অভিশপ্ত রান্নাঘর

অভিশপ্ত রান্নাঘর

কফি খাচ্ছিলাম অফিস ক্যান্টিনে। হুট করে ফয়সাল ফোন করে বলল, কিরে কেমন আছিস? রতনের বিয়ের পর তো কথা বলাও ছেড়ে দিয়েছিস। আমি হাসলাম। বললাম, তুই খুব কথা বলেছিস মনে হয়? যাই হোক, কি অবস্থা তোর? ও বলল, কি অবস্থা পরে শুনিস। অনেকদিন দেখা হয় না তোর সাথে। সন্ধ্যায় তোর ফ্লাটে আসছি আমি। আমি সরাসরি না করে দিলাম। বললাম, এটা কোনভাবেই সম্ভব না। এর চেয়ে বরং আমি তোর বাসায় আসছি। ও বলল, না না তুই আমার কথা শোন।

তোর বাসার একটু পরেই যে কাচ্চির দোকানটা আছে ওটাতে কাচ্চি খেয়ে তারপর জোস একটা পার্টি হবে। আমি বললাম, সেটাতো তোর বাসায় গেলেও হবে। আমার বাসাতেই করতে হবে এর কোন মানে নেই। ও তখন ধীর গলায় বললো, তোর বাসায় আসতে দিবিনা এই তো? আমার হাসি পেলো এটা শুনে। যদিও আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে কেউ পাত্তা পায় নি তবুও ওকে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে আয় তবে হয় পার্টি করতে হবে নয়তো ঘুমোতে হবে। দুটোর একটা। রাজি তো? ও বিজয়ের হাসি নিয়ে বলল, একদম রাজি। যদিও আমি জানি যে আজ রাতে হয় ঘুম হচ্ছে না নয়তো ফোনের টাকা থাকছে না। তবুও কি আর করার।

রাতে কাচ্চি খেয়ে ফয়সাল আর আমি বাসায় আসলাম। দুজনে ফ্রেশ হতেই ফয়সাল আমাকে ওর ফোন থেকে একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল, দেখতো এই মেয়েটা কেমন? তাকিয়ে দেখলাম রতনের বিয়েতে একটা মেয়ের ছবি তুলে আমাকে দেখাচ্ছে সে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ভালই তো। তো কতদুর এগুলো তোর প্রেমকথা? ও বলল, অনেক কষ্টে পটিয়েছি। মেয়ে তো এখনো পড়াশুনা করে। আমি বললাম, বাচ্চাকাচ্চা দেখে প্রেম করছিস দেখছি। নিজের বয়স দেখেছিস।

তুই যখন প্রাইমারী শেষ করেছিস এই মেয়ে তখন স্লিপ বোর্ডে ক,খ,গ,ঘ লিখা শিখতো। ও হেসে বলল, বিয়ে নিজের থেকে একটু কম বয়সের মেয়েদেরই করতে হয়। অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, মেয়েদের!! কতগুলো বিয়ে করবি ভাই? ও হেসে আর কিছু বলল না। হঠাৎ ও বলল, দোস্ত আজকে ক্লান্ত লাগছে রে। ভাল লাগছে না। চল ঘুমিয়ে পরি। আমি কিছু না বলে বিছানায় চলে গেলাম। ও পাশে এসে শুয়ে পরলো। শুয়ে থাকার আধঘন্টার মতো হবে, আমি ভেবেছি ও ঘুমিয়ে পরেছে ঠিক তখনি ও মাথা উঠিয়ে বলল, কিরে কতোক্ষন জেগে থাকবি? ঘুমা বেটা। আমি কিছু না বলে ফোনটা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। দশ পনেরো মিনিট পর ফয়সাল আমাকে আস্তে আস্তে ডাকছে। আমি ঘুমের ভান করে চুপচাপ শুয়ে আছি। ও তখন বিছানা থেকে উঠলো। ঘরের বাইরে বেরিয়ে খুব সুক্ষভাবে দরজাটা ভিড়িয়ে দিল। ওর এই কাহিনি দেখে আমার হাসি পেলো। ঠিক একটা কারনেই সবাই কেনো জানি এখানে আসে।

ফয়সাল রুম থেকে বেরিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা হলো। আমিও ওকে হাতেনাতে ধরার জন্য চুপচাপ না ঘুমিয়ে শুয়ে আছি। অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছি কখন একটু ঝগড়া করার চেচাঁমেচি শুনতে পাবো। অনেক ধর্যের অবসান ঘটিয়ে একটু পরে বাইরে থেকে ফয়সালের গলার স্বর শোনা গেলো। তখনি বাইরে বেরিয়ে দেখি আওয়াজটা রান্নাঘর থেকে আসছে।

