আবদুর রউফ গাড়ির একটা গ্যারেজের মেকানিক। কাজ শেষ করে সেদিন যখন বাড়ি ফিরছেন বেশ রাত হয়ে গেছে। এসময়ই দেখলেন এক তরুণী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব বিপদে পড়েছে। রউফ ভাবলেন এত রাতে বাড়ি ফেরার মত কিছু না পেয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছে মেয়েটা।
স্কুটারের পিছনে মেয়েটাকে নিয়ে নিলেন। একট রাস্তার সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল মেয়েটি। তারপরই অবিশ্বাস্য ঘটনাটা ঘটল। কয়েক কদম এগিয়েই ভোজবাজির মত তার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। পরদিন সকালে বন্ধুবান্ধব আর তাঁর সহকর্মীদের ঘটনাটি খুলে বললেন রউফ। তবে কেউ এটাতে কান দিল না। ঠিক চারদিন পর, ১৯৭৯ সালের ২২ জুলাই প্রচণ্ড জ্বরে মারা গেলেন আবদুর রউফ।
ঘটনার উৎস খুঁজতে দু-বছর পিছনে যেতে হবে আমাদের। বন্ধুর বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরছিল তাহিরা নামের একটি মেয়ে। গাড়ির চালকের আসনে ছিল তার ভাই। হঠাৎ গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাল। তারপর গিয়ে ধাক্কা খেল একটা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে। এতে উল্টে পড়ল গাড়িটা। ঘটনাস্থলেই মারা গেল তাহিরা।
যতদূর জানা যায় দুশ্চরিত্র এক শিল্পপতি ছিলেন ঘটনার পিছনে। এক মেকানিক আর পুলিশ কর্মকর্তার সাহায্যে দুর্ঘটনার নাটকটি সাজান তিনি। তবে পরিকল্পনা ছিল দুর্ঘটনাটায় চালকের, আসনে বসা ভাইটি মারাত্মক আহত হবে। তখন তাহিরাকে অপহরণ করা সহজ হবে। কিন্তু মারা গল উল্টো তাহিরাই।
এর ঠিক এক বছর পর ওই শিল্পপতিও মারা গেলেন দুর্ঘটনায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন নীল রঙের শাড়ি পরা এক নারীকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে তারা গাড়িটা যখন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত হানে তখন। অপর দিকে পুলিশের একটা টহল দল দাবি করেছে গাড়ির ভিতরে নীল শাড়ি পরা একজন নারীকে দেখেছেন তাঁরা।
কিন্তু একটা মেয়ে একই সঙ্গে গাড়ির ভিতরে আর বাইরে থাকে কীভাবে? সম্ভবত এই একই জিনিস শিল্পপতিকে আতংকিত করে তুলেছিল। হয়তো পাশের সিটে আর গাড়ির বাইরে একই নারীকে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি ভদ্রলোক। আর তাই ব্রেকের বদলে অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। যতদূর জানা যায় রাতের একটা পার্টি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন শিল্পপতি।
আগের বছর যে সময় তাহিরা মারা যায় ওই একই সময় মৃত্যু হয় শিল্পপতির। শুধু তাই না দুর্ঘটনার জায়গাও ছিল একই।
পরের বছর একই দিন মারা যান আবদুর রউফ। অবশ্য কোনো কোনো সূত্র দাবী করে জ্বরে নয়, সাগরে ডুবে মরেছেন আবদুর রউফ। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনোই।
এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। জুলাইয়ের ১৭ কি ১৮ তারিখ। শুল্ক বিভাগের সঙ্গে জড়িত এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা শিকারে পরিণত হলেন তাহিরার। বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। গাড়ি থামাবার ইশারা করে মেয়েটা। তারপর পুলিশ কর্মকর্তাকে বলে একটা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে সে। তাকে যেন তিনি দয়া করে বাড়ি পৌঁছে দেন।
মেয়েটার গলায় তাজা ক্ষতচিহ্ন দেখে আর্দ্র হয়ে ওঠে ওই কর্মকর্তার মন। তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে চান। কিন্তু মেয়েটি বলে বাড়িতেই যাবে সে। কি আর করা তাকে তার বাংলোর সামনে নামিয়ে দেন। কিন্তু তার চোখের সামনে বাড়িতে ঢোকার আগেই অদৃশ্য হয়ে যায় মেয়েটি। এর মাত্র দু-দিন বাদে আফিম কারবারীদের একটা দলের গোপন আস্তানায় হামলা চালানোর সময় গুলিতে মারা পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা।
তারপর থেকে অনেকগুলো বছর রাস্তার ধারে নীল শাড়ি পরা, কোনো মেয়েকে দেখলে আর গাড়ি দাঁড় করাতেন না চালকেরা। বিশেষ ক্লরে জুলাই মাসের ১৭ কিংবা ১৮ তারিখ আরো বেশি সতর্ক থাকতেন চালকেরা। তবে তাহিরার এই কাহিনি ছড়িয়ে আছে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায়। শহর ভেদে এর মধ্যে কিছু পার্থক্য চোখে পড়ে। তবে পুরো সত্যি জানা যায়নি কখনোই। তাই তাহিরা রয়ে গেছে এক রহস্যই।
(সমাপ্ত)