ত্রিভুজ প্রেম

ত্রিভুজ প্রেম

সকাল ১০ টা । বাইরে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে বের হচ্ছি । আমার এই একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হতে হলে এমন সময় রেডি হই যাওয়ার জন্য যখন সময়টা মনে হয় স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশী দ্রুত অতিবাহিত হয় । ঘড়ির কাঁটা হাঁটার পরিবর্তে তখন দৌড়ায় বলে মনে হয় । তখন কি আর করার থাকে ! সময়ের সাথে আমি প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি । কে কার আগে দৌড়াতে পারে ? আমি নাকি আমার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সময় । ইচ্ছা করতেছে ঘড়ির সময়টাকে একটু পিছিয়ে দিই । কিন্তু পিছিয়ে দিলেই কি কাজ হয়ে যাবে ? না হবে না । যার জন্য এতো তাড়াহুড়া , এতো আয়োজন সেই মানুষটার ঘড়ি তো আর পিছিয়ে যাবে না ।

আজ আমার স্বপ্নের মানুষটার সাথে কোন পিছুটানহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবো । তাই আমার এতো তাড়াহুড়া । সময় মতো কোন দিন ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারার কারণে প্রায়ই ও রাগ করতো । কিন্তু এখন আর দেখি আগের মতো রাগ করে না । আর আমারও ওর রাগ ভাঙাবার জন্য এখন আর এতো কিছু করার প্রয়োজন হয় না যা আগে করতে হতো যখন সে রাগ করতো ।

অবশেষে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমি নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট পর আমার রাজকন্যার সামনে এসে উপস্থিত হলাম । প্রথমে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম কখন এসেছ ? ও বলল ,
– এইতো কিছুক্ষণ হল । কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় আসা যাক । অনেক কষ্টে বাসা থেকে বের হয়েছি । তাই ফিরতে হবে জলদি । নয়তো বাসায় ফিরে মার ঝাড়ি খেতে হবে আর আব্বুর বকা শুনতে হবে । ও যে জন্য তোমাকে ঢাকলাম । আব্বু আর আম্মুকে আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে শুনলাম । আগামী মাসে বাবার অফিসের এক কলিকের ছেলে আমাকে দেখবে আসবে । ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে । আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরতেছে । আমার খুব ভয় করছে । আমি কোন ভাবেই ওই ছেলেকে তো না , তুমি ছাড়া অন্য কোন ছেলেকেই বিয়ে করতে পারব না ।
– ও বলে যাচ্ছে । নিস্তব্দ প্রকৃতির মতো আমি শুনতে লাগলাম । ওর বিয়ের খবর শুনে আমার চারপাশের সব কিছু বিপর্যস্ত- বিধ্বস্ত হয়ে গেলো বলে মনে হল । সব শেষে ও বলল ,তোমাকে কিছু একটা করতে হবে । আমি না হয় , সুইসাইড ।

– কথাটা ওর মুখ থেকে বের হতে না হতেই আমি ওর ঠোঁট চেপে ধরলাম । আমাকে কিছুদিন সময় দাও । আমি কোন একটা সমাধানে আসতে পারি কিনা দেখি । তোমাকে ছাড়াও তো আমার পক্ষে জীবন চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব । আমি একটা ব্যবস্থা করতেছি , তুমি মন খারাপ করো না । আর তুমিও যদি পারো বিয়েটা কোন ভাবে পিছিয়ে দাও । তাহলে আমি সব কিছু সামলে নেওয়ার জন্য কিছু সময় পাব । এই কথা গুলো যখন মুখ থেকে বের হচ্ছিলো তখন দেখলাম ওর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু বর্ষণ হচ্ছে । আমি ওর চোখের জল দেখে নিজেকেও আর সামলাতে পারলাম না । আমার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু কখন গড়িয়ে পড়লো ঠেরই পেলাম না । আমি নিজেকে সামলে নিয়ে ওর চোখের অশ্রুটুকু মুছে দিয়ে শান্ত হতে বললাম । চল , অনেক রাত হয়েছে এখন বাড়ির দিকে রওয়ানা হওয়া যাক , তোমার বাবা-মা চিন্তা করবে । ও বলল ,
– আগে তুমি আমাকে কথা দাও । তুমি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে না যত ঝড়- জলোচ্ছ্বাস আসুক ।
– আচ্ছা কথা দিলাম ।

বাসায় ফিরে ভাবতে লাগলাম , কি করা যায় ? এখন , আমার কথায় আসা যাক । বাড়িতে আমি বড় ছেলে । মাত্র দু বছর হল বাবা আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে অসহায় করে চলে গেছেন । তাই , পরিবারের দায়িত্ব আর দুঃচিন্তা আমার মাথায় সারাক্ষণ কাজ করতো । এতো পারিবারিক দুশ্চিন্তা আর দায়িত্ববোধের মাঝে বিয়ের চিন্তা তো মাথায় আনা কোন ভাবেই সম্ভব না । এখন আমি কি করি ? একদিকে নাবিলা অন্যদিকে পরিবারের দায়িত্ব । সবেমাত্র একটা নতুন চাকরীতে জয়েন করেছি । অনার্সের রেজাল্টটা ভালো ছিল বিধায় চাকরীর জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয় নি । এই দুশ্চিন্তা আর দুর্দিনে অনার্সের রেজাল্টটা তাই আমার কাছে অনেক বেশী মূল্যবান হয়ে গেলো । ভাঙ্গিস… রেজাল্টটা ভালো ছিল । নয়তো…বাবাকে হারিয়ে ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে অনেক বেশী বিপদে পড়ে যেতাম । চাকরীটাতে সেলারি দিবে ২৫০০০ হাজার । এই টাকা দিয়ে মা ও ভাই-বোন দের নিয়ে ভালো ভাবেই আমাদের চলে যায় । কিন্তু বিয়ে মানে অনেক বড় দায়িত্ব । সেই সাথে নতুন কিছু খরচের সৃষ্টি তো হবেই । নতুন কিছু খরচ মানে আরও বেশ কিছু টাকার সন্ধান লাগবে । নয়তো নাবিলা ও মা – ভাই -বোন দের নিয়ে চলতে গেলে হোঁচট আমাকে খেতেই হবে । তাই ভালো একটা চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের চিন্তা করা খাল কেটে কুমির আনার শামিল । তাই ভাবলাম , কালকে আরো একটু ভালো মানের চাকরি খুঁজতে হবে । একটু ভালো চাকরি মানে খুব বেশী না মাত্র আট থেকে নয় হাজার টাকা বেশী পেয়ে গেলেই আমার আর নাবিলার স্বপ্ন গুলো পূর্ণতা পাবে । মাঝ পথে এসে স্বপ্ন আসলেই স্বপ্নে পরিণত হবে না , বাস্তবে রূপ নিবে । মনের মধ্যে একটু সাহস পেলাম । এই সব চিন্তা করতে করতে রাতটা পার হয়ে গেলো ।

সেল ফোনে নাবিলার এজাইন টোনটা শুনে সম্বিত ফিরে পেলাম । তাড়াহুড়া করে ফোনটা রিচিভ করতে গিয়ে হাত ফসকে মোবাইলটা মেঝেতে পড়ে গেলো । নাবিলার কলটাও মিস কল হয়ে গেলো রিসিভ না করতে পারার কারণে । ফোনটা মেঝে থেকে তুলে তাড়াতাড়ি নাবিলাকে ফোন দিলাম । প্রথম বার আমার কল রিসিভ না হওয়ার পর দুশ্চিন্তায় পড়লাম । ও আবার রাগ করলো না তো । কি এমন ঘটলো যে ও রাগ করবে । ভয়ে ভয়ে আবার ফোন দিলাম । এইবার ও রিসিভ করে কাঁদতে লাগলো । হঠাৎ ওর কান্নার শব্দ শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । এই ভোর বেলা এমন কি হল !! আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল । ও বলল , আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার জীবনে ঠিক তাই ঘটবে । ধুর , পাগলি স্বপ্ন তো স্বপ্নই । আমি আছি না । আমি থাকতে তুমি অন্য কারো হতে পারবে না । নাবিলাকে শান্ত করার জন্য এই কথা গুলো না বলে পারতেছিলাম না । কিন্তু ওকে বলা কথা গুলো বাস্তবে রূপ দেয়া কত যে কঠিন হবে তা আমি একটা ভালো চাকরি পাওয়ার যুদ্ধে না নামার আগেই টের পাচ্ছি । মেয়েদেরকে শুধু মাত্র আবেগের দিকটা দেখলে চলে । কিন্তু একটা ছেলে কে পরিবার , অর্থ-সামর্থ্য সবই বিবেচনা করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয় । তাই , আমার একদিকে আমার স্নেহময়ী মা ও ভাই -বোনেরা আর অন্যদিকে নাবিলা । কাউকেই আমি ছেড়ে যেতে পারবো না । আমার জীবনে সবার প্রয়োজন রয়েছে । আমার মা যেমন আমার কাছে শ্বাস নেওয়ার একমাত্র বায়মণ্ডলীয় উপাদান অক্সিজেনের চেয়ে কম কিছু নয় ঠিক তেমনি নাবিলার প্রয়োজন আমার কাছে পানির প্রয়োজনের চেয়ে কম কিছু নয় ।

সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম । মা যাওয়ার সময় প্রতিদিন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন । আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি । মায়ের এই কাজটি করতে কখনো ভুল হয় না । এই জন্যই বুঝি আমি মাকে ছাড়া থাকতে পারবনা । মাও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না ।

অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো সেরে আমার বন্ধু তানভিরের সাথে দেখা করতে গেলাম । তানভির খুব ভালো একটা চাকরি করে । তাই ভাবলাম , ওর কাছে হয়ত কোন ভালো চাকরির নিউজ থাকতে পারে । তাই ওর অফিসে গেলাম । যাওয়ার পথে আমার পুরানো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো । নাম তার তানিশা । কলেজ পর্যন্ত ওর সাথে ভালো যোগাযোগ ছিল । এমনকি মাসের ত্রিশ দিনই ওর সাথে দেখা হতো আর আড্ডা দিতাম । কিন্তু ও পড়াশুনার প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর আর আগের মতো যোগাযোগ হতো না । হলেও , ফেসবুকে একটু- আধটু হাই- হ্যালো । এই আর কি । সবাই যার যার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যেমনটি হয়েছে আমার ক্ষেত্রেও । ওর সাথে দেখা হওয়ার পর ও আমাকে অনেকটা জোর করে ওর অফিসে নিয়ে গেলো । আমিও আর পুরানো বন্ধুর আবদার পেলতে পারলাম না । ওর কাছে ভালো একটা চাকরির নিউজ পাওয়ার পর স্রষ্টার কাছে হাজার শুকরিয়া জানালাম । চাকরিটা ওর অফিসেই । চাকরিটা পেয়ে গেলে আমার পুরানো বন্ধু তানিশা আমার কলিকে রূপ নিবে । ভালোই হবে । ওর গাইড লাইন অনুসারে আমি চাকরিটার জন্য অ্যাপ্লাই করলাম । ওর অফিস হওয়ায় অ্যাপ্লাই করার সমুদয় সব কিছু বুঝতে আমার তেমন বেগ পেতে হয় নি । আবেদন পত্রটা ফাইনাল করার পর ড্রপ করে তানিশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি তানভিরের অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । ওর কাছ থেকে পাওয়া দুটি চাকরির নিউজ ও ভালো লাগলো । সেখানেও আবেদন করার সিন্ধান্ত নিলাম ।

টোটাল ১০ তি চাকরির জন্য আবেদন পত্র ড্রপ করলাম । কোন একটাতে যদি মহান আল্লাহের কৃপায় চাকরি পেয়ে যায় তাহলে নাবিলাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নকে আমি বাস্তবে রূপ দিতে পারবো । আমাকে তখন আর কাউকে ছেঁড়ে যেতে হবে না । সবাইকে নিয়ে নিজের বাকি জীবনেটা চালিয়ে যেতে পারবো । আবার আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম । সেই স্বপ্নের রাজকন্যা হবে নাবিলা । এই গুলো ভাবতে ভাবতে সেই রাতটা পার হয়ে গেলো ।
কয়েকদিন পর রাতে সবার সাথে গল্প করার মাঝপথে তানিশার নামটা আমার সেল ফোনে ভেসে উঠলো । আর আমার রাজকন্যার পছন্দের সেই রিংটোনটা বাজতে লাগলো । এই রিংটোন টা বাজলেই ওর কথা মনে পড়ে যায় । তানিশার ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলার পরই ও বলল ,
তানিশা : ওই আমাকে কি গিফট দিবি বল ? চরম একটা খুশির খবর আছে ।
আমি : তাই নাকি !! আচ্ছা , খুশীর খবরটা তো বল শুনি । কি হয়েছে ?
তানিশা : আচ্ছা ঠিক আছে , তোর গিফট আমার লাগবে না , কৃপণ কোথাকার !
আমি : তোর জন্য আমি কালো চামড়ার এবং টাক মাথাওয়ালা একটা বর খুঁজে দিবো tongue emoticon । সেটাই হবে তোর গিফট ।
তানিশা : ওই , আমার সাথে ফাজলামি !!! দাঁড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন !!
আমি : ওকে …ওকে তুই যা চাস তাই পাবি । খবর টা তো বল ।
তানিশা : বলতেছি …বলতেছি । আমার অফিসে তোর চাকরিটা হয়ে গেছে । এই নে , appointment letter.
আমি : ইয়াহু …… সত্যি !!! তোকে অনেক ধন্যবাদ । তুই আমার কত বড় উপকার করেসিস সেটা ভাষায় বলে বুঝাতে পারবো না ।
তানিশা : আচ্ছা , তোকে আর আমাকে বলে বুঝাতে হবে না । এখন বল , চাকরিটা কি করবি ?
আমি : করবো মানে !! আমি তো ওই চাকরিটা করার জন্য এক পায়ে খাঁড়া । এই চাকরিটা পাওয়া মানে যে আমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারার সামর্থ্য অর্জন করা ।
তানিশা : তোর স্বপ্ন কি ? আমি জানতে পারি ?
আমি : পারবি না কেন ?
বলতেছি , আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি । নাম তার নাবিলা । এই চাকরিটা এই জন্যই খুব বেশী আকাঙ্কখিত ছিল যে , এমন একটা চাকরি না হলে নাবিলার অন্য জায়গায় বিয়ে হবে যাবে । কারণ , ওর পরিবার ওর জন্য ছেলে ফাইনাল করে ফেলেছে । তাই যত দ্রুত সম্ভব একটা অপেক্ষাকৃত ভালো মানের চাকরি মনেপ্রাণে স্রষ্টার কাছে চাইতেছিলাম । আর এতো তাড়াতাড়ি চাকরিটা যে পাবো তা ভাবতেই পারি নি । তুই না হলে এই সব কিছু সম্ভব হতো না । ধন্যবাদ দিয়ে তোকে ছোট করবো না।
আমার মুখে এই সব শুনার পর তানিশার চুপ হয়ে গেলো । ফোনের ওই পাশ থেকে কোন সাড়া-শব্দ আসতেছিল না । বুঝতে পারলাম না , কি হল । কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়ের মুখে হাসি আঁটার মতো লেগে ছিল তার হঠাৎ কি এমন ঘটল যে মন খারাপ করবে । আমার মনে হতে লাগলো , আমার কোন ভুল হয়েছে । নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলাম । ওর রাগ ভাঙাবার জন্য অনেক কিছু করলাম । এক পর্যায়ে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম , কি করলে তোর রাগ ভাঙবে শুনি ?
তানিশা : আমি যা চাই তুই কি তা দিতে পারবি ? আমি জানি তুই পারবি না । তাই তোকে আমি বলবো না । আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাক । মনের কথা মনেই থেকে যাক।
আমি : আচ্ছা , তুই আমার কাছে কি এমন চাইবি যে আমি দিতে পারবো না !! আর তুই না বললে আমি বুঝবো কেমনে যে তুই কেন রাগ করেসিস । তুই আমাকে শুধু একবার বল । আমি আমার মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো তোর অপূর্ণতাকে পূর্ণ করতে ।
তানিশা : খুব তো বলতেসিস পারবি ! আচ্ছা আমি তোকে আগামীকাল রাতে ফোনে জানাবো । আর যদি ফোন না করি তাহলে বুঝবি আমি আর দেশে নেই । পুনরায় দেশের বাইরে চলে যাবো । আমার চোখের সামনে আমি আমার স্বপ্নের অকাল মৃত্যু দেখতে পারবো না । আসলে তুই একটা খুনি । তুই আমার স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে ফেলেসিস ।

কথাটা বলেই তানিশা ফোনের লাইন কেটে দিল । আমি পুনরায় কল ব্যাক করতে গিয়ে দেখলাম ফোন সুইচ অফ । ওর শেষ কথার স্বরে যে কান্না মিশ্রিত সেটা আমার বুঝতে বাকি রইল না । আর ওর সব কথার সারমর্ম থেকে আমি বুঝতে পারছি , ও আমাকে কিছু একটা বলতে চাই । আর সর্বশেষ কথা ” আসলে তুই একটা খুনি । তুই আমার স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে ফেলেসিশ ।” – শুনে আমার কাছে ব্যাপারটা একটু- একটু করে সকালে সূর্যের আলোর আগমনে যেমন কোয়াশা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে চারদিক স্পষ্ট হতে থেকে ঠিক সেই ভাবে পরিষ্কার হতে লাগলো । আর আমি আর একটি বিপদের আভাস পেলাম । যার কোন সমাধান হয়তো কেউ দিতে পারবে না । তবে পরক্ষনে আমি আবার ভাবলাম , আমার ধারনা তো ভুলও হতে পারে । আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যেন আমার ধারণা ভুল হয় ।

সন্ধ্যায় নাস্তা করে ল্যাপটপে বসে কাজ করতেছিলাম । নাবিলাকে ফোন করলাম । ওকে চাকরির খবরটা দিতে বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে । আমার মুখে চাকরির সুসংবাদটা পেয়ে ও কি যে খুশী হল তা ওর কথা শুনে বুঝতে পারতেছি । ইশ… নিউজটা যদি ওকে সামনা-সামনি দিতে পারতাম । তাহলে ও আরো অনেক বেশী খুশী হতো । আর আমি অপলক চোখে ওর মন পাগল করা হাসি অবলোকন করতে পারতাম । ওর হাসি নিমেষেই আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে । তাই তো আমার বারবার ওর কাছে ছুটে যেতে মন চাই ।

নাবিলার সাথে কথা শেষ করতে না করতেই তানিশার নাম্বার স্ক্রীনে ওয়েটিং শো করতেছে । আমি রীতিমত চমকে উঠলাম । নাবিলা সাথে কথা শেষ না করে লাইন কাটতে মন চাইলো না । ওর সাথে কথা শেষ করার পর তানিশাকে ফোন করেই সরি বললাম ।

তানিশা : হয়েছে আর সরি বলতে হবে না । আমি আমার পরিণতি কি হবে সেটা খুব ভালো ভাবেই টের পেয়েছি যখন তুই আমার কল রিসিভ করার চেয়ে নাবিলার সাথে কথা বলাকে বেশী গুরুত্ব দিয়েসিস । যাক , মানুষের সব স্বপ্ন পূর্ণ হয় না আমি আর কাঁদতে চাই না । আমি তোদের পথ থেকে স্বরে দাঁড়াবো । আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি , আবার দেশের বাইরে চলে যাবো । তোকে ব্যাপারটা না জানিয়ে যেতে পারলাম না । আমি তোকে মানে তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসি যা এতদিন বলবো বলবো করে বলা হয় নি । ার সেটায় ছিল আমার ভুল । কপালে না থাকলে যা হয় আর কি । ভালো থাকিস । সুখে থাকিস । আর একটা কথা , নাবিলা আসলেই অনেক ভাগ্যবতী মেয়ে । তোর মতো একজন স্বামী পাবে । আমার কথা কোনদিন মনে পড়লে ফোন দিস ।

ওর কান্নার শব্দ ফোনের ওই প্রান্ত থেকে ভেসে আসতেছে । সামনা- সামনি হলে এই কান্নার তীব্রতা ও জ্বালা আরো কত গুণ যে বেশী হতো তা আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারতেছি । কথা বলতে বলতে ও হঠাৎ থেমে গেলো । ফোনের ওই প্রান্ত থেকে কোন শব্দই আসতেছে । কিন্তু ও যে কান থেকে ফোন নামিয়ে কাঁদতেছে সেটা খুব ভালো ভাবেই বুঝতছি । কারণ , আমিও তো নাবিলার জন্য কাদঁতাম , কেঁদে বালিশ ভিজাতাম । ( সমাপ্ত )

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত