হ্যালো, নীলা?
হ্যাঁ। কোথায় তুমি?
আর বোলো না। জ্যাম পড়েছিলো খুব, এক ঘণ্টা আটকে ছিলাম। এখন ছেড়ে গেছে, বলতে পারো ঝড়ের বেগে গাড়ি চালিয়ে আসছি। আর একটু, বেশীক্ষণ লাগবে না, বাড়ির কাছে।
আমি কিন্তু খাবার নিয়ে বসে আছি। তাড়াতাড়ি করো। জলদি। কুইক।
আরে বাবা বললাম তো আসছি। এত অস্থির কেন?
আর সাবধানে চালাও। অত তাড়াহুড়োর কিছু নেই। শেষে একটা অ্যাকসিডেন্ট করে বসবে।
সৈকত হেসে ফেলে। এই বললে তাড়াতাড়ি আসতে, আবার বলছ সাবধানে চালাতে। কোনটা করবো?
দুটোই করবে। তাড়াতাড়িও আসবে, আবার সাবধানেও চালাবে।
ঠিক আছে। রাখি। গাড়ি চালনারত অবস্থায় কথা বলা নিষেধ, হা হা হা।
নীলা হাসিমুখে ফোন রেখে আবার টিভির রিমোটটা হাতে নিতে যাবে, তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। আবার সৈকত ফোন করেছে।
হ্যালো।
নীলা?
হ্যাঁ। কী হল আবার?
শোন, কোন ফুল আনবো বল তো?
সে কী, ফুল আনবে কেন?
আরে, তুমিই না এইমাত্র বললে যে ফুল নিয়ে আসতে হবে, কী একটা যেন উপলক্ষ আছে?
আমি? কই, না তো।
নীলা, মজা কোরো না তো। বল, এই তো ফুলের দোকান, আমি নামছি।
নীলা কিছুই বুঝতে পারেনা। সৈকত ফুলের দোকানে নামবে কেন?
আজ ওদের কারো জন্মদিন নয়, না নীলার, না তার স্বামীটির। ওদের অ্যানিভার্সারিও নয়। তাহলে?
তবুও নীলা বলে ফেলে, তাহলে কিছু বেলী ফুল নিয়ে এসো।
বেলী ফুল? এখানে আছে গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা। আচ্ছা, তবুও খুঁজে দেখি।
আচ্ছা, তুমি এখন আছ কোথায় বল তো?
শাহবাগে, অনেকগুলো ফুলের দোকান আছে না, ওখানে।
তুমি না বললে যে তুমি বাড়ির কাছে? আর একটু সময় লাগবে?
কাছেই তো। গাড়িতে উঠে একটা টান দেবো। লক্ষ্মীসোনা, রাগ কোরো না।
ঠিক আছে। রাখি।
নীলা ফোন রেখে গুম হয়ে বসে। সে নিশ্চিত, সে সৈকতকে ফুল আনতে বলে নি। তাহলে ব্যাপারটা কী? কে জানে, কারো হয়তো কোন ভুল হচ্ছে। যাক, ভয়ের কিছু নেই। স্ত্রীর জন্য স্বামী ফুল আনতেই পারে, এতে তো দোষের কিছু নেই। না হয় ভুল করেই ফুল নিয়ে এলো।
নীলা টিভি দেখায় মগ্ন, এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো।
সে দরজা খুলে দেখে, বেলী ফুলের অনেকগুলো মালা হাতে নিয়ে সৈকত দাঁড়িয়ে আছে।
এত দেরী? প্রথমেই জিজ্ঞেস করে সে।
আর বোলো না, বাসার সামনে এসে জ্যামে পড়েছিলাম। বাসে করে এলে তো নেমে হাঁটা দিতাম, কিন্তু গাড়ি ফেলে চলে আসি কী করে?
কথায় কথায় “আর বোলো না” বলার দোষটি সৈকতের আছে।
কিন্তু তুমি ফুল আনলে কী মনে করে?
আরে, তুমিই না বলেছিলে আনতে? একটু আগেও না কথা হল?
নীলা আর কিছু বলে না। ফুলগুলো হাতে নেয়। গন্ধ শুঁকে দেখে। তাজা বেলী ফুল, কেমন চকচক করছে।
পছন্দ হয়েছে?
খুব। নীলা ফুলগুলোর ওপর হাত বুলোয়।
এবার বল, অকেশনটা কী?
কোন অকেশন নেই। আমি আনতে বলেছি, কাজেই এনেছ, ব্যস।
ও, আচ্ছা। সৈকত আর কথা না বাড়িয়ে বলে, খুব খিদে পেয়েছে।
আমি তো কখন থেকেই খাবার দিয়ে রেখেছি। সব এতক্ষণে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। এসো, ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো। আমি একটু তরকারীটা গরম করে দিই।
সৈকত বাথরুমে ঢুকে গেলো। গুণগুণ করে গান গাইছে সে, মৃদু আওয়াজ আসছে বাইরে। ঝপাং ঝপাং করে গায়ে পানি ঢালছে। গরমের দিনে অফিস থেকে ফিরে ভাল করে একবার গোসল করে নিলে সত্যিই শরীরটা খুব ঝরঝরে লাগে।
নীলা চুলোর আঁচটা একটু কমিয়ে দিয়েছে, তখন আবার বেলটা বেজে উঠলো।
চুলোটা নিভিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেলো সে। এত রাতে আবার কে এলো?
দরজা খুলেই সে হাঁ হয়ে যায়।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সৈকত।
নীলার দুচোখে বিস্ময়, কথা যোগায় না মুখে। অধিক শোকের মতো মানুষ অধিক বিস্ময়েও পাথর হয়ে যায়, নীলার তাই হয়েছে।
দরজায় দাঁড়ানো সৈকত বলল, এমন ভূত দেখার মতো চমকে গেলে কেন, নীলা? ঘরে ঢুকতে দেবে, না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?
নীলা কান পেতে শোনে। এখনো বাথরুমের ভেতর থেকে “প্রথম সৈকতের” গুণগুণ গানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
এখন কী করবে সে?
(সমাপ্ত)