একপা দুপা করে রান্নাঘরের দরজার বাইরে এগিয়ে যাচ্ছি। দরজার বাইরে দাড়িয়ে তুমুল ঝগড়া শুনছি আমি। ভেতর থেকে ফোনটা কেটে দিয়ে বাইরে বের হতেই আমাকে দেখে ও থমকে দাড়ায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, তুই ঘুমাস নি? আমি চুপচাপ শুধু তাকিয়ে আছি। সেও মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। রুমের দিকে পা বারিয়ে বললাম, এটার কি কাহিনি? ও আমার সাথে আসতে আসতে বললো, মেয়েটাকে অনেক মনে ধরেছে রে। অনেক ভালবেসে ফেলেছি। তাই ভাবছিলাম এই রান্নাঘরে কথা বলে যদি আর সবার মতো আমিও তাকে নিজের করে পাই। এজন্যই এলাম। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে রুমে এসে শুয়ে পরলাম

। পাশে ও দাড়িয়ে আছে দেখে বললাম, তুই জানিস না এই রান্নাঘরে কথা বলে যতগুলো প্রেম সফল হয়েছে তার চেয়ে কম হলেও কিছু প্রেম এর সমাপ্তিও ঘটেছে। আর যে হারে তর্ক করছিস মেয়ের সাথে তাতে তো এটাও উড়াল দিবে মনে হচ্ছে। এটা শুনে ও বলল, এভাবে বলিস না আমি বাঁচতে পারবো না এরকম হলে। মৃদু হেসে বললাম, পারবি পারবি। এর আগের কতগুলো মেয়ে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তারপরও যখন বেঁচে আছিস তো এবারও পারবি। আর তুই যে ধরনের ছেচড়া তাতে তো বোঝাই যাচ্ছে সামনে কি হতে যাচ্ছে। ও উদাস মনে বলল, এবারেরটায় সত্যি আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আমি একটা ঝাড়ি মেরে বললাম, তো এভাবে ঝগড়া করছিস কেন? ভালভাবে কথা বললেই তো আর ভেগে যায় না। এটা শুনে ও মোবাইলে নাম্বার বের করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলো।

আমি মুচকি হেসে পুরনো কথাগুলো মনে করছি। ভার্সিটি পড়াকালীন রতন আর আমি এই ফ্লাটেই থাকতাম। ওর গার্লফ্রেন্ড ছিল আর প্রথম প্রথম আমাদের সামনে কথা বলতে অনেক লজ্জা পেতো ও। এক রুমের মধ্যে ও আর আমি থাকলেও ও গার্লফ্রেন্ডের কথা বলার জন্য বাইরে যেতো। বাইরে যেয়ে ডাইনিং এ কথা বলতে পারতো না কারন সেখানে বড় ভাইরা খাওয়া করে আর একজন পাশেই থাকে। টয়লেটের ভেতরেও কথা বলতে পারতো না আমরা এসব নিয়ে অনেক হাসাহাসি করবো বলে। তাই লজ্জা ভুলে কথা বলার জন্য সে বেছে নিল রান্নাঘরটাকে। আর তারপর তো স্বাচ্ছন্দে রাতের আধারে রান্নাঘরে চলতে থাকলো তাদের প্রেমকথা।

তুষার আসলো একদিন আমাদের ফ্লাটে। এসেই রতনকে খুঁজলে আমি তাকে বসতে বলি। ওকে বলি রতন এখন ব্যস্ত আছে, কিছুক্ষন বস ও আসছে। ও তখন আমার পাশে বসে বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো। ওদিকে রতন তখন রান্নাঘরে। এক পর্যায়ে ও বললো, কই ও? আর কতোক্ষন লাগবে? আমি তখন ওকে একটু মজা করে বলি, ও আসলে রান্নাঘরে আছে। আমাদের বাসার রান্নাঘরের একটা বৈশিষ্ট্য হল, এ রান্নাঘরে কেউ কারও সাথে ভাল সম্পর্ক করার উদ্দেশ্যে কথা বললে তার সাথে সম্পর্ক অনেক ভাল হয়ে যায়। এমনকি পরবর্তিতে তারা সুখে শান্তিতে জিবনযাপন করে। এটা শুনে তুষার বলল, হুর, আমাকে ঢপ দিচ্ছিস তাই না? আমি মুখ ফিরিয়ে বললাম, আমার আর কাজ আছে নাকি যে তোকে ঢপ দিতে যাবো?

