তার কোনো না কোনো ক্ষতি অবশ্যই হয়।

তান্ত্রিকের মাথায় কুবুদ্ধি জেগে উঠল। সে ধারণা করতে লাগল, ঐ জঙ্গলে নিশ্চয় কোনো মায়াবী কিছু আছে।

সম্ভবত সেখানে এমন কিছু আছে যার শক্তি মানুষের চেয়েও বেশি। সে পরদিন জঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।

সেইরাতে সে হঠাৎ এক স্বপ্ন দেখে…যেটার পর থেকে জঙ্গলটি হয়ে উঠল এক অভিশপ্ত জঙ্গল।….
13 years later….

এই মুহূর্তে বাবার কেবিনে আদিল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।

হাতে কলম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে তার বাবার আসার অপেক্ষা করতেছে। তার বাবা কেবিনে ঢুকে ভ্রু কুঁচকিয়ে বললেন-
–কিরে তুই আজ হঠাৎ এখানে? সূর্য কোনদিকে উঠল? বেকার থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছিস বুঝি? ভালো হয়েছে এসেছিস,

আমার এতবড় কোম্পানিটা একা একা হেন্ডেল করতে ভালো লাগে না আর।
আদিল সোজা মূল পয়েন্টে এসে বলল-
–আব্বু,আমি এখানে কাজ করার জন্য আসিনি। আমি আর আরিয়ান ভাইয়া ভাবছি গ্রামের ঐ অভিশপ্ত জঙ্গলটাতে যাব।
–বিস্মিত হয়ে আবিরের বাবা বললেন-কি বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তো তোর?
–দেখেন আব্বু, এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকলে তো হবে না। আমাদের কিছু একটা করতে হবে

নাইলে গ্রামের মানুষদের ক্ষতি হতে থাকবে। আর এসব কিছুর দোষ আপনার উপর এসে পড়বে।

আজকেও মায়ের কাছে চেয়ারম্যানের কল আসছে। ওনি আম্মুকে অনেক কথা শুনাইছেন এ নিয়ে।

তাই আমি আর ভাইয়া ভেবে ফেলছি সেখানে যাব আর ঐ জঙ্গলের রহস্য উদঘাটন করব।
এভাবে আদিল অনেক বোঝানোর পর তার বাবা তাদের যেতে অনুমতি দেয়। সে বেরিয়ে আরিয়ানকে কল দিয়ে এসব কথা বলে।

কথা বলতে বলতে অফিস থেকে বের হতে যাবে এমন সময় খেয়াল না করে সে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।

মেয়েটির হাতে একটি টিফিন ছিল সেটা ছিটকে পড়ে। মুহূর্তেই টিফিনের খাবার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

আদিল মেয়েটিকে স্যরি বলতে যাবে তখন অফিসে কর্মরত এক ছেলে দূরে এসে মেয়েটিকে বকাঝকা করতে লাগল।

ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে আদিল বলল-
–এসবে ওনার কোনো দোষ নেই। আমিই ওনাকে খেয়াল করিনি। ওনি খাবারগুলো হয়ত আপনার জন্য আনছেন

আর আমার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। আসুন, আপনাদের আজকের লাঞ্চ একটা রেস্টুরেন্টে করায়।
এই বলে আদিল ওদের কোনো কথা বলতে না দিয়ে দুজনকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের সাথে ওদের পরিচয় হয়।

ছেলেটির নাম রিয়াদ। আর মেয়েটা রিয়াদের ঘরের পালিত মেয়ে, সাবরিনা। সে তার জন্য এই টাইমে প্রতিদিন খাবার নিয়ে আসে।

আরো কথা হল তাদের মাঝে। আদিল খেতে খেতে কেন আজ হঠাৎ অফিসে আসছে তা বর্ণনা দিয়ে বলল-
আমরা আগে আমাদের গ্রামের বাড়ি সৈয়দপুরে থাকতাম। সেখানে আব্বু একবার অনেক বড় এক ভিটা নিয়েছিলেন।

সেইভাগে একটা জঙ্গলও আছে। শোনা গেছে ঐ জঙ্গলে কেউ যায়না। আব্বু কিছু মানুষের মাধ্যমে একবার জঙ্গলের

গাছ কাটাতে পাঠিয়েছিলেন। এরপর থেকে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। যারা জঙ্গলটাতে ঢুকে তাদের কোনো না কোনো ক্ষতি হয়।

এখানে আসার পর শুনেছি, জঙ্গলের আশেপাশের মানুষেরও এখন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসবের জন্য গ্রামের চেয়ারম্যান

সাহেব আব্বুকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! আব্বুর উপর একদিন হয়ত বড় কোনো অভিযোগ এসে পড়বে।

তাই আমি আর ভাইয়া জঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাবতেছি। এটা আব্বুকে বলতে আসছিলাম। আমি চায় না গ্রামের কারো ক্ষতি হোক।…
এসব এতক্ষণ সাবরিনা আর রিয়াদ মনোযোগী শ্রোতার মত শুনে রইল। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় সাবরিনা আদিলকে বলে উঠল-
–ঐ অভিশপ্ত জঙ্গলের কথা আমি জানি।(ঠোটে তার এক রহস্যময় হাসি দেখা যায়)
এমন বলতেই চমকে গিয়ে আদিল বলল-
–কেমনে? আর কি জানেন?
–প্রতিউত্তরে সাবরিনা বলল- আমাকে আপনাদের সঙ্গি করতে হবে, আমাকে আপনাদের সাথে নিয়ে গেলেই বলব।
–ওকে, ঠিক আছে, নিব।
এরপর রিয়াদের অনুমতি নিয়ে আদিল সাবরিনাকেও সঙ্গী করে নেই। এতক্ষণে আদিলের বলায় আরিয়ানও প্যাকিং করে

রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসে। তারপর আদিল,আরিয়ান আর সাবরিনা বেরিয়ে পড়ে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে।…

মূলকাহিনী:-
বাসে উঠার পর আদিল সাবরিনাকে জিজ্ঞাসা করল,
–ঐখানে আমাদের সাথে যাওয়ার আপনার এত শখ কেন হয়ছে?? আর এখন তো আপনাকে আমাদের সাথে নিয়েও যাচ্ছি,,

এখন তো বলতে পারেন জঙ্গলটার সম্বন্ধে।
–হ্যা, বলুন না!! জঙ্গলে যাওয়ার আগে ওটার সম্বন্ধে তো জানতে হবে নাইলে অনেক বড় বিপদ এসে পড়বে।- সামনের সিটে বসা আরিয়ান বলল।
সাবরিনা বলতে শুরু করল-
–আমি আগে ঐ গ্রামে থাকতাম আমার মাসির সাথে। মাসি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ওনি আমাকে আমার বর্তমান বাবার হাতে তুলে দেন।

এরপর থেকে গ্রামে আর যাওয়া হয়নি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম আর যাওয়ার সুযোগ খুজছিলাম।

আর সে সুযোগটা আপনাদের মাধ্যমেই পেয়েছি। -এমন বলেই সাবরিনা এক শয়তানি হাসি হাসল।

এদিকে আরিয়ান আর আদিল চোখ বড় বড় করে তাকে দেখে আছে।
–তার মানে আপনি মিথ্যা বলেছেন আমাদের?? তাও গ্রামে যাওয়ার জন্য? – আদিল।
সাবরিনাকে বলতে না দিয়ে আরিয়ান বলল,,
–বোন, এটা কিন্তু তুমি ঠিক করোনি। আমরা আশায় ছিলাম জঙ্গলটার সম্বন্ধে অন্তত কিছু হলেও তো জানতে পাব!! আর তুমি…
–(থামিয়ে) আরে ভাইয়া শুনেন, আমি মিথ্যা বলিনি। আমার গ্রামের ঘটনা আমি জানবো না?? যখন গ্রামে থাকতাম তখনেরই তো ঘটনা এটা।
আরিয়ান আর আদিল আগ্রহ দেখালো সাবরিনার কথা শুনার। ও বলতে লাগল-
–মাসির কাছে শুনেছিলাম, ঐ জঙ্গলে কিছু জ্বীন আছে যারা এসব কাজ করে। আর তারা জঙ্গলে কেউ পা রাখলে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
–তাহলে এসব জ্বীনের কাজ!! -আদিল বলল।
–হুম, আমি ছোটবেলায় শুনেছিলাম যে, একটা তান্ত্রিক জঙ্গলটাতে যাওয়ার পর থেকে এসব শুরু হয়।

তান্ত্রিকটা হয়ত ওদের কোনো ক্ষতি করেছিল যার কারণে জ্বীনগুলো তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেই।

তখন জ্বীনগুলো কি যেন শর্ত দেই আর বলে ওটা পূরণ করতে না পারলে তাকে মেরে ফেলা হবে।

তান্ত্রিক জান বাঁচানোর জন্য রাজি হওয়ার নামে পালিয়ে যায়। তিনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে জঙ্গলে একটা তাবিজ ছুড়িয়ে ফেলে চলে আসে।

এরপর জ্বীনগুলো জঙ্গল থেকে বের হতে পারেনা। তান্ত্রিক ভাবছে সে শর্ত থেকে বেঁচে গেছে আর জ্বীনগুলো তার কিছুই করতে পারবে না।

কিন্তু সে ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যায়। আপনার বাবা জঙ্গলটিতে যে মানুষগুলো পাঠিয়েছিলেন,

হয়ত তাদের মধ্যে কেউ একজন সে তাবিজটা উদ্ধার করছে। আর মুক্ত হওয়ার পর হয়ত জ্বীনগুলো প্রতিশোধ নিচ্ছে বা তান্ত্রিকটিকে খুঁজতেছে।
–তাহলে যা হচ্ছে জঙ্গলটিতে সবই ঐ তান্ত্রিকের কারণে(আদিল চিন্তায় মগ্ন হয়ে বলল)।
আদিলের একটু সন্দেহ হয়, সাবরিনা এতকিছু কি করে জানে এই ভেবে। পরক্ষণে সে সন্দেহ ভুলে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল-
–আচ্ছা আপনি তান্ত্রিকটিকে চিনবেন?
–সাবরিনা বলল- না, তবে তিনি যেই ঘরে থাকতেন সে ঘরটা আমার চেনা। জঙ্গলটা তো অনেক আগে থেকেই ভৌতিক,, তান্ত্রিকটা গ্রামে তখন নতুন আসছিল। আমাদের গ্রামের নতুন আর প্রথম তান্ত্রিক বিধায় আমরা সবাই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
–আপনি কি আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন? আপনি শুধু ঘরটা চিনিয়ে দিবেন।-আদিল বলল।
–হুম, অবশ্যই।
–আপনি এত্তসব কথা কি করে জানেন?
–আরে আমি তো তখন ছোট ছিলাম। আমার মাসি আমাকে যা বলছেন তাই বললাম।
–তাহলে আপনার মাসি ছাড়া এসব কথা আর কেউ জানত না।
–মনে হয় না।
এরপর থেকে তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয়নি। বাসে উঠা থেকে শুরু করে পুরো যাত্রায় আদিলের নজর সাবরিনার উপরেই আটকে ছিল।

হয়ত সে সাবরিনার মত সুন্দরি আর কখনো দেখেনি। সে যেমন কোনো এক পরী। বাস থামার পর আদিল ঘুমন্ত চোখ খুললে

নিজেকে সে সাবরিনার কাঁধে আবিষ্কার করে। সে কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে। এ দেখে সাবরিনা হেসে হেসে বলল-
–মুখ লুকানোর কিছু নেই। আসলে আপনার মত এক বীরপুরুষ আমার কাঁধে মাথা রাখছে এটা আমার জন্য অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার।
–এখানে সৌভাগ্যের কি আছে? আর আমি কোনো বীরপুরুষ না। -আদিল বলল।
–এভাবে মনে সাহস রেখে একটা ভৌতিক জঙ্গলে যাওয়ার কথা একমাত্র বীরপুরুষরাই ভাবতে পারে। আর আপনার মত বীরপুরুষকে কে না পেতে চায়!

-সাবরিনা বলল।
–তাই বুঝি? তাহলে আপনিও কি…
–হুম, অবশ্যই। – সাবরিনা বলল।
–ঠিক আছে, জঙ্গলের মিশন শেষ হওয়ার পর থেকে এই বীরপুরুষ আপনার। – আদিল মুচকি হাসি নিয়ে বলল।
এই শুনে সাবরিনা একটু লজ্জা পেয়ে যায়। তারা এতক্ষণে তাদের বাড়ি চলে আসছে। ঘরটা অপরিষ্কার হয়ে আছে।

আদিলরা ফ্রেশ হয়ে ঘরটা পরিষ্কার করতে লাগল। এতক্ষণে আদিল আর সাবরিনার অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে।

তারা সারারাত গল্প করে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়ে। পরদিন তারা তান্ত্রিকের খুঁজে বের হয়।

গ্রামের বেশির ভাগ জায়গায় তারা ঘুরে দেখেছে,,কিন্তু ঐ তান্ত্রিকের ঘরটা খুঁজে পায়না কারণ গ্রামটা এই কয়বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

কয়েকদিন পর্যন্ত তারা তান্ত্রিকের ঘর খুঁজে ব্যর্থ হয়। একদিন গ্রামে এক মেলা বসে,,সাবরিনা আদিল আর আরিয়ান সেখানে যায়।

তারা অনেক ঘুরাফেরার পর গ্রামের একদম লাস্ট প্রান্তে চলে আসে। সাবরিনা আদিলকে একটা ঘরের দিকে আঙুল দেখায়

যেটাতে চারিদিকে অনেক তাবিজ। সাবরিনা বলল- গ্রামে এই ধরণের তাবিজ বাধা ঘর তান্ত্রিকেরই হতে পারে। চলুন সেখানে।

অবশেষে তারা ঘরটির সামনে এসে দাঁড়ায়। সাবরিনা ঘরটিতে ঢুকতে অমত জানায় তাই তাকে বাইরে রেখে আদিলরা ভেতরে ঢুকে পড়ে।

শুরুতে তারা বৃদ্ধ এক লোককে শয়নে নিমজ্জিত দেখে। পাশে তার স্ত্রী। দেখতে ওনাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে।

ওনার মাধ্যমে আদিলরা জানতে পায়..এটিই সে তান্ত্রিকের ঘর।…আদিলরা কেন এসেছে তা তান্ত্রিকের স্ত্রীকে বোঝায়।

একটু পর তান্ত্রিক ঘুম থেকে জেগে উঠলে ওনার স্ত্রী আদিলদের কথা বলেন।
তান্ত্রিক বাইরের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে দেখে আছে আর হাঁপাচ্ছে। আদিলের ডাকে তার হুশ ফিরলে আদিল বলল-
–আপনার কারণে আজ গ্রামবাসীদের কত কষ্টে ভুগতে হচ্ছে জানেন? আপনি এমন কি করেছিলেন যার কারণে জঙ্গলটার

জ্বীনগুলো আপনাকে মারার হুমকি দিছিল? আর আপনি কেন জঙ্গলে তাবিজ ফেলছিলেন?

পরিশেষ-
রানীর মেয়ে বড় হলে ওকে আমার স্ত্রী এসব ঘটনা বলার পর সে এখানে থাকতে অস্বীকার করে।

আমরা স্বামী স্ত্রী দুজন অসুস্থ হয়ে পড়তেছিলাম তাই ওকে আমার স্ত্রী এক ভদ্রলোকের কাছে সপে দেই।

ঐ রানীকে আজাদ কর তোমরা, তারপরেই সে তার অভিশাপ ফিরে নিবে। আর কোনো পরীকে বা জ্বীনকে আমার কথা বলিও না,

নাইলে ওরা আমাকে জীবন্ত রাখবে না।…
–এসব কথা আপনি, আপনার স্ত্রী আর রানীর মেয়ে ছাড়া আর কেউ জানে? -আদিল
–না, বাবা। আর কাউকে বলিনি।
এটা শুনে আদিল আর আরিয়ান পুরাই টাসকি খেয়ে গেল। ওরা হয়ত ভাবছে,,সাবরিনা কোত্থেকে এসব কথা জানে!! আর তার মাসি মানে তান্ত্রিকের স্ত্রী…
ওরা একে অপরকে চাওয়াচাওয়ি করে বাইরে গেলে দেখে সাবরিনা নেই। ওরা আবার ভেতরে ঢুকে চিন্তিত হয়ে।
তান্ত্রিকের পাশে আসতেই আদিল হঠাৎ শরীরে এক ধাক্কা অনুভব করে। মাথা ঝিমঝিম করে উঠে তার।

মুহূর্তেই আদিল রাগে গজগজ করতে করতে খাটটা একহাতে তুলে ফেলে দেই। বৃদ্ধ তান্ত্রিক অন্যদিকে গিয়ে পড়ে।

এদিকে আদিল হাত দিয়েই মাটি কাটা শুরু করে, অবশেষে পেয়ে যায় সে মায়াবী খঞ্জরটি। রক্তগুলো পরীর রক্ত বিধায় এখনো তাজা।

আদিল গিয়ে তান্ত্রিকের গলা টিপে ধরে বলে,,, তোর কর্মের শাস্তি তোর পেতেই হবে, তোকে মরতেই হবে। এই বলে গলা আরো জোড়ে টিপে ধরল।

আরিয়ান তাকে ছুড়াতে পারছে না। তান্ত্রিক শ্বাস ত্যাগ করলে নাক দিয়ে রক্ত শুকে খঞ্জরটি নিয়ে আদিল বেরিয়ে পড়ে।

আরিয়ান পিছু থেকে তাকে অনেক ডাকে কিন্তু সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। তাই আরিয়ান তাকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু গেল।

এদিকে সাবরিনাকেও কোনোদিকে দেখতে পাচ্ছে না আরিয়ান। অবশেষে আদিল এক গোহায় ঢুকে পড়ে।

গোহায় এসে রানীকে আজাদ করার পর আদিলের হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। সে চোখ খুললে সামনে দেখতে পাই এক পরীকে।

চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে সে নিজেকে একটা গুহায় আবিষ্কার করে। আদিল অবাক হয়ে আরিয়ানের কাছে জিজ্ঞাসা করল-
–ভাইয়া আমি এ গুহায় কিভাবে এলাম?(যেন তার বিস্ময় কাটছে না)
–আরে তোকে ফলো করেই তো আমি এখানে পৌঁছতে পারছি। -আরিয়ান বলল।
ঠিক এ সময় আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে কে যেন বলে উঠল-
–আপনি আদিলকে না আমাকে অনুসরণ করেই এখানে এসেছেন।
আদিল আর আরিয়ান তড়িৎগতিতে পিছু ফিরল। তারা ফিরে দেখতে পেল এক ডানাওয়ালা পরীকে। এটা আর কেউ নয়, এটা সাবরিনা।

আদিল আর আরিয়ানের যেন ভাবতেই অবাক লাগে যে, তারা এত সময় ধরে একটা পরীর সাথে ছিল। সাবরিনা উড়ে এসে ওদের বলল-
–আমি একটা পরীর মেয়ে। আপনারা যাকে উদ্ধার করতে এসেছেন আমি তারই মেয়ে। আমি সেই মেয়ে যাকে তান্ত্রিক ছোটবেলায় অপহরণ করেছিল।

কিন্তু আমি এতই ছোট ছিলাম যে, এসব বুঝতাম না তখন। আমি জানতাম তান্ত্রিক আমাকে দেখে চিনে ফেলবে।

তাই আমি তার ঘরে যায়নি। আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পেলাম খঞ্জরটা সে মাটির নিচে রেখেছিল।

জানার পর আমি আদিলের শরীরে প্রবেশ করে ফেলি। কারণ সে একটা খারাপ তান্ত্রিক, আমাকে দেখলে সতর্ক হয়ে যাবে।

তাকে মেরে আমি তার কর্মের ফল দিলাম। আর আমাকে ঐ খঞ্জরটার রক্তই এনেছে আমার মায়ের কাছে।

আদিল, আমি এতক্ষণ তোমার শরীরে ছিলাম। তাই তুমি বুঝতে পাওনি এখানে কিভাবে এসেছ।..
সাবরিনা ওদের এসব কথা বুঝিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। একে একে অনেক জ্বীন আর

পরী গোহায় এসে পড়ে রানীর রক্তের গন্ধ পেয়ে। সাথে উড়ে আসে দুটা উড়ন্ত ডানা। সেগুলো রানীর পিঠে এসে অবস্থান করে।

পরী আবার নিজ শক্তি ফিরে পায়। এদিকে গুহার অন্যদিকে প্রবেশ করে সেই খারাপ জ্বীন। সে এসব আড়াল থেকে দেখে রাগে ফুঁসতে থাকে।

সে জানে তাকে ওরা এমনিতেও মেরে ফেলবে। মরবেই যখন তার শত্রুকে মেরেই সে মরবে।

এই ভেবে সে আদিলের হাত থেকে ইশারায় খঞ্জরটা নিয়ে আদিলের পিঠে ঢুকিয়ে দেয়। আদিল সজোড়ে এক আর্তনাদ করে মাটিতে পড়ে যায়।

সবাই পেছনে ফিরে তার চিৎকারে। সাবরিনা ‘আদিল’ বলে চিৎকার দিয়ে উড়ে এসে তার তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

খারাপ জ্বীনটি তার শত্রুকে মেরে অট্টহাসিতে মেতে উঠে। অন্যরা রাগান্বিত হয়ে সবাই একত্রে জ্বীনটিকে মেরে ভষম করে দেই।

এদিকে সাবরিনা আর আরিয়ান, আদিলের জন্য কাঁদতে থাকে। সাবরিনার বাবা এসে সাবরিনার কাঁদে হাত রেখে বলেন-
–মা, তুই চাইলে তোর ভালোবাসাকে জ্বীনরুপে ফিরে পেতে পারিস।
এই শুনে সাবরিনা কান্না বন্ধ করে তার বাবার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়। রাজা তার মেয়ের চেহারা দেখেই সবকিছু বুঝে গেছে।
2 years later…..
আরিয়ান তার বউ আর ফেমিলিকে নিয়ে সৈয়দপুর গ্রামে বেড়াতে আসে। ওর বউয়ের অনেক ইচ্ছা, গ্রামের জঙ্গলটা একবার দেখার।

তাই সে সবাইকে নিয়ে জঙ্গলে যায়। জঙ্গলটা অনেক সুন্দর। যত ভেতরে যায়, ততই সুন্দর।

জঙ্গলের সামনে থেকে জঙ্গলটা তেমন বড় মনে হয় না। কিন্তু ভেতরে ঢুকেই তার গভীরতা বুঝা যাচ্ছে।

জঙ্গলের একদম ভেতরে গিয়ে তাদের মনে হল..এটা জঙ্গল নয়, পরীদের জগৎ। উপরে অনেকগুলো পরী উড়তেছে।

আর তাদের দেখে উপর থেকে ফুলের বর্ষণ করে স্বাগতম জানাচ্ছে পরীরা। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল-
–আব্বু আমি এখন বেকার নয়, এই পুরো জগতটা আমি একাই পরিচালনা করি। আফটার অল, এখন এই জগতের রাজা আমি।
তারা সবাই পেছনে ফিরে দেখতে পেল জ্বীনরুপী আদিলকে। সে এক অপরিচিত হাসি হাসছে। সকলের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল আদিলকে দেখে।

কোথা থেকে যেন সাবরিনা উড়ে এসে আদিলের পাশে দাঁড়িয়ে মুখে এক রহস্যময় হাসি নিয়ে বলল-
–আর আমি এই রাজ্যের রানী।…
___________ সমাপ্ত ____________

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত