এই অভিজ্ঞতাটি ভারতীয় তরুণ হরিহরের। বছর কয়েক আগের ঘটনা। বেড়াতে গিয়েছিলেন কর্নাটকের ছোট্ট শহর কামতাতে, খালার বাসায়। তাঁর বাসাটা গজনির কাছে। এখানে বেশ কিছু ছোট্ট লেকের দেখা পাওয়া যায়। প্রথমবার এই এলাকায় বেড়াতে আসায় জায়গাটাতে ঘুরে আসার ব্যাপারে একটা কৌতূহল ছিল তাঁর। বাকি অংশটা বরং হরিহরের জবানীতেই শোনা যাক।
খালা বেশ ধার্মিক মহিলা। কেন যেন ওই লেকগুলোর দিকে যাওয়ার জন্য পই পই করে বারণ করে দিলেন। কারণ জানতে চাইলে শুধু বললেন জায়গাটা ভাল না। তারপর এখানেই এই বিষয়টার ইতি টানলেন।
রাত সাড়ে নটার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে হাঁটতে বের হলাম। এখনো মনে আছে রাতটার কথা। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। লেকের জলে তার রূপালি ছটা পড়ছে। আর এতে গজনিকে আরো মোহনীয় মনে হচ্ছে, ঠাণ্ডা বাতাস আমাকে যেন জোর করে ওদিকেই নিয়ে যেতে লাগল। গজনির রাস্তার আলোগুলোও এখান থেকে মোহনীয় মনে হচ্ছে।
গজনির দিকে মোটামুটি আধমাইলটাক এগিয়েছি। এমন সময় কেমন একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি শুরু হলো। শীতল বাতাস শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। শান্ত, নিশূপ উপত্যকা দিয়ে এগুনোর সময় হঠাৎ পিছনে বেশ কয়েক জন মানুষের পায়ের আওয়াজ পেলাম। মনে হলো যেন আমার পিছনে একটা দল আসছে, আর তাদের হাসি, কথা-বার্তার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তবে সব কিছুই কেমন অস্পষ্ট। হঠাৎ কী মনে করে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরলাম। বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলাম সেখানে একজন অশীতিপর বৃদ্ধা দাড়িয়ে আছে, আর কেউ নেই।
মনে হলো জ্ঞান হারাব। এতজন লোকের পায়ের আওয়াজ, কণ্ঠ পেলাম। আর ভোজবাজিতে সব অদৃশ্য হয়ে হাজির হলো এক বুড়ি। এলোমেলো, লম্বা চুল তার, হাতে লাঠি; সামনের দাঁত নেই। আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিল। কেন যেন আঁতকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলাম। মনে হলো বিদ্যুতের একটা প্রবাহ বয়ে গেছে শরীরের ভিতর দিয়ে। নড়তে পারছি না, পা জোড়া কাঁপতে শুরু করেছে। এভাবে মনে হয় দশ-পনেরো সেকেণ্ড থাকলাম। তারপরই বড় রাস্তার দিকে দৌড়তে শুরু করলাম। যখন সেখানে পৌঁছে ফিরে তাকালাম, গজনির দিকে কাউকে দেখতে পেলাম না।
বাসায় ফিরে খালাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। গজনিতে যাওয়ার জন্য ইচ্ছামত বকাবাদ্য করলেন খালা আর খালাতো বোন। তারপর ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মনে হলো যেন কে আঠা দিয়ে শরীরটা বিছানার সঙ্গে আটকে দিয়েছে। মাথা এপাশ-ওপাশ করতে এমনকী মুখ দিয়ে একটা শব্দও করতে পারলাম না। খুলতে পারলাম না চোখও।
কাঁদার চেষ্টা করলাম। হ্যাঁ, সেটা পারলাম। আর কান্নার শব্দ শুনে আমার খালাতো বোন দৌড়ে এল আর খালাকে ডেকে নিয়ে এল। বিছানায় বসিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেন তাঁরা। কিছু না বলে শুধু কাঁদতেই থাকলাম। আমার মাথায়, বুকে আর পায়ে অ্যাপাতিসাল নামের এক ধরনের ভেষজ মলম লাগিয়ে দিলেন তারা। আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করল আমার। তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দু-দিন জ্বর থাকল খুব। তবে দ্রুতই ভাল হয়ে উঠলাম।
(সমাপ্ত)