বিশ্বাস করার হলে কর নাহলে চুপচাপ বসে থাক। আর ঠিক তখনি রতন ওর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে সুখনিশ্রিত কথা বলে বিদায় জানাতে জানাতে ঘরে আসলো। তুষার দেখছি তাকিয়ে আছে রতনের দিকে। আমার দিকে তাকিয়ে রতনকে বললো, কিরে মামা, তোর গার্লফ্রেন্ড আছে বলিস নিতো? রতন লজ্জা পেলেও বলল, এটা কি জানানোর মতো কথা বল? ওমনি তুষার বলল, চল আজ তোকে তাহলে পার্টি দিতে হবে। রতন একটু চুপ থেকে বললো, চল আজ সত্যিই পার্টি দিবো। কারন আজ আমার একটা ইচ্ছা পুরন হয়েছে। তুষার তখন আমার দিকে তাকালো। আমি এমন একটা ভাব নিলাম যে রান্নাঘরের ব্যপারটা ও না বিশ্বাস করলে আমার কিছু করার নেই। তবে ওর চোখ দেখে বুঝলাম ও খানিকটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমি মনে মনে মুচকি হেসে চলেছি এসব ভেবেই।তারপর তুষারসহ রতনের দেওয়া পার্টিতে ভুরিভোজের জন্য গেলাম।

দুদিন পেরিয়ে গেলে এক সন্ধায় তুষার আসলো আমাদের ফ্লাটে। রতন বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে গেছে কাউন্টারে। তুষার এসে পাশে বসে বলল, তুই যা বলেছিলি তা সত্যি তো নাকি? আমি কিছু না বলে বিরক্তি চোখে তার দিকে তাকালাম। ও তখন বললো, আচ্ছা বুঝলাম তুই ঠিক বলছিস। তবে আজ কি আমায় একটু তোদের রান্নাঘরে কথা বলতে দিবি? তোর উপর বিশ্বাস রেখে একজন কে প্রপোজ করতে যাচ্ছি, বুঝিস কিন্তু। আমি হাসলাম এটা শুনে। ওর ইয়ারফোন টা নিয়ে বললাম, ফোন কানে নিয়ে কথা বলিস, যাহ। ও একটু হেসে চলে গেলে আমি বললাম, ওল দ্যা বেষ্ট। প্রায় সতেরো মিনিট পরে ও দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে। ওর দৌড়ের ধাক্কা সামলিয়ে আমি বললাম, ওই কি হইছে? কেঙ্গারুর মতো লাফাচ্ছিস কেন? ও বলল, মিনু আমার প্রপোজে রাজি হইছে মামা বলে আবারও জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে ছাড়িয়ে বললাম, আজ তবে তোকে পার্টি দিতে হবে। ও খুশি মনে বললো, কি খাবি শুধু বল? তারপর রতন আসলে ওকে নিয়ে বাইরে এক রেষ্টুরেন্টে গিয়ে পুরোপুরি খেয়ে বাসায় চলে আসলাম।

এরপর একদিন আমি বাইরে থেকে বাসায় এসে দেখি রান্নাঘরে কে যেনো কথা বলছে। ভাবলাম রতন হবে। কিন্তু তখনি রুমে এসে দেখলাম, রতন আর তুষার কম্পিউটারে মুভি দেখছে। আমি রতনকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে তুই এখানে তো রান্নাঘরে কে? রতন মুচকি হেসে বলল, শামীম আসছে আজকে। তুষার বললো, আমার থেকে সবটা শোনার পরেই নাকি সেও একি আবদার করে। শামীমের সাথে খুব একটা কথা হয় না ভার্সিটিতে শুধু ওই হায় হ্যালো আরকি। তবে একটু পরে সেও খুশিমনে এসে জানালো, সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না যে রিংকু রাজি হয়েছে। এরপর আর কি। সেদিনও পার্টি হলো তবে এরপর আমাদের ফ্লাট বিখ্যাত হয়ে গেলো। এসব জিনিসের ঢোল পেটাতে কি আর লোক ভাড়া করতে হয় নাকি? আপনা আপনি ছড়িয়ে গেলো। সবাই এখন এখানে আসে প্রেমের উদ্দেশ্যে। খনিকের ভালবাসা পেয়ে সবাই আজ নিজেকে হারিয়ে খুশিতে মত্ত।

ডিপার্টমেন্টে এখন আমাদের থেকে আমাদের ফ্লাটের রান্নাঘর অনেক বিখ্যাত। এর সুযোগটাও রতন আর আমি নিতে ছাড়িনি। কেউ আসলে সুন্দর মতো হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হতো যাতে লিখা ছিলো, তিনবেলা ভরপুর খাওয়া দাওয়া আর সাথে দুটো এসাইনমেন্ট করে দিতে পারলেই এই সুযোগ পাওয়া যাবে। মানুষের স্পৃহা আর চাহিদা দেখে আমরা অবাক। বড় ভাইরাও এসে এসাইনমেন্ট করে রান্নাঘরে কথা বলতো। আমি মাঝে মাঝে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি যে আসলেই সেরকম কোন বৈশিষ্ট্য আছে কিনা। তবে যতবার গিয়েছি, বুয়ার পদচিন্হ আর পঁচে যাওয়া আলু পিয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধ ছাড়া কিছু পাই নি। তবুও কি করে যে এসব হতো এসব নিয়ে ভাবতে গেলে মাথা কাজ করতো না। রতনকে সেদিনের তুষারকে যে কথা বলেছি তা খুলে বললাম। এটা শুনে ও হাসতে হাসতে শেষ। তবে একটা সময় আমরাও মেনে নিতে শুরু করলাম যে আসলেই মনে হয় রান্নাঘরের কোন কিছু সেরকম গুন অবশ্যই আছে।

ডিপার্টমেন্টে একদিন এক মেয়ে একটা বিষয় দেখিয়ে বললো, ভাইয়া আপনার কাছে কি এই বইয়ের কোন নোট আছে? আসলে আমি ক্লাস করিনি কিছু তাই বুঝতে পারছি না। আমি তাকিয়ে বললাম, হুম আছে তবে বাসায়। এখানে নেই। ও তখন বললো, সমস্যা নেই ভাইয়া, কালকে দিলেও হবে। আমি আচ্ছা বলে চলে আসতেই মেয়েটি বললো, ভাইয়া আপনার নাম্বারটা কি একটু দেয়া যাবে? তা নাহলে কাল আপনাকে খুঁজে পাবো না। আমি নাম্বারটা দিয়েই চলে আসি। পরেরদিন ভার্সিটিতে ঢুকতেই মেয়েটার ফোন চলে আসলো। ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো, ভাইয়া আমি আনিকা। আপনি কি নোটস গুলো নিয়ে এসেছেন? আমি একটু থেমে বললাম, ও তোমার নাম আনিকা। আচ্ছা। হুম নিয়ে এসেছি নোটস গুলো।

তুমি কোথায় আছো? ওপাশ থেকে আনিকা বললো, ভাইয়া আমি দেখতে পেয়েছি আপনাকে। আপনি ওখানেই থাকেন আমি আসছি। এটা বলেই ফোন কেটে দিলো। একটু পরে ও আসলে আমি তাকে নোটস গুলো দিয়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি। তখনই কিছু বন্ধু এসে বললো, আমাদের মেলা পার্টি খাইছোস। তলে তলে তুইও যে এতোদুর আসবি তাতো ভাবিই নি। মেয়ে তো জোস পটিয়েছো। এবার চল, আজ তুই পার্টি দিবি। আমরাতো ভাবতেই পারিনি যার বাসায় এরকম রান্নাঘর আছে তার আর কি লাগে মেয়ে পটাতে? এসব শুনে আমি শুধু এটুকু বললাম, তার সাথে কালকেই আমার পরিচয়। আমার কিছু নোটসের জন্য ও বলেছিলো তাই আজ দিয়ে দিলাম। একটুতেই এতো উল্টোপাল্টা ভাবা যাবে না তো। তখনি এক বন্ধু বলল, তাহলে কি আমি চেষ্টা করে দেখবো? এটা বলতেই সবাই হেসে উঠলো।

আমিও হেসে বললাম, দেখ চেষ্টা করে আমার কোন সমস্যা নেই। সেদিন কোনভাবে এদের থেকে পার পেয়েছিলাম। দিন চলে যাচ্ছে। বন্ধুরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আনিকা কে পটানোর। কিন্তু আনিকা কেন জানি আমার সাথে বেশি চলাফেরা করছে। পড়া বুঝিয়ে নেওয়া, ফোনে কথা বলা, যত্ন নেওয়া এসব দিয়েই অনেক বেশি তার সাথে জড়িয়ে গেছি আমি। নিজের অজান্তেই তার প্রতি একটা অনুভুতি তৈরী হয়েছে আমার। এটা কি ভালবাসা? নিজের মধ্যেই যখন এসব ভাবছিলাম তখনি রতন আমার ফোনটাই আমাকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে যা রান্নাঘরে গিয়ে বলে দে মনের কথাগুলো। এভাবে বিমর্ষ লাগছে অনেক। কিছু না ভেবেই বললাম, রাজি হবে তো? যদি না করে দেয় তাহলে তার সামনে দাঁড়াবো কোন মুখে বলতো? রতন হেসে বললো, একবার এই রান্নাঘরের জাদুটা নিজের ওপর কাজে লাগিয়ে দেখ না কি হয়। আর সমস্যা নেই, আমিতো আছি। সব কিছু ভালই হবে।

রান্নাঘরে ঢুকে নিজেকে অনেক অস্বস্তি লাগলেও আনিকা কে ফোনটা করলাম। রিসিভ করে ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই আমি বললাম, কেমন আছো? আনিকা বললো, এইতো মামুন ভাই, আছি কোনোরকম। আপনি কেমন আছেন? ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়েই বললাম, তোমায় একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম আমি। একটু হেসে ও বলল, শুধুই কি একটা কথাই বলবেন? আমি একটু সময় নিয়ে বলি, জানিনা এসব বলা আমার উচিৎ কিনা, তুমি আমাকে এরকমভাবে ভেবেছো কিনা, কথাটা বলার পর হয়তো তুমি অনেক খারাপও ভাবতে পারো তবুও তোমার জন্য জমানো অনুভুতিগুলো থেকে বলছি, ভালবাসি তোমাকে। পাশে থেকে সারাটাজিবন কাটাবে কি আমার সাথে? ওপাশ থেকে কিছুক্ষন চুপ থেকে ও বললো, মামুন ভাই, রান্নাঘর থেকে ফোন করেছেন নিশ্চয়ই? একটু হেসে আবারও বললো, আপনি কি অসুস্থ? কি যাতা বলছেন এসব বলেই ফোনটা কেটে দিলো সে। আমি আবার ফোন দিলে সে ফোন বন্ধ করে দেয়। একটু দেরীতে হলেও বুঝলাম ও আমাকে গ্রহন করলো না। কিন্তু কেনো? সেই তো শুরু করেছিল সবকিছু। একটা মেয়ের কথা বলা, যত্ন নেওয়া থেকে কি আমি বুঝতে পারি না কিছুই?

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে রুমে আসতেই রতন আমার দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলো সবকিছু। সেদিন ও আর আমাকে কিছু বলেনি। তবে পরে শুনেছিলাম, আমার চোখে নাকি পানি চলে এসেছিলো। সবাই যখন ব্যাপারটা জানতে পারে তখন কেমন যেনো বদলে যায় অনেক কিছু। এরপর আর এসব কিছুই হতো না। যারা ভাল কিছুর জন্য আসতো তারাও নিরাশ হয়ে ফিরতো। বন্ধুগুলো কেমন যেনো উথাল পাতাল ঢেউয়ের ন্যায় ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। অথচ কিছুদিন আগেই এই রান্নাঘর তাদের কতো আনন্দের ছিলো। এখন এখানে এসে কথা বললে ভাল সম্পর্কটা বিগড়ে যায়। এমনকি রতনও তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ভাল থাকতে পারে না। অথচ এরা দুজনি দুজনকে ছাড়া কখনও ভাবতে পারে না।

নিজের বিষন্ন মন নিয়ে যখন আমি ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরছি তখন আনিকাকে দেখি সাধারন ভাবেই জিবন পার করছে। ক্যাম্পাসে বসে ছিলাম একদিন। আনিকা পাশে এসে বললো, আপনি কি আমার সাথে আর কথা বলবেন না? ওর দিকে তাকিয়ে রাগ হলো একটু। রাগটা নামিয়ে বললাম, কি লাগবে বলো? ও ভ্রু কুচকে বললো, আমি কি কিছু লাগলেই শুধু আপনার কাছে আসি? ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না তাই কিছু না বলে চলে আসি বাসায়।

এরপর এক সন্ধ্যায় রতন ওর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলো। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তাদের ঝগড়ার আওয়াজ রান্নাঘর থেকে ঘরেও আসছে। রেগে গিয়ে ফোন কেটে যখন ঘরে আসলো তখন ওকে কিছুটা সময় দিলাম। ভাবলাম, সব কিছুর ভেতরে কিছু একটা ভুল হচ্ছে। একটু পরে ও যখন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো তখন বললাম, তুই কি কিছু বুঝতে পেরেছিস? ও চোখ খুলে আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে আমি বলি, এই রান্নাঘরের কেচ্ছাটা শুরু হয়েছিলো একটা মজার ছলে।

তুষারকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েই সব হয়েছে। তুষার যখন রান্নাঘরের ব্যাপারটা বিশ্বাস করে ভেতরে গিয়ে কথা বলে তখন সে তার প্রেয়সী কে পেয়ে যায়। এখানে শুধুই কাজ করেছে তার বিশ্বাস আর অন্য কিছুই না। আর বাকিদেরও যা হয়েছে তা মুলত তাদের কাজ আর বিশ্বাস থেকেই। আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছিলো তা হলো আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম না এসবে। তাই আমার জন্য সেটাই হয়েছে। নাহলে একবার ভেবে দেখতো, তুই তো এসবের আগেও রুনার(রতনের গার্লফ্রেন্ড) সাথে কথা বলতি, কই তখন তো কোন ঝামেলা হতো না। তাই তোকে বলছি, এসব রান্নাঘরের জাদু বলে কিছুই নেই।

সবি নিজের ভালবাসা আর বিশ্বাস থেকে হয়েছে। রতন এবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, রান্নাঘরটাকে অভিশপ্ত বানিয়ে দিছিস তুই। অনেকদিন পর আমিও হেসে বললাম, শুরুটা তো তোর থেকেই হয়েছে তাই না। যা, একটু ভালভাবো কথা বল। মেয়েটা নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাইছে। দুজন দুজনকে ছাড়া তো থাকতেও পারবি না তাহলে এতো রাগ করে লাভ আছে? একটু পরেই মুচকি হেসে সে বাইরে গেলো। পরে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো। কিছু ভুল চিন্তা মাথা থেকে নেমে গিয়ে আমিও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছি। তারপর দিন যাচ্ছিলো ফয়সালের ঘঠনা শুনতে শুনতে। ওর পছন্দের শেষ নেই। এ পর্যন্ত তিনটা মেয়ের সাথে ব্রেকআপ করেছে। তবে সবগুলোই সেই রান্নাঘরের জাদু থেকে। তবে আমার এরকমটা হওয়ার পরে আর কেউ এসবের জন্য আসেনি। সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো।

সকালে ঘুম ভাংলো কলিং বেলের আওয়াজে। বিছানা থেকে নেমেই দেখলাম, ফয়সাল মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। পুরনো কথাগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বলতেই পারবো না। তবে এখন খুব জানার ইচ্ছে হচ্ছে যে ফয়সালের কি হলো? সব কিছু ঠিকঠাক নাকি অন্যকিছু। আবারও যখন কলিংবেলের আওয়াজ হলো তখন দরজা খুলে দেখলাম রতন আর রুনা দাড়িয়ে আছে সাথে ফয়সালের ফোনে দেখা সেই মেয়েটা। আমিতো অবাক। কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। রতনকে বললাম, তোরা এতো সকালে তাও আবার এখানে? রতন বললো, যা করেছে ওই ছেচড়া টা তাতে কি আর শান্তিতে থাকা যায়। আর সকাল কোথায় এখন এগারোটা বাজে। এখন ভেতরে আসতে দিবি নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো আমরা? আমি দরজা থেকে সরে দারাতেই ওরা রুমে চলে গেলো।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছি প্রায় দুবছর হতে চললো। রতন আর আমি একসাথেই চাকরী পাই। ফয়সাল আর অন্য বন্ধুরা একটু পরে চাকরী পেলেও সবাই মোটামুটি ভাল জায়গায় আছি আমরা। রতন ওর বিয়ের জন্য আগে থেকেই অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিলে আমি এই ফ্লাটে একাই থেকে যাই। ভাল লেগেছে এটা ভেবেই যে রতন ওর মনের মানুষকে নিজের করে নিতে পেরেছে। দুজনকে মানিয়েছেও বেশ। ফয়সাল ওর গার্লফ্রেন্ড দের জন্যই একটু দেরীতে চাকুরী টা পায়। ভাল হতেও তো সময় লাগে তাই আরকি। রতনের বিয়েতে কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকলেও ফয়সাল তার কাজটা ঠিক সুন্দর ভাবেই করেছে।

বিছানায় রুনা আর ওই মেয়েটা বসে আছে। আমি, রতন আর ফয়সাল বিছানার সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছি। জানতে পারলাম মেয়েটার নাম মিতি। আর কালকে ফয়সাল নাকি সুইসাইড করবে এটা বলে ফোন কেটে দিয়েছে। আর এই মেয়ে ভাবছে ও সত্যি সত্যি এটা করবে। অথচ এই মেয়ে জানেই না যে এরকম কথা ও কতজনকে বলেছে নিজেই জানে না। আমিই ফয়সালের দিকে তাকিয়ে বললাম, তো এখন কি করবি তোরা? কেউ কিছু বলছে না। চেয়ার থেকে উঠে বিছানার ওপাশে গিয়ে শুয়ে পরে বললাম, কোন সমাধান খুজে পেলে বলিস। আর রুনা, বাজার করা আছে কিছু রান্না করে দুপুরে খেয়ে যেও। বলেই শুয়ে পরলাম।

একটু পরেই দেখলাম মিতি মেয়েটা কাঁদতে শুরু করলো। ফয়সাক তখন অনেক ব্যস্ত হয়ে গেলো। মেয়েটার হাত ধরে বললো, এই কাঁদছো কেন? কেঁদোনা প্লিজ৷ আমি আছিতো সব ঠিক হয়ে যাবে। রুনা আর রতন এসব দেখে মুচকি হাসছে। আমাকে ডেকে রতন বললো, এদের কি আজকেই বিয়ে দিয়ে দেই নাকি? আমি বললাম, মিয়া বিবি দুজনি যখন রাজি তখন এতো তারাহুড়োর কিছু নেই। রুনা মিতির মাথায় বুলিয়ে ফয়সালকে বললো, যদিও মিতি আমার চাচাতো বোন, তবুও ওকে নিজের বোন হিসেবেই দেখেছি। ওকে কষ্ট দিওনা কখনও কেমন? ফয়সাল কিছু না বলে মিতির হাত দুটো ধরে থাকলো।

রুনার রান্না শেষ হলে দুপুরে একসাথে খেতে বসলাম। খেতে খেতেই রতন বললো, তোর তো কালকের কথা মনে আছে নাকি? আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে রতন বললো, আরে ভার্সিটির ক্যান্টিনের স্বাধীন চাচার ছেলেকে যে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল ভুলে গেছিস? স্বাধীন চাচার কথা মনে হতেই মনে পরে গেলো আনিকার কথা। এই মেয়েটা সহ কতো উনার সাথে গল্প করেছি। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একদিন শুনি স্বাধীন চাচার ছেলে বাস দুর্ঘটনায় অনেক আহত হয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তাররা জানান, তার এক পা কেটে ফেলতে হবে। আমরা সবাই মিলে টাকা তুলে তার চিকিৎসার জন্য কিছু সাহায্য করি। তবে ছেলেটি এক পা হারিয়ে যেনো দিশেহারা। স্বাধীন চাচাও কেমন ভেঙ্গে পরেছিলেন। তাই আমরা প্রায়ই আসতাম চাচার এখানে।

উনার ছেলেকে দেখতাম সাথে চাচার সাথে কিছু গল্পও হতো। কাল ভার্সিটি যেয়ে যদি দেখি আনিকা এসেছে তবে কি আটকাতে পারবো নিজেকে? পারবো, নিজেকে অনেক ভালভাবে তৈরী করেছি আমি। খাওয়া শেষ হতেই ওদের বললাম, ইদানিং আমার বাসায় আমি কাপল থাকার অনুমতি দেই না। তাই খাওয়া শেষ হয়েছে এখন বিদায় হো সবাই। রুনা হেসে বললো, একবার ছেকা খেয়ে দেখি পুরোটাই বেঁকে গেছেন। রতন হেসে বললো, ওরও সব ঠিক করছি। শুদু একটু অপেক্ষা করো। আমি ওসব কথায় কান না দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। শুক্রবার ছুটির দিনেও শান্তি নেই। আরও কিছুক্ষন হিজিবিজি গল্প করে বিকেলে ওরা চলে গেলো।

স্বাধীন চাচার সাথে দেখা হতেই বিখ্যাত হাসিটা দিয়ে উনি বললো, ভাল আছো বাবা তোমরা? হাসিমুখে বললাম, এইতো চাচা, আল্লাহ রেখেছে আপনাদের দোয়ায়৷ এরপর উনার ছেলে আর স্ত্রীর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে আমি ভার্সিটির পুকুর পারে এসে বসে আছি। ওদের আসতে বললে ওরা পরে আসছে বলে আমাকে যেতে বললো। এই মুহুর্তে খুব মনে পরছে ওকে।

আনিকা পাশে থাকলে জিবনটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। আমাদের মাঝে সত্যি কি কিছুই ছিল না? এসব প্রশ্ন যখন নিজের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তখন পাশে কেউ বসতে বসতে বললো, এখনো কি মনে হয় যে ভালবাসা জিনিসটা রান্নাঘরের জাদুতে তৈরী হয়? আমি পাশে তাকিয়ে দেখি আনিকা বসে আছে। ভাল লাগাটা আবার জেগে উঠলেও মনের মাঝে রেখে বললাম, ভালবাসা কোন জাদু না তবে এটুকু বলতে পারি যে সবাই ভালবাসার যোগ্য না। এটা বলতেই দেখলাম ও কেমন করুন চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর এভাবে তাকিয়ে থাকাটা কেমন যেনো বিরক্ত লাগছে। উঠে চলে আসতেই ও হাতটা ধরে আবার বসিয়ে দিলো। বললো, এখনো রেগে আছেন কি? আমি কিছু না বলে আবারও উঠে আসতে চাইলে ও বললো, দুটো মিনিট কিছু বলার সুযোগ দিন প্লিজ। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আর কিছু কি বলার আছে তোমার? মাথা নিচু করে বললো, সেদিন আপনার কথাটাকে বিশ্বাস করতে পারিনি।

কারন আপনারা সবাই তখন রান্নাঘরের কাহিনি নিয়েই পরে ছিলেন। ভেবেছিলাম আমাকেও ওভাবে চেষ্টা করে দেখতে চাইছেন তাই আমি ও আর কিছু না বলেই মৃদু শব্দে মাথা নিচু করে কাঁদছে। আমার তো আবার কান্না সহ্য হয় না তাই একটা ধমক দিয়ে বললাম, এই কান্না থামাও। মেকি কান্না আমার একদম পছন্দ না। আর হ্যা, তুমি যা করেছো তার সম্পুর্ন অধিকার তোমার আছে। তাই তোমাকে আমি কখনও দোষারোপ করিনি। ঘটনা তো এখানেই শেষ তবে এখন আর কি চাও? কান্না করছো কেনো? ও মুখ নিচু করেই ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ভালবাসি আমি। আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, কিহ? ও বললো, হ্যা, আমি ভালবাসি আপনাকে। আর আমি কিন্তু আপনাকে সেদিন ফিরিয়ে দেই নি।

সেদিনের উত্তর আজকে দিলাম। মেজাজটা আবারও বিগ্রে গেলো। বললাম, সেদিন ফিরিয়ে দাও নি তাই ভেবে রেখেছিলে আজকে উত্তর দিবে তাই না? মজা করার জন্য আমি ছাড়া আর কাউকে পাওনা? মুখ উঠিয়ে বললো, আমাকে দেখে কি মজা করছি মনে হচ্ছে? আমি সত্যি ভালবাসি আগে থেকেই শুধু কারও প্রতারনার স্বীকার হতে চাইনি। তাই সেদিন কিছু বলিনি। আমার হাতটা ধরে বললো, আমি কিন্তু সত্যি আগে থেকেই আপনাকে ভালবাসি। হাতটা ছারিয়ে নিবো তখনি পেছন থেকে রতনের স্ত্রী রুনা বললো, ভাইয়া হাতটা শক্ত করে ধরে নিন।

এতোদিন তো একাই থাকলেন এবার তবে একজন সঙ্গী নিয়ে নিন দেখবেন জিবনটা আরও অনেক সুন্দর। রতন বললো, জিবনে এমন কাউকে পাওয়াটা অনেক কঠিন যে তোকে ভালবাসে তবে দোস্ত তুই চাইলে আমার কথাটাই সত্যি হতে পারে কিন্তু। ফয়সাল আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসছে। এদিকে আনিকা মাথা নিচু করেই আছে। চোখের পানি গালেই শুকিয়ে গেছে। মেয়েটাকে ভালবাসি তো এখনো তবে কেমন যেনো এক অজানা রাগ সামনে আসছে। কিন্তু মেয়েটা তো ভালবাসে আমাকে। তাই মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললাম, সত্যি ভালবাসো তো? ও শুধু মাথা নাড়ালো। রতন পাশে এসে ইচ্ছে করে একটা ধাক্কা দিলো। আর তাতেই আমি আনিকার দিকে পরে যেতে যেতে আনিকা আটকে ফেললো।

রতন বললো, সরি দোস্ত একটু উষ্ঠা খাইছিলাম। পরে রুনা ফয়সাল এরাও এসে পাশে দাড়ালে রতন ফোন বের করে সেলফি তুললো। মুখ দিয়ে কখন যে মুচকি হাসি বেরিয়েছে টেরই পাই নি। রতনকে বললাম, তোর অভ্যেসটা গেলো না। ফয়সাল হুট করে বললো, আজ তো পার্টি দিতেই হবে তোকে। রতনও ঝেকে বসে বললো, এতোদিন খাইছিস অন্যদের, আজ তোকে খাওয়াতে হবে। আমি হেসে বললাম, চল, কত খাবি, খাওয়াচ্ছি। রিকশায় পাশাপাশি আনিকা আর আমি বসেছি। ভালই লাগছে কেমন যেনো একটা। ভাবছি সামনে তো ঈদ তাই ঈদের পর শুভ কাজটা সেরে নিলে মন্দ হয় না…

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত