শয়তানের বাড়ি

শয়তানের বাড়ি

সিংগাপুর শহরে রহস্যময় একটা বাড়ি আছে, যেটা অনেক সিংগাপুরিয়কেই দারুণ আকর্ষণ করে। তারা একে শয়তানের বাড়ি নামে পরিচয় করিয়ে দিতেই পছন্দ করে। পাহাড়ের চূড়ায় একটা বাংলো এটি। সরু একটা রাস্তা উঠে গেছে বাংলোটার দিকে। যতদূর জানা যায়, বাড়ির মালিক পরিবারের সবাইকে কুঠার দিয়ে খুন করে, পরে নিজে আত্মহত্যা করেছিলেন। তারপর থেকেই এটা পরিণত হয় হানাবাড়িতে। পাশেই ঘোড়ার একটা আস্তাবল। লোকে বলে বাড়ির মত আস্তাবলটাও অভিশপ্ত আর ভুতুড়ে। কখনো সিংগাপুর বেড়াতে গিয়ে যদি বাড়িটার কাছে যান তবে দেখবেন, রোমাঞ্চপ্রিয় সিংগাপুরিয়দের কেউ কেউ নুড়ি বিছানো পথ ধরে গাড়ি নিয়ে চলেছে ওটাকে এক নজর দেখার জন্য। তবে সাধারণত গাড়ির নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে কিছুটা দূর থেকে বাড়িটা দেখে চলে আসে তারা। তবে সবাই তাদের মত বুদ্ধিমান নয়। এদের একজনেরই কাহিনি এটি।

এক রাতে দারুণ উত্তেজনাকর একটা পার্টি শেষে বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী ঠিক করল শয়তানের বাড়িটাতে একটা চক্কর দেবে। নুড়ি বিছানো রাস্তা দিয়ে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ি দাঁড় করাল তারা। তারপর গাড়ির হেডলাইট জ্বেলে, বাড়িটা দেখতে লাগল। একপর্যায়ে ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না তা নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হলো তাদের মধ্যে। ক্রমেই চেঁচামেচিতে রূপ নিল তর্ক। শেষমেশ বাড়িটাতে ঢোকাই স্থির হলো।

হৈ হল্লা আর চিৎকার করতে করতে গাড়ির থেকে বের হয়ে এল তারা। তারপর দৃঢ় পায়ে এগুলো সদর দরজার দিকে। এসময় দলের মেয়েদের সাহস একটু একটু করে টলতে শুরু করল। গাড়িতে ফিরে যেতে চাইল তারা। তবে ওটাকেও যেন এখান থেকে অনেক দূরে মনে হলো।

আর তাদের ভয় পেতে দেখে ছেলেরা আরো দৃঢ়সংকল্প হয়ে উঠল। ছেলেদের একজন হঠাৎ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ল। তারপরই তার পিছনে দরজাটা আটকে গেল।

বেশ কিছুক্ষণের জন্য মৃত্যুনীরবতা নেমে এল। আকস্মিক এই ঘটনায় বাকি দুটো মেয়ে আর ছেলেটা কী করবে বুঝতে না পেরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

তারপরই চিৎকার শুনল।

কী করবে বুঝে উঠতে পারল না তারা। ও কি তাদের ভয় দেখাতে এমনটা করছে?

আবার চিৎকারটা শোনা গেল। এবার পরিষ্কার হয়ে গেল আতংকিত মানুষের টানা চিৎকার এটা।

দৌড়ে ভিতরে ঢুকল তারা। দরজাটা শুধু ভেজানো ছিল। তারপরই দেখল তাদের বন্ধুটি মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর শরীর মোচড়াচ্ছে, মনে হয় যেন প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে তার। মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে এসেছে। তাদের দেখে গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, সাহায্য করো। আমি তলিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে আমাকে তোল! তলিয়ে যাচ্ছি।

দ্রুত তাকে তুলে গাড়িতে নিয়ে আসা হলো। আতংকে চেঁচামেচি শুরু করেছে সবাই। ভাগ্য ভাল তাদের একজনের এক পাদ্রীর খবর জানা ছিল।

পাদ্রীকে পাওয়া গেল। তিনি বন্ধুটিকে অশুভ প্রভাব মুক্ত করতে পারলেন। তবে পুরোপুরি না। কারণ এরপর থেকেই আচার-আচরণ কেমন যেন বদলে যায় তার।

কারো কারো ধারণা কোনো একটা দল কালো জাদুর চর্চা করে শয়তানের বাড়িতে। সপ্তাহের কোনো রাতে প্রার্থনা আর নানান খারাপ জিনিসের চর্চা হয় এখানে। তবে কাউকেই ওই বাড়িতে যেতে বাধা দেওয়া হয় না। এদের একজন জানিয়েছে একবার এমন কৌতূহলের বশে এর ভিতরে ঢুকে আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। ভিতরে পা দিয়েই নজরে পড়ে বাড়ির প্রধান হলে জ্বলন্ত মোমবাতির মাঝখানে আলখেল্লা পরা এক লোক বসে আছে। খুব সম্ভব সেই দলটির নেতা। আর দেখার সাহস হয়নি তার, দ্রুত বেরিয়ে আসে শয়তানের বাড়ি থেকে।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত