ঝাঁঝা-র ভূত

ঝাঁঝা-র ভূত

তড়িৎদের বাড়ি যেতে হলে হাওড়া-তারকেশ্বর লাইনে হরিপাল স্টেশনে নেমে বাসে করে এক ঘন্টা কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের পথ। স্টপেজের নাম ঝাঁঝা। সেখান থেকে আবার পায়ে হাঁটা পথ। পথ বলতে খা-খাঁ করছে ধানক্ষেত তার মাঝখান দিয়ে সরু মেঠো পথ । কোনরকমে দুটো মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এই পথ দিয়েই তড়িতকে রোজ কলকাতার কলেজে যাতায়াত করতে হয়। তার এবার বি.এ.ফাইনাল ইয়ার।

গ্রাম বলতে কুড়ি-পাঁচিশটা পরিবার। প্রায় বেশিরভাগ পরিবারই যৌথ। এই গ্রামেই তড়িৎদের কয়েকপুরুষের বাস। তড়িরা চার ভাই।

বড় ভাই স্কুল মাস্টার। দুটো তেরো-চোদ্দ বছরের ছেলে। নাম কমল আর শ্যামল। মেজো জমি-জমাচাষ-বাস দেখাশোনা করে। তারও দুটো ছেলে, নাম অরুণ আর বরুণ। বয়স দশ-এগারো হবে। সেজো ভাই বি.ডি.ও. অফিসে চাকরি করে। তার এক ছেলে নাম তরুণ আর এক মেয়ে নাম কিরণমালা। বাড়ির সবাই তাকে টুসি বলে ডাকে। দুজনের বয়স প্রায় আট-নয় হবে। বেশ সচ্ছল একান্নবর্তী পরিবার। গ্রামের ওপর মোটামুটি এদেরই কর্তৃত্ব।

তড়িৎদের বাড়িটা বেশ সুন্দর। বাড়ির মধ্যিখানে একটা বিশাল উঠোন। উঠোনের একপাশে মাটিতে গর্ত করে কাঠ-জ্বাল দেওয়া উনুন। সেখানে ধান সেদ্ধ হয়, মুড়ি ভাজা হয়। উঠোনের আর একপ্রান্তে উপর-নীচ মিলে বড়বড় চারটে ঘরে বড় ভাই আর মেজো ভাইয়ের পরিবার থাকে। আর এক পাশে সেজোভাইয়ের তিনঘর। তার পাশে তড়িৎ আর তার বাবা-মার তিনটি বড়বড় ঘর। উঠানের শেষ প্রান্তে বিশাল রান্নাঘর। পরিবারের সকলের রান্না সেখানেই হয়।

বাড়ির লাগোয়া বিশাল পুকুর। সান বাঁধানো ঘাট। পুকুরের তিনধারে আম-জাম-কাঠাল ফলের বাগান। পুকুরঘাটে যেতে গেলে সকলকেই উঠোন দিয়ে গিয়ে খিড়কির দরজা খুলে বেরোতে হয়। আগে অবশ্য এ জায়গায় পাঁচিল ছিল না।

তড়িৎ যখন দশ-বারো বছরের তখন গোবিন্দ বলে একটি বারো-তেরো বছরের ছেলে ওদের বাড়িতে রাখা হয়েছিলো। বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য। একদিন দুপুরবেলা বাগানে আম কুড়োতে গিয়ে পা পিছলে সে পুকুরে পড়ে যায়। সাঁতার জানতো না, ফলে ডুবে যায়। তারপর তড়িৎ-এর বড় ভাই এই দিকটা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দরজা করে দেয়।

বাড়ির এই ছ-ছ’টা বাচ্চার যত আব্দার আর বায়না এই ছোট কাকু তড়িৎ-এর কাছে। ছোট কাকু যেমন শাসন করে তেমনি আমাদের সব আবদারও মেটায়। আর বাকি সবাই শুধুই শাসন করে। আর পড়-পড় বলে। আজ তড়িৎ বাড়ি ফেরার পথে দেখলো গ্রামের ছোট মাঠটায় অন্যান্য ছৈলেদের সঙ্গে বাড়ির ছেলেগুলো বল খেলছে। তড়িৎ হেকে বলে এই ছেলেরা, তাড়াতাড়ি বাড়ি আসবি, মেঘ করেছে। আর একটু এগিয়ে এসে দেখে টুসি এককাদোকা খেলছে। টুসিকেও তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বলে। তড়িৎ ঘরে এসে কাপড়জামা ছেড়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে নিতেই আকাশ কালো করে অন্ধকার হয়ে আসে। তড়িৎ ভাইপো ভাইঝিদের ডাকতে যাবে কিনা যখন ভাবছে ঠিক সেই সময় টুসি ফিরে আসে। তার একটু পরেই বাকি সকলে।

ছেলেমেয়েগুলোকে তাদের মা-রা তাড়া লাগায়। বলে তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে নিয়ে ছোটকাকুর ঘরে পড়তে বসগে যা, নাহলে একটু পরেই জোরে বৃষ্টি নামবে, যেতে গিয়ে বইখাতা সব ভিজে যাবে। যাইহোক অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই একে ছোটকাকু তড়িৎ-এর ঘরে গিয়ে ওরা পড়তে বসে মেজেতে মাদুর পেতে বসে।

আর মধ্যিখানে হ্যারিকেন জ্বালা। গ্রামে এখনও ইলেকট্রিক আসেনি। তড়িৎ বিছানায় কি একটা লিখতে বসে। লিখতে লিখতে ধমক লাগায় এই সব মন দিয়ে পড়। ওরা এই ঘরে পড়তে আসার আরো একটা কারণ হলো কাকু যেমন ভালো করে পড়িয়ে দেয় তেমনি মাঝে মাঝে সুন্দর সুন্দর গল্পও বলে।

ইতিমধ্যে বাইরে ঝামঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় আর সেই সঙ্গে কড়াৎ কড়াৎ বাজ পড়ার আওয়াজ। বাজের শব্দ যেন ফাঁকা মাঠে দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসছে।

পড়তে পড়তে হঠাৎই তরুণ বলে ওঠে, কাকু আজ পড়তে ভালো লাগছে না, তুমি একটা ভালো দেখে গল্প বলো না।

সঙ্গে সঙ্গে টুসি বায়না ধরে, হা হা কাকু একটা গল্প বলো প্লিজ।

কমল, শ্যামল, অরুণ কিছু বলে না কারণ তারা তো একটু বড়ো।

আর এও জানে ওরা দুজন যখন বলেছে, কাকুকে ঠিক ম্যানেজ করবে।

কাকু ধমক লাগায়–মারবো চাটি। দু-তিন মাস বাদে সব পরীক্ষা বলে কিনা গল্প শুনবো।

—তরুণ বলে, প্লিজ! তিন মাস মানে তো নব্বই দিন, আমরা ঠিক তৈরি হয়ে নেবো।

-টুসি বলে, আজকে এরকম বৃষ্টি পড়ছে, বাজ পড়ছে তাতে পড়তে ভালো লাগে বলো?

তড়িৎ সমান রাগ দেখিয়ে বলে, না, তোদের মা-রা যদি জানতে পারে, আমায় তাহলে আস্ত রাখবে না।

ওরা বঝতে পারে কাকু যতোই রাগ দেখাক ভেতরে ভেতরে একটু নরম হয়েছে। তরুণ, টুসি দুজনেই বলে প্লিজ, কেউ জানতে পারবে না। আমরা দরজা ভেজিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া এত বৃষ্টি হচ্ছে মা- আসবেই বা কেমন করে?

অগত্যা তড়িৎ রাগ দেখিয়ে বলে, ঠিক আছে কিন্তু আমার লেখাটা শেষ হয়ে আসছে। ততক্ষণে তোরা ঘন্টাখানেক ভক্তত মন দিয়ে পড়ে নে, তারপর না হয় গল্প বলবো।

ওরা প্রত্যেকে আবার মন দিয়ে পড়া শুরু করে। আধ ঘন্টা হয়েছে কি হয়নি টুসি বলে—কাকু, হয়ে গেছে এসো।

তড়িৎ বলে—মার খাবি। এই তো সবে শুরু করলি এখনি হয়ে গেল । টুসি বলল-দূর তুমি এসো তো। না হলে মা-র আসার সময় হয়ে যাবে।

অগত্যা তড়িৎ খাট থেকে নেমে এসে ওদের পাশে মাদুরে বসে। তারপর তরুণ আর টুসির দিকে তাকিয়ে বলে-দেখ, তোরা যদি গল্পের মাঝে প্রশ্ন করিস তাহলে আর গল্প বলবো না।

ওরাও জানে কাকু গল্প শুরু করার আগে এই কথাগুলো বলবেই বলবে। তড়িৎ আর দরজা বন্ধ করার কথা বলতে ভুলে যায়। মনে মনে ঠিক করে আজ একটা ভূতের গল্প বলবো। ভূতের গল্পই জমবে। তাই সে হ্যারিকেনের আলোটা একটু কমিয়ে দেয়। অল্প আলোয় ভূতের গল্প জমে। হ্যারিকেনটা মাঝখানে থাকায় প্রত্যেকের ছায়াগুলো পেছনের দেওয়ালে পড়ে বেশ একটা গা-ছমছমে ভাব তৈরি হয়েছে।

তড়িৎ শুরু করে -বাঁকুড়ার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে বেশ কিছু পরিবার বাস করতো। সবাই চাষ-বাস করে জীবন ধারণ করতো। সেই গ্রামেই রমেশ ও তার বউ একটা ছোট ঘরে বাস করতো। তাদের কোন জমি-জমা না থাকায় সংসার চালাতো খুব কষ্ট করে। কোনরকমে আধপেটা খেয়ে দিন চালাত। একদিন রমেশ তার বউকে বলল, দেখো এই ভাবে তো আর সংসার চলে না।

তার চেয়ে আমি বরং শহরে যাই। গিয়ে কিছুদিনের মধ্যে একটা কাজ-কমো ঠিক করে ফিরে আসবো। আমি যতদিন না ফিরে আসি তুমি কোন ভাবে নিজেরটা একটু কষ্ট করে চালিয়ে নিয়ো। বউ রমেশকে খুব ভালোবাসে। সে রমেশকে ‘ছড়ে থাকতে পারবে না। এদিকে আবার না ছাড়লে সংসার চালাবার কোন সুরাহা হবে না। অগত্যা মনের দুঃখ মনে চেপে রমেশকে যাওয়ার অনুমতি দেয়। পরের দিন সকালে রমেশ ঘুম থেকে উঠে শহরের দিকে রওনা হয়ে যায়। কবে ফিরবে তা সঠিক বলতে পারে না।

ঘর একদম নিস্তব্ধ। সবাই দম বন্ধ করে গল্পটা শুনছে।

তড়িৎ বলে চলে—এক মাস, দু-মাস হয়ে যায়। দেখতে দেখতে এক বছরও হয়ে গেল। রমেশর দেখা নেই হঠাৎ একদিন বিকেলে রমেশ বাড়ি ফিরে আসে। দেখে তার বউ একটা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে তারই অপেক্ষায় বসে আছে।

রমেশ জিগ্যেস করে—কি গো, তুমি ভালো আছো তো?

বউ কোনো উত্তর করে না। রমেশ ভাবে দেরি হয়েছে বলে রাগ করেছে বোধহয়। রমেশ আবার বলে, সারাদিন খুব পরিশ্রম গেছে কিছু খেতে দেবে?

সঙ্গে সঙ্গে বউ ভাত, ডাল, ভাজা, মাছ দিয়ে সাজিয়ে একথালা দেয়। এই দেখে রমেশ জিগ্যেস করে, এত খাবার তুমি পেলে কোথায়?

তাতেও বউ কোনো জবাব দেয় না। তারপর রমেশ বলে, একটা লেবু হলে ভালো হতো–হবে?

বউ সঙ্গে সঙ্গে জানালায় গিয়ে ডান হাতটা জানালার ভেতর দিয়ে। বাড়িয়ে লেবু পেড়ে এনে দিল। সেই সময় আবছা অন্ধকার রমেশ দেখে লেবু গাছ জানালা থেকে তো প্রায় বিশ হাত দূরে। দেখলো বউয়ের ডান হাতটা সাঁ করে বেড়ে গিয়ে লেবুটা পেড়ে এনে দিল। রমেশ ব্যাপারটা চকিতে বুঝতে পেরে কিছু না বোঝার ভান করে বলে, হ্যাগো, তুমি একটু বসো, ভাতে যেন কোন পোকা-মাকড় না পড়ে দেখো। আমি একটু বাথরুম থেকে ঘুরে আসি, বলে বাইরে বেরিয়ে এক ছুট। ছুটতে ছুটতে সে একেবারে পাশের গ্রামে গিয়ে হাজির। গ্রামের লোকেরা এরকম একটা লোককে ছুটতে দেখে দাঁড় করিয়ে জিগ্যেস করে ব্যাপারটা কী? রমেশ তখন ঘটনাটা সব খুলে বলে। রমেশকে গ্রামের লোকেরা বলে সে কি ! ওই গ্রামে প্রায় ছ-সাত মাস আগে কলেরা হয়ে গ্রাম সুদ্ধ লোক মারা যায়।

আপনি যাকে দেখেছেন সে কোন মানুষ নয় একটা ভূত। যথারীতি টুসি জিজ্ঞেস করে, ভূতরা কি ইচ্ছেমতো হাত বড়ো করতে পারে?

তড়িৎ উত্তর দেওয়ার আগেই তরুণ বলে ওঠে—কাকু একটু জল খাবো, তড়িৎ অরুণকে বলে—যা তো পাশের ঘর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে আয়।

অরুণ বলে, আমার বেশ ভয় পাচ্ছে। অন্য কাউকে বলো না। তড়িৎ ব্যাপারটা বুঝতে পারে, এরা প্রায় সকলেই একটু ভয় পেয়েছে। তখন তড়িৎ সকলের বড় কমলকেই বলে, যা তো পাশের ঘর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে আয়।

কমল সবার থেকে বড় বলে ওদেরকে বুঝতে দিতে চায় না যে সে ভয় পেয়েছে। তাই উঠে গিয়ে আস্তে আস্তে দরজাটা খোলে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছায়াটা বাইরে দেখে আঁতকে ওঠে। শুনেছে রাম নাম শুনলে নাকি ভূতেরা নিজেই ভয় পায়— কমল রামনাম জপতে জপতে পাশের ঘর থেকে জলের বোতলটা নিয়ে ফিরে আসে।

এমন সময় ওদের ঠাম্মা সকলকে খেয়ে নেবার জন্য ডাকেন। ওরা হ্যারিকেনটা সঙ্গে নিয়ে রান্নাঘরে খেতে যায়। রান্নাঘরে পিড়ি আসন পেতে লম্বা সারি দিয়ে ওরা খেতে বসে। গরম গরম খিচুড়ি, ডিম ভাজা, নারকেলভাজা সবাই চুপচাপ খেয়ে নেয় কোনো গোলমাল নেই। ওদের চুপচাপ দেখে, ঠাম্মাও মনে করে ওদের সত্যিই ঘুম পেয়েছে। অন্য দিন ওরা সকলেই নিজে নিজে আঁচিয়ে নেয়। আজ কিন্তু ঠাম্মাকে সঙ্গে করে হাতে জল ঢেলে দিতে বলে আঁচাবার জন্য। যাই হোক, ওরা যে যার নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুম আসে না। কে যে কখন ঘুমিয়েছে কেউই জানে না।

পরের দিন সকাল বেলা প্রায় সাড়ে সাতটার সময় সকলকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। আজ রবিবার ছুটি তাই ওদের কেউ তাড়াতাড়ি ডাকেনি।

আজ রবিবার। বাবা ও কাকারা সবাই বাড়িতে। কমল থেকে টুসি পর্যন্ত সকলেই বই নিয়ে বসে পড়েছে। ওরা কেউ পড়ছে না, যেন কি ভাবছে, তা ওরাই জানে। গত রাতের গল্পের কথা— অর্থাৎ ভূতের কথা নিয়ে সকলে ভাবছে বোধহয়। যাইহোক দুষ্টুমি ওরা করছে না বলে বাবা কাকারাও কিছু বলছেন না। ছুটির দিন দুপুরে বাড়ির ছোটরা আগে আগে খেয়ে নেয়। বাবা, কাকা ও মায়েদের খেতে একটু দেরি হয়। তাই ছোটরা আগে আগেই খেয়ে নিয়ে যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। টুসি বড় জেঠর ঘরে গোবিন্দর একখানা ছবি টাঙানো দেখেছে টুসি।

জানতে চাওয়ায় শুধু তাকে বলা হয়েছে- ছবির ছেলেটির নাম গোবিন্দ। এই বাড়িতে একসময় কাজের জন্য থাকতো। পরে সে তার নিজের বাড়িতে চলে গেছে। টুসির চোখে আজ যেন কিছুতেই ঘুম আসে না, তরুণেরও না।

বাবা, কাকু ও মায়েদের খেয়ে ওঠার পর পরই আকাশ কালো করে ঝড় উঠলো। টুসি চুপিচুপি তরুণকে বললো-চল দাদা, আম কুড়োতে যাবি। বাবারা ঘুমলে তো বাগানে যাওয়া যাবে না। এখন তো সবাই জেগে। চল না বলে টুসি আর তরুণ বাইরে বেরিয়ে দেখে মেজ জেঠু উঠোনে শুকোতে দেওয়া লঙ্কাগুলো সব তুলে রাখছে। টুসি আর তরুণ এসে বলে তুমি তো এখানে আছো আমরা একটু আম কুড়োতে যাচ্ছি। জেঠু বলে, যা কিন্তু বেশি ভেতরে যাবি না।

ওরা বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মেজ জেঠু শুনতে পায় টুসি চেচাচ্ছে আর বলছে, ও জেঠু, একবার শিগগির এসো না, দেখো না, আমি আমগুলো কুড়িতে কুড়িয়ে কুড়িয়ে রাখছি আর ওই ছেলেটা সব নিয়ে নিচ্ছে।

ওদের জেঠু ভাবছে হয়তো তরুণই নিয়ে নিজে এসে জিজ্ঞেস করে, কে নিয়ে নিচ্ছে?

-ওই তো, ওই ছেলেটা। বড় জেঠুর ঘরে যে ছলেটার ছবি আছে । সঙ্গে সঙ্গে তরুণ বলে, হ্যা গো, ঝুড়িতে-আটটা আম কুড়িয়ে ছিলো, দেখো এখন একটাও নেই।

টুসি আবার বলে, ওই দেখো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

মেজ জেঠু বলে, কোথায়–কে?

টুসি বলে, তুমি কী দেখতে পাচ্ছো না, ওই বড় জেঠুর ঘরে যে ছেলেটার ছবি আছে সে, ওই যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে।

এই ঘটনার পর মেজ জেঠু ওদেরকে আর কিছু বলে না। সকলকে নিয়ে ঘরে চলে আসে।

পরের দিন সকালে বাড়ির সবাই দেখে বড় জেঠুর আর মেজ জেঠুর দু-জন গাছ কাটার লোককে এনে কুড়ুল দিয়ে আম গাছটা কেটে ফেলছে।

আর কবে নাকি ওই গাছের তলায় কী একটা পুজো হবে।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত