এই অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করেছেন ফিলিপাইনের ম্যাথু। চলুন তাঁর মুখ থেকেই শুনি।
এটি আমার এক বান্ধবী আর তার জিপানি ভ্রমণের সত্যি ঘটনা। আপনারা যারা জিপানি চেনেন না তাদের বলছি জিপানি হল ফিলিপাইনের সাধারণ মানুষ পরিবহনের জনপ্রিয় একটা যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহার করা আমেরিকান পরিত্যক্ত সামরিক জীপগুলোকে ঠিকঠাক করে জিপানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ ধরনের গাড়ি জাকাল সাজসজ্জা আর প্রচুর লোক উঠানোর জন্য বিখ্যাত।
আমার বান্ধবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের কাজ শেষে বাসার পথে রওয়ানা হতে হতে বেশ দেরি হয়ে যায় এদিন। কিছুদিন আগে থেকে ইউনিভার্সিটি অভ দ্য ফিলিপিন্সের ডিলিমান ক্যাম্পাসে থাকতে শুরু করেছে সে। আর এত রাতে ট্যাক্সির চেয়ে জিপানি ব্যবহার করাই নিরাপদ মনে হয় তার কাছে। যখন জিপানিতে উঠল তখন বেশ রাত। একটু পরেই অস্বস্তি শুরু হলো তার। চালক গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে তাকে দেখছে একটু পর পরই। শুধু তাই না মাঝে মাঝে পিছন ফিরেও তাকাচ্ছে। কিন্তু এত রাতে গাড়িতে একা থাকায় কিছু করাও সম্ভব হলো না তার পক্ষে। এখন প্রতিটি জিপানির নির্দিষ্ট রুটে আছে। রাস্তা বদলে অন্য পথে কোনো শর্টকাট কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ সেক্ষেত্রে পুলিশের রোষানলে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু এই চালক যে শুধু তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তা না। একটু পরপরই রাস্তা বদল করছে সে। চালকের মতিগতি বুঝতে না পেরে চিন্তায় পড়ে গেল আমার বান্ধবী। এদিকে আবার রাস্তার মোটামুটি মাঝপথে চলে এসেছে। এই : অবস্থায় নেমে গিয়ে আরো বিপদে পড়তে পারে। তাই গাড়িতেই বসে রইল। শেষ বাঁকটা ঘোরার পর আবিষ্কার করল চালক আবার মূল পথে ফিরে এসেছে।
বাস স্টেশনে পৌঁছার আগে চালক আমার বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে যদি ভয় পাইয়ে দিয়ে থাকি তবে দুঃখিত। আসলে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আর বাসায় ফিরে অবশ্যই পরনের কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলবে। এবার রীতিমত অবাক হয়ে আমার বান্ধবীটি তার এই অদ্ভুত আচরণের কারণ জানতে চাইল। জিপানির চালক তখন ব্যাখ্যা করল, আমি তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম, কারণ গাড়ির পিছনের ভিউ মিররে যখন দেখছিলাম, তোমার শরীরের সঙ্গে মাথা ছিল না। তখনই আমার সন্দেহ হয় এর মধ্যে অশুভ কিছু একটার কারসাজি আছে। তাই গাড়ির রাস্তা বদলে ফেলছিলাম। আশা করেছিলাম এতে ওই এলাকাটায় যে পিশাচটা আছে ওটার আওতার বাইরে চলে যেতে পারব। আর তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলতে বলছি কারণ আমার মনে হচ্ছে ওটা এখনো তোমার কাপড়ের মধ্যে থেকে যেতে পারে।
আমার বান্ধবী যখন বাড়িতে পৌঁছল তখনও সে আতংকে কাঁপছে। তারপরও এই অবস্থাতেই যত দ্রুত সম্ভব পোশাকগুলো পুড়িয়ে ফেলল। এর কয়েকদিন পরেই সে খবর পেল সেদিনের ঘটনার পরদিনই ওই জিপানি চালক মারা গেছে। হায়! দুর্ভাগা চালক আমার বান্ধবীর জন্য ভয় পেলেও অশুভ জিনিসটার নজর পড়েছিল আসলে তার ওপর।
(সমাপ্ত)