শুভাকাঙ্ক্ষী

শুভাকাঙ্ক্ষী

অন্তুর সাথে মিতুর বিয়ে হয়েছে ২ মাস।
অন্তু ডাক্তার। বিয়ের পর ওরা হাসপাতালের কোয়ার্টারে উঠেছে। অজপাড়া গাঁয়ের হাসপাতাল। কোয়ার্টারে ওরা ছাড়া আর কেও থাকেনা। অন্তুর প্রায়ই রাতে ডিউটি থাকে। অন্তুর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে মিতুর ও রাতে ভাল ঘুম হয়না।

আজও অন্তু নাইট ডিউটিতে। তার ওপর আবার লোডশেডিং। জানালা একটু ফাকা করে মিতু ঘুমনোর চেষ্টা করে। বাইরে ঝিঁঝিঁর আওয়াজ। জানলার গ্রিল গলে চাঁদের আলো এসে পরে রুমটা অদ্ভুত লাগছে। জানালার পাশেই মিতুর বিছানা। ওপর পাশে একটা আলনা আর সদর দরজা।

রাত ৩টা। মিতুর তন্দ্রা মতন লেগে গিয়েছিল। হটাৎ ঘুমের মাঝেই ওর মনে হল কে যেন ওর নাম ধরে ডাকছে।

“মিতু…, এই মিতু… ”
“হু”, ঘুমের ঘোরেই বলে মিতু।
“যা বলি মন দিয়ে শুন”। মেয়েলি চাপা গলার কণ্ঠ। যেন কারো কাছ থেকে লুকিয়ে কথা বলছে।

আওয়াজটা রুমের ওপাশের আলনার পেছন থেকে আসছে। মিতুর ঘুম কেটে যায়। মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করলে , মিতু ভয়ে জমে যায়। মিতু জানে এসময়ে আলনার পেছনে কারো থাকা সম্ভব নয়। হয়তো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছে, এই ভেবে নিজেকে শান্ত করতে চায় সে। হঠাৎ তীব্র বকুল ফুলের গন্ধ টের পায় মিতু। বাড়ীর আশে পাশে কোন বকুল ফুল গাছ নেই।

“কে?” , মিতু অনেক কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে বলে।

“তুমি ভয় পেয়ো না, আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী”। আবারও ফিস ফিস।
ভয়ে মিতুর অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা। এবার আর একে স্বপ্ন বলে ভাবার কোন অবকাশ নেই।

“আজ তোমার বড় বিপদ”, ফিশফিশানি শুনতে পায় মিতু। ।

“আমার বিপদ তুমি জানলে কি করে?”, বির বির করে মিতু। কাউকে শোনানোর উদ্দেশে মিতু বলেনি।

“আমি জানি, যা বলি মন দিয়ে শোন। তোমার স্বামীকে এক্ষুনি চলে আসতে বল। একদম দেরি করেনা যেন, যত কাজই থাক।”

“আচ্ছা। বলছি। কিন্তু কেন?”
আর কোন উত্তর আসেনা। মিতুর “শুভাকাঙ্ক্ষীর”ভয়েই শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হবার অবস্থা। এমনিতেও অন্তুকে খুব প্রয়োজন মনে হচ্ছিল মিতুর। “শুভাকাঙ্ক্ষীর”কথা শুনে মিতু অন্তুকে ডাকতে আর দেরি করলো না।

“হ্যালো অন্তু”
“বল মিতু।”
“বাসায় খুব বিপদ, তুমি চলে এসো”, চাঁপা আতঙ্কের সাথে বলে মিতু।

“কি হয়েছে বাসায়?”, চিন্তিত কণ্ঠে বলে অন্তু।
“ফোনে বলা সম্ভব না, তুমি চলে এসো। প্লিজ, অন্তু”, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে মিতু।
“এক্ষুনি আসছি। আমি একটা ডেলিভারি কেসে পাশের গ্রামে আছি। তুমি একটু ধৈর্য ধর”, ফোন কেটে দেয় অন্তু।
এর মিনিট পাচেক পরেই দরজায় নাড়া পড়ে।

“মিতু, উঠো, , , ঘুমিয়ে গেছ নাকি?”
অন্তুর আওয়াজ শুনে মিতুর আগে কখনো এত খুশি লাগেনি।

রুম এখনো অন্ধকার। চাঁদের যা আলো আছে তাতে রুমে কোথায় কি আছে সেটা বুঝা যায়।

আলনার পেছনের কথা মাথা থেকে ফেলে মিতু এক লাফে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

“ঘুমিয়েছিলে নাকি? মোমবাতি জ্বালাও নি কেন? কিছুই তো দেখা যায়না”
“একটু ঝিমিয়েছিলাম। তোমার গায়ে গন্ধ কিসের?”

“আর বল না। আজ একটা এক মাসের পুরনো কবর থেকে লাশ তুলে পোষ্টমরটেম করেছি, মার্ডার কেস। এটা এক মাস আগের লাশের গন্ধ”।

এক মাস আগের খুনের কথা মিতুও শুনেছে। এক লোকের লাশ পুকুরে পাওয়া যায়। খুনি তার দুই চোখ উপড়ে নিয়েছিল। ধারনা করা হয়েছিল তার নিজের অপকর্মের জন্যেই কেও প্রতিশোধ নিয়েছিল। অনেক নারীর সর্বনাশ করার ইতিহাস ছিল ওই লোকের।

“যাও গোসল করে নাও”

“আচ্ছা করব। একটু রেস্ট নিয়ে নেই”
গন্ধে মিতুর গা গুলিয়ে আসে। অন্তুকে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা বলবে কিনা মিতু চিন্তা করে। পড়ে ভাবল আগে একটু বিশ্রাম নেক অন্তু।

পাশের রুম থেকে মোমবাতি আনতে যায় মিতু। রাতে ওকে একা রেখে যাওয়ার জন্যে অন্তুর ওপর ভারি অভিমান হয় মিতুর। কোথায় ওকে ভুতের কাছে ফেলে সে পাশের গ্রামে ডাক্তারি করতে যায়। এই চিন্তা হলেই মিতুর মাথায় খেলল, অন্তুর পাশের গ্রাম থেকে বাইকে আসতেও কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগার কথা। কারো বাইক বা গাড়ির আওয়াজও পায়নি মিতু। সাথে আবার সেই মরা লাশের গন্ধ, আর একটু আগের সতর্ক বার্তা। মিতুর শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্ক বয়ে যায়। একটু স্থির হয়ে চিন্তা করে মিতু। এরপর খুব ক্ষীণ পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় খুব জোরে।
“কি মিতু কি হল? দরজা লাগালে কেন?”
“যা বলছি এখান থেকে । যা!”

ধাম, ধাম করে দরজায় দুই ঘা পড়ে।
“দরজা খোল , আমি অন্তু”
“আমি জানি তুই কি। যা এখান থেকে”
এবার দরজার ওপাশ থেকে আর কথা আসে না। কয়েক মুহূর্ত অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতায় কেটে যায়। এরপর হতাৎ দরজার ওপাশ থেকে ঘুঙ্গুরের শব্দ আসতে থাকে। প্রচণ্ড জোরে ঘুঙ্গুর পড়ে লাফানোর মত শব্দ। ঝুন… ঝুন… ঝুন…

ধাম ধাম। দরজার ওপর আরও দুই ঘা পড়ে। দরজা যেন ভেঙ্গে যাবে পাশবিক শক্তিতে। মিতু দরজার এদিক থেকে প্রাণপণে দরজা চেপে রাখে। এমন সময় মিতু বাইকের আওয়াজ পায়। এরপর সদর দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা। বিশ্রী গন্ধটাও ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে। মিতু দরজার এপাশ থেকেই চিৎকার করে বলে, “অন্তু, তুমি কোথায় ছিলে?”

“পাশের গ্রামে, ডেলিভারি কেস”।
এবার মিতু হাফ ছাড়ে। আতঙ্কে মিতুর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছিল। এখন আনন্দস্রু ঝড়ছে।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত