​এক অভিশপ্ত পুতুলের কাহিনী

​এক অভিশপ্ত পুতুলের কাহিনী

( অ্যানাবেল পুতুলের ঘটনা )

আচ্ছা আপনি পুতুল ভালোবাসেন? আপনার সখের পুতুলটিকে রাতের বেলায় বিছানায় না নিয়ে শুলে আপনার ঘুম আসে না? বার বার মনে হয় আপনি আপনার পুতুলটিকে মিস করছেন? এই প্রশ্নগুলোকে দেখে চমকে উঠলেন ? মনে হল -এ বাবা, এগুলো আমার সাথে ঘটে, আমার প্রিয় পুতুলটা এখনও আমার পাশেই বিছানাতেই শোয়ানো, কিন্তু এসব প্রশ্ন কেন? আচ্ছা, আপনার এই প্রিয় পুতুলটির প্রতি টান এটা কি নিছকই একটা কোয়েনসিডেন্স? নাকি সুদৃঢ় আত্মিক?

পৃথিবীর বহু প্যারানরম্যাল ঘটনায় মৃত মানুষের তার প্রিয় বস্তুটির প্রতি টানের ঘটনার কথা শোনা গেছে । কিছু ক্ষেত্রে সেটা কোন বিশেষ জায়গার প্রতি, আবার কিছু ক্ষেত্রে কোন বস্তুর প্রতি ।

আজ আপনাকে একটি হাড় হিম করা সত্য ঘটনা শোনাব । সঙ্গে একটু জল রাখবেন গলা শুকিয়ে এলে, কাজে দেবে।

