আমি তখন আমার বাবা-মা এবং তিন ভাইবোনের সঙ্গে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। অনেক বড় বাড়ি ছিল সেটি। সামনে ছিল বাগান। খুবই সুখের সংসার ছিল আমাদের। অনিবার্য কারণেই ঠিকানা/স্থান উল্লেখ করছি না। সেই বাড়িটিতে সারাদিন আনন্দেই কাটত সবার।
কিন্তু কারও যেন এই সুখ সহ্য হলো না! অচিরেই আমাদের বাড়িতে অদ্ভূত কাণ্ড ঘটতে লাগল! বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই কোনো না কোনোভাবে ভয়্ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছিল। আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম, কেন আমাদের সঙ্গে এমন হচ্ছে? এটা কি কোনো অতৃপ্ত আত্মার কাজ?
ঘটনাগুলো খুব বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছিল। যেমন মা হয়তো উনুনে তরকারি দিয়ে ড্রয়িংরুমে এসেছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ! মা গিয়ে দেখেন, গরম তরকারির কড়াই কেউ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে! অথচ ভাইবোনেরা সবাই উঠোনে খেলছিল। একদিন ভয়ানক এক অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হলাম আমি নিজে।
সেদিন রাতে আমি আমার কর্মস্থলের উদ্দেশে যাত্রা ঠিক করলাম। আমার মা-বাবা আমাকে বিদায় জানাতে বাড়ির দরজা পর্যন্ত আসল। সেখানে আমার পিচ্চি ভাতিজাও আমাকে বাই বলল। আমি সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
তারাও আমাকে বিদায় জানিয়ে দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। গাড়ি স্টার্ট দিতেই এক অদ্ভুত এবং ভয়ানক দৃশ্য চোখে পড়ল! গাড়ির লুকিং গ্লাসে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, বাড়ির এক কোণে দাঁড়ানো আছে একটি ছোট্ট বালক!
বাড়ির সামনে লাগানো বাল্বের আলোতে আমি দেখতে পারছিলাম বালকটির আলুথালু চুল। চোখ দুটো অন্ধকার হয়ে আছে। মুখটা অনেকটাই আমার ভাতিজার মত লাগছিল। আমি যখন বিষয়টিকে এড়িয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলাম, তখনই মনে হলো আরে, আমার ভাতিজা তো বাবা-মার সঙ্গে ভেতরে চলে গেছে। তবে এই পিচ্চি কোত্থেকে আসল?
আবার সেই পিচ্চির দিকে তাকাতেই দেখলাম কোথাও কেউ নেই। তবু আমি গাড়িতে বসেই বাবাকে ডাকলাম। বাবা উদ্বিগ্ন মুখে বের হয়ে আসলেন। জানতে চাইলাম, ভাতিজা কোথায় আছে? তিনি বললেন, সে ভেতরেই আছে। আমার ভয় আরও বেড়ে গেল। ভয়ে ভয়ে আবার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালাম।
যথারীতি দেখলাম ঐ পিচ্চিটি দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু বাড়ির সেই কোণটিতে তাকালে তাকে দেখা যাচ্ছে না। আমার গলা শুকিয়ে গেল! বাবাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। বাবা আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে এসে আমাকে ঘরে নিয়ে গেলেন।
এই পিচ্চিটিকে আমাদের বাড়ির প্রায় সব সদস্যই দেখেছে। তবে আমাদের বাড়ির বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করত তখন। অনেক বাচ্চার মধ্যে ভিন্ন একজনের উপস্থিতি তখন কারও মাথায় ঢুকেনি। পরে অনুসন্ধানে জানতে পারি, আমাদের সেই বাড়িটির ঠিক অপর পাশের বাড়িটিতে একটি গর্ভবতী নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল।
গর্ভবতীর মৃত্যু মানে, তার সঙ্গে আরও একটি প্রাণের মৃত্যু! সেই অতৃপ্তৃ ভ্রুণই হয়তো দিনে-রাতে তাদের সেই বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চাদের সাথে খেলে, আনন্দ করে।
সেদিনের এই ঘটনার পর আমি অনেকদি অস্বাভাবিক আচরণ করেছি। চাকরিটিও চলে গিয়েছিল। আমরা পরে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। এখন যে বাড়িতে আছি, সেখানে ভুত-প্রেতের প্রভাব থেকে মুক্তই আছি।
[গল্পটি ইন্টারনেট হতে সংগ্রহিত]