ঘটনার সূত্রপাত, ইংল্যান্ডে । ১৯৭০ সালে । ডোনা তার জন্মদিনে মায়ের কাছ থেকে একটা সুন্দর পুতুল উপহার স্বরূপ পায় । ডোনা কিন্তু ছোট্ট মেয়ে নয়, সে তখন নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছে । কিন্তু ছোট থেকেই তার পুতুলের শখ। সে নতুন নতুন পুতুল কিনে তাদেরকে কাছে রাখতে ভালোবাসে । নার্সিং পড়া দরুন সে তার এক বন্ধু অ্যাঞ্জিকে নিয়ে একটা অ্যার্পাটমেন্টে থাকতে শুরু করে । একটা ছিমছাম নিরিবিলি অ্যার্পাটমেন্ট । তারা সারাদিন পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকতো । আবার রাতে ফিরে আসতো অ্যার্পাটমেন্টে । পুতুলটা সারাদিন ঘরে সোফায় রাখা থাকত । এইরকমই বেশ কিছুদিন নির্বিঘ্নে কাটলো । ডোনাও তার পুতুল নিয়ে খুশি । অ্যাঞ্জির ও তাকে বেশ পছন্দ । কিন্তু একদিন একটা ঘটনা, তাদের সেই স্বাভাবিক জীবনযাপনে একটা দমকা হাওয়ার মতো জানলার পর্দা উড়িয়ে এল । তারা প্রতিদিনের মতো সেদিনও কলেজ গেছে । পুতুলটি যথারীতি তারা ঘরের সোফায় রেখে গেছিল, কিন্তু ফিরে এসে তারা দেখলো, পুতুলটি সোফা থেকে যেন সরে দরজার সামনে এসে পড়েছে । অথচ তারা যখন বাইরে যায়, তখন দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে যায় । তাই বাইরের কেউ ভেতরে এসে এ কাজ করবে তা একেবারেই সম্ভব নয় । তাহলে পুতুলটি দরজার সামনে এল কি করে ?ঘটনাটা মনের মধ্যে রয়েই গেল ডোনা আর অ্যাঞ্জির । তারপর বেশ কিছুদিন আর সেরকম কিছু ঘটলো না । তারপর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । এবার পুতুলটিকে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যেতে লাগলো । যেন তারা বাইরে গেলেই পুতুলটি মুক্ত ভাবে ঘরে হেঁটে বেড়ানোর সুযোগ পায় । তারা ফিরলেই আবার যেন সব আগের মতোন, যে কে সেই । এভাবেই মনের মধ্যে খটকাটা তাদের বাড়তে লাগলো । এবং শেষটায় একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটলো তাতে তারা তার সেই পুতুলটি স্বাভাবিক পুতুলের পর্যায়ে ফেলতে পারলো না।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও তারা কলেজ থেকে ফিরে পুতুলটিকে দরজার সামনে উদ্ধার করলো । কিন্তু সেদিন আরো আশ্চর্য একটি ঘটনা তাদের চোখে পড়ল । তারা যখন পুতুলটিকে তুলে এনে যথাস্থানে রাখতে যাবে , তারা দেখে পুতুলটির হাতে রক্ত লেগে এবং সেই হাতেই র‍য়েছে ছোট্ট এক টুকরো কাগজ । তাতে লেখা ‘ Help us ! ‘ লেখা দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় তা সেই রক্ত দিয়েই লেখা । হাতের লেখার মধ্যেও একটি বিশেষত্ব রয়েছে । দেখলে মনে হয় সেটি কোন বাচ্ছার অপরিপক্ক হাতের লেখা । কিন্তু এ লেখা লিখল কে ? আর তা কি করেই বা এই পুতুলের হাতে এল ! একটা অস্পষ্ট বিপদের ঈঙ্গিত পেয়েই ডোনা আর অ্যাঞ্জি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসল । তারা একজন প্যারানরম্যাল এক্সপার্টকে ডেকে পুরো ব্যাপারটি জানাল । তারপর একজন সাইকিক মিডিয়াম এসে বিষয়টি তদন্ত করে যা জানতে পারল তাই এইরকম – ‘ সেই পুতুলটির মধ্যে রয়েছে এক সাত বছরের ছোট্ট মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা । সে আগে এই অ্যাপার্টমেন্টেই থাকত , তাই মারা যাবার পরও সে আর সেখান ছেড়ে যেতে পারেনি । সে ডোনা আর অ্যাঞ্জির সাথেই থাকতে চায় । সে তাদের কোন অনিষ্ট করবে না । ‘ ডোনা আর অ্যাঞ্জির মায়া পড়ে গেছিল পুতুলটার প্রতি আর তারপর একটা বাচ্ছা মেয়ের কাতর আর্জি , তারা ফেলতে পারল না । তাকে তারা সঙ্গে থাকার অনুমুতি দিল । তারা তার সাথে পরিচয় করে জানতে পারল তার নাম অ্যানাবেল হিগিংস । কিন্তু এই ছোট্ট একটি ঘটনা থেকেই যে এত কিছু হয়ে যাবে তা কি তারা জানতো । এক অজানা বিভীষিকা যে তাদের ওপর তার কড়া দৃষ্টি সেই প্রথমদিন থেকেই সংগোপনে রেখে চলেছিল ,তা কি তারা জানত ! যদি জানত তাহলে হয়ত সেদিনই তারা সেই পুতুলটিকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করত । কিন্তু সে সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ঘটনা ঘটে গেল । সেটি কি ?

( লোউ-এর আতঙ্ক )

ডোনা আর অ্যাঞ্জি, তখনও কোন বিভীষিকার আঁচ পায়নি । তারা আগের মতোই সেই পুতুলটা তাদের কাছে সযত্নেই রয়েছে । যদিও তারা জানে তার মধ্যে রয়েছে এক সাত বছরের বাচ্চা মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা, তবে সে কথা দিয়েছে তাদের কোন অনিষ্ট করবে না । কিন্তু এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই ঘটে গেল অারেকটি ঘটনা । সেটাই বলব আজ।

তাদের অ্যার্পাটমেন্ট সেই তলাতে থাকত, তাদের আরেক বন্ধু । লোউ । তার কিন্তু সেই পুতুলটি প্রথম থেকেই পছন্দ ছিল না । যদিও পুতুলটিকে দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ পুতুলের মতোই, তাও লোউ -এর মনের ভেতরটা প্রথম থেকেই কেমন খচখচ করতে লাগলো । সে কথাটা ডোনা আর অ্যাঞ্জিকেও জানায় । সে বলে, ‘ এ পুতুল ভালো নয়, একে সরিয়ে ফেলো । ‘

কিন্তু ডোনা আর অ্যাঞ্জি তখন সেই পুতুলের মায়ায় মোহাচ্ছন্ন । এর মধ্যে একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায়, লোউ এর সাথে । এক রাতে সে বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে । হঠাৎ মাঝ রাতের শেষের দিকে, একটা প্রবল অস্বস্তিতে তার ঘুম ভেঙে যায় । পাশের টেবিলে ল্যাম্পটা জ্বালতে গিয়ে দেখে, সে আর নড়তে পারছেনা । তার সারা শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে । হাত-পা কেন, ওপাশে ঘাড় ঘোরাবার ক্ষমতাও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে । এক চূড়ান্ত বিভীষিকার মধ্যে যখন সে প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই তার হঠাৎ মনে হল তার পায়ের কাছে কেউ যেন একটা বসে । বাইরে রাস্তার আলো জানলা দিয়ে এসে আবছা তার মুখে এসে পড়েছে । আলো -আঁধারির ঘোরটা কাটতেই তার মুখটা স্পষ্ট দেখা গেল । ‘ অ্যানাবেল ‘, সেই পুতুলটা , এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে, এমন তাকে আর নির্জীব প্রানহীন সামান্য একটা পুতুল বলা চলে না । তার চোখে এখন এক ক্রুড় অভিসন্ধি । কি চায় সে ? এত কিছু ভেবে ওঠার আগেই ঘটে গেল আরেক কান্ড । সেই পুতুল যেন লোউ এর শরীর বেয়ে উঠতে শুরু করল এবং ঠিক তার বুকের উপর এসে সেটা থামলো । প্রচন্ড ভয়ে-আতঙ্কে লোউ নির্বাক । ওর গলার স্বর যেন কে কেড়ে নিয়েছে । চিৎকার করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে সে । কিন্তু একি, সে কি সত্যিই প্যারালাইসিস হয়ে গেল ? হাত-পা কিছুই নড়ে না কেন ? সে বুঝলো এক ঘোর বিভীষিকার নাগপাশে সে বন্দি , পরিত্রানের সব পথ বন্ধ । ধীরে ধীরে শ্বাসরোধকারী মৃত্যুশিকল কেউ পরিয়ে দিচ্ছে গলায় । পুতুলটি তখনও আগের মতোই তার বুকের ওপর , তার মুখের দিকে একভাবে চেয়ে রয়ছে । যেন অপেক্ষা করছে তার শেষ নিঃশ্বাসের শব্দের ।

ধীরে ধীরে রাত ফরসা হয়ে আসতেই পুতুল আর ভয় দুটোই যেন মিলিয়ে গেল । লোউ বিছানায় উঠে বসল । তার সারা শরীরে অসম্ভব যন্ত্রনা । কাল রাতের বিভীষিকা কি সত্যিই এসেছিল? নাকি তা কোন এক দুঃস্বপ্ন ছিল? বিছানায় বসে ভাবতে থাকে লোউ ।

ঘটনাটিকে লোউ -এর মনের ভুল কিংবা তার পুতুলটিকে নিয়ে অযথা কল্পনায় মোড়া কাল্পনিক গল্প হিসেবেই ধরে নেওয়া যেত কিন্তু অন্য একটি ঘটনা লোউকে পুনরায় এমনই আতঙ্কিত যে তাকে আর কোন সাধারন ঘটনার পর্যায় ফেলা গেলনা । একদিন স্নান সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পোষাক পড়তে গিয়ে সে দেখে তার পিঠে লম্বা লম্বা সাতটা আঁচড়ের দাগ, তিনটি লম্বালম্বিভাবে এবং চারটি পাশাপাশি । এই অদ্ভুত রকমের আঁচড়ের দাগ তার শরীরে কীভাবে এলো সে কিছুতেই ভেবে উঠতে পারলোনা । অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে বিগত দু’তিন দিনে তার কোন চোট আঘাত লাগেনি । তাহলে এ দাগ কীসের?

লোউয়ের ভয়টা এবার বাড়লো । ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধপত্র খেয়ে তিন দিনেও সে দাগ তার শরীর থেকে মিলিয়ে গেল না । বরং ঠিক আগের মতোই লাল দগদগে হয়ে সারা পিঠ জুড়ে রয়ে গেল । লোউয়ের মধ্যে খটকাটা ক্রমে বেড়েই চলেছে । তবে কি সে যেটা ভাবছে সেটাই? এই সব কিছুর জন্যে সেই পুতুলটাই দায়ী ? সেই ‘অ্যানাবেল’ পুতুলটি ? লোউ দ্রুত কিছু একটা করার কথা ভাবলো । সে সেই ক্রূর বিভীষীকার থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে লাগল ।

(এক বিভীষিকার যবনিকা পতন )

শেষ রাতের আতঙ্কটা লোউ কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারলো না । তার মনের মধ্যে এটা যেন গভীর ভাবে গেঁথে গেল যে এ পুতুলের মধ্যে কোন বাচ্ছা মেয়ের আত্মা থাকতে পারে না । এ পুতুল সাক্ষাত বিভীষিকা, সে কারোর ভালো চায় না, বরং তাদের সবার প্রানশক্তিটুকু শুষে না নিলে সে বিভীষিকা তাদের ছেড়ে যাবে না । লোউ দ্রুত কিছু একটা করার কথা ভাবলো । সে নিজে ক্যাথলিক । ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তাই সে প্রথমেই গৃহশুদ্ধি করার প্রক্রিয়াটাই বেছে নিল । কাছেই স্টিফেন চার্চের ফাদার হেগ্যানের সাথে তার আগে থেকেই পরিচয় ছিল । লোউ তাকে সে রাত্রের ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে জানায়, ডোনা এবং অ্যাঞ্জির সাথে ঘটা সেই সাত বছরের শিশুটির কথোপকথনের বিষয়টিও সে ফাদারকে জানায় । ফাদার হেগ্যান সব শুনে দ্রুত গৃহ শুদ্ধির জন্য তাদের প্রস্তুত হতে বলেন । কিন্তু গৃহ শুদ্ধি করতে গিয়ে ঘটল আরেক বিপত্তি । ফাদার হেগ্যান স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, এ কোন সাধারণ শিশুর প্রেতাত্মা হতেই পারে না । এ আত্মা আরো বেশী ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী , তার প্রতিকার তার পক্ষে সম্ভব নয় , তারা বরং আরো উচ্চতর প্রিস্ট ফাদার কুকের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করুক । ইতিমধ্যে ডোনা ও অ্যাঞ্জিও পুতুলটি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল । লোউ -এর মতো তাদের মনেও একটা খটকা ভীষণ ভাবে পেয়ে বসেছে । পুতুলটির মধ্যে বেশ কিছু অস্বাভাবিকত্ব তাদের বেশ ভাবিয়ে তুলল । তারা প্রায়ই রাত্রে ভয় পায় । যেন কিসের একটা অদৃশ্য বিপদ তাদের চারপাশে, তাকে দেখা যায় না , কিন্তু তার গাঢ় উপস্থিতি অন্ধকারের মধ্যেও প্রবলভাবে টের পাওয়া যায় । তারা মুখে কিছু বলে না, কিন্তু লোউ -এর মতো তারাও চায়, এ পুতুল বরং তার আগের জায়গাতেই ফিরে যাক ।

ফাদার কুককে বিষয়টি জানাতে তিনি বেশ মনযোগ দিয়ে পুরো ব্যাপারটি শুনলেন, তারপর তাদের বিশিষ্ট প্যারনম্যাল এক্সপার্ট এড ও লরেন্সের সাথে যোগাযোগ করতে বললেন, তিনি তাদের আস্বস্ত করলেন, তাদের এই বিপদ থেকে, একমাত্র এই ওয়ারেন্স দম্পতিই তাদের উদ্ধার করতে পারেন । ডেমোনোলজি সংক্রান্ত বিদ্যায় তাদের জ্ঞান অসীম । তারা যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে পুতুলের বিষয়টি তাদের আদ্যপ্রান্ত জানায় ।

আর এই ঘটনার পর থেকেই পর থেকেই ‘অ্যানাবেল ডল ‘ -এর ঘটনাটি একটি অন্য মোড় নেয় । এড ও লরেন্স ততদিনে বেশ কয়েকটি তদন্তে সাফল্য পেয়েছে । প্রেততত্ত্ব ও চর্চায় তাদের উৎসাহ তখন থেকে অনেকটাই বেড়ে গেছে । ডোনা ও অ্যাঞ্জি যখন তাদের পুতুল সংক্রান্ত কেসটি নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে, তখন এড ও লরেন্স বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহিত হয়ে পড়ে । তারা ডোনা ও অ্যাঞ্জিও কে সাহায্য করতে রাজী হয়ে যায় । এড যখন ডোনার মুখে পুতুলের বিবরন ও পূর্বক্ত ঘটনাগুলো শুনেছিলেন তখন তার মনে হয় এ পুতুল কোন সাধারণ পুতুল নয়, এ সব কিছুর পিছনে রয়েছে কোন শয়তানী শক্তি, যা আদতে এক শিশুর আত্মার সরলতার সুযোগ নিতে চাইছে । কিন্তু আসল সত্যিটা কি? সেটা অ্যানাবেল সাথে পরিচয় না করলে বোঝা সম্ভব নয় । তদন্তে এড -এর সন্দেহ ই সঠিক ধরা পড়ল । এড ডোনা কে ডেকে জানালেন – ‘ এ পুতুলের মধ্যে মোটেই কোন সরল সাদাসিধে শিশুর আত্মা নেই, বরং যে আছে, এক ক্রর বিভীষিকা, সে মোটেই তোমাদের ভালোবাসা চায়না, বরং সে এক সাত বছরের শিশুর সরলতার সুযোগে, তোমার কিংবা অ্যাঞ্জির উপর নিজের নিয়ন্ত্রন কায়েম করতে চায় । একে বলে ‘ Demonically possessed ‘। একে সরিয়ে ফেলাই তোমাদের পক্ষে মঙ্গল ।

ডোনা এড -এর এই প্রস্তাবে রাজি হল এবং তাকে অনুরোধ করল, যেন তিনি অ্যানাবেলকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে তাদের সাহায্য করেন । ঠিক তখনই এড অ্যানাবেলকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবার প্রস্তাবটি ডোনাকে জানায় । ডোনা এক কথায় সম্মতি জানায় এবং সেই মতো তারা এড ও লরেন্সের হাতে অ্যানাবেলকে তুলে দেয় । কিন্তু এর পরপরই এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা এড ও লরেন্সেকে এই পুতুল সম্পর্ক নতুনকে ভাবিয়ে তোলে । তারা বুঝতে পারে, এ পুতুলকে তারা যতটা ভয়ানক ভেবেছিলেন এ তার চেয়েও ভয়ানক এবং সাক্ষাৎ শয়তান । তারা অন্যাবেলকে নিয়ে যখন ডোনা ও অ্যাঞ্জির অ্যার্পাটমেন্ট থেকে ফিরছে, তারা হঠাৎ খেয়াল করে গাড়ির মধ্যে যেন একটা কিছুর উপস্থিতি… সেটা শুভ নয় বরং সেটা যেন অনবরত তাদের অজান্তেই গভীরে এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে । গাড়ির মধ্যেকার তাপমাত্রাও যেন অসম্ভব রকমের বেড়ে গেছে । এ সবের মধ্যেই একটি ভয়ানক কান্ড ঘটে গেল । এড গাড়ি চালাচ্ছিল । তারা যখন একটা ট্যানেল ক্রস করেছে, এড লক্ষ্য করল, গাড়ির সামনের কাঁচে আলো-আঁধারিতে অন্যাবেল-এর প্রতিচ্ছবি এসে পড়েছে, তার চোখে এক ক্রুর দৃষ্টি ।

সে যেন তাদের সব কারসাজি বুঝতে পেরে ভয়ানক খেপে উঠেছে । কিন্ত একি ! এড অবাক হয়ে দেখল, গাড়ির স্টিয়ারিং ও-ব্রেক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, গাড়ি উন্মত্তের মতো ছুটে চলেছে অন্ধকার টানেল বেয়ে । তারা বুঝল, তাদের সামনে এখন সাক্ষাত মৃত্যু অপেক্ষা করে রয়েছে অন্ধকার টানেলের ঠিক বাইরেই। এর মধ্যে লরেন্সে একটা বুদ্ধিমানের কাজ করল । সে তার বুকের ক্রশটি আগলে, প্রভু যিশুকে স্মরণ করতে লাগলো । এবং তাতে কাজ হল ।এড আবার তার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল । সে ট্যানেলের বাইরে গাড়ি থামিয়ে পুতুলটির দেহে ‘ Holy water ‘ ছিটিয়ে তাকে শান্ত করল । অ্যানাবেল তখন আবার আগের মতো সাধারণ একটা পুতুল, নিস্তেজ… তার মধ্যেকার শয়তানি শক্তি আপাতত ক্লান্ত । তারা পুতুলটিকে এনে তাদের বাড়ির বেসমেন্টে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন । সেখানে তাদের গবেষণা সমগ্র ও অনন্য প্রেত চর্চার বস্তুগুলি রাখা থাকে । কিন্ত কয়েকদিন যেতে না যেতেই বাড়িতে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটতে লাগলো । লরেন্স প্রতি নিয়ত ভয়ানক সব স্বপ্ন দেখতে শুরু করল । পুতুলটি মাঝে মধ্যেই বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ হঠাৎ পাওয়া যেতে লাগলো । এড এমন অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে অার এভাবে ছেড়ে রাখা চলে না, কোন এক উপযুক্ত উপায়ে এই শয়তানি শক্তিকে বন্দি করতে হবে ।

এড একটা কাঠের বাক্স তৈরী করল এবং তার মধ্যেই অ্যানাবেলকে রাখার সিদ্ধান্ত নিল । সেই থেকে আজ অব্দি অ্যানাবেল সেই কাঠের বাক্সেই বন্দি । আপনি চাইলে সেই বিখ্যাত ভূতেদের ‘ Warrens Occult Museum ঘুরে সে পুতুল চাক্ষুস দেখেও আসতে পারেন । তবে সাবধান । এই বাক্সবন্দি অ্যানাবেল নিয়েও কিন্তু কম গল্প নেই । একবার এক ফাদার এই মিউজিয়মে ঘুরতে এসে মন্তব্য করেন – ‘ এ তো সামান্য একটা পুতুল , এ কারো ক্ষতি করতে পারেই না… এ অসম্ভব । যত সব গুজব ‘ । ফাদারের এরূপ মন্তব্য করার সময় এড অবশ্য তাকে সাবধান করেছিলেন । কিন্তু ফাদার তাতেই কর্নপাতই করেননি । শোনা যায়, এর পরপরই এক পথ দূর্ঘটনার হাত থেকে তিনি বরাতজোড়ে রক্ষা পান ন অনুরূপ একটি ঘটনা একবার ঘটে মিউজিয়মের এক ভিজিটরের সাথে । সে ‘ অ্যানাবেল ‘ এর সামনেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতে থাকে । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান সে রাত্রেই ছেলেটি এক পথ দূর্ঘটনায় মারা যায় । তাই বলছি, যদি কখনও এই ভুতেদের মিউজিয়মে যান এবং অ্যানাবেল ডলের দর্শন লাভ করেন , তাহলে সেখানে যেন নিরব দর্শকের ভুমিকায় পালন করেন । তাকে নিয়ে ঠাট্টা… নৈবঃ নৈবঃ চঃ ।

( সমাপ্ত )